প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২১
Drm Shohag
মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কিসের জন্য ওয়েট করবেন?”
ইরফান থতমত খেয়ে মাইরার গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয়। বিড়বিড় করে, ‘গাধা।’
অতঃপর গম্ভীর গলায় বলে, “নাথিং”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইরফানের দিকে। আবারও বলে,
“আপনার ওয়েট করার ক্ষমতা নেই। ধুপধাপ করে রেগে যাওয়া মানুষের ধৈর্য্য জিরো হয়।”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার পুরো মুখে দৃষ্টি বুলায়। ঠাণ্ডা গলায় বলে, “আর ইউ সিওর?”
মাইরা ঢোক গিলে। ইরফানের দৃষ্টিতে তার দৃষ্টি এলোমেলো। এভাবে তাকাচ্ছে কেন? ইরফানকে তার দিকে এগোতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায় মাইরা। তার মুখের সাথে ছুঁইছুঁই তখন-ই মাইরা দ্রুত মাথা নিচু করে তার মাথা ইরফানের বুকে ঠেকিয়ে দেয়। মাইরার কপাল ইরফানের গলায় গিয়ে ধাক্কা লাগে।
ইরফান চোখ বুজে ফোঁস করে বিরক্তির শ্বাস ফেলে। ডান হাতে তার ঘাড় ডলে লম্বা শ্বাস ফেলে।
মাইরার কাঁদতে ইচ্ছে করছে, এই লোককে কি আসলেই জ্বিন ধরে মাঝে মাঝে। বারবার ঢোক গিলছে। মনে মনে ভাবলো, আর জীবনেও এই লোক না আসলে সে মন খা’রা’প করবে না।
ইরফান মাইরার কপাল বরাবর ডান হাতে ঠেলে তার বুক থেকে মাইরাকে সরিয়ে দেয়। বা হাতে মাইরার চোয়াল ধরে উপর দিকে উঠিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“আমি তোমার ভাই? ওই ছেলেটা কেন এটা বললো?”
মাইরা চোখ পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। আমতা আমতা করে বলে,
“ও জানে না। এর পর ওর সাথে দেখা হলে বলে দিব, আপনি আমার ভাই না।”
কথাটা শুনেই ইরফান বা হাতে মাইরার কোমড় চেপে ধরে। ডান হাতের শক্তহাতে গলার পাশে হাত ডুবিয়ে রাগান্বিত স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আবার ওর সাথে কথা বললে এই জবান কেটে ফেলব স্টুপিট।”
মাইরা হা করে চেয়ে আছে। লে, সে যা-ই করছে সেটাই দোষ। ইরফানের দৃষ্টি দেখে ভয়ও লাগে।
মেয়েটা নিজেকে গুটিয়ে নিতে চায়। ঢোক গিলে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। ইরফান দৃষ্টি রাখে মাইরার ভেজা ঠোঁটজোড়ায়। বুড়ো আঙুল রাখে মাইরার ঠোঁটের উপর। আলতো হাতে স্পর্শ করে নিচের ঠোঁটে। মাইরা ইরফানের হাত ধরে কাঁপা গলায় বলে,
“কি করছেন?”
ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকালো। বামহাতে মাইরার পায়ের জুতো খুলে দেয়। এরপর মাইরাকে টেনে তার কোলে বসিয়ে দেয়। বা হাতে মাইরার দু’হাতসহ কোমড় শক্তহাতে চেপে ধরে।
মাইরার শরীর অস্বাভাবিক কাঁপছে। বারবার ঢোক গিলছে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায় বারবার। ইরফান মাইরার গালে হাত ডুবিয়ে বুড়ো আঙুলের সাহায্যে মাইরার ঠোঁটে আবারও আলতো হাতে স্লাইড করে। শীতল কণ্ঠে বলে,
“কি দিয়েছ এখানে?”
মাইরার কণ্ঠ রোধ হয়ে আসে। ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়ায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে ধীরে ধীরে শক্তি প্রয়োগ করে আবারও নরম সুরে বলে,
“বলো। এখানে কি লাগিয়েছ? আই থিংক, পিংক কিছু।”
তার বুড়ো আঙুল উল্টে চেক করে চিন্তিত কণ্ঠে বলে, “উঠছে না কেন?”
আবারও মাইরার ঠোঁটজোড়ায় বুড়ো আঙুল দিয়ে শক্তি খাঁটিয়ে কিছু উঠানোর চেষ্টা চালায়।
মাইরা ব্য’থা পায়। ইরফানের হাতের গতি বৃদ্ধি পায়। মাইরা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকায়। মাইরার চোখজোড়ায় পানি। মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“ছাড়ুন আমায়। আমি কিছু লাগাই না বুঝলেন। নিজে তো সিগারেট খেয়ে খেয়ে ঠোঁট পুড়িয়ে ফেলেছেন, এখন আমার ঠোঁট যেই একটু ভালো দেখেছেন, ওমনি…..”
