প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১০ (২)
অনন্যা
-‘তুমি সব জায়গায়’ই পড়েছো এখন আমার প্রেমে পড়াটা শুধু বাকি।তো আমার প্রেমে কবে পড়ছো?
কুহুর নিজেরও এমনটাই মনে হচ্ছে।সকালে কি সুন্দর সব ঠিক ছিল।সেও নাচতে নাচতে মামির সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল।সামনে দিয়ে তখন হুইল চেয়ারে করে এক রোগীকে আনা হচ্ছিল।তার পা ভেঙে গেছে।ফ্লোরে ছিল পানি।কুহু পিছলে ধপাস করে লোকটার ভাঙা পায়ের উপর পড়ে।
লোকটার চিৎকারে হসপিটালটা হালকা করে কেঁপে উঠে।কিন্তু এরপর ঘটে আরেক ঘটনা।কুহু ঘটনা বুঝতে পেরে উল্টো দৌঁড় দেয়।লোকটার রাগ উঠে।সে নিজেও উঠে দৌঁড় লাগায়।কিছু পথ যেতেই থেমে যায় সে।তার পা না ভাঙা ছিল! হায়হায় পা ঠিক হয়ে গেছে! কুহু পেছন ঘুরে তাকিয়ে নিজেও থেমে যায়।লোকটার পরিবারের লোকও হতভম্ব।এদিকে লোকটা “ইয়াহু” বলে একটা লাফ দিল।সবাই মিলে কুহুকে ধন্যবাদ দিল।মেয়েটা বোকা বনে গেল।তার ভাগ্য এতো ভালো হলো কবে?
কুহুকে অন্যমনষ্ক দেখে আহনাফ তুড়ি বাজালো।কুহু বেরিয়ে এলো ভাবনার জগৎ থেকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘আপনি এসেছেন কেন?
আহনাফ বলে উঠলো
-‘আমাকে দেখলেই ছ্যাৎ করে উঠো কেন?
-‘ভাল্লাগে না আপনাকে আমার।এইজন্য…
আহনাফের মুখটা একটু ছোট হয়ে গেল কথাটা শুনে।কুহু দেখলো তা।তবে কিছু বললো না।হঠাৎ তখন আদিত আর আরিফ প্রবেশ করলো।আদিত বলে উঠলো
-‘ডিস্টার্ব করে ফেললাম নাকি!
কুহু চোখমুখ কুচকে তাকায় ওদের দিকে।এই গ্রুপটাকেই ওর দেখতে ইচ্ছা করে না।আদিত আর আরিফ ওদের আনা ফুলের বুকেটা কুহুর দিকে বাড়িয়ে দিল।
-‘ভাবিজি,এটা আপনার জন্য।
“ভাবিজি” শব্দটা শুনে কুহু রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ওদের পানে।আহনাফ শুধু কুহুকে দেখছে।তাকে এতোটা অপছন্দ এই মেয়ের! কারণটা কি? এদিকে কুহু তেজি স্বরে বলে উঠলো
-‘এই আপনাদের কোন ভাইয়ের বউ আমি?মানে যা খুশি একটা বললেই হলো!
আদিত আর আরিফ কিছু বলতে নিলে কুহু আবার বলে উঠলো
-‘আর এই এক আপনাদের বন্ধু! এতো কিছু বলি তাও এর লজ্জা লাগে না।পেছনে পড়েই আছে সেই কবে থেকে।মানে অসুন্দর হয়েও শান্তি নেই আমার। এই লজ্জা করে না আপনার আপনাকে যে এতোকিছু বলি! বখাটেদের মতো পেছনে পড়েই আছেন!
