পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৪

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৪
সাদিয়া আক্তার

” তিল ”
রাতের আধারে মোম বাতির কমলা রঙের আলোয় জ্বলজ্বল করা একটা তিল এই মূহুর্তে চন্দ্রকে ভীষণ জ্বালাচ্ছে। নিজেকে কন্ট্রোল করার জন‍্য অনবরত ঢোক গিলছে।
পুনমকে বুকে নিতেই পুনমের কাধের তিলটা নজরে আসে চন্দ্রের। এতোদিন গোছালো মায়ায় কাপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখা পুনমের এই রুপ দেখে চন্দ্রের হাল বেহাল।
নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পেরে একটু ছুয়ে দিতেই। চন্দ্রকে ধাক্কা মেরে পুনম ছিটকে সরে যায়
— ধরবেন না একদম ধরার চেষ্টা করবেন না,, কি পেয়েছেন কি বিয়ে করেছেন বলে সাতখুন মাফ উহু তা কখনও না।

বলেই পাশ থেকে চিঠির বাক্সটা নিয়ে আবারও দাড়ায় বক্স থেকে লাইটার বের করেই একটা চিঠি হাতে নেয় — প্রেমের সূচনা করেছিলেন না এই চিঠির মাধ্যমে!! যে সূচনাকে সমাপ্তিতে পরিণত করলাম আজ।
বলেই লাইটার দিয়ে চিঠিটাতে আগুন ধরাতে নিলে চন্দ্র পুনমের হাত থেকে লাইটার ছিনিয়ে নিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে।
— আমার রাগ আমার উপর ঝারবি যত ইচ্ছা। তবে ঐ একটা চিঠিতে হাত দিবি না ঐগুলো আমাদের প্রণয়ের স্মৃতি,,,
— করব না কিচ্ছু করব না আমার গত দুই দিন রাতের বিভিষীকাময় যন্ত্রণা উপশম দিন। ফেরত দিন সেই সময়টুকু যা আমি এক মরিচীকার জন‍্য কাটিয়েছি।
— স্বার্থপর তোরা নারীরা স্বার্থপর,, তোর রাত,, তোর কষ্ট গুলো দেখলি। আমার আমার কিছুই দেখলি না। আমি যে দীর্ঘ আটটা বছর তোর অপেক্ষায় একেকটা রাত তীব্র যন্ত্রণায় কাটিয়েছি। এমনও রাত গেছে তোকে ভেবে কাটিয়েছি সেই তুই কি করলি আমার দিকে ফিরেও তাকালি না সকলের চোখের মনি ক্রাশ প্রান প্রেয়সীর নজরে পড়ল না সেটা কতটা যন্ত্রণার সেটা কি তুই জানিস উহু জানিস না।।
চন্দ্রর দিকে অপলক কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল পুনম তারপর তাচ্ছিল্য হেসে বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন

— তাই বুঝি প্রতিশোধ নিলেন। যার জন‍্য মেয়েরা পাগল চাদের মতো সৌন্দর্য দিয়ে যেকোনো মেয়েকে পাগল করতে পারে সেই লোকটার দিকে একটা কালো মেয়ে ফিরেও তাকায় না তার প্রতি কোনো ইন্টারেষ্ট নেই তাই বুঝি আপনার ইগো হার্ট হয়েছে।
এবার চন্দ্রর মটকা গরম হলো পুনমের হাত ধরে তাকে কাছে নিয়ে আসল পুনম ছুটাছুটির চেষ্টা করতেই পুনমের হাত পিছমোরা করে অন‍্য হাত দিয়ে পুনমের চিবুক শক্ত করে ধরল — কালো!! কারে বলিস কালো এই কালো মেয়ের মধ‍্যে এই চন্দ্রের অস্তিত্ব।।
ব‍্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে পুনমের তবুও জেদি স্বরে বলল — স্বীকার করেন ইয়‍্যু আ”র অ‍্যা চিটার. বিট্রেবাজ
— উহু ভালোবেসেছি আর ভালোবাসা হাসিল করেছি জোহরা জান। সেটা চিটিং বলিস আর যাই বলিস,,,, বলেই পুনমের গালে ঠোট দাবিয়ে চুমু খেলো অপর গালেও তাই করল। কপালে দীর্ঘ চুমু দিয়ে পুনমের কানে ফিসফিসিয়ে বলল — তোমাকে এতো ছুতে ইচ্ছে করছে কেনো জোহরাজান?? বৈধতা আছে বলে। এই জোহরাজান একটু ক্ষমা কর না তোমায় নিয়ে ডুব দেই প্রণয় সাগরে।।

বলেই মোহগ্রস্থ মতো গলায় মুখ ডুবাতে নিলে পুনম সুযোগ বুঝে ধাক্কা মারে আঙ্গুল উচু করে বলল — ডোন্ট টাচ মি,, বিট্রেবাজদের আবার অনুমতি লাগে নাকি।।
বলেই হাওয়ার বেগে ঘরে চলে যায় খাটের সব ফুল সরিয়ে এককোণে শুয়ে পরে। চন্দ্র পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। বিড়বিড় করে বলে — এতো আদুরে কেনো তার বউটা উফফ সবার বদদোয়া পরেছে আমার বাসর ঘরের উপর।।
পরপর দুই রাত জাগা ঠিক মতো না খাওয়া দুপুরে কোনো রকম রুপশার হাতে খেয়েছিল। সবমিলিয়ে ক্লান্তিতে মূহুর্ত্তের মধ‍্যেই ঘুমিয়ে গলো পুনম। চন্দ্র বারান্দায় দাড়িয়েই কমলা রঙা আলোয় প্রান সখীকে দেখছে পুনম ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পেরে পুনমের সামনে হাটু গেরে বসে বিড়বিড় করে গাইল
~ তোকে একার দেখার
লুকিয়ে কি মজা
সেতো আমি ছাড়া কেউ জানে না,,,,

