প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৭
অনন্যা
শাহরিয়ার কুঞ্জে আজ বিরাট এক বাজ পড়েছে।রাহুল জানিয়েছে সে রোদেলাকে বিয়ে করতে চায়।সবাই এক প্রকার ঝাটকা খেয়েছেন বলা যায়।বিশেষ করে সাজ্জাদ শাহরিয়ার।ছেলের আগাগোড়া সব তার জানা।এই ছেলে সংসার করবে ভাবাটা হাস্যকর।রোদেলার পেছনে পড়ার কারণ বুঝলো না সে।ভাতিজির জীবনটা নষ্ট হতে দিবেন না।মেয়েটা বেজায় ভালো। তিনি গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন
-‘এটা সম্ভব নয়।
রাহুল বিদ্রুপ করে হাসলো কথাটা শুনে।পরক্ষণেই বললো
-‘তোমাদের অনুমতি চাইনি।আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি।
-‘রাহুল!!
আনিসা বেগম কঠোর স্বরে বললেন।রাহুল কোনো পরোয়াই করলো না।অখিল শাহরিয়ার বলে উঠলেন
-‘ওদের দুজনের মত থাকলে আপত্তি কোথায় ভাইজান! এটা তো বরং ভালো হবে..ভাই থেকে বেয়াই কি বলেন হাহা হাহা…
সাজ্জাদ শাহরিয়ার ভাইয়ের হাসির সাথে তাল মেলাতে পারলেন না।তিনি বলে উঠলেন
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘তোমার সাথে কথা আছে।ঘরে এসো রাহুল।
-‘আমি জানি তুমি কি বলবে।উত্তরটা আমি এখানেই দিতে পারবো, ড্যাড।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার ভ্রু কুচকে তা
কালেন ছেলের দিকে।রাহুল অল্প হাসলো।এরপর বললো
-‘আমি রোদকে ভালোবাসি।আই ফিল ফর হার।
সবাই একটু ভড়কালেন এমন কথায়।বড়দের সামনে এভাবে না বললেও পারতো।রোদেলা এখানে নেই।তখন রাহুল টানতে টানতে নিয়ে এসে ওর রুমে ফেলে এসেছে ওকে।রাহুল ফ্রেশ হয়েই জরুরি তলব করে।কেউ ভাবতেই পারেনি সে এমন কথা বলবে।
-‘আর রোদেলা?
সাজ্জাদ শাহরিয়ার কঠোর স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন।রাহুল ভাবলো আজকের ঘটনাগুলো।রোদেলার তাকে দেখে লাজুক হাসি এরপর গাড়িতে রাফি কেন টাচ করেছে তা নিয়ে ওর কাছে নালিশ..রাফির জায়গায় রাহুল কেন ওমন করলো না সেই অভিযোগ..এসব থেকে পজিটিভ ইংগিত’ই পাওয়া যায়।সে বলে উঠলো
-‘হ্যাঁ..সেও আমাকে ভালোবাসে।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লেন।জেরিন বেগম বলে উঠলেন
-‘ভাইজান বলছিলাম যে ছেলে-মেয়ে রাজি থাকলে আর অমত করবেন না।রাহুলও ছেলে ভালো।অমাদের আপত্তি নেই।ঘরের মেয়েও ঘরেই থাকবে।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার ছেলের সাথে ইশারায় কিছুক্ষণ কথোপকথোন চালালেন।এরপর বলে উঠলেন
-‘বেশ! দিন ঠিক করো তবে।
সবাই খুশি হলেন।আনিসা বেগম মনে মনে চাইছিলেন ছেলে তার সঠিক পথে আসুক।রোদেলাকে যে সে সত্যি ভালোবাসে এটা তিনি ওর চোখ দেখেই বুঝেছিলেন।রোদেলার দিকে ছেলের চাউনিই তা বলে দিত।রোদেলা যদি পারে এখন তাকে সঠিক পথে আনতে! পারবে, এটা তার অগাধ বিশ্বাস।জেরিন বেগম ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে এলেন।মিষ্টিমুখ করলো সবাই।রাহুল উঠে দাঁড়ালো।
-‘রোদের সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট জানাচ্ছি তোমাদের।
সবাই হতভম্ব হয়ে গেল এহেন কথায়।বিয়ে ডেইটও এরাই ঠিক করবে!! পরক্ষণেই মিটমিট করে হাসলেন সবাই।সাজ্জাদ শাহরিয়ার এখনো ছেলের মতিগতি বুঝতে পারছেন না।রাহুল হনহন করে উপরে চলে গেল।
-‘বেইবি…
রোদেলা উপুড় হয়ে শুয়েছিল।চোখের জলে বালিস ভিজে গেছে।রাহুলের স্বর শুনে দ্রুত চোখ মুছে উঠে বসলো।নিজেকে স্বাভাবিক করে গিয়ে দরজা খুললো।এক ঝলক হাসি ফুটিয়ে তুললো ঠোঁটে।রাহুল ভেতরে এলো।রোদেলা বলে উঠলো
-‘কিছু বলবেন?
