প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪
অনন্যা

-‘আজ আমি তোকে ভার্সিটি পৌঁছে দিব।বাসে করে যেতে হবে না।উঠে বস…
কুহু মাত্র’ই বাসা থেকে বের হয়েছিল।সামনে তাকিয়ে দেখে আয়ান বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে।কুহু বললো
-‘কোনো দরকার নেই।আমি বাসে করে চলে যাবো…
কুহু কথাটা বলেই সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।আয়ান বলে উঠলো
-‘তেজ দেখাস না…যে কয়েকদিন আছি আমিই পৌঁছে দিব তোকে।এতে তোর’ই ভালো হবে।
কুহু পেছন ফিরে বললো
-‘আমার ভালোকিছু সহ্য হয় না। তাই দরকার নেই।
আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই মেয়ের সাথে সে পারবে না।

বরাবরের মতো আজকেও বাসে বসার জায়গা নেই।কুহু এক কোণায় চেপে দাঁড়িয়ে রইলো।হঠাৎ খেয়াল করলো একটা লোক তার পাশ ঘেষে দাঁড়াচ্ছে।কুহু সরে দাঁড়ালো।তখন অন্য একটা লোক আবার কুহুর পাশ ঘেষে দাঁড়ালো।কুহু গুটিয়ে নিল নিজেকে।যথাসম্ভব সরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অনেক ছেলে।কি যেন একটা মানসপটে ভেসে উঠলো তার। সে চেঁচিয়ে উঠলো হঠাৎ
-‘বাস থামান..আ’আমি নামবো…বা’বাস থামাননন..
কুহুর চেঁচানো শুনে সবাই তার দিকে তাকালো।বাসও থেমে গেছে।কুহু এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে নেমে গেল বাস থেকে।চোখ ঝাপসা তার।রাস্তায় একটা কোণায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজের দুইবাহু বোরকার উপর দিয়েই ঘষতে লাগলো।রাস্তার মানুষজন অদ্ভুদ নয়নে তাকাচ্ছে তার দিকে।কুহুর খেয়াল নেই সেইদিকে।হঠাৎ কেউ একজন তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।কুহু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘রিল্যাক্স.. আমি আয়ান..
কুহু থামলো।আয়ানের বুকেই কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে কাঁদলো।আর অভিযোগ করলো
-‘ওরা কেউ ভালো না, ভাইয়া।সব পুরুষ খারাপ।কেউ ভালো না..
আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।কুহুর আজ এই অবস্থার জন্য কি সে দ্বায়ী কোনোভাবে?সে কি কোনো ভুল করলো তবে?
“ক্যাচাক..ক্যাচাক!” রাফি বাঁকা হেসে বললো

-‘এখন এই ছবিগুলো যাবে ভাইয়ের ফোনে।ভাবি কি পারবে আজ ভাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে? কারণ ভাবি যে ঐ বিস্কুট চোরের বেস্টফ্রেন্ড এটা আমি জেনে গেছি।ভেবেছে বোরকা পড়লে বুঝবে না।ব/লদি গার্ল!
রাফি হঠাৎ ছড়া বলতে শুরু করলো
“ভাবি গেছে ফাইস্যা..
ভাইয়ে দিব ঠাইস্যা..
নাম আমার রাফি কাইস্যা..হাহ্!”
রাফি একটা সানগ্লাস চোখে দিয়ে ভাব নিয়ে হাঁটতে গেলে খেল এক উস্টা।কোমরে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো…”ওরে আমার মা গো.. ভাগ্য আমার পুরাই কুইস্টা!”

