প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২২

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২২
অনন্যা

-‘এক ফুল দো মালি….ইন্টারেস্টিং কিন্তু…
নিধির কথা শুনে কুহু বলে উঠলো
-‘ফালতু বকিস না তো!
-‘ফালতু! কোনটা ফালতু?আয়ান ভাইয়া আর আহনাফ ভাইয়া দুজন’ই তো তোকে পছন্দ করে।ভুলটা কি বলেছি আমি?
কুহু বলে উঠলো

-‘আয়ান ভাইয়াকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না যে আমি উনাকে ভাইয়ের নজরে দেখি।ওনার ওসব কথা শুনলে আমার অস্বস্থি হয়।উনি আরো মনে করেন আমি লজ্জা পাই।বিরক্তিকর!
রোদেলা আপেল কাটছিলো ছুড়ি দিয়ে।সে বলে উঠলো
-‘গতকালকে তুই রাহুল ভাইয়ের পেছন মেরেছিলি কেন? ওকে দেখে কি তোর এক্সের কথা মনে পড়েছিল?
নিধি বলে উঠলো
-‘একটু আগে দেখে এলাম উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে।আর জায়গা পেলি না মারার!
কুহু চুপ রইলো।বলার মতো কোনো কথাই সে খুঁজে পেল না।রোদেলা আবার জিজ্ঞাসা করলো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘মেরেছিলি কেন?
কুহু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না যেন।বলে উঠলো
-‘আ’আরশোলা বসেছিল।খেয়াল’ই করিনি যে কোথায় বসেছিল।তাই আরকি..
-‘তাই বলে চাকু মেরে দিবি?
কুহু কিছু বললো না আর।রোদেলা কুহুর অবস্থাটা যেন বুঝলো।সে প্রসঙ্গ এড়াতে বললো
-‘তোর কিন্তু হেব্বি সাহস, বেইবি।কি সুন্দর আহনাফ ভাইকে বাঁচাতে নিজে সামনে চলে গিয়েছিলি!
কুহু একটু ভড়কে তাকালো রোদেলার দিকে।রোদেলা মুচকি হেসে বললো
-‘আমি জানি সবটা।
নিধি বলে উঠলো

-‘কি একটা অবস্থা ভাই! সারাক্ষণ আহনাফ ভাই.. আহনাফ ভাই করতো রোদ আর প্রেম করছিস তুই।জীবনটা আসলেই বাঙ্গি মার্কা হয়ে গেল রে।
কুহু কিছু বলতে নিলে রোদেলা বলে উঠলো
-‘তোদের কিন্তু দারুন মানিয়েছে মাইরি।আমাকে মানাতোই না আহনাফ ভাইয়ের সাথে।এরজন্য’ই বলে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য’ই করে।
রোদেলার ঠোঁটে হাসি থাকলেও কুহুর মনে বলছে এই হাসিটা মেকি।রোদেলা আবার বলে উঠলো
-‘এই রাহুল ভাইয়াকে কেমন লাগে রে তোদের? আমার না আজকাল ওনাকে বেশ লাগছে।উনিও না মাঝেমাঝে পজিটিভ ইংগিত দেয়।

রোদেলা লাজুক হেসে বললো।কুহুর ভেতরটা কেমন করে উঠলো।তবে রাহুলের জন্য থাকা অনুভূতির জন্য নয় রোদেলার ভুল দিকে পদক্ষেপের কথা ভেবে।রাহুল অর্থাৎ রেনানকে তার চেয়ে ভালো আর কে চেনে! নিধি আর রোদেলা রেনানকে দেখেনি।রেনান স্কুল থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো আর কুহু মনও তখন ভাবতো যে এতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে যদি কারো পছন্দ হয়ে যায়! নিজেই রাহুলকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলতো আর সবসময় একটা মাস্ক পড়ে থাকতে বলতো।ওরা দেখতে চাইলেও কখনো দেখায়নি সে।কুহুর ভাবনায় ছেদ ঘটলো নিধির কথায়