ঘুমের মধ‍্যে নড়তে নিয়েও নড়াচড়া করতে পারল না পুনম। চোখ বন্ধ অবস্থায় ভ্রু কুচকে গেলো তার আবার নড়তে গেলেই এবারও পারল না আর না পেরে টিমটিম করে চোখ খুলল পুনম। চোখ খুলে নিজের গায়ের উপর চন্দ্রকে দেখে ভয় পেলো। এই চন্দ্র ভাই এখানে কেনো?? এই লোকতো নিজের গায়ে অন‍্য কারো স্পর্শ মেনে নিতে পারে না কেউ ভুলেও ছুইলে খবর করে ছাড়ে তাহলে তার কি হবে ভেবেই ঢোক গিলল।
পরোক্ষনেই কাল রাতের কথা স্মরণ হতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। চন্দ্রকে ধাক্কানো শুরু করল।
— উঠেন এইযে,,,,, এই লোক উঠেনা কেনরে??
ঘুম ঘুম চোখে চন্দ্র তাকায় পুনমের দিকে।
— আমার ঘুম হয়নি ঘুমাও জোহরাজান,,
— আমার ঘুম শেষ খিদে লেগেছে সরেন নিচে যাব।
বলেই ধাক্কাধাক্কি শুরু করে চন্দ্র বিরক্তিকর চেহারা করে বলল — তুই একটা ডিষ্টার্ব
আবার পাশ ফিরে শুয়ে পরে। পুনম বিড়বিড় করে কি বলল নিজেও জানে না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চক্ষু কপালে উঠে গেছে। সকাল নয়টা কখন বাজল?? পুনম দ্রুত বিছানা ছাড়ে কাপড় নিতে আলমারির খুলে দেখে কালকে মুক্তির রাখা তার কোনো থ্রি পিছ নেই সব শাড়িতে কনবার্ট হয়েছে।।

নাক কুচকে ফেলল পুনম এখন এই শাড়ি পড়তে হবে ভেবেই আরো বিরক্তি লাগল তবুও সী গ্রিন কালারের একটা শাড়ি নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। নিজের মতো সময় নিয়ে গোসল সারে ধোয়া কাপড় বারান্দায় নেড়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঝাড়তে শুরু করে।
চোখের উপর পানির ছিটা পড়ায় চোখ মেলে তাকায় চন্দ্র। তাকিয়ে দেখতে পায় মোহনীয় রুপে ভেজা চুল মুছছে এক মায়াবী শ‍্যামকন‍্যা যার পায়ের নখ থেকে প্রত‍্যেকটা পশম অবদি মায়ার সাগর।
— হায়য় উফফ জোহরাজান এই সকাল সকাল এমনে ঘায়েল না করলেও পারতে এখন তো রুমে থেকে বেরতে দিতে ইচ্ছা করছে না।

সাইড হয়ে শুয়ে এক হাতে ভর দিয়ে মাথা তুলে বলল চন্দ্র। পুনম চন্দ্রের কথা শুনেও কিছু বলল না নিজের মতো কাজ করে চলল। পুনম নিজের চুল কোনো রকম ঢিল খোপা করল খুজেঁ দিলো একটা কাঠি। মাথায় কাপড় দিয়ে বের হতে নিলে ঝড়ের বেগে চন্দ্র পিছন থেকে ঝাপটে ধরল।
— একদম কোনো অসভ্যতামি করবেন না ছাড়েন আমাকে
ছোটাছুটি করে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল পুনম।
— লোভ দেখিয়ে পালিয়ে যাবি চন্দ্র বুঝি তা হতে দেবে কখনও না
চন্দ্রের কথায় অবাক হয় পুনম কি লোভ দেখাল সে এই লোককে?? পুনমকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ফাজিল হাসল চন্দ্র পুনম কিছু বুঝার আগেই তার ওষ্ঠপুট দখল হলো চন্দ্রের দখল দারিতে। পুনম আরো ছটফট শুধু করে চন্দ্রের কাজে ব‍্যাঘাত ঘটায় একহাত উন্মুক্ত উদরে রেখে অন‍্য ঘাড়ে দিয়ে শক্ত করে ধরে।

আয়েশী ভঙ্গিতে নিজের খায়েশ মিটিয়ে পুনমের ঠোঁট ছাড়ল। হাপাতে থাকল পুনম রক্ত শুণ্য ওষ্ঠ জোড়া আবারও লোভ জাগালো চন্দ্রের পুনমকে নিজেকে সামলানোর সুযোগ না দিয়ে বীনা নোটিশে আবার আধিপত্য বিস্তার করল পুনমের ওষ্ঠপুটে। এবার দাতের ঘসায় হালকা কেটেও যাচ্ছে তবে সেদিকে চন্দ্র মিয়ার কোনো হুশ । অনেক অপেক্ষার পর কাঙ্খিত জিনিস পেয়ে কি আর কারো হুশ থাকে চন্দ্রের ও নেই।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৩

হঠাৎই পূর্বের কান্নার শব্দ পুনমের কানে ভেসে আসতেই পুনম বেশ জোরদার ধাক্কা মারে। চন্দ্রের দিকে একপলক ও না তাকিয়ে দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে — ছ‍্যাহ এই চাচাতো শালা দেখি একটু রোমান্স ও করতে দেয় না বউয়ের সাথে।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৫