পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৫

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৫
সাদিয়া আক্তার

— যাহ বা*ল আর কোনো কাজই করব না
বলেই হাতের ফুলের স্টিকের ঝুড়িটা ফেলে দিল। রিশানের দিকে বিরক্ত চোখে তাকাল চন্দ্র শিহাব
— দ্রুত কর একটু পরেই ছেলে পক্ষের লোকজন এসে পরবে
— শা*লা তুই তো আর কথাই বলিস না। যত নষ্টের গোড়া তুই!! ঐ ছোট ভাই নয়ন পযর্ন্ত বিয়ে করে ফেলল আর পাচঁ বছর যাবত প্রেম করে এখন পযর্ন্ত বিয়ে করতে পারলাম না। তুই চাদ মামা আগেই বিয়ে করে আমাদের মতো সিঙ্গেলদের অন্তরে জ্বালা সৃষ্টি করছিস

— ভাই আমার বিয়েতে কিন্তু আপনাদেরই হাত ছিলো আপনারা জোর করেই দিয়েছেন।
নয়নের কথায় বিরক্তি চোখে তিনজন তাকায় নয়ন জোরপূর্বক হেসে নিজের কাজ করতে থাকে। তখনই মিহি আসে একগ্লাস শরবত নিয়ে লাজুক হেসে বলে — অনেকক্ষণ কাজ করেছ একটু শরবতটা খাও
নয়ন মুচকি হেসে শরবতটা খায়। আর চলতে থাকে তাদের প্রেমময় বার্তা প্রথম প্রথম নয়ন মিহিকে মানতে চায়নি খারাপ ব‍্যবহার করেছে মিহিও কম যায়না চন্দ্রদের ভয় দেখিয়ে জোর করে সব আদায় করেছে এবং নিজের মতো করে ভালোবেসেছে। এখন আবার নয়ন মিহির ভালোবাসায় সিক্ত।।
— দেখ দেখ কি দিনকাল আইল আমার জুনিয়রদের প্রেম দেখা লাগছে
শিহাব চন্দ্র নয়ন মিহি কেউই পাত্তা দিলো না রিশানকে তাই ব‍্যাচারা গাল ফুলিয়ে আবার নিজের মতো কাজ করতে থাকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সন্ধ‍্যার পরপরই মুক্তিকে স্টেজে নেওয়া হয় বাসার ছাদেই হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। কামরুল সাহেব ও পারভেজ সাহেব এবার রান্নার ভেজালে নেই সকল কাজ তারা চন্দ্রদের উপর দিয়ে নিজেরা অন‍্যান‍্য কাজ করছে। বিয়ে বাড়িতে না হলেও হাজারটা কাজ আছে।।
সাড়ে সাতটার দিকে রুপশারা মিলে ইহানের আরো কয়েকজন ভাইবোনেরা মুক্তিকে হলুদ দিতে এসেছে।
— কিরে পূর্ণ এখনো রেডি হসনি??
— না আপু বাড়িতে অনেক লোকজন তাদের চা নাস্তা দেয়া আজ আবার রেনু মিনু হাত গুটিয়ে বসে বসে বিয়ের জন‍্য নাচতে ব‍্যস্ত।
— আচ্ছা দ্রুত যা রেডি হো,,,
— মুক্তি আপুকে নিয়ে গেছে স্টেজে!!
— হ‍্যা তুই যা এগুলো আমি নিয়ে যাব
— হ‍্যা এই ফলের থালাটা সাজানো হলেই যাচ্ছি।
পুনম থালা সাজিয়ে রুপশাকে বুঝিয়ে চলে যায় ঘরে রেডি হতে রুপশা ঝিনুক ও রিমির সাহায্যে থালা গুলো নিয়ে যায় হলুদ উপলক্ষ্যে ইয়া বড় একটা কেক এনেছে সেটা মাঝখানে রেখে চারিদিকে থালা গুলো রাখে।
চন্দ্র রান্নার কাজ শেষ করে গোসল করতে ঘরে ঢুকে দেখে পুনম পেটিকোট পড়ে কোনো রকম শাড়ি পেচিয়ে বের হয়েছে ভেজা চুলে গামছা পেচিয়ে বের হয়েছে চন্দ্র ভ্রু কুচকে বলল