-‘ভাই তোর চাচাতো ভাইগুলো কি জোস্! দুইটাই শালা আগুন! আগে যদি দেখতাম!
রোদেলা খিলখিল করে হেসে উঠলো।কুহু হাসলো না।তার চেহারায় চিন্তার ছাপ ।ভেতরটা কেমন কু গাইছে।রোদেলা তার ফ্রেন্ড নয় তার বোন।ও কিছুতেই রোদেলাকে ভুল পথে যেতে দিবে না।যা তার সাথে হয়ে তা সে কিছুতেই রোদের সাথে হতে দিবে না।কুহু বলে উঠলো
-‘ ঐ ছেলেটাকে আমার অতোটা সুবিধার মনে হয়নি।
রোদেলা মনে মনে বললো
-‘এক্সকে কারোর’ই সুবিধার হয় না।
তবে সে মুখে বললো

-‘উনার চেহারাটাই এমন অসুবিধাজনক।বাদ দে, আমাদের বাড়ির ছেলেই তো ও আমি ঠিক বুঝে নিব।
কুহুর একবার মনে হলো সে বলে দিবে যে রাহুল’ই রেনান পরক্ষণেই ভাবলো পরিবারে বিভেদ সৃষ্টি করার কি দরকার।পাঁচ বছর আগেই যেহেতু করেনি আজ আর কেন করবে।সাখাওয়াত আলম তো বলেছিলেন এই ছেলেকে তিনি জেলে দিবেন।কিন্তু কুহুর আবেগি মন তখন চায়নি ওর শাস্তি।কুহুর যা ক্ষতি করার তা তো সে করেই ফেলেছে।এখন শাস্তি দিলেও বা কি আর না দিলেও বা কি! কিছু কিছু জিনিস উপরওয়ালার উপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।রেনানের সম্পর্কে অল্প হলেও সে জানে।জেল থেকে বের হওয়া অতটা কঠিন নয় তার জন্য।আর আমাদের দেশের যা নিয়ম! কুহুর হাসি পায়।

তবে কুহুর এটা জানা ছিল না যে রেনান রোদেলার চাচাতো ভাই।ভালোই হয়েছিল সে জানতো না।জানলে হয়তো রোদেলার সাথে এতোটা গভীর সম্পর্ক তার হতো না।কুহু হালকা হেসে বললো
-‘আমার মতো ভুল করিস না।একজনকে ভালোবেসে আজ পুরো জীবন আমাকে সেই দ্বায়ভার বইতে হচ্ছে।ভালোবাসা শব্দটার প্রতি ঘৃণা চলে এসেছে।এখন কাউকেই বিশ্বাস করতে মন চায় না।শুনতে খারাপ লাগলেও এটা সত্য যে আমি তোর আহনাফ ভাইকেও বিশ্বাস করি না।গুলি খাওয়া থেকে উনাকে বাঁচিয়েছি শুধু একজন বন্ধু হিসেবে।ওসব ভালোবাসা টালোবাসা কিছু না।তাই বলছি যা করবি ভেবে চিন্তে।হ্যাঁ সে তোদের বাড়ির ছেলে কিন্তু দেশে তো থাকতো না।বিদেশের রীতি তার মাঝে নিশ্চই আছে।শুধু এতোটুকুই বলবো, সাবধান।
রোদেলা হেসে কুহুর গাল টেনে বললো
-‘ওকে মাই সুইটহার্ট…
কুহু হালকা হাসলো।রোদেলা কুহুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো
-‘এবার যে খেলার মোড় ঘুরবে, বেইবি।রোদেলার ভিন্নরূপ দেখবে এবার সবাই।নতুন এক রোদেলা।

সময় প্রবহমান।কেটে গিয়েছে একটা সপ্তাহ।কুহুকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।আয়ান এখন কুহুকে ছেড়ে নড়ছেই না।কুহু বড্ড বিরক্ত এ নিয়ে।এতো অবজ্ঞার পরেও পেছনে পড়ে থাকার মানে হয় না।এসব ওয়ান সাইড লাভ কুহুর ভালো লাগে না।সেল্ফ রেসপেক্ট বলেও তো একটা কথা আছে।আয়ান সেসব পরোয়া না করে তার সাথে লটকে আছে।প্রথমে ভেবেছিল আয়ান বোধহয় নাতাশার সাথে রিলেশনে যাবে।কিন্তু কিসের কি! কুহুর পেছনেই পড়ে আছে।সেবা করে করে চান্দে উঠিয়ে ফেলছে তাকে।এসব করে কি সে কুহুর মন পাবে? ভালোবাসা কি জোর করে হয়? হয় না। আয়ান তা বুঝতে নারাজ।কুহু একটা গল্পের বই পড়ছিল আর কথাগুলো ভাবছিল।আজকাল বই’ই তার সঙ্গী।একাডেমিক বইগুলো মাঝেমাঝে কুহুর দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকে।কুহু তাদের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে তখন বলে—“আগামীকাল থেকে।” তবে সেই আগামীকাল বুঝি আর আসে না।

কুহু বইটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল।একটু থ্রিলার থ্রিলার ভাইব আছে।তখন’ই হঠাৎ তার ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো।ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো।মনটা জানান দিল আহনাফ কল দিয়েছে বোধহয়।অজান্তেই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো তার।তবে ফোনটা হাতে নিতেই হতাশ হলো সে।হাসি উবে গিয়ে বিষণ্ণতারা ভর করলো।আয়ান কল করছে।একটু আগেই সে বেরিয়েছিল।এখন কল করার কি আছে?কুহুর ইচ্ছা হলো না কলটা রিসিভ করতে।সে ফোনটা উল্টো করে রেখে দিল।হেলান দিয়ে চোখটা বুজে ফেললো।

আজ আটদিন আহনাফের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মনের মাঝে খারাপ লাগা কাজ করছে তার।সেই যে আহনাফ রেগে চলে গেল আর আসেনি।একটাবার কল, ম্যাসেজ কিছুই করেনি।অবশ্য কুহু তো এটাই চেয়েছিল।তারপরেও তার খারাপ লাগা কাজ করার কারণ সে বুঝলো না।হয়তো বুঝেও সে কারণটা অস্বীকার করতে চাইছে।আহনাফকে তার বিশ্বাস হয় না ব্যাপারটা আসলে এমন নয়।সে বিশ্বাস করতে চায় তবে মনের মাঝে তখন রেনানের নামটা ভেসে আসে।রেনানও তো কম ভালো ছিল না।আসল রূপ তো পরে বেরিয়েছে তার।আবার আহনাফ একটু বেশিই ভালো।এতো ভালো কেউ হয় আদেও? কুহু ধ’র্ষি’তা জেনেও কি করে এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে? আবার এখন তো এটাও জানে যে সে তার চাচাতো ভাইয়ের এক্স।এতোকিছুর পরেও কি করে…? এই বিষয়গুলোর জন্যেও আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় না।সে বন্ধু হিসেবেই ঠিক আছে যতদূর কুহুর মনে হয়।কারণ এতো সাধু পুরুষ দুনিয়াতে নেই।থাকতে পারে না।

কুহুর ভাবনার মাঝেই দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো।কুহু চমকালো খানিকটা।সোজা হয়ে বসে দরজার দিকে তাকালো। দরজায় দাঁড়ানো রমণীকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে বললো
-‘আরেহ রাইফা আপু! এসো এসো..
রাইফা এসে কুহুর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে স্বরে বললো
-‘কেমন আছে আমার ছোট্ট সোনাটা?
কুহু অভিমানী স্বরে বললো
-‘বলবো না তোমাকে।কিচ্ছু বলবো না।
রাইফা হেসে ফেললো শব্দ করে।এরপর কুহুর থুতনি ধরে উঁচু করে বললো
-‘তাই বুঝি?

কুহু মুখ ঘুরিয়ে নিল।রাইফা..সম্পর্কে আয়ানের ফুফাতো বোন।সে’বার মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে কুহুর সাথে তার পরিচয়। মেয়েটা এতো মিশুক যে একবারেই কুহুর সাথে তার ভাব হয়ে গিয়েছিল।সে একটা প্রাইমেরি স্কুলে এ বছর চাকরি পেয়েছে।কাজের চাপে আর আসা হয়নি।এবার কুহুর গুলি লেগেছে শুনে ছুটি নিতে চাইলো।ছুটি পেতে পেতে এক সপ্তাহ’ই লেগে গেল।মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় চাকরিটা ছেড়ে দিতে।কিন্তু মুখ বুজে সহ্য করে নেয় সে।
রাইফা ব্যাগ থেকে একটা কিন্ডার জয় বের করে হা-হুতাশ করে বললো
-‘ভেবেছিলাম এটা একজনকে দিব কিন্তু সে তো আমার উপর অভিমান করে আছে।কি আর করার! ফেলে দেই বরং..
রাইফা উঠে যেতে নিলে কুহু খপ করে তার হাতটা ধরে ফেললো।
-‘ঠিক আছে.. ঠিক আছে..এবারের মতো ছেড়ে দিলাম।

কুহু কথাটা বলেই কিন্ডার জয়টা নিয়ে নিল।রাইফা ফিক করে হেসে ফেললো।এরপর বললো
-‘কি করে হলো ঘটনাটা?তোর বাবার..
রাইফাকে কুহু সবটা জানিয়েছিল।সাখাওয়াত আলমের সম্পর্কে সে জানে।কুহু বলে উঠলো
-‘নাহ্ গো আপু।আমাকে উদ্দেশ্য করে মারা হয়নি।
কুহু শুরু থেকে সবটা রাইফাকে বললো।আহনাফের কথা বললো তবে বন্ধু হিসেবে।রেনানের ফিরে আসা সবটা জানালো তাকে। রাইফা চেতে বলে উঠলো
-‘হারামিটা ফিরে এসেছে! আবার তোর কোনো ক্ষতি করতেই এসেছে।
কুহু কিঞ্চিত হেসে বললো

-‘না গো আপু।ও এসেছে অন্য কারণে।ঘটনাক্রমে আমার সাথে দেখা হয়ে গেছে এই আরকি।এবার ওর টার্গেট আমার রোদ।ওকে বাঁচাতে হবে আপু।
রাইফা বললো
-‘ওকে সবটা বলে দে তাহলেই তো হয়।
-‘পরিবারে বিচ্ছেদ ঘটুক আমি তা চাই না।তাই জানাচ্ছি না।

রাইফার এই ব্যাপারটা প্রচুর বিরক্ত লাগে।দোষ করেছে শাস্তি পাবে।এখানে এতো পিরিত কেন দেখাতে হবে? পরিবারে ভাঙন ধরলে ধরুক।তার কি?রাইফা মুখে সেসব বললো না।সে বললো
-‘আহনাফ তো জানে।তাহলে আহনাফের মাধ্যমে ওকে সাবধান কর।
কুহু হতাশার শ্বাস ছেড়ে বললো

-‘তার সাথেও এখন কথা হয় না।
-‘কেন?
রাইফা পাল্টা প্রশ্ন করলো।কুহুর মুখটা পাংশুটে হয়ে গেল।রাইফা বোধহয় কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে।কুহু যতোই বন্ধু বলুক এমন দুদিনের বন্ধুর জন্য নিজের জীবন ঝুঁকিতে রেখে কে গুলি খায়! ওর এই বয়স সে পার করে এসেছে।সবটা বুঝলো সে।কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
-‘আহনাফকে ভালোবাসিস?
কুহু সঙ্গে সঙ্গে দুইদিকে মাথা নেড়ে অসম্মতি প্রকাশ করলো।রাইফা হাসলো তা দেখে।এরপর ওর গালে হাত রেখে বললো
-‘মনকে জোর করিস না।যেটা হচ্ছে হতে দে।জোর করে হ্যাঁ কে না করিস না।সবাই কিন্তু খারাপ হয় না যদিও আমি আহনাফকে এখনো দেখিনি।তবে সব পুরুষ খারাপ হয় এই কথাটা মনে ধরে রাখিস না।আমাদের আয়ানকেই দেখ! কত ভালো একটা ছেলে!
-‘আমার নামে কি বলা হচ্ছে?
হাস্যজ্জ্বল মুখে আয়ান প্রবেশ করলো।

-‘কোথায় যাচ্ছো, চোরনি?
রোদেলা রাফির দিকে তাকালো একবার।পরণে তার একটা কালো রঙের শার্ট আর জিন্স।চুলগুলো উষ্কখুষ্ক।
-‘মহাকাশে যাচ্ছি..যাবেন?
রোদেলা চেতে বলে উঠলো কথাটা।রাফি বিস্কুট খেতে খেতে বললো
-‘ছ্যাৎ করে উঠো কেন আমাকে দেখলেই? আমি ভালো করে কথা বলছি অথচ তাও তুমি ছ্যাৎ করে উঠছো।এই তোমার কোনো ব্যামো আছে নাকি গো, চোরনি?
রোদেলা ধমকে উঠলো
-‘চুপপপ…আপনার বউ চোরনি…আপনার চৌদ্দগোষ্ঠী চোরনি।
রাফি কথাটা শুনে খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠলো।আস্তে করে বললো
-‘সেটাই তো বলেছি গো…
-‘কি বললেন?
রোদেলা এক ভ্রু উঁচু করে বললো।রাফি বিস্কুটের প্যাকেট থেকে একটা বিস্কুট রোদেলার দিকে বাড়িয়ে বললো

-‘চলো বন্ধু হই।
-‘অ্যাঁ!
রাফি রোদেলাকে ভেঙিয়ে ওর মতো করেই বললো
-‘অ্যাঁ!
রোদেলার নাকের ডগা ফুলে উঠলো রাগে।রাফি বলে উঠলো
-‘বন্ধু মানে বুঝো না?
-‘আমি আপনার বন্ধু হতে যাবো কেন?
রাফি হাসলো।পরপর’ই ওর দিকে একটু ঝুঁকে বললো
-‘বউ তো আর হতে বলিনি।এতো ভয় কিসের?
রোদেলা মাথাটা পেছনে সরিয়ে ফেললো।রাফিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বললো
-‘রাস্তা ছাড়ুন..
রাহুলের রুমে যেতে নিলে রাফি বাঁধা দিয়ে বলে উঠলো
-‘যেও না।ভাই নিষেধ করেছে কাউকে যেতে।বলেছে বোম ফাটবে।
-‘বোম!

রোদেলা হতবিহ্বল স্বরে বললো।রাফি বলে উঠলো
-‘নেহাত’ই ভাইয়ের নিষেধ তানাহলে তোমাকে কে আটকাতো!বয়ে গেছে আমার তোমার সাথে কথা বলতে!
রাফি বিস্কুট খেতে খেতে বললো।রোদেলা হকচকিত হলো ওর এই পরিবর্তনে।একটু আগেও বন্ধু হবে কিনা জিজ্ঞাসা করে এখন এসব বলছে!সে বিরবির করে বললো
-‘ বিস্কুটখোর মদন কোথাকার!
রাফি চোখ বড়বড় করে তাকালো।তবে সে আজ মুখে কিছু বললো না।রোদেলার দিকে এক পা করে এগোতে লাগলো আর গম্ভীর স্বরে বলতে লাগলো
-‘কি বললে?

রোদেলা পেছনে যেতে লাগলো।তবে তেজি স্বরে ঠিক’ই বললো
-‘ বিস্কুটখোর মদন!
রাফি এক ভ্রু উঁচু করে বললো
-‘কি?
রোদেলা পেছনে যেতে যেতে দেয়ালে ঠেকে গেল একটা সময়।এবার একটু দমে গেল বোধহয় সে।রাফি ওর এক পাশে হাত দিয়ে দাঁড়ালো।
-‘আবার বলোতো চোরনি…কি বললে…

রোদেলার তেজ এবার একটু কমলো বুঝি।রাফি তার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে।রোদেলা কিছু বলতে নিলে রাফি এক আঙুল দিয়ে ওর ওষ্ঠ স্পর্শ করে থামিয়ে দিল–“হুশশশ!” রোদেলা থমকালো।রাফি সম্মোহনি চোখে তাকিয়ে থাকতে পারলো না বেশিক্ষণ।নামিয়ে নিল দৃষ্টি।রাফি হঠাৎ ওর দিকে একটু ঝুঁকে গেল।রোদেলার হৃদস্পন্দ অস্বাভাবিক হয়ে গেল।রাফি হঠাৎ রোদেলা কপালে আস্তে করে থাপ্পর মারলো।রোদেলা ব্যথায় শব্দ করে উঠলো। হুশে ফিরেছে যেন সে।রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রাফির পানে।সে হাসছে রোদেলাকে দেখে।নিজের হাতের তালু দেখালো সে।একটা মশা লটকে আছে।রাফি দূরে সরে এলো।
-‘তোমার রক্ত চুষছিলো শা/লাটা।দেখলে তোমার কত বড় উপকার করলাম! রক্ত অপচয় হওয়া থেকে বাঁচালাম।আহ্ আমি মানুষটা কত ভালো!

রোদেলা দেখলো রাফির নাটক।বড্ড বিরক্ত হলো সে।এখানে থাকা মানে এখন সময় অপচয়।সে চলে যেতে নিল।কি মনে করে ফিরে এলো আবার।রাফি তাকালো তার দিকে।
-‘আচ্ছা আহনাফ ভাই কুহুকে খুব ভালোবাসে তাই না?
রাফির হাসিটা হঠাৎ মিলিয়ে গেল।তবুও মেকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে সে বললো
-‘কেন বিয়ে দিতে কাজী অফিস নিয়ে যাবে নাকি?
রোদেলা বিরক্ত হলো।বুঝলো এর সাথে কথা বলে লাভ নেই।চলে যেতে নেয় সে।রাফি তখন ছন্দের সুরে বলে উঠলো

-‘আশেপাশে নজর বুলাও
দেখতে পাবে আলো,
মনকে তুমি আজ বুঝাও
কেউ একদিন বাসবে ঠিক’ই ভালো।
রোদেলা এক ভ্রু কুচকে তাকালো তার দিকে।রাফি আর তার দিকে তাকালো না।হাত ধোঁয়ার জন্য চলে গেল।

-‘ভাই…আমার পরাণের ভাই….কে মারিল তোমার পেছন?
আহনাফ নাটকীয় ভঙ্গিমাতে বললো কথাটা।রাহুল দাঁতে দাঁত কটমট করলো।উল্টো হয়ে বিছানায় শুয়ে রয়েছে।আজকাল বসাটা কষ্টের হয়ে যায় তার জন্য।সারাদিন উল্টো হয়েই লটকে থাকে বিছানায়।এখন একটু একটু বসতে পারে।এই ক’দিন সে অবাক হয়েছে আহনাফের না আসার জন্য।মনে মনে স্বস্থির শ্বাস ছেড়েছিল। ভালোই হয়েছে আসেনি।আজ ঠিক’ই চলে এসেছে।
-‘আহনাফ রাগাস না।যা এখান থেকে।
আহনাফ ঠোঁট চেপে হাসি আটকে বললো
-‘নাহ.. ভাই না…তুই শুধু একবার বল কে করলো তোর এই অ..
-‘আহনাফ যা…
রাহুল কটমট করে বললো কথাটা।

-‘নাহ্ তুই বল যে কে তোর পা’ছায়…
-‘তোর গার্লফ্রেন্ড মারছে।হয়েছে এবার? যা এখন…
আহনাফ এবারবার হাসি আটকে রাখতে পারলো না।হো হো করে হাসতে লাগলো সে।রাহুলের সহ্য হচ্ছে না আহনাফের হাসি।সে বলে উঠলো
-‘হাসছিস যে বড়! অন্যের খাওয়া জিনিস খেতে ভীষণ ভালো লাগে তোর?ওহহো এখনো তো তোকে এক্সেপ্ট’ই করেনি।আমাকে ভালোবাসে কিনা এখনো! তুই এক কাজ কর বেশি বেশি টাইম দে..ভালো ভালো দুটো কথা বল দেখবি পটে গেছে।আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল তো আমি জানি।
রাহুল কথাটা বলে গা জ্বালানো এক হাসি দিল।আহনাফও হাসলো।রাহুলের মতো করেই বললো
-‘তুই এই উপদেশগুলো নিজের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারিস চাইলে।দেখবি রোদ পটে গেছে। আমার পেছনে পড়ে আছে তো আমি জানি।
আহনাফ গা জ্বালানো হাসি দিল এবার।রাহুল দাঁত কটমট করে বললো

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২১

-‘ইউ..আআআ
কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই জোরে চেঁচিয়ে উঠলো সে।আহনাফ ওর ব্যান্ডেজকৃত জায়গাটাতে থাপ্পর মেরেছে।আহনাফ উঠে দাঁড়ালো।এরপর বলে উঠলো
-‘ভবিষ্যতে আহনাফ শাহরিয়ারের সাথে লাগতে এলে বুঝে শুনে আসবি।বারো ঘড়ির ব্যাটারি কোথাকার!
আহনাফ কথাটা বলে আবার একটা থাপ্পর মেরে বেরিয়ে গেল।রাহুল জোরে চেঁচিয়ে উঠলো।ওর চেঁচানো শুনে সবাই এদিকেই আসতে নিয়েছিল পরক্ষণে আহনাফকে দেখে আর কেউ যায়নি।যার যা বুঝার বুঝা হয়ে গেছে।সাজ্জাদ শাহরিয়ার তাও আনিসা বেগমকে যেতে বললেন।রাফি দরজার বাহিরে দাঁড়িয়েছিল।সে জানতো এমনকিছুই হবে।

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here