প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২০ (২)
Drm Shohag
ইরফান মাইরার প্রস্থান দেখল চুপচাপ। ডান হাতে ঘাড় ডলে বিরক্তির শ্বাস ফেলে। এরপর তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
মাইরা এক দৌড়ে তার ঘরে এসে দরজা চাপিয়ে দেয়। এতোবড় কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে তার হাত দিয়ে। সে এই লোকটার সামনে গেলে তাকে ঠিক কি করবে এটা ভেবেই মাইরার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। বিছানার উপর উঠে বসে ভাবছে, হলো টা কী। কান্না পাচ্ছে তার। দু’টো হাত ছিল, দু’টো পা ছিল, পুরো শরীরটাই তো ফাঁকা ছিল,,
বিড়বিড় করল, ‘কফির বাচ্চা টাকে ওখানেই পড়তে হলো?’
পাশে ফোনের রিংটনে ফোন হাতে নিয়ে দেখল ইনায়ার ফোন। দ্রুত কল রিসিভ করে কানে ধরে। অতঃপর বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“আপু সর্ব’নাশ হয়ে গেছে।”
ইনায়া হাসিমুখে কথা বলবে বলে কল দিল। মাইরার এমন কথা শুনে চিন্তারা ঘিরে ধরে। চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“কি হয়েছে মাইরা?”
মাইরা থামে না। সাথে সাথেই বলে,
“আপু তোমার ভাইয়ার ওখানে…..”
এতোটুকু বলে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরল। না না এসব বলা কেমন যেন। চোখ বুজে শ্বাস ফেলল। অতঃপর নিজেকে সামলে নেয় কোনোরকমে। ওপাশ থেকে ইনায়া বলে,
“ভাইয়ার কি হয়েছে মাইরা? আবার তোমাকে মেরেছে?”
মাইরা একা একা বিড়বিড় করল, ‘সব মারের প্রতিশোধ এভাবে অজান্তেই নেওয়া হয়ে গেল, ইশ! কিন্তুু আমি তো চাইনি।’
“কি বিড়বিড় করছ?”
মাইরা ভাবনা থেকে বেরিয়ে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না উনি মারেন নি আমাকে।”
“তাহলে কি হয়েছে ভাইয়ার?”
মাইরা ঢোক গিলে মেকি হেসে বলে, “কিছু না, কিছু না।”
ইনায়া ওপাশ থেকে সন্দেহের কণ্ঠে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কি লুকাচ্ছ?”
মাইরা জোরে হেসে উঠে বলল,
“সত্যি কিছু না। তোমার ভাইয়া অনেক ভালো সেটাই বলতে চাইছিলাম।”
ইনায়া হেসে বলে,
“ওমা ভূতের মুখে দেখি রাম রাম।”
মাইরা থতমত খেয়ে বলে, “না না অনেক ভালো না। ওই একটু একটু ভালোই আর কি।”
“তা কি ভালো কাজ করল?”
মাইরা কিছু একটা ভেবে বলে, “আপু একটা সিরিয়াস প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই।”
“বলো।”
“বলছি, কারো প্রায়ভেট পার্টে গরম কিছু পড়লে তার কি হয় আপু?”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলে, “কেন কি হয়েছে মাইরা? এমন অদ্ভুদ প্রশ্ন করছ কেন?”
