প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৯

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৯
অনন্যা

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।বাহিরে এখনো বৃষ্টি পড়ছে।আজ বোধহয় আর এর তাণ্ডব কমবে না।কুহু জানালার ধারে দাঁড়িয়ে জীবনের হিসেব কষছে।সকাল পর্যন্ত সে ছিল অবিবাহিত এক অসহায় প্রাণী।আর এখন? এখন কিনা সে বিবাহিত! এমনি এমনি তো আর সে ভার্সিটিকে গালি দেয় না।শালার এতোদিন যা হয়েছে হয়েছে…আজ বিয়েই হয়ে গেল! একটাদিন ভার্সিটিতে গিয়ে শান্তি পেয়েছে সে! বাঙ্গির ভার্সিটি একটা! কুহু ইচ্ছামতো গালিগালাজ করতে লাগলো।তখন আহনাফ প্রবেশ করলো।কুহু নীল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে।আহনাফ যখন কাবার্ড খুলে তখন সে হতবাক হয়ে যায়।কাবার্ডে শাড়ি দিয়ে ভর্তি সাথে প্রয়োজনীয় সব মেয়েলি জিনিস।কুহু হা হয়ে তাকিয়ে থাকে আহনাফের দিকে।আহনাফ শুধু হাসে।সেখান থেকেই একটা শাড়ি সে পড়েছে।

আহনাফ রাফির সাথে ঘণ্টাখানেক কথা বলেছে।বেচারাকে সান্তনার গীত শুনিয়েছে এতোক্ষণ।এরপর বিয়ের কথা জানালো। কথা-বার্তা শেষ করে ওকে বিদায় করে এই মাত্র সে রুমে আসলো।কুহুকে শাড়িতে বরাবর’ই আবেদনময়ী লাগে।ইচ্ছা করে একটুখানি ছুঁয়ে দিতে।কুহুকে প্রথমবার যেদিন শাড়িতে দেখে সেদিন’ই ঠিক করে যে বিয়ের পর থেকে সবসময় তাকে শাড়ি পড়িয়ে রাখবে।মন ভরে দেখবে তার তিলোত্তমাকে। আহনাফ একটা শুকনো ঢোক গিললো।এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল সে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জানালা খোলা থাকার কারণে বৃষ্টির পানি এসে কুহুর উপর আছড়ে পড়ছে।তেমন একটা আসছে না অবশ্য।কুহু ভাবনার অতল গভীরে ডুবে রয়েছে।হঠাৎ ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাস টের পেতেই জমে যায় সে। তার পুরো শরীরে শীতল শিহরণ বয়ে যায়।পেছনে ঘোরার সাহস করে না।আহনাফ কুহুর অবস্থা বুঝতে পেরে বাঁকা হাসে।কুহুকে আরো অস্থির করে দেওয়ার জন্যই বোধহয় ফুঁ দিয়ে কুহুর ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে ফেললো।কুহু শাড়ি চেপে ধরলো শক্ত করে।শুকনো একটা ঢোক গিললো সে।ভেতরে অজানা এক অনুভূতি জেগে উঠেছে যেন।সে তো ভুলেই গিয়েছিল যে আজ নিয়ম অনুসারে তাদের বা…কুহুর হঠাৎ ভীষণ লজ্জা লাগতে লাগলো।আহনাফ তার বাহু ধরে নিজের দিকে ঘোরায়।কুহু তাকায় না তার দিকে।আহনাফ তার স্বামী।ইশ! কেমন একটা লাগছে! কুহু আজ লজ্জা পাচ্ছে আহনাফকে সাথে ভয় হচ্ছে।আহনাফ দেখে তার লাজুক তিলোত্তমাকে।ঠোঁটের কোণে তার সেই সুপরিচিত বাঁকা হাসি বিরাজমান।হঠাৎ করে একটু ঝুঁকে গেল সে কুহুর দিকে।মেয়েটা আতংকে চোখ বন্ধ করে ফেলে।আহনাফের গরম শ্বাস টের পাচ্ছে নিজের মুখের উপর।ভেতরটা ঢিপঢিপ করছে।হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক। আহনাফকে কেন বাঁধা দিতে পারছে না সে?পুরো শরীর যেন অসাড় মেয়েটার।ওষ্ঠজোড়া কাঁপছে তার।

