প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১
অনন্যা
“আমি আপনাকে চুমু খেতে চাই” এই কথাটা বাইকে হেলান দেওয়া ঐ ছেলেটাকে গিয়ে বলবে ।
এহেন কথা শুনে কুহুর আত্মাটা ছ্যাৎ করে উঠলো।চশমাটা ঠিকঠাক করলো সে।আজ’ই ভার্সিটিতে প্রথম দিন তার আর আজকেই রেগিং এর শিকার হতে হলো তাকে।কুহু মাথার উড়নাটা ঠিক করে নিচু স্বরে বলে উঠলো
-‘আ’আমি পারবো না।দয়া করে আ’আমার ফোনটা দিয়ে দিন।
মেয়েগুলো পাঁচ জনের মতো ছিল।লিডার মেয়েটা বলে উঠলো
-‘সিনিয়রদের আদেশ যে পালন করতেই হবে।
কুহুর ভয় হতে লাগলো এবার।আশেপাশে তাকিয়ে নিজের বান্ধবী রোদেলাকে খুঁজতে লাগলো।দুজনের ভাগ্যক্রমে এক’ই ভার্সিটিতে চান্স এসেছে।কুহুকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে মেয়েগুলোর মাঝে থেকে বলে উঠলো
-‘এদিক ওদিক তাকিয়ে লাভ নেই মামনি।যাও গিয়ে চুমুটা খেয়ে আসো।
কুহু ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো
-‘উ’উনি যদি মারে আমাকে…
মেয়েগুলো কেমন জোরে জোরে হাসতে লাগলো এটা শুনে।একজন বলে উঠলো
-‘আরেহ কুল! কিছু বলবে না।কিছু বললে কি আর তোমাকে যেতে বলতাম আমরা?
কুহু দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগতে লাগলো।এভাবে একটা অচেনা ছেলেকে সে কি করে চুমু খাওয়ার কথা বলবে? সে বলে উঠলো
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘শা’শাস্তিটা কি?
মেয়েগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকালো।হঠাৎ তখন তাদের যুক্ত একজন যুবক।সে বলে উঠলো
-‘আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে।
কুহু তাকালো যুবকটার দিকে তাকালো।চেহারাতেই যেন ফুটে উঠছে ছেলেটার চরিত্র।কুহু পেছন ঘুরে বাইকে হেলান দেওয়া ছেলেটাকে দেখলো একবার।ছেলেটার পেছন সাইড দেখা যাচ্ছে শুধু।কুহু বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল।সে কাঁপা কাঁপা পায়ে নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে সামনে এগিয়ে গেলো।ওরা সবাই বাঁকা হাসলো। এই মুহূর্তে এখানে কি হতে পারে তা সবার’ই জানা।
-‘কিরেহ আহনাফ! তোর মুখ এমন বান্দরের বিশেষ জায়গার মতো করে রেখেছিস কেন?
আদিতের কথা শুনে নাতাশা আর আরিফ হো হো করে হেসে উঠলো।কিন্তু আহনাফের থেকে কোনো উত্তর এলো না।সে এক’ই ভঙ্গিমাতে সিগারেট খেয়ে মুখ থেকে ধোয়ার কুণ্ডলি বের করছে।দৃষ্টি তার আকাশের দিকে।আদিত আবার বলে উঠলো
-‘আংকেল কি প্যাদানি দিয়েছে নাকি যে মুখ এমন করে রেখেছিস?আরে এ….
আদিতের কথার মাঝেই আহনাফের গম্ভীর স্বর ভেসে এলো
-‘দুই কানেই শুনতে পাস তুই?
আদিত দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো
-‘আরে তাহলে আবার! দুই মাইল দূরে কিসের শব্দ হচ্ছে সেটাও এই আদিত আহমেদ শুনতে পায়।হাহ্!
-‘আরেকটা বাজে কথা বললে আর পাবি না শুনতে।আর আমি করবো সেটার ব্যবস্থা।
আদিত মেকি হেসে নিজের দুইগালে হাত রেখে নাতাশা আর আরিফের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।নাতাশা আর আরিফ আট্টহাসিতে ফেটে পড়লো তা দেখে।আহনাফ এক ভ্রু উঁচু করে তাকালো তাদের দিকে।সাথে সাথেই তারা চুপ হয়ে গেল।অহনাফ কিছু বলতে যাবে তার আগেই কারো কান্নার শব্দ ভেসে এলো কানে।কান্নার শব্দটা খুব কাছ থেকেই আসছে।আহনাফ পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখলো যে একটা মেয়ে তার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।
কুহু মাথা নিচু করে রেখেছে যার দরূণ কর্ণ ওর মুখটা ঠিক করে দেখতে পেল না।আহনাফ বলে উঠলো
-‘এটা কি কান্না করার জায়গা? অন্য কোথাও গিয়ে কাঁদো…যাও..
