পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬০

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬০
সাদিয়া আক্তার

ক‍্যাফেতে বসে আছে নাওয়াজ শেখ ও চন্দ্র। দুজনেই নিশ্চুপ চন্দ্র কিছু বলছে না শুধু নাওয়াজ শেখের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিরবতা ভেঙ্গে শেষমেশ নাওয়াজ শেখ মুখ খুললেন
— তোমার ফুপির বিয়ে হয়নি,,
— না হয়নি কোনো এক কাপুরুষের জন‍্য নিজের বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল সেই কাপুরুষ তাকে গ্রহন করেনি। গ্রামের মেয়ে বিয়ে ভাঙ্গার সাথে সাথে কপালটাও ভেঙ্গে যায় তাই সেই ভাঙ্গা কপাল নিয়ে কারো সাথে জড়ায়নি! পিছন থেকে বলল পুনম।
নাওয়াজ শেখ অবাক চোখে পুনমের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেয়। চন্দ্র এখনো তার দিকে তাকিয়ে পুনম তাকে ফোন দিয়েছিল তাই চন্দ্র বলেছিল ক্লাস শেষে সে নাওয়াজ শেখের সাথে দেখা করতে যাবে। তা শুনে পুনম ও যাওয়ার ইচ্ছা পেষণ করতেই চন্দ্র আর মানা করেনি।

— জানি আমি ভুল তবে মাকে ত‍্যাগ করার মতো সাহস আমার ছিলো না
পুনম কথা শেষ করতে না দিয়েই বলল — তাই আমার ফুপিকেই ত‍্যাগ করলেন তাইতো,,
হাসে নাওয়াজ শেখ। এই হাসিতে কি ছিলো বুঝে চন্দ্র পুনম তবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে বুঝে এই লোকটাও খুব একটা ভালো নেই। এই পুরো কনর্ভাসেশনে চন্দ্র চুপ ছিলো এবার মুখ খুলে বলল — কি জন‍্য আমাকে ডেকেছেন??
সময় নেয় নাওয়াজ শেখ তারপর শ্লেষ মাখা স্বরে বলল — মাফ চাওয়ার জন‍্য। অতীতে করা কর্মের জন‍্য মাফ চাইতে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমি আপনাকে কোনোভাবে মাফ করতে পারব না যার সাথে করেছেন তার কাছেই নাহয় মাফ চাইলেন,,,,
— ওর সামনে দাড়ানোর মতো সৎ সাহস আমার নেই ঐ যে কাপুরুষ আমি,,,
তখনই পুনম বলল — মেনে নিবেন আমার ফুপিকে এবার তার সঙ্গে হাত হাত মিলিয়ে পাশে থাকবেন নাহয়
— তা হয়না যেই চোখে একরাশ ভালোবাসা ও আমার জন‍্য উম্মাদনা দেখতে পেতাম সেই চোখে এখন শূন্যতা ছাড়া আর কিছু পাইনা। ঘৃণারও যোগ্য আমি নই যাই হোক আমি চাই তোমরা ওর জীবনটা গুছিয়ে দাও
— গুছানোর হলে আগেই গুছিয়ে নিতো একুশটা বছর কম সময় না
চন্দ্রের গম্ভীর কন্ঠে কেমন ক্ষোভের আভাস পেলো নাওয়াজ শেখ ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠল তার। সে বলল — শুনেছিলাম তোমার মামার সাথে ওর বিয়ে ঠি,,,
নাওয়াজ শেখকে কথা শেষ না করতে দিয়ে চন্দ্র বলল — আমার মামা বিবাহিত তার একজন ছেলে সন্তান আছে,,,, তাকে গুছিয়ে নেয়ার জন‍্যই আমার নানী খুব একটা আমাদের বাসায় আসত না।
নাওয়াজ শেখ চুপ করে গেলেন এবার পুনম কাতর স্বরে বলল — স‍্যার আমার ফুপিকে আগলে নেয়া যায়না
নাওয়াজ শেখ তাকায় পুনমের দিকে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল — নারে মা তা হয়না কিছু কিছু সম্পর্ক অপূর্ণতাই সুন্দর। তাকে মেনে নেয়া সম্ভব না।
বলেই নিজের চোখের অশ্রু লুকিয়ে নাওয়াজ শেখ চলে গেলো । চন্দ্র পুনম তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল

— দুপুরে খেয়েছিলে??
ঠোট উল্টায় পুনম। চন্দ্র বলে — কিছু খাবা
— উহু চলেন বাসায় যাব মুক্তি আপু রুপশা আপু ওয়েট করতেছে
মুচকি হেসে মাথা নেড়ে পুনমকে নিয়ে উঠে দাড়ায় চন্দ্র।
রিক্সা নিতে গেলে পুনম চলল — হেটে যাই
চন্দ্র বিনা বাক‍্যে মেনে নেয় হাটতে থাকে জোহরার হাত ধরে। পুনম এদিক ওদিক দেখতে দেখতে হাটছে
— রাস্তার কি রুপ বাড়ছে নাকি নতুন কিছু যোগ হয়েছে,, ঐদিকে এতো কি দেখছো??
— সেদিনের ঐ ঢেকীটা খুজছি
— সেটা আমাকে বললেই হতো আমি পাশে থাকলে নজর যেনো অন‍্য কোনোদিকে না যায়,,,
পুনম মিটিমিটি হেসে মাথা নাড়ায়। এই পাগল লোকের কান্ডকারখানা তার বেশ লাগে!!!!
দশ মিনিটের মতো ঢেকীতে চড়ে বাসায় আসে পুনমরা
ড্রয়িং রুমে রুপশারা বসা পুনম আশেপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল — ফুপিরা কই
— বড় ফুপি বাসায় গেছে আর বেলা ফুপি চলে গেছে অনেক বলেও আটকাতে পারিনি!!
মুক্তির নিরাস কন্ঠস্বর।
পুনম চন্দ্র একে অপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

— ভাই তোরা কি ফেবিকল নাকি যেখানেই যাস আটকে যাস
রুপশার কথায় চন্দ্র ভ্রু কুচকে বলে — লিমন ভাই তাহলে তো আপনা সুপার গ্লু আপনারদের ছুটাতে বেশ কষ্ট হয়,,,
লিমন করুন কন্ঠে বলল — কি করব বলো ভাই একটা মাত্র বউ
— তো আমারও একটাই বউ ওকে
ইহান তখন বলল — দুই চারটা হলে মন্দ হতো
লিমন চন্দ্র একযোগে বলল — ঠিক
ঠিক বলেই পাশে রমনীদের দিকে নজর যেতেই ভ‍্যাবাচ‍্যাকা খেয়ে যায়। পুনম রুপশা কটমট চোখে চেয়ে আছে তাদের দিকে

— আমি ফ্রেশ হয় আসি হ‍্যা
চন্দ্র তড়িঘড়ি করে চলে যায় ঘরে আজ আর পুনমকে ডাকার সাহস পায়না। লিমন ইহানের দিকে কটমট চোখে তাকায় তখনই রিশান বলল
— আপনারা তো বিয়ে করে বউয়ের চোখ রাঙানো খেতে পারছেন আমার ভাগ‍্যে তো সেটাও নেই বউয়ের চোখ রাঙানি খাওয়ার জন‍্য হলেও একটা বিয়ে করা উচিৎ,,,,
ইহান বলল — তা শালা সাহেবের জন্য বউ ঠিক আছে নাকি??
মাথা নাড়ে রিশান অবাক হয় ইহান — তোমরা ভাইরা ভাইরা বেশ ফার্স্ট তা মেয়েটা কে??
পাশ থেকে লিমন বলল — আমাদের ঝিনুক রানি
এতোক্ষণ ঝিনুক রিমি চুপচাপ বসে ছিলো এখন লজ্জা পেয়ে উঠে গেলো
— ও বড় মামী খেতে দাও তো খিদেয় পেটে ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে
শিহাব চিৎকারে চলে এসেছে চাদনী বেগম ও রোজিনা বেগম।। তারা রান্নাঘরে জামাইদের জন‍্য রান্নায় ব‍্যস্ত ছিল