-‘আহনাফ ভাই…আমার স্বপ্নের রাজকুমার সে।তোকে বলেছিলাম না কুহু?আরেহ্ সবসময় যার কথা বলি তোকে!
কুহু বলে উঠলো
-‘ওহ হ্যাঁ, মনে পড়ছে।তোর চাচাতো ভাই যে!
রোদেলা উপরনিচ মাথা ঝাঁকালো।এরপর প্রচণ্ড উচ্ছ্বাস নিয়ে বলতে লাগলো
-‘আহনাফ ভাই এতো জোস্ যে কি বলবো! উফফ! ওনার ভয়েসটা শুনলেই তো আমি পাগল হয়ে যাই।ওনার দিকে যখন কোনো মেয়ে তাকিয়ে থাকে না…ইচ্ছা করে ঐ মেয়েগুলোর চুলের মুঠি ধরে দু ঘা লাগিয়ে দেই..!
কুহু মনে মনে বললো

-‘ তোর সেই গুণধর ভাই যে আমাকে চুমু খেয়েছে সবার সামনে।এটা জানলে যে তুই আমাকে কি করবি!
রোদেলা তখনই বলে উঠলো
-‘জানিস! গতকাল কোন এক ডায়নি আহনাফ ভাইকে চুমু খাওয়ার জন্য আবদার করেছিল।মানে মগের মুল্লুক আরকি!
কুহু মনে মনে বললো—“সেই ডায়নি আমি ছাড়া আর কেউ না রে..!” তবে মুখে বললো
-‘তা’তারপর…
-‘তারপর আবার কি! আহনাফ ভাই নাকি ঐ মেয়েটাকে চুমু খেয়েছে।ওনার আবার দয়ার শরীর কিনা!
কুহু কপাল কুচকে বললো
-‘কিন্তু তুই না বলেছিলি যে ওনি অনেক রাগী।আর মেয়েদের সাথে এসব ঘেষাঘেষি পছন্দ না..!
রোদেলা বলে উঠলো

-‘হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই।হয়তো মেয়েটাকে দেখতে আমার মতো ছিল।আমি ভেবেই হয়তো…
রোদেলা এতোটুক বলেই লাজুক হাসলো।কুহু মুখ কুচকালো। প্রেমে পড়লে যে মানুষ অন্ধ হয় তার বড় প্রমাণ এই রোদেলা।কুহু বললো
-‘হ্যাঁ, তোর মেলায় হারিয়ে যাওয়া বোন হবে হয়তো।
ওরা ওদের ক্লাসে বসেছিল।আজ’ই প্রথম ঠিকঠাকভাবে ক্লাসরুম পর্যন্ত আসতে পেরেছে তারা।গতকালকেও ক্লাস পর্যন্ত আসতে পারেনি।অল্প দূর আসতেই রোদেলা হোঁচট খেয়ে চিতপটাং হয়ে যায়।কোমড়ে অনেক জোরে আঘাত লাগায় তারা ঐদিন বাড়ি ফিরে যায়।কুহু তাই আজকে বেরোনোর সময় আয়তুল কুরসি পড়ে বের হয়। হঠাৎ ওদের ক্লাসে একটা ছেলে এসে বলতে লাগলো

-‘কুহু শেখ কে?…আহনাফ ভাই তাকে দেখা করতে বলেছে..
ক্লাসের সবাই আলোচনা সমালোচনা শুরু করে দিল।রোদেলা অবাক স্বরে বলে উঠলো
-‘তুই’ই তো কুহু শেখ। এই কি ব্যাপার বলতো? গতকালও আহনাফ ভাই যখন তোর নাম জিজ্ঞাসা করলো তুই মিথ্যা বললি যে তোর নাম কুহেশ্বরি কুহু।আজকে আবার তোকে ডেকে পাঠিয়েছে।তোরা কি আগে থেকে পরিচিত?
কুহু ভয় পেল খানিকটা।রোদেলাকে সবটা বললে যদি রোদেলা তাকে ভুল বুঝে? যদি তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে? না.. না..এর চেয়ে না বলাই ভালো।কুহু বলে উঠলো
-‘জা’জানি না।তুই চুপ করে থাক আপাতত।আর আমার নাম তো কুহেশ্বরী কুহুই।সার্টিফিকিটে ছোট্ট করে কুহু শেখ দেওয়া হয়েছে।জানিস না তুই?
রোদেলা দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।
-‘আজকেই জানলাম। কিন্তু উনি ডাকছে কেন তোকে?গিয়ে দেখেই আয় নাহয়…
কুহু বললো

