প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৫

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৫
Drm Shohag

গাড়ির ঝাঁকুনিতে মাইরার ঘুমন্ত মুখ হেলে কাচ এর সাথে গিয়ে লাগে। সময় যত যায়, মেয়েটার মাথা তত ধাক্কা লাগে কাচের গায়ে। ইরফান একবার তাকায় মাইরার পানে। এরপর গাড়ির ব্রেক কষে। মাইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার মাথা বামদিকে সরিয়ে দেয়। মাইরার বন্ধ চোখের কোণে ছিঁটেফোঁটা পানির কণা চোখ এড়ায় না ইরফানের। ভ্রু কুঁচকে যায় তার। মাইরা একটু নড়েচড়ে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালে তার মুখের সামনে ইরফানকে দেখে ভ’য় পেয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে চিৎকার দিতে গেলে ইরফান ডান হাতে মাইরার মুখ চেপে ধমকে বলে,

“স্টুপিট, এটা রাস্তা। চিৎকার করছ কেন?”
মাইরা ঢোক গিলে। পলক ঝাপটা দেয় বারকয়েক। ইরফান শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
“কেঁদেছ কেন?”
মাইরা অবাক হয়ে তাকায়। বারবার চোখের পাতা ফেলে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান রেগে বলে,
“স্পিক আপ।”
মাইরা ধমক খেয়ে কেঁপে ওঠে। দু’হাত তুলে ইরফানের হাত তার মুখ থেকে সরানোর চেষ্টা করে। ইরফান নিজেই তার হাত সরিয়ে নেয়। মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ইরফান গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দেয়। আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে কিছু খোঁজায় ব্যস্ত হয় খানিক। কাঙ্ক্ষিত জিনিস হয়তো চোখে পড়ে। গাড়ি থেকে নেমে গটগট পায়ে সামনের দিকে যায়।
মাইরা জানালার দিকে তাকালে দেখল বিকেল গড়িয়েছে। ধরায় সন্ধ্যা নামবে ভাব। কিছুক্ষণের মাঝেই তার পাশের দরজা খুলে যায়। মাইরা ভ্রু কুঁচকে তাকানোর আগেই তার কোলের উপর ইয়া বড় ফুসকার প্যাকেট রাখে ইরফান। শুধু ইয়া বড় নয়, দোকানে হাফ বস্তার মতো যে প্যাকেট ভরে ফুসকা রাখে দোকানদার,, সেই প্যাকেট তার কোলের উপর। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ভাবনার মাঝেই ইরফান অপর পাশে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান সিল্ট বেল্ট লাগিয়ে মাইরার পানে তাকায়। মেয়েটাকে এমন অস্বাভাবিকভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হোয়াট?”
মাইরা কথা বলতে ভুলে গিয়েছে। কোনোরকমে নিজের মাঝের বিস্ময় দমিয়ে বলে,
“এতোগুলো ফুসকা এনেছেন কেন?”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“স্টপ ক্রায়িং, অ্যান্ড ফিনিশ ইট।”
বিস্ময়ে মাইরার মুখ খানিক হা হয়ে যায়। এই লোকটা কি কোনোভাবে ভেবেছে, সে ফুসকার জন্য কেঁদেছে? সে ফুসকার জন্য কাঁদবে কেন? নিজ বাড়ির জন্য মন খারাপ হয়েছিল, তাই হয়তো অজান্তেই চোখের কোণে পানি জমেছিল। আর এই লোক দোকান তুলে এনেছে। মাইরা বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“আপনি কি পা’গ’ল?”
পা’গ’ল বলায় ইরফান রেগে তাকায়। মাইরা ইরফানের দৃষ্টি দেখে আমতা আমতা করে বলে,
“এগুলো দিয়ে আসুন। এতোগুলো কিভাবে খাবো?”
ইরফান গাড়ি স্টার্ট দেয়। মাইরা বিরক্ত হয়ে বলে,

“ফুসকার বাকি আইটেম কোথায়?”
“ভেতরে সব আছে।”
“ওই ভ্যানটা তুলে আনলেই পারতেন।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলল,
“গাড়িতে জায়গা হবে না।”
মাইরা দু’হাতে এতো বড় ফুসকার প্যাকেট ধরে তার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। আপাতত তার খাওয়ার সাধ মিটে গেছে। সে ভাবছে গ্রামে গিয়ে একটা কবিরাজ দেখানোর ব্যবস্থা করবে ইরফানকে। সত্যি সত্যি যদি জ্বিন ধরে থাকে তবে সেটা ছাড়াতে হবে।