ইরফানের দৃষ্টিতে থাকা মুগ্ধতা পালিয়ে বিরক্তি ভর করে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“সাট আপ। স্টুপিট, কখন কি বলতে হয় জানো না?”
মাইরা ধমক খেয়ে কেঁপে ওঠে। কিছু বলে না। ইরফান আবারও শক্ত কণ্ঠে ধমকে বলে,
“ইউ নো, ওই ছেলের দৃষ্টি এখানে ছিল,, আই সোয়ার, আর কেউ এখানে দৃষ্টি ফেললে তার চোখসহ তোমার এই লিপস্ কেটে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে আসব।”
মাইরা ভীত চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। কোমড়ের পিছন থেকে ইরফানের হাত সরাতে চায়, গাল থেকে ইরফানের হাত সরাতে চায়,, নড়াচড়া করে। কিন্তুু পারছে না। শরীর কেমন শিরশির করছে। সবমিলিয়ে মেয়েটার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। মাইরা মাথা তুলে বলে, “ছাড়ুন আমায় অস’ভ্য লোক। পুরো শরীর জখম হয়ে গেল, উফ!”
ইরফান মাইরার কথা শুনে রেগে গেলেও চোখে ছাপিয়ে গালে গড়ানো পানি দেখে থতমত খেয়ে তাকায় মাইরার দিকে। দ্রুত মাইরাকে ছেড়ে মাইরার গাল দু’হাতে আগলে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? কাঁদছ কেন? ব্য’থা পেয়েছ?”
কথাটা বলে মাইরার ঠোঁটে আলতো হাত বুলায়।
মাইরা অদ্ভুদ চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। মাঝে মাঝে চিনতেই পারেনা সে এই লোককে। ইরফান মাইরার ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি রেখেই ঘোরের মাঝে তার শুষ্ক ঠোঁটজোড়া এগিয়ে নিলে মাইরা দ্রুত মাথা নিচু করে ইরফানের কাঁধে মুখ ঠেকিয়ে ইরফানের পিঠে দু’হাতে খামচে দেয় গায়ের জোরে। বিড়বিড় করে, ‘অসভ্য লোক একটা।’
ইরফান চরম বিরক্তির শ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে,
“ইউ আর আ ভেরি ক্লেভার গার্ল।”
এরপর মাইরাকে ঠেলে তার থেকে ছাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “ইউ আর ডিস্টার্বিং মি।”
মাইরা ইরফানের বুকে দু’হাতে ঠেলে কেঁদে দিয়ে বলে,
“আমি বাড়ি যেতে চাই। আপনি একটা কবিরাজ দেখান, প্লিজ!”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা চোখের পাতা ফেলে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান বিরক্ত হয়ে গায়ের শার্ট টান মেরে খুলে ফেলে। রেগে বলে,
“স্টুপিট, বড় হবে কবে?”
মাইরা ভয় পায় ইরফানকে দেখে। কি করতে চাইছে এই লোক। আবার রেগেও যাচ্ছে। তার গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। ইরফান তাকে ধরে নেই খেয়াল করতেই, দ্রুত ইরফানের কোল থেকে নেমে পাশের সিটে বসতে নিলে ইরফান মাইরাকে বা হাতে কোমড় পেঁচিয়ে তার বা পাশে বসিয়ে দেয়।
তখনই ডান পাশের জানালায় শুদ্ধ ঝুঁকে বলে,
“মাইরা আসেনি এখনো? তুই এমন শার্টলেস বসে আছিস কেন?”
বাম পাশ থেকে মাইরা চেঁচিয়ে বলে,
“আমি এসেছি। আপনার বন্ধু আমার সাথে অত্যা’চার করছে ভাইয়া। প্লিজ ভাইয়া….”
শেষ করার আগেই ইরফান শক্তহাতে মাইরার মুখ চেপে ধরে। শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,
“পাঁচ মিনিট পর আয়।”
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
“প্রথম কথা, মেয়েটার ১৬ বছর হতেও নাকি আরও পাঁচ মাস বাকি,
দ্বিতীয় কথা, ও মাত্র এক্সাম দিয়ে ফিরল
তৃতীয় কথা, এটা গাড়ি,, বেডরুম থাকতে এটা কেমন চয়েস!
চতুর্থ কথা, এখন ঝকঝকে দিনের আলোয় চারপাশ শুধু আলো আর আলো
পঞ্চম কথা, বউ তোর, মলমও লাগাবি তুই,, বাকিসবকিছুর দায়িত্বও তোর।
বাট আই হ্যাভ এ গভীর কোয়শ্চন,, এতোদিন জানলাম তুই মাইরাকে মানিস না, এখন দেখছি মাইরা তোকে মানছে না। সঠিক হিসাব কোনটা বল তো?”
