প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৯

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৯
অনন্যা

-‘আপনারা তো নিজেদের চোখেই দেখলেন সব।ঐ অ্যাম্বুলেন্সটাতে করে আমার আসার কথা আজ।ষড়যন্ত্রটা কে করেছে তা তো বেশ ভালোই বুঝতে পারছি আমি।তবে জনগণ এভাবে অন্ধ হয়ে থাকলে আমার আর কিছু বলার নেই।আমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল।বুকে ব্যথাটা বেশি হচ্ছিল তাই আমাদের গাড়িতে করেই আমাকে আনা হয়।ভাবতে পারছেন একটাবার যে ঐ অ্যাম্বুলেন্সে থাকলে কি হতো! আমি জনগণের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলতে চাই যে আপনারা দয়া করে অন্ধ হয়ে বসে থাকবেন না।

রুখে দাঁড়ান আপনারা।কারণ আপনারাই আমার শক্তি।আজ আল্লাহ’র দয়ায় আমি বেঁচে গেছি।তবে এতে কি অনেক খুশি আমি?একদম’ই নয়।আজ কতগুলো মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।একজন নাকি মারাও গিয়েছে।এই একজন আমাদের কাছে শুধু একটা সংখ্যা।যার গেছে সেই বুঝতে পারছে যে এই একজন আসলে কি ছিল তাদের জন্য। আর কত কি হবে আমার জানা নেই।
সাখাওয়াত আলম টিস্যু দিয়ে চোখ মুছলেন।একজন সাংবাদিক বলে উঠলো
-‘স্যার, আপনি কি সাবেক এমপিকে সন্দেহ করছেন এই ঘটনায়?কিন্তু উনি তো আর রাজনীতি করবেন না বলে জানিয়েছিলেন।তাহলে উনি কেন এমনটা করবেন বলে আপনার মনে হয়?
সাখাওয়াত আলম হাসলেন এই প্রশ্নে।এরপর বললেন

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘কার মনে কি আছে সেটা তো আর আমি আপনি বলতে পারবো না।তাই না? সামনে নির্বাচন।সে যে আবার ফিরবে না তার’ই বা কি গ্যারেন্টি?
আরেকজন সাংবাদিক বলে উঠলেন
-‘স্যার আপনি সাবেক এমপিকে সন্দেহ করছেন। কিন্তু আপনার বিপক্ষ দলকে সন্দেহ করছেন না।কারণটা যদি একটু বলতেন..
সাখাওয়াত আলম বললেন
-‘সন্দেহের তালিকায় আমি যে তাকে রাখিনি এমনটা নয়।তবে আমার কিছু বলে যে সর্বপ্রথম তার দিকেই সবাই তীর ছুঁড়বে এটা তো জানা কথাই।আমার মনে হয় না তিনি এতো কাঁচা খেলা খেলবেন।যাইহোক..আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঐ ঘটনায় যারা যারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব আমি নিব।আর যিনি মারা গিয়েছেন তার পরিবারের পাশেও আমিও থাকবো।কারণ আজ আমার জন্য এই মানুষগুলোর এই অবস্থা।আমি…

সাখাওয়াত আলম কথা বলতে পারলেন না আর।চোখ মুছতে লাগলেন ভদ্রলোক।এক পর্যায় সাখাওয়াত আলম বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলেন।তার পিএ হারুন রহমান সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
-‘আপনারা প্লিজ বাহিরে যান।এমনিতেই ডাক্তার এতো মানুষ স্যারের কেবিনে থাকতে নিষেধ করেছেন।স্যারও অনেকটা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছেন।হিতে বিপরীত হতে পারে এতে। এখন প্লিজ আপনারা যান।ওনি সুস্থ হলে আপনাদের ডাকা হবে।এখন যান…

