প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৬

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৬
অনন্যা

-‘সাখাওয়াত আলম আর আমার বাবা এককালে বেস্টফ্রেন্ড ছিল।জানকে জিগার দোস্ত যাকে বলে।
কুহু হতভম্ব হলো বেশ।তবে তা প্রকাশ করলো না।দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছিল।কুহুর হঠাৎ ইচ্ছা জাগে তার বাবার সাথে ওদের শত্রুতা কেন তা জানার।আহনাফকে জিজ্ঞাসা করতেই সে মুচকি হাসে প্রথমে।এরপর বলে কথাগুলো।আহনাফ আবার বলতে লাগলো

-‘তারা বিয়েও করেছিল এমন দুই বান্ধবীকেই।আমার বাবা ছিলেন তখন এমপি।আর ওনার ডান হাত বলো বাম হাত বলো সবটা ছিলেন সাখাওয়াত আলম।হঠাৎ কি থেকে কি হলো কে জানে! সাখাওয়াত আলমের মাথায় হঠাৎ ক্ষমতার লোভ চেপে ধরে।বাবার সাথে অকারণেই ঝগড়া করতেন।বাবা তার চেয়ে ভালো পজিশনে আছে এটা তার ভালো লাগতো না।হঠাৎ বন্ধুর এমন পরিবর্তনে বাবা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছিলেন।সাখাওয়াত আলম বিপরীত দলের সাথে হাত মেলালেন।যা বাবাকে আরো ভেঙে ফেলে।সাখাওয়াত আলমের ওয়াইফ অর্থাৎ রাইমা আন্টি আমাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন।এরজন্য নাকি তাকে অত্যাচারও করতো সাখাওয়াত আলম।বাবাকে কান্নাকাটি করে বলতেন তাকে সঠিক পথে আনতে।বাবাও চেষ্টা কম করেনি।এরপর নির্বাচনে সাখাওয়াত আলম বাবার প্রতিদ্বন্দী হয়ে দাঁড়ালেন।আফসোস বাবাই জিতলো।সাখাওয়াত আলম তা মানতে পারেনি।পরিকল্পনা করে কিছুদিন পর বাবার গাড়ির ব্রেকফেইল করায়।
আহনাফ থামলো।চোখদুটো জ্বলছে।তবে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘আফসোস! ঐদিন আমার মা বেরোলেন ঐ গাড়িতে করে।বাবা অন্য এক গাড়িতে গিয়েছিলেন।ব্যাস! শেষ হলো সব।
কুহু মুখে হাত দিয়ে ফেলে।তার বাবা খুনি! ভেতর কাঁপছে তার।
-‘বাবা এরপর রাজনীতি ত্যাগ করলেন।তখন ঘটলো আরেক ঘটনা।রাইমা আন্টি প্রেগনেন্ট ছিলেন।হঠাৎ লিভার উঠায় উনাকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে তার উপর আক্রমণ করা হয়।বাচ্চাসহ নাকি গুলি করে মারা হয়।এখন তার দাবি ওই লোকগুলো আমার বাবার পাঠানো।শোধ নিতে বাবা এমন করেছেন।কিন্তু এমনকিছুই ঘটেনি।সে তা মানতে নারাজ।কতকিছু যে করলো এরপর!

তাচ্ছিল্য করে হাসলো আহনাফ।কুহু এখনো বিস্ময়! চোখদুটো অজান্তেই জলে ভরে উঠেছে।আহনাফ বললো
-‘আমার মায়ের খুনি সে।তুমি আমার সবটা জুড়ে, তিলোত্তমা।তাই তোমার কাছে কিছুই লুকাতে ইচ্ছুক নই আমি।…সাখাওয়াত আলমের ধ্বংস আমার মূল লক্ষ্য।তার মেয়ে হয়তো বেঁচে আছে।তাকে সবভাবে নিঃস্ব করাই আমার আসল উদ্দেশ্য।খুন করতে হাত কাঁপবে না আমার, তিলোত্তমা।মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ যে আমি নেবোই।
কুহু হকচকিত হলো খানিকটা।একটা শুকনো ঢোক গিলে আহনাফের দিকে তাকালো।এরপর খানিকটা কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো

-‘উ’উনার মেয়েকে ম’মেরে ফেলবে পেলে?
আহনাফ উত্তর দেয় না।তার নিরবতা’ই যেন উত্তরটা দিয়ে ফেললো।কুহুর গাল বেয়ে উষ্ণ তরল বেয়ে পড়লো।তবে সেটা নিজের বাবার কুকর্মের কথাগুলো মনে পড়ে।হাজার হোক বাবা তো।নিজের জীবনের পরোয়া কুহু কখনোই করেনি।অন্তত তার জীবনের ঐঘটনার পর থেকে।আহনাফ কুহুর দিকে তাকতেই হকচকালো।অস্থির চিত্তে বললো
-‘একি! তিলোত্তমা তুমি কাঁদছো কেন? হোয়াটস্ রং সোনা?
আহনাফ কুহুর মুখটা নিজের হাতের আগলে নিল।কুহু আহনাফের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রইলো।আজ যে ভালোবাসাটা সে দেখতে পারছে সেটা কি আদেও ঐদিন দেখতে পাবে যেদিন আহনাফ জানবে সে’ই সাখাওয়াত আলমের মেয়ে? শত্রুর মেয়েকে সে কোনোদিন মানবে না।মেরে ফেলবে সেটা তো নিজের মুখেই বললো।কুহুর ভাগ্যটা এতো পোড়া কেন? ভালোবাসা বুঝি তার কপালে নেই।আহনাফ কুহুকে তাকিয়ে থাকে হাসে।তার ঠোঁটের ভাজে লুকানো সেই হাসি।

-‘আমার তিলোত্তমা, তোমার মুখে এই চিন্তার ছাপ আজ আমায় বড় তৃপ্ত করছে।তুমি আমার শত্রু..মিষ্টি শত্রু।তোমাকে আমি মারবো সোনা তবে এভাবে নয় অন্যভাবে।
আহনাফের ঠোঁটের কোণ বেঁকে গেল।কুহুর কপালে চুমু দিল সে।কুহু কিছু বললো না আজ।
দূর থেকে তাদেরকে বেশ ভালোভাবেই একজন পরখ করলো।ঠোঁটে হাসি লেপ্টে রয়েছে তবে তার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে এসেছে।
-‘আয়ান?
চমকে পেছনে তাকালো আয়ান।নাতাশাকে দেখে মুচকি হাসলো।
-‘আরে নাতাশা বলো!

নাতাশা আয়ানকে স্পষ্ট কুহুদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে।আয়ানকে তার সুবিধার লাগছে না।আহনাফের ক্ষতি সে কিছুই করতে পারবে না এটা নাতাশা জানে।তবে তার ভয়টা আয়ানকে নিয়েই।আহনাফ তাকে ছাড়বে না উল্টোপাল্টা কিছু করলে।আহনাফের যে রাগ যদি আয়ানকে কিছু করে….নাহ্ নাতাশার আয়ানকে সাবধান করতে হবে।নাতাশা হালকা হেসে বললো
-‘এসো ওদিক থেকে একটু ঘুরে আসি।
আয়ান নির্দ্বিধায় রাজি হলো।পকেটে হাত গুজে হাঁটতে লাগলো।নাতাশা গেল পেছন পেছন।
আকাশ আজ অভিমান করেছে বোধহয়।রৌদ্রজ্জ্বল আকাশটা হঠাৎ’ই আঁধারে তলিয়ে গেল।রাইফা বলে উঠলো
-‘এই! বৃষ্টি আসবে বোধহয়।
-‘আমি আছি তো মিস রাইফেল।আমি থাকতে আপনার এতো টেনশন কেন হুম?
-‘এই চুপ…