আহনাফ ঠোঁট কামড়ে হাসে তার তিলোত্তমার অবস্থা দেখে।সব তেজ শেষ! সে মনে মনে কি ভাবছে আহনাফ বুঝতে পারে।সে মুখটা সরিয়ে শব্দ করে জানালা বন্ধ করে।কুহু চমকে উঠে।আহনাফ একদম ইনোসেন্ট একটা ভাব নিয়ে বলে উঠলো
-‘চোখ বন্ধ করে আছো কেন, তিলোত্তমা? খারাপ লাগছে?
কুহু হতভম্ব হলো।সে বোধহয় কিছু একটা আশা করেছিল।পরক্ষণেই নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জায় পড়ে গেল।ইশ! সে কি ভেবে বসেছিল! আহনাফ ঠোঁট কামড়ে হাসছে।কুহু নিজের ভাব বজায় রাখতে বলে উঠলো
-‘ক’কি হবে? তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা হয়ে গিয়েছিল তাই বন্ধ করেছিলাম।আপনার সমস্যা?
-‘সিরিয়াসলি! তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথাও হয়!
আহনাফের ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।সে বলে উঠলো
-‘তুমি কি অন্যকিছু ভেবেছিলে তিলোত্তমা? লাইক কি…
-‘চুপপপ..

কুহু ধমক দিল।আহনাফ ফিক করে হেসে ফেললো।কুহু লজ্জায় রাঙা হচ্ছে।সে বিছানায় গিয়ে বসলো।আহনাফ ঠোঁট কামড়ে হাসে।এতো সহজে তো সে ধরা দিবে না তিলোত্তমার কাছে।যতক্ষণ না সে নিজে ধরা দিচ্ছে আহনাফ কিছু বলবে না।শত্রুর মেয়ে না সে! সেই হিসেবে এই মিষ্টি শাস্তিটা দিবে সে।অন্যভাবে মারবে সে।আহনাফ গিয়ে কুহুর গা ঘেষে বসলো।কুহু মাথা নুইয়ে রেখেছে।সে হঠাৎ বলে উঠলো
-‘কাল বাড়ি দিয়ে আসবেন আমাকে।
আহনাফের ঠোঁটের হাসি এটা শোনা মাত্র বিলীন হয়ে গেল।নিজেকে শান্ত রাখতে চাইলো।
-‘আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে, তিলোত্তমা।এখন এটাই তোমার বাড়ি।ঐ বাড়ির কথা ভুলে যাও।
-‘ মানে?
কুহু চমকে বললো।আহনাফ নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো

-‘আমার শত্রুর অভাব নেই চারপাশে।বিয়ের খবরটা ছড়াতে সময় লাগবে না।তাই আরকি বললাম আপাতত ভুলে থাকো ঐ বাড়ির কথা।
-‘আপনি বলতে কি চাইছেন? আমি আপনার সাথে এখানে থাকবো?
-‘অসুবিধা আছে?
আহনাফ এক ভ্রু উঁচু করে বললো।কুহু কিছু বলতে নিলে সে বলে উঠলো
-‘থাকলেও কিছু করার নেই।হাজবেন্ড-ওয়াইফ আমরা।
আহনাফের শেষের কথাটা কেমন একটা মধুর অনুভূতি জাগালো তার মনে।কিছু বলে না আর সে।আহনাফ মুচকি হাসে।

-‘তুমি কি ফাজলামো করছো আমার সাথে, হারুন?
সাখাওয়াত আলম বড্ড শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন।হারুন রহমান ঘামছেন।ছাতাও বগলদাবা করে এনেছেন।তবে এবার ফাইলপত্র না মনে হয় গুলি মারবেন সাখাওয়াত আলম।হারুন রহমান কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন
-‘আ’আসলে স’স্যার..
-‘কি?..ঠিক বলতে চাও তুমি? আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে তাও কিনা আহনাফের সাথে! আমি যে লোক লাগাতে বলেছিলাম ঐলোকগুলো কি ঘোড়ার ঘাস কাটছিল তখন?
সাখাওয়াত আলম চেঁচিয়ে উঠলেন।তার কথাগুলো দেয়ালের কোণায় কোণায় গিয়ে বাজলো। হারুন রহমান কেঁপে উঠলেন।