আদিত আর আরিফ কিছু বলতে নিলে আহনাফ থামিয়ে দিল।আদিত আর আরিফের রাগ লাগছে।কত বড় সাহস এই মেয়ের! তাদের সামনে তাদের’ই বন্ধুকে অপমান করে! আহনাফ ওদের দিকে তাকালো।ওরা বুঝলো।আদিত কুহুকে একটা মুখ ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেল।কুহু নিজেও মুখ ভেংচি কাটলো। আরিফও বেরিয়ে গেল।কুহু বলে উঠলো
-‘আপনি বসে রইলেন কেন? গন্ডারের চামড়া নাকি! একটা কথাও গায়ে লাগলো আপনার! নির্লজ্জ..বেহায়া..
আহনাফের রাগ আকাশ ছুঁলো এবার।সে ঝুঁকে কুহুর মুখ চেপে ধরলো তার শক্ত হাতের দ্বারা।কুহু চমকে উঠলো।আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বললো
-‘আজ যা বলেছো..বলেছো।দ্বিতীয়বার যেন আর না শুনি এসব কথা।আহনাফ শাহরিয়ারের রাগ সহ্য করার ক্ষমতা তোমার এখনো হয়নি, তিলোত্তমা।সবসময় ভালো করে কথা বলি তার মানে এই নয় যে আমি ভালো মানুষ।খারাপ রূপটা দেখতে চেয়েও না আমার।ধ্বংস হয়ে যাবে তুমি।আই রিপিট ধ্বংস হয়ে যাবে।
আহনাফ ঝাটকা মেরে ছাড়লো কুহুকে।কুহু হালকা আর্তনাদ করে উঠলো।আহনাফ এতো জোরে চেপে ধরেছিল যে কুহুর পুরো মুখ ব্যথা করছে এখন।আজ সে ফর্সা নয় বলে।তানাহলে এতোক্ষণে হয়তো মুখটা লাল হয়ে যেত মেয়েটার।চোখে জল চলে এলো তার।সত্যিই অনেকটা লেগেছে।আহনাফ দেখলো তা।তবে কিছু বললো না।কুহুর কষ্টের চেয়েও রাগ লাগছে।এই ছেলে কে হয় তাকে কষ্ট দেওয়ার! বাইরের একটা ছেলে সে।কুহু বেডের পাশে টেবিলটাতে তাকালো।পানি ভর্তি গ্লাসটার দিকে নজর গেল তার।এরপর একবার আহনাফের দিকে তাকালো সে।
আকাশ আজ মেঘাচ্ছন্ন।সূয্যি মামা মেঘের আড়ালে ঢেকে আজ।রোদেলা সেদিকেই একমনে তাকিয়ে রয়েছে।তার তো সব আছে।কি নেই তার! ছোট থেকে যখন যা চেয়েছে সে পেয়েছে।ঐদিন তার ভালোবাসার মানুষটাও তাকে নিজের মনের কথা বলেছে।তাও কেন তার মনে শান্তি নেই?কেন যেন মনে হচ্ছে কোথাও কিছু একটা ভুল হচ্ছে।কিন্তু কি? রোদেলার ভাবনার মাঝেই তার ফোনে একটা নটিফিকেশনের শব্দ আসে।রোদেলা ফোনটা হাতে নিল।
-‘কেমন আছো, পিচ্চি?
রোদেলা ম্যাসেজটা দেখলো।মনে মনে একটা শয়তানি হাসি দিল সে।
-‘পাখি খাঁচায় আটকালো তবে..!
রোদেলা রিপ্লাই করলো
-‘ভালো নেই আমি।
অপর পাশ থেকে তখন ম্যাসেজ এলো
-‘ওমাহ কেন?
-‘এমনি…
অপর পাশ থেকে রিপ্লাই এলো
-‘কল করবো?
রোদেলা বাঁকা হাসলো।সে বললো
-‘আপনি তো আবার ব্যস্ত মানুষ।কল করবেন আবার…
ম্যাসেজটা সেন্ড হতেই অপর পাশ থেকে কল এলো।রোদেলা বিশ্ব বিজয়ের হাসি দিল।রিসিভ করলো সে।অপর পাশ থেকে সালাম দিল।রোদেলা সালামের জবাব দিল।অপর পাশ থেকে ভেসে এলো এক পুরুষালি স্বর
-‘কি হয়েছে, ম্যাডামের? এই অধম কি জানতে পারে?