রাইফা ধমকে উঠলো।আদিত এক আঙুল ঠোঁটের কাছে এনে রাখলো বাধ্য ছেলের মতো।এতো এতো কাপলের মাঝে সে এক অসহায় সিঙ্গেল।আগে জানলে আসতো নাকি! আয়ান হতোচ্ছোরাটাও একটা জুটিয়ে নিয়েছে।
-‘উমমম…
আদিত কিছু বলার জন্য এমন শব্দ করতে লাগলো।রাইফা বিরক্তিতে ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।এ এক ভিনদেশের প্রাণী! রাইফা পেছনেই পড়ে আছে।এমন অসভ্য ছেলে দুটো হয় না! রাইফা উঠে দাঁড়ালো।এখানে আর থাকা যাবে না।আদিতও ছুটলো পেছন পেছন।রাইফা তা দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো।

-‘কি সমস্যা তোমার?
-‘ঠিক করে দিবে বললে?
-‘ডাক্তার কাছে যাও।
-‘এই যে সামনেই তো দাঁড়ানো..আমার মনের ডাক্তার।
শেষের কথাটা আস্তে করে বললো।রাইফা রাগে পারছে না আদিতকে একটা লাথি মেরে নদীতে ফেলে….হঠাৎ পানিতে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে হকচকিয়ে উঠলো।সবাই নদীর দিকে তাকালো।এগিয়ে গেল সেদিকে।
-‘হায় আল্লাহ! আমার রোদ…
কুহু চেঁচিয়ে উঠলো।নিধি বলে উঠলো
-‘ও তো সাঁতার জানে না..কেউ বা…

নিধির কথা শেষ হবার আগেই দুজন ঝাঁপ দিল পানিতে।আহনাফ জিহ্ব দিয়ে গাল ঠেলে উপভোগ করছে যেন সবটা।কুহু মুখে হাত দিয়ে ফেললো।রাফি আর রাহুল ঝাঁপ দিয়েছে।কিন্তু রাফি নিজেই হিমশিম খাচ্ছে মনে হচ্ছে যেন সে নিজেই সাঁতার জানে না।কুহু আহনাফকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে মেরে বললো
-‘এই..আপনি বাঁচান ওদের।রাফি ভাইয়াই তো মনে হচ্ছে সাঁতার জানে না।
আহনাফ কিছু বললো না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে সে।রাহুল রোদেলাকে কোলে করে উঠে এসেছে।রাহুলের গায়ের সাদা শার্টটা শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে পুরো।ফুলে উঠা মাসেলগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।নিধি তা দেখে মুগ্ধ স্বরে বলে উঠলো

-‘ওয়াওওও!!
আরিফ চমকে তাকালো তার দিকে।নিধি ভড়কে গেল।মেকি হেসে বললো
-‘ইয়ে..কেমন কোলে করে নিয়ে এলো সেটা দেখে ব’বলেছি।
আরিফ কিছু বললো না।তবে ইশারায় যেন বোঝালো রাতে হাতে পাই পরে বোঝাবো।নিধি অন্যদিকে ঘুরে গেল যেন সে কিছু দেখেনি, নিষ্পাপ এক বাচ্চা সে।
রাফি নিজেকেই গালি দিচ্ছে এখন।রোদেলাকে পানিতে দেখে ভুলেই গিয়েছিল যে সে নিজেই সাঁতার জানে না।ডুবে মরার অবস্থা এখন তার।আহনাফ বিরক্তিতে গায়ের শার্টটা খুলে ফেললো।কুহু বড়বড় চোখ করে ফেললো তাকে দেখে।আহনাফ ঝাঁপ দিলো পানিতে।কুহু হা হয়ে গেল।আহনাফ সাঁতরে রাফিকে ওর ঘাড় ধরে উঁচু করে নিয়ে আসছে।রাফিও ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী।খুব সহজ হলো না তাকে ওভাবে আনতে।উপরে উঠতেই রাফি কাঁশতে লাগলো।আহনাফ মাথা ঝাঁকিয়ে পানি ঝারলো চুলের।কুহু হা করে দেখতে লাগলো তাকে।পরক্ষণেই রোদেলার কথা মনে আসতেই পাশে দৌঁড়ে গেল।রাহুল ওর পেট থেকে পানি বের করার চেষ্টায়।কিন্তু ওর জ্ঞান ফিরছে না।কুহু এবার কেঁদে ফেললো।