চন্দ্র ঘরে ঢুকে আলমারির উপরের দিকে তাকিয়ে হাসল। তার মানে তার জোহরা এখনো আলমারি খুলার সময় পায়নি।
আলমারি থেকে তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। পিছনে পুনম ঢোকে চন্দ্রর ট্রাউজার ও গেঞ্জি রাখতে রাখতে গজগজ করতে থাকে। তখনই চন্দ্র হুট করে পুনমকে কোলে নিয়ে ঘোরায়
— ইইইই মাথা ঘুরছে
— রাগ হয়েছে জোহরা বিবির
— আপনার জন‍্য ইদানীং স্বভাব বিরোধী কাজ করছি আমি অহিংসা আমিটা হিংসাত্মক হয়ে গেছি
— এটাই তো ভালোবাসা জোহরা
— খুব যেনো ভালোবাসায় পি এইচ ডি করে রেখেছেন
— উহু জোহরার মন বুঝেছি
পুনমের ঘাড়ে নাক ঘসতে ঘসতে বলল। — এইই এখন শুরু হয়ে যেয়েন না সবাই আমাদের জন‍্য বসে আছে ইহান ভাইয়া লিমন ভাইয়া জামাই মানুষ তাদের ওয়েট করানোটা ঠিক হবে না।।

— যথা আজ্ঞা জোহরা বিবি
— চলুন শের “এ আলী
চন্দ্র পুনমকে কোলে নিয়ে এগোতেই পুনম বাধা দিয়ে জোরজবরদস্তি নেমে পড়ল।।
টেবিলে সবাই ভদ্রের মতোই খাচ্ছেন মুরুব্বিরা থাকায় কেউ কথা বলছে না পুনম বসেনি সে মা চাচীদের সাথে পরিবেশনে ব‍্যস্ত।
— ডাল লাগবে
পুনম ডালের বাটি নিয়ে চন্দ্রর পাশে দাড়িয়ে ডাল দিয়ে সরতে নিল তবে পারল না। কারণ ডাল দিতে দিতে পুনমের শাড়ির কুচি চন্দ্র পায়ের নিচে চলে গেছে। পুনম তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে রইল। উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বলল — ছাড়েন
চন্দ্র খেতে খেতেই উত্তর দিলো — আমি তো ধরিনি জোহরা যে ছাড়ব
হাসফাস লাগে পুনমের সরতেও পারছে না একটু এদিক ওদিক হলেই কুচি খুলে যাবে।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৯

— পুনম আমি ডাল নিয়ে ফেলেছি এখন এই মাছ খেতে পারব না এগুলো খা তো
পুনম নিজের ঘর হলে এতোক্ষণে খেয়ে নিতো নিজের পছন্দের চিংড়ি মাছ গুলো তবে এখন উপস্থিত সবার জন‍্য খেতে পারছে না। আর জানে না খেলে চন্দ্র ছাড়বে না তাই সবার দিকে তাকায়।
তখনই রানি বানু বলল — খাইয়া লও বইন স্বামীর সাথে এক পাতে খাইলে মোহাব্বত বাড়ে,,,,
মায়ের কথা সাথে তাল মিলিয়ে চাদনী বেগম বলল — কিরে পূর্ণ খাসনা কেনো খেয়ে নে
পুনম আস্তে পাতে থেকে মাছ তুলে খায়। চন্দ্র খেতে থাকে মাছ খাওয়া শেষ হতেই চন্দ্র পানি এগিয়ে দিয়ে খেতে ইশারা করে পানি খাওয়া হতেই চন্দ্র কুচি থেকে পা সরিয়ে নেয়। পুনম ও হাফ ছাড়ে বিড়বিড় করে চন্দ্রকে বকতে বকতে সরে যায়। সেখান থেকে,,,,,,,,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬১