প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪১

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪১
অনন্যা

-‘এটেনশন প্লিজ…
আবার একটা গুলির শব্দ।সবাই চেঁচিয়ে উঠলো।রাফি বুকে থুথু দিয়ে বললো
-‘গুলি মেরে কেউ এটেনশন চায়!! আমার আত্মাটাই বেড়িয়ে গিয়েছিল আরেকটুর জন্য…
রোদেলা তার পাশ থেকে আস্তে করে বললো
-‘আসস ব্রো আসস..
রাফি রোদেলার হাতটা শক্ত করে ধরলো।এরপর বললো
-‘আমি তো তোমার জন্য ভয় পেয়েছিলাম।কতকিছু ভেবে বসেছিলাম…
-‘তাও চোরনি বলেই ডেকেছেন…আল্লাহ’র গজব পড়বো আপনার উপর।দেখে নিয়েন…
-‘পড়ছেই তো গজব।আস্ত তুমিটাকে আমার করে দিয়েছেন না আল্লাহ।
রোদেলা ক্ষেপে বললো

-‘এই কি বললেন? আ..
রোদেলা আর কিছু বলতে পারলো না হঠাৎ’ই একটা বড় স্ক্রিনে কিছু দৃশ্য ফুটে উঠলো।রোদেলা বললো
-‘আপনাকে তো পরে দেখে নিব।
-‘রাত হোক.. দুজন’ই দুজনকে দেখবো।একদম অন্যরূপে..
রাফি শেষের লাইনটা রোদেলার কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে।রোদেলার পুরো শরীর কেঁপে উঠে।তবে আপাতত বিষয়টা নিয়ে সে ভাবে না।সামনের দিকে মনোযোগ দেয়।অবশেষে সেই কাঙ্খিত সময়টা এসেছে।রোদেলার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাহুল বিরক্ত নিয়ে বসেছিল।এসব রঙ্গ দেখার সময় কি তার আছে!! বিয়েটা হয়ে গেলে শান্তি তার।সে ফোন ঘাটছিল বিরক্ত নিয়ে।নিজের ভয়েস হঠাৎ কানে আসতেই সামনে তাকায় সে।চক্ষু চড়কগাছ।ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল ধপ করে।বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে।একটা শুকনো ঢোক গিললো।

স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে যে রাহুল কীভাবে ছোট্ট আরিশকে গলা চেপে ধরেছে।আরিশ চেষ্টা করছে রাহুলের থেকে বাঁচতে কিন্তু পারে না।ব্যর্থ হয়।সত্যিই কি ব্যর্থ হয় নাকি বাঁচার জন্য ছোট্ট একটা অভিনয়? রাহুলের কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে থাকে।এই ভিডিও আহনাফ কোথায় পেল?মনে হচ্ছে যেন সামনে থেকে কেউ ভিডিও করেছে।একটু পরেই দেখা গেল সাজ্জাদ শাহরিয়ারকে।লোকটা এসে আরিশের শ্বাস চলছে নাকি তা দেখলো।যখন দেখলো শ্বাস নিচ্ছে না তখন সে হাসলো।আশ্চর্য হলো উপস্থিত সবাই।সাজ্জাদ শাহরিয়ারের ঘাবড়ে যা-তা অবস্থা।বিস্ফোরিত নয়নে দেখছেন তিনি সবটা।জঙ্গলে ফেলে আসা পর্যন্ত সবটা দেখানো হলো।জেরিন বেগম মুখে আঁচল চেপে কেঁদে উঠলেন।জেরিন বেগম ঘামছেন।এতগুলো বছর পর এই ঘটনাগুলো আবার জীবন্ত হলো কি করে?আরিশের কথাই যে জায়গায় সবাই ভুলে গিয়েছিল সেখানে…কোথা থেকে এসব ভিডিও জোগাড় করলো আহনাফ?