আহনাফের ধমকে কুহু কেঁপে উঠলো।মাথাটা উঁচু করে তাকালো তার দিকে।আহনাফের কুচকে যাওয়া ভ্রু সিথিল হয়ে গেল তাৎক্ষণাৎ।বিরক্তিরা যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গেল।শ্যামবর্ণের একটা মেয়ে।মুখে তার অদ্ভুদ এক মায়া।কান্নার কারণে চোখের ঘন পাপড়িগুলো কেমন যেন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।ফোলাফোলা গাল দুটো বেশি আকর্ষণ করছে যেন। আহনাফ পলক ফেলতে ভুলে গেল।হাতে থাকা সিগারেটটা কখন যে পড়ে গেছে আহনাফের তা খেয়াল নেই।সে ব্যস্ত সামনে দাঁড়ানো এক মায়াপরিকে দেখতে।গোলগাল মুখটাকে পরখ করতে ব্যস্ত সে।তার মনে ওমন সময় কেন যেন একটা নাম বেজে উঠলো—“তিলোত্তমা।”
এদিকে আহনাফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কুহুর ভয় যেন আরো বেড়ে গেল।সে আবার কান্না করে ফেললো।আহনাফের কাছে ব্যাপারটা আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগলো।যে মেয়েকে কাঁদলেই এতো ভালো লাগে তাকে হাসলে কতটা ভালো লাগবে?
-‘এই মেয়ে তুমি কাঁদছো কেন? কান্না করার আর জায়গা পেলে না! এই সিংহের সামনে এসেই কাঁদতে হলো!
শেষের কথাটা মনে মনে বললো আরিফ।এদিকে কুহু একবার পেছনে তাকালো।ওরা এদিকেই তাকিয়ে।কুহুর ফোনটা ফেলে দেবে এমন এক হুমকি দিল ইশারায়।কুহু তাৎক্ষণাৎ সামনে ঘুরে বলে উঠলো
-‘আমি আপনাকে চুমু খেতে চাই।
ব্যাস! এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিল সবার মাথায় হাত দেওয়ার জন্য।তখন আহনাফের চেঁচানোতে অনেকের নজর’ই ওদের দিকে এসেছে।কুহুর কথা শুনে কেউ কেউ ঠোঁট চেপে হাসতে লাগলো আবার কেউ রাগে ফুঁসতে লাগলো।আহনাফকে এক দেখায় কেউ চোখ সরাতে পারবে না। স্বপ্নের সেই রাজকুমারের বাস্তব প্রতিচ্ছবি যেন এই আহনাফ।এ কারণে আহনাফকে চুমু খাবে এই কথাটা শুনে অনেকেই রাগে ফুঁসছে।আবার হাসছেও যে..
-‘এর মতো একটা বস্তির মেয়ে কিনা চুমু খেতে চাচ্ছে আমাদের আহনাফকে! চেহারাটা দেখ! কালো ভূত একটা!
অনেকেই হাসতে লাগলো এসব বলে।আবার কেউ কেউ বলছে
-‘শুধু থাপ্পরের অপেক্ষা।এক্ষুণি আহনাফ এই মেয়েকে থাপ্পর মেরে সিধে করে দিবে।
এদিকে কুহু কথাটা বলেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলেছে।সবাই অধির আগ্রহে বসে রয়েছে আহনাফের থাপ্পরের জন্য।এদিকে কুহু ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।মনে মনে আল্লাহকে বলছে যে “এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও আল্লাহ।বাপের জন্মে আর এই ভার্সিটিতে আসবো না।” হঠাৎ নিজের গালে নরম কিছুর স্পর্শ পেতেই থমকালো সে।পিটপিট করে চোখ মেলতেই হা হয়ে গেল সে।তাৎক্ষণাৎ দু কদম পিছিয়ে গেল সে।এদিকে সবার মুখ হা হয়ে গেছে।লিডার মেয়েটা এতো বড় করে তাকিয়েছে যেন চোখের মনি কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।আহনাফ..আহনাফ একটা মেয়েকে চুমু খেয়েছে! আদিত,আরিফ আর নাতাশা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে একবার আরেকবার আহনাফের দিকে।একপর্যায় তিনজন একসাথে বলে উঠলো—“তেরে ঢোলনা!”
