প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৪

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৪
Drm Shohag

ফাইজ এর বাবা মা গ্রামে গিয়েছে। বাড়িতে ফাইজ আর তার বোন ফারাহ।
ফাইজ, শুদ্ধ আর ইরফান ফাইজের রুমে বসে কথাবার্তা বলছে। যদিও ইরফান চুপচাপ। প্রয়োজনে দু’একটা কথা বলছে। নয়তো চুপচাপ ফোন স্ক্রোল করে। ফাইজ, শুদ্ধ তাদের মতো কথা বলছে, ইরফান কেমন এটা তো তাদের কাছে নতুন না। ফাইজ হঠাৎ বলে ওঠে,
“ইরফান তোর বাচ্চা বউকে নিয়ে থাকতে শুরু করলি যে?”
ফাইজের কথায় ইরফান চোখ তুলে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট?”

“গতকাল আমাকে এজন্যই তোর ঘরে যেতে দিলি না। আই মিন তোর বউ ছিল বলে। ঠিক বললাম না?”
ইরফান শান্ত চোখে ফাইজের দিকে চেয়ে, একটু পর দৃষ্টি সরিয়ে তার হাতে থাকা ফোনে মনোযোগ নিবন্ধ করে। বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“আই ডোন্ট লাইক হার।”
শুদ্ধ ইরফানের কথা শুনে হাসল। ফাইজ হেসে বলে,
“আমি বুঝলাম না,
আমার হবু শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ইরফানের নাম সাদিক রাখলো না কেন? ইরফান তো ভয়ংকর সত্যবাদী। শুধু মুখে যা বলে, কাজের সাথে মেলে না।”
ইরফান রেগে তাকায় ফাইজের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ফুলস্টপ দিয়ে দে। নয়তো থা’প্প’ড় খাবি।”
কথাটা বলে কানে ব্লুটুথ গুঁজে নেয়।
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ইরফানের কেস কি বোঝা তো। আমি এর আগামাথা বুঝি না।”
ফাইজ দু’হাত টানা দিয়ে বলল,
“তোর কাছে ওর কাহিনী শুনে ভেবেছিলাম বউ বাচ্চা বলে সময় নিচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে, ও জানেই না ও ওর সবচেয়ে অপছন্দের মেয়েকে দিল দিয়ে দিয়েছে, কিন্তুু সেটা এখনো নিজে বুঝতে পারছে না। অথবা বুঝতে পারলে, নিজেকে দাবানোর চেষ্টা করছে, কারণ বাচ্চা মেয়েকে ভালোবাসলে ওর নিজের কাছেই মানই’জ্জত থাকবে না ওর মতে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এরই মাঝে ফারাহ হাতে একটা ট্রেতে কফি নিয়ে আসে। প্রথমে ইরফানকে দেয়, ইরফান বিনা বাক্যে কফির কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দেয়।
এরপর ফারাহ ফাইজকে কফির কাপ দিয়ে লাস্ট কাপ টেবিলের উপর রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। শুদ্ধ দেখল সবটা। ফারাহ বেরিয়ে গেলে শুদ্ধ উঠে দাঁড়ালে ফাইজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
শুদ্ধ ফাইজের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“তোর বিয়ে পেছাতে।”
ফাইজ শুদ্ধর হাঁটু বরাবর লাথি দিতে নিলে শুদ্ধ পিছিয়ে যায়। রেগে বলে,
“তোর ঘাড়ত্যাড়া বোনকে সোজা করতে যাচ্ছি। জেনেও ঢং করিস কোন ল’জ্জায়? বোনের হবু জামাইয়ের সাথে ভিলেন গিরি করতে বাঁধে না? আসলেই লাজ’লজ্জা নেই তোদের দু’ভাইবোনের। একজন বিয়ে করতে পা’গল,, আরেকজন আমাকে ফিরিতে দিতে।”

ফাইজ রেগে গেল শুদ্ধর কথায়। এই বেয়া’দব টা সারাদিন তার বোনের জন্য তার হবু বউটাকে টেনেও খোটা দেয়। ফাইজ হাতের কাপ ঠাস করে টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো। শুদ্ধর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“ফিরিয়ে দিতে ল’জ্জা থাকা লাগে না। ছ্যাঁছড়ার মতো ঘুরে বেড়ায় যারা ওদের লজ্জা লাগা উচিৎ,, কি বুঝলি?”
শুদ্ধ মাথার চুল টেনে ধরলো। তাকে ছ্যাঁছড়া বলছে। মেজাজ বিগড়ে গেল। রেগে বলল,
“ইরফানের বউ এর এক্সাম টা শেষ হোক। এরপর বোঝাবো আমি ছ্যাঁছড়া নাকি তোরা দু’ভাইবোন। শা’লা তোদের দু’টোর আমার সাথে ভিলন গিরি করেই দিন যায়।”
ইরফানের কানে ব্লুটুথ। শুদ্ধ আর ফাইজের মাঝে এই এক টপিক নিয়ে নিয়মিত এমন কথার কাটাকাটি হয়। ইরফান এদের সাথে থাকলে বেশিরভাগ সময় কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে রাখে।
ফাইজ বিরক্ত হয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আরেক রোবট বসে আছে। আরে দু’জনের মাঝে দ্বন্দ্ব লাগলে থামানো লাগে, আর একে দেখ, রোবট কে একটা শিক্ষা দিলেও সে সেটা মানে। আর এ শালা মানুষ হয়েও রোবট প্রো-ম্যাক্স।”
ইরফান শুনলোই না এদের কথা। শুদ্ধ টেবিল থেকে কফির কাপ তুলে নেয় ডান হাতে। বা হাতে ফাইজের হাত টেনে বাইরে যেতে যেতে বলে,