-‘ও’ওদের কারা যেন ধরে রেখেছিল স্যার…তা’তাই…
সাখাওয়াত আলম টেবিলের পানি ভর্তি গ্লাস ছুঁড়ে মারলেন ফ্লোরে।ভেঙে চুরমার হলো তা।মাথায় আগুন জ্বলছে তার।আহানকে শাসিয়েও লাভ হলো না! আহনাফ জিতে গেল? মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে গেল? সাখাওয়াত আলম রাগে মাথার চুল টেনে ধরলেন।পরক্ষণেই বলে উঠলেন
-‘গাড়ি বের করো..আমি আমার মেয়েকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।আহনাফের কাছে ও কক্ষনো নিরাপদ নয়।মেয়েটার কোনো ক্ষতি করার আগেই আমাকে যেতে হবে।যাও গাড়ি বের করো….
হারুন রহমান মাথা নড়িয়ে চলে গেলেন।সাখাওয়াত আলম ধপ করে বসে পড়লেন সোফায়।মেয়েটার ঘাড়ত্যারামির জন্য আজ এত বড় ক্ষতি হলো।নিজেও জানে না কোথায় গিয়ে পড়েছে সে।তার বাবার শত্রু ওরা।শানায়া নিরাপদ নয় ওখানে।এবার কোনো বাঁধা শুনবে না সে।নিজের সাথে করে নিয়ে আসবেন।

-‘আয়ান…বাবা আয়ান! দরজাটা খোল বাবা।
আনোয়ারা বেগম দরজা ধাক্কাচ্ছেন আর ডাকছেন ছেলেকে।সেই যে দোর দিল এখনো অবধি খুললো না।রাইফা ঠোঁট কামড়ে ভাবছে কি করা যায়।আয়ান উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেললে! হঠাৎ তার মাথায় এলো নাতাশার কথা।মেয়েটার সাথে আয়ানের বড্ড ভাব।কিন্তু ওকে জানাবে কি করে? ভাবতে লাগলো সে।তখন’ই মাথায় এলো আদিতের কথা।বিরক্তিরা এসে ভিড় করলো তার মুখে।আহ্ রাইফা! আর কাউকে পেলি না! রাইফা ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে।আদিত কীভাবে যেন তার ফেইসবুক আইডি পেয়ে গেছে।ম্যাসেজ দিয়েছে কত অথচ সে সিন করেনি।বাচ্চা ছেলে একটা সে নাকি ওকে বিয়ে করবে! ননসেন্স! কিন্তু এখন ওকে ম্যাসেজ দেওয়া ছাড়া আর উপায়ও নেই।নাতাশার সাথে যোগাযোগ করতে হবে যে করেই হোক।
রাইফা আনোয়ারা বেগমকে সান্তনা দিয়ে বললো

-‘চিন্তা করো না মামি…আমাদের আয়ান অবুঝ শিশু নয়।সে বুঝদার…
আনোয়ারা বেগম বললেন
-‘ও জাহান্নামে যাক…আমি তো ওর ঘরে খাঁটের তলায় ঝাঁড়ু রেখে আসছি সেটা নিতে ডাকছি ওকে।এই হতোচ্ছোরা দরজা খোল..
রাইফা থ হয়ে গেল।মনে মনে তিনবার বলে উঠলো—“অ্যাঁ!.. অ্যাঁ!.. অ্যাঁ!”
সে চলে এলো ওখান থেকে।ফোনটা হাতে নিয়ে আদিতের আইডিতে গেল।ওর ম্যাসেজ থেকে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।..শুভ ভোরের সকাল..শুভ একদম সকাল.. শুভ হাফ দুপুর… শুভ ফাটাফাটি দুপুর..শুভ অর্ধেক বিকাল..শুভ পুরো বিকাল..এরকম ধরনের ম্যাসেজ।মানুষ কথা বলতে চাইলে কত রকম কথাই না বলে! রাইফা ফিক করে হেসে ফেললো।দেনামোনা করে ম্যাসেজ করেই ফেললো