ইরফান রেগে জানালার ফাঁক দিয়ে ডান হাত বাড়িয়ে শুদ্ধকে ঘুষি মারতে গেলে শুদ্ধ হাসতে হাসতে দৌড় দেয় গাড়ির পিছন দিকে।
ইরফান গাড়ির কাচ তুলে দেয়। মাইরাকে ঝট করে তার দিকে ফিরিয়ে রেগে বলে,
“আমি তোমাকে টর্চার করছি?”
মাইরা দু’দিকে মাথা নাড়ায়। ভয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। ইরফান আবারও তাকায় মাইরার ভেজা ঠোঁটজোড়ার দিকে। সেখানে দৃষ্টি রেখেই মাইরার দু’গাল তার দু’হাতের আঁজলায় নিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
“যাস্ট টু সেকেন্ডস এর জন্য বড় হয়ে যাও। ওনলি ওয়ান্স।”
মাইরা এবার শব্দ করে কেঁদে দেয়। ইরফান ভড়কে যায়। ঢোক গিলে চোখ বুজল। মাইরাকে ছেড়ে দেয়। ঘনঘন শ্বাস নিয়ে চোখ মেলে মাইরার দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট, এভাবে আমার সামনে আর একবার আসলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব।”
কথাটা বলেই গায়ে শার্ট জড়িয়ে ব্যাক সিট থেকে নেমে দাঁড়ায়। হনহন করে হেঁটে অনেকটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরায়।
কিছুক্ষণ পর শুদ্ধ এসে বলে,
“কি হলো? পাঁচ মিনিট হয়নি তো!”
ইরফান আনমনে বলে,
“আই ফিল লাইক আ’ম গেটিং হুকড(আ’সক্ত), ইভেন উইথ-আউট সবস্টেন্সেস(মা’দক’দ্রব্য)। ইট’স আ বিগ প্রবলেম।”
শুদ্ধ ইরফানের কথাটা বোঝার চেষ্টা করল। কেন বলল এটা? মনে হয় বুঝল। হঠাৎ-ই শব্দ করে হেসে দেয়। ইরফান থতমত খেয়ে শুদ্ধর দিকে বিরক্ত চোখে তাকায়। শুদ্ধ বা হাত কোমড়ে রেখে হাসি আটকে বলে,
“এটা প্রবলেম না, এটা সলিউশন।”
ইরফান রেগে বলে, “এখান থেকে যা।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“বেশি কষ্ট হচ্ছে? এলকোহল ছাড়া নেশাগ্রস্ত হওয়া তো ভালো লক্ষ্মণ বাবুু। আহারে,, পৃথিবীর সব পুরুষেরা যদি মাইরার স্বামীর মতো বউকে দেখেই মাতাল হতো, তাহলে আর এলকোহলের এতো দাম থাকতো না।”
ইরফান রেগে বলে, “আই ডোন্ট লাইক হার। সি ইজ আ স্টুপিট গার্ল।”
বলেই হাতের সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে হনহন করে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে গলা চড়িয়ে বলে,
“তুমি যে বা’স’র সেরেও বলবা, আই ডোন্ট লাইক হার,, সেটা আমি বুঝে গেছি পিও।”
ইরফান আজ এসেছে মাইরাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাওয়ার জন্য। রেডি হয়ে ঘড়িতে একবার সময় দেখল, বিকাল ৩:৩০।
তার ঘর থেকে বেরিয়ে মাইরার ঘরের ভিড়ানো দরজা ঠেলে ভেতরে যায়। মাইরা বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল। ঘুমায় নি, তবে ঘুমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ইরফান গম্ভীর গলায় গলায় বলে,
“রেডি হও।”
মাইরা ইরফানের গলা পেয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসে। ভীত চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। আমতা আমতা করে বলে,
“কোথায় যাবো?”
ইরফান দ্রুতপায়ে এগিয়ে আসে। মাইরা বেডের ওপাশে নেমে বলে,
“আমি আপনার সাথে যেতে চাইনা। গাড়িতে উঠলে আপনাকে কোন ভূতে ধরে আল্লাহ জানে।”
ইরফান ধমকে বলে,
“স্টুপিট, থা’প্প’ড় খেতে না চাইলে দু’মিনিটে রেডি হবে।”
মাইরার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। ইরফান মাইরার হাত টেনে ধরলে মাইরা মাথা উঁচু করে বলে,
“আমি আপনার সাথে যেতে চাই না অ’সভ্য লোক। ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে একদম কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“থা’প্প’ড় ছাড়া কথা কানে যাবে না?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“আপনি আগে কবিরাজ দেখান।”
ইরফান রাগান্বিত স্বরে বলে,
“স্টুপিট, আমাকে তোমার পা’গ’ল মনে হয়?”
