প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৮

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৮
Drm Shohag

ইরফান অফিস থেকে ফিরলো। গ্রাম থেকে ফিরে ওইদিক দিয়ে একেবারে বাবার অফিসে গিয়ে মিটিংয়ে অ্যাটেন্ড করেছে। ভার্সিটি থাকায় অন্যদিনগুলোয় তাদের ব্যবসা তার বাবা-ই দেখে। শুক্র-শনিবার পুরো টাইমটা সে তাদের অফিসে দেয়।
নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার আগে কি মনে করে ডান দিকে ঘাড় ঘোরায়। কিছু একটা ভেবে সেদিকে এগিয়ে গেলে পিছন থেকে রুমা নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ও ঘরে যাচ্ছ কেন?”
ইরফানের পা থেমে যায়। কপালে বিরক্তির ভাঁজ। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে পিছু ফিরে তার মায়ের দিকে তাকালে রুমা নেওয়াজ ছেলেকে দেখে বিস্ময় চোখে তাকালেন। ছেলের চুল কোথায়? ইরফান মায়ের এমন দৃষ্টিতে বিরক্ত। যেই তাকে দেখছে তার-ই এমন বিস্ময় দৃষ্টি যেমন তাকে বিব্রত করছে, তেমনি বিরক্তিরা ঘিরে ধরছে। রুমা নেওয়াজ এগিয়ে এসে থেমে থেমে বলেন,

“তোমার চুল..”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলল,
“আমার ঘরে দ্রুত কফি পাঠিয়ে দাও আম্মু, প্লিজ এই অদ্ভুদ বিহেভিয়ার করা বন্ধ কর।”
এই বলে পাশ কাটিয়ে উপরে যেতে নিলে ইনায়া সামনে দাঁড়িয়ে হেসে ডান হাতের তিন আঙুলের সাহায্যে ইশারায় বলে,
“তোমাকে দারুণ লাগছে ভাইয়া। মাইয়ার ভাষায় হিরো।”
ইরফান মাইরার নাম শুনে ইনায়ার দিকে থমকানো দৃষ্টিতে তাকায়। ডান হাতে দু’বার কপাল স্লাইড করে ঢোক গিলে। ইনায়া ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। ইরফান লম্বা শ্বাস টেনে বিরক্তি কণ্ঠে বলল,
“ডিসগাজটিং কথাবার্তা অফ কর। কফি দিয়ে যা। ফাস্ট।”
ইনায়া হেসে মাথা নাড়লো। ইরফান পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে যায়। ইনায়া তার মায়ের দিকে তাকালে দেখল তার চোখেমুখে এখনো বিস্ময়। এগিয়ে এসে বলে,
“আম্মু?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেয়ের ডাকে রুমা নেওয়াজ এর ধ্যান ভাঙে। ঝাপসা চোখে ইনায়ার দিকে তাকায়। ইনায়া মায়ের চোখে পানি দেখে অবাক হয় না। যখন বাবা মায়ের ছেলেমেয়েরা তাদের কথা শোনে না, তখন তারা যেমন ক’ষ্ট পায়, সেই ছেলেমেয়েই যখন ওই একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে তখন বাবা মায়ের চোখেই সবার আগে আনন্দের অশ্রু জমে।
ইনায়া মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে মায়ের চোখজোড়া মুছে দিয়ে বলে,
“তোমার বউমার কেরামতি এটা বুঝলে?”
রুমা নেওয়াজ অবাক হয়ে বলে,
“মাইরা করেছে?”
ইনায়া হাসতে হাসতে তার মাকে সব বলল। রুমা নেওয়াজ চোখে পানি নিয়েই মৃদু হাসলেন। তিনি রান্নাঘরের দিকে গেলে ইনায়া মনমরা হয়ে সোফায় বসে। ফুপির কাছে কল করেছিল সে, ভাইয়া মাইরাকে খুব বাজেভাবে মেরেছে, ব্যাপারটায় ইনায়া ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। মাইরা তার ভাইকে মানুষ ঠিক-ই করে দিয়ে যাবে। মাঝখান থেকে মাইরা না হাওয়া হয়ে যায়, ভাবতেই তার নিজেরই কেমন যেন ভীষণ কষ্ট হলো। মায়ের ডাকে ধ্যান ভাঙে। তার মাকে কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে দাঁড়ালো। মায়ের থেকে কফির কাপ নিয়ে ভাইয়ের ঘরে যায়।