“Kotha chilo. Acho?”
আশ্চর্য হলো রাইফা।ম্যাসেজ করতে দেরি সিন করতে নয়।ছেলেটা বোধহয় অবাক হয়েছে ম্যাসেজ দেখে।রিপ্লাই এলো
“Call dibo?”
রাইফা থমকে গেল।পরক্ষণেই চেতে গেল।তবে রাগটা প্রকাশ করলো না। লিখলো
“Natashar phn number ta dite parbe?”
কিছুক্ষণের মাঝেই নম্বর পাঠিয়ে দিল আদিত।নাতাশা ধন্যবাদ জানিয়ে কথা শেষ করলো।আদিত হতাশ হলো।তবে হাল সে ছাড়বে না।সিনিয়র বউ’ই লাগবে তার।আর একেই লাগবে।আদিতের দৃঢ় বিশ্বাস সে পারবে।

-‘বেইবি?
-‘হুমম..
রোদেলার বেডরুমে রাহুল রোদেলার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।রোদেলার অবশ্য অস্বস্থি লাগছে কিন্তু কিছু বলছে না।রাহুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে।হাত বুলানো না ছাই! চুলগুলো ছিড়ে দিতে পারলে শান্তি হতো।
-‘ভালোবাসি।
রাহুল চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বললো।রোদেলার ইচ্ছা হলো ওর গালটাতে ঠাস করে একটা থাপ্পর লাগাতে।এত এত মেয়ের হৃদয় ভেঙে এখন ভালোবাসা মারাতে আসা! রোদেলা নিজেকে সামলাতে পারলো না।হাতটা আপনাআপনি উঠে রাহুলের গালে বসে গেল।রাহুল হতভম্ব হয়ে গালে হাত দিয়ে উঠে বসলো।সে তেঁতে বলে উঠলো
-‘হুয়াটস্ রং? মারলে কেন?
রোদেলা ভড়কে গেল।মিনমিন করে বললো
-‘ম’মশা বসেছিল।আপনি রেগে গেলেন?

রোদেলার মুখটা ছোট্ট হয়ে গেল।রাহুলের নিজের উপর রাগ হলো।মেরেছে মেরেছেই।তার রাগ দেখাতে হবে কেন? তার বেইবিই তো মেরেছে।রাহুল কানের লতিতে হাত দিয়ে বললো
-‘সরি…আসলে চেঁচানোটা বদভ্যাস হয়ে গেছে।
রোদেলা মুচকি হেসে বললো
-‘ইটস্ ওকে।আমি কিছু মনে করিনি।
রাহুল রোদেলার গাল মৃদু টেনে বললো
-‘দ্যাটস্ মাই গুড গার্ল।

রাফি নিজের কপাল ঘষছে এক আঙুল দিয়ে।বহুত সময় ধরে ওদের এই পিরিত সে দেখছে সামনে বড় স্ক্রিনটাতে।রাফি উঠে দাঁড়ালো।দুইদিকে ঘাড় বাঁকালো।চোখজোড়া বন্ধ তার।বড্ড রেগে আছে বলে মনে হচ্ছে।নিস্তব্ধ ঘরটাও বুঝি তাকে ভয় পাচ্ছে! কি করবে রাফি?সিনেমার হিরোদের মতো দেয়ালে ঘুষি মারবে বোধহয় তানাহলে স্ক্রিনটা ভেঙে ফেলবে? তেমন কিছুই হলো না।হঠাৎ’ই সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো।
-‘আমার বউটার লগে কি শুরু করছে….ও আল্লাহ গো….বউটাও কি বদমাইশ আমার মাগো…অ্যাঁআআ…অ্যাআআআ…

হঠাৎ তখন স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই যা দেখলো তা দেখে সে কান্না থামিয়ে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো।রাহুল মাত্র..হ্যাঁ মাত্র রোদেলার গালে চুমু খেল না! রাফি এবার “ও আল্লাহ গো” বলে চেঁচিয়ে উঠলো।মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে লাগলো যেন ছোট্ট এক বাচ্চা খেলনার জন্য কাঁদছে।হেচকি উঠে গেল ছেলেটার।উঠে দাঁড়ালো।হেচকি তুলতে তুলতেই ঘরের কোণে থাকা রডটা তুলে নিল হাতে।চোখে পানি অথচ মুখে অদ্ভুদ এক হাসি।

-‘তুমি বিয়ে করেছো!!!
আহান শাহরিয়ারের মাথায় বাজ পড়লো।
-‘সেটাই তো বললাম মাত্র।
আহনাফের ভাবলেশহীন জবাব।আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘কাউকে না জানিয়ে কাপুরুষের মতো বিয়ে করে নিলে?
আহনাফ হাসলো।
-‘আপনার’ই তো ছেলে।
-‘আহনাফ!!

-‘চিৎকার করবেন না মিস্টার আহান শাহরিয়ার।আপনি নিজেই তো পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন।জানি না কিছু ভেবেছেন?মুখ খুলাবেন না আমার।নিজেই ফাঁদে পড়ে যাবেন।কিছুদিন আগে পর্যন্ত বউমা বউমা করে লাফালেন আর এখন এমন রং পাল্টাচ্ছেন! ওহহো! রাজনীতিবিদ না!
আহান শাহরিয়ার ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লেন।
-‘তোমার ভালোর জন্যই বলেছিলাম আহনাফ।কি আর করার এখন! বিয়ে তো করেই ফেলছো।বউমা কি তোমার সাথেই এখন?
আহনাফ বলে উঠলো
-‘আজকে আমাদের বাসর রাত।কোথায় থাকা আশা করছো?সে তো এখন..
-‘থাআআআক….

আহান শাহরিয়ার শক্ত কণ্ঠে বললেন।আহনাফ ঠোঁটের কোণ বাঁকা করে হাসে।টুকটাক কথা বলে কল কেটে দেয়।ড্রয়িং রুমে বসেছিল সে এতোক্ষণ।হঠাৎ তখন হেলেদুলে কুহু প্রবেশ করলো।মেয়েটার হঠাৎ উৎফুল্লভাব দেখে কপাল কুচকায় আহনাফ।
-‘কি ব্যাপার এত খুশি খুশি লাগছে!
কুহুর পদযুগল থেমে গেল।একটু আগে পেট ভরে ভাত খেয়েছে।পেট শান্তি তো সব শান্তি।তাই একটু উড়ার চেষ্টার করছিল এই শান্তিতে।আহনাফ হঠাৎ বলে উঠলো
-‘উফ! মাথা ব্যথা করছে…
কুহু হকচকিত হলো।
-‘সে কি!
-‘একটু টিপে দিবে?
-‘হ্যাঁ, কেন নয়?
আহনাফ হাসলো।কুহু সোফায় বসলো ওর পাশে।হঠাৎ’ই আহনাফ কুহুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।মুখ গুজে দেয় ওর পেটে।গরম শ্বাস আছড়ে পড়ছে মেয়েটার নগ্ন পেটে।কুহু চোখ বন্ধ করে ফেলে।আহনাফের ভাব-ভঙ্গি স্বাভাবিক যেন কিছুই করেনি সে।

-‘একি! আবার চোখ বন্ধ করছো কেন? কি হয়েছে বলোতো তোমার?
কুহু চোখ খুললো তাৎক্ষণাৎ।নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।আহনাফ মনে মনে হাসে তার অবস্থা দেখে।
-‘ক’কি হবে? আ’আপনি বালিসে মাথা রাখুন।
আহনাফ মাথাটা আরো ওর পেটের সাথে চেপে বলে উঠলো

-‘না, না..বউ থাকতে বালিসে মাথা রাখবো কেন?ভাবছি বালিসগুলো আদিতকে দিয়ে দিব।সিঙ্গেল মানুষ।
কুহু ফিক করে হেসে ফেলে।আদিত এখানে থাকলে নিশ্চই কিছু একটা বলতো।সিঙ্গেল বলে সবাই খোঁচা মারবে এভাবে! কুহু আহনাফের মাথা নিজের নরম হাতের দ্বারা টিপে দিতে লাগলো।আহনাফের চোখ বন্ধ।আহনাফ একটু নড়চড় করতেই কুহুর পুরো শরীর কেঁপে উঠে।হঠাৎ মাথায় একটা ব্যাপার এলো তখন।আহনাফ কি ইচ্ছা করে এমন করছে?এমন সময় তার চোখ গেল আহনাফের ট্রাউজারের পকেটটাতে।সিগারেটের প্যাকেটটা বেরিয়ে রয়েছে।কুহুর মেজাজ বিগড়ালো।হাতের আগলে থাকা আহনাফের চুলের মুঠি ধরে দুটো ঘুরান দিল।হঠাৎ এহেন আচরণে চমকে উঠলো আহনাফ।মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।কুহু চেতে বললো