মাইরা থতমত খেয়ে বলে, “কিছু না। আপু তুমি কেমন আছো? আমার এক্সাম শেষে তুমি আসবে কিন্তুু। আমি তোমাকে এই গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবো।”
“আচ্ছা যাব। বাবা নিয়ে যাবে বলেছে।”
ইনায়ার সাথে টুকটাক কথা বলে মাইরা ফোন রেখে দেয়। ভাগ্যিস খেয়ে এসেছিল, নয়তো এখন কীভাবে খেতে যেত! দ্রুত নামাজ পড়ে নিল, এরপর শুয়ে পড়ল। ঘুমালেই শান্তি।
ঘুমের মাঝে শক্তপোক্ত বন্ধনে, মাইরা নড়াচড়া করতে পারে না। বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। হালকা ঝাপসা আলোয় একদম তার মুখ বরাবর ইরফানের মুখ দেখে তার ঘুম ছুটে যায় পুরোপুরি। মনে হচ্ছে তার কপালের সাথে ইরফানের কপাল লাগানো। মাইরা ঝট করে মাথা তোলে, কিন্তুু নড়তে পারছে না। কেমন সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরেছে তাকে। মাইরা ঢোক গিলল। ইরফানের মুখের দিকে তাকায়। কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে! কিন্তুু তার এখানে কেন? আর তাকে এভাবে পেঁচিয়ে ধরেছে কেন? মাইরা ইরফানের থেকে নিজের ছাড়ানোর জন্য নড়াচড়া করে,, ইরফান বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বিড়বিড় করে, “স্টুপিট, ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। তাকে ডিস্টার্ব করে বলছে সে যেন ডিস্টার্ব না করে। মাইরা মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে। দু’হাতে ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। ইরফান বিরক্তি ভরা চাহনীতে মাথা তুলে মাইরার দিকে তাকায়। রেগে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। বিরক্ত হয়ে বলে,
“ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায়। মাইরাকে সে ধরেছে খেয়াল করতেই ভ্রু কুঁচকে মাইরাকে ছেড়ে উঠে বসলো৷ মুখাবয়বের কোনো পরিবর্তন নেই। যেন কিছুই হয়নি। বেড থেকে নামতে গেলে মাইরা ইরফানের হাত ধরে বলে,
“আপনার ঘর রেখে আমার ঘরে এসেছেন কেন?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলে,
“মাই উইস।”
কথাটা বলে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। মাইরা ইরফানের হাত ধরে থাকায় ইরফান উঠে দাঁড়ালে তার হাতে টান খেয়ে বেড থেকে ঠাস করে পড়তে নেয়, তার আগেই ইরফান মাইরাকে বা হাতে আগলে নেয়। মাইরা ভ’য় পেয়ে যায়। ভেবেছিল পড়েছে, কিন্তুু ইরফানের দিকে তাকিয়ে দেখল লোকটা তাকে ধরেছে। কিন্তুু এমন খেয়ে ফেলা চোখে তাকিয়ে আছে কেন। ইরফান ধমকে বলে,
“তুমি কি অপুষ্টির রোগী?”
মাইরা রেগে বলে,
“আপনার জন্যই তো পড়তে যাচ্ছিলাম। ছাড়ুন আমায়।”
মাইরার কোমড় পর্যন্ত বেডে, তবে কোমড় থেকে মাথা পর্যন্ত বেড থেকে ফাঁকায় ইরফানের হাতের উপর ভর। ইরফান ছেড়ে দিলেই ঠাস করে উল্টো হয়ে পড়বে। ইরফান বিরক্ত হয়ে মাইরাকে ধরে রাখা হাত সরিয়ে নিল। মাইরা চোখের পলকে উল্টে পড়তে নেয় মেঝেতে, মেঝে ছুঁইছুঁই, মেয়েটা চেঁচিয়ে ওঠে। তখনই ইরফান মাইরাকে ডান হাতে ঝটকা মেরে তুলে বিছানার মাঝখানে বসিয়ে দেয়। মাইরা হা করে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। কত্তবড় খা’রা’প লোক ভাবা যায়! সে ওভাবে পড়ে গেলে আজ তার ঘাড় তো পুরো ভেঙে যেত। কোমড়ে দু’হাত দিয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
“আপনি আমাকে ফেলতে যাচ্ছিলেন কেন?”
ইরফানের মাইরার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। ফ্যানের বাতাসে মাইরার ছেড়ে দেওয়া চুলগুলো মৃদুভাবে উড়ছে। পিছন থেকে কিছু চুল দু’কাঁধ পেরিয়ে সামনে এসে জায়গা করে নিয়েছে। মাইরার মুখ ফুলানো, চোখমুখে কিছুটা রাগের আভা।
ইরফান চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানে। এরপর গম্ভীর গলায় বলে,
“চুল বেঁধে পড়তে বসো।”
কথাটা বলে গটগট পায়ে ঘরে ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। মাইরা হা করে তাকিয়ে আছে। সে কি বললো, আর এই লোকটা কি বলল। সবচেয়ে বড় কথা তার ঘরে এসে ঘুমাবে কেন। খ’বিশ লোক। এই লোকটার ঘরে গেলে তো শুধু আউট আউট করে। আর তার ঘরে এসে ঘুমায়। বিড়বিড় করে, ‘খ’বিশের দাদা একটা’
আবার ইরফানের ব্যবহারে অবাকও হয়। এসব ব্যবহার তো আর এই লোকের থেকে আশা করা যায় না। অসম্ভব। মাঝে মাঝে জ্বিন ভর করে কি-না, এইজন্যই তাকে ২৩ ঘণ্টা ধমক দেয়। আর এক ঘণ্টা জ্বিন ধরলে একটু ভালোভাবে কথা বলে, যেটা অকল্পনীয়।
“তোর বোন কোথায়?”