রোদেলা মনে মনে দুইটা গালি দিয়ে হাসি মুখে উত্তর দিল
-‘আমার আর কি হবে! কেউ তো নেই আমার।এটাই কষ্টকর ব্যাপার নয় কি?
-‘আহ্হা! আপনার কেউ নেই?
-‘নাহ্ তো…
-‘আচ্ছা তাই?
-‘হুম..
-‘আচ্ছা তাহলে কল রেখে দেই?
-‘কেন.. কেন?
-‘এই যে আপনার কেউ নেই…তাহলে আর আমি কথা বলে কি করবো?আমি তো আপনার কেউ হইনা।
রোদেলা চোখমুখ কুচকালো।কি পরিমাণ ফ্ল্যার্ট করতে পারে মাইরি!বেশকিছুক্ষণ কথা হলো দুজনের।কল কাটতেই রোদেলা চার-পাঁচটা গালি দিল।
-‘শা/লার ভাই! এবার তোকে এই রোদেলা শাহরিয়ার বোঝাবে যে ছ্যাকা কি আর কত প্রকার।কল করে করে মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করা তোর ঘুচিয়ে দিব আমি।প্রতিশোধ যদি না নিয়েছি তাহলে আমার নামও রোদেলা শাহরিয়ার না।
রোদেলা বিছানা থেকে নামলো।রেডি হয়ে ব্যাগপত্র গোছালো সে।কুহুর উপর দিয়ে এতোকিছু গেল আর সে এখনো দেখাই করতে পারলো না তার সাথে।তাই আজকে যাবে সে।কত কথা বাকি তার! আহনাফ ভাই তার মনের কথা বলেছে শুনলে মেয়েটা যে কি করবে না! রোদেলা লাজুক হাসলো।
আহনাফ বহু কষ্টে নিজেকে ঠাণ্ডা করলো।বেশিই করে ফেলেছে সে। কুহুর কাঁধে হাত রাখতে যাবে ঠিক তখন কুহু পানির গ্লাসটা নিয়ে আহনাফের মুখে গ্লাসের সবটা পানি ছুঁড়ে মারে।আহনাফ চোখ বুজে ফেললো।হাতটা শক্ত করে মুঠো করে ফেললো সে।জীবনে প্রথম এহেন ঘটনার শিকার হয়েছে সে।আহনাফ নিজেকে শান্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু কুহু যেন আজ পণ করেছে যে সে আহনাফকে রাগ কন্ট্রোল করতে দিবে না। কুহু তেজি স্বরে বলে উঠলো
-‘আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে টাচ করার! কিছু বলি না বলে কি মাথায় উঠে গেছেন! কতবার ভালো করে বলছি আমার পিছু ছেড়ে দিন। কানে ঢোকে না কথা? কানে খাটো আপনি? শুনে রাখুন একটা কথা…আমি কুহু শেখ কখনো আপনার হবো না।দরকার পড়লে মরে যাবো তাও আপনা…..