— এই টাইমে গোসল করেছ ঠান্ডা লেগে যাবে তো
— গোসল না করে শান্তি পাচ্ছিলাম না!! আপনি গোসল করবেন??
— হু
— আচ্ছা কোন পাঞ্জাবী বের করব নাকি সবার সাথে ম‍্যাচ করে পড়বেন
— ঐ ঝমকালো কালার আমার পোসাবে না তুমি অফওয়াইট পাঞ্জাবীটা বের করো
বলেই চন্দ্র গোসলে চলে যায় দ্রুত এখন তার বাহিরে থাকা মুশকিল মেয়েটাকে বেশ আবেদনময়ী লাগছে কন্ট্রোল করতে পারতো না চন্দ্র।
গোসল সেড়ে বাইরে আসতেই চন্দ্রর শিথিল ভ্রু জোড়া কুচকে যায় কেননা পুনম বাঙালী ভাবে আটপৌড়ে শাড়ি পড়েছে।
বড় বড় কদম ছেড়ে পুনমের পিছে দাড়ায় চন্দ্র। পুনম আচল প্লেট করে ভাজ করতে করতে চন্দ্রকে দেখে বলল — গোসল শেষ এখন দ্রুত রেডি হন
চন্দ্র কিছু না বলে পুনমের উন্মুক্ত উদরে খামচে ধরে বলল — এভাবে শাড়ি পরেছিস কেনো??

— কুচি দিয়ে শাড়ি পরতে পারি নাতো। পুনমের আহ্লাদী স্বর
চন্দ্র পুনমের উদর আরো খামচে ধরে। পুনম চোখ বন্ধ করে ফেলে ঢোক গিলে। চন্দ্র বলল — শাড়ি পড়ার কি দরকার পাচঁ মিনিট সময় এখনই চেঞ্জ করবে
পুনম মিনমিন করে বলে — সবাই পড়বে
চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — বাড়িতে অনেক লোকজন তুমিও কাজের তালে থাকবে তাই এভাবে শাড়ি না পড়াই ভালো
পুনম বুঝল চন্দ্র কি মিন করতে চায় তারো খুব একটা ভালো লাগছে না তবে সবাই ঠিক করেছে শাড়ি পরবে আর তার হলুদে পড়ার মতো কোনো জামাও নেই ফের মিনমিন করে বলল — অন‍্য ভাবেই পরি আপনি একটু সাহায্য করেন না,,,,,
চন্দ্র পুনমের কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলে না। পুনম বুঝে নিবর সম্মতি আছে পুনম পিছন ফিরে চন্দ্রকে বলে — একটু বাইরে যান

— কেন আমার ঘর আমার বউ আমি কেনো বাইরে যাব??
পুনম হতাশা নিঃশ্বাস ফেলে লাইট নিভিয়ে দেয়। মৃদু আলোয় শাড়ি কোনো রকম পেচিয়ে লাইট জ্বালাতে যেতে নিলে উষ্ঠা খেয়ে পড়তে নিলে চন্দ্র ঝাপটে ধরে নেশাক্ত স্বরে বলল — হলুদে না গেলে হয়না জোহরা
পুনম ঢোক গিলল বলল — না গেলে কেমন দেখায় না মুক্তি আপু আপনার বোন হয় তো
চন্দ্র কোলে তুলে পেচানো শাড়ি খুলে পড়িয়ে দিতে দিতে বলল — রাতটা আমার কিন্তু জোহরা,,
— হু কোন রাতটা আবার আপনার হয়না হু
বিড়বিড় করে বলল পুনম যার পুরোটাই চন্দ্রর কানে গেলো তবে কিছু বলল না ইউটিউবে শাড়ি পড়ার টিউটোরিয়াল ভিডিও ছেড়ে শাড়ি পরাতে থাকে।
চন্দ্র পুনম একসাথেই ছাদে যায়। ততক্ষণে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে শিহাব ওদের দেখে বলল — ঐ তো জোড়া কবুতর এসে গেছে মুক্তি তুই এবার হলুদ লাগা
প্রথমে কামরুল সাহেব ও চাদনী বেগম একসাথে হলুদ লাগায় পরে পারভেজ সাহেব রোজিনা বেগম একসাথে হলুদ লাগায়। একে একে সবাই হলুদ লাগায়। রাইয়‍্যান মুক্তির মুখে হলুদ মাখিয়ে বলল — আপু তোমার বিয়েতে এতো খেটেছি সেই জন‍্য তোমার একখান ননদ আমি পাওনা বুঝছ।

— এখনো সাড়ে সতেরো বছরে আছিস এখনই বিয়ের চিন্তা ভাবনায় আরে ভাই এখানে তোর বড় বড় দুইটা ভাই আছে তাদের দিকে তাকা,, তাদের জন‍্যও মেয়ে দেখ।
রিশানের কথায় পিছন থেকে ঝিনুক বলল — আপনার জন্যে আমি মেয়ে দেখী রিশশশান ভাইইই।
ঝিনুকের কথা শুনে ঢোক গিলল রিশান আর সবাই উচ্চস্বরে হেসে দিলো।
— আরে কেকটা কাটবা নাকি দেখো কেকটা কখন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে বলতে আয় আমাকে কাট হায়য় বেচারা
রিমির কথা শুনে শিহাব বলল

— চুপ কেক খাদক রিমি আজকে কেক কাটব না কি করবি
— কিছু করব না যাষ্ট খাবলা মারব,,, বলেই কেকে খাবলা মারতে যেতে নিলে সবাই তাকে ধরে আটকায় এই কেক লোভী মেয়েটা সব কিছু লোভ সামলাতে পারলেও কেকের লোভ সামলাতে পারেনা। হইহুল্লোর করে ভাই বোনেরা কেক কাটে বড়রা কেউ সেখানে উপস্থিত।।
তখনই রাইয়‍্যান বলে — আপা চলো নাচ গান হয়ে‍ যাক
সবাই একসাথে চিল্লিয়ে বলল — হয়ে যাক,,,,,
রাইয়‍্যান কালা চাশমা গান ছেড়ে দিলো একে একে সবাইকেই টেনে নিলো নিচের জন‍্য। তবে চন্দ্র পুনম দুজনেই পিছনে বসে আছে একজন মুক্তির পিছনে আরেকজন সবার পিছনে। এই একটা বিষয়ে এদের খুব মিল এরা এসব পছন্দ করে না চন্দ্রকে টেনে আনার সাহস না করলেও পুনমকে টানাটানি করল। তখনই চন্দ্র পিছন থেকে বলল — ওরে ছাড় মুক্তির সাথে ও এখন মেহেদী দিবে
সবাই নিরাশ হয়ে চলে যায়।
রাতে কতটা বাজে হিসেব নেই চন্দ্র ডুবে আছে জোহরায়।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৪

— এই ছাড়েন কাল সকালে তাড়াতাড়ি উঠা লাগবে,,, হাতে মেহেদীর ভালোই ফায়দা উঠাচ্ছেন।
বাকা হাসে চন্দ্র
— উহু আগেই বলেছি রাতটা আমার
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করল পুনম। জানে এখন আর ছাড়া পাবে না আবারও দুজনেই বিলীন হয় উষ্ণ ভালোবাসায়। চন্দ্র বিলীন হয় তার পুর্ণিমায়।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৬