রাহুল তাকালো তার দিকে।তার মুখ খুশিতে ঝলমল করছে আজ।সে বলে উঠলো
-‘বিয়ের কথা বলে এলাম সবাইকে।
-‘ওহ। কার?
-‘তোমার আর আমার।
-‘ওহ…হুয়াট???
রোদেলা চমকে উঠলো।রাহুলের ঠোঁটের কোণে হাসি।
-‘ইয়েস মাই লাভ।
রোদেলা অপ্রস্তুত হলো।বিয়ে পর্যন্ত চলে গিয়েছে! শিট্!সে খানিকটা লাজুক হাসার চেষ্টা করে বললো
-‘আ’আপনি আমাকে..
রাহুল হাসে লাজুক রোদেলাকে দেখে।ওর এক গালে হাত রেখে বলে উঠলো
-‘ইয়েস,আই লাভ ইউ।
রাহুলের এভাবে প্রপোজটা ঠিক পোষালো না।সে আশেপাশে নজর বুলালো।ফুলদানিতে নকল গোলাপ ফুল রাখা।সে ওগুলোই নিয়ে এলো।হাঁটু মুড়ে বসলো হঠাৎ।রোদেলা ভড়কালো।
-‘আমি জানি এভাবে প্রপোজ করাটা তোমার পছন্দ হয়নি।নেক্সট টাইম সুন্দর করে করবো।এখন এছাড়া উপায় দেখছি না।..তুমি একমাত্র মেয়ে যে কিনা রেনান শাহরিয়ার রাহুলের মনকে বস করতে পেরেছো।বলতে বাঁধা নেই আমার হৃদয় তোমার নামে স্পন্দিত হয়, বেবিগার্ল।ভালোবাসি তোমাকে।
রোদেলা মনে মনে বিজয়ের হাসি দিল।তবে বাহিরে লাজুক হেসে ফুলগুলো নিল।রাহুলের পাগলামি সীমাহীন।সে উঠে রোদেলাকে জড়িয়ে ধরলো খুশিতে।রোদেলা মনে মনে আওড়ালো
“ভালোবাসার জ্বালা আপনাকে এবার আমি বোঝাবো মিস্টার রেনান।”
চাঁদ আজ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে।বৃষ্টি এই থামছে আবার এই পড়ছে।কুহু জানালার ধারে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে সেটা।বিদ্যুতের ঝলকানিতে ঘরটা আলোময় হলো।দূরে কোথাও বাজ পড়লো বোধহয়।কুহুর সেসবে খেয়াল নেই।সে এক হাত বাহিরে দিয়ে ভেজাচ্ছে।রাইফার বাড়িতে আসার পরেই ঠাণ্ডা লেগে গেছে।বৃষ্টির পানি গায়ে লাগলেই এর এমন হয়।তাও আজ সবার সাথে ভিজেছে।আনন্দও কম হয়নি।এখন কুহুর বিছানায় শুয়ে সে।হঠাৎ শব্দ করে কুহুর ফোন বেজে উঠলো।কুহু হুশ নেই।সে যেন গভীর কোনো ভাবনায় ডুবে।রাইফা নাক টেনে বললো
-‘ফোন বাজছে তোর…এই কুহু!