আহনাফ এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।কুহুর গলা চেপে ধরলো সে।দাঁতে দাঁত চেপে বললো
-‘তুই তো দেখি আমার শত্রুর থেকেও ডেঞ্জারাস।আমাকে তিলে তিলে মারার জন্য নিজে মরতে চাইছিস আগে..তাই না? কিন্তু তা তো হবে না, সুইটহার্ট।আহনাফ শাহরিয়ার যে তোকে নিজের করেই ছাড়বে।
কুহু আহনাফের হাত সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো।মনে মনে বলে উঠলো
-‘তুই নিজেই তো আমাকে মেরে ফেলবি রে, হতোচ্ছোরা! শা/লা গলা ছাড় আমার..! আমি মরবো না, আল্লাহ…
কুহু আহনাফের পিঠে থাপ্পর মারতে লাগলো।মাথা কাজ করছে না।সে শুধু চেষ্টা করছে আহনাফের থেকে নিজেকে বাঁচানোর।এদিকে আদিত ধৈর্য ধরতে না পেরে ভেতরে উঁকি মারলো।আহনাফের দানবীয় শরীরের আড়ালে কুহুর ছোট্ট দেহটা দেখতে পেল না সে।সে শুধু দেখলো আহনাফ কুহুর দিকে ঝুঁকে রয়েছে আর কুহু আহনাফের পিঠ চাপড়াচ্ছে।মুখে হাত দিয়ে ফেললো সে।চোখগুলো রসগোল্লা হয়ে গেল তার।
তার উপর দিয়ে আরিফ উঁকি দিল।তারও চক্ষু চড়কগাছ।শা/লা তাদের বের করে দিয়ে রোমান্স করছে! কত বড় ফুসফুস ওর! আদিত সময় নষ্ট না করে ফোন বের করে ছবি তুলে ফেললো কয়েকটা।আদিত আস্তে করে বলে উঠলো
-‘ছোট্ট মানুষ এতো বেশি নিতে পারবে নাকি..ছেড়ে দেনা এবার হতোচ্ছোরা! আহা কীভাবে পিঠ চাপড়াচ্ছে মেয়েটা..কত’ই না কষ্ট হচ্ছে…এবার তো ছেড়ে দে শা/লা।
আদিত আরো কয়েকটা ছবি তুললো।তার ছবি তোলার মাঝেই আহনাফ ছেড়ে দিল কুহুকে।সরে এলো সে। কুহু কাঁশতে লাগলো অনবরত।আরেকটু হলেই সে পটল তুলতো আজ। এদিকে আদিত আর আরিফ বোকা বনে গেল।ঝাটকা খেল দুজন।তারমানে আহনাফ কুহুর গলা চেপে ধরেছিল আর তারা সেটা ইনজয় করছিল!ওরা দুজন আস্তে করে কেটে পড়লো।
-‘মিস্টার আয়ান..!
আয়ান চোখ বুজে ছিল।নাতাশার ডাকে তাকায় সে।
-‘আরেহ্.. নাতাশা! কেমন আছেন?
নাতাশা পাশে বসলো।এরপর বললো
-‘আমি ভালোই থাকি সবসময়।আপনার কি অবস্থা এটা বলুন। আপনার বোন তো দারুন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে।
আয়ান মুখ কুচকালো।
-‘বোন! সি ইজ নট মাই সিস্টার।
নাতাশা দুষ্টু চোখে তাকালো।আয়ানকে মৃদু ধাক্কা দিতে লাগলো আর বলতে লাগলো
-‘হুমমম..হুম.. হুম..হুমমমম…
আয়ান লাজুক হাসলো।নাতাশার ভেতরে আগুন জ্বলে উঠলো তা দেখে।দেখো কেমন হাসছে! তার ভেতরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে এখন এই ছোকরা হাসছে! সে রাগ মিশ্রিত স্বরে বলতে লাগলো
-‘হুমমমম…হুমমমম…
জোরে জোরে আয়ানের বাহুতে ধাক্কা মারতে লাগলো সে।আয়ানের হাসি উধাও হয়ে গেল।আয়ান হালকা হেসে বললো
-‘হ্যাঁ ঐ আরকি…
নাতাশা থামছে না।সে ধাক্কাতেই আছে।আয়ান বলে উঠলো
-‘মিস নাতাশা….পড়ে যাবো তো..
নাতাশা এখনো হুম হুম করছে আর তাকে ধাক্কাচ্ছে।রাগ কমছে না মেয়েটার।একপর্যায় সে হুম হুম করতে করতে আয়ানকে জোরে একটা ধাক্কা মেরে বসে।ধাক্কাটা এতো জোরে ছিল যে আয়ান বেড থেকে নিচে পড়ে যায়।এদিকে নাতাশা এখনো হুম হুম করছে।তফাৎ বলতে শুধু ধাক্কাচ্ছে না এখন।আয়ান চেঁচিয়ে উঠলো
-‘আরে ছাতার মাথা! কি হুম হুম করতেছেন? আমাকে তুলেন…ওরে বাবাগো..