“আয় তোকে দেখাচ্ছি, কে ছ্যাঁছড়া! আমি নাকি তোর ননীর পুতুল ডায়নি বোন।”
ফাইজ শুদ্ধর পিঠে থা’প্প’ড় দিয়ে বলে,
“খবরদার আমার বোনকে ডাইনি বলেছিস তো!”
শুদ্ধ পাত্তা দিল না। ফারাহ ডাইনিং এ মনমরা হয়ে বসে ছিল। তার ভাই আর ফাইজকে দেখে অবাক হয় ফারাহ। শুদ্ধ দ্রুত পায়ে এসে ফারাহের সামনে দাঁড়ায়। চোখের পলকে গরম কফি নিজের ডান হাতের উপর ঢেলে দেয়। ফারাহ চোখ বড় বড় করে তাকায়। শব্দ করে ডাকে,
“শুদ্ধ ভাই?”
ফাইজ নিজেও অবাক হয়েছে। কফি চুলা থেকে নামিয়েই ফারাহ দিয়ে এসেছিল। ফাইজ নিজেও খেয়ে আসল মাত্র। শুদ্ধর পাগ’লামিতে ছেলেটা রেগে যায়। ফারাহ টলমল চোখে চেয়ে থাকে শুদ্ধর লাল দগদগে হয়ে যাওয়া লাল হাতটার দিকে।

শুদ্ধ হাত ঝাড়া দেয় খুবই আলতোভাবে। বাম হাত চুলের ভাঁজে চালিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“ফারাহ এক গ্লাস পানি খাওয়াও তো। তৃষ্ণা পেয়েছে।”
ফারাহের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। সে উঠে দাঁড়ায় না। তার দৃষ্টি শুদ্ধর পুড়ে যাওয়া হাতটার দিকে। শুদ্ধ রেগে ফাইজের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি পাষাণ বোন বানিয়েছিস দেখ। এক গ্লাস পানি দিতেও কিপ্টামি করে।”
ফাইজ তার বোনের দিকে তাকালো। ফারাহের হাতের উপর কয়েক ফোঁটা পানি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ফারাহ কেঁদে দিয়ে বলে,
“ভাইয়া শুদ্ধ ভাইয়ের হাতে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দাও প্লিজ!”
শুদ্ধ হেসে বলে,

“সি! এই হাত ব্যান্ডেজ করানোর জন্য তোর বোন এখন কেমন ছ্যাঁছড়ামি করে দেখ।”
ফাইজ কিছু বলল না। উল্টো ঘুরে তার রুমে গেল। এদের কথা বলা উচিৎ, সে উদ্দেশ্যেই ফাইজ স্থান ছাড়লো।
শুদ্ধ ফারাহের সামনে এগিয়ে যায়। ফারাহ ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বাঁকা হয়ে বসা। শুদ্ধ ফারাহের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে মলিন হেসে বলে,
“ফারাহ? তুমি কেন বিশ্বাস কর না, আমি তোমায় ভালোবাসি?”
ফারাহ টলমল চোখে শুদ্ধর দিকে চোখ তুলে তাকায়। ভাঙা গলায় বলে,
“হাত ব্যান্ডেজ করাতে হবে শুদ্ধ ভাই।”
শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“ফারাহ, আমার হাতে জ্বালাপোড়া হচ্ছে না। বিলিভ মি,
ডান হাতের সাহায্যে বুকের বা পাশে ইশারা করে বলে, এখানে ভীষণ জ্বলছে।”
ফারাহ দু’হাতে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। ভাঙা গলায় বলে,
“তুমি মিশকা আপুকে ভালোবাসতে। আমি অনেক প্রমাণ পেয়েছি শুদ্ধ ভাই। ত.তুমি মিশকা আপুর বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলে, তোমাদের অনেক ক্লোজ পিক ছিল।”
শুদ্ধ রাগান্বিত স্বরে বলে,

“সে আমার খালাতো বোন ছিল। এজন্য এসব হয়েছে। এর পিছনে আর কোনো কারণ নেই। আর কি করলে বিলিভ করবে তুমি? আমার ভালোবাসা তোমার কাছে নাটক লাগে? বেয়া’দব মেয়ে।”
ফারাহ ফুঁপিয়ে ওঠে। শুদ্ধ ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। আবার রেগে যাচ্ছে। ফারাহ নিজেকে সামলে দু’হাতে চোখ মুছে বলে,
“শুদ্ধ ভাই হাত টা ব্যান্ডেজ কর প্লিজ! মিশকা আপু বললে তো ঠিক-ই শুনে নিতে।”
শুদ্ধ বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। রাগের চোটে পোড়া ডান হাতটা দিয়ে টেবিলের উপর শব্দ করে পাঞ্চ মারে। চিৎকার করে বলে,
“মিশকা মিশকা মিশকা, আরে ওর বয়ফ্রেন্ড জুটে গিয়েছিল,, এজন্য হেল্প করতে গিয়েছিলাম।”
ফারাহ নাক টেনে বলে,
“হ্যাঁ সেই বয়ফ্রেন্ড তো তুমি-ই।”
শুদ্ধ রাগে ফারাহের গালে থা’প্প’ড় মেরে দেয়। চিৎকার করে বলে,
“তুই ভালোবাসার যোগ্যই না। বা’লের পাত্রে ভালোবাসা ঢালছি এতোদিন ধরে।”
ফারাহ ঝাপসা চোখে শুদ্ধর দিকে তাকায়। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পিছু ফিরে যেতে নিলে শুদ্ধ ফারাহের হাত টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“এই বা’লের পাত্রেই আরও ভালোবাসা ঢালবো। ভুলেও ভেবো না ক্লান্ত হয়ে বিরহের গান গেয়ে বলব, ‘পাখি যাও চলে যাও।’ ওসব আমার দ্বারা হবে না। এতো উদার না আমি। বিরহের গান গাইতে ইচ্ছে করলে, গান গেয়ে এরপর তোমায় নিয়ে বা’সর ঘরে ঢুকব, বুঝলে?
তুমি আমার বউ হবে, আমার-ই,, ইট’স ফাইনাল।”
কথাগুলো বলে ফারাহের হাত ছেড়ে দেয়।
ফারাহ ঝাপসা চোখে শুদ্ধর দিকে আরেকবার তাকায়। শুদ্ধ গম্ভীর গলায় বলে,
“ঘরে যাও।”
ফারাহ অপেক্ষা করে না। দৌড়ে তার ঘরে চলে যায়।
ফাইজ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, পাশে ইরফান। ফারাহকে থা’প্প’ড় মারা দেখেছে তারা। ইরফান দ্রুত পায়ে এসে শুদ্ধর কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ফাইজের বোনকে এভাবে মারছিস কেন?”
শুদ্ধ ইরফানকে ধাক্কা দেয়। মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে। ইরফান রাগ, বিরক্ত ঢেলে বলে,
“মেয়েদের সাথে ঢলাঢলি করে এসে ওর বোনকে মারছিস কেন? আগে মনে ছিল না?”
শুদ্ধ অবাক হয়ে বলে,

“আরে তুইও আমাকে বিলিভ করছিস না? আমি বড় বোন ভেবে বেশি ফ্রি ছিলাম মিশকা আপুর সাথে।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“ডিজগাস্টিং এর ভালোবাসা তোদের। খেয়েদেয়ে কাজ না থাকলে যা হয়।”
কথাটা বলে বিরক্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এসব আজগুবি লাগল তার কাছে। ফাও ক’ষ্ট পায়।
শুদ্ধ রেগে বলে,
“এই ইরফানের বাচ্চার আমার চেয়েও করুণ অবস্থা হবে দেখিস।”
ফাইজ রেগে বলে,
“আমার বোনকে মারলি কেন?”
শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমার হবু বউ। যা ইচ্ছে করব। যাহ, ভাল্লাগছে না।
ও যা জ্বালিয়েছে আমায়, আরও দশটা থা’প্প’ড় দিলেও কম হবে। তাই দরদ দেখাতে আসিস না। বলেছি না, ওকে সিধে করব আমি।
তোর বোনের প্রবলেম বুঝিনা। ও সেই মিশকাকে নিয়ে পড়ে আছে। মেয়ে জাতে যে এতো প্যাঁচ যদি জানতাম, তাহলে অনুভূতি জন্মানোর আগে জঙ্গলে গিয়ে বাস করতাম। তোর বোনের জন্য জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাচ্ছে।
ত্যাড়ামি ও করবে, রেগে মারব আমি।
দাগ পড়বে ওর গালে, বুক পুড়বে আমার।”