ইরফান ভেতরে আসতে আসতে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“খালামণির বাসায় গিয়েছে।”
“তোর তো খালাতো ভাই আছে।”
ইরফান ফাইজের মা কে সালাম দিল। টুকটাক কথা বলে ফাইজের ঘরের দিকে যায়। ফাইজ কিছু ভাবছে। তার ঘরে গিয়ে সিরিয়াস কণ্ঠে বলে,
“তোর খালাতো ভাই আছে না-কি বলছিস না কেন?”
ইরফান সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে,
“ডেইলি বলতে হবে কেন?”
ফাইজ রেগে বলে,
“যেখানে ছেলে আছে সেখানে তোর বোনকে পাঠালি কেন?”
ইরফান বিরক্ত হলো। পিছন থেকে শুদ্ধ ঘরের ভেতর
আসতে আসতে বলে,
“কি হয়েছে রে?”
ফাইজ পিছু ফিরে শুদ্ধ আর সৌভিককে দেখল। এগিয়ে এসে সৌভিককে বসতে বলে শুদ্ধকে বলে,
“তোরা তো ইনায়ার ভাই। তোদের হুশ নেই? ওর খালাতো ভাইয়ের কোলে বসে থাকার জন্য পাঠিয়েছিস কেন ওকে ওখানে?”
শুদ্ধ অসহায় মুখ করে বলল,
“আহারে! তোর আর ইরফানের জ্বালা দেখতে দেখতেই আমার দিন যায় চলে যায়!”
এরপর ফাইজের ঘাড়ে বাম হাত তুলে আওয়াজ নিচু করে বলে,
“আমার কাছে একটা গোপনীয় খবর আছে, শুনবি?”
ফাইজ বিরক্ত হয়ে তার ঘাড় থেকে শুদ্ধর হাত নামিয়ে বলে,
“ফালতু খবর শোনার ইচ্ছে নেই। জ্বালিয়েছিস তো পিটিয়ে ছাল তুলব।”
শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলল,
“আরে সত্যি বলছি। ওই জাহিদের তো ইনায়াকে মারাত্মক পছন্দ ভাই। বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনে সে কী মেয়েদের মতো কান্না। বিশ্বাস করবি না, আমার শার্ট একদম গার্লফ্রেন্ড এর কান্নার মতো করে ভিজিয়ে দিয়েছিল। এখন ইনায়াকে অনেক জোর করে তাদের বাসায় রাখলো। বিয়ের আগেই একটু চান্স নিক,, বিয়ে হয়ে গেলে তো আর পারবে না। বুঝিস নি? তুই চাপ নিস না। ও বিয়ে করবে না তোর ইনায়াকে। শুধু ইনায়াকে একটু মন ভরে দেখবে, সুযোগ পেলে একটু একটু ছুঁয়ে দিবে এই যা। তুই নিশ্চিন্তে থাক।”
কথাগুলো বলে বুক ভরে শ্বাস নিল। সৌভিক সোফায় বসে হাসছে শুদ্ধর কথা শুনে। ইরফান গম্ভীর মুখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। আর ফাইজ জ্বলন্ত চোখে চেয়ে আছে। সবার দৃষ্টি দেখে শুদ্ধ মেকি হাসল। সৌভিকের পাশে গিয়ে বসলে ফাইজ শুদ্ধর কলার ধরে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে। শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,
“মনে হচ্ছে সত্যি কথার বসার জায়গা নাই। ছাড় ছাড়। আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে আমাকেই বের করিস। এতো বড় সাহস?”
পিছন থেকে ফাইজের মা বলে,
“ফাইজ শুদ্ধকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?”
ফাইজ উল্টো ফিরে যেতে যেতেই রেগে বলে,
“এই বেয়া’দব কে আমি ড্রেনে চুবাবো আম্মু। ও আমায় চেনে না। ওর মজা আমি ছুটাবো। বেয়া’দব, যা মুখে আসে তাই বলে।”
শুদ্ধ ফাইজের দিকে তাকিয়ে জোর করে ফাইজকে দু’হাতে চেপে ধরে লাজুক চোখে চেয়ে বলে,
“বলছি তোমার মাঝেই একটু চুবতে দাও না সোনা, বিলিভ মি, ড্রেনের চেয়েও জঘণ্য তোমার শরীর,, তবে কষ্ট করে ড্রেনে যাওয়ার কি দরকার?”
ফাইজ চোখমুখ কুঁচকে শুদ্ধ কে ধাক্কা দিয়ে সরায় তার থেকে। শুদ্ধ হাসছে। ফাইজ ক্লান্তি, বিরক্তি, রাগ সবমিলিয়ে হনহন করে তার রুমের দিকে যায়। শুদ্ধ ফাইজের মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কেমন লাগলো আন্টি?”