-‘তুই তো জানিস আমার অপরিচিত ছেলেদের কতটা ভয় লাগে।সব’ই তো জানিস।
রোদেলা বুঝদারের ন্যায় মাথা নাড়ালো।অন্যদিকে ছেলেটা চলে গেল একাই।রোদেলা বললো
-‘আহনাফ ভাই কিন্তু অমন ছেলে না।যথেষ্ট ভালো ছেলে উনি।গিয়ে দেখেই আসতি একটাবার…
কুহু সরাসরি বললো—“নাহ।” রোদেলা আরকিছু বললো না।ব্যাগ থেকে একটা টিফিন বক্স বের করলো।
-‘আজ দুইটা দিন ধরে ভাবছি একসাথে এই সেনডোইচ খাবো।কিন্তু আমাদের যে ডিস্কো ভাগ্য! দুইদিনই বাসায় নিয়ে গিয়ে রুমানা খালাকে দিয়ে দিতাম।আজকে ফাইনাললি খেতে পারবো। এই নে ধর..
কুহু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেনডোইচটা নিল।মুখে দিতে যাবে তখন খেয়াল করলো সে তো নিকাব পড়ে আছে।আর এখন নিকাব খুললে সব ধুমতানানা হয়ে যাবে।সে নিকাবের ভেতর দিয়েই খাবে বলে ঠিক করে। অমন সময় সবাই চেঁচিয়ে উঠলো।থতমত খেয়ে গেল ও।সামনে তাকাতেই চক্ষু চড়কগাছ।হাতে থাকা সেনডোইচটা ধপ করে পড়ে গেল। আহনাফ দাঁড়িয়ে! রোদেলা খুশি মনে চেঁচিয়ে উঠলো

-‘আহনাফ ভাই… !
কুহু ব্যাগ দিয়ে নিজেকে আড়ালের চেষ্টা করলো।আহনাফের নজর তার দিকে গিয়েই আটকালো।রাগে তার শরীর কাঁপছে।কত বড় সাহস এই মেয়ের! তার কথা অমান্য করে! আহনাফ রোদেলাকে দেখে আর ওদের বেঞ্চ পর্যন্ত গেল না।সে এখান থেকেই চেঁচিয়ে বললো
-‘মিস কুহু শেখ…আপনাকে পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হলো।পাঁচ মিনিটের মাঝে আপনি আমার সাথে লাইব্রেরিতে দেখা করবেন।আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে….
আহনাফ কথাগুলো বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেল।রোদেলার মুখটা চুপসে গেল।ও কুহুর দিকে তাকালো।এরপর বলে উঠলো

-‘আজ’ই তো প্রথম ক্লাসরুম পর্যন্ত এলাম।এর মাঝে আবার তোর নামে কোন ম/গা অভিযোগ করলো!
কুহু ব্যাগটা রেখে তিরিক্ষি মেজাজে বলে উঠলো
-‘বা/লের ভার্সিটি আমার! আর যদি আসতে বলেছিস তুই আমাকে দেখিস কি করি! এখন কি করবো আমি?
শেষের লাইনটা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো।রোদেলা বললো
-‘আরেহ্ মামা চিল! আহনাফ ভাই কিছু বলবে না।উনি অনেক ভালো মানুষ।
তখন’ই কুহুর বাম পাশে বসা মেয়েটা বলে উঠলো
-‘ভালো না ছাই! ওনার ডাক আর আজরাইলের ডাক একই।
ওরা দুজন মেয়েটার দিকে তাকালো।মেয়েটা হেসে বললো
-‘হাই! আমি প্রেমা।তোমরা বোধহয় আজকেই প্রথম এলে তাই না! তাই গতকালকের ঘটনা জানো না।
কুহু একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো
-‘ক’কেন? কি হয়েছিল গতকাল?
প্রেমা বললো

-‘ গতকাল আমাদের ক্লাসের একটা ছেলেকে ডেকে পাঠিয়েছিল সে।এখন সে কোথায় জানো?
ওরা দুজন দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।প্রেমা বললো
-‘বর্তমানে সে ঢাকা হসপিটালে ভর্তি।কি মা/রটা যে মেরেছে রে ভাই! মায়া দয়া বলতে কিছু নেই লোকটার।পা/ষাণ লোক একটা!
রোদেলা শেষের কথাটা শুনে খেকিয়ে উঠলো
-‘এই তোমার সাহস কি করে হয় আমার আহনাফ ভাইকে নিয়ে বাজে কথা বলার! একদম মেরে পা/ছা ফাটিয়ে দি…
পুরো কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কারো কান্নার শব্দে থেমে গেল সে।তাকিয়ে দেখে কুহু কাঁদছে।রোদেলা বিচলিত হয়ে বললো