সাংবাদিকদের ঠেলেঠুলে বের করে দেওয়া হলো।হারুন রহমান ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।সাখাওয়াত আলম টিস্যুটা ছুঁড়ে মারলেন দূরে।এরপর হো হো করে হাসতে লাগলেন।
-‘দেখেছো হারুন…একেই বলে ভাগ্য..।আমাকে মারতে চেয়েছিল.. এতোই সহজ? এখন উল্টো নিজে ফেঁসে গেল।
হারুন রহমানও হাসলেন।সাখাওয়াত আলম বললেন
-‘ওকে রাজনীতি থেকে সরানোই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না।তিলে তিলে ওকে মারবো আমি।ও আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছিল।আমি ওর থেকে সবকিছু কেড়ে নিব…সবকিছু..
হারুন রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললেন
-‘ পর্দার আড়ালে এই জীবন-মৃত্যুর খেলা কতদিন চলবে আর আল্লাহ ভালো জানে..!

-‘স্যার.. মাফ করেন স্যার…আয়ান সাদিকরে আয়ান সিদ্দিকি পড়ছি…স্যার ছেড়ে দেন…
কুহু বলে উঠলো
-‘এটা কি করলেন আপনি? এটা ঠিক হয়নি..
লোকটা যেন আশার আলো পেল।সে বলে উঠলো
-‘ম্যাডাম আপনি একটু..
কুহু তার কথার মাঝেই বলে উঠলো
-‘আরেকটু উপরে ঝোলানো উচিত ছিল..একটু ভুল হয়ে গিয়েছে।
লোকটা থতমত খেয়ে গেল যেন।আশেপাশের লোকজন হা করে তাকিয়ে রয়েছে।আহনাফ লোকটাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে দিয়েছে।আহনাফ বলে উঠলো
-‘আরো উপরে ঝোলাবো?
কুহু বলে উঠলো
-‘আচ্ছা থাক…লাগবে না আর।
আহনাফ বলে উঠলো

-‘নাহ্ নাহ্ লাগবে….তুমি যখন বলেছো তখন লাগবেই…
লোকটা বোকা বনে গেল।আহনাফ তাকে আরেকটু উঁচুতে ঝুলিয়ে দিল।লোকটার মনে হলো সে একটা খেলনা।পছন্দ হয়নি বলে আরো উপরে ঝুলিয়ে দিল।আশেপাশের মানুষ হাসতে লাগলো।আহনাফ কুহুর দিকে এগিয়ে এলো।লোকটা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো
-‘স্যার আপনার বিশ্বাস না হলে আপনি দেখুন..এই নামে আজকেই মারা গিয়েছে আজকে।
আহনাফ বলে উঠলো
-‘তোর নামটা কি?ডেডলিস্টে এড করে দিচ্ছি নামটা…
লোকটা চোখ বড়বড় করে তাকালো।এরপরেই কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো
-‘স্যার, এবারের মতো মাফ করে দিন…

আহনাফ শুনলো না তার কথা।সে কুহুর হাত ধরে চলে গেল ওখান থেকে।তখন ধপ করে একটা শব্দ হলো।ওরা পেছন ঘুরে তাকালো।দেখলো যে লোকটার প্যান্ট ঝুলে রয়েছে উপরে আর সে চিতপটাং হয়ে নিচে পড়ে রয়েছে।আহনাফ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো
-‘হাহ্! গুলিস্তানের প্যান্ট মনে হয়..!
কুহু বললো
-‘ ব্রান্ডের প্যান্ট বুঝি পা/ছায় আটকে থাকে সবসময়! আপনারটা ব্রান্ডের মনে হচ্ছে। একটু টেনে দেখবো কি…?
আহনাফ চোখ বড়বড় করে তাকালো কুহুর দিকে।কুহু দাঁত কেলিয়ে বললো
-‘ইয়ে মানে যদি অনুমতি দেন….