নাতাশা যেন হুশে ফিরে এলো।সে বলে উঠলো
-‘ওহ নো, মিস্টার আয়ান..! আপনি নিচে কি করছেন?
আয়ান ছ্যাৎ করে উঠলো কথাটা শুনে,
-‘আরেহ আপনিই তো হুম হুম করে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিচে ফেলে দিলেন।আমার ভাঙা হাত আবার ভাঙলো বোধহয়…ও বাবা..
নাতাশা গিয়ে আয়ানকে ধরে উঠালো।আয়ান বিছানায় বসে ব্যথায় কোঁকাতে লাগলো।নাতাশা বললো
-‘আমি ডাক্তারকে ডেকে আনছি…
আয়ান বলে উঠলো
-‘নাহ্ থাক…খুব উপকার করেছেন আপনি আমার।
নাতাশার মুখটা ছোট হয়ে গেল।আয়ান বলে উঠলো
-‘আপনার কি হয়েছিল বলুন তো, মিস নাতাশা?ভুত টুত ধরেছিল নাকি!
নাতাশা কিছু বললো না।আয়ান বুঝলো সে অভিমান করেছে।
-‘ বন্ধুকে যদি দুইটা কথা বলতেই না পারি তাহলে কিসের বন্ধু হলেন?
নাতাশা মুখভঙ্গি এক’ইরকম রেখে বললো
-‘কে বলেছে বলতে পারবেন না।আসলে সেটা না…আপনি আমার জন্য আঘাত পেলেন তাই আরকি…
-‘আরেহ ধুর…আপনার কি আমাকে এতোটা উইক মনে হয় যে পড়ে গেলেই ব্যথা পাবো! আমি প্রতিদিন এক্সারসাইজ করি।এসব ছোটখাটো আঘাত লাগে না আমার।
নাতাশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সে বললো
-‘সত্যি লাগেনি?
আয়ান বললো
-‘আরেহ নাহ্।আপনার কোনো ধারণাই নেই আমার বডির ব্যাপারে…
নাতাশা আয়ানের ব্যান্ডেজকৃত হাতটাতে জোরে থাবা বসিয়ে বললো
-‘আরে মিয়া…আগে বলবেন না!
আয়ান জোরে চেঁচিয়ে উঠলো।এবার নাতাশা বেড থেকে পড়ে গেল।আয়ানের মনে হচ্ছে তার হাতটা অবশ হয়ে গেছে।হবে নাই বা কেন? প্রথম থেকেই ব্যান্ডেজ ছিল।এরপর অ্যাম্বুলেন্স থেকে কুহু লাথি মারলো, একটু আগে ধরাম করে পড়লো এখন আবার থাবা বসিয়েছে।আয়ান চিৎকার থামিয়ে নাতাশার দিকে তাকালো।একটু আগেই ভাব নিয়ে বলেছে যে এসব ছোট খাটো আঘাত তার লাগে না।এখন কি বলবে সে? নাহ নাহ মান-সম্মান বাঁচাতে হবে।আয়ান বহু কষ্টে হাসলো।নাতাশা অদ্ভুদ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আয়ান হেসে বললো
-‘ইয়ে..অনেকদিন ধরে সারগাম প্রাকটিস করা হয় না।আজকে একটু করলাম আরকি।সুন্দর হয়েছে না?
নাতাশা মেকি হেসে উপর নিচ মাথা নাড়ালো।আয়ান দুষ্টু হেসে এবার বললো
-‘ওহ নো…মিস নাতাশা! আপনি নিচে কি করছেন?