কুহু হুশে এলো যেন।
-‘হুঁ?
-‘ফোন বাজছে তো।
রাইফা ঘুমে তলিয়ে যায় আবার।ঠাণ্ডার ঔষধ খেয়েছে সে।নাক লাল হয়ে গেছে মুছতে মুছতে।কুহু এগিয়ে এলো।ফোনটা হাতে নিতেই কপাল কুচকে আসে তার।পরক্ষণেই চোখের কোটর ভরে আসে। বি অক্ষরটা জ্বলজ্বল করছে।বাবা লিখতে সেইভ করতে পারেনি।কুহু ভেতরটা ভেঙে কান্না আসছে আজ।ফোনটা বেজে কেটে গেল।আবার বেজে উঠলো শব্দ করে।কুহু ফোন বন্ধ করে ফেললো।এরপর আবার জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ালো।বাহিরে তখন ঝড়ো হাওয়া বইছে।কুহু সেদিকে অনিমেষ চেয়ে রয়।মনে পড়ে যায় পাঁচ বছর আগের করা।
কুহুর দাদি তমনা বেগম হঠাৎ’ই অসুস্থ হয়ে পড়লেন।হসপিটাল ছোটাছুটি তখন তাকে নিয়ে।তমনা বেগমের মুখে অক্সিজেন মাস্ক।ছোট্ট কুহু দাদির শিউরে বসে কাঁদছে।তমনা বেগম বুঝেছিলেন তার সময় শেষ হয়ে আসছে।তিনি কুহুর হাতটা নিজের কুচকে যাওয়া কাঁপা হাতের আগলে নিলেন।কুহুর কান্না থামলেও হেচকি তুলছে।তমনা বেগম অক্সিজেন মাস্কটা সরালেন।কুহু বাঁধা দিতে নিলে তিনি শুনলেন না।
-‘সোনামা!তোকে আজ তোর জীবনের এক কঠিন সত্য বলব আমি।
কুহু কপাল কুচকায়।সিক্ত চোখে চেয়ে রয় দাদির দিকে।
-‘তু’তুই আমাদের বাড়ির মেয়ে না, সোনামা।
কুহু বুঝে উঠতে পারছে না দাদির কথা।দাদি নেহাত পাগল হয়েছে।এসব কি ভুলভাল বকছে! তখন কেবিনে প্রবেশ করলেন এক স্যুট-বুট করা লোক।কুহু চমকে তাকায় তার দিকে।পেছনে তার দুজন গার্ড।কুহু দাদির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে।তমনা বেগম মুচকি হাসলেন।
-‘এ’এসো বাবা…ইনিই তোর বাবা সোনামা।
সাখাওয়াত আলম পাশে এসে দাঁড়ালেন।চোখ ছলছল তার।কুহু বুঝতে পারে না কিছু।সে কি সত্যিই এ বাড়ির মেয়ে নয়? এতদিন যাদের আপন ভেবে এসেছে তারা কেউ নয় তার! যে মৃত বাবা-মায়ের ছবি দেখে রোজ রাতে নালিস করতো এর ওর নামে তারা তার আপন নয়! এই লোকটা তার বাবা! কুহু বাবাকে পাওয়ার খুশিতে হাসবে নাকি যাদের এতগুলো বছর আপন ভেবেছে তারা তার কেউ নয় সেই কষ্টে কাঁদবে বুঝতে পারলো না।তবে সাখাওয়াত আলম ঠিক’ই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন।
সাখাওয়াত আলম জানালেন পুরো কাহিনী
-‘তোমার দাদি ছয়মাস আগে এপয়নমেন্ট নিয়ে আমার সাথে দেখা করে।আমি প্রথমে তাকে বিশ্বাস করিনি।এরপর বললেন ডিএনএ টেস্টের কথা।ডিএনএ ম্যাচ হওয়ায় থম মেরে ছিলাম।তিনি জানালেন তখন সব কাহিনী। জামশেদ শেখ আর কোয়েল শেখ অর্থাৎ তুমি যাদের বাবা-মা বলে জানো..অনেকগুলো বছর পর তাদের কোলজুড়ে সন্তান আসার প্রদীপ জ্বলে।বাচ্চা নিয়ে তাই শখ ছিল অনেক।তবে তাদের সেই প্রদীপ নিভে যায়।