ইরফানের ফুপি ঘরের দরজা খুলে সামনে ইরফান আর মাইরাকে দেখে হাসে। তার ভাই ফোন করে বলেছে ইরফান আর ওর বউ আসছে। মাইরা তাদের গ্রামের হওয়ায় ইরফানের ফুপির সাথে মাইরার বেশ ভালোই সখ্যতা আছে। কিন্তুু মাইরার হাতে এতো বড় ফুসকার প্যাকেট দেখে অবাক হয়ে বলে,
“কি রে মাইরা, তুই ফুসকার দোকান তুলে এনেছিস কেন?”
মাইরা ভেতরে যেতে যেতে বলে,
“আমি আনিনি গো খালাম্মা। তোমার এই ভাতিজা এনেছে।”
শুদ্ধর মা ঘরের দরজা আটকে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুই এনেছিস? তুই তো এসব খাস না। কি করবি এতোসব?”
ইরফান কিছুটা বিব্রতবোধ করল ফুপির কথায়। মাইরা টেবিলের উপর বড় প্যাকেট রেখে এসে বলে,
“খালাম্মা তোমার ভাতিজাকে একটা কবিরাজ দেখানোর ব্যবস্থা কর তো। জ্বিন ধরছে হয়তো।”
ইরফান রেগে বলে,

“হোয়াট রাবিশ!”
মাইরা ইরফানের দিকে তাকায়। ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে মুখ একটুখানি করে রাখে। শুদ্ধর মা ইরফানের গালে হাত দিয়ে বলে,
“আজ থাকবি কিন্তুু।”
ইরফান গলা ঝেড়ে বলে,
“আমার কাজ আছে ফুপি। যেতে হবে।”
শুদ্ধর মা রেগে বলে,
“কাল শুক্রবার। আজ থেকে যেতে হবে, বুঝলি?”
পিছন থেকে মাইরা বলে,
“খালাম্মা উনার অনেক কাজ। তুমি বুঝতে পারছ না! নিঃশ্বাস নেয়ার সময় নেই।
এরপর ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
আপনি চাইলে এক্ষুনি যেতে পারেন।”
শুদ্ধর মা চোখ ছোট ছোট করে তাকায় মাইরার দিকে। এগিয়ে এসে বলে,
“ক’দিনেই স্বামীর এতো খোঁজখবর রাখতে শিখেছিস?”
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায়। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর গম্ভীর গলায় বলে,
“আমি থাকছি ফুপি।”

ইরফানের কথা শুনে মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখে ইরফানের দিকে তাকায়। লোকটা তাকে শুধু ধমকায়। গেলেই তো ভালো হতো। থাকতে চায় কেন। অতঃপর অসহায় কণ্ঠে বলে,
“আপনি থাকবেন কেন?”
ইরফান রেগে বলে,
“থা’প্প’ড় দিয়ে তোমার দাঁত ফেলতে, স্টুপিট।”
মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখটা নামিয়ে এদিক-ওদিক চোখ ঘোরায়।
ইরফান তার বরাদ্দকৃত ঘরের দিকে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বলে,
“এক কাপ ব্ল্যাক কফি দিও ফুপি।”
ইরফান ঘরে গেলে তার ফুপি মাইরার হিজাবের উপর দিয়ে কান টেনে ধরে। মেকি রেগে বলে,
“আমার ভাতিজার পিছে এভাবেই লাগিস না-কি সারাদিন?”
মাইরা দাঁত কেলিয়ে হাসে। কোমড়ে হাত দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলে,
“এমন মানুষকে জ্বালাতে অনেক মজা খালাম্মা জানো? যদিও তোমার ভাতিজা একটু বেশিই রাগী, কিন্তুু আমি এভাবেই চালিয়ে নিই।”

শুদ্ধর মা হেসে বলে,
“তা কয়টা থা’প্প’ড় খেলি এ পর্যন্ত আমার ভাতিজার পিছে লাগতে গিয়ে?”
মাইরা থতমত খেয়ে যায়। থা’প্প’ড় তো ভালোই খেয়েছে। অসহায় মুখে শুদ্ধর মায়ের দিকে তাকালে তিনি হেসে বলেন,
“কম কথা বলবি ওর সামনে। বেশি কথা বলা পছন্দ করে না ও। আর আমি এখন আর তোর খালাম্মা হব না।”
“তাহলে কি হবে?” মাইরার কপালে ভাঁজ পড়ে।
“ইরফানের ফুপি হলে, তোর কি হবো?”
“ফুপি-ই তো।”
“তাহলে এই নামেই ডাকবি।” মাইরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
“এখন হাতমুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে নে।”
“কোন ঘরে যাব?”
“যার জন্য এ বাড়ি এসেছিস, তার ঘরেই যাবি। আর কার ঘরে যাবি?”
মাইরা ঢোক গিলে বলে,
“প্লিজ, আমাকে একটা ঘর দাও।”

“ঘর নেই, যা ও ঘরে। একটু পর শুদ্ধ আসবে। তোদের পরপরই রওয়ানা দিয়েছে ও।”
মাইরা অসহায় মুখ করে বলে,
“তোমার ঘরে নামাজ টা পড়তে দাও।”
“আচ্ছা যা, নামাজ পড়ে নে আমার ঘরে।”
এই বলে তিনি রান্নাঘরের দিকে যায়। মাইরা চিন্তিত বদনে শুদ্ধর মায়ের ঘরে যায়।
নামাজ শেষে ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে যায় মাইরা। শুদ্ধর মা মাইরার হাতে কফির কাপ দিয়ে বলে,
“এটা ইরফানকে দিয়ে আয়।”
মাইরা কাপটা হাতে নেয়। যেতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে পিছু এসে বলে,
“খালাম্মা, করলা নেই তোমাদের?”
“আবার খালাম্মা?”

“ওহ, স্যরি স্যরি ফুপি। করলা আছে?”
শুদ্ধর মা গরম তেলে মাছ ছেড়ে দিয়ে চুলোর আঁচ কিছুটা কমিয়ে মাইরার দিকে ফিরে বলে,
“এখনো কাঁচা করলা খাওয়া ছাড়িস নি?”
“আমার ভালো লাগে। দাও না! ও বাড়িতে পাইনি। খেতেও পারিনি।”
ভদ্রমহিলা চোখের ইশারায় দেখিয়ে দিলে মাইরা সেখান থেকে দু’টো করলা ডান হাতে তুলে নেয়। পাশেই ছোট্ট একটা ব্লেন্ডার চোখে পড়ে। কিছু একটা মাথায় আসে। দ্রুত ব্লেন্ডারের সাহায্যে একটা করলা ব্লেন্ড করে নেয়। শুদ্ধর মা তাকালেন না মাইরার দিকে। এই মেয়েকে গ্রামের মোটামুটি সবাই বেশ ভালোই চেনে। এর মধ্যে শুদ্ধর মায়ের সাথে বেশি ভাব ছিল। যা এখনো আছে।
মাইরা ব্লেন্ড করা করলার কিছুটা কফির মগে ঢেলে দেয়। বাকিটা সে নিজেই এমনি খেয়ে নেয়। এরপর একটা চামুচ এর সাহায্যে কফিটা একটু ঘেটে নেয়। এখানে আর দাঁড়ায় না। দ্রুতপায়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে পা বাড়ায় ইরফানের ঘরের দিকে। ডান হাতে একটা কাঁচা করলা নিয়ে একটু পর পর কা’ম’ড়ে খায়।
ইরফান ঘরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। মাইরা ভেতরে উঁকি দিয়ে বলে,
“আপনার কফি।”
ইরফান পিছন ফিরে তাকায়। মাইরাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কাম।”

মাইরা ধীরপায়ে এগিয়ে যায়। মনে মনে হাসছে। তার নাহয় করলা ফেভরিট, কিন্তুু ইরফানের ভীষণ অপছন্দের। ইনায়া আপুর থেকে শুনেছে। মাইরাকে মিটমিট করে হাসতে দেখে ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? হাসছ কেন?”
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায়। দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে, “এম.এমনি।
হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, এই নিন আপনার কফি।”
ইরফান মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে কফির কাপ নিল। মাইরা মেকি হেসে ঘর থেকে বেরোনোর জন্য পা বাড়ায়, এখানে না থাকাটাই তার জন্য এখন ভালো।
ইরফান কফির মগে চুমুক দিয়ে ছিঁটকে ফেলে দেয় চুমুক দিয়ে নেয়া মুখের কফিটুকু। মাইরা উল্টো ঘুরেই বুঝল কাহিনী খতম। দৌড়ে দু’পা এগোলেও আর এগোতে পারেনা। ইরফান মাইরার হাত টেনে ধরেছে। মাইরার অসহায় লাগলো। সে পালাতে পারে না কেন এই লোকটার থেকে? এখন কি করবে তাকে? ইরফান মাইরাকে টেনে তার সামনে দাঁড় করিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“করলা মিশিয়েছ কেন?”

মাইরা অবাক হয়। সে খুব সামান্য করলা মিশিয়েছিল। এই লোক এক চুমুকেই ধরে ফেলল? কি সাংঘাতিক নাক, মুখ!
ইরফান রেগে হাতের কাপ ছুঁড়ে ফেলল। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান মাইরার মুখ চেপে উপর দিকে তুলে রাগান্বিত চোখে তাকায়। দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “স্টুপিট গা..
তখন-ই মাইরা খুকখুক করে কেশে ওঠে। তার মুখের ভেতর কাচা করলা ছিল তা ছিঁটকে বেরিয়ে আসে। মুখটা একদম ইরফানের দিকে থাকায় মুখের ভেতর থাকা করলা ছিঁটকে বেরিয়ে ইরফানের দিকেই যায়। সেসময় ইরফান গার্ল বলতে মুখটা হা করে, ঘটনাক্রমে মাইরার মুখ থেকে করলা ছিঁটকে সরাসরি ইরফানের মুখের ভেতর যায়।
মাইরা, ইরফান দু’জনেই হতভম্ব! মাইরার চোখ বড়বড় হয়ে যায়। ইরফান হা করা মুখ বন্ধ করে নেয়। শক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে থাকে। মাইরা বারবার ঢোক গিলছে। আজ সে খতম।

ইরফান মাইরার মুখ থেকে হাত সরালো। তবে মাইরার হাত ছাড়লো না। এগিয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে মুখ থেকে করলা ছুঁড়ে ফেলে। রাগে শরীর জ্বলছে। মাইরাকে টেনে জানালা বরাবর দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। ডান হাতে মাইরার পেট শক্ত হাতে চেপে রাখে। বাম হাতে জানালার গ্রিল মুঠো করে ধরে।
এরপর জ্বলন্ত চোখে মাইরার চেখে চেয়ে হিসহিসিয়ে বলে,
“আই সোয়ার স্টুপিট গার্ল, আই উইল যাস্ট কিল ইউ।”
মাইরা এবার সত্যিই ভয় পাচ্ছে। কান্নামাখা গলায় বলে,
“স.স্যরি! আমি ইচ্ছে করে কাশিনি, বিশ্বাস করুন।”
মাইরার মুখে এখনো কিছুটা করলার অংশ আছে। যার ফলে কথাগুলো জড়িয়ে যায়। ইরফান হাতের স্থান পরিবর্তন করল। জানালা থেকে বা হাত নামিয়ে সে হাতে মাইরার পেট ধরে জানালার সাথে চেপে রাখে, ডান হাত উঠিয়ে মাইরার মুখের ভেতর থেকে এসব অখাদ্য জোর করে বের করে দেয়, যেন কোনো ছোট বাচ্চা অখাদ্য ভুল করে মুখে নিয়েছে, তাই জোর করেই শক্ত হাতে বের করল।

মাইরা মুখে ব্য’থা পেয়েছে। ডান হাত উঠিয়ে ইরফানের কাঁধে হাত দিয়ে ঠেলে ইরফানকে তার থেকে দূরে সরাতে চায়। তবে তার হাতে আধখাওয়া করলা ইরফানের চোখে পড়ে। অদ্ভুদভাবে মাইরার হাতে ধরে রাখা আধখাওয়া করলার দিকে চেয়ে থাকে। ডান হাতে নিজেই নিজের মাথার চুল টেনে ধরে। হঠাৎ-ই আবারও মাইরার মুখ শক্তহাতে চেপে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“এ্যাই স্টুপিট গার্ল, তুমি কি গরু? এসব অখাদ্য খেতে রুচিতে বাঁধে না?” ইরফানের কণ্ঠে রাগের পাশাপাশি কিছুটা বিস্ময় মিশে আছে।
মাইরা মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে,
“নিজে গ’ণ্ডার হয়ে আমায় গরু বলছে।”
ইরফান মাইরার হাত থেকে আধখাওয়া করলা টা নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। মাইরা মাথা তুলে বলে,
“ওটা ফেললেন কেন? আমার করলা খেতে ভালো লাগে।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

“তা তো লাগবেই। গরুদের এসব-ই ভালো লাগে। স্টুপিট।”
মাইরা তার দু’হাত দিয়ে ইরফানের হাত তার পেটে থেকে সরাতে চায়, ইরফান ধমকে বলে,
“স্টুপিট গার্ল, চুপচাপ থাকো। নয়তো থা’প’ড়ে সব দাঁত ফেলব।”
মাইরা অসহায় চোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হাত সরান, আমার পেট ফেটে গেল।”
ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। মাইরা তার পেটে হাত বুলিয়ে ঘর থেকে যেতে নিলে ইরফান মাইরার বাহু টেনে অত্যন্ত কঠোর স্বরে বলে,
“আর একবার যদি এসব অখাদ্য খেতে দেখেছি, তবে বেহিসাব থা’প্প’ড় পড়বে এই দু’গালে, স্টুপিট।”
মাইরা মাথা নিচু করে মুখ বাঁকায়। তার পছন্দের খাবার সে খাবে। অস’হ্য লোক একটা। তার জীবনটা কেমন বন্দী বন্দী লাগে ইদানীং। হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে।
ইরফান মাইরার হাত ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। মাইরা ইরফানকে ভেঙচি কেটে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

মাইরা ডায়নিং টেবিলের চেয়ারে বসে ফুসকা খাওয়ায় ব্যস্ত। পুরো প্যাকেট টেবিলের উপর রাখা। বাটিতে কিছু অংশ নিয়ে মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে মেয়েটা। চেয়ার উপর দু’পা তুলে ভাঁজ করে বসেছে। প্রায় অর্ধেক এর একটু কম পরিমাণে খাওয়া শেষ। একটা বাটিতে কাঁচা মরিচ এনেছে। ফুচকা সাজিয়ে তার উপর একটা মরিচ দিয়ে খায়, একদম ঝাল ছিল না এগুলোয়, তাই এই বুদ্ধি করেছে।
চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। চোখ থেকে দু’এক ফোঁটা পানিও পড়ছে। তবে মুখের এক্সপ্রেশনে বোঝা যাচ্ছে সে বেশ তৃপ্তি করেই খাচ্ছে।
মাইরার কথা হলো, ঝাল খাবে, চোখ দিয়ে পানি পড়বে, মুখচোখ লাল হবে, এটাই তো মজা। নয়তো ঝাল খেয়ে লাভ আছে?

খাওয়ার মাঝে হঠাৎ-ই সামনে চোখ পড়লে দেখে ইরফান তার সামনে দাঁড়িয়ে রেগে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাইরার ফুসকা চিবানো অফ হয়ে যায়। অসহায় মুখেচোখে তাকায় ইরফানের দিকে। আবার কি করল? মেয়েটা মাথা নিচু করে মুখের ফুচকা গিলে নিল। আড়চোখে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল এখনো সেভাবেই চেয়ে আছে। এবার মাইরার গড়াগড়ি করে কাঁদছে ইচ্ছে করছে। এই লোকটা একটুও শান্তি দিচ্ছে না তাকে।
ভাবনার মাঝেই ইরফান এগিয়ে এসে ফুসকার প্যাকেটটা নিয়ে বাইরে যেতে নেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। দ্রুত চেয়ার থেকে নেমে ইরফানের হাত টেনে ধরে। ইরফান রেগে পিছু ফিরে তাকায়। মাইরা ইনোসেন্ট মুখে নাক টেনে বলে,
“প্লিজ, দিয়ে দিন ফুসকা গুলো আমায়। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এগুলো?”
ইরফান রেগে বা হাতে মাইরাকে টেনে তার সামনে দাঁড় করিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এগুলো সব খাবে?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“আমি..
ইরফান রেগে বলে,

“তুমি স্টুপিট গরু।”
মাইরা মাথা উঁচু করে রেগে বলে,
“একদম আমাকে গরু বলবেন না।”
পিছন থেকে শুদ্ধ বলে,
“কি রে, তোরা আবার মারামারি করছিস না-কি?”
ইরফান বিরক্ত চোখে তাকায় গেটের দিকে। মাইরাও পিছু ফিরে তাকায়। শুদ্ধকে মাইরা ইরফানের সুবাদে চিনেছে। আগে শুদ্ধ শহর থেকে গ্রামে আসলে এ বাড়ি আসতো না, তাই আগে শুদ্ধকে চিনতো না। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে হাতের প্যাকেট শুদ্ধর হাতে দিয়ে বলে,
“ফেলে দিয়ে আয় এগুলো।”
মাইরা শব্দ করে বলে ওঠে,
“না ভাইয়া ফেলবেন না প্লজ!”

শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। এটা তো দোকানদারের সম্পদ। ইরফানের হাতে কেন বুঝল না। ইরফান রেগে মাইরার হাত ধরে টেনে তার ঘরের দিকে নিয়ে যায়। মাইরা নিজেকে ছাড়াতে চায়, তবে ইরফানের সাথে পারে না। পিছু ফিরে বলে,
“ভাইয়া প্লিজ, ওগুলো ফেলবেন না। আমার হার্ট ওগুলো।”
শুদ্ধ হেসে ফেলে। মেয়েদের হার্ট ফুসকা। ইন্টারেস্টিং! রান্নাঘর থেকে শুদ্ধর মা বেরিয়ে এসে ছেলেকে দেখে বলে,
“তুই আবার কোথা থেকে ফুসকা আনলি?”
শুদ্ধ এগিয়ে এসে প্যাকেট টা টেবিলের উপর রেখে বলে,
“আমি আনিনি মা। ইরফানের বউ খাচ্ছিল হয়তো। তাই ইরফান ফেলে দিতে বলল আমাকে।”
শুদ্ধর মা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ইরফান-ই তো এসব এনেছে। ফেলতে বলবে কেন?”
এরপর প্যাকেটটার দিকে নজর পড়লে অবাক হয়ে বলে,
“মেয়েটা এতোগুলো খেয়ে নিয়েছে? ওর পেট কুলোবে না তো! কেমন পা’গ’ল মেয়ে দেখ!”
শুদ্ধ ভ্রু কোঁচকালো। ইরফান-ই কিনেছে। আবার ইরফান-ই ফেলতে বলছে। কিছু একটা ভেবে শব্দ করে হেসে ফেলল। শুদ্ধর মা ভ্রু কুঁচকে বলে,

“হাসছিস কেন?”
শুদ্ধ তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“এবার তোমাকে নিয়ে যাব সাথে। ছেলের সাথে একটু শহরেও থাকার অভ্যেস কর।”
“এতো পারব না।”
“এতো কিছু জানি না। ইরফানের বউ এর এক্সাম শেষ হলে তুমিও যাবে। আমি নিয়ে যাব। এটাই ফাইনাল।”
“আমার শহরে দমবন্ধ লাগে বাপ।”
শুদ্ধ কিছু একটা ভেবে বলল,
“আচ্ছা, শহরে তোমার জন্য একটা ছোট গ্রাম বানাবো। হবে না?”
শুদ্ধর মা হেসে ফেলল শুদ্ধর কথায়। গালে হাত দিয়ে বলল,
“হাতমুখ ধুয়ে ইরফানকে নিয়ে খেতে আয়।”

মাইরা শুদ্ধর মায়ের ঘরে বসে আছে। তখন ইরফান তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বইয়ের মাঝে বসিয়ে রেখেছিল। একটু এদিক-ওদিক তাকালে রামধমক দিয়েছে। তার একটুও ইচ্ছে নেই ওই লোকের সাথে থাকার। শুদ্ধর মা মাইরার পাশে বসে বলে,
“যা গিয়ে শুয়ে পড়।”
মাইরা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
“ও খালাম্মা, স্যরি স্যরি, ফুপি আমাকে তোমার সাথে থাকতে দাও। তুমি তো একাই থাকো। তোমার ভাতিজা আমায় সহ্য করতে পারে না।
এক মিনিট এক মিনিট, তোমার ভাতিজাই আমাকে ও ঘরে থাকার ব্যাপারে মানবে না।”
লাস্ট লাইনটা বলার সময় মেয়েটার মুখে ব্যাপক হাসি মিশে ছিল।
শুদ্ধর মা হেসে বললেন,
“আমি মানিয়ে রেখে আসব। আয় আমার সাথে।”

মাইরার মুখটা আবারও ভোতা হয়ে যায়। ওই লোকের সাথে একঘরে থাকবে? কীভাবে সম্ভব?
শুদ্ধর মা মিটিমিটি হাসছে। এদের সম্পর্ক কেমন সেটা খুব ভালোই জানেন। স্বামী-স্ত্রী এভাবে আলাদা থাকলে সম্পর্ক কি স্বাভাবিক হয়? একসাথে থাকলে নাহয় ধীরে ধীরে দু’জন দু’জনকে মানবে। মাইরার হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামালো। এরপর ইরফানের ঘরের সামনে গিয়ে ডাকে,
“ইরফান?”
ইরফান দরজা খুলে বলে,
“কিছু বলবে ফুপি?”
শুদ্ধর মা হেসে বলে,
“তোর বউকে রাখ।”

কথাটা বলে তার ঘরে চলে যায়। মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মেঝেতে পায়ের নখ খুঁটছে। এই লোকের সাথে থাকতে হবে জানলে বাসাতে ঢুকতোই না, তার কোনো এক বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে থাকতো।
ইরফান গম্ভীর মুখায়বে মাইরার দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এরপর মাইরার পাশ কাটিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়। মাইরা পিছু ফিরে দেখল। এই ঘর সোজা শুদ্ধর ঘরের দিকে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বুঝল শুদ্ধর সাথে থাকবে বলে বেরিয়েছে। এরপর সেও ঘরের ভেতর যায়।
এদিকে ইরফান শুদ্ধর ঘর পাস করে বাকি যে তিনটে রুম আছে, সবগুলোর সামনে যায়। প্রতিটা ঘরে তালা লাগানো। মেজাজ বিগড়ে গেল। এই কাজ যে শুদ্ধর খুব ভালো করে বুঝল। পিছিয়ে এসে শুদ্ধর দরজার সামনে দাঁড়ায়। গম্ভীর গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“শুদ্ধ? ওপেন দ্য ডোর।”
ভেতর থেকে শুদ্ধ শুয়ে শুয়ে ফোন চালায় আর মিটিমিটি হাসে। ইরফান দরজার ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পায় না। বুঝল এই বেয়া’দব টা কে বলে লাভ নেই। রেগে দরজায় একটা পাঞ্চ মারে। চরম বিরক্তির শ্বাস ফেলে ধুপধাপ পা ফেলে নিজের ঘরে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
মাইরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ইরফানকে এভাবে ঠাস করে দরজা লাগাতে দেখে কেঁপে ওঠে। চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। অতঃপর শুকনো মুখে বলে,

“আপনি এখানে আসলেন কেন? আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না। প্লিজ আপনি যান।”
ইরফান ঝড়ের বেগে মাইরাকে ওয়াশরুমের দরজার সাথে চেপে দাঁতে দাঁত পিষে শক্ত গলায় বলে,
“যাস্ট একটা কথা বললে, এই মুখ আজ রাতেই নিজ হাতে সেলাই করব আমি, স্টুপিট।”
মাইরা ভীত চোখে তাকায়। ইরফানের বাদামী চোখের মণিতে যেন অগ্নিশিখা জ্বলছে। চোয়াল শক্ত হয়ে আছে ছেলেটার। মাথার ঘাড় সমান ঝাঁকড়া চুলের কিছু অংশ কিছুটা কপাল ছুঁয়েছে। যেটা মাইরার ভীষণ বিরক্ত লাগলো। ইচ্ছে করল টেনে সব চুল ছিঁড়ে ফেলতে। মাইরা ইরফানের চোখের দিকে তাকালে দেখে ইরফান গম্ভীর চোখে তার দিকেই চেয়ে। মাইরার কেমন অদ্ভুদ লাগে। এই লোক এতো অস্বাভাবিক কেন? এমন চোখ সে এর আগে ছানি পড়া লোকদের দেখেছিল। কিন্তুু এই লোকের চোখে তো ছানি পড়েনি, তবুও কেমন বিলাইয়ের মতো চোখ। আর চুলের কথা তো বাদ-ই দিল। মাইরা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, এই চুল সে কেটেই ছাড়বে। এর বিনিময়ে দশটা থা’প্প’ড় খেলেও ভালো। তাও এই লোককে মানুষ বানিয়েই ছাড়বে।
ইরফান মাইরাকে হাবার মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত কণ্ঠে ধমকে বলে ওঠে,

“হোয়াট?”
মাইরা কিছুটা কেঁপে ওঠে। ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নেয়। মিনমিন করে বলে,
“দূরে সরুন প্লিজ! কথা বলবো না।”
ইরফান শান্ত চোখে তাকায়। মাইরাকে ছেড়ে লম্বা শ্বাস ফেলে। এরপর বিছানায় গিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ে।
মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। লোকটা হুটহাট তাকে চেপে ধরে। মাইরা বিরক্ত। বুঝল না, বিরক্তি কার উপর, এই লোকটার উপর না-কি তার অদ্ভুদ অনুভূতির উপর। বারবার হাই তুলছে। সে ঘুমাবে কোথায়? বিছানায় তাকালে দেখল অপর পাশ ফাঁকা। ইরফান এক সাইডে শুয়েছে। চোখের উপর ডান হাত রাখা। মাইরা অসহায় চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গেল। সে না ঘুমিয়ে কোথায় থাকবে? নিচে থাকা যাবে না। তার ঠাণ্ডা লাগে, কিন্তুু এই লোকটার পাশে থাকবে? যদি ঘুমের মাঝে এই লোক তাকে তুলে ছুঁড়ে ফেলে? ঘুমের চোটে তাকাতে পারছে না।
ভাবনা রেখে ধীরে ধীরে বিছানায় কোণায় উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ল। জীবনে কোনো ছেলের সাথে থাকেনি।আজ কীভাবে স্বাভাবিক হয়ে থাকবে? সে বোধয় পারবে না। আরেকটু চেপে যায় কোণার দিকে। চাপতে চাপতে ঠাস করে খাট থেকে পড়তে নিলে ইরফান মাইরাকে টেনে রাগান্বিত স্বরে বলে,

“স্টুপিট, সাপের খেলা দেখাতে এসেছ?”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। সাপের খেলা মানে? কি অদ্ভুদ কথাবার্তা!
ইরফান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে মাইরার হাত ছেড়ে তার জায়গায় সরে এসে ডান কাত হয়ে চোখ বুজে নেয়।
মাইরা ভোতা মুখে চেয়ে থাকে। পিঠ ফিরিয়ে রাখা ইরফানের দিকে রেগে তাকিয়ে বিড়বিড় করে দু’চারটে কথাও শোনায়। চোখে ঘুম আচ্ছামতো ভিড় করায় মেয়েটা কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে যায়।
ইরফানের চোখ একটু লেগেছিলে, কিন্তুু নাকে কেমন সুড়সুড়ি লাগায় যা একটু চোখ লেগেছিল, সব ছুটে গিয়েছে। দ্রুত চোখ মেলে তাকায়। মুখের সামনে এতোগুলো চুল দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তার। ঘুরে তাকাতে নিলে মনে হয় তার হাতের উপর ভারি কিছু। মাথা উঁচু করে তাকালে দেখতে পায় মাইরা তার বাম বাহু বালিশ বানিয়ে আরামে ঘুমিয়ে আছে। মাথার অর্ধেক চুল তার এপাশে।

ইরফান ঠাস করে তার উঁচু মাথা বালিশে রাখল। বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে ডান হাতে কপাল স্লাইড করতে লাগলো। ইচ্ছে করল এই মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিতে। কিন্তুু তার ইচ্ছেকে আপাতত চেপে ধরল। কারণ জানে না। ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসল। মাইরাকে মাইরার বালিশে শুইয়ে উঠে দাঁড়ালো। তাকালো না একবারো মাইরার দিকে। হনহন করে ওয়াশরুমে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে ইরফান। বিছানায় চোখ পড়লে দেখল মাইরা নিজের বালিশ রেখে তার বালিশে উল্টো হয়ে শুয়েছে।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৪

তবে বডি মাইরার জায়গায়ই। চুলগুলো কোমড়ের নিচ পর্যন্ত পিঠ ছড়িয়ে আছে।
ইরফান অদ্ভুদভাবে তাকালো। এভাবে কে ঘুমায়? মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাবাডি খেলছে।
ইরফানের মেজাজ হাই লেভেলের খা’রা’প হলো। ইচ্ছে তো করল, একে এক্ষুনি সপাটে কয়েকটা থা’প্প’ড় দিয়ে ঘুমানোর স্টাইল শেখাতে। বিড়বিড় করল,
“স্টুপিট বাঁদর। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নেও বাঁদরামি করছে।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৬