-‘রোদ…আমার রোদ…চোখ খোল…রোদ…
-‘চুপপপ
রাহুল ধমকে উঠলো।কুহু চুপ হয়ে গেল।রাহুলের আজ অব্দি কোনোকিছু হারানোর ভয় ছিল না।এই প্রথম সে ভয় পাচ্ছে।প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়। রোদেলার গালে হাত রেখে কাঁপা কাঁপা স্বরে ডাকতে লাগলো
-‘রোদ… চোখ খোলো না! এই রোদ! চোখ খোলো রোদ…এই কষ্ট দিস না আমায়।চোখ খোল…
কুহু ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো।সেও তো এক’ই কাজ করছে।তার মতোই রোদকে ডাকছে।তাহলে তাকে ধমকালো কেন? শা’লা বাঙ্গির পোলা! রাহুল রোদেলার পেটে চাপ দিতে লাগলো।রোদেলার মুখ থেকে পানি পড়ছে।তবে এখনো চোখ খুলে তাকায়নি সে।রাহুলের ভেতর কাঁপছে।হঠাৎ রাহুলকে ধাক্কা দিয়ে রাফি আসলো সেখানে।রাহুলের রাগ আকাশ ছুঁলো।রাফির গলা শুকিয়ে আসছে।

-‘চোরনি..চোরনি…চোরনি বলছি ঝগড়া করবে না? এই!!
সে আর কিছু না ভেবে রোদেলাকে মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে লাগলো।হকচকিয়ে কুহু আর নিধি দূরে সরে গেল।আদিত চোখে হাত দিয়ে বলে উঠলো
-‘আমার মতো সিঙ্গেলের সামনে কি করতেছে এগুলো? আল্লাহ এ কি অত্যাচার!
আদিত তার আরেক হাত দিয়ে রাইফার চোখে দিয়ে বললো
-‘চোখ বন্ধ করো রাইফেল সোনা।সিঙ্গেলদের এসব দেখতে নেই।
রাইফা ঝাটকা মেরে আদিতে হাত ছাড়াতে চাইলো তবে পারলো না।রাহুল দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো
-‘হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস….

রাফির মুখে সজোরে ঘুষি মারলো সে।রোদেলার থেকে ছিটকে গেল সে।রোদেলা ততক্ষণে চোখ মেলে তাকিয়েছে।কাঁশছে সে।রাহুল রাফির নাক বরাবর ঘুষি মেরে বসলো।আহনাফ হাতের মুঠো শক্ত করলো।চোয়াল শক্ত হলো তার তবে সে এগোলো না।রাফির নাক দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো।রাহুল আবার মারতে নিলে রাফি উল্টো আঘাত করলো।রাহুল অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ওর পানে।সবার মুখে হাত।কুহু আর নিধি রোদেলাকে ধরলো।সামনের দৃশ্য দেখে সে বড্ড অবাক হলো।শরীর দুর্বল লাগছে তার।রাহুলের সাথে রাফি পেরে উঠছে না ঠিক।নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে তার।রাহুলেরও আঘাত লেগেছে।তবে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না থামাতে।আরিফ ভিডিও করছে।ব্যাপারটা এদের কাছে বিনোদনের মতো লাগছে।

রাফির নাজেহাল অবস্থা। রাহুল শার্টের হাতা গুটিয়ে রাফির নাক বরাবর ঘুষি মারতে নিলে তখন রোদেলা সামনে চলে এলো।থেমে গেল তার হাত।সামনে দাঁড়ানো রমণীকে দেখে হৃদয়ে বোধহয় একটু শান্ত হলো তার।রাহুল ওর গালে হাত রাখলো।এরপর নিজের বুকে চেপে ধরলো হঠাৎ।রাফির চোখ ঝাপসা।তাও যতটুকু দেখলো তার রক্ত টগবগ করে উঠলো।যতটুকু শক্তি আছে ততটুকু দিয়ে রোদেলার হাত ধরে টান মারলো সে।রোদেলা তার বুকে আছড়ে পড়লো এবার।
কুহু এমন দৃশ্য দেখে আহনাফকে বললো

