পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৮

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৮
সাদিয়া আক্তার

একসপ্তাহ পর,,
দুপুর বেলা বাসায় দুই জা ছাড়া আর কেউ নেই। তখনই কোথা থেকে নিশা এলোমেলো অবস্থায় হতদন্ত হয়ে বাসায় ঢোকে।। পূর্বকে খাওয়াচ্ছিল দেড় মাসের পূর্বকে খাওয়াচ্ছিল রোজিনা বেগম।।
— আআম্মুহ
কারো ডাকে দুইজনই পিছন ফিরে। এলোমেলো অবস্থায় নিশাকে দেখে অবাক হয় দুই জা রোজিনা বেগম চাদনী বেগম ছুটে আসে নিশার কাছে। নিশা ঝাপিয়ে পড়ে রোজিনা বেগমের বুকে
— কি হয়েছে নিশু মা,, তোর এমন অবস্থা কেনো??
রোজিনা বেগম মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল।

— আম্মু আমার সব শেষ সবব লোকটা আমাকে ধোকা দিয়েছে সে আমাকে বলেনি সে আগেও আরেকটি বিয়ে করেছে,,,
নিশার কথা শুনে অবাক দুইজা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আবার নিশার দিকে তাকায় রোজিনা বেগম নিশাকে সোফায় বসায় মিনুকে বলে পানি দিতে মিনু পানি নিয়ে আসতেই ঢকঢক করে খেয়ের পানির গ্লাস খালি করে।
ফের কেদেঁ দেয়।
— আআআম
কিছু বলতে নিলে তাকে থামায় চাদনী বেগম।
— আচ্ছা সব কথা পরে শুনব এখন চল রেষ্ট নিবি বলেই নিশাকে গেষ্ট রুমে নিয়ে যায়।।
রোজিনা মেয়েকে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে বের হয়।
— ভাবী এখন কী করব রুপশার বাবাকে ফোন দিব

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন

— হ‍্যা সাথে চন্দ্রের বাবাকেও ফোন দেই সবাই আসুক ওর কাছ থেকে শুনুক তারপর ঠিক করা হবে,,,
তারা কথা মতোই কাজ করে চাদনী বেগম পারভেজ ও কামরুল সাহেবকে ফোন দেয়। তারা জানায় এখনি বের হচ্ছে তারা ফোন কাটতে না কাটতে হাজির হয় নিশার স্বামী রাশেদ।
মেয়ের পরপরই মেয়ের জামাইকে দেখে অবাক তারা দুইজন। রাশেদ এসে মাথা নিচু করে কিছু বলতে নিলে চাদনী বেগম থামায় বলল
— কিছুক্ষণের মধ‍্যেই তোমার শশুর এসে পৌছাবে তখনই নাহয় সব কথা শুনব এখন এসেছো বসো,,,
বলেই রান্নাঘরে চলে যায় যতই হোক জামাই মানুষ। শাশুড়িরা কখনও জামাই আদরে কৃপনতা করে না সে তার মেয়ে সুখে থাকুক আর না থাকুক।
দশ মিনিট পরেই চন্দ্র মুক্তি ও পুনমকে নিয়ে প্রবেশ করে। সোফায় বসা রাশেদকে দেখে অবাক হয়না কারণ একটু আগেই চাদনী বেগম তাদের ডেকে পাঠিয়েছে জরুরী তলপে। সাথে রিশান শিহাব ও এসেছে।
চন্দ্র শিহাব রিশান ঈগল চোখে রাশেদের দিকে তাকিয়ে আছে।