-‘প্রথম প্রেমিকারে পকেটে নিয়ে আমার কোলে শুয়ে আছেন! বড় মাপের খাটাশ তো আপনি!
আহনাফ জিহ্ব কাটে।মেকি হেসে বলে
-‘ভুলে গিয়েছিলাম।
কুহু ওকে ধাক্কা মেরে উঠে দাঁড়ালো।
-‘আমি তোর সংসার’ই করবো না বাঙ্গির পোলা।এখন’ই আমি চলে যাবো।
-‘হায়হায় বউ! এসব কি কথা?
কুহু রেগে বোম হয়ে গেছে।
-‘একটা বিড়িখোরের সংসার আমি কখনো করবো না।
আহনাফ কুহুর হাত ধরে ফেলে।
-‘এমন করে বলে না, তিলোত্তমা।সোনা বউ আমার!
কুহু চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আহনাফ বলে উঠলো
-‘একটু সময় তো লাগবে ছাড়তে।সময়টা দাও বউ..
উফ! আহনাফ বারবার বউ বউ বলে তাকে দুর্বল করে ফেলছে।কুহুর রাগ আপনাআপনি গলে যাচ্ছে।আহনাফ বুঝে সবটা।সে কুহুর একটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
-‘সিগারেট ছেড়ে দিতেই পারি এখন।তবে এই নেশা কাটানোর জন্য যে অন্য একটা কিছু লাগবে।
কুহু বাঁকা হেসে বলে উঠলো

-‘আচ্ছা?
আহনাফের ঠোঁটের কোণেও হাসি।কুহু বলে উঠলো
-‘এক্ষুণি দিচ্ছি।আগে বলবে না আপনি এটা চাইছেন! আমি আরো ভাবলাম আমার একার দিক থেকে বোধহয় এই ফিলিংস।
আহনাফ অবাক হলো।ঠিক পয়েন্টই বুঝেছে! ওয়াও! কুহু হাসতে হাসতে পায়ের জুতোটা খুলে হাতে নেয়।আহনাফ বলে
-‘জুতো খুললে কেন?
-‘আপনি না বললেন আপনার কিছু একটা চাই।আমারও এতক্ষণ ধরে মন চাইছিল আপনাকে কিছু একটা দেই।আফটার অল আমাদের ফার্স্ট নাইট বলে কথা!
আহনাফ পিছিয়ে যেতে যেতে বললো
-‘নো তিলোত্তমা…
কুহু হেসে বলে

-‘রেনাইনাকেও ছুড়ি মারার সময় বলছি এমন..”নো বার্ড”…মারছিলাম ঠিক’ই।
আহনাফ ছুট লাগালো হঠাৎ।কুহু জুতো হাতে ছুটলো।আহ্ কি কপাল! বাসর রাতে বউ জুতো হাতে তাকে দৌঁড়ানি দিচ্ছে! এই ছিল তার কপালে! এই মেয়ে উল্টো তাকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে।এদিকে কুহু শাড়ি পড়ায় দৌঁড়াতে অসুবিধা হচ্ছে।তারা এই রুম.. সেই রুম..ড্রয়িং রুম ঘুরে দৌঁড়াচ্ছে।আহনাফ সোফায় উঠে পুড়লো।কুহু হাঁপাচ্ছে।বাঁকা হেসে বললো
-‘তু তো ফাঁস গেয়া..
আহনাফ বাঁকা হেসে বলে
-‘এত সহজ!