-‘আপনি কিছু বলছেন না কেন?রোদকে তো ছিঁড়ে ফেলবে এরা।
আহনাফ এখনো শার্ট পড়েনি।ওভাবেই দাঁড়িয়ে সে।আহনাফ ঝুঁকে কুহুর কানের কাছে মুখ এনে বললো
-‘ রাহুলের রোদেলার প্রতি ভালোবাসা দেখে তুমি কি জেলাস, তিলোত্তমা?
কুহু দাঁতে দাঁ পিষে বললো
-‘ফা’কিং কোয়েশ্চেন!
আহনাফ বড়বড় নয়নে তাকালো।কুহু বলে উঠলো
-‘রোদকে বাঁচান…
আহনাফ বলে উঠলো
-‘নিজের জিনিস এভাবে ছিনিয়েই নিতে হয়, প্রিয়তমা।
কুহু বলে উঠলো
-‘তাই বলে ছিঁড়ে ফেলবে নাকি!
-‘অন্যকারো হতে দেওয়ার থেকে সেটাই ভালো নয়কি?

কুহু চমকে তাকালো আহনাফের দিকে।আহনাফের ঠোঁটের কোণে অদ্ভুদ এক হাসি।কুহুর কল্পনায় তখন এক দৃশ্য ফুটে উঠলো যেখানে আহনাফ আর আয়ান তাকে নিয়ে টানাটানি করছে আর হঠাৎ করেই দুজন ওর দুই হাত ধরে দুইপাশ থেকে এতো জোরে টান মারলো যে…কুহু দুই পাশে মাথা ঝাকালো।কিসব ভাবনা! এমন না হোক।
এদিকে রাহুল রোদেলাকে টান মেরে নিজের কাছে এনে রাফিকে এক লাথি মারলো।রাফি ছিটকে পড়লো।রোদেলা চেঁচিয়ে উঠলো
-‘স্টপ…

রাহুল রোদেলার কোমরে এক হাত পেঁচিয়ে রেখেছে।রাফি নিচে পড়েও তা খেয়াল করলো।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার।পায়ের জুতোটা খুলে রাহুলের মুখ বরাবর ছুঁড়ে মারলো সে।এরপর আরকিছু দেখতে পেল না সে।চোখ বন্ধ হয়ে এলো তার।এদিকে জুতোটা এসে রাহুলের গালে লাগলো।সে রোদের দিকে তাকিয়ে ছিল তাই খেয়াল করেনি।রোদেলা দুই হাতে নিজের মুখ চেপে ধরলো।রাহুল রাগে চোখ বুজে ফেললো।কোমরের বাঁধন দৃঢ় হলো।রোদেলা ব্যথায় অর্তনাদ করে উঠলো।রাহুল ওর কোমর ছেড়ে রাফির দিকে তেড়ে যেতে নিলে রোদেলা ওর হাত ধরে আটকে দিল।রাহুলের চোয়াল শক্ত হলো।নিজেকে ঠাণ্ডা রাখতে পারছে না সে।রোদেলার হাত চেপে ধরে গাড়ির দিকে গেল সে।রোদেলা পেছন ফিরে সিক্ত নয়নে একবার রাফির দিকে তাকালো।এই প্রথম মেয়েটার রাফির জন্য এতো খারাপ লাগছে বুঝি।রোদেলার প্লানের জন্য তাকে এতো কষ্ট পেতে হলো।রাহুল রোদেলাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো।রোদেলা আরেকবার তাকালো সেদিকে।রাহুল গাড়ি স্টার্ট করতেই ধীরে ধীরে তা অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগলো।রোদেলা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

সবার মনে হলো যেন কোনো যুদ্ধ চলছিল এতক্ষণ।আকাশ ভেঙে তখন টিপটিপ করে বৃষ্টি আরম্ভ হলো।আহনাফ সবে শার্ট পড়ছিল।বৃষ্টি পড়তেই সে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।কুহু বলে উঠলো
-‘রাফি ভাইয়া পড়ে আছে রক্তাক্তভাবে আপনারা কেউ তুলছেন না যে!
-‘ওরে তুলে কি করবো? রাহুলের হাতে মার খেয়ে লটকে গেছে।ভাবলেও আমার লজ্জা লাগছে।
কুহু চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ওর দিকে।আদিত বলে উঠলো
-‘রাফি ভাই…রাফি কাইস্যা..উঠো ভাই…হসপিটালে নেওয়ার মতো পয়সা নেই ভাই।উঠে নদীতে মুখ ধুয়ে নেও ভাই।
রাইফা অবাক হয়ে বললো

-‘আশ্চর্য তো! কোথায় হসপিটালে নিয়ে যাবে দ্রুত তা না মজা করছো!
আদিত বলে উঠলো
-‘মজা না গো…আহনাফ ট্রিট দিবে দেখে টাকা আনিনি কেউ।ভাই কাইস্যা..
রাইফা বড্ড অবাক হলো।হঠৎ তখন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।তোরপলের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো সব।গেল না আহনাফ, কুহু,আদিত আর রাফি।বৃষ্টির পানি চোখে পড়তেই পিটপিট করে তাকালো সে।প্রথমেই গম্ভীর আহনাফের চেহারা ভেসে উঠলো।আহনাফ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে ওকে উঠতে সাহায্য করলো।রক্ত ধুয়ে ধুয়ে পড়ছে।আহনাফ দেখলো সবটা।এরপর বললো
-‘মান-সম্মান রাখলি না আমার।
রাফি কিছু বললো না।উদাস নয়নে তাকিয়ে সে।শরীর ব্যথা তবে সে ব্যথা হার মানছে বুকের ব্যথার কাছে।আহনাফ ওর কাঁধে হাত রেখে বললো
-‘ভাইয়ের উপর ভর্সা নেই?
বৃষ্টির পানির সাথে হয়তো চোখের নোনাজলগুলো মিশে যাচ্ছে ছেলেটার।বৃষ্টির কারণে তা ধরা গেল না।আহনাফ রাগি স্বরে বলে উঠলো

-‘ধাক্কা মেরে নদীতে ফেলে দিব।দুর্বলদের আমার পছন্দ না।জানিস না?
-‘ও আমার হবে তো ভাই?
-‘নিজেকে জিজ্ঞাসা কর।তুই পারবি নাকি হাল ছেড়ে দিবি সেটা তোর সিদ্ধান্ত।
রাফি ভাঙা ভাঙা স্বরে বলে উঠলো
-‘ও আমার না হলে আমি মরে যাব ভাই।
-‘তাহলে যা মর…ফালতু ছেলে কোথাকার! মিনিমাম কনফিডেন্স নেই।চোখের সামনে আসবি না আর আমার।
আহনাফ রেগে চলে যেতে নিলে রাফি ওর হাত ধরে ফেললো।

-‘তুমি পাশে থাকলে আমি সব পারবো ভাই।
আহনাফ কিছু বললো না।রাফি বলে উঠলো
-‘রাহুলকে মেরে দরকার পড়লে আমার করবো ওকে।
আহনাফ এবার একটু শান্ত হলো।রাফি বলে উঠলো
-‘জুতোটা তো মেরেছিলাম।তোমার মান রেখেছি ভাই।
আহনাফ ফিক করে হেসে ফেললো।এরপর বললো
-‘রাহুল তো একটা তোর ভাবির ভাষায় বানিক চন্দ্র ।
-‘সেটা কি ভাই?
আহনাফ ক্রুর হেসে বলে
-‘বা//ইন//চ*