এই ভিডিও শেষ হতেই আরেকটা ভিডিও চালু হলো।ভিডিওটাতে দেখা যাচ্ছে যে রাহুল একটা মেয়ের সাথে একটা হোটেলে প্রবেশ করে।এরপর একটা রুম বুক করে তারা সেই রুমটাতে প্রবেশ করে।পুরোটা সময় রাহুলের হাত মেয়েটার কোমর জড়িয়েছিল।কুহুও বেরিয়ে এসেছিল গুলির শব্দ শুনে।সে সবটা থেকে নিরব রইলো।আবছা আলোয় রোদেলার ফ্যাকাশে মুখটার দিকে তাকালো সে।এরপর ঘৃণা মিশ্রিত দৃষ্টি নিয়ে রাহুলের দিকে তাকালো।রাহুলের অবস্থা নাজেহাল।সে রোদেলার দিকে তাকালো।অজানা একটা ভয় জেঁকে ধরলো তাকে।সে দৌঁড়ে আহনাফের কাছে যায়।তার হাত ধরে বলে

-‘আহনাফ ভাই আমার…দয়া কর আমার উপর…প্লিজ ভিডিওটা বন্ধ কর…রো’রোদ কষ্ট পাচ্ছে এসব দেখে…প্লিজ বন্ধ কর..
আহনাফ নিরুত্তর।রাহুল পাগলপ্রায় হলো এতে।সে বললো
-‘তুমি যা বলবি আমি তাই করবো কিন্তু তাও এসব বন্ধ কর।তোর পা ধরে ক্ষমা চাইবো দরকার পড়লে।এই দেখ তোর পা ধরেছি আমি…
নিচে বসে আহনাফের পা ধরলো সে।আহনাফ তাও কিছু বললো না।
-‘এবার বন্ধ কর এসব..আমার রোদ কষ্ট পাচ্ছে ভাই….
আহনাফের থেকে তাও কোনো উত্তর আসে না।রাহুল বুঝে তাকে বলে লাভ নেই।সে দৌঁড়ে স্টেজ থেকে নামে।রোদেলাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মাথা চেপে ধরে।অস্থির কণ্ঠে বলে
-‘আমার জান…চোখ বন্ধ করো..দেখো না…দেখো না আমার এই অতীত…
রাহুল কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলে।সবাই তাদের দিকে তাকায়।সাজ্জাদ শাহরিয়ার আর আনিসা বেগম অবাক’ই হয় বটে।রাহুলকে শেষ কবে কাঁদতে দেখেছিল তারা তাদের মনেও নেই।ছেলেটা তার মানে সত্যিই ভালোবাসে রোদকে!

-‘ছাড়ুন আমাকে..
রোদেলা নিজের সব শক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা মারে রাহুলকে।রাহুল ছিটকে সরে যায়।রাফি দাঁত কটমট করে দেখছে সবটা।আহনাফ তাকে কিছু করতে বারণ করেছে বিধায় এখনো চুপ আছে সে।তানাহলে দিত এতক্ষণে সে।এদিকে রাহুল সিক্ত নয়নে তাকায় রোদেলার দিকে।রোদেলা বলে
-‘ধুরু! দূরে সরুন! ঘামের বিশ্রি গন্ধ! ওয়াক!! আর আপনি?
রাফির উদ্দেশ্যে বললো কথাটা।
-‘আপনার সামনে আপনার বউকে অন্য একজন জড়িয়ে ধরলো আর আপনি চুপ রয়েছেন!!
রোদেলা কথাটা শুনে যেন বজ্র পড়লো উপস্থিত সবার মাথায়।রাহুল হতবিহ্বলিত হয়ে বললো
-‘কি বললে?
রোদেলা কিছু বলতে নিলে আহনাফ বললো

-‘সবাই সামনের স্ক্রিনের দিকে তাকালে খুশি হতাম।
আহনাফের কথা শোনা মাত্র সবাই সামনে তাকায়।এবার যেন সবাই আকাশ থেকে পড়লো।অতিথিরা ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে সমালোচনা শুরু করে দিয়েছেন।
স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে একটা কক্ষে কিছু মেয়ে আটকানো আর মাঝের একটা চেয়ারে বসে রাহুল।মেয়েগুলো অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।তখন সাজ্জাদ শাহরিয়ার শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে রুমে প্রবেশ করে।সে আসার পরপর’ই ঐ রুম থেকে একটা মেয়েকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসা হয়।উপস্থিত সবার চোয়াল ঝুলে পড়ে।মুখ ফিরিয়ে নেয় সবাই।সাজ্জাদ শাহরিয়ারের দিকে ঘৃণার চোখে তাকায়।যেমন বাপ তেমন’ই ছেলে।অনেকে এমন মন্তব্য করতে লাগলেন।আনিসা বেগম তো আকাশ থেকে পড়েছেন যেন।তিনি জ্ঞান হারালেন।কেউ’ই আর আজ তাকে ধরলো না।কারণ সবার’ই গলা শুকিয়ে আসছে।আহনাফ একে একে যেভাবে সবার পর্দা ফাঁস করছে…বলা যায় না কি হয়।
আদিত,রাইফা,আয়ান,নাতাশা,আরিফ,নিধি ওরা একসাথেই দাঁড়িয়েছিল একটা কর্ণারে।আদিত বললো