ফাইজের মা হেসে বলে,
“তুমি পারোও বাবা। ঘরে যাও।”
শুদ্ধ হেসে আবারও ফাইজের ঘরে যায়। ফাইজ এপাশ-ওপাশ পায়চারি করছে। ইরফানকে বলে,
“তোর বোন কে আজকেই আনবি। তোর বউয়ের নেক্সট ইয়ার এক্সাম দিলে কি হতো? ওর জন্য আমার বিয়েটা আটকে আছে।”
ইরফান অদ্ভুদ চোখে ফাইজের দিকে তাকায়।
এর বিয়ের জন্য মাইরা এ বছর এক্সাম দিবে না। মানে এটা কোনো যুক্তি? এমনিতেই ওর বউ বড় হচ্ছে না। এ ফাইজ নিজের বিয়ের জন্য তার বউটাকে আরও ছোট বানাতে চাইছে। ইরফান রেগে বলে,
“ইনায়া বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত ও বাড়িতেই থাকবে।”
ফাইজ ধুপ করে তার বেডে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়ে। অসহায় কণ্ঠে বলে,
“শা’লা আমার জীবন ডা তেজপাতা করে দিলি । শুধু একবার বিয়েটা হোক। ইরফানের বাচ্চার বোনকে যে কোন সিন্দুকে রাখবো, কেউ খুঁজে পাবি না দেখিস। আমার সাথে ভিলেন গিরি করে ঠিক করছিস না বেয়া’দবের দল।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“আমি সিন্দুক অর্ডার করছি, তুই সাইজটা বল তো। আর রূপার নাকি সোনার সেটাও বল।”
ফাইজ বেডের বক্সের কাছে পেপার ওয়েট পেয়ে হাতে নিয়ে শুদ্ধ দিকে ছুঁড়ে মারে। শুদ্ধ বা হাতে কেচ ধরে নেয়। সৌভিক হেসে বলে,
“শুদ্ধ থাম। আর পোড়াস না ওকে। বেচারা কষ্ট পাচ্ছে।”
ফারাহ হাতে কফির ট্রে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। শুদ্ধ ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। ফারাহকে দেখে মুখের হাসি চওড়া হয়। ফারাহ শুদ্ধর দিকে তাকায় না। সোফার টেবিলের সামনে কফির ট্রে রাখে। সোফায় সৌভিক বসে। ফারাহের দিকে অদ্ভুদভাবে চেয়ে আছে। সে আজকেই প্রথম ফাইজদের বাড়িতে এসেছে। শুদ্ধ সৌভিককে একবার দেখল। ফারাহ একটি কফির কাপ সৌভিকের দিকে বাড়িয়ে দিলে শুদ্ধ দু’পা পিছিয়ে ডান দিকে এসে ফারাহের পাশে খানিকটা ঝুঁকে মৃদুস্বরে বলে,
“এখান থেকে যাও ফারাহ। আমরা নিজেরা নিয়ে নিচ্ছি।”
ফারাহ মাথা তুলে সৌভিকের দিকে একবার তাকায়। এই লোকটাকে সে চেনে না। তবে সে শুদ্ধর কথা শুনলো না। হাত বাড়িয়ে মিষ্টি হেসে সৌভিকের দিকে কাপ বাড়িয়ে দেয়। সৌভিক নিতে গেলে শুদ্ধ ফারাহের হাত থেকে সেটা কেড়ে নেয়। কফির কিছু অংশ ছিঁটে আসে শুদ্ধর হাতে। তবে সেদিকে দেখল না সে। বা হাতে ফারাহের বাহু টেনে পিছিয়ে এনে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“এখান থেকে যাও ফারাহ।”
টেনে পিছিয়ে আনায় ফারাহের মাথা থেকে ওড়না পড়ে যায়। শুদ্ধ ঠাস করে হাতের কাপ টেবিলের উপর রাখলো। দ্রুত ফারাহের ওড়না মাথায় টেনে দিয়ে বলে,
“যাও।”
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে জেদ দেখিয়ে বলে,
“যাব না। আমি এখানে থাকলে তোমার কি?”
সৌভিক পিছন থেকে বলে,
“হেই বিউটিফুল লেডি! ইউ আর সো সুইট,, এসো আমরা পরিচিত হই।”
ইরফান আর ফাইজ দু’জনেই চেয়ে আছে ফারাহ আর শুদ্ধর দিকে। এবার ফাইজ রেগে বলে,
“ফারাহ এখান থেকে যা।”
ফারাহ তবুও জেদ দেখিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। গতকাল রাতেই তো এই শুদ্ধ অন্যকে বিয়ে করার কথা বলে তাকে কাঁদিয়েছে। আজ নিজেও বুঝুক কেমন লাগে। ফারাহকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুদ্ধ ফারাহের হাত ধরে টেনে দরজার বাইরে বের করে দেয়। ফারাহের মুখের উপর ঠাস করে দরজা আটকে দেয়। ঘনঘন শ্বাস ফেলছে। রাগ লাগছে ভীষণ। সে জানতো না সৌভিককে আসার কথা বলেছে এখানে।বাসার বাইরে এসে সৌভিককে দেখে জানতে পেরেছে। সৌভিক ফাইজের বাড়ি প্রথম এসেছে। তাই সে সিনক্রিয়েট করতে চাইলো না। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে এগিয়ে আসলো। তবে চোয়াল শক্ত।
সৌভিক ভাবছে, কফি তো কাজের মেয়ে ছাড়া আর কেউ দিতে আসে না। যদিও দেখে কাজের মেয়ে লাগে না। তবে এখনকার কাজের মেয়েরাও ভালোই স্টাইল নিয়ে থাকে। শুদ্ধর ব্যাপার বুঝলো না। এসব ভাবলোও না। কাজের মেয়ে ভেবেই তার স্বভাবসুলভ কমেন্ট করল,
“সি ইজ আ সো হ’ট গার্ল। এতো মর্ডান কাজের মেয়ে কোথায় পেলি ফাইজ? আমার সাথে কন্টাক্ট করে দে, কত নিতে পারে?”
কথাটা বলতে দেরি হলেও শুদ্ধর সৌভিকের নাক বরাবর ঘুষি দিতে দেরি হয়নি। সৌভিক সোফায় চিৎপটাং হয়ে পড়ে যায়। শুদ্ধ সৌভিককে টেনে রাগে চিৎকার করে বলে,
“তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব জানো’য়ার।”
কথাটা বলে আরেকটা ঘুষি মেরে দেয়। সৌভিক উল্টে পড়ে।
ইরফান শান্ত চোখে চেয়ে আছে। যেন তার সামনে মুভি চলছে। শুদ্ধ আবারও তেড়ে যেতে নিলে ফাইজ উঠে এসে শুদ্ধ কে আটকে বলে,
“শুদ্ধ থাম।”
শুদ্ধ ফাইজকে ধাক্কা দিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
“এই জানো’য়ার কে বাড়িতে আসতে বলেছিস কেন? জানিস না ও কেমন?”
ফাইজ কিছু বলল না। শুদ্ধ হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ইরফান উঠে দাঁড়িয়ে সৌভিকের কলার ধরে টেনে তুলল। এরপর হনহন করে টানতে টানতে একদম মেইন গেইটের সামনে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“ভদ্র মানুষের বাড়িতে অ’সভ্যদের জায়গা নেই। আউট।”
কথাটা বলে ঠাস করে দরজা আটকে দেয় মুখের উপর।
শুদ্ধ রেগে ফাইজদের ছাদে এসেছিল। এসে ফারাহকে ছাদের এক কোণায় উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে বড় বড় পা ফেলে ফারাহের পিছনে দাঁড়িয়ে ফারাহকে টান মেরে তার দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
ফারাহ শুদ্ধর ওমন আচরণে মন খা’রা’প করে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছিল। কেঁদেছেও একটু। এখন শুদ্ধকে দেখে ভয় পেল খানিক। এমন রেগে আছে কেন? তাকেই তো বের করে দিল। শুদ্ধ চোখ বুজে শ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ ফারাহের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
“তুমি ভীষণ বেয়া’দব হয়ে গিয়েছ ফারাহ।”
ফারাহ অবাক হয়ে তাকায় শুদ্ধর দিকে। চোখজোড়া পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। এই লোকটা তার জীবনে এসেছেই শুধু কষ্ট দিতে। ভাবনার মাঝেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। ফারাহের চোখে পানি দেখে শুদ্ধর রাগ নিভলো বোধয় খানিক। ভ্রু কুঁচকে শান্ত কণ্ঠে বলে,
“কাঁদছ কেন? ভয় পেয়ে? নাকি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে?”
ফারাহ চোখ সরিয়ে নেয়। মাথা নিচু করে দৃষ্টি ছাদের মেঝেতে নিবন্ধ করে। শুদ্ধ ফারাহের থেকে দু’পা পিছিয়ে গিয়ে আড়াআড়িভাবে বুকে দু’হাত গুঁজে বলে,
“যদি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে কাঁদো, তবে কিছু বলব না। আর যদি ভয় পেয়ে কাঁদো, তবে থা’প্প’ড় খাবে। কি কারণে চোখে পানি জমলো বলে ফেলো তো ফারাহ।”
ফারাহ অবাক হয়ে চোখ তুলে দৃষ্টি রাখে শুদ্ধর পানে। ফারাহের মাথা থেকে কাপড় পড়ে যায় দমকা হাওয়ায়। রাতের অন্ধকারে ছাদের লাইটের মৃদু আলোয় শুদ্ধ ফারাহকে দেখল। এভাবে দেখে সৌভিক ওমন কমেন্ট করলো না? মনে পড়তেই আবারও রাগান্বিত কণ্ঠে বলে,
“তুমি জানো ওই ছেলে তোমায় বাজে নজরে দেখছিল, তুমি তবুও দু’মিনিট বাড়িয়ে সেখানে থাকলে কেন?”
ফারাহ মনে মনে অনুতপ্ত হলো। সে তো এসব ভেবে থাকেনি। শুদ্ধর উপর জেদ করে ছিল। ভেবেছে এই লোকের কথা শুনবে না। তবে এখন সেই জেদটাকে বিদায় না দিয়ে বরং জেদকে অটুট রেখে আবারও ভাঙা গলায় রেগে বলল,
“দেখুক, তাতে তোমার কি? আমার যার সামনে যেতে ইচ্ছে করবে তার সামনে যাব, ইচ্ছে হলে কোলে উঠে বসব….
আর কিছু বলার আগেই ফারাহের গালে একটা শক্ত থা’প্প’ড় পড়ে। ফারাহ ফুঁপিয়ে ওঠে। মাথা নিচু করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“তুমি নিজের বলায় সব পারো, বিয়ে, বা’স’র, আরও কত কি,, আমি কিছু বললেই শুধু মারো।”
শুদ্ধ ফারাহের গাল দু’হাতের আঁজলায় নিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“শুধু মুখে বলেছ বলে থা’প্প’ড় দিয়েছি, এটা সকালের আগেই সেরে যাবে। কিন্তুু জেদ করে কখনো এসব বাস্তবায়ন করতে যেও না। বিলিভ মি, এমন করলে তোমার ক’ব’র আমি নিজ হাতে খুঁড়বো, এরপর আমি আর তুমি একসঙ্গে সেখানে ঘুমাবো।”
ফারাহ ভেজা চোখে শুদ্ধর দিকে তাকায়। শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
“তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে আমি ভীষণ শান্তি পাই ফারাহ। কারণ এই কান্না আমার পাশে অন্য মেয়েকে কল্পনা করার জন্য। এতো ভালোবাসা কোথায় রাখি বলো তো ফারাহ?”
ফারাহ নাক টেনে বলে,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি না।”
শুদ্ধ এবার একটু শব্দ করেই হাসলো। ফারাহের গাল থেকে হাত সরিয়ে বলে,
“ফারাহ, আই ওয়ান্ট টু হাগ ইউ।”
ফারাহ সাথে সাথে বলে ওঠে, “একদম না।”
শুদ্ধ আরেকটু পিছিয়ে গিয়ে প্যাণ্টের পকেটে দু’হাত গুঁজে মৃদু হেসে বলে,
“তবে যাও এখান থেকে। আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ্।”
ফারাহ একবার তাকায় তাকায় শুদ্ধর পানে। শুদ্ধ মৃদু হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারাহ ঢোক গিলে শুদ্ধর দৃষ্টিতে। সময় ব্যয় না করে দৌড় দেয়। শুদ্ধ পিছু ফিরেই শব্দ করে হেসে বলে,
“এ্যাই ফারাহ, ভালোবাসি কিন্তুু।”
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে যায়। এক্সাম দিয়ে মাইরা হল থেকে বের হয়েছে। এক্সাম খারাপ হয়নি, তবে তার মন খা’রা’প। ইরফান সেই যে এক সপ্তাহ আগে চলে গেল আর একবারও আসেনি। তার খা’রা’প লাগছে কেন? ওই লোকটা তো তাকে মানেই না, আসবে কেন। কিন্তুু তার মনে পড়ে কেন। ভীষণ মন খা’রা’প হয় মেয়েটার। স্কুল ড্রেস পড়া, মাথায় সাদা হিজাব বাঁধা, দু’হাতে বুকের সাথে ফাইল চেপে রাস্তার এক কোণায় দাঁড়িয়ে ফুসকার ভ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ এই ফুসকাও খেতে ইচ্ছে করছে না। চুপ করে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। এরপর এগিয়ে যায়, ভাবলো ফুসকা খেয়েই মনটা ভালো করবে। এটা ছাড়া আর উপায় কি?
এক প্লেট ফুসকা নিয়ে একা চেয়ারে বসে মাইরা। কোলের উপর ফাইল রেখে বা হাতের তালুতে ফুসকার প্লেট রেখে ডান হাতে একে একে মুখে ফুসকা পুড়তে থাকে। হঠাৎ-ই তার ডান পাশে গা ঘেঁষে কেউ বসলো মনে হলো। মাথা নিচু থাকায় পায়ের দিকে খেয়াল করে বুঝলো ছেলে। মুহূর্তেই রেগে বোম হয়ে যায়। পাশ ফিরেই চেঁচিয়ে ওঠে,
“তোর সাহস তো কম না, অন্যের বউ এর গা ঘেঁষে বসেছিস। তোকে তো….”