কুহু আহনাফের প্যান্টের দিকে হাত বাড়াতে নিলে আহনাফ দুই কদম পিছিয়ে গেল।কুহু তা দেখে হু হা করে হেসে ফেললো।এদিকে বেচারা রিসেপশনিস্ট শার্ট খুলে নিচে বাঁধতে লাগলো।সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো তা দেখে।অথচ একটু আগে পর্যন্ত সবার মনে ছিল হাজারো দুঃখ, হাসি ছিল না কারো মুখে।হাসপাতাল তো আর কারো সুখের ঠিকানা নয়।অথচ এহেন ঘটনায় সবাই দুঃখ ভুলে হাসছে।এদিকে রিসেপশনিস্টের মান-সম্মান যাচ্ছে।বেচারা শার্ট বেঁধে প্যান্টটাকে কোনোমতে নামিয়ে দিল এক দৌঁড়।এটা দেখে কারো হাসিই থামছে না যেন।

-‘মামি..? কেমন আছো?
আনোয়ারা বেগম চোখ খুলে তাকালেন।উঠতে চাইলে কুহু সাহায্য করলো।
-‘তোরা ঠিক আছিস তো? আ’আমার আয়ান…
-‘আমরা ঠিক আছি।তোমার কথা বলো…
আনোয়ারা বেগম বললেন
-‘তোরা ঠিক থাকলেই আমি ঠিক।কি একটা দুর্ঘটনা গেল! বাড়িতে গেলে কিছু ফকির মিসকিনকে খাইয়ে দিব।
কুহু বললো
-‘আচ্ছা।তুমি রেস্ট নাও।শুনলাম আমাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নাকি এমপি সাখাওয়াত আলম নিয়েছেন।
আনোয়ারা বেগম হেসে বললেন
-‘সামনে নির্বাচন যে তাই।নির্বাচনের পরে হলে এর টিকিটাও দেখতে পেতি না।
কুহু বুঝদারের মতো মাথা নাড়ালো।পরপরই সে বললো

-‘এর তো টিকিটা ও নেই।পুরো খালি স্টেডিয়াম..
আনোয়ারা বেগম হাসলেন।এরপর বলে উঠলেন
-‘তোর হাল দেখি বেহাল।তুই এই অবস্থায় টইটই করে ঘুরছিস কেন, মুখপুড়ী?
কুহু হেসে বললো
-‘এইসব আঘাত আর গায়ে লাগে না এখন।মনের ক্ষত এর চেয়েও গভীর।আচ্ছা আমি আয়ান ভাইয়াকে দেখে আসি।
কুহু কথাগুলো বলে উঠে চলে গেল।আনোয়ারা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
-‘এই মেয়েটার যে কবে একটু শান্তি মিলবে! ছোট্ট বয়স থেকে কত কিই না গেছে মেয়েটার উপর দিয়ে।একটা ভুল মেয়েটার জীবন শেষ করে দিল।তাও এই জীবন মেনে নিয়ে সবসময় মুখটাতে হাসি ফুটিয়ে রাখে।আল্লাহ তোর জীবনে এমন কাউকে পাঠাক যে তোর জীবনটাকে সুখে সুখে ভরে রাখবে।
আনোয়ারা বেগম উরনা দিয়ে চোখের পানি মুছলো।

আহনাফ বাহিরেই দাঁড়িয়েছিল।কুহু আসতেই সে এগিয়ে গেল।কুহু বললো
-‘আপনি যেতে পারেন।আমি পেয়ে গেছি সবাইকে।
আহনাফ কপাল কুচকালো।কুহু তা দেখে বলে উঠলো
-‘আপনার এই স্বভাবটা আমার একদম পছন্দ না। কথায় কথায় কপাল কুচকান কেন?
আহনাফ বলে উঠলো
-‘আর হবে না।
কুহু ভড়কালো।এক কথায় বলে দিল “আর হবে না!” সে আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ তার দিকেই তাকিয়ে।কুহু বললো
-‘আপনি আমার পেছন পেছন ঘুরছেন কেন?আপনার এতো এতো ইগো কই গেল?
আহনাফ হাসলো।এরপর বললো

-‘আহনাফ শাহরিয়ারের নজরে পড়েছো, মেয়ে।যখন একবার ঠিক করেছি তোমাকে আমার লাগবে মানে তোমাকেই লাগবে।ইগো ফিগো গোল্লায় যাক!
কুহু একটা হাই দিয়ে বললো
-‘দেখতে থাকেন স্বপ্ন…স্বপ্ন দেখতে তো আর টাকা লাগে না।
আহনাফের ঠোঁট বেঁকে গেল।সে বললো
-‘সময় কথা বলবে….
কুহু বললো
-‘আমি ওর মুখ সেলাই করে দিব।
আহনাফ ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।কুহু একটা গা জ্বালানি হাসি দিয়ে দুই কাঁধ উঁচিয়ে চলে গেল।আহনাফ পেছন থেকে বলে উঠলো
-‘ভালোবাসা থেকে অবশেসনে রূপ নিচ্ছো তুমি।হয় আমার নাহয় কারো নয়।মাইন্ড ইট…
কুহু পেছনে না ঘুরেই বললো

-‘তাহলে কবরস্থানে দেখা হচ্ছে…
আহনাফ বোকার মতো তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ কুহুর যাওয়ার পানে।প্রচুর পরিমাণে ত্যাড়া এই মেয়ে।আহনাফ বলে উঠলো
-‘তোমাকে মারবো কে বললো?
আহনাফের দুই হাত পকেটে ঢোকানো।সে দুইদিকে ঘাড় বাঁকালো।ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি উপস্থিত।সে আবার মাস্ক পড়ে হাঁটা আরম্ভ করলো।যাওয়ার পথে রিসেপশনিস্টের সাথে আবার দেখা।বেচারা ভয়ে কি করবে বুঝতে পারলো না।হাত উঁচু করে স্যালুট জানালো আহনাফকে।আহনাফ হেসে বেরিয়ে গেল।

সন্ধ্যা সাতটা।
আহান শাহরিয়ার গ্লাসে ওয়াইন ঢাললেন।হঠাৎ বেলটা বেজে উঠলো।আহান শাহরিয়ার কপাল কুচকালেন।এই সময়ে কে এলো?ওয়াইনের গ্লাসটা টেবিলে রাখলেন তিনি।দরজা খুলতে যাবেন তার আগেই নজরে এলো রিভালবারের দিকে।সাবধানের মার নেই।তিনি রিভালবারটা উঠিয়ে নিলেন।দরজার ছোট্ট ছিদ্রটা দিয়ে উঁকি দিলেন। “আহনাফ!” আহান শাহরিয়ার থমকালেন খানিকটা।ওর আসার কারণটাও ধরতে পারলেন।রিভালবারটা রেখে দরজা খুললেন তিনি।আহনাফের তেজি আঁখিযুগল তার দিকেই।আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘কি সৌভাগ্য আমার! আহনাফ শাহরিয়ার আমার বাড়িতে! আসুন আসুন…
আহনাফ ভেতরে এলো।এরপর বলে উঠলো

-‘কেন করলে এমনটা?
-‘কেমনটা বলোতো?
আহনাফের রাগ হলো।সে বললো
-‘নাটক করবে না একদম।মাথা গরম আছে..
-‘শুধু শুধু গ্যাস খরচ করে তরকারি রান্না করলাম।তোমার মাথায় বসিয়ে দিলেই তো হয়ে যেত! দেখি দেখি..
আহান শাহরিয়ার ওর মাথায় হাত ছোঁয়ালেন।এরপরেই ঝাটকা খাওয়ার মতো সরিয়ে বললেন—“সেই গরম! ভাত’টা বসিয়ে দেই।কি বলো?”
আহনাফের রাগ আজকে অনেক।সে পাশ থেকে একটা ফুলদানি তুলে আছার মারলো।আহান শাহরিয়ার হাসলেন।আরেকটা ফুলদানি এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন

-‘নাও…
আহনাফ ছুঁড়ে মারলো ফুলদানিটা।এরপর রেগে আহান শাহরিয়ারের শার্টের কলার ধরে বলে উঠলো
-‘আপনি মজা করছেন আমার সাথে মিস্টার আহান শাহরিয়ার! আপনার জন্য আজ আমি নিজের ভালোবাসা হারাতে বসেছিলাম! কেন করলেন এমনটা?
আহান শাহরিয়ার কপাল কুচকালেন।ঠাণ্ডা স্বরে বললেন
-‘আমি কি করলাম? তুমিই তো…
-‘আপনার কোনো ধারণা আছে আজকে কি হতে পারতো! আপনার একটা ভুল ডিসিশনের জন্য আজ আবার আমি সর্বহারা হতাম।
আহান শাহরিয়ারের হৃদয়ে লাগলো কথাটা।”আজ আবার!” আহান শাহরিয়ার কিছু বললেন না আর।আহনাফ নিজেও থেমে গেল।বাবার শার্টের কলার ছেড়ে সোফায় বসে পড়লো।মাথার চুল খামছে রাগ কন্ট্রোলের চেষ্টা করলো।হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেল সে।আহনাফ তাৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তার।

-‘আই’ম সরি বাবা।আমি অতটা রুড বিহেভ করতে চাইনি।
আহান শাহরিয়ার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
-‘চুলে শ্যাম্পু করো না? এত খুশকি কেন? এত খারাপ দিন চলে তোমার যে শ্যাম্পু কিনতে পারো না!
আহনাফ হেসে ফেললো।সে চিনে তার বাবাকে।কথা ঘোরাচ্ছে সে।আহনাফ তাকে ছেড়ে দিল।এরপর বললো
-‘এগুলো খুশকি নয়। একটা বউয়ের অভাবে আমার চুলেদের আত্মচিৎকার।একটা বউ থাকলে অন্তত যত্ন করতো।
আহান শাহরিয়ার বলে উঠলেন
-‘তো করো বিয়ে।এখন কি বউমাকে তুলে আনতে হবে নাকি?
-‘আর বউমা! তোমার জন্য তোমার বউমা আজ পটল তুলতে বসেছিল।
আহান শাহরিয়ার হা হয়ে গেলেন।

-‘বলো কি! শেষ পর্যন্ত বউমাও আমার জন্য…
আহনাফ মাঝ পথেই থামিয়ে দিল তাকে।
-‘হোপ! ঐসব কিছু না।
-‘তাই বলো..! আমি আরো কিনা কি ভেবেছিলাম!
-‘নিউজ দেখো না?
-‘তোমার মাকে দেখেই আমি কাজ করার সময় পাই না।আবার নিউজ!
আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ঘরের প্রত্যেকটা জায়গাতে তার মায়ের ছবি।আহান শাহরিয়ারের ফ্ল্যাট এটা।নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর ছবি দিয়েই সাজিয়েছেন পুরো ঘর।আহনাফ সবটা বললো আহান শাহরিয়ারকে। আহান শাহরিয়ার বললেন

-‘বোমের কথাটা জানা ছিল না।ড্রাইভারকেও তো বলোনি।
-‘ গাড়িতে বোম আছে শুনলে কোন মদন ঐ গাড়ি চালাবে! তাই চেপে গিয়েছিলাম।
-‘ড্রাইভার তো মারা গেছে।
-‘বেশি পন্ডিতি না মারালেই হতো।ঐ সাখাওয়াতকে তো আমি ছাড়ছি না।এবার বাঁচলেও পরেরবার বাঁচবে না।আর তুমি জানলে কীভাবে আমার প্লান সম্পর্কে?লোক লাগিয়েছো আমার পেছনে?
আহান শাহরিয়ার চুপ রইলেন।তিনি বললেন
-‘তুমি আমার বাপ নও আমি তোমার বাপ।তোমার আগা পা/ছা সব আমার চেনা।লোক লাগাতে হয় না।
আহনাফ কিছু বললো না।এখন এই লোকের সাথে কথা বলাই ঠিক হবে না।সে গ্লাসে ঢেলে রাখা ওয়াইনটা এক চুমুকে খেয়ে
ফেললো।আহান শাহরিয়ার হাসলেন।তিনিও আরেকটা গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে একটা গান চালালেন