“ভাইয়া তোমার কফি।”
ইরফান তার ইজি চেয়ারে বসে ছিল ঘর অন্ধকার করে। ইনায়া ঘরের লাইট জ্বালিয়ে এগিয়ে যায়। ইরফান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে এসে ইনায়ার হাত থেকে কফি নেয়। ইনায়া অবাক হয়ে তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ইরফান যেমন এসেছিল তেমনি আছে। অর্থাৎ ফ্রেশ হয়নি। এটা ইনায়ার জন্য স্বাভাবিক হলেও ইরফানের জন্য না। ইরফান পারলে দরজার বাইরে একটা ওয়াশরুম রেখে দিত, যেন বাইরে থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বাড়ি ঢোকা যায়। সেটা তো সম্ভব না, তবে ইরফান বাইরে থেকে ফিরে সবার আগে ওয়াশরুমে যায়, সেখানে আজ বসে রেস্ট নিচ্ছে। ইনায়া ভাবুক ভঙ্গিতে তার ভাইয়ের দিকে চেয়ে আছে।
ইরফান কফির কাপে চুমুক দিয়ে ইনায়াকে ভ্যাবলার মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
“হোয়াট?”
ইনায়া মাথা নাড়িয়ে বলে,
“কিছু না। কথাটা বলে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দু’পা এগিয়েও থেমে যায়। আবারও ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“ভাইয়া একটা কথা বলতে চাই।”
ইরফান ইজি চেয়ারে বসে গা এলিয়ে দিয়ে বলে,

“হুম।”
ইনায়া জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“ফাইজ ভাই বিয়ের পর যদি আমাকে মারে তাহলে তুমি কি করবে?”
ইরফান ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইনায়ার দিকে। অতঃপর বলে,
“মারবে না। চিন্তা করিস না। মারলে ওর পানিশমেন্ট হবে।”
ইনায়া মৃদু হেসে বলে,
“যদি রেগে সবসময় ধুপধাপ মেরে দেয়। হাজার পানিশমেন্ট দিয়েও সেটা শুধরাতে না পারে।”
ইরফান ডান হাতে কফির কাপ ধরে রেখে চোখ বুজে বা হাত চোখের উপর রাখে। এরপর গম্ভীর গলায় বলে,
“তোর বাবা ভাই বেঁচে আছে। তাই ও তোকে মারার আগে একশবার ভাববে। ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে পড়তে বোস, যা।”

মাইরা এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। ইরফানের কপালে ভাঁজ পড়ে ইনায়ার আচরণে। তবে চোখ মেলে তাকায় না। ইনায়া হাসি থামিয়ে হঠাৎ-ই মলিন গলায় বলে,
“মাইরার বাবা ভাই নেই বলেই ওকে তুমি মারো, বুঝি? একশবার তো দূর একবারো ভাবো না। আমার মতো মাইরার বাবা ভাই থাকলে তুমি মাইরাকে মারার আগে ভাবতে, তাই না ভাইয়া?”
ইনায়ার কথা শুনে ইরফান চোখ মেলে স্তব্ধ চোখে ইনায়ার দিকে তাকায়। ইনায়া আর কিছু বলে না। ঘর থেকে বেরতে নিলে ইরফান ইজি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। হাতের কফি টেবিলে রেখে গম্ভীর গলায় বলে,
“বাঁদরামি করলে তোকে মারার ট্রেনিং আমি নিজেই ফাইজকে দিব।”
ইনায়ার পা থেমে যায়। উল্টো ঘুরে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,

“মাইরার কি দোষ? ও তো তোমার চুল কেটে তোমার উপকার-ই করেছে। আম্মু কত খুশি হয়েছে। আর তুমি মেয়েটাকে মেরে দিলে।”
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ওই স্টুপিট এই কারণে মা’র খায়নি। ওর হয়ে সাফাই গাইলে এবার তোর গালে থা’প্প’ড় পড়বে।”
ইনায়া অবাক হয়ে বলে,
“তাহলে কেন মে’রে’ছ?”
ইরফান ধমক দিয়ে বলে,
“সেটা তোর ফ্রেন্ডের থেকেই শুনে নিবি। এখন বের হ এখান থেকে। ডিস্টার্ব করিস না। আউট।”
ইনায়া ভাইয়ের রাগ দেখে একটু ভ’য়ই পেল। সাহস করে অনেক কিছুই বলে ফেলেছে। আর না বলুক। দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