মাঝরাতে লিভার পেইন উঠে তার। সন্তান জন্মের সময় নাকি কি একটা সমস্যা হয়।যেকোনো একজনকে বাঁচাতে পারবে এমন।ঐ সময় জামশেদ শেখ স্ত্রীকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেয়।তবে স্ত্রীকে কি করে সামলাবেন তা ভেবে দিশেহারা হন।তুমিও ঐ হসপিটালেই হয়েছিল।রাইমার লিভার পেইন উঠেছিল মাঝরাতে।আমি বাসায় ছিলাম না।ওর দেখাশোনার জন্য রাখা মহিলাটা ওকে হসপিটাল নিয়ে যায়।
ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়লেন তিনি।এরপর আবার বলতে লাগলেন
-‘ এক হারামি আমার স্ত্রী, বাচ্চাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছিল।তোমার মা বেঁচে না থাকলেও তুমি বেঁচে গিয়েছিলে।ওরা তোমাকে ঐ রাতে রাস্তায় ফেলে এসেছিল।ভেবেছিল কুকুর শেয়াল মেরে ফেলবে।ভাগ্যের কি পরিহাস! তোমাকে নিয়ে যেতে দেখেছিল জামশেদ শেখ। ঐ লোকগুলো যাওয়ার পর তোমাকে হসপিটাল নিয়ে যায় তিনি।তমনা বেগমকে সবটা জানাতেই তিনি পরামর্শ দেন বাচ্চা বদলের।কোয়েল শেখকে যেন জানানো না হয় যে তার বাচ্চা নেই।জামশেদ শেখও নিরুপায় ছিলেন।তাই…..
কুহুর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। ঠিক তিন দিন পর তমনা বেগম পৃথিবীর মোহ ত্যাগ করেন। সাখাওয়াত আলম মেয়েকে নিজের সাথে নিয়ে যাবেন।কুহু বাঁধ সাধলো।মায়ের মৃত্যুর জন্য রাজনীতিকে দায়ী করলো সে।ভুল কিছু যে করেছে এমনটাও নয়। শর্ত দিল রাজনীতি ছাড়লে তার সাথে যাবে।সাখাওয়াত আলম রাজি হলেন না।কুহুও ছিল নাছোড়বান্দা।ব্যাস! আর যায়নি সে।বাবা নামক ব্যক্তিটার আদর-স্নেহ সরাসরি না পেলেও দূর থেকে যথেষ্ট করেন তিনি।কুহু বুঝে সবটা।আজ যখন আহনাফের মুখে ওসব শুনলো ভেতরটা ছিন্নভিন্ন হলো তার।তার বাবা এতো খারাপ! রাজনীতিবিদরা ভালো হয় না এটা কুহুর জানা।সে এসব ভাবছে না সে ভাবছে আহনাফের বলা কথাগুলো।আহনাফ প্রতিশোধ নিবে…তারা বাবাকে সে মেরে ফেলবে।লোকটা যেমন’ই হোক বাবা তো।কোথাও না কোথাও একটা টান তো আছেই।কুহু অসহায় হয়ে পড়লো আজ আবার।চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে তার। তার কপালে বুঝি সুখ নেই!
কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো।হন্তদন্ত হয়ে চোখ মুছে পেছনে ঘুরে তাকালো।আয়ানকে দেখে স্বস্থির শ্বাস ছাড়লো।
-‘বৃষ্টির পানি আসছে তো ভেতরে! জানালা বন্ধ করছিস না কেন?
কুহু এতোক্ষণে খেয়াল করলো।তাড়াহুড়ো করে বন্ধ করলো জানালা।নিজেও খানিকটা ভিজেছে।আয়ান বলে উঠলো
-‘ড্রেস চেইঞ্জ করে আয়।ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
কুহু টু শব্দটি না করে মানলো আয়ানের কথা।যেতে নিলে আয়ান বলে উঠলো
-‘কাঁদছিলি কেন?
কুহু ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।এরপর বললো
-‘দুঃখেই নিশ্চই খুশিতে তো আর নয়।
আয়ান কিছু বললো না।কুহু ড্রেস নিয়ে চেইঞ্জ করতে যায়।কিছুক্ষণের মাঝে চলেও আসে।দেখে আয়ান এখনো দাঁড়িয়ে।কুহু ‘চ’ সূচক শব্দ করে তা দেখে।
-‘কিছু কি বলবেন?
-‘বললেই কি শুনবি?
-‘কান তো আল্লাহ ভাত খাইতে দেয়নি শুনতেই দিয়েছে।
-‘কান দিয়ে শোনা একটা মন দিয়ে শোনা একটা।
-‘না বললে শুনবো কি করে? অদ্ভুদ!
-‘আহনাফ ভালো না।ভুলে যা ওকে।
-‘আচ্ছা।
আয়ান চমকে তাকায় তার দিকে।
-‘এতো সহজেই মেনে গেলি যে?
-‘কারণ কবি বলেছেন…বোকাদের সাথে তর্ক নয় সহমত পোষণ করো।তোমার সময় বাঁচবে।
আয়ান বোকা ন্যায় তাকিয়ে রয় মেয়েটার পানে।কুহু বলে উঠলো
-‘ঘুমাবো আমি।যাবেন নাকি এখানেই থাকবেন?
আয়ান হাসলো।এরপর বললো
-‘ তোকে পাঁচ বছর ধরে আগলে রেখেছি আমি।এখন নাকি অন্যকেউ নিয়ে যাবে! তোর মনে হয় আমি এটা হতে দিব?
-‘এতোই আগলে রাখছিলেন যে আজ একটা এক্স আছে আমার।
আয়ান বিরক্ত বলো বড্ড।কোথায় একটু ভয় পাবে তা না!কুহু আবার বলে উঠলো
-‘সময় আছে এখনো…নিজের রাস্তা নিজে মাপেন।আমার রাস্তায় আইসেন না…গোবর ঠেসে দিব একদম।
আয়ান দাঁড়ালোই না আর।কথা বলাটাই ভুল এর সাথে।কুহু হাসে ঠোঁট বাঁকিয়ে।বিড়বিড় করে বলে..”যত্তসব পঁচা বাঙ্গি!”
-‘জিনিসগুলো ঠিক মতো পাচার করতে পেরেছিস?
অন্ধকার মোড়া নিস্তব্ধ ঘরটাতে লোকটার বলা কথাটা তীব্র শোনালো।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডটা কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো
-‘ব’বস….ও’ও এবারেও..
গুলির শব্দ! অসম্পূর্ণ রয়ে গেল গার্ডের কথা।
-‘যত্তসব রামছাগল পুষছি আমি!
তখন কেউ একজন প্রবেশ করলো কক্ষটাতে।গার্ডটার দেহ ডিঙিয়ে এলো সে।
-‘পার্টনার! কেমন আছো?কতগুলো দিন পর তোমাকে দেখলাম।বুকে এসো পার্টনার…
লোকটা বিরক্তমাখা চোখে তাকায়।
-‘ফাজলামো করবে না, নওশাদ।মেজাজ খারাপ আছে।
-‘সে আর নতুন কি?
নওশাদ আহমেদ আয়েস করে বসলেন।
-‘দুরদান্ত খবর এনেছি আমি।
-‘কি খবর?
নওশাদ আহমেদ বাঁকা হাসলেন।
-‘তুমি জানতে কুহু সাখাওয়াতের মেয়ে?
আহান শাহরিয়ার তিরিক্ষি মেজাজে প্রশ্নটা করলেন।আহনাফের ভনিতাহীন স্বরে বললো
-‘হ্যাঁ।
আহান শাহরিয়ার হতবাক।
-‘ওর মেয়ে বেঁচে আছে! আর তুমি..
-‘তুমি জানলে কীভাবে সেটা বলো।
আহান শাহরিয়ার বলে উঠলেন
-‘সাখাওয়াত নিজে আমার কেবিনে এসেছিল আজ সকালে।থ্রেট দিয়ে গেছে আমাকে।
-‘ভয় পেয়েছো?
আহান শাহরিয়ার ‘চ’ সূচক শব্দ করলেন।আহনাফ বললো
-‘আগুন নিয়ে খেলতে ভালোবাসি আমি।ডোন্ট ইউ নো দ্যাট?
-‘সে কোনোদিন মানবে না তোমাকে।
আহনাফ কথাটা শুনে হো হো করে হেসে ফেললো যেন জোকস্ শুনেছে।
-‘ঘর জামাই থাকবো যে ওনার আমাকে মানতেই হবে!
আহান শাহরিয়ার কিছু বলতে চাইছেন কিন্তু পারছেন না যেন।শেষমেষ চোখ বুজে বলেই ফেললেন
-‘কুহু যে ধ’র্ষি’তা তুমি জানো?
-‘জানি।
-‘হুয়াট?
আহান শাহরিয়ার ভড়কালেন।আহনাফ কোলের ল্যাপটপটা বন্ধ করলো।এরপর বললো
-‘চেঁচাচ্ছো কেন?
-‘তুমি জানো মানে? এই এত বড় একটা ক…
-‘মিস্টার আহান শাহরিয়ার! বাই এনি চান্স আপনি আমাকে ওর বিরুদ্ধে উসকাতে তো আসেননি?
আহান শাহরিয়ার ফোঁস করে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো
-‘তুমি ওর সাথে সম্পর্ক রাখবে না।
-‘আপনার মনে হয় আমি আপনার কথা শুনবো?
-‘আহনাফ!
আহান শাহরিয়ার রাগলেন আজ।আহনাফ বলে উঠলো
-‘ওর সম্পর্কে কোনো বাজে কথা আমি শুনতে চাই না।সে ধ’র্ষি’তা না কি আই ডোন্ট কেয়ার।আই ওয়ান্ট হার।
-‘প্রতিশোধ নিতে?
আহনাফ হাসলো…রহস্যময় হাসি।আহান শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে বললো
-‘আপনি আসতে পারেন এখন।
-‘তুমি কি মেয়েটাকে ঠকাতে চাচ্ছো?
আহনাফ চোয়াল শক্ত করে বললো
-‘ঠকবাজি, ধান্দাবাজি এসব আপনাদের মতো রাজনীতিবিদদের কাজ।
আহান শাহরিয়ার কিছু বলতে চাইলেও বললেন না।নিজের’ই মাথা গরম।একমাত্র ছেলে তার।এমন মেয়েকে বিয়ে করবে! মানতে পারছেন না।অপমানটা হজম করে নিলেন তাই। টাইয়ের নট ঢিলে করতে করতে হনহন করে চলে গেলেন।আহনাফ উঠে দাঁড়ালো।দেয়ালের একটা পাশ কুহুর ছবি দিয়ে ভরতি।মাঝে কুহুর বিরাট একটা ছবি যেটাতে কুহু মেরুন রঙের শাড়ি পড়ে আছে।ভার্সিটির দিন পড়ে গিয়েছিল যে শাড়িটা।আর চারপাশে ছোট মাঝারি আকার ছবি।বোঝাই যাচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তোলা ছবি।সেদিকে এগিয়ে যায় আহনাফ।কুহুর বড় ছবিটার দিকে হাত বাড়ায়।ছুঁয়ে দেয় সেটা।
প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৬
-‘তুমি আমার হাতিয়ার হবে, তিলোত্তমা।তোমাকে মারতেও হাত কাঁপতো না আমার।কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! সে আর সম্ভব নয়।
আহনাফ ছবিটাতে মাথাটা রাখে।যেন কুহুর ঘাড়ে মুখ গুজে দিয়েছে সে।ওভাবেই বললো
-‘উঁহু,মারবো তোমাকে… তুমিই মরতে চাইবে আমার কাছে।নিজ থেকে বলবে…আহনাফ কিল মি প্লিজ…
আহনাফ শেষের কথাটা একটু ঢং করে বলেই হেসে ফেললো।বদ্ধ ঘরটাতে তার হাসির শব্দ দেয়ালের কোণায় কোণায় বাজলো।