Hand La Glass, Glass La Scotch,
Eyes-U Full-Aa Tear-U,
Empty Life-U, Girl-U Come-U,
Life Reverse Gear-U,…
আহনাফের মুখটা দুঃখী দুঃখী হয়ে গেল।এই মেয়ে কবে বুঝবে তাকে? সে আবার ঢেলে নিল ওয়াইন।এরপর নিজেই গাইতে লাগলো
God! I’m dying now;
And she is happy…how?
Heart-break song for boys.
We don’t have a choice.
Why This Kolaveri Kolaveri Kolaveri Di, (নিজ দায়িত্বে শুনে নিয়েন)
বাপ-ছেলে সন্ধ্যা সময় মাতাল হয়ে নাচতে লাগলো যেন দুজন’ই বাচ্চা।

-‘হ্যালো, মিস্টার আয়ান! কেমন আছেন এখন?দুঃখীত সন্ধ্যা হয়ে গেল আসতে আসতে।
আয়ান হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করেছিল।হঠাৎ অপরিচিত একটা মেয়েলি স্বরে চোখ মেলে তাকালো সে।অপরিচিত একটা মুখ।মেয়েটা একগাল হেসে বললো
-‘আমি নাতাশা।আপনি চিনবেন না।আমি চিনি আপনাকে।ইশ! কি অবস্থা হয়েছে! আজকে সকালেই বোধহয় আপনাকে ডিসচার্জ করা হয়েছিল তাই না?
আয়ান হাবার মতো তাকিয়ে রয়েছে।নাতাশা তার হাতে থাকা ফুলের তোড়াটা আয়ানের দিকে এগিয়ে দিল।আয়ানের ডান হাত ঝুলানো তাই বাম হাত দিয়েই নিলো।নাতাশা বললো
-‘নিউজে আপনার ছবি দেখে আমার আত্মাটাই বেরিয়ে গিয়েছিল।কীভাবে যে এই পর্যন্ত এসেছি আমিই জানি।এরপর যখন জানলাম আপনি ঠিক আছেন তখন ফুলের তোড়াটা কিনে আনলাম।সুন্দর না? আপনার প্রিয় সাদা গোলাপ দিয়ে বানিয়ে এনেছি।

আয়ানের বুঝে আসছে না কি হচ্ছে।এই মেয়ে একা একাই কত কিছু বলে যাচ্ছে।আবার তার প্রিয় ফুল সম্পর্কেও জানে! কিন্তু এই মেয়েটা কে?আয়ান কিছু বলতে নিলে নাতাশা বললো
-‘আমি তেমন কেউ নেই।তবে হতে তো পারি তাই না?উমম…আমার ফ্রেন্ড হবেন?
নাতাশা হাত বাড়িয়ে দিল।আয়ান ভ্রু কুচকালো।সে বললো
-‘মেয়ে মানুষের সাথে আমি বন্ধুত্ব করি না।
-‘তাহলে জেন্ডার চেইঞ্জ করতে হবে বলছেন? কারণ বন্ধুত্ব তো আমি করবোই।
আয়ান খানিকটা বিষম খেল।এই কথাটা সে আশা করেনি বোধহয়।নাতাশা পানির গ্লাস এগিয়ে দিল।

-‘আরেহ্ কুল! মজা করছি আমি।
আয়ান পানি পান করে বললো
-‘কে আপনি? আমাকে চিনেন কি করে?
-‘এটা জানতে হলে বন্ধুত্ব করতে হবে।
আয়ান একটু ভেবে বললো
-‘আমার কিন্তু অলরেডি একজন আছে।আর আমি তাকেই বিয়ে করবো।
-‘তো? ভয় পাচ্ছেন নাকি আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে? যদি আমার প্রেমে পড়ে যান!
আয়ান আবার বিষম খেল। নাতাশা হেসে ফেললো।আয়ান চট করে বলে উঠলো
-‘এই আপনি মিস্টার আহনাফের ফ্রেন্ড না? হ্যাঁ, ঐদিন আপনাকে দেখেছিলাম।
-‘হ্যাঁ।তবে শুধু আহনাফের ফ্রেন্ড?আপনার ফ্রেন্ড না?
আয়ান কিছু বলতে নিলে নাতাশা ওর বাহু চাপড়ে বললো
-‘কংগ্রাচুলেশন! আপনিই আমার বাচ্চার বাবা হবেন।
-‘কিইই!!!
নাতাশা মেকি হেসে বললো