-‘কি হয়েছে বেবি? তুই কাঁদছিস কেন?তোকে বলিনি তো কিছু..
কুহু বলে উঠলো
-‘আমি যাবো না, রোদ…বাঁচা আমাকে..!
প্রেমা রোদেলার কথাকে হাওয়ায় উড়িয়ে আবার বললো
-‘এই ভুল তো ভুলেও করো না।এমনিতেই সে ডাকায় তুমি যাওনি।সে নিজে এসে যেতে বলেছে।এখন না গেলে তোমার হাল যে কি হবে ভেবেই আমার শরীরে কাঁটা দিচ্ছে।
রোদেলা ভেংচি কেটে বললো
-‘মোটেও না।আহনাফ ভাই এতো খারাপ মানুষ নয়।নিশ্চই ওই ছেলে কিছু করেছিল!
প্রেমা বলে উঠলো
-‘জানি না আমি।..এই তোমাকে না পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছিল! জলদি যাও ভাই..ভার্সিটিতে এসেই এনার কথা যা শুনেছি ভয়ে ভেতর কাঁপছে..
রোদেলা মুখ ভেংচি কাটলো আবার।সে বললো

-‘তুই যা তো, বেবি।আমি বলছি তোকে কিছু হবে না।আমার কি মনে হয় জানিস?
কুহু দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।রোদেলা ফিসফিস করে বললো
-‘মনে হয় আমার ওপর নজর রাখতে বলবে তোকে..
বলেই লাজুক হাসলো।কুহু সেসব শুনলো না।সে একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছে কেন ডেকেছে।এই মেয়ে যা বললো তা যদি সত্যি হয় তাহলে কুহুরাণী আজকে শেষ! কিন্তু কথা হচ্ছে চুমুটাতো আহনাফ’ই খেয়েছিল।তার তো দোষ নেই।আর তাছাড়া সে তো বোরকা-নিকাব পড়ে রয়েছে।চেনারও কথা না।এদিকে রোদেলা কুহুকে টেনে টেনে বের করে দিল।
কুহু দোয়া-দরূদ পড়তে লাগলো।আর মনে মনে বলতে লাগলো

-‘আল্লাহ, এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও।একজন ফকিরকে খাইয়ে দিব।বাঁচাও আল্লাহ…
কুহু কথাগুলো বলতে বলতে সামনে যেতে লাগলো।লাইব্রেরি খুঁজে পেতেও সময় লাগলো বেচারির।এখন সে লাইব্রেরির বাহিরে দাঁড়িয়ে। যাবে কি যাবে না এটা ভাবছে।ভেতর থেকে তখন হঠাৎ চেঁচানোর শব্দ এলো।কুহুর আত্মাটা লাফিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে কেউ কাউকে কেলাচ্ছে ভেতরে। দরজাটাও তো বন্ধ।কুহুর কান্না পেল আবার।ইচ্ছা করছে দৌঁড়ে বাড়িতে চলে যেতে।সে ভাবলো এটাই সঠিক হবে।চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আহনাফের কঠোর স্বর ভেসে এলো

-‘এক পা ও নড়বে না…স্টপ দেয়ার..
কুহুর পদযুগল থেমে গেল।শুকনো ঢোক গিললো সে।কাঁপতে কাঁপতে পেছনে তাকালো সে।আহনাফের দিকে তাকানোর সাহস নেই তার।তবে না তাকিয়েও সে বেশ বুঝতে পারছে যে আহনাফ রেগে রয়েছে।আহনাফ হঠাৎ ওকে অবাক করে ওর হাত চেপে ধরে লাইব্রেরির ভেতরে নিয়ে গেল।কুহুর ভেতরটা কেমন করে উঠলো যেন।আবার কি একই ঘটনা ঘটতে চলেছে তার সাথে? কুহু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে।আহনাফের সেসবে খেয়াল নেই।সে ফেলে রাখা হকস্টিকটা আবার উঠিয়ে নিল।সেটা আরিফের দিকে ছুঁড়ে মেরে বললো