-‘এই বয়সে এসেও বেডার কুরকুরানি কমে নাই।ভালো মানের কলিকাতা হারবাল আনিয়েছিল মনে হয়।অন্যথায় এত কুরকুরানি থাকবে কেন?
সবাই ঠোঁট চেপে হাসে।আয়ান বললো
-‘বাপ যেমন ছেলেও তেমন’ই হয়েছে।
আরিফ বললো
-‘যে মেয়েটাকে ধ”র্ষ”ণ করে এলো সেই মেয়েটাও একটা সময় রাহুলের গার্লফ্রেন্ড ছিল।নির্লজ্জ লোক একটা!!
রাইফা আর নিধি অবাক হয়ে বললো—“অ্যাঁ!!”
আদিত বললো
-‘একটু পরেই জানবে সব।

সাজ্জাদ শাহরিয়ার বলে উঠলেন
-‘এ’এগুলো সব মিথ্যে।এগুলো সব এআই..কেউ বিশ্বাস করবেন না প্লিজ।
তার কথা কেউ শুনলোই না বোধহয়।সবাই ভিডিওর দিকে মনোযোগী।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে রাহুল আর সাজ্জাদ শাহরিয়ার কিছু কথা-বার্তা বলছে আর তার মাঝেই একজন লোক এসে উপস্থিত হয়।লোকটাকে দেখে নিধি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।নারী পাচারের সাথেও যুক্ত ছিল তার বাবা!! আরিফ নিধির হাতটা শক্ত করে ধরলো।নিধি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে।

নওশাদ আহমেদ সাজ্জাদ শাহরিয়ারের সাথে হ্যান্ডসেক করলেন।কথা-বার্তা বললেন কিছুক্ষণ।এরপর কিছু লোক এসে মেয়েগুলোকে নিয়ে যায়।অফ হয়ে গেল ভিডিও।অন হলো আরেকটা ভিডিও।ওপ্পা গাংগামস্টার গানে নাচছেন সাজ্জাদ শাহরিয়ার।পরণে হাফ প্যান্ট আর পাতলা একটা গেঞ্জি।আশেপাশে তার মেয়ে দিয়ে ভরা।আনিসা বেগম নির্ঘাত আবার জ্ঞান হারাতেন।ভালোই হয়েছে কেউ বেচারির জ্ঞান ফেরায়নি।এদিকে গানের শব্দে আদিতরাও একটু নেচে নিচ্ছে।সাজ্জাদ শাহরিয়ার মাথা নিচু করে ফেললেন।অনেকেই হাসছে।সাজ্জাদ শাহরিয়ার বেশ বুঝলেন যে তার নিজের লোক’ই বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে।তানাহলে এসব ভিডিও কে করবে?
আহনাফ ইশারা করতেই লাইট অন হলো।সবাই নিজেদের মধ্যে সমালোচনা ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন।আহনাফ বললো

-‘সবাই মুখে আঙুল দিন।আমি ব্যতীত আর কারোর মুখ যেন না খুলে।
আহনাফের গম্ভীর ঠাণ্ডা হুমকি শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল।
-‘সাজ্জাদ শাহরিয়ার..যার কালা মনে কোনো সাদা নেই।প্রথমেই আসি আমার ভাই আরিশের মৃত্যুর ব্যাপারে।যদিও সে মৃত নয়।সে বেঁচে আছে।
কথাটা যেন বাজরূপে পড়লো সাজ্জাদ আর রাহুলের মাথায়।আনিসা বেগম তো আগেই চিতপটাং।ভদ্রমহিলা আবার জ্ঞান হারাতো এটা শুনে।অখিল শাহরিয়ার আর জেরিন বেগমও চমকালেন।সাথে উপস্থিত সবাই।আদিত বললো
-‘বাহিরের আবহাওয়াটা জোস্।এখন ধুমতানানা বিট দিতে পারলে জমবে ভালো।ধুমতানানা.. ধুমতানানা..
আরিফ বললো