ইরফান বিরক্তি ভরা চাহনীতে মাইরার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। মাইরার বুলিতে দাঁড়ি পড়ে যায়। চোখ বড় বড় হয়ে যায়। খুকখুক করে কেশে ওঠে। ইরফান রেগে ধমকে বলে,
“স্টুপিট, তুমি ভালো হবে না?”
মাইরা চোখ পিটপিট করে তাকায়। কি মনে করে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে, “হোয়াট? হাসছ কেন?”
মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“আপনি সত্যি এসেছেন?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে, “নো।”
মাইরা রেগে বলে, “আপনি মিথ্যে বলছেন কেন?”
ইরফান বিরক্ত হয়ে তাকায় মাইরার দিকে। ভ্রু কুঁচকে বলে,
“দেখছো যখন এসেছি, তো জিজ্ঞেস করছ কেন? স্টুপিট!”
মাইরা মুখ ভোতা করে ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইরফান অদ্ভুদচোখে মাইরার দিকে তাকায়। মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলালো। স্কুল ড্রেসে মাইরার বয়স আরও চার-পাঁচ বছর কমে গিয়েছে মনে হচ্ছে। ইরফানের চোখমুখে কেমন বিস্ময়। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। বাবার উপর রাগ হলো। এই বাচ্চা নাকি তার বউ! ভাবতেই নিজেরই কেমন বিরক্ত লাগলো। ইচ্ছে করল, একে থা’প্প’ড় দিয়ে বড় বানিয়ে দিতে। রেগে বলে,
“তুমি বড় হতে পারো না?”
মাইরা বোকাচোখে ইরফানের দিকে তাকায়। এটা কেমন কথা? সে বড় হবে কীভাবে?
অতিরিক্ত ঝাল খাওয়ায় চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে। ঝালের প্রভাবে চোখজোড়ায় বিন্দু বিন্দু পানির কণা। ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কোঁচকালো। কাঁদছে আর খাচ্ছে। বিড়বিড় করল, ‘স্টুপিট’
মাইরার হাতের প্লেট কেড়ে নিয়ে ঠাস করে তার পাশের চেয়ারে রেখে মাইরার কোলের উপর থেকে ফাইল তার ডান হাতে তুলে নিল। এরপর মাইরার বাম হাত ধরে এগিয়ে যেতে নিলে মাইরা চেঁচিয়ে বলে,
“আমায় ছাড়ুন। আমার ফুসকা শেষ হয়নি।”
পিছন থেকে কয়েকজন লোক বলে,
“কি ভাই, এতো জমজমাট জায়গায় একটা বাচ্চা মেয়েকে তুলে নিয়ে যেতে ভয় লাগে না? মেয়ে দেখলেই মাথা ঠিক থাকে না?”
ইরফানের পা থেমে যায়। মাইরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। দ্রুত ভদ্র হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ইরফান পিছু ফিরে তাকায়। রাগান্বিত চোখে চেয়ে লোকগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে নিলে মাইরা দ্রুত ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“যাবেন না যাবেন না। ওরা ভুল বুঝেছে।”
ইরফান মাইরার কথা শুনলো না। মাইরার হাত শক্ত হাতে ধরে লোকগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“সি ইজ মাই ওয়াইফ। ওকে তুলে নিব না-কি ছুঁড়ে ফেলব, ইট’স মাই চয়েস। হু আর ইউ?
আমার ওয়াইফ কে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। হোয়াট’স ইওর প্রবলেম উইথ দ্যট?”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। লোকগুলো হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। মাইরা দ্রুত লোকগুলো উদ্দেশ্যে বলে,
“উনি ভালো লোক। আপনারা যান।”
একজন চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“একটু আগে…”
মাইরা বুঝলো, তখন চেঁচিয়ে উঠলো তার পাশে বসায়, আবার জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল বলে লোকগুলো ভুল বুঝেছে। দ্রুত বলে ওঠে,
“আমার ভুল হয়েছে প্রথমে চিনতে। আপনারা যান।”
লোকগুলো একটু অবাক হলো হয়তো। তবে আর কিছু বললো না। চলে গেল। মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান ওই লোকগুলোর দিকেই এখনো জ্বলন্ত চোখে চেয়ে আছে। মাইরা ঢোক গিলল। তার হাতটা ভেঙে গেল বোধয়।
পাশ থেকে স্কুল ড্রেস পরা ফাইল হাতে এক ছেলে এগিয়ে এসে বলে,
“কি রে মাইরা কি খবর? এক্সাম কেমন হলো?”