মাইরা আনমনে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে নিজেই চোখ বড়বড় করে তাকায়। ইরফান রেগে মাইরার গাল চেপে বলে,
“হোয়াট রাবিশ! আমায় না রাগিয়ে শান্তি পাও না?”
মাইরার ভয়ে আর শক্তহাতে গাল চেপে ধরায় ব্য’থায় চোখের কোণে পানি জমে। ইরফান মাইরার গাল ছেড়ে বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? কাঁদছ কেন?
মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। ইরফান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধমকে বলে,
“ইডিয়েট, কিছু করেছি আমি? রেডি হও, ফাস্ট।”
এরপর শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলে,
আজ পাকামো করলে সেদিনের দশটা থা’প্প’ড় সহ আজকের ডিফরেন্ট শাস্তি গুণে গুণে দিয়ে দিব।”
মাইরা মাথা নিচু করে বলে, “আপনি যান। আমি রেডি হই।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে, “নো”
মাইরা মুখ বাঁকিয়ে বোরখা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে পরে নেয়। হিজাব ঘরেই বেঁধে নেয়। রেডি হওয়া শেষ হলে ইরফান মাইরার হাত ধরে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে তৃণা বেগমকে বলেছে।
ইরফান গাড়ির খুলে দিলে মাইরা আমতা আমতা করে,
“আমি পিছনে একা বসতে চাই।”
ইরফান বোধয় মাইরার মনোভাব বুঝলো। নিজের উপর রাগ হলো সবচেয়ে বেশি। তখনকার বারবার অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য। এরপর বাবার উপর রাগ হয়, এই বাচ্চাকে তার গলায় ঝুলানোর জন্য। আর এই স্টুপিটকে তো থা’প্প’ড় দিয়ে হসপিটালের বেডে পাঠাতে ইচ্ছে করছে। রেগে মাইরাকে ধাক্কা দিয়ে সামনের সিটে বসিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আই ডোন্ট লাইক ইউ। সো, ফালতু চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। স্টুপিট।”
বলে শব্দ করে গাড়ির ডোর লাগায়। এরপর সে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
মাইরা মুখ ভেঙিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে,
‘পছন্দ করবেনা, আবার অ’সভ্য কাজ করতে আসবে। অ’সভ্য লোক একটা।’
একা একাই মনে মনে বিড়বিড় করে মুখ বাঁকায়।
প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি ড্রাইভ করার পর কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছে গাড়ির ব্রেক কষে ইরফান। পাশ ফিরে তাকালে দেখল মাইরা ঘুমিয়ে আছে। স্টিয়ারিং-এ হাত রেখে গম্ভীর চোখে মাইরার মুখপানে চেয়ে রইল। দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। তার নিজের উপর এতো মেজাজ চড়ে যায়! নিজের এসব অস্বাভাবিক আচরণে ভীষণ বিরক্ত নিজের উপর-ই। বিড়বিড় করে,
“ইউ আর আ ডেঞ্জারাস গার্ল।”
এরপর সিগারেট ধরায়। দৃষ্টি সামনে ব্যস্ত নগরীতে। দু’মিনিট পেরোতেই মাইরার অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ইরফানের ধ্যান ভাঙে। মাইরার দিকে তাকালে মাইরার প্রবলেম এর কথা মনে পড়তেই সিগারেট এর আগা হাতে চেপে নিভিয়ে দেয়। দ্রুত গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দেয়।
মাইরা হা করে নিঃশ্বাস নিতে চায়। ইরফান ভ্রু কুঁচকে মাইরার দিকে চেয়ে রইল। কপালে চিন্তার ভাঁজ। মাইরাকে ধরতে হাত এগিয়েও হাত গুটিয়ে এনে গাড়ির স্টিয়ারিং শক্তহাতে চেপে ধরল। মাইরাকে ধরল না, চুপচাপ তাকিয়ে রইল মাইরার অস্বাভাবিক মুখপানে। কিছুক্ষণ পেরোতেই মাইরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ইরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চোখ সরিয়ে নেয়।
ফোন ভাইব্রেট হলে ইরফান পকেট থেকে ফোন বের করে। গাড়ির বাইরে বেরিয়ে কল রিসিভ করে কানে দেয়।
“কোথায় তুই?”
“বাইরে”
“কতক্ষণ লাগবে?”
“ডোন্ট নো।”
ওপাশ থেকে সীমান্ত রেগে বলে, “আরে ভাই কোন প্রেসিডেন্টকে আনছিস বল তো? আমি বাড়ি গেলাম।”
ইরফান রেগে বলে, “যাবি না।”
“তো কখন আসবি সেটা বল এট লিস্ট।”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“ওর ঘুম ভাঙলে।”
“মানে?
কথাটা বলে সীমান্ত তিন তলা থেকে রাস্তায় তাকালে ইরফানকে দেখতে পেয়ে বলে,
এই এক সেকেন্ড, ওই তো তুই দাঁড়িয়ে আছিস। মশকরা করছিস আমার সাথে?”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে, “কোথাও যাবি না। চেম্বারে বসে থাক।”
এটা বলে সীমান্তকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দেয়। গাড়ির ডোর খুলে গাড়িতে বসে পাশে তাকিয়ে মাইরাকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ব্যাক সিট চেক করলে সেখানেও না দেখে অবাক হয়। দ্রুত গাড়ি থেকে বেরিয়ে পিছনে তাকালে দেখল মাইরা একা একা হেঁটে পিছন দিকে যাচ্ছে। ইরফান রেগে বোম হয়ে যায়। একপ্রকার দৌড়ে মাইরার পিছে গিয়ে মাইরাকে টেনে তার দিকে ফিরিয়ে চিৎকার করে বলে,
“আর ইউ ম্যাড? বেরিয়েছ কেন?”
মাইরা ভীত চোখে তাকায়। তার ঘুম ভাঙলে ইরফানকে না দেখে ভয় পেয়েছিল। গাড়ি থেকে বেরিয়ে ইরফানকে কলে কথা বলতে দেখে সে একটু হাঁটছিল ফাঁকা রাস্তায়। ভালো লাগছিল তাই।
ইরফানের রাগ দেখে কিছুটা ভয় পায়। আমতা আমতা করে বলে,
“তো আমি কি করব? আমার হাঁটতে ভালো লাগছে। দেখুন তো কি সুন্দর প্রকৃতির হাওয়া। আপনি তো রোবট। সারাদিন এসির বাতাস খেয়ে খেয়ে এখন প্রকৃতির হাওয়া আর ভালো লাগে না আপনার। লাগবেও না, ব্রয়লার মুরগিদের….
ইরফানের হাতে মার না খেয়ে এর মুখ থামবে না। ইরফান মাইরার মুখ চেপে ধমকে বলে, “সাট আপ।”
মাইরা কেঁপে ওঠে ধমক খেয়ে। ইরফান রেগে বলে,
“স্টুপিট, পা’গল বানিয়ে ছাড়ছে আমায়।”
ইচ্ছে তো করল একে ঠাস ঠাস করে লাগিয়ে দিতে। চোখ বুজে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা চালায়। এরপর মাইরার ডান হাতের কব্জি শক্তহাতে ধরে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় সামনের বিল্ডিংয়ের দিকে। মাইরা আর কিছু বলল না। বললে হয়তো সত্যি সত্যিই থা’প্প’ড় খেতে হবে।
“এটা কে হয় তোর?”
ইরফান নির্দ্বিধায় বলে, “কেউ না।”
সীমান্ত চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। কেউ না? আবার তাকে এক সপ্তাহ হলো জ্বালিয়ে মারছে। শুদ্ধ যে বলল ইরফান ছ্যাঁকা খেয়েছে। এ রিলেশন করছে? এটা তো সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা এই মেয়ে তো অনেক ছোট। ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,
“ইনায়া ছাড়া আর কোন বোন ছিল না-কি তোর?”
ইরফান রেগে বলে,
“তোকে ট্রিটমেন্ট করতে বলা হয়েছে। রহস্য উদ্ঘাটন করতে না।”
সীমান্ত পাত্তা দিল না ইরফানের কথা। মাইরার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার নাম কি? ইরফানের কে হও তুমি?”
মাইরা তার নাম বলে। সাথে বলে,
“আমি বানের জলে ভেসে এসেছি।”
সীমান্ত হা করে তাকায় মাইরার দিকে। ইরফান বিরক্ত চোখে তাকায়। সীমান্ত হেসে বলে,
“বুঝলাম না।”
ইরফানের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
কি বলছে এ?”
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“একটা বাজে কথা বললে এইখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলব তোমায়।”
মাইরা বলে, “আপনিই তো বললেন কেউ না,, তাই আমি একটা যোক্তিক উত্তর দিলাম।”
ইরফান বসা থেকে দাঁড়ালো। এর পাশে থাকলে যেকোনো সময় এ মার খাবে। রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“পাঁচ মিনিটে ওর ট্রিটমেন্ট করবি। ফাস্ট।”
সীমান্ত কিছু বলল না। ইরফান কেমন তা তো জানেই। মাইরার দিকে চেয়ে গভীর ভাবনা ভেবে বলে,
“তুমি ইরফানের কে বলো তো?”
মাইরা গালে হাতে দিয়ে বলে,
“সেটা আপনার বন্ধুকেই জিজ্ঞেস করুন।”
সীমান্ত অবাক হয়ে বলল, “তুমি কি করে জানলে আমরা ফ্রেন্ড?”
“কথা শুনেই বোঝা যায়।”
“ওহ। ইন্টেলিজেন্ট গার্ল।”
ইরফান এগিয়ে এসে রেগে সীমান্তের কলার ধরে বলে,
“আমার ওয়াইফের সাথে তুই গল্প করছিস কোন সাহসে? হু আর ইউ?”
সীমান্ত চোখ বড় বড় করে তাকালো। ওয়াইফ? আড়চোখে মাইরার দিকে তাকালো। এ বিয়ে করল কবে? এই মেয়ে ইরফানের ওয়াইফ? বিস্ময় কণ্ঠে বলল, “আনবিলিভেবল!”
ইরফান সীমান্তের কলার ছেড়ে বলে,
“ফাস্ট ওর চিকিৎসা কর। একটা বাড়তি কথা বললে মুখ ভেঙে দিব।”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। কি বলছে এই লোক। বুঝতে পারছে না। গলা নামিয়ে বলছে, তাই শুনতে পায় না। চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“আপনার বন্ধুর কাছে আমার নামে কি বলছেন? দেখুন আমি যেমন-ই হই, আপনিও যে খুব ভালো মানুষ তা কিন্তুু না।”
ইরফান রেগে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা ঢোক গিলে মুখ চেপে ধরে। বিড়বিড় করল, ‘ইশ! মিস্টেক মিস্টেক,, আর কথা বলব না।’
সীমান্ত চোখ বড় বড় করে তাকায়। ওরে বাবা এটা নাকি ইরফানের বউ। কেমনে সম্ভব? একে তো ছোট, আরেকটা গুণ বেশি কথা বলে। সীমান্ত ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমি কনফিউজড। এট ফাস্ট, তুই এমন মেয়েকে মারাত্মক অপছন্দ করিস। আর সেকেন্ডলি তুই এর জন্যই এতো….”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“মুখ বন্ধ রাখ। আর ট্রিটমেন্ট কর। ফাস্ট।”
মাইরা গাড়িতে বসে সব ওষুধ তার কোলের উপর ঢেলে নেড়েচেড়ে দেখছে। এতো ওষুধ খেতে হবে তাকে? দু’টো ইনহেলারও আছে। ইরফান গাড়ি থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান তার দিকেই চেয়ে আছে। দুপুরের কথা মনে পড়লে ঢোক গিলে। দ্রুত সব ওষুধ প্যাকেটে ভরে নেয়। এরপর দরজা খুলতে চায়, তবে পারে না। ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে আছে। মাইরা মৃদুস্বরে বলে,
“দরজা খুলছে না কেন?”
ইরফান চোখ মেলে তাকায় মাইরার দিকে। ইরফানের চোখগুলো হালকা লাল মনে হলো মাইরার কাছে। মাইরা অবাক হয়ে বলল,
“আপনার কি অসুস্থ লাগছে?”
ইরফান শার্টের বোতাম খুলে। মাইরা ঢোক গিলে কিছু বলতে চায়। ইরফান তিনটে বোতাম খুলে দু’হাত আড়াআড়িভাবে গুঁজে লম্বা শ্বাস টানে। মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“দরজাটা খুলে দিন না! ইনায়া আপুর সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। বাবা, আপনার মা সবাই।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“সবার জন্য এতো চিন্তা?”
মাইরা গালে হাত দিয়ে বলল,
“সবাই আমাকে একটু একটু ভালোবাসে বুঝলেন? তাই আমিও তাদের একটু একটু ভালোবাসি। সবাই তো আর আপনার মতো খ’বিশ না।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে চোখ বুজল। মাইরা আবারও দরজা খোলার চেষ্টা করে, তবে পারেনা। উল্টো ঘুরে বলে,
“দরজা খুলে দিন।”
ইরফান চোখ বুজেই শান্ত স্বরে বলে, “নো। জ্বালিয়ো না।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। নো মানে। সে কি সারারাত গাড়িতে থাকবে। উফ! এই লোকটা আসলেই একটা পাগল হয়ে গেছে। সে কখন জ্বালালো? উল্টে এই লোকটাই তাকে জ্বালাচ্ছে। ভালো করে দেখল ইরফানকে। ঘুমালো না-কি?
এমন শুয়ে আছে কেন? বেশি অসুস্থ না-কি? মাইরা একটু এগিয়ে গিয়ে ইরফানকে বোঝার চেষ্টা করে। হঠাৎ-ই ইরফান চোখ মেলে মাইরাকে তার সামনে দেখে ধমকে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা দ্রুত পিছিয়ে আসতে নিলে ব্যালেন্স হারিয়ে ঠাস করে ইরফানের পেটের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে। ইরফান দু’হাত বুকে গুঁজে রেখেই গম্ভীর চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা ভয়ে দ্রুত পিছিয়ে এসে তার সিটে বসে আমতা আমতা করে বলে,
“স্যরি স্যরি! আমি আসলে দেখছিলাম আপনি কতটা অসুস্থ।”
ইরফান কিছু বলে না। গাড়ির লক খুলে নিজেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরাও ওপাশ থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দেয়।
“ভাইয়া তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
ফাইজ ল্যাপটপে অফিসিয়াল কিছু কাজ করছিল। বোনের কথায় ভ্রু কুঁচকে বলে, “হোয়াট?”
ফারাহ মিটিমিটি হেসে বলে, “স্পেশাল সারপ্রাইজ।”
ফাইজ ল্যাপটপে আঙুল চালাতে চালতে বলে,
“কি সেটা? দিয়ে বের হ। আমার কাজ আছে।”
ফারাহ হাতের ফোনের গ্যালারি থেকে একটা পিক বের করল। রেস্টুরেন্টের এক ক্যাফেতে সে, ইনায়া আর ইনায়াকে ঘেঁষে গালের সাথে গাল লাগিয়ে বসে আছে তার এক বন্ধু। ফারাহ হাতের ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এই যে তোমার সারপ্রাইজ।”
ইরফান মাথা উঁচু করে ফারাহের হাত থেকে ফোন নিয়ে সামনেট ছোট টেবিলে রাখে। ফারাহ বিরক্ত হয়ে ল্যাপটপ কেড়ে নিলে ফাইজ রেগে বলে,
“ফারাহ থা’প্প’ড় খাবি। ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করছি। ডিস্টার্ব করছিস কেন?”
ফারাহ মন খারাপ করে বলে,
“এতো কষ্ট করে একটা সারপ্রাইজ অ্যারেঞ্জ করলাম, আর তুমি এভাবে তার প্রতিদান দিচ্ছ? বিলিভ মি, আমার সারপ্রাইজ টা তোমার এই কাজের চেয়ে হাজার গুণ ইম্পর্ট্যান্ট। হাজার হোক ইনায়া রিলেটেড বলে কথা।”
ফাইজ পুরো কথাটা বিরক্তি নিয়ে শুনলেও লাস্ট লাইনে ইনায়ার কথা শুনে মুখ থেকে বিরক্তি মুছে যায়। ফারাহ মনে মনে হাসে ভাইয়ের অবস্থা দেখে। ল্যাপটপ টেবিলে রেখে তার ফোন টেবিল থেকে তুলে ফাইজের দিকে এগিয়ে দেয়। ফাইজ বিনাবাক্যে ফোন নেয়। আনমনে ফোনের ডিসপ্লেতে চোখ রাখলে ভ্রু কুঁচকে যায়। ধীরে ধীরে কপালের রগ ফুলে ওঠে। ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। রাগে শরীর কাঁপছে। মুহূর্তেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ফারাহের ফোন ছুঁড়ে ফেলে। চিৎকার করে বলে,
“তোর সাহস কি করে হলো ওর পাশে এই অ’সভ্য ছেলেকে ঘেঁষাঘেঁষি করাতে দেয়ার?”
ফারাহ চোখ বড় বড় করে তাকায়। তার ফোনের টিকিটিও খুঁজে পাচ্ছে না। চারদিকে চোখ বুলিয়ে ফোন খুঁজতে খুঁজতে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“আমার ফোন কোথায় গেল?”
খুঁজতে খুঁজতে এক কোণায় পায়। একদম গুঁড়া গুঁড়া হয়ে গেছে। অসহায় চোখে ফোনের খন্ডগুলো হাতে তুলে দেখে। কেঁদেই দিবে মেয়েটা। একটু মজাও করা যায় না। ধ্যাত!
ফাইজের দিকে চেয়ে রেগে বলে,
“আমার ফোন ভাঙলে কেন? কয়দিন আগেই বাবা কিনে দিল!
আরে ওটা আমি বসে বসে এডিট করেছিলাম। তাই বলে তুমি আমার ফোনটা এভাবে ভাঙবে?”
ফাইজ কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় ফারাহের লাস্টে এডিটের কথা শুনে। ধুপ করে সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে রেগে বলে,
“তোর আর শুদ্ধর কি আর কাজ নেই আমার পিছে লাগা ছাড়া? বেয়া’দব গুলো। মানুষ হেল্প করে,, আর এই দু’টো মীরজাফর আমার পিছে হাত ধুয়ে পড়ে থাকে,, তাও শুধু আমার হাফ বউটাকে নিয়ে। যা বের হ। নয়তো এবার তোর গালে ফটাফট বেহিসাব থা’প্প’ড় পড়বে। আর একবার যদি আমার হাফ বউ এর সাথে এসব কিছু করেছিস বা বলেছিস,, তোদের জেলে ভরার ব্যবস্থা করে তবেই আমি কবুল বলব। বেয়া’দব গুলো।”
ফারাহ অসহায় কণ্ঠে বলে,
“আমাকে ফোন কিনে দাও।”
ফাইজ রেগে বলে,
“পারব না।”
“ভাঙলে কেন তাহলে?”