কথাটা বলেই সে সোফা ডেঙিয়ে অপর পাশে নেমে যায়।ঘটলো এক অঘটন তখন।সোফা ডেঙাতে গিয়ে গেল তার ট্রাউজারখান ছিড়ে।নিস্তব্ধ মোড়া ঘরটাতে ছিঁড়ার শব্দটা ভালোই শোনা গেল।কুহু তাছাড়া চক্ষু চড়কগাছ।আহনাফ চোখ বড় বড় ওর পানে তাকায়।ও কি কিছু দেখে ফেললো?আহনাফ এই প্রথম বুঝি এমন লজ্জায় পড়লো।কুহুর হাত থেকে জুতো পড়ে গিয়ে হাত মুখে চলে এসেছে।আহনাফ বুঝতে পারছে না কিছু।দেখে ফেলেছে কি? হঠাৎ’ই কুহু ঘর কাঁপিয়ে হাসতে আরম্ভ করলো আর বলতে লাগলো
-‘দেখে ফেলেছি…
আহনাফ হতভম্ব হয়ে তাকায় ওর দিকে।কেন যে হিরোগিরি দেখাতে গেল!সোফা সামনে থাকায় আপাতত সম্মানখান ঢেকে আছে।কুহু হাসতে হাসতে বারবার বলছে

-‘দেখে ফেলেছি!
আহনাফ দাঁতে দাঁত পিষে বললো
-‘কেন? আগে দেখোনি?
-‘আপনি দেখিয়েছিলেন বুঝি?
কুহুর পাল্টা জবাবে আহনাফের চক্ষু চড়কগাছ।কুহু আহনাফকে ক্ষেপাচ্ছে।তখন ঘটলো আরেক ঘটনা।সে সামনে আসতে গিয়ে শাড়িতে পা পেঁচিয়ে ধরাস করে পড়ে গেল।শাড়ির কুচি এলোমেলো হয়ে গেছে।আহনাফ এবার অট্টহাসাতে ফেটে পড়ে।কুহুর আঁচল পড়ে গেছে।সে বলতে লাগলো এবার
-‘হেহহেহে…মে ভি দেখলিয়া,..
কুহু জুতোটা ছুঁড়ে মারলো ওর দিকে।আহনাফ সরে গেল।সেটা গিয়ে লাগলো ডাইনিং এর কাচের গ্লাসে।দুটো গ্লাস পড়ে ভেঙে গেল।আহনাফ জোরে জোরে হাসছে।কুহু উঠতে পারে না।বলে উঠলো
-‘ব্যথা পেয়েছি আমি। আপনি হাসছেন! ও বাবাগো!
আহনাফ এবার সিরিয়াস হলো।এগিয়ে গেল তার দিকে।কুহু চোখ খিঁচে বলে উঠলো
-‘বা//ল তোর প্যান্ট ছিড়া…

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৮

আহনাফ পেছন দিকে ঘুরে গেল।শিট্! আবার! সে পেছন দিক ফিরেই ওর কাছে এসে তকে তুলতে সাহায্য করতে লাগলো।কুহুকে তুলতে গিয়ে নিজেই পড়ে গেল ওর উপর।উল্টোভাবে তোলা যায় নাকি! কুহু চেঁচিয়ে উঠলো।মনে হলো একটা হাতি পড়েছে তার উপর। ঠিক অমন সময় দরজায় শব্দ শোনা গেল।মনে হচ্ছে কেউ ভেঙে ফেলতে চাইছে।ভেঙেই গেল দরজা! হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করলেন সাখাওয়াত আলম আর হারুন রহমান।পেছনে গার্ডস্! দুজনে হতভম্ব হলো ওদের এভাবে দেখে।তখন দৌঁড়া দৌঁড়ি করতে গিয়ে ঘরের জিনিসও এলোমেলো করে ফেলেছে এরা।সাখাওয়াত আলমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।কুহু মেঝেতে..ওর আঁচল ফেলা..আহনাফ ওর উপর..এদিকে গ্লাস ভাঙা..ভদ্রলোক অন্যকিছু ভেবে বসললেন।তার ধারণাই ঠিক তার মানে? তখন বাহির থেকে চেঁচামেচি শুনে বুঝেছিলেন আহনাফ তার মেয়ের সাথে জোরজবারদস্তি করছে।হায় আল্লাহ!এদিকে কুহু আর আহনাফ ড্যাবড্যাব করে ওনাদের দেখছে। সাখাওয়াত আলম চেঁচিয়ে উঠলেন
-‘শানায়াআআআ আমার মা..

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here