নাতাশা হাসবে না কাঁদবে বুঝলো না।তার কথাই তাকে শোনালো! নাতাশা উঠে দাঁড়ালো।হঠাৎ কোথা থেকে একটা আরশোলা উড়ে এলো তখন।নাতাশা তা দেখে চেঁচিয়ে উঠে আয়ানের ব্যান্ডেজ করা হাতের উপর লাফিয়ে বসলো।দুজন একসাথে চেঁচাচ্ছে এখন যেন চেঁচানোর কম্পিটিশন চলছে। এদের চেঁচানো শুনে নার্সরা দৌঁড়ে এলো,
-‘এটা হসপিটাল মাথায় রাখবেন প্লিজ…আপনারা কি করছেন এসব?
নাতাশা আয়ানের গলা জড়িয়ে ধরেছিল।নার্সের কথা শুনে দুজন একে অপরের দিকে তাকালো।আয়ান কথা বলতে পারছে না।সে ইশারায় ওর হাতের উপর থেকে নামতে বললো।নাতাশা বুঝতেই চমকে গেল।সে দ্রুত বেগে নেমে এলো।এরপর সে বলে উঠলো
-‘আপনারা যা ভাবছেন তা নয়।আপনারা ভুল ভাবছেন।”
-‘তাহলে আপনারা চেঁচাচ্ছিলেন কেন?
নাতাশা আর আয়ান একে অপরের দিকে তাকালো।এরপর একসাথে বলে উঠলো—-“সারগাম প্রাকটিস করছিলাম।সুন্দর হয়েছে না?”
-‘আপনি কি মানুষ!
-‘দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
কুহু রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।আহনাফের নিজেরও রাগ উঠেছে আজ।দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে।দুজন যেন চোখে চোখে একে অপরকে শাসাচ্ছে।হঠাৎ’ই আহনাফ ঠোঁট চোকা করে চুমু ছুড়লো তার দিকে।কুহু বলে উঠলো—“ছিঃ! অশ্লীল বেডা!”
আহনাফ এই কথা শুনে কুহুর দিকে ঝুঁকলো।
-‘অশ্লীল বললে কেন?আর ছিঃ-ই বা কেন বললে?হুয়াই?
কুহু আহনাফের দিকে তাকাতে পারে না।আহনাফের নিশ্বাস একদম কুহুর মুখে আছড়ে পড়ছে।কুহু যথাসাধ্য দূরে থাকার প্রয়াস চালাচ্ছে।আহনাফ হাসছে তা দেখে তবে তার সেই হাসি অপ্রকাশ্য।ঠোঁটের ভাজেই লুকিয়ে সেই হাসি।কুহুকে নার্ভাস হতে দেখে আহনাফ আরো এগিয়ে গেল ওর দিকে।মজাই লাগছে তার কাছে।আহনাফ বলে উঠলো
-‘আমার দিকে তাকাও তিলোত্তমা..
তিলোত্তমা! কুহু কিছুতেই এই ডাক উপেক্ষা করতে পারে না।কেন পারে না তার জানা নেই।সে তাকালো আহনাফের দিকে।তবে বেশিক্ষণ তার মোহিত নয়নে তাকিয়ে থাকতে পারলো না সে।সরিয়ে নিল নিজের অক্ষিযুগল।আহনাফের কেমন যেন নেশা লেগে গেছে।তার নজর গিয়ে আটকেছে কুহুর গোলাপি অধরজোড়ায়।বড্ড টানছে তাকে।আহনাফ জায়গা পরিস্থিতি ভুলে বসলো।সে কুহোর ওষ্ঠের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।ঠিক তখন দরজা খোলার শব্দ হলো।চমকে উঠলো দুজন।
প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১০
-‘বেবি জানিস কি হয়ে….
রোদেলা থমকে গেল।পুরো কথা বলতে পারলো না সে। আহনাফ ঘাড় বাঁকা করে তাকালো তার দিকে।রোদেলা হতভম্ব! এমন একটা মুহূর্তের জন্য সে তৈরি ছিল না।এদিকে কুহুর অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠলো।রোদ! ও কোথা থেকে আসলো!চক্ষু চড়কগাছ তার। রোদ যদি ভুল বুঝে তাকে?তাদের বন্ধুত্বে যদি এই খাটাশের জন্য ফাঁটল ধরে!