তারপরেই তিনজন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল।এদিকে কুহু ব্যাগটা বুকে চেপে পেছনে সরতে সরতে এক পর্যায় দৌঁড় লাগালো।আহনাফের ঠোঁটের কোণে কেমন এক হাসি ফুটে উঠেছে।
এদিকে কুহু মেয়েগুলো সামনে গিয়ে থামলো।দেখলো তার ফোনটা নিচে পড়ে রয়েছে।কুহু ফোনটা উঠিয়ে নিয়ে একবার আহনাফের দিকে তাকালো যার তীক্ষ্ণ নজর এখনো তার উপরেই।কুহুর বুক দুরুদুরু করছে।সে দৌঁড়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেল আর মনে মনে বললো—“বা/লের ভার্সিটি! আর আসবো না আমি।”
এদিকে কুহুকে দৌড়াতে দেখে রোদেলা বোকা বনে গেল।মাত্র’ই সে ভার্সিটির গেইট পেরোচ্ছিল।সে চেঁচিয়ে উঠলো
-‘আরে কুহু..দৌড়াচ্ছিস কেন…?
কুহু এমনভাবে দৌঁড়াচ্ছে যেন পেছনে কুকুর না না আস্ত এক ডায়নাসর তাড়া করেছে তাকে।রোদেলা নিজেও দৌঁড় লাগালো কুহুর পেছন পেছন।
-‘কুহু মেরি জান…বেবি দাঁড়া….
রোদেলার মুখে এমন জান,বেবি শুনে রাস্তার মানুষজন অদ্ভুদ নয়নে তাকালো তার দিকে।কিছু তাগড়া যুবক চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল।তাদের মাঝে থেকে একজন আফসোসের সুরে বলে উঠলো
-‘এইজন্য’ই আমরা মেয়ে পাই না।
ছেলেটা হঠাৎ খেয়াল করলো তার হাতের বিস্কুটটা নেই।রোদেলা চেঁচিয়ে বলে উঠলো—“ধন্যবাদ কাকু।”
ছেলেটা বলে উঠলো—ঐ.. আমার বিস্কুট ঐটা..আর কে তোর কাকু?
ছেলেটাও দৌঁড় লাগালো ওদের পেছনে আর বলতে লাগলো
-‘চোর..চোর..বিস্কুট চোর….
রোদেলা পেছন ঘুরে দেখলো যে ছেলেটা তার দিকেই দৌঁড়ে আসছে।সে বোকা বনে গেল।সে দৌড়ের স্প্রিড বাড়িয়ে দিল।দেখা গেল একটা সময় সে কুহুকে ছাড়িয়ে চলে গেল।কুহু থেমে গেল।হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাতে লাগলো।রোদেলার পা কি অটোমেটিক হয়ে গেল? কুহু বলে উঠলো
-‘রোদ..ব্রেক কষ এবার….
রোদেলা বলে উঠলো
-‘পেছনে দেখ…
কুহু পেছনে তাকাতেই দেখলো যে বিশ জনের মতো দৌঁড়ে আসছে তাদের দিকে।কয়েকজনের হাতে লাঠির দেখাও পেল সে।ভ্রু কুচকে এলো তার। তাদের মাঝে একজন চেঁচাচ্ছে
-‘স্বর্ণের বিস্কুট নিয়ে গেলো আমার…চোর..চোর..
রোদেলা বুঝলো তাকে ধরতেই মিথ্যা কথাটা বলছে। স্বর্ণের বিস্কুট না বা/লের বিস্কুট! এদিকে কুহু বুঝলো না তারা কেন দৌড়াতে যাবে।তারা কি…আর কিছু ভাবার আগেই নিজের হাতে টান অনুভব করলো।রোদেলা তাকে নিয়ে আবার দৌড়াতে লাগলো।কুহু বলে উঠলো
-‘বা/লের দিন একটা..
রোদেলা বললো—“উঁহু..কপালটাই বা/লের।”