“ভাইয়া শুদ্ধ ভাইয়ের হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়েছ?”
ফাইজ তার ঘর থেকে বেরিয়ে ফারাহের ঘরে এসেছিল। মেয়েটা তাকে দেখে কেমন উতলা হয়ে কথাটা বললো। ফাইজ মৃদু হেসে বলে,
“ও হাতের সেবা করতে যেতে নিষেধ করেছে।”
ফারাহ রেগে বলে,
“তুমি কেমন বন্ধু, নিষেধ করেছে আর বাবু হয়ে বসে আছ।”
ফাইজ ফারাহের বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে বলে,
“ঘুম পেয়েছে। ডিস্টার্ব করিস না।”
ফারাহ এগিয়ে এসে বলে,
“ইনায়ার সাথে রাশেদের সেটিং করিয়ে দিচ্ছি দাঁড়াও। এমনিতেও ইনায়া তোমাকে পছন্দ করে না।”
ফাইজ তড়াক করে চোখ মেলে তাকায় বোনের দিকে। কি রে ভাই, এরা সবাই তার বউটাকে নিয়ে কেন পড়ে। বউ না হতেই কেউ না কেউ শুধু সুতো টেনে ধরছে।

ফারাহ কথাটা বলে ধুপধাপ পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। পিছন থেকে ফাইজ রেগে বলে,
“এমন কিছু করলে তোর বিয়ে কনফার্ম পাশের বাসার ভুড়িওয়ালা নয়ন দাদার সাথে দিব। বেয়া’দব বোন। বড় ভাইকে বয়ফ্রেন্ড এর চিকিৎসা করতে বলে, না করলে তার বউ নিয়ে টানাটানি করে।
আসলেই মানুষের মাঝ থেকে লাজ’লজ্জা উঠে যাচ্ছে দিনদিন।”
ফারাহ চলে গেলে চোখ বুজে হাসল ফাইজ। শুদ্ধ আর ফারাহের ঝামেলা মেটানোর একটা স্কোপ করতেই শুদ্ধর হাত ব্যান্ডেজ করেনি সে। কিন্তুু তার বোন যে জেদি, সত্যি সত্যি তার বউ এর পিছনে লাগবে না তো? লাগলে সেও শুদ্ধকে অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। বোনটা বেয়া’দব হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।

ফারাহ ফাস্টএইড বক্স নিয়ে ভাইয়ের ঘরে উঁকি দেয়। শুদ্ধ ডান হাত মেলে বা হাত কপালের উপর রেখে চোখ বুজে আছে। মনে হচ্ছে ঘুমিয়েছে। ফারাহ পা টিপে টিপে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। বেডের পাশে দাঁড়িয়ে শুদ্ধর মুখপানে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। সময় নষ্ট না করে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসল। এরপর প্রয়োজনীয় সব ফাস্টএইড বক্স থেকে বের করে শুদ্ধর হাতের দিকে তাকায়। মনে হচ্ছে ফোসকা পড়ে গিয়েছে। ফারহার চোখের কোণ ভিজল আবারও। কাঁপা হাতে শুদ্ধর হাত ধরলে শুদ্ধ দ্রুত চোখ খুলে তাকায়। ডান পাশে মাথা রাখায় সেদিকেই বসা অবস্থায় ফারহাকে চোখে পড়ল।

ফারহা তাকায় না শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ তার হাত হাত সরিয়ে নেয়। ফারহা এবার অসহায় চোখে শুদ্ধর দিকে তাকায়। শুদ্ধ গম্ভীর মুখে ফারহার দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এরপর চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,
“তোমার ঘরে যাও।”
ফারহা নাক টেনে করুণ সুরে ডাকে,
“শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ চোখ বুজে নেয়। এই মেয়ে এমনভাবে ডাকে যেন বলবে, চলো এক্ষুনি বিয়ে করে নিই। কিন্তুু এই ত্যাড়া আসে আগলা দরদ দেখাতে, আর আসে তাকে দুর্বল করে দিতে। ফারাহের আবারও একই সুরে কণ্ঠ ভেসে আসে,
“শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ চোখ বুজেই শান্ত গলায় বলে,

“হুম।”
“হাতটা দাও প্লিজ! ব্যান্ডেজ করেই চলে যাবো।”
শুদ্ধ শক্ত গলায় বলে,
“সারাদিন বসে কাঁদলেও সেই সুযোগ পাবে না। তাই চুপচাপ বের হও।”
ফারাহ মাথা নিচু করে রইল। ঠোঁট ভেঙে আসছে।
“মিশকাকে নিয়ে কী প্রবলেম তোমার?”
ফারাহ মাথা নিচু করেই বলে,
“এখন তো আর আপুও ডাকতে হয় না। বড়, তবুও নাম ধরে ডাকছ।”
শুদ্ধ দাঁত কিড়মিড় করল। ধমকে বলল,
“যেকোনো সময় আরেকটা থা’প্প’ড় পড়ার আগেই এখান থেকে যাও।”
কথাটা বলে চোখ বুজে নেয়। ফারাহ চুপচাপ বসে রইল। হ্যাঁ, না কিছুই বলল না। বসা থেকে উঠলোও না।
“বিয়ের প্রিপারেশন নাও।”
ফারাহ নাক টেনে বলে,
“আমি তোমাকে বিয়ে করব না।”

শুদ্ধ চোখ বুজে রেখেই ঠোঁটের কোণে খুবই সামান্য হাসি রেখে বলে,
“তোমার মতামত চাইনি। প্রিপারেশন নিয়ে থাকতে বলেছি।”
ফারাহ বা হাতে চোখ মুছে নেয়। শুদ্ধ হঠাৎ অত্যন্ত রেগে ধমকে বলে,
“ফারাহ, আমি এখান থেকে তোমাকে যেতে বলেছি। আউট।”
ফারাহ ভয়ে কেঁপে ওঠে। কিন্তুু সে যাবে না, জেদ ধরে বসে রইল।
শুদ্ধ নিজেই শোয়া থেকে উঠে বাইরে যেতে যেতে বলে, “ওকে ফাইন, আমি-ই যাচ্ছি।”
ফারাহ বসা থেকে দাঁড়িয়ে আবেগী গলায় ডাকে, “শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধর পা থেমে যায়। এই মেয়েকে ঠিক কি করা উচিৎ? এভাবে ডাকবে, এক্ষুনি হাত ব্যান্ডেজ হয়ে গেলে আপনিতে উঠে আসবে, সাথে স্যার স্যার বলে মুখে ফেনা তুলবে। শুদ্ধ খুব ভালো করে জানে। সে তাকালো না পিছনে। হনহন করে বেরিয়ে যায়। ফারাহের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।
শুদ্ধ বাইরে বেরিয়ে ফাইজকে দেখল। ফাইজ এগিয়ে এসে বলে,

“আমাকে বোনকে ফিরিয়ে দিলি কেন?”
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। রেগে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
“তোমার ননীর পুতুল বোনের জন্য কোথায় জ্বলছে দেখি?”
ফাইজ বিরক্ত হলো। শুদ্ধর হাত টেনে বলে,
“ভাবলাম ভালোবেসে আমার বোন ব্যান্ডেজ করে দিলে তুই মিটিমিটি হাসবি। হলো তো উল্টো। বুঝেছি, শালার হাতের সেবা চাইছিস। আয়।”
শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
“চিকিৎসা করালে তোর বোন, আপনি আর স্যার ডেকে মুখে ফেনা তুলবে। মেজাজ খা’রা’প হয়। হাত পোড়ানোর জন্য কতদিন পর ওর তুমি, আর শুদ্ধ ভাই ডাক শুনলাম। থাক, আসছি।”
ফাইজ এগিয়ে এসে বলে,
“ইরফান চলে গিয়েছে। ড্রাইভ করতে পারবি না।”
“পারব।”
কথাটা বলে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা কান্নামাখা ফারাহের দিকে একবার তাকায়। এরপর দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।

“মাইরাকে তোমার ফুপির বাসায় রেখে আসতে হবে।”
ইরফান, তার বাবা, তার মা, আর ইনায়া টেবিলে বসে রাতের খাবার খাচ্ছিল।
তারেক নেওয়াজ এর কথায় ইরফান কিছু বলল না। মাথা নিচু করে খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
রুমা নেওয়াজ রিতাকে ডেকে বলে,
“মাইরাকে ডেকে নিয়ে আয়, এসে তুইও খেতে বসে পড়।”
রিতা মাথা নেড়ে মাইরার ঘরে যায়। কিছুক্ষণের মাঝে মাইরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। রিতা রুমা নেওয়াজ এর পাশের চেয়ারে বসে পড়লে মাইরা দাঁড়িয়ে থাকে। ইরফানের পাশের চেয়ারটাই একমাত্র ফাঁকা। ইরফানের দিকে আড়চোখে তাকায়। রুমা নেওয়াজ মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি হলো? বসছ না কেন?”
শ্বাশুড়ির কথায় মাইরা ধীরপায়ে এসে ইরফানের পশের চেয়ারে বসে পড়ে। কাঁপা হাতে প্লেটে ভাত বেড়ে নেয়। ইরফান মাথা নিচু করেই আড়চোখে মাইরার হাতের দিকে তাকায়। বিরক্ত হয়। এই মেয়ের হাত কাঁপছে তার উপস্থিতিতে, এটা তার ধারণার বাইরে নয়। মাইরা ধীরে ধীরে খাওয়া শুরু করে। ইরফানের খাওয়া শেষ। উঠতে নিলে তারেক নেওয়াজ আবারও বলে,
“আমি তোমাকে কিছু বলেছি ইরফান।”
ইরফান তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

“তুমি নিয়ে যাও।”
তারেক নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বললেন,
“আমার কাজ আছে, তোমাকেই যেতে হবে।”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“কবে যেতে হবে?”
তারেক নেওয়াজ মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“কতদিন আগে যেতে চাও আম্মু?”
মাইরা খাবার মুখে নিয়ে অবাক হয়ে বলে,
“কোথায়?”
তারেক নেওয়াজ হেসে বললেন,
“তোমার এক্সামের আর তিনদিন আছে। এসএসসি দিবে না?”
মাইরা বুঝল তার গ্রামে যাওয়ার কথা বলছে। মাথা নেড়ে বলল,
“কালকে যাই?”
তারেক নেওয়াজ ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোমার ফুপুর বাড়ি রেখে আসবে মাইরাকে। ওর বাবার বাড়ি নয় বুঝেছ?”

ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বাবার বাড়ি থাকতে তার ফুপুর বাড়ি কেন? ব্যাপারটা তার কাছে অদ্ভুদ লাগলো। সাথে রুমা নেওয়াজ, ইনায়া দু’জনেও অবাক হলো। তবে তারেক নেওয়াজ কিছু বললো না। তারাও কেউ কিছু জিজ্ঞেস করল না। মাইরা বুঝল তাকে ইরফান রাখতে যাবে। আমতা আমতা করে শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বাবা আপনি রেখে আসতে পারবেন না?”
তারেক নেওয়াজ হেসে বলল,
“আমার কাজ আছে আম্মু।”
মাইরা মন খারাপ করে খাবারে মন দিল। বাম পাশে ইরফানকে এখনো বসে থাকতে দেখে ঘাড় বাঁকিয়ে দেখল ইরফান তার দিকেই চেয়ে আছে। মাইরা ধীরে ধীরে চোখ সরিয়ে তার প্লেটে থাকা ভাতের দিকে আনে। এই লোক এমন করে তাকিয়ে থাকে কেন মাইরা বোঝে না। কি অদ্ভুদ! লাস্ট বেশ কয়েকদিন হলো শুধু গম্ভীর চোখে রোবট এর ন্যায় তার দিকে তাকিয়েই থাকে। এখনো তাকিয়ে আছে। মাইরার অস্বস্তি হয়। দ্রুত খাওয়ার চেষ্টা করে। উদ্দেশ্য খেয়েই দৌড় দিবে এখান থেকে। এই লোক তো যায় না।
ইরফান মাইরাকে নাকেমুখে খেতে দেখে রেগে যায়। কিছু বলার আগেই মাইরার কাশি উঠে যায়। ইরফান মাইরার সামনে এক গ্লাস পানি রাখে। মাইরা দ্রুত তার সামনে থেকে পানি নিয়ে খায়। নাকেমুখে ভাত উঠে গিয়েছিল। ইরফানের ইচ্ছে করল মাইরার কানের গোড়ায় কষিয়ে একটা থা’প্প’ড় দিতে। জোরে ধমক দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“থা’প্প’ড় খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকো? এ্যাই মেয়ে তুমি বাচ্চা?”
মাইরা কেঁপে ওঠে। চোখজোড়ায় পানি টলমল করছে। নাহ, ধমক খেয়ে নয়, খাবার নাকেমুখে উঠেছে বলে। ইরফান আর মাইরার দিকে সবাই চেয়ে আছে। মাইরা সবার দিকে অসহায় চোখে তাকালো। সবাই মাইরার দিকে। আর ইরফান মাইরার দিকে। মাইরা আড়চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। এই লোকটা তাকে দিন-রাত অত্যাচার করে মারে। উফ! আগেই ভালো ছিল। দু’টো থা’প্প’ড় মেরে হাওয়া হয়ে যেত, আর এখন পাশে বসে উল্টেপাল্টে ভাঁজে। মাইরা ধীরে ধীরে ইরফানের দিকে তাকায়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“আপনি যান।”
“হোয়াই?”
মাইরা তার সামনে বসা ইনায়ার দিকে তাকিয়ে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“আপু তোমার এই অস’….তার শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে থেমে যায়। তার ছেলেকে কিছু বললে আবার তাকে ধমক খেতে হয়। অতঃপর মেকি হেসে বলল,
“আপু তোমার খাওয়া শেষ হয়েছে?”
ইনায়া তার ভাইয়ের দিকে তাকায়। ইরফান চোখমুখ শক্ত করে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। খাওয়ার মাঝে বারবার কথা বলছে, তার ভাই মাইরাকে এখনো যে থা’প্প’ড় মারেনি এই ঢের। ইশারায় দেখাল, ‘চুপচাপ খাও।’
মাইরা বিরক্ত হয়ে বলে,
“তেমার ভাইয়াকে আমি ভয় পাই না বুঝলে? সবসময় আমায় ভেজে খাওয়ার ধান্দায় থাকে। তোমার ভাইয়াকে…”
ইরফান গমগমে গলায় ধমক দেয়,

“সাট আপ।”
কানের কাছে এমন রামধমক খেয়ে মাইরা চোখ বুজে কেঁপে ওঠে। তারেক নেওয়াজ গম্ভীর মুখে চেয়ে আছে। রুমা নেওয়াজ এর চোখে বিরক্তি। ইরফান দ্রুত উঠে গটগট পায়ে চলে যায়। এরপর রুমা নেওয়াজ সহ তারেক নেওয়াজ ঘরে চলে যায়। তারেক নেওয়াজ এর মুখে হাসি ছিল। ঘরে গেলে তার স্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলে,
“তোমার আবার কি হলো? ছেলে, ছেলের বউ, এখন তুমিও সব জুটেছে পা’গ’লের দল।”
তারেক নেওয়াজ কিছু বললো না। একটু পর আফসোসের সুরে বলে,
“আমার ছেলেটা আমার মতো হতে পারলো না। আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি বলি, ভেবে দেখো।”
রুমা নেওয়াজ কটমট চোখে স্বামীর পানে চাইলেন। “তোমার ছেলের বউ যেমন বাঁচাল, তোমার ছেলে প্রয়োজনেও কথা বলে না। বিয়ের আগে দেখোনি এই মেয়ে এতো কথা বলে? দুই মেরুর দু’জন জুড়ে দিয়েছ। ইরফান এমনই, ওর পাশে জাহারা বসে এভাবে খাবার খেয়ে গলায় বাঁধলে, বা এমন বাঁচাল হলে ধমক খেয়ে বসে থাকতো। বেশি ভাবা বাদ দাও। নয়তো দেখবে তোমার ছেলে মেয়েটাকে হঠাৎ-ই ওর বাপের বাড়ি রেখে এসেছে একবারে। তখন তুমি শ্বশুর হয়ে ছ্যাঁকা খেয়ে বসে থাকবে।”
তারেক নেওয়াজ এর মুখ চুপসে যায়। ইরফানের মা মিথ্যা কিছু বলেননি। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। যদি নেগেটিভ কিছু হয়, তাহলে সে নিজেই হয়তো নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না। ছেলেটার এমন খাপছাড়া স্বভাব এতোদিন মানলেও আজ কেন যেন তিক্ত লাগলো। মাইরার সাথে খা’রা’প কিছু হলে এর মাত্রা বাড়বে বই কমবে না।

মাইরা রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইরফানের খবর নেই তো। কোথাও বেরতে নিলে মেয়েদের না-কি লেট হয়। আর এখানে ইরফানের লেট হচ্ছে। মাইরা হাতের ব্যাগ নিয়ে ঢং করে করে এপাশ-ওপাশ করে হাঁটছে। আপাতত কেউ নেই ডাইনিং-এ। চুপ থাকার মেয়ে তো সে নয়। ইরফান উপর থেকে নেমে এসে মাইরাকে এভাবে একা একা ঘুরতে দেখে বিরক্ত হয়। মাইরার পিঠ হঠাৎ-ই ইরফানের সাথে ধাক্কা খায়। মাইরা দ্রুত পিছন ফিরে ইরফানকে দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“স্টুপিট বাঁদর।”
মাইরা চোখ তুলে তাকিয়ে বলে,
“আর আপনি লেট লতিফ।”

ইরফান বিরক্ত হয়ে এগিয়ে যায়। পিছু পিছু মাইরা যায়। সবার থেকে বিদায় নেয়া শেষ।
ইরফানের পাশের সিটে বসে মাইরা। মেয়েটার মন খারাপ ভীষণ মায়ের জন্য। তার বাড়ি যাবে না সে। বাবা থাকলে নিশ্চয়ই জোর করে নিজের মেয়েকে তার বাড়ি নিয়ে যেত। বিষন্ন মনে মেয়েটা রাস্তার দিকে চেয়ে থাকে। দু’হাত গাড়ির জানালায় ঠেকিয়ে রেখেছে। অনেকটাই বাইরে বেরিয়ে আছে। ইরফান মাইরাকে এমন চুপচাপ দেখে ড্রাইভ করার মাঝে একটু পর পর তাকায়। খেয়াল করল মাইরার দু’হাতের বেশ অনেকটা বাইরে বেরিয়ে আছে। রেগে যায় সে। ডান হাত স্টিয়ারিং-এ রেখে বা হাতে মাইরার বাহু ধরে জোরে টান দেয়। এতো জোরে টান খেয়ে মাইরা পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। ইরফান আবারও সম্পূর্ণ মনোযোগ ড্রাইভিং-এ দেয়। মাইরা রেগে বলে,
“আপনার কি প্রবলেম? ডান হাতের বাহু ডলতে ডলতে বলে, হাত দু’টো মনে হয় সরকারি পেয়েছে, উফ!”
ইরফান রেগে বলে,
“সাট আপ, স্টুপিট বাঁদর।”

মাইরা বিরক্ত হয়ে আবারও জানালার দিকে তাকালে দেখল কাচ তুলে দেওয়া। মাইরার মন খারাপ হয়ে যায়। কি সুন্দর হাওয়া খাচ্ছিল, এই লোকটা ভেস্তে দিচ্ছে। ঘাড় বাঁকিয়ে মিনমিন করে বলে,
“কাচ টা একটু নামিয়ে দিন না!”
ইরফানের গম্ভীর স্বর, “নো।”
মাইরা মুখ ভেঙচি কাটে। কিছুদূর গেলে রাস্তার পাশে ফুসকা দেখে দ্রুত ইরফানের দিকে তাকায়। বলার চগেই মুখ চুপসে যায়। এই লোক তাকে কিছুই করতে দেয় না। এমন পাষাণ লোক এই দুনিয়ায় আর দু’টো আছে না-কি তার সন্দেহ। তবুও ক্ষীণ আশা নিয়ে বলে,
“ইনায়া আপুর ভাইয়া?
মাইরার সম্মোধনে ইরফান অদ্ভুদচোখে তাকায় মাইরার দিকে একবার। মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“আপনি আমাকে বউ মানেন না, আমিও আপনাকে স্বামী মানি না। তাই এটা বলছি। পছন্দ হয়নি?”
ইরফান রেগে বলে,

“স্টুপিট, যাস্ট সাট আপ। নয়তো থা’প’ড়ে গাল লাল করব।”
মাইরা গালে হাত দিয়ে মিনমিন করে বলল,
“একটু ফুসকা খাওয়াবেন? প্লিজ! আমি আপনাকে করলা ভাজি করে খাওয়াবো, প্রমিস।”
ইরফান ব্রেক কষে মাইরার দিকে চেয়ে ধমকে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা ধমক খেয়ে ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। জিভেয় কা’ম’ড় দেয়। করলা তো তার পছন্দ। এই লোকের অপছন্দ। ভুলভাল বলে ফেলেছে। মাইরা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
“আমি ফুসকা খেতে চাই, প্লিজ! আপনাকে পছন্দের খাবার-ই খাওয়াবো। আপনার কাপড় কেচে দিব আপনি চাইলে, তাও ফুসকা খাওয়ান।”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরা ভাবে হয়তো ফুসকা আনতে গিয়েছে। মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বিড়বিড় করে, “যতটা খা’রা’প ভাবি, ততটা না।”

দু’মিনিটের মাথায় ইরফান গাড়ির দরজা খুলে সিটে বসে। মাইরা ইরফানের হাতের দিকে তাকালে দেখল ফুসকা নেই, কিন্তুু ছোট কিছু একটা। ইরফান গম্ভীর মুখে স্কচটেপ এর উপর থেকে কাগজ ছিঁড়লে মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান তার দিকে তাকালে মাইরা তার ঠোঁট চেপে ধরে। দরজার সাথে চেপে যায়।
ইরফান মাইরার দিকে এগোলে মাইরা বা হাতে তার ঠোঁট চেপে ডান হাতে ইরফানের বুকে হাত দিয়ে ঠেলে সরাতে চায়। চুনোপুঁটি শরীরের মাইরা তো এমন বলিষ্ঠ শরীরের ইরফানের সাথে পারে না। ইরফান মাইরার দু’হাত একসঙ্গে তার বা হাতের মুঠোয় চেপে ধরে। নির্বিকার চিত্তে ডান হাতের সাহায্যে মাইরার মুখে স্কচটেপ লাগাতে নিলে মাইরা চিৎকার দিয়ে বলে,
“না না, প্লিজ! আর কথা বলব না। প্রমিস, প্রমিস।”
বলতে বলতে ইরফানের গলার কাছে তার মুখ নিয়ে ঠেকায়। যেন ইরফান তার মুখে স্কচটেপ লাগাতে না পারে। সেভাবেই বিড়বিড় করে,
“আর কথা বলব না, স্যরি স্যরি, ছেড়ে দিন।”
ইরফান চোখ বুজে শ্বাস টানে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“স্টুপিট!”
এরপর ঢোক গিলে মাইরার দু’হাত ছেড়ে মেয়েটাকে তার থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। সরে এসে তার সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস টানে। ডান হাতে শার্টের দু’টো বোতাম খুলে আলগা করে দেয়। বা হাতে স্টিয়ারিং শক্তহাতে চেপে ধরে।
মাইরাকে ধাক্কা দেয়ায় মেয়েটার মাথা গাড়ির কাচের সাথে ধাক্কা লাগে। মাইরা বা হাতে মাথা ডলে। ভীত চোখে ইরফানের দিকে তাকায়।
কিছুক্ষণ পর ইরফান চোখ খুলে মাইরার দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৩

“যাস্ট আর একটা কথা বললে, এই স্কচটেপ এর পুরোটা মুখে লাগাবো,, স্টুপিট।”
এরপর এসি ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
মাইরা সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে নেয়। মনে মনে বিড়বিড় করে,
‘একটু ফুসকা খেতে চাওয়ায় কি করল, কি পা’ষা’ণ! উফ! দা’জ্জা’ল লোক একটা।’

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৫