-‘ডিজে সাজ্জাদ..ডিজে সাজ্জাদ..
সবাই হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসি আটকালো।আয়ান অন্যদিকে চলে গেল।হাসি আটকাতে পারছে না সে।ওয়াসরুমে গিয়ে একটু হেসে আসার সিদ্ধান্ত নিল সে।
নাতাশা বললো
-‘তবে কি আজ সব সত্যতা সামনে চলে আসবে? কে এই আরিশ? জানতে হলে থাকুন..ঢিচ্চিক ঢিচকাও চ্যানেলের সাথে।
একেকজন এবার একেক জায়গায় চলে গেল।একসাথে থাকলেই বিপদ।

আহনাফ রাফির দিকে তাকালো।রাফি তার কাছে এগিয়ে গেল।আহনাফ বললো
-‘রাফি…ওরোফে আমার ভাই আরিশ শাহরিয়ার।
সবাই বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো।সবাই চেঁচিয়ে বললো
“অ্যাঁ!!!!!”

-‘হ্যাঁ….সেদিন সে মারা যায়নি।তার বিদেশ যাওয়া নিয়ে আমার আপত্তি ছিল।কিন্তু সে যাবেই।তাই বাবা তার প্রত্যেকটা শার্টের বোতামে ক্যামেরা ফিট করে রাখে।আর লোক ফিট করে রাখে তার নিরাপত্তার জন্য।ঐদিন রাহুলের থেকে বাঁচতে সে যখন অন্য উপায় পেল না তখন নিশ্বাস বন্ধ করে মরে যাওয়ার নাটক করে।বোকা আমার চাচাও তার পার্লস্ চেইক করে না।ফেলে আসে জঙ্গলে।যেহেতু লোক লাগানো ছিল তাই তারাও গাড়িটা ফলো করে। এরপর সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে।কিন্তু পৃথিবীর বুকে তাকে মৃত হিসেবেই ঘোষণা করা হয়।আবার তার উপর আক্রমণ হতে পারে এই ভয়ে। তো এখন প্রশ্ন হতেই পারে যে, এমনটা কেন করলেন তিনি..?তিনি তো আমাদের চাচা হন।তাহলে কেন করলেন?উত্তরটা সাজ্জাদ শাহরিয়ার’ই দিক বরং..না দিলে তার আরো কির্তী ফাঁস করা হবে।তাও একদম ডিটেইলসে।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার ভয়ে শুকনো ঢোক গিললেন।

-‘কি হলো বলুন?…বলুনন…
আহনাফ চেঁচিয়ে উঠলো।
-‘সম্পত্তির জন্য।তুমি আর আরিশ এই দুইজন ছিলে আমার পথের কাঁটা।সম্পত্তির তিন ভাগ করতে আমি রাজি ছিলাম না।পুরোটা আমার চাই।তোমরা বেঁচে থাকলে তা কখনোই হতো না।তাই..
-‘ভাইজান!!
অখিল শাহরিয়ার অবাক স্বরে বললেন।আহনাফের ঠোঁট কিঞ্চিৎ বেঁকে গেল।
-‘এটা তো সবে শুরু ছোট আব্বু।এই সম্পত্তির জন্য তিনি আমাকেও মারতে চেয়েছেন বাট আফসোস পারেননি।মনে আছে ভার্সিটিতে গাড়ির সেই ব্রেক ফেইলের কথা?
আয়ান বললো

-‘সে আবার থাকবে না মনে!
আহনাফ হাসলো।কুহুর দিকে তাকালো।মেয়েটা অবুঝের মতো তাকিয়ে।
-‘সেটা করিয়েছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় চাচা সাহেব।আমার জন্মদিনে গুলি করাটাও ওনার কাজ ছিল। আরো অনেক কাণ্ডই ঘটিয়েছেন তিনি। এরপর আবার করেন নারী পাচার। বাবার কষ্ট কমাতে কাজে হাত দেন রাহুল শাহরিয়ার।দিনে চব্বিশটা গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ভুল বুঝিয়ে টুঝিয়ে নিয়ে যেত নিজের সাথে।তার গার্লফ্রেন্ডের সংখ্যা তো আপনারা নিজ চোখেই আজ দেখেছেন।এগুলো তো বাংলাদেশের…বিদেশে আরো আছে।এরাই হচ্ছে এই রাহুলের শিকার।ফেইসবুকে প্রথমে ভুজুংভাজুং বলে মেয়েদের পটায় এরপর বাকিটা পাতিহাস।
কুহু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।সাখাওয়াত আলম বললেন