-‘মানে ঐ আরকি..বাবা.. মামা.. এক’ই তো।কেউ বাবা থেকে মামা হয় আবার কেউ মামা থেকে বাবা।
আয়ান এক ভ্রু উঁচু করে বললো
-‘এই আপনার মতলবটা কি বলুন তো?
-‘আপনার বন্ধু হওয়া।
-‘আমি আপনার ফ্রেন্ড হবো কেন?
-‘আমাকে মা বানানোর জন্য।
-‘হুয়াট..?
নাতাশা ‘চ’ সূচক শব্দ করে বললো
-‘মানুষ ফ্রেন্ড হয় কেন?
আয়ান বললো–“কেন?”
নাতাশাও এক’ই সুরে বললো
-‘কেন?
-‘হ্যাঁ সেটাই তো কেন?
-‘আপনি জানেন না?
-‘নাহ।

নাতাশা দাঁত কেলিয়ে বললো—“আমিও জানি না।”
আয়ান ফিক করে হেসে ফেললো।নাতাশাও হাসলো তা দেখে।”পাখি..না না পাখা ফাঁদে পড়েছে রে..!” নাতাশা হাত বাড়িয়ে বললো
-‘তাহলে..ফ্রেন্ডস্?
আয়ান ইশারায় ঝুলানো ডান হাতটা দেখালো।নাতাশা ওকে একটা হাগ করে বসলো।ঠিক তখন কুহু এলো।আগে আসতে চেয়েও আসেনি মেয়েটা।নিজেও রেস্ট করেছে তখন।এখন এসে একি দেখছে সে! দরজা খোলাই ছিল।আয়ানকে একটা মেয়ের সাথে এভাবে দেখে তার মস্তিষ্কে তিনবার ধুমতানানা বেজে উঠলো। ওরা দেখার আগেই সে সরে গেল। হাসপাতাল তো না যেন রঙ্গমঞ্চ! কুহু ভাবলো মামির কানে কথাটা তুলতে হবে।পরেই আবার ভাবলো এই মদনের জীবনে যে কেউ একজন এসেছে এটাই অনেক।তার আর কি! সে তো এসব রঙ্গলিলা দেখতেই এসেছে পৃথিবীতে।হাহ্! রোদ সবসময় এই আয়ানের কথা বলে ওকে ক্ষেপায়।

এবার এই কথাটা রোদকে জানাতেই হবে।কি মজা রে! কুহু নাচতে নাচতে যেতে লাগলো।এক পর্যায় উরাধুরা নাচ শুরু করে দিল মেয়েটা। অবশেষে এই আয়ান নামক ঝামেলাটা তার কাঁধ থেকে নেমে অন্যের কাঁধে উঠেছে। এটা কি সাধারণ কথা!

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৮

কুহু হঠাৎ দুই হাত সামনে এনে আর এক পা দিয়ে জোরে ফুটবলে লাথি দেওয়ার মতো বললো—“ইয়েস!” ঠিক তখন তার স্যান্ডেলটা উড়ে গেল। এদিক দিয়ে তখন আসছিলেন এমপি সাখাওয়াত আলম।পেছনে মিডিয়ার লোকজন।কুহুর স্যান্ডেলটা গিয়ে সোজা সাখাওয়াত আলমের চকচকে টাকে পড়লো। কুহু দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।চোখগোলো আন্ডা আন্ডা হয়ে গেল মেয়েটার।সাখাওয়াত আলমও থমকে গেছেন।জীবনে প্রথম জুতোর বারি খেয়েছেন কিনা! মিডিয়ার লোকজন সেটা অলরেডি ছেপেও ফেলেছে।
“এমপি সাখাওয়াত আলম খেয়েছেন জুতার বারি।ঘটনা কতটুকু সত্য জানতে সাথেই থাকুন।”

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here