“আমার বউকে নিয়ে টানাটানি করলি কেন?”
“সত্যি সত্যি কিন্তুু ওদের মধ্যে ভাব জমিয়ে দিব বলে দিলাম।”
ফাইজ রেগে তাকায়। ফারাহ আমতা আমতা করে বলে,
“আমার তো একটাই ভাই। দাও না ভাইয়া। বাবা দিবে না। আমি ফোন ছাড়া কিভাবে থাকবো?”
“সেটা আগে মনে ছিল না?”
ফারাহ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
“আর করব না। এবার থেকে হেল্প করব সত্যি।”
ফাইজ কিছু একটা ভেবে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলে,
“ওকে রেডি হো। তবে সাথে ইনায়াকে নিবি।”
ফারাহ অবাক হয়ে বলে,
“ইরফান ভাই রাতে বেরোতে দেয় না।”
“আমি আছি জানলে দিবে। তুই ইনায়াকে রাজি করা। নয়তো ফোনের কথা ভুলে যা।”
ফারাহ এগিয়ে এসে ফাইজের ফোন নিয়ে ফারাহের ফোনে কল করে। বেশ কয়েকবার দিল, কিন্তুু রিসিভ হয় না। ফারাহ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“রিসিভ করে না তো।”
ফাইজ বিষাদ সুরে বলে,
“বোঝ কেমন প্যারায় থাকি আমি। এর মধ্যে তুই আর শুদ্ধ এসে জোড়া লাগিস। বেয়া’দব গুলো।”
ফারাহ উপায় না পেয়ে ইরফানের ফোনে ফোন দেয়।
~
মাইরা তার ঘরে গিয়ে বোরখা ছেড়ে, হাতমুখ ধুয়ে নিয়ে ইনায়ার ঘরে যায়। ইনায়া ঘর থেকেই বের হচ্ছিল, মাইরাকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
“আরে মাইরা, তুমি কখন আসলে?”
মাইরা ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে হেসে বলে,
“একটু আগেই। প্রথমে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। কেমন আছো আপু?”
ইনায়া হেসে বলল,
“এইতো,, তোমার তো এক্সাম। এক্সামের মাঝে আসলে কেন?”
মাইরা ইনায়াকে ছেড়ে ইনায়ার দু’হাত ধরে নাড়াতে নাড়াতে বলে,
“তোমার ভাইয়া এনেছে। আপু তুমি কবে যাবা গ্রামে? একটা কথা শুনেছি,, আমার এক্সাম শেষেই নাকি তোমার বিয়ে?”
ইনায়া একটু লজ্জা পায়৷ মাইরা হাসতে হাসতে ইনায়ার হাত ধরে ঘুরতে থাকে। ইনায়া চেঁচিয়ে বলে,
“আরে মাইরা পড়ে যাবো, আস্তে আস্তে।”
মাইরা ঘুরতে ঘুরতে হেসে বলে,
“নিজেদের মানুষের বিয়েতে হেব্বি মজা হয় আপু। আমার তো ভাবতেই কি যে মজা লাগছে!”
মাইরার খোঁপা করা চুলগুলো খুলে যায়। কালো রঙের ওড়না সামনে থেকে দু’কাঁধে নেয়া। পরনে কালো রঙের গোল জামা। পায়ে কালো চুড়ি পায়জামা পরা। মেয়েটা খিলখিল করে হাসতে হাসতে ইনায়ার হাত ধরে বাচ্চাদের মতো ঘুরতেই থাকে।
ইরফান তার ফোন নিয়ে ইনায়ার ঘরে গিয়ে দেখে মাইরা ইনায়ার হাত ধরে ঘুরছে। ইরফান অদ্ভুদচোখে তাকালো। ফর্সা গায়ে কালো জামা, পায়জামা, ওড়না, কালো কিচকিচে খোলা চুল সবমিলিয়ে ইরফানের কাছে একটু নয়, অনেক বেশি অন্যরকম লাগলো মাইরাকে। তবে বাচ্চাদের মতো ঘোরার ব্যাপার পছন্দ হলো না। এক্ষুনি পড়ে যাবে মনে হচ্ছে।
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২০ (২)
হঠাৎ-ই ইনায়ার হাত থেকে মাইরার হাত ছুটে যায়। ইনায়া নিজেকে সামলে দাঁড়িয়ে পড়লেও মাইরা ছিঁটকে পড়ে যেতে নিলে পিছনে ইরফানের বুকে এসে মাইরার পিঠ ধাক্কা খায়।
মাইরা ঘাড় বাঁকিয়ে পিছু ঘুরে ইরফানকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়। সাথে একটু ভয়ও পায়। এই লোকটা কোথা থেকে চলে আসে?
ইরফান রেগে বলে, “তুমি বড় হবা না?”