ইরফান ঘরের লাইট অফ করে দেয়। দরজা আটকে গায়ের শার্ট খুলে ফেলে। ওয়াশরুমে গিয়ে একটা লম্বা শাওয়ার নেয়। এরপর উদাম গায়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। শরীর ঠিক করে মুছেনি, মাথাও মুছেনি। ঘাড় বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। ইরফানের চোখেমুখে বিরক্তি। সবকিছুই বিরক্ত লাগছে। অস’হ্য লাগছে। লাস্ট মাইরাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে আসল। বারবার সেটাই চোখের সামনে ভাসছে। ব্যাপারটায় ইরফান বিরক্ত, চরম বিরক্ত। তার মনে হয়, মেয়েটা তাকে ঘুমিয়েও জ্বালাচ্ছে। গতকাল রাতে দু’টো ঘুমের ওষুধ খেয়েছে, অথচ ঘুমিয়েছে সকালে এক থেকে দুই ঘণ্টার মতো। এখনো চোখে ঘুম নেই। উল্টে ওই মেয়ে এসে জ্বালাচ্ছে। আর নেয়া যাচ্ছে না। মেজাজ টা হাই লেভেলে উঠছে।
কতক্ষণ এপাশ-ওপাশ হাঁটাহাঁটি করল। কয়েকটা সিগারেট পোড়ানো শেষ। হঠাৎ মাথায় আসে মেয়েটা সারাদিন শুধু ঘুমাচ্ছিলো কেন? শরীরে কিছুই তো নেই। শুধু বাঁদরামি করে বেড়ায়, থাকবে কি করে। বিড়বিড় করল, “স্টুপিট।”
ঘরে গিয়ে তার ফোন নিয়ে শুদ্ধকে কল করে। রাত ১২ টা পেরিয়েছে। এতো রাতে শুদ্ধ ইরফানের কল পেয়ে রিসিভ করল। ভেবেছে কোনো প্রয়োজন। শুদ্ধ সিরিয়াস হয়ে বলে,

“হ্যাঁ বল।”
ইরফান জিভ দিয়ে সিগারেটে পোড়া শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ভেজায়। কি বলবে? কল কেন দিল? এসব ভেবে মাথা আরও বিগড়ে যাচ্ছে। ওপাশ থেকে শুদ্ধ কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখল লাইনে আছে এখনো। ভাবলো নেটওয়ার্ক প্রবলেম হয়ত। তাই ঘর থেকে বাইরে বের হয়। অতঃপর বলে,
“শুনতে পাচ্ছিস? বল?”
ইরফান অনেক ভেবেচিন্তে বের করল, মাইরা মেয়েটা কেমন আছে এটা জানতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তুু কিভাবে জিজ্ঞেস করবে? সে কেন জানতে চাইছে। বা হাতে মাথার চুল টানলো খানিক। অস’হ্য এক য’ন্ত্র’ণা হচ্ছে যেন।
শুদ্ধ কোনো সাড়া না পেয়ে বলে,
“কি রে? আছিস না গেছিস?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,

“আছি।”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কি বলবি? ভার্সিটির ব্যাপারে? আমি কালকে বিকেলে আসছি।”
ইরফান কিছু বলে না। সে খুব চেষ্টা চালায় এটা বলতে, মেয়েটা কেমন আছে,, কিন্তুু সফল হলো না। অতঃপর বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“ওকে বাই।”
শুদ্ধ দ্রুত বলে,
“আরে ওয়েট ওয়েট কাটিস না।”
ইরফান কান থেকে ফোন সরাতে গিয়েও সরালো না। আবার কোনো কথাও বললো না। শুদ্ধ এপাশ থেকে মিটিমিটি হাসছে। ইরফান হেয়ালি করার মানুষ না। আসলেই কোনো প্রয়োজন হলে ফটাফট বলে দিত। এ তো মাইরার জন্য চিন্তায় শেষ হয়। অথচ স্বীকার করবে না, মুখ দিয়েও বের করবে না। ভাবনা রেখে অত্যন্ত সিরিয়াস কণ্ঠে বলে,
“ইরফান জানিস কি হয়েছে? তোর বউ এর তো মারাত্মক জ্বর এসেছে ভাই।”
কথাটা শোনা মাত্র ইরফানের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটে ওঠে। ভীত স্বরে বলে,
“এক্ষুনি হসপিটালে নে। গো ফাস্ট।”

শুদ্ধ কোনোরকমে হাসি আটকে আবারও সিরিয়াস কণ্ঠে বলে,
“গ্রাম তো। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। হসপিটালেও নিতে পারছি না।”
ইরফানের কণ্ঠে রাগ, তবে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“আর ইউ ম্যাড? ওকে এক্ষুনি হসপিটাল নিবি। টু মিনিট’স এর মাঝে নিয়ে যাবি।”
শুদ্ধ মুখে হাত বুলিয়ে বলে,
“আরে পসিবল না। এটা গ্রাম। তুই ঘুমা। মা-ও ঘুমিয়েছে বুঝলি। তাই আমি-ই মেয়েটাকে সারারাত জলপট্টি দিয়ে দিই। ডক্টর বলল, শরীর মুছে দিলে ভালো হবে। এটাও আমাকেই করতে হবে। এখন রাখছি বুঝলি…”
ইরফান হুংকার ছেড়ে বলে,
“হোয়াট দ্য হেল?”
শুদ্ধ মুখ চেপে হাসি আটকালো। কোনোরকমে বলল,
“বাই বাই। অনেক কাজ করতে হবে সারারাত।”
ইরফান আগের চেয়েও চিৎকার করে বলে,
“আই সোয়ার, তোর হাত কেটে ফেলব আমি।”
শুদ্ধ দ্রুত ফোন কেটে দেয়। সাথে সাথে ইরফানের কল আসে। শুদ্ধ ফোন সুইচ অফ করে দেয়। এতোক্ষণের চেপে রাখা হাসি সব উগলে দিল। হাসতে হাসতে পেট ব্য’থা হয়ে গিয়েছে। একে জ্বালানো এতো সহজ হয়ে গিয়েছে আল্লাহ। আগে তো লোহা দিয়ে বারি দিলেও এর হেলদোল ছিল না। আর এখন দু’টো কথা বললেই কেমন রিয়েক্ট করে।

বিড়বিড় করে, ‘স্পেশাল পার্সন বলে কথা।’
মাইরা পানি খেতে এসেছিল। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শুদ্ধ কে এভাবে পাগলের মতো হাসতে দেখে মেয়েটা ভ্রু কোঁচকালো। এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আপনি হাসছেন কেন ভাইয়া?”
মাইরার গলা পেয়ে শুদ্ধ হাসতে হাসতেই পিছু ফিরে তাকায়। কোনোরকমে হাসি আটকে বলে,
“অদৃশ্য প্রেম প্রেম ভাব,
প্র্যাক্টিক্যাল প্রেমের অভাব!”
মাইরা বোকা চোখে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রইল। কিছু বুঝল না। শুদ্ধ এসব রেখে বলে,
“মাইরা, তুমি এখনো ঘুমাওনি?”
মাইরা মাথা নেড়ে বলে,
“পড়ছিলাম। এখন ঘুমাবো।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“এতো পড়তে হবে না। এক্সাম এর আগে আমার মায়ের দোয়া পড়ে ফু দেয়া এক গ্লাস পানি খেলে তুমি ফাস্ট হয়ে যাবা, বুঝলে?”
মাইরা জোরপূর্বক একটু হাসল। মাথা নেড়ে বোঝালো বুঝেছে। তবে কিছু বলল না। চুপচাপ তার ঘরের দিকে চলে গেল।

ইরফান সমানে শুদ্ধর ফোনে কল করছে, বারবার ফোন সুইচ অফ দেখায়। এরপর সে তার ফুপির নাম্বারে কল করে, সে কল রিসিভ হয় না। তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। রাগে ফোন আঁচড়ে ফেলল। বারবার এপাশ-ওপাশ পায়চারি করল। স’হ্যই হচ্ছে না এই অশান্তি। দ্রুত ঘরে এসে রেডি হয়ে নেয়। বেলকনি থেকে ফোন কুড়িয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়।
সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ প্রায় দু’ঘণ্টায় এসেছে। শুদ্ধর বাড়ির সামনে নেমে দ্রুতপায়ে এগিয়ে আসে।
শুদ্ধ আজ ঘুমায়নি। বাইরে গাড়ির আওয়াজ পেয়ে একপ্রকার লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়ে। এমনিতেই গ্রাম, তার মাঝে রাত বাজে দু’টো। একটা পাতা পড়লেও সে শব্দ আসবে, সোখানে গাড়ি এসেছে। শুদ্ধ এক প্রকার দৌড়ে গেট খুলে সামনে ইরফানকে দেখে, যে এক্ষুনি তাদের বাসার বেল বাজাতে যাচ্ছিল।
শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে তাকায়। সে মজা করল, ভাবলো সারারাত বউ এর জন্য একটু ছটফটাক। ওমা এ তো সরাসরি এখানে চলে এলো! বিস্ময় কণ্ঠে বলে,

“তুই? এতো রাতে?”
ইরফান বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“ও কোথায়?”
শুদ্ধ ঢোক গিলল। সে মিথ্যা বলেছে জানলে এ তো তাকে কাঁচা-ই চিবিয়ে খাবে। শুদ্ধর উত্তরের অপেক্ষা না করে শুদ্ধর পাশ কাটিয়ে দ্রুত ভেতরে চলে যায় ইরফান। শুদ্ধ দরজা লাগিয়ে পিছু ফিরলে ইরফানকে তার মায়ের ঘরের দিকে যেতে দেখে বলে,
“আরে মাইরা এই ঘরে, হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয়।”
ইরফান রেগে শুদ্ধর দিকে তেড়ে আসতে নিয়েও শুদ্ধর দেখিয়ে দেয়া ঘরে যায়। ভেতরে গিয়ে ঘরের লাইট জ্বালায় দ্রুত। চোখের উপর হঠাৎ এতো আলো পড়ায় মাইরা চোখমুখ কুঁচকে নেয়, তবে ঘুম ভাঙে না। ইরফান বড় বড় পা ফেলে এসে মাইরার কপাল চেক করে। স্বাভাবিক লাগলো। এরপর গলার ভাঁজে হাত দিয়ে চেক করে, স্বাভাবিক। মাইরার দু’হাত তার দু’হাতে ধরল। তাপমাত্রা স্বাভাবিক। ফ্যান ছাড়া। মাইরার শীতও লাগছে না। মাইরাকে স্বাভাবিক দেখে ইরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
এরপর ঘরের লাইট অফ করে ঘর থেকে বেরিয়ে শুদ্ধর ঘরে যায়। শুদ্ধ ইরফানকে দেখে মেকি হেসে বলল,
“নয়া নয়া প্রেম, ভালো লাগছে। চালিয়ে যা।”

ইরফান শুদ্ধর কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তুই কি করে জানলি ও ওই ঘরে?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আরে এটা না জানার কি আছে?”
ইরফান জ্বলন্ত চোখে চেয়ে বলে,
“তুই ওকে টাচ করেছিলি?”
শুদ্ধ অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। তাকে এই ইরফান ভাবে টা কি? একটু মজাও করা যাবে না। অতঃপর মৃদু হেসে বলে,
“আরে আমার সেবাতেই তো একটু আগে জ্বর ছেড়ে সুস্থ হলো। আমি বেশ দয়ালু বুঝলি? তাই সেবা না করে থাকতে পারিনি।”
কথাটা বলার সাথে সাথে ইরফান শুদ্ধর মুখ বরাবর একটা ঘুষি দেয়। শুদ্ধ নাক ডলে, সেনসিটিভ জায়গায় এমন শক্ত ঘুষি খেয়ে বেচারার চোখ জলে ভরে উঠল। ইরফান আবারও এগিয়ে আসলে শুদ্ধ ইরফানকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“আরে মারছিস কেন? বুক কি বেশি জ্বলছে?”
ইরফান বিরক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে শুদ্ধর দিকে। এগিয়ে গিয়ে শুদ্ধর কলার শক্তহাতে টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তুই আর এ বাড়িতে আসবি না।”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,

“মানে?”
“মানে ওর যতদিন এক্সাম চলবে, তুই এ বাড়ি আসবি না। দ্যটস ইট।”
কথাটা বলে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। শুদ্ধ হা করে চেয়ে আছে। তার বাড়ি, আর সে আসবে না? রেগে বলল,
“সপ্তাহে দু’টো দিন মায়ের হাতের রান্না খাই, সেটাও খাবো না?”
ইরফান ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। শুদ্ধ হাসল, আবার মুখটা অসহায় করল। এই ইরফান যা বলে তা-ই তো করে। তাকে কি সত্যি সত্যি তার বাড়ি আসতে দিবে না না-কি? বউ কে ভালোবাসছে ও, ঝড় আসছে তার দিকে। কি জ্বালা!

ইরফান শুদ্ধর ঘর থেকে বেরিয়ে মাইরার ঘরে প্রবেশ করে। শব্দ বিহীন দরজার আটকে দেয়। গায়ের শার্ট খুলে ফেলে। ফ্যান অফ করে এসি ছেড়ে দেয়।
এরপর ঘরের জিরো লাইট টা অফ করে মাইরার গা ঘেঁষে শুয়ে পড়ে।
মাইরা বাম কাত হয়ে শুয়েছে। ইরফান মাইরার পিঠ ঘেঁষে বাম কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। অন্ধকারের মাঝে পিছন থেকে ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার কপাল চেক করে, হাত নামিয়ে গলা চেক করে। মাইরা ঘুমের মাঝেই একটু কেঁপে ওঠে। নড়েচড়ে উল্টো ফিরে ইরফানের দিকে ফিরে শোয়। বাম হাত বাড়িয়ে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমের ঘোরে।
অন্ধকার ঘরে ইরফান মাইরাকে দেখতে পায় না তেমন। খুব-ই ঝাপসা দেখল বোধয়। তার হাত বুকে আড়াআড়িভাবে গুঁজে রাখা। তার গলায় মাইরার হাত সরিয়ে দিল না। মাইরাকে হাত বাড়িয়ে ধরল না। অতি ঝাপসা মাইরাকে দেখল খানিক গম্ভীর মুখে। মাথাটা এগিয়ে নিয়ে মাইরার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে নেয়। কি মনে করে ঠোঁট বাঁকিয়ে খুব-ই সূক্ষ্ম হাসে। কয়েক সেকেন্ড এর মাঝেই মুখ স্বাভাবিক করে ফেলে। মুহূর্তেই চোখজোড়ায় ঘুমের দল এসে ভিড় করে।

মাইরার কেমন শীত লাগে। সামনের দিকে উষ্ণতা পেয়ে ঘুমের ঘোরে সেই উষ্ণতায় ঘেরা ইরফানের বুকে গুটিশুটি হয়ে এগোয়। কোলবালিশ ভেবে দু’হাতে ধরতে চায়, কিন্তুু কেমন যেন শক্ত লাগলো। মাইরার ঘুম ভেঙে যায়। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। ঘরময় এতো অন্ধকারে মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে ফেলে। কারেন্ট নেই? কিন্তুু আইপিএস তো আছে। তবে জিরো লাইট জ্বলে না কেন? সামনে হাত বাড়ালে কেমন মানুষের মতো কিছু মনে হয়। কেমন ভ’য় পায় মেয়েটা। ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসতে চাইলে কোমড়ে টান পড়ে। মাইরার ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা। বাম হাত তার কোমড়ে দিলে আরেকজনের হাতের মতো কিছু লাগে। মাইরা ঢোক গিলে। ধীরে ধীরে তার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে সে উঠে বসে। পাশে হাতিয়ে তার ফোন নিয়ে দ্রুত ফোনের আলো অন করে কাঁপা হাতে।
এরপর তার ডান পাশে ফ্লাস ধরলে ইরফানকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়। নিশ্চিতে ঘুমে মগ্ন মানুষটা। মাইরা ঢোক গিলে। এই লোক এইখানে কেন? ইরফানকে সে এতোক্ষণ জড়িয়ে ধরতে চাইছিল, তার সাথে লেগে শুয়ে ছিল, সবমিলিয়ে মেয়েটার গলা শুকিয়ে আসে। ইরফানের মুখের দিকে তাকায়। কি সুন্দর শান্তভাবে ঘুমায় মানুষটা। ঘুমন্ত অবস্থায় কেমন নিষ্পাপ লাগে, মুখ জুড়ে মায়া লেপ্টে থাকে। অথচ জেগে থাকলে তার ছায়া-ই যেন সহ্য করতে পারে না। কেন যেন আঁখি জোড়ায় পানি জমলো।

পর মানুষেরা মারলে শুধু গায়ে লাগে। কিন্তুু যখন আপন মানুষেরা মারে, তখন গায়ের সাথে সাথে মনেও লাগে। মাইরা ইরফানের মুখাবয়ব থেকে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। আপন কথাটা ভাবতেই কেমন বিরক্ত লাগলো। যার মার খায়, তার জন্য ভেবে ভেবে চোখ ভেজানোটা মাইরার অ’সহ্য লাগলো। গতকাল রাতেও লেট করে ঘুমিয়েছিল। মন তার, ভাবে এই পা’ষা’ণ মানুষকে নিয়ে।
ফোনে একবার সময় দেখে। ফজর এর সময় শেষ প্রায়। চুপচাপ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। এরপর ধীর পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ইরফান জাগেনি। নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে ছেলেটা।
মাইরা তার ঘর থেকে বেরিয়ে শুদ্ধর মায়ের ঘরে যায়। শুদ্ধর মা নামাজ পড়ছে, মাইরা ওজু করে এসে শুদ্ধর মায়ের পাশেই নামাজ পড়ে নেয়। ভদ্রমহিলা মাইরাকে দেখে বললেন,

“এখানে এলি যে?”
মাইরা চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“তোমার ভাতিজা কখন এসেছে খালাম্মা?”
শুদ্ধর মা তৃণা বেগম অবাক হয়ে বলে,
“ইরফানের কথা বলছিস? ও তো গতকাল দুপুরে চলে গিয়েছে পাগলি মেয়ে। ভুলে গেলি?”
মাইরা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“এসেছেন উনি। আমি মাত্র দেখে এসেছি আমার ঘরে।”
তৃণা বেগম অবাক হলেন। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। এরপর ঘরের বাইরে যেতে যেতে বলেন,
“আচ্ছা আমি দেখছি, তুই বোস।”
মাইরা কিছু বলল না। দু’হাঁটু জমা করে, হাঁটুর উপর থুতনি ঠেকিয়ে চুপ করে বসে রইল। ভাবছে লোকটা গিয়ে আবার আসলো কেন? তার প্রয়োজনে আসলেও ইরফানের ঘর রেখে তার ঘরে কেন এসেছে? মাইরা ভাবে, তার ঘুম ভালো না, সে জানে। সেই হয়তো লোকটার দিকে এগিয়ে শুয়েছে। কিন্তুু ইরফান কেন তার ঘরে গিয়ে শুয়েছিল?

“ইরফান?”
ফুপির ডাকে ইরফান জাগা পায়। সময় নিয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,
“বলো।”
তৃণা বেগম ইরফানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“কখন আসলি?”
ইরফান বাম পাশ ফিরে জায়গা ফাঁকা দেখে ভ্রু কোঁচকালো। বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলে,
“কাজ ছিল, তাই রাতে এসেছি।”
তৃণা বেগম অবাক হলো। সে তো ১১ টার পর ঘুমিয়েছিল। ইরফানের আরও কত রাতে কাজ ছিল? ভাবনা রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

“ইরফান কোথায়?”
স্ত্রীর কণ্ঠ পেয়ে তারেক নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ঘর ছাড়া আর কোথায় থাকবে? দেখো।”
“নেই বলেই তো তোমাকে জিজ্ঞেস করছি।”
তারেক নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমি কি করে বলব সে কোথায়? আবার কোথায় গিয়েছে?”
ঘড়িতে সময় দেখল সকাল ৯ টা। অতঃপর বলে,
“একটু পর অফিসের উদ্দেশ্যে বের হব। আর এই ছেলে কাজ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেন?”
রুমা নেওয়াজ বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমার ছেলে কাজ রেখে পালায় না। তুমি পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকো। আমার ছেলেই সপ্তাহে দু’দিনে তোমার সব কাজ তুলে দেয়।”
তারেক নেওয়াজ কিছু বলল না। মিথ্যা তো আর বলেনি। তার রাগ অন্য জায়গায়। ছেলেটা মাইরাকে মেরেছে এটা নিয়েই তার রাগ আকাশসম। রিতা ঘরে এসে বলে,
“ভাইজান তো অনেক রাতে বাইরে গেছে। আমি দেখছিলাম।”
রিতার কথা শুনে রুমা নেওয়াজ, তারেক নেওয়াজ দু’জনেই অবাক হলো। অনেক রাতে বাইরে গিয়েছে?
তারেক নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলে,

“কোথায় গিয়েছে?”
রিতা হাতের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তা তো জানি না। আমি খালি ভাইজান রে গাড়ি নিয়ে বাইরে যাইতে দোখছি।”
রিতার কথা শুনে ইরফানের বাবা মায়ের ভ্রু আরও খানিক কোঁচকায়৷ গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে? তারেক নেওয়াজ ইরফানের নাম্বারে কল করে। ফোন সুইচ অফ দেখায়। বিরক্ত হন তিনি। এই ছেলে কোথায় গিয়েছে? ইরফানকে না পেয়ে শুদ্ধর নাম্বারে কল করে।

মাইরা ডাইনিং-এ বসে একা একাই সকালের নাস্তা করছিল, আর ফোন স্ক্রোল করছিল। ইরফান শান্ত পায়ে মাইরার পাশের চেয়ার টেনে বসে। মাইরা খেতে খেতে পাশ ফিরে তাকায় একবার ইরফানের দিকে। ইরফানের সাথে চোখাচোখি হলে দ্রুত চোখ সরিয়ে ফোনে মনোযোগ দেয়, সাথে খাবার খায়। ইরফান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। মাইরা প্লটের সব খাবার শেষ না করেই উঠে দাঁড়ালো। বাম হাতে ফোন নিয়ে যেতে নিলে ইরফান মাইরার হাত টেনে ঠাণ্ডা গলায় বলে,

“ফিনিশ ইট।”
মাইরা ডান এঁটো হাতেই ইরফানের হাত ধরে ছাড়াতে চেয়ে রেগে বলে,
“হাত ছাড়ুন।”
ইরফান শক্ত করে হাতের বাঁধন। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“সব শেষ না করে এক পা ও নড়বে না।”
মাইরা রেগে যায়। এই লোকটাকে তো সহ্যই হয় না তার। হঠাৎ-ই চিৎকার দিয়ে বলে,
“হাত ছাড়ুন বলছি।”
মাইরার এমন চিৎকারে ইরফান ভড়কে যায়। তৃণা বেগম রান্নাঘর থেকে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে এসে বলে,
“কি হয়েছে মাইরা? চিৎকার করছিস কেন?”
মাইরা এখনো ইরফানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে ব্যস্ত। ইরফান রেগে তাকিয়ে আছে মাইরার দিকে। মাইরা রেগে বলে,
“খালাম্মা তোমার ভাতিজার এসব অত্যা’চার কিন্তুু আমি সহ্য করব না বলে দিচ্ছি না। আমার হাত ছাড়তে বলো ওনাকে।”
তৃণা বেগম দেখলেন ইরফান মাইরার হাতত চেপে ধরেছে। মাইরার প্লেটে নজর দিলে দেখল সব ভাত খায়নি মেয়েটাকে। তিনি হয়তো বুঝলেন ইরফানের ব্যাপার। মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভাত রেখে উঠেছিস কেন? সব খেয়ে নে।”
মাইরা ডান হাতে ভাতের প্লেট তুলে নিয়ে বলল,
“এবার ছাড়তে বলো। আমি ঘরে গিয়ে খাবো।”
ইরফান ছাড়লো না মাইরার হাত। উল্টে আরও শক্তহাতে ধরল। মাইরা ভীষণ ব্য’থা পায় হাতে, কিন্তুু কিছু বলে না। তৃণা বেগম একবার মাইরার দিকে তাকায়, আবার ইরফানের দিকে। কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। ইরফান বসা থেকে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“এখানে বসেই খাবে তুমি। সিট।”
মাইরাও রেগে বলে,
“আপনি ঘরে যান। তাহলে আমি এখানে বসে খাবো।”
ইরফান অদ্ভুদভাবে তাকায় মাইরার দিকে। রেগে বলে,
“আমি এখানেই থাকবো। তুমিও এখানে খাবে।”
মাইরা হাতের প্লেট ঠাস করে টেবিলের উপর রেখে রেগে বলে,
“খাবো না। কি করবেন?”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৭

“আমায় রাগিয়ো না।”
মাইরা বাম গাল এগিয়ে দিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“নিন মে’রে রাগ মেটান।”
ইরফান স্তব্ধ চোখে তাকায় মাইরার গালের দিকে। গতকালের মারের দাগ এখনো ভেসে আছে। ইরফান মাঃরার হাত ছেড়ে দেয়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। চোখজোড়ায় কেমন অসহায়ত্ব।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৯