— রাশেদ ভাই ছাদে চলেন,,,
রিশান রাশেদকে নিয়ে ছাদে যায়। — মামলাটা কি বুঝলাম না
ঢোক গিলল রাশেদ। ছা পোশা মানুষ রাশেদ মাল্টিন‍্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরী করে আচরণে জেন্টেলম‍্যান। বয়সে ছোট হলেও এদের সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে
রিশান শিহাব বুঝে অভয় দেয় সব খুলে বলার
— ভাই আমার কোনো দোষই নেই পরসু পযর্ন্ত নিশা ভালোই ছিলো কাল সকালে হঠাৎই জানতে পারি ও প্রেগনেন্ট ছিলো তাও কয়েকদিন আগে এবোর্শন করিয়ে এসেছে। জিজ্ঞাসা করলে রেগে চিল্লাচিল্লি করলে আমারও রাগ উঠে তাই দিছি এক চড় সেই জন‍্যই উল্টাপাল্টা কথা বলে চলে এসেছে। কোথা থেকে নাকি শুনেছে আমি বিবাহিত ছিলাম এখন আগের বউয়ের জন‍্য ওকে অবহেলা করি।।
রাশেদ করুন স্বরে বলল — বিশ্বাস করেন ভাই আমি এর আগে কোনো বিয়েশাদী করিনি।
রিশাদ ও শিহাব চন্দ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে

— আপনি কি ভেবেছেন আমরা কোনো খোঁজ খবর না নিয়ে চুপচাপ থেকেছি। আমরা সবসময়ই খোঁজ খবর রেখে নিশা ভালো আছে জেনেই চুপ থেকেছি,, আর টেনশ‍্যন করবেন না মামারা আসুক দেখী কি করা যায়।
ঘন্টা খানিকের মধ‍্যেই সকলে এসে পৌঁছে যায় সাথে রুপশা ও লিমনও আছে।।
নিশাকে ডাকে কামরুল সাহেব নিশা বাইরে এসে রাশেদকে দেখে তার দিকে তেড়ে যায়
— এই এই তোমাকে না বলেছি আমার পিছু পিছু আসবে না এই তোমারে না বলেছি ডিবোর্স পেপার পাঠাতে,,,,
— নিশা
বড় চাচার গম্ভীর স্বরে নিশা থেমে যায় — এখানে বড়রা আছে সেই সহবত করো। যাই হোক রাশেদ তুমি বলো কি বলবে,,,,
রাশেদ শুরু থেকে আবার সব বলল। সব শুনে রোজিনা বেগম চাদনী বেগম অবাক নিশা তাদের উল্টো কথা বলেছে বাঘীনির মতো তেড়ে আসে নিশা — এই এই আপনি আগে বিবাহিত ছিলেন না

— তোমার কাছে আছে তার কোনো প্রমান দিতে পারবে,,,
রাশেদের কথায় নিশা খানিকটা দমল। ফের বলল
— আমি কি করব না করব তার কইফিয়‍্যত নিশ্চয়ই আপনাকে দিব না,,
এবার রাশেদ ঠাসসস করে নিশার গালে একটা থাপ্পড় মারে উপস্থিত সবাই অবাক পারভেজ সাহেব কামরুল সাহেব এগিয়ে আসতে নিলে রাশেদ আঙ্গুল উঠিয়ে বলে — এগোবেন না আমার বউ কথা শুনেনি তাই আমি মেরেছি।
নিশার দিকে তাকিয়ে বলে — অনেক উড়েছ এবার ডানা ছাটার সময় হয়েছে বয়স কম দেখে ছাড় দিয়েছি আর না এবার চলো
বলেই স্তব্দ হয়ে গালে হাত দিয়ে থাকা নিশাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।।
রাশেদ নিশাকে নিয়ে যেতেই রিশাদ শিহাব উচ্চস্বরে হেসে দিলো। চন্দ্র ভাবলেসহীন। পুনম চন্দ্রর দিকে চায় এই লোকই নিশ্চয়ই কিছু করেছে নাহলে রিশান ভাই শিহাব ভাই এতো হাসাহাসি করত না।

— এই তোরা এমন পাগলের মতো হাসছিস কেনো,,??
— আরে বড় মামা ঐ হাটু কাপা বেটারে এই আঙ্গুল উচু করার ট্রেনিং দিতে পাক্কা দশ মিনিট লেগেছে। দেখলে না তোমাদের দিকে আঙ্গুল তোলার সময় থরথর করে কাপছিল ঐ ব‍্যাটা।
— এইটা করাটা কি ঠিক হলো??
পারভেজ সাহেবের কথায় চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল
— সব ঠিক শশুর আব্বা! নিশা একদম বেয়াদব হয়ে গেছে ওর কতবড় সাহস না হলে একা একা এবোর্শন করে আসে। ওকে ঐ লোক সামলাতে পারে না বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছিল তাই একটু চাপে রাখার ট্রেনিং দিলাম। কয়েকদিন চাপে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে আমার শাশুড়ি আম্মা তো এরে একেবারে ছাড় দিয়ে আসমানে উঠায় রাখছে,,,
চন্দ্রের গম্ভীর স্বর শুনে কিছু বলার সাহস পায়না রোজিনা আসলেই দোষটা তার সে এই দুই মেয়েকে আদর ভালোবাসা দিয়ে রেখেছে তাই বড়টা কোনরকম সামলে থাকলেও নিশাটা একদম বেপরোয়া হয়েছে। আর যাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে সেই এখন সবার চোখের মনি ভালো বউ,,,।

পুনমের গলায় ছোট ছোট চুমু কাটছে চন্দ্র সেই সাথে মৃদু দংশন ও চলছে। পুনম খামচে ধরে চন্দ্রর টিশার্ট এবার চন্দ্রর হাত শাড়ি সরিয়ে উন্মুক্ত উদরে যেতেই পুনম চন্দ্রর পিঠ খামচে ধরল।
— একটা কথা বলি,,,, কাপা কাপা স্বরে বলল পুনম,,
— উহু মুড নাই পরে
বলেই পুনমের ওষ্টপুট দখলে চলে গেলো চন্দ্রের। নিজের খায়েশ মিটিয়ে যখন ছাড়ল তখন পানি ছাড়া মাছের মতো পুনমের অবস্থা
— রাক্ষস একটা,,,
— তুমি তার বউ রাক্ষসী

বলেই পুনমের গলায় মুখ ডুবায় মিনিটের মধ‍্যেই তলিয়ে যায় গভীর ঘুমের অতলে। পুনম ছোট ছোট বিলিকাটে তার চুলে আরামে আরো ঝাপটে ধরে চন্দ্র পুনম মুচকি হেসে কপালে চুমু খায়। চন্দ্র কপাল কুচকে আবার ঘুমিয়ে যায় এবার আর কিছু করে না পুনম কাল রাতে বেচারা ঘুমাতে পারেনি,, ভিডিও এডিটিং করে সেটা ছেড়ে ঘুমাতে ঘুমাতে তখন রাত তিনটা। তাই এখন দ্রুত ঘুমালো নাহলে এই লোক এতো দ্রুত ঘুমানোর লোক না।।
মাগরিবের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে চন্দ্রের। দেখে সে এখনো পুনমের বুকেই ঘুমিয়ে আছে চন্দ্র উঠতেই পুনম পাশ ফিরে শুলো।
— জোহরা,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৭

পুনমের গালে নাক ঘসে তাকে ফিসফিসিয়ে ডাকে চন্দ্র — উমমমম
— উঠো আজান দিয়েছে নামাজ পরবেনা
— মাত্র ই তো আসরের আজান দিয়েছে আরেকটু ঘুমাই,,,
— এখন মাগরিব
বলতেই পুনম তড়াক করে চোখ মেলল। লাফ দিয়ে উঠে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলল আরো আগে ডেকে দিবেন না আসরের নামাজটা কাযা গেলো।।
চন্দ্র ভ্রু কুচকে বারান্দার সিড়ি বেয়ে উপরে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে চলে যায় নামাজের উদ্দেশ্যে।।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৯