-‘এই হারাম/জাদাটাকে হসপিটালে এডমিট করে আয়।আর হকস্টিটাতে লেগে থাকা রক্ত…জানিস’ই তো কি করতে হবে..
আরিফ হকস্টিকটা ধরে ফেললো।এরপর একবার কুহুর দিকে তাকালো।পরপর’ই নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ছেলেটাকে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল।এখন শুধু আহনাফ আর কুহু।আহনাফ দরজা বন্ধ করে দিল।কুহু এবার বলে উঠলো
-‘দ’দয়া করে আ’আমাকে ছেড়ে দিন..! আর কখনো আ’আপনার সামনে আসবো না।
আহনাফ ওকে জোরে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে চেপে ধরলো।কুহুর দুইহাত দেয়ালে উঁচু করে চেপে ধরে রেখেছে সে।দাঁতে দাঁত চেপে বললো
-‘ভবিষ্যতে যেন আর এই কথা না শুনি।গট ইট?
কুহু চোখ কুচকে বন্ধ করে রেখেছে।আহনাফ কুচকে যাওয়া চোখের দিকেই তাকিয়ে।সে চেঁচিয়ে বললো
-‘গট ইট?

কুহু অনবরত উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো।
আহনাফ বললো
-‘আমার দিকে তাকাও, তিলোত্তমা…
কুহু চমকালো খানিকটা।তিলোত্তমা! হু ইজ তিলোত্তমা?সে তাকালো না।আহনাফ ধমকে উঠলো
-‘এই মেয়ে তাকাতে বলেছি না…! তাকাও…
কুহু কেঁপে উঠলো।সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেলে তাকালো সে।কুহুর ভীতু নয়ন আর আহনাফের তেজি নয়নের মিল ঘটলো আজ।এই প্রথম কুহু আহনাফের দিকে সরাসরি তাকালো।আহনাফের ধূসর রঙের আঁখি যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।কুহুও বাদ পড়লো না।একটা মানুষের চোখ এতো সুন্দর হয় বুঝি! ভুলে গেল কিছুক্ষণ আগের কথা।ভয় দূর হয়ে তার চোখে মুখে মুগ্ধতা ভর করলো। মানুষটা কি সুন্দর! গায়ের রংটা কতো ফর্সা! আর চোখ দুটো! মাশাআল্লাহ বলতেই হয়..!

-‘আট মিনিট বারো সেকেন্ড লেইট…
হঠাৎ আহনাফের স্বরে কুহুর হুশ এলো।সে কোথায় আছে তা খেয়াল করতেই আবার ভয়েরা ঘিরে ধরলো তাকে।কিন্তু কেন যেন কোনো অস্বস্থি হচ্ছে না তার।সকালে ঐ লোকগুলো একটু পাশ ঘেষে দাঁড়িয়েছিল বিধায়’ই তার কত জঘন্য লাগছিল। আর এখন..! কেন খারাপ লাগছে না তার? কুহুর ভাবনার মাঝেই আহনাফ বললো
-‘কি শাস্তি দেওয়া যায় তোমাকে?
কুহু ভয়মিশ্রিত নয়নে তাকালো।আহনাফ ওর হাত ছেড়ে দিল।
-‘ক’কিসের শাস্তি?
আহনাফ তড়াক গতিতে তাকালো তার দিকে।কুহু ভড়কে গেল

-‘কিসের শাস্তি!! তুমি গতকাল আমাকে মিথ্যা বলেছো যে তোমার নাম কুহেশ্বরি কুহু।মিথ্যা কথা আমার সবচেয়ে অপছন্দের। একটু আগে যে ছেলেটাকে মারলাম..তাকে কেন মারছি জানো? মিথ্যা কথা বলেছিল আমাকে সেজন্য। এবার বলো তোমাকে কি করা উচিত?
কুহুর ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা।আবার কান্না পাচ্ছে তার।ঠিক তখন আহনাফ বললো
-‘আরেকটা হকস্টিক আছে এখানে।কি বলো তুমি?
আহনাফ এক ভ্রু উঁচু করে বললো।কুহু চোখ ছলছল করে উঠলো আবার।আহনাফের যে শক্ত হাত! এখনো কুহুর হাত ব্যথা করছে ঐভাবে ধরায়।ঐ হাতে হকস্টিকের একটা মার খেলে কুহুর পটল তুলতে আর সময় লাগবে বলে মনে হয় না।আহনাফ এদিকে ঠোঁট কামড়ে হাসছে।সে বললো
-‘এর শাস্তি পরে দিব।এর আগে তুমি আমার আদেশ অমান্য করেছো কোন সাহসে সেটা বলো। আমি ডেকে পাঠানোর পরেও আসোনি তুমি।আবার আমার গিয়ে বলার পর এসেছো তো এসেছো আট মিনিট লেইট করে এসেছো।আগে এর শাস্তি দিব।
কুহু ভয়মিশ্রিত নয়নে তাকালো তার দিকে।আহনাফ বললো

-‘ এখন এই মুহূর্তে আটটা চুমু খাবে আমাকে..
কুহু বলে উঠলো—“অ্যা!!”
-‘অ্যা নয় হ্যাঁ..
আহনাফ একটা চেয়ার নিয়ে এসে বসলো।এরপর বললো
-‘নাও নাও তাড়াতাড়ি করো।এক মিনিট লেইট করবে আর একটা করে চুমুর সংখ্যা বাড়বে..এখন যা ভালো মনে করো…
কুহু বিপাকে পড়ে গেল।সে এই লোককে চুমু খাবে! রোদ জানলে কি হবে? আর এই লোক না বলে কত ভালো মানুষ! কুহুর সাথে এমন করছে কেন তাহলে? আসলেই দুনিয়ার কোনো পুরুষ ভালো নয়।সবার চরিত্রে সমস্যা।তখন আহনাফ বলে উঠলো
-‘একমিনিট লেট.. মানে নয়টা চুমু…

কুহু ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।নাহ আর উপায় নেই। একবার এখন থেকে বের হোক কুহু আর বাপের জন্মে ভার্সিটি আসবে না। যত্তসব বা/লের ভার্সিটি!কুহু নিকাবটা খুললো না।নিকাবটা হালকা উঁচু করে চোখ কুঁচকে ঝুঁকে আহনাফের গালে চুমু খেল।আহনাফ একটা ঝাটকা খেল।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল তার।হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে গেল।কুহু আবার একটা চুমু খেল। আবার চুমু খেতে গেলে আহনাফ বলে উঠলো
-‘আ’আচ্ছা থাক।এবারের মতো মাফ করলাম।মিথ্যা বলার শাস্তি পরে দিব।আপাতত চোখের সামনে থেকে দূর হও।
কুহু সোজা হয়ে দাঁড়ালো।আহনাফ বলে উঠলো
-‘যাচ্ছো না কেন?কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলার আগে দূর হও, তিলোত্তমা।
কুহু এবার বলেই বসলো

-‘তিলোত্তমা কে?
আহনাফ হাসলো।কুহু ভ্রু কুচকালো।আহনাফ তার দিকে তাকিয়ে বললো
-‘তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ আছে এখানে?
কুহু দুই পাশে মাথা নাড়লো।

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩

-‘তাহলে? এখন প্লিজ এখান থেকে যাও, তিলোত্তমা।তানাহলে আমি ভুলভাল কিছু করে ফেলবো।
কুহু ভয় পেল একটু।সে দ্রুত কেটে পড়তে নেয়।হঠাৎ আহনাফের ফোনে একটা নটিফিকেশনের শব্দ এলো।আহনাফ ‘চ’ সূচক শব্দ করে ফোনটা বের করলো।চোখের সামনে পরপর দুটো ছবি ভেসে উঠলো।আয়ান আর কুহুর জড়িয়ে ধরার দৃশ্য।আহনাফ দাঁড়িয়ে পড়লো।চেঁচিয়ে উঠলো সে
-‘তিলোত্তমার বাচ্চা…..

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here