-‘এই ছেলের ব্যাবস্থা আগেই করতে পারতাম আমি।তুমি মানা করলে বিধায় কিছু করিনি।
কুহু কিছু বলে না।আহনাফ বললো
-‘এটাতেই শেষ নয়।আপনারা অনেকেই জানেন আমার বাবা আহান শাহরিয়ার আর সাখাওয়াত আলম একটা সময় বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার এবার বললেন
-‘আহনাফ না…তোমার পায়ে ধরি আহনাফ,, আর বলো না কিছু।
আহনাফ হাসলো।সাখাওয়াত আলম আর আহান শাহরিয়ার একে অপরের দিকে একবার তাকালেন।হারুন রহমান বললেন

-‘আবার আপনাকে টেনে আনলো কেন?বড্ড অদ্ভুদ ছেলে!
আহনাফের কানে হয়তো গেল হারুন রহমানের কথা।সে হারুন রহমানের দিকে তাকাতেই হারুন রহমান পশ্চাৎদেশে হাত দিলেন।আহনাফ কিছু বললো না।অতিথিরা এবার চেয়ারে বসে পড়েছে।এত রহস্য এই এক পরিবারে! এদের দিয়ে মুভি বানানো যাবে মাইরি!
-‘তো যেটা বলছিলাম..
-‘না আহনাফ..
-‘এনাদের বন্ধুত্বও ভেঙেছে আমার গুণধর চাচার কারণে।আমার মাকে খুন করা হয়।কি ভেবেছেন? সাখাওয়াত আলম করিয়েছেন?
জেরিন বেগম বললেন
-‘আ’আহনাফ..

-‘জেরিন শাহরিয়ার ওরোফে আমার শ্রদ্ধের চাচা সাজ্জাদ শাহরিয়ারের এক্স করিয়েছিলেন।তাদের মধ্যে এখনো সম্পর্ক চলমান সো গার্লফ্রেন্ড’ই বলা চলে।তিনিই করিয়েছিলেন।
জেরিন বেগম চোখ খিঁচে ফেললেন। এবার যেন প্রত্যেকের মাথায় গুণেগুণে বাজ পড়লো।সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো—“অ্যাঁ!!!!!!!”
জায়গাটা মৃদু কেঁপে উঠলো বোধহয়।রাহুল নিজেও হতভম্ব।আদিত,আরিফ,রাফি ওরা তিনজন শুধু কুল রয়েছে।অখিল শাহরিয়ার একবার নিজের বউয়ের দিকে তাকাচ্ছেন তো একবার ভাইয়ের দিকে।রোদেলা ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।আনিসা বেগম যদি একথা শুনে থাকেন তাহলে তিনি বোধহয় কোমায় চলে গিয়েছেন এতক্ষণে।আহনাফ বললো

-‘এখন কেমন হয় যদি বলি যে রোদেলা আর রাহুল সৎ ভাই-বোন?
-‘এ ভাই!
রাফি চমকে বললো।আহনাফ ইশারায় চুপ থাকতে বললো।কথাটা মিথ্যা কিন্তু তাদের একটু ঝাটকা দিলে তো খারাপ হয় না।রোদেলা আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ ইশারায় আশ্বাস দিল।রাফির খারাপ লাগলো।মেয়েটা এক্ষুণি কেঁদে দিবে বোধহয়।রাহুল বললো
-‘হুয়াট দ্যা ফা/ক! না..এটা কক্ষণো সম্ভব না…আ’আমার মাথা ঘুরছে।এ’এটা হতে পারে না।
রোদেলা হঠাৎ’ই নাটকীয় ভঙ্গিমাতে বললো

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪০

-‘এটা সত্য..আপনি আমার সৎ ভাই হন।আর সাজ্জাদ শাহরিয়ার আমার বাবা।
রোদেলার কথা শুনে রাফি হা হয়ে গেল। আদিতরা আবার চলে গেল ওয়াসরুমের দিকে।এবার কুহুও গেল পেছন পেছন।মুখে হাত দিয়ে দৌঁড় দিল বলা চলে। শা’লা এই পুরো শাহরিয়ার পরিবার’ই নাটকবাজ।রাহুল জীবনের প্রথমবার জ্ঞান হারালো।ছাইয়া থেকে ভাইয়া!! কে মানতে পারে এটা? সাজ্জাদ শাহরিয়ার চমকে জেরিন বেগমের দিকে তাকালেন।দুজন’ই হতভম্ব।অখিল শাহরিয়ার চেয়ার উল্টে পড়লেন রোদেলার কথা শুনে।হাসবে নাকি কাঁদবে সেটা নিয়ে সবাই কনফিউজড্ হয়ে গেল।

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here