প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১০

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১০
অনন্যা

-‘বিশ্বাস করুন…আমি ইচ্ছা করে করিনি…
সাখাওয়াত আলম বড্ড নরম স্বরে বললেন
-‘আরে ইটস্ ওকে মা…বসো তো তুমি..
কুহু ভয়ে ভয়ে বসলো চেয়ারটাতে।কুহু যে কেবিনটাতে ছিল তারা সবাই এখন সেখানেই রয়েছে।মিডিয়ার লোকজনও রয়েছে।সাখাওয়াত আলম বললেন
-‘তুমি ঠিক আছো তো মা? তোমার কোথাও লাগেনি তো?
কুহু একটু মেকি হাসলো এই কথা শুনে।এতো ভালোভাবে কথা বলছে! ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার নয়।মিডিয়া আছে বলেই কি এতো ভালোভাবে কথা বলছে! হতে পারে।কুহুর ভাবনার মাঝেই হারুন রহমান বললেন

-‘কি হলো মা! স্যারের কথার উত্তর দাও।
কুহু ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।সে হালকা হেসে বললো
-‘আমি ঠিক আছি।
-‘যাক তাহলেই ভালো।
কুহু মুচকি হাসলো সাখাওয়াত আলমের কথায়।সাখাওয়াত আলম উঠে দাঁড়িয়ে কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
-‘ভালো থাকো মা।আজ আসি…
কুহু চমকের উপর চমক পেয়ে যেন কথা বলতে ভুলে গেল।জুতোর বারি খেয়েও এতো ভালো করে কথা বলছে! আবার মাথায়ও হাত বুলিয়ে দিচ্ছে! কুহু হালকা হেসে বললো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘জ্বী আংকেল আপনাকেই ভোট দিব।
সাখাওয়াত আলম হো হো করে হেসে ফেললেন এটা শুনে।
-‘বড্ড রসিক মেয়ে তুমি! তোমার যাকে ভালো লাগবে তুমি তাকেই ভোট দিও।ভোটের জন্য বলিনি আমি।যাইহোক আজ আসি..
সাখাওয়াত আলম চলে গেলেন।সাখাওয়াত আলমের এরকম প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকরা বিভিন্ন ধরনের নিউজ ছাপিয়ে ফেললেন।সাখাওয়াত আলমের নরম মন নিয়ে প্রশংসা করতে লাগলেন।তার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে আজ হয়তো এই মেয়ের জেল হয়ে যেত।এরকম আরো অনেক কিছু বলতে লাগলো।
সময় লাগলো কেবিন খালি হতে।কুহু স্বস্থির শ্বাস ছাড়লো।এতো বড় একটা ঝামেলা থেকে সে বেঁচে গেল! তার কপাল এতো ভালো হলো কীভাবে?নিশ্চই সামনে এর চেয়ে বড় বাঁশ দিবে তাকে।কারণ তার ভাগ্য এতো ভালো হতে পারে না।আবার কি বাঁশ খেতে চলেছে সে খোদা জানে।টেনশনে মেয়েটা তিনবার ওয়াশরুম গেল।ভাগ্য তাকে কি বড় বাঁশ দিতে চলেছে আবার? বাঙ্গির কপাল! শা/লা ভালো কিছু হলেও চিন্তা হয়।

-‘আসসালামু আলাইকুম…
আহনাফের হুশ নেই।সে ব/মি করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় লটকে রয়েছে।আহান শাহরিয়ার মানা করা শর্তেও আহনাফ বেশি নেশা করে ফেলে।এরপর ব/মি করে নাজেহাল অবস্থা।আহান শাহরিয়ার ওকে পরিষ্কার করিয়ে দেয়।
রাত নয়টা বাজে হয়তো। বারবার কল আসায় সে রিসিভ করে।কে কল দিয়েছে তার জানা নেই।আহনাফ শুধু বললো
-‘উমমম….

আহনাফের এহেন ঘুমঘুম নেশালো স্বর শুনে রোদেলার ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো।দরকার ছাড়া তার কথা হয় না আহনাফের সাথে।শেষ ঐ যে ভার্সিটিতে কথা হলো..আর হয়নি।আচ্ছা. এই ছেলের সবকিছুই তাকে এতো মুগ্ধ করে কেন?আহনাফ ভাই কবে যেন ওকে পাগল করে ফেলবে এমন করে করে! এই স্বর সে আগামী একমাসেও কি ভুলতে পারবে!উঁহু পারবে না।আহনাফ ভাইয়ের কোনোকিছুই তো সে ভুলতে পারে না। রোদেলা আর সেসব ভাবনায় গেল না।সে বলে উঠলো
-‘আ’আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?আজ এতো তাড়াতাড়িই!
আহনাফ রোদেলার স্বর চিনলো না।তার কাছে মনে হতে লাগলো যে কুহু কল করেছে তাকে।তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। সে তার ঘুমঘুম ভারী স্বরে বলে উঠলো

-‘উমম…তিলোত্তমা..!
রোদেলা থমকে গেল।সে কি ভুল কিছু শুনলো? আহনাফ ভাই কি তাকেই বললো?সে নিশ্চিত হতে বললো
-‘জ্বী.. কি বললেন?
আহনাফ আবার ভারী স্বরে বললো
-‘তিলোত্তমা…
রোদেলা চমকালো।তিলোত্তমা! তাকে তিলোত্তমা ডাকলো আহনাফ ভাই! রোদেলার ভাবনার মাঝেই আহনাফ বলে উঠলো
-‘অ্যাই..তিলোত্তমা…!
রোদেলার ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো এই ডাকে।সে বললো

-‘হুম..
-‘ তুমি বুঝো না কেন আমাকে হুম? কবে বুঝবে আমায় বলোতো!
রোদেলা বুঝতে পারছে না কিছু যে কি হচ্ছে।সে বললো
-‘আ’আপনি ড্রিংক করেছেন?
-‘উঁহু…আমি তো ভালো ছেলে..
কথাটা বলেই আহনাফ কেমন খিলখিল করে হেসে উঠলো।রোদেলা নিজেও হেসে ফেললো।সে স্পষ্ট বুঝলো যে আহনাফ ড্রিংক করেছে।আচ্ছা..মানুষ নেশা করলে নাকি সত্য কথা বলে..আহনাফ ভাইও কি তাহলে নিজের মনের কথাগুলো বলছে তাকে?রোদেলার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল খুশিতে।পরক্ষণেই কিছু একটা মনে হতেই সেই হাসি গায়েব হয়ে গেল। সে বললো

-‘আ’আপনি কি আদেও আমাকে চিনতে পেরেছেন?
রোদেলার ভেতরের ধুকপুকানি বেড়ে গেল।আহনাফ ভাই অন্য মেয়ের নাম বলে যদি! আহনাফ তখন বললো
-‘উমম..আমার তিলোত্তমাকে আমি চিনবো না! আমার তিলোত্তমা তুমি….
রোদেলার কেমন যেন একটা লাগলো।সে বললো
-‘হুম সেটা তো বুঝলাম।আমার নামটা বলুন তো কি?
আহনাফ হেসে বলে উঠলো
-‘কি? মিসেস আহনাফ?
-‘বলুন না….
-‘জানি নাহ্।আমি শুধু এইটুকু জানি তুমি আমার তিলোত্তমা..

রোদেলার ভেতর উথালপাতার ঝড় শুরু হয়ে গেল।আহনাফ ভাইও কি তাহলে তাকে পছন্দ করে! তার চোখ চিকচিক করতে লাগলো পানিতে।এত খুশি সে কোথায় রাখবে! তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে ভালোবাসে।তার আরকি কোনোকিছুর দরকার আছে! নাহ্।রোদেলা কি বলবে না বলবে বুঝতে পারলো না।এমনকি সে কি কারণে কল করেছিল সেটাও ভুলে বসলো।আহনাফ তখন আদর মেশানো স্বরে ডাকলো
-‘অ্যাই তিলোত্তমা…!
রোদেলা লাজুক হাসলো।
-‘হুম..
-‘তোমার হৃদয়টাতে কি একটুখানি জায়গা দেওয়া যায় না আমাকে..?
রোদেলার খুব করে বলতে ইচ্ছা হলো
-‘পুরো হৃদয়জুড়ে তো আপনার’ই বসবাস, আহনাফ ভাই।নতুন করে আর কি জায়গা দিব!
আহনাফ আবার বলে উঠলো

-‘অ্যাই তিলোত্তমা..! বলো না!
রোদেলা আর কথাই বলতে পারলো না।আহনাফের ঘুমঘুম ভারী স্বর তার ভেতরে তুফান বইয়ে দিচ্ছে।
-‘আ’আমি পরে কথা বলছি..
কথাটা বলেই রোদেলা কল কেটে দিল।ফোনটা বুকের মাঝে নিয়ে লাজুক হাসলো।তার আহনাফ ভাইও তাকে ভালোবাসে।ইশ! এতো খুশি কই রাখবে মেয়েটা! রোদেলা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।রোদেলা দেখতে ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে।কত ছেলে যে প্রপোজ করে তাকে! কিন্তু সে সবাইকে রিজেক্ট করে দেয়।কারণ তার মন জুড়ে যে শুধু আহনাফ ভাই।রোদেলা বিরবির করে আওড়ালো “তিলোত্তমা!”
এরপরেই লাজুক হাসলো সে।তার এই রূপ সৌন্দর্য অবশেষে আহনাফ ভাইয়ের চোখে পড়েছে তাহলে! সবটা কুহুকে জানাতে হবে। তাৎক্ষণাৎ রোদেলার ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠলো।