মাইরা মাথা নেড়ে বলে,
“ভালো। তোর?”
ছেলেটা মৃদু হেসে বলে, “ভালো।”
পাশে ইরফানকে দেখে বলে, “এটা তোর ভাই?
মাইরার উত্তরের অপেক্ষা না করে ইরফানকে ভাইয়া সম্মোধন করে সালাম দেয় ছেলেটা। কিন্তুু ইরফানের ওমন ভয়ংকর দৃষ্টি দেখে ছেলেটা ঢোক গিলল। মনে হয় খুব রাগী। থাক, ভাব জমানো লাগবে না। অতঃপর মাইরাকে বাই বলে চলে যায়। এদিকে মাইরা তার হাতের দিকে অসহায় চোখে চেয়ে আছে। মাথা তুলে বলে,
“আপনি কি আমার হাত ছিঁড়ে নিতে চাইছেন? উফ! ছাড়ুন।”
ইরফান আর কতক্ষণ রাগ কন্ট্রোল করবে? প্রথমে ওই লোকগুলো, এখন এই ছেলের ভাই শব্দটা যেন ইরফানের মাথায় একেবারে রক্ত তুলে দিল।
ইচ্ছে করছে সবগুলোকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করতে। আবার মাইরার কথায় জ্বলন্ত চোখে তাকালো মাইরার দিকে। মাইরা ঢোক গিলে বলতে নেয়, “স্য…”
তার আগেই ইরফান ডান হাতে ফাইল ধরেই মাইরাকে ঝট করে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বলে, “কি করছেন? নামান আমায়। নামান বলছি।”
ইরফান শুনলো তো না-ই। তার গাড়ির দরজা খুলে ব্যাক সিটে মাইরাকে একপ্রকার ছুঁড়ে ফেলে। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। কোমড়ে ব্য’থা পেয়ে চোখমুখ কুঁচকে নিল। ডান হাত কোমড়ের পিছনে দিয়ে রেগে বলে,
“আপনার প্রবলেম কি? ছোঁড়াছুড়ি ছাড়া কিছু পারেন না?”
কথাটা বলে সামনে তাকালে দেখল ইরফান গাড়ির ভেতর উঠে আসছে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। দ্রুত সিটের উপর সোজা হয়ে বসে গাড়ির দরজার সাথে লেগে গিয়ে বলল,
“আপনি এগোচ্ছেন কেন? আমি স্যরি! প্লিজ! মারবেন না।”
ইরফান মাইরার সাথে চেপে বসে। মাথার হিজাব টান মেরে খুলে ফেলে। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। দু’হাতে ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। তবে পারে না। ইরফান বা হাতে মাইরাকে তার সাথে শক্ত করে চেপে ধরেছে।
হিজাব খুলে ছুঁড়ে ফেললে মাইরার খোপা করা চুলগুলো ঝরঝর করে খুলে কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
ইরফান শার্টের বোতাম খুলতে দেখে মাইরা চোখ বড় বড় করে বলে,
“আপনার গরম লাগলে দূরে সরে বসুন, প্লিজ! আমি স্যরি! আর ফুসকা খাবো না।”
ইরফান মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে এক এক করে সবগুলো শার্টের বোতাম খুলে ফেলে। মাইরা ভীত স্বরে বলে, “কি করছেন?”
ইরফান মাইরার কানের নিচ বরাবর গলায় ডানহাত শক্ত করে দাঁতে দাঁতে পিষে বলে,
“আমি তোমার কি সেটাই বোঝাচ্ছি। নট ভাই, ইট’স কনফার্ম।”
মাইরা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
“মমানে? দূরে সরুন প্লিজ!”
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২০
মাইরার চোখমুখ জুড়ে ভীতি। খোলা চুলগুলো এলোমেলো। মাইরার ভীত মুখপানে চেয়ে ইরফান তার স্বভাবের বাইরে গিয়ে ডানদিকে সামান্য ঠোঁট বাঁকিয়ে ভীষণ-ই সূক্ষ্ম হাসলো। তবে মাইরা তা বুঝতে পারলো না। ইরফান ডান হাতে মাইরার কিছুসংখ্যক চুল কানে পিঠে গুঁজে দিয়ে গলা নামিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
“ইউ আর আ ভেরি লিটল বেবি। আ’ম ওয়েটিং ফর ইউ।”
মাইরা বোকাচোখে পিটপিট করে তাকিয়ে রইল ইরফানের গম্ভীর মুখপানে। সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল।