পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৯
সাদিয়া আক্তার
চন্দ্রদের মাষ্টার্সের রেজাল্ট দিয়েছে চন্দ্র শিহাব রিশান তিন জনেই বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে। চন্দ্রের সিজিপি এ 3. 60 এসেছে আবার জাবির ছাত্র হিসেবে বেশ ভালো বলা চলে ক্লাস টপার তাই ভার্সিটি কতৃপক্ষ থেকেই অফার অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর পদে নিযুক্ত হবে তবে ফর্মালিটি হিসেবে একটা ভাইবা দেয়া লাগবে যা আর কিছুদিন পরেই।
চন্দ্রদের এই অ্যাচিভমেন্ট হিসেবে সবাই তিনজনের উপলক্ষ্যে ছোট্ট একটা গেট টুগেদার পার্টির আয়োজন করেছে। রিশানরা,, রুপশারা,, সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করবে সাথে মুক্তির হবু শশুর বাড়ির লোকজনদের দাওয়াত করা হয়েছে একসাথে বসে বিয়ের ডেট টাও ঠিক করা যাবে।
সকাল থেকেই রান্নাঘরে ব্যস্ততায় কাটছে তিন রমনীর। আজকের রান্নার লিষ্ট বেশ লম্বা আবার দুপুরের দাওয়াত তাই তিন রমনী ব্রেকফাস্টের পরপরই রান্নাঘরে ঢুকেছে।
পুনম বিরিয়ানির জন্য গোশটা মেরিনেট করে সিলভার পেপার দিয়ে ঢাকতেই টিং করে একটা আওয়াজ হলো। পুনম হাত মুছে চেক করতেই দেখে — দেখ জোহরা বিবি পাচঁ মিনিটের মধ্যে আসবা নাহলে খবর আছে অর ইফ আই কাম ইয়্যু আর ফিনিশড
চন্দ্রের এমন হুমকি স্বরূপ মেসেজ দেখে মুখ বাকায় পুনম তৎক্ষণাৎ উপর থেকে গর্জন আসে চন্দ্রের
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— দেখ তো মা কি জন্য চিল্লাচিল্লি করছে যা তো,,,
চাদনী বেগমের কথায় পুনম নাক কুচকে বলল
— মা তোমার ছেলে শান্ত থাকে কখন
পুনমের বলা শেষ হতেই আরেকবার ডাকা হয়ে গেলো।
— যা পুনম নাহলে ঐ শের তার গর্জনেই আজ তোর কান ঝালাপালা করে ফেলবে।
— কিরে যা পুনম,, এখানের অনেক কাজই এগিয়ে গিয়েছে চিন্তা করিস না
মায়ের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে পুনমের। মাথা নাড়িয়ে প্রস্থান করে নিজের কক্ষের উদ্দেশ্যে,,,,,,
— কি সমস্যা আপনার বাসায় হাজারো কাজ এর মধ্যে আপনার ডাকাডাকিতে অতিষ্ট আমি,,,
চন্দ্র হ্যাচকা টানে পুনমকে বুকে জড়ায়। পুনম চন্দ্রের বুকের উপর আছরে পরতেই পুনমের খোপা খানা খুলে দেয় চন্দ্র নিমিষেই কান ভেদ করে কপালের দিকে আসে কয়েকটি চুল সেগুলো শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে সরাতে সরাতে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল — সকাল থেকে এনার্জি ড্রিংকস পাইনি সেটি দিয়ে যাও,,,
বলেই চন্দ্র এগিয়ে আসতে নিলে তাকে থামায় পুনম — এখন এনার্জি নেয়ার সময় না ছাড়েন,,
চন্দ্র পুনমকে নিয়ে গড়াগড়ি খায়ে পাল্টি দিয়ে পুনমকে চন্দ্রের বুকের নিচে নিয়ে আসে পুনমের কানে ফিসফিসিয়ে বলে — এই যে এই বুকের নিচে পিসে ফেলব তোমাকে। আমার নিচ,,,
বলতে না দিয়ে পুনম বলল — চুপ নির্লজ্জ পুরুষ,,
— উহু জোহরার শের “এ আলীর কাছে একটা বিজনেস অফার আছে সে যদি রাজি থাকে,,
পুনম মধ্যমা আঙ্গুল খানা চন্দ্রের দিকে ঠেকিয়ে বলল — আপনার প্রতি আমার একটুও ইন্টারেষ্ট নাই নাতো আপনার এই বিজনেস অফারে।। আমাকে হাসিল এতো সহজ না
— আমি শের “এ আলী জোহরার শের “এ আলী জোহরাকে কিভাবে হাসিল করতে হয় খুব জানা আছে
বলেই ফাজিল হাসল। সেই হাসিতে পুনম বুঝল এখন ছাড় পাবে না — আরে মুক্তি আপু,,
তড়াক করে সেদিকে তাকায় চন্দ্র তার সুযোগ নিয়ে পুনম বাধন ছুটাতে চাইলেও পারে না।।
— কি ভেবেছিলে ছুটতে পারবে,, শের “এ আলীর বাধন তার জোহরার জন্য আজীবন থাকবে।
এবার পুনমই চন্দ্রর গলা জড়িয়ে ধরে চন্দ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে — এই কালো রুপহীন মেয়েটার প্রতি এতো ভালোবাসা কেনো শের “এ আলী সাহেব,,??
— এই কালো মেয়েটা আস্তো এক নেশা। কৃত্রিম নেশার মতো রং গুন বিবেচনা না করে যেমন নেশাক্ত হওয়া যায় তেমনি এই কালো মেয়েটা কি জানে তার হাটার মধ্যেও আমি নেশাক্ত হই। এই যে তার ঘামার্ত মুখস্রিতেও আমি মাদকতায় ডুবে যাই।
মাথা নাড়ে পুনম না সে জানে না। বাকা হাসে চন্দ্র জানিয়ে দেই বলেই ডুব দেয় অমৃত সুধায়। যে প্রেম সুধা পানে সদা সচেষ্ট চন্দ্র উরফ শের “এ আলী।।
পুনম ও বেশামাল আজ চন্দ্রকে বাধা দেয়ার জায়গায় আরো আকরে ধরে চুলে খামচে ধরে এগিয়ে আনে। তবে তাদের এই কাঙ্খিত মুহুর্তে অনাকাঙ্খিত হাড্ডি হিসেবে অলওয়েজ হাজির রাসমিক আহমেদ পূর্ব।। তবে আজ সে একা না সাথে আছে মুক্তি ও রুপশা,,,,
— এই পূর্ণ মরলি নাকি দ্রুত গেট খুল,,, ঐ পূর্ণ
রুপশা মুক্তির দরজা ধাক্কা ধাক্কির ঢেলায় চন্দ্রের রোমান্স টাইমে ব্যাঘাত পরায় সে বেজায় বিরক্ত।
— এরা আর সময় পায়না আমার রোমান্স টাইমেই এদের আসতে হবে,,,
— আপুদের কি দোষ তারা তো আর জানে না তাদের ভাই অলওয়েজ রোমান্স মুডে থাকে,,,,
মুখ বাকিয়ে বলে উঠে দরজা খুলে পুনম।।
— কিরে এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে??
— ঐ আপু ওয়াশরুমে ছিলাম
আমতা আমতা করে বলল পুনম। মুক্তি পুনমকে টেনে বলল — ভাই পুনমকে নিয়ে যাই,,
— হ্যা নিয়ে যা আমার রেজিস্ট্রি করা বউ এখন তোদের সম্পদ,, বিড়বিড় করে বলেই বালিশে মুখ গুজে ঘুমানোর চেষ্টা করল।।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে আজ আবার সবাই বসেছে চন্দ্রের সেই চিলেকোঠায়। সাথে আছে আজ ইহান,, কাইফি,,,
— চন্দ্র আপনার চিলেকোঠা বেশ সুন্দর,,, বেশ সুন্দর সাজিয়েছেন,,
— ধন্যবাদ ভাই তবে এবারের ডেকোরেশন আমি করিনি
এতোক্ষণ সবাই রিডেকোরেট করা চিলেকোঠাটা দেখছিল তবে চন্দ্রের কথায় তার দিকে তাকায়।।
— তাহলে কে করেছে??
— আমার মিসেস,, এগুলো সব পেইন্টিং প্লাস্টিক পেইন্টিং করেছে পুনম আর ফার্নিচার সবই এভরিথিং ওর পছন্দ,,,
— ওয়াও পুনম আপনার তো বেশ গুন
কাইফির কথায় আগুন চোখে তাকায় চন্দ্র। পুনম বিব্রত বোধ করে তবুও মুচকি হাসে,,,
— নুডুলস খাবি শিহাব,,,
— উরিম্মা চাদঁ মামার হাতের নুডুলস ছাড়া যায় নাকি,,,
— কি কাইফি সাহেব চলবে নাকি আজ তো আপনি আমাদের মেহমান,,,
— অবশ্যই তবে হালকা ঝাল,,,,,
চন্দ্র বাকা হাসে রান্নাঘরে যেতে যেতে পুনমকে ইশারা করে তার সাথে যেতে পুনম এখন আর অমান্য করার সাহস পায় না। এই খ্যাপা ষাড় খেপে আছে তাই তার কথা মানাই উত্তম।
রান্না বান্না শেষে সবারটা একে একে আনে পুনম চন্দ্র কাইফির হাতে নুডলস এর বাটি ধরিয়ে দিয়ে তার সামনে ধীরে ধীরে বলল — বাড়ির মেহমান দেখে আজ আপনি স্রেফ হালকার উপর ঝাটকা পাবেন তবে সাবধান ভবিষ্যতে আই ইইল নট ফরগিভ ইয়্যু,,,,
চন্দ্র সরে গিয়ে পুনমের পাশে বসে।
কাইফি ভ্রু কুচকে কাটা চামচ ডাবিয়ে নুডলস নিয়ে মুখে দিতেই ঝটকা খায়। তার মনে হচ্ছে এক খাবলা মরিচের গুড়া সে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে।।।
— ইহান ভাই নুডলস কেমন হয়েছে??
চন্দ্রের কথায় ইহান মুচকি হেসে বলল — সেরা চন্দ্র আপনি এতো ভালো রাধতে পারেন জানা ছিলো নাতো,,,
— আরে ভাই আমাদের চন্দ্র বেশ গুনী আরে কাইফি সাহেব খাচ্ছেন না কেনো??
লিমন তারা দিলো কাইফিকে কাইফি ঠোট চেপে কোনো রকম ঢোক গিলল। নুডলস যেদিক দিয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে জ্বলে যাচ্ছে।। সকলের সামনে ফেলতেও পারছেনা। কাইফি চন্দ্রর দিকে তাকায় তার চোখের জ্বলন্ত ভাষা বুঝতে সময় লাগে না যে চন্দ্র কাইফির মুখে তার বউয়ের প্রশংসা পছন্দ করে নাই,,,
তবে কাইফিও ধীরে ধীরে নুডলস শেষ করে নিরব উত্তর দেয় সে আরো প্রশংসা করবে পুনমের।
বাকা হাসে চন্দ্র।
— আরে কি হয়েছে আজ মেহফিল এতো চুপচাপ কেনো জমজমাট করো,, শুরু করো মুক্তিরে দিয়ে,,
লিমনের কথায় মুক্তি বেশ লজ্জা পায়। তার বিয়ে ঠিক হলেও সে এই লোকটা সাথে হাতে গোনা কয়েকদিন কথা বলেছে তাই খুব একটা ফ্রি হতে পারেনি,,
মুক্তিকে চুপ থেকে ইহান বলল — মুক্তি তো চুপ করে আছে আমিই বলি,,
হইহই করে উঠে লিমন রূপশা। মুক্তি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে আর অন্যদিকে পুনম চন্দ্র ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। চন্দ্র পুনমের সাথে এমন ভাবে মিশে বসে আছে যেনো পারলে তাকে কোলে নিয়েই বসে থাকতো,,
— নেন কোলে নিয়েই বসে থাকুন অসভ্য লোক,,
ফিসফিসিয়ে বলল পুনম চন্দ্র ও সেভাবেই বলল
— আমার কোনো সমস্যা নেই কোলে নিয়ে বসে থাকতে তবে তুমি লজ্জা পাবে পরে আমার দোষ দিবে বলেই হাত দ্বারা মিশিয়ে অপর হাত রাখে উন্মুক্ত উদরে।।
শিরশির করে উঠে পুনমের সমস্ত কায়া। ওদের কথা বার্তার ফাকে মুখ গুজে পুনমের গলদেশে।
কেউ এদিকে তাকানোর আগেই পুনম তড়াক করে সরে যায়। চন্দ্র সবার দিকে তাকিয়ে বলল
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৮
— ভাই দুপুরে ভাত খেয়েছো এখন একটা ঘুম দাও দেখবে মন প্রান দুটোই চাঙ্গা,,,
— তা চন্দ্র মিয়া তোমার কি চাঙা হবে মন নাকি প্রান,,,
লিমনের কথায় হাসির রোল পড়ল সবার মাঝে পুনম লজ্জায় মাথায় নিচু করে তবে বেলাজ চন্দ্রের তাতে হুশ নেই সে তার জোহরার লাজে রাঙ্গা আদল দেখতে ব্যস্ত যা তার কাছে অতীব জরুরি।।