-‘এই যা! আহনাফ ভাইকে যেটার জন্য কল করলাম সেটাই তো ভুলে গেছি।ঐ শা/লা এমপিকে যে আমার জানেমন কুহু জুতার বারি দিয়েছে সেটাই তো জানানো হলো না।শুনলে খুশি হতেন অনেক।আবার কল করতেও লজ্জা লাগছে।ধুর!
রোদেলা লাজুক হেসে বিছানায় গড়াগড়ি করতে লাগলো।হঠাৎ তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো।মুখের হাসি উধাও হয়ে গেল মেয়েটার

পাখির কিচিরমিচির শব্দের জায়গায় ঢোলের শব্দে আহনাফের ঘুম ভাঙলো।ধরফরিয়ে উঠে বসলো সে।চোখে ঝাপসা দেখছে সে।বাচ্চাদের মতো চোখ ডললো সে।এরপর ভারী স্বরে বললো
-‘হুয়াটস্ রং?
আহান শাহরিয়ার ঢোল বাজিয়ে নাচছিলো।নাচ থামিয়ে ভদ্রলোক আহনাফের দিকে তাকালেন।এরপর টেবিল থেকে মেডেলটা নিয়ে বলে উঠলেন

-‘সঠিক মেয়েকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বাছাই করার জন্য আহনাফ শাহরিয়ারকে সম্মাননা দেওয়া হলো।
আহনাফ ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।এদিকে আহান শাহরিয়ার আবার ঢোল বাজাতে লাগলেন।আহনাফ কিছু বলতে নিলে আহান শাহরিয়ার ফোনটা ছুঁড়ে মারলেন তার দিকে।আহনাফ ফোনের দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেল।কুহুর জুতো গিয়ে পড়েছে সাখাওয়াত আলমের চকচকে টাকে।হুয়াট অ্যা নিউজ! আহনাফ হাসবে না কাঁদবে বুঝলো না।অজান্তেই এই মেয়ে তার মনের ইচ্ছা পূরণ করে ফেলেছে।আহনাফ হেসে ফেললো।আহান শাহরিয়ারের থেকে ঢোল নিয়ে নিজে বাজাতে লাগলো।আহান শাহরিয়ার নাচতে লাগলেন।আহান শাহরিয়ার বললেন

-‘বউমা কিন্তু দারুণ চমক দিয়েছে মাইরি!
আহনাফ থেমে গেল হঠাৎ।
-‘এই.তিলোত্তমা ঠিক আছে তো? ঐ সাখাওয়াত আলম আবার ওকে কিছু করেনি তো?
আহান শাহরিয়ার হেসে উঠলেন এটা শুনে।
-‘রাজনীতি র ও বুঝো না তুমি।ও এখন কিচ্ছু করবে না।কারণ কি জানো?
আহনাফ বাবার দিকে তাকালো।এরপরেই তার হাসির সাথে তাল মিলিয়ে হেসে বলে উঠলো
-‘কারণ সামনে নির্বাচন…

দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলো।আহনাফ আবার ঢোল বাজাতে লাগলো।আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘বেস্ট বউমা অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড।আসার আগেই শুভ কাজ করে ফেলেছে।
আহনাফের ফোন বেজে উঠলো হঠাৎ।আহনাফ ঢোল বাজানো থামিয়ে ফোন হাতে নিল।সে বলে উঠলো
-‘আবার কি ঝামেলা পাকালো তোমার বউমা! ওর পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছিলাম।ওরাই কল করছে।বাবা…দোয়া-দরূদ পড়া শুরু করো…
আহান শাহরিয়ার বললেন

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৯

-‘কল রিসিভ তো করো আগে..
আহনাফ আল্লাহ আল্লাহ বলে রিসিভ করলো।গার্ড কিছু বলার আগেই আহনাফ বলে উঠলো
-‘হ্যাঁ..এবার ম্যাডাম কই পড়েছে?
গার্ড বলে উঠলো
-‘স্যার আপনি জানলেন কীভাবে?

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১০ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here