প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২০

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২০
অনন্যা

-‘হ্যাপি বার্থ ডে………
আহনাফ চমকে উঠলো।আরিফ,নিধি,আদিত,নাতাশা,আহান শাহরিয়ার সবাই হাতে বেলুন নিয়ে হাস্যজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে।আহান শাহরিয়ার অবশ্য বেশি দাঁত কেলাচ্ছে।আহনাফ এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।সে তো নিজেই ভুলে গিয়েছিল। আহনাফের অন্য একটা ফ্ল্যাটে ছিল আরিফ আর নিধি।আহনাফ সেখানেই আসে দৌঁড়ে।আর আসতেই…
-‘কেইস্যা লাগা ম্যারা মাজাক?
আহনাফ আরিফের দিকে তাকালো।ওকে উপর থেকে নিচ পরখ করলো।তীক্ষ্ণ নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।আহান শাহরিয়ার বুঝলেন ছেলে তার ক্ষেপেছে।তিনি বলে উঠলো

-‘ওদের কিছু বলো না।আইডিয়াটা আমার।
আহনাফ তার দিকে তাকালো এবার।আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘চমক কেমন লাগলো সেটা বলো…পুরো সা..
-‘আপনার কাছে সবকিছু মজা মনে হয়?এটা মজা করার কোনো বিষয় ছিল?আপনার কোনো ধারণা আছে যে এটা শোনার পর আমার কি অবস্থা হয়েছিল?
আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘আহা! তুমি বুঝলে না।দুঃখের পরেই তো সুখ আসে রে পাগলা।তখন দুঃখ পেয়েছিলে এখন আনন্দ।
আহনাফ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।এই বন্ধুমহল তার পৃথিবীর অর্ধেকটা জুড়ে।এসব সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মজা আহনাফের সহ্য হয় না।সে বলে উঠলো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ফাজলামি করার একটা সীমা আছে, আহান শাহরিয়ার।আর তোরা? তোকে তো আজকে..
আহনাফ আরিফের দিকে তেড়ে গেল।সবাই মিলে ধরলো ওকে।আরিফ বলে উঠলো
-‘মারিস না ভাই…আমি প্রেগনেন্ট…
সবাই বলে উঠলো—“অ্যাঁ?”
নিধি বলে উঠলো
-‘কিহ্? এই তুমি কার সাথে কি করেছো হ্যাঁ?কার বাচ্চা এটা? বাচ্চার মা কে সত্য করে বলো….
সবাই আরেকদফা একসাথে বলে উঠলো—“অ্যা!”
নিধি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো এবার।

-‘ও আব্বাগো…এ কি সর্বনাশ হলো আমার! কার না কার বাচ্চা পেটে ধরেছে তোমার জামাই…
সবাই হা করে নিধির কান্না দেখতে লাগলো।আরিফ ধমকে উঠলো
-‘চুপ….পাগল হয়েছো তুমি? কি ব…
-‘এখন আবার আমাকে পাগলও বলছে….অ্যা.. অ্যা..
সবাই এবার একসাথে হো হো করে হেসে ফেললো।আহনাফও ফিক করে হেসে ফেললো।নিধি মনে মনে বললো
“প্ল্যান সাকসেসফুল।”
সবাই যেন বুঝলো নিধির এমন করার কারণ।তবে আরিফ এখনো বলছে
-‘বেবি কি বলছো তুমি এসব?
-‘কথা বলবে না তুমি। কার না কার বাচ্চা….অ্যা…
নিধি আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো।আরিফ বলতে লাগলো
-‘আরে আমি তো ওর মার থেকে বাঁচতে ভুলভাল কথা বলে ফেলেছি।
নিধি বলে উঠলো

-‘তাই তো বলি তোমার পেটটা বড় বড় লাগছে কেন হঠাৎ…
আরিফ চমকে নিজের পেটের দিকে তাকালো।সবাই আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো।কিছুক্ষণ বাদে আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘সারপ্রাইজ সন্ধ্যায়’ই দিতাম বাট তুমি তো…তাই সকালেই দিলাম।প্রত্যেকবার’ই তো একা একা কাটাও।এবার একটু তাই…সবাই অনেকটা আশা করে আয়োজন করেছে।সন্ধ্যায় একটা ছোটখাটো পার্টির অ্যারেঞ্জ করেছে।মনটা ভেঙো না প্লিজ।অন্তত নিজের মায়ের কথাটা ভেবে রাজি হও।ও খুশি হবে অনেক তোমাকে আনন্দ করতে দেখলে।প্লিজ…
সবাই আহনাফের দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে।আহনাফের চেহারাটা কেমন গম্ভীর হয়ে রয়েছে যেন এই বুঝি একটা ধমক দিয়ে নাকোচ করে দিবে।কিন্তু সে এমনকিছুই করলো না।শুধু হাসলো।সবাই উত্তর পেয়ে জোরে চেঁচিয়ে উঠলো—“হুররেএএএ!!” আহান শাহরিয়ার ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।

-‘কি করছো, বেবিডল?
রাহুলের কথায় তার দিকে তাকালো রোদেলা।কিচেনে রাহুলকে দেখে খানিকটা অবাক হলো।রাহুল তো বাহিরে বেরিয়েছে শুনেছিল সে।তাই তো ঘর থেকে বেরিয়েছিল।তাকে থাপ্পর দেওয়ার পর আর মুখোমুখি হয়নি।
-‘কি হলো? কথা বলছো না কেন?
রাহুলের কথায় হুশে ফিরলো রোদেলা।এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বললো
-‘পা’পায়েস রান্না করছি।
রাহুল রোদেলার মতো করেই বললো
-‘কা’কার জন্য?
রোদেলা মনে মনে রাগলো বেশ।তবে প্রকাশ করলো না।শুধু বললো

-‘আহনাফ ভাইয়ের জন্য।উনার আজকে জন্মদিন।
রাহুল সুর টেনে বললো—“ওওওওও…”
রোদেলা কিছু বললো না আর।রাহুল বলে উঠলো
-‘আমাকে তো একদিন রেঁধে খাওয়ালে না।
-‘আপনি চাননি কখনো।
রাহুল এক ভ্রু উঁচু করে বললো
-‘চাইলে খাওয়াতে?
রোদেলা চিনির বয়াম খুঁজছিল।খুঁজতে খুঁজতেই বললো
-‘হুম..
রাহুল এগিয়ে এলো।এরপর বললো

-‘কি খুঁজছো?
-‘চিনির বয়াম।
রোদেলা হঠাৎ খেয়াল করলো কে যেন ওটা উপরের তাকে উঠিয়ে রেখেছে।বিরক্ত হলো সে।রাহুল একটু ঝুঁকে বললো
-‘ডু ইউ নিড মাই হেল্প?
রোদেলা বললো
-‘বয়ামটা একটু..
রোদেলার কথার মাঝে রাহুল তার কোমড় ধরে উঁচু করে ফেললো।রোদেলা চমকে উঠলো।
-‘আরে..কি করছেন?
-‘কি লাগবে নিয়ে নাও, প্রিটি গার্ল।চিনির বয়াম আমি চিনি না।
রোদেলা বয়ামটা দ্রুত নিল তবে রাহুল তাকে নামালো না।
-‘কি হলো? নামান….
-‘নাহ্..
-‘কিহ্?

-‘থাপ্পরের কথা আমি ভুলিনি।শাস্তি দিব এখন তোমাকে, বেবিগার্ল।
রাহুল ওকে পাঁজা করে কোলে তুলে নিল।রোদেলা চেঁচিয়ে উঠলো
-‘কি করছেন?
রাহুল ওর চোখের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে।রোদেলা নিচে নামার জন্য নড়চড় করছে।রাহুল বলে উঠলো
-‘তুমি এতো কিউট কেন, বেবিগার্ল? তোমাকে ভীষণ কঠিন একটা শাস্তি দিব ভেবেছিলাম।অথচ তোমার চোখের দিকে তাকাতেই কেমন দুর্বল হয়ে গেলাম!
রোদেলার নড়চড় বন্ধ হলো।রাহুলের চোখের দিকে তাকালো নিজেও।হঠাৎ তখন…
-‘ভাই আপনিও না…আমাকে ফেলেই চ…
আহনাফ আর রাফি সবেমাত্র দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।দরজা থেকে কিচেনটা স্পষ্ট দেখা যায়।দুজনেই দাঁড়িয়ে পড়লো রোদেলা আর রাহুলকে ওভাবে দেখে।আহনাফের ঠোঁটের কোণে এখনো হাসি উপস্থিত।সে রাফির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
রোদেলা আহনাফকে দেখে হকচকিয়ে গেল।দ্রুত নামার জন্য রাহুলকে তাগেদা দিতে লাগলো।রাহুল যেন এটাই চাইছিল।সে নামালো না ওকে।বরং ওকে কোলে নিয়েই পেছন ঘোরে বললো

-‘হ্যাপি বার্থ ডে, ব্রো।
আহনাফ হালকা হেসে হাত উঁচু করে বললো
-‘থ্যাংকস্…
রোদেলা রাহুলের বুকে ধাক্কা দিতে লাগলো।দাঁতে দাঁত পিষে বললো
-‘নামাচ্ছেন না কেন?
-‘আমার ইচ্ছা।
রাফি বলে উঠলো
-‘আমি একটু বাহির থেকে হাওয়া খেয়ে আসছি।
-‘নাহ্..
-‘ভাই!
আহনাফ কিছু বললো না।সে বললো
-‘তোমরা কন্টিনিউ করো….আমরা রুমে যাচ্ছি..
রাহুল বলে উঠলো
-‘এটা ঐ ছেলেটা না?
আহনাফ বললো
-‘রাফি…রাফি ওর নাম।আয় রাফি..

আহনাফ আর রাফি উপরে চলে গেল।রাহুল এবার নামালো রোদেলাকে।রোদেলা ওর বাহুতে জোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল।যদিও আঘাতটা তার’ই লাগলো তবুও সে তেজি স্বরে বলে উঠলো
-‘আপনি একটা নির্লজ্জ।নামাচ্ছিলেন না কেন তখন?
রাহুল রোদেলার হাতটা সামনে এনে বললো
-‘ব্যথা পেলে না!
রোদেলা হাতটা সরিয়ে নিল।
-‘আপনি কি পাগল?
-‘তুমি করলে তো…
-‘কিহ্…
-‘উম্মাহ…
রাহুল ঠোঁটটা একটু চোঁকা করলো।রোদেলা ওর বুকে ধাক্কা মেরে ওকে বকতে বকতে চলে গেল।রাহুল হাসলো।এই মেয়ের মাঝে কিছু তো আছেই।অন্য সবার থেকে সে আলাদা।রাহুলকে পাগল করে ফেলে আশেপাশে থাকলে।তবে রোদেলাকে অপবিত্র করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তার মনে জাগেনা।থাপ্পর খাওয়ার পরে হয়তো রেগে ভেবেছিল ওসব বাট…এই মেয়েটাকে সে ওভাবে চায় না।এই প্রথম বোধহয় রাহুল সংসারের স্বপ্ন দেখছে।নিজের ভাবনায় নিজের’ই হাসি পেল রাহুলের।

-‘কিরেহ মুখপুরি! কাজগুলো শেষ হয়েছে?
আনোয়ারা বেগমের কথা শুনে কুহু বললো
-‘এই তো মামি হয়ে গেছে…
কুহু এঁটো প্লেটগুলত ধুয়ে রেখে দিল পাশে।আনোয়ারা বেগম বললেন
-‘গতকাল কি বেলুন ফাটিয়েছিলি রে? কান ধরে গিয়েছিল শব্দে।
কুহুর হঠাৎ মনে পড়ে গেল রাতের কথা।আহনাফ একটা কলও করেনি আর।সকালে উঠেই তো সে আনব্লক করে ফেলেছিল।কুহু বললো
-‘কি জানি মামি? শব্দ শুনে তো আমি অজ্ঞান’ই হয়ে গেছিলাম।বোম টোম ছিল মনে হয়।
-‘বলিস কি রে হতোচ্ছেরি!কোথা থেকে এসব উটকো জিনিস কিনেছিস?
-‘আয়ান ভাইয়া দিয়েছিল..
আয়ান সবেমাত্র এসে উপস্থিত হয়েছিল নিজের নাম শুনে হতভম্ব হয়ে গেল সে।আনোয়ারা বেগম ছেলের নাম শুনে কিছু বললেন না শুধু চোখ রাঙালেন।
আয়ান বললো

-‘আজকে সন্ধ্যায় রেডি থাকিস, সুহাসিনী।বেরোবো…
আনোয়ারা বেগম বললেন
-‘কোথায়?
-‘এমনি ঘুরতে বের হবো।
-‘কোনো দরকার নেই।
-‘তুমি কি চাইছো আমি চলে যাই?
-‘আয়ান…
আয়ান কিছু বললো না।আনোয়ারা বেগম কুহুর দিকে তাকালেন এরপর বললেন
-‘তাড়াতাড়ি যেন ফিরে আসা হয়।
কথাটা বলে তিনি রুমে চলে গেলেন।কুহু বলে উঠলো
-‘কোথায় যাবেন?
-‘বাঙ্গি ক্ষেতে যাবো তোকে নিয়ে।
-‘কিহ্!!
আয়ান ‘চ’ সূচক শব্দ করে বললো

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১৯

-‘রেডি থাকতে বলছি রেডি থাকবি।এতো কথা বলিস কেন?
কুহু মুখ ভেংচি কাটলো।আয়ান চলে গেল।কুহুর ফোনে তখন একটা কল এলো।কুহু ফোনটা হাতে নিল।নামটা দেখে কপাল কুচকালো।এ আবার কল করছে কেন?

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২০ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here