-‘আসতাগফিরুল্লাহ! আমি আরো ভাবছিলাম ভাবি বঙ্কিমচন্দ্রের বিগ ফ্যান।বঙ্কিম কঠিন থেকে বানিক বলে ভাবছিলাম।
আহনাফ হেসে ফেললো শব্দ করে।এরপর পকেট থেকে চাবি বের করে বললো
-‘তোর ভাবি আলাদা এক চিজ।এখন ইমিডিয়েটলি হসপিটালে যা তুই।এরপর আমার ফ্ল্যাটে আসিস।কিছু কথা আছে।যা এখন…
রাফি গাড়ির চাবি নিয়ে চলে গেল।কুহুর নজর ওদের দিকেই ছিল।বন্ধু হয়েও ভাইয়ের মতো এরা।এটা কুহুর বেশ লাগে।হঠাৎ তখন আয়ান আর নাতাশাকে দৌঁড়ে আসতে দেখা গেল।দুটোতে দৌঁড়ে আসছে যদিও ভিজে জবুথবু অবস্থা।হঠাৎ’ই নিধি জেদ ধরলো বৃষ্টিতে ভিজবে।আরিফের বাঁধা মানলো না সে।বেরিয়ে এলো।দুই বান্ধবী খুব আনন্দে বৃষ্টিবিলাস করতে লাগলো।রোদেলা থাকলেই জমে যেত।কুহু হঠাৎ রাইফাকে ডেকে উঠলো

-‘আপু তুমিও আসো না!
আদিত থমকালো।আপু! কুহুর বড় এ? ধুর! কত বড়’ই আর হবে! আদিতের থেকে ছোট’ই।হঠাৎ তখন আয়ান ডেকে উঠলো
-‘রাইফা আপু বেরিয়ে এসো…ভালোই লাগছে ভিজতে…একসাথে ভিজলে মজা হবে…
জোরে একটা বজ্র পড়লো তখন।সবাই চমকে উঠলো।তবে এই বজ্রের চেয়ে বড় বজ্র বোধহয় আদিতের মাথায় পড়লো এখন।আয়ানেরও বড়! আয়ান’ই তো তাদের থেকে এক বছরের সিনিয়র।আদিতের মাথা ঘুরতে লাগলো।তাকে ধাক্কা মেরে রাইফা বেরিয়ে গেল তখন।আদিত হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।সবাই ভিজছে এখন।আরিফ একটু ফাঁকে ফাঁকে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে ফেললো কতগুলো।আহনাফ মুচকি হাসলো।সবাই আনন্দ করছে।কুহু আর নিধি তো রীতিমত লাফাচ্ছে খুশিতে। রোদেলাকে বড্ড মিস করছে তারা।আহনাফ কুহুর কাছাকাছি এগিয়ে গেল।নিধি আরিফের দিকে গেল।আয়ান কুহুর দিকে তাকিয়ে।জোরে একটা বাজ পড়লো আবার।নাতাশা এবার ভয়ে আয়ানের বাহু জড়িয়ে ধরলো।আয়ান ভড়কে গেল।এদিকে কুহু নিজেও আহনাফকে জড়িয়ে ধরেছে ভয়ে।আহনাফ মুচকি হেসে ওর কোমড় চেপে ধরলো।এরপর কানে কানে ফিসফিস করে বললো

-‘সিডিউস করার চেষ্টাও করো না, তিলোত্তমা সুন্দরী..আই’ম নট এ গুড বয়..
কুহু ভড়কে তাকালো আহনাফের পানে।এদিকে পরপর বাজ পড়ছে।কুহু আবার ভয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে।রাইফা পড়েছে মাইনকার চিপায়।সে শুধু কেঁপে কেঁপে উঠছে।জড়িয়ে ধরার মানুষ নেই যে তার।তখন শুনতে পেল আদিতের গলা

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৫

-‘রাইফেল চিন্তা করো না আমি আসছি সো…
আদিত কথার মাঝেই পিছলে ধপ করে পড়ে সোজা নদীতে গিয়ে পড়লো।সবাই তা দেখে হো হো করে হেসে ফেললো।আয়ান আর কুহু অবশ্য সন্দিহান চোখে তাকালো। রাইফা বলে উঠলো
-‘শা’লা! নিজে বেঁচে ফিরে আয় আগে।অকর্মণ্য!

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here