প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২২
Drm Shohag
মাইরা ইরফানের বুকে পিঠ লাগিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে পিছু ফিরে তাকিয়ে,, আমতা আমতা করে বলে,
“স্যরি স্যরি আমি বুঝতে পারিনি।”
ইরফান রেগে বলে, “কি বোঝো তুমি?”
মাইরা কণ্ঠে ঝাঁঝ ঢেলে বলে,
“আমি সব বুঝি, বুঝলেন?”
ইরফান বিড়বিড় করে, “গাধা।”
মাইরা দ্রুত ইরফানের থেকে দূরে সরতে নিলে চুলে টান পড়ে আবারও ইরফানের বুকে এসে ধাক্কা খায়। মাথার পিছনে হাত দিয়ে মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। মাইরা অসহায় গলায় বলে, “আমার চুল।”
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়েই বা হাতে মাইরার মাথা ধরে ধাক্কা দেয়। ফলস্বরূপ শার্টের বোতামে আটকানো চুলগুলো ফড়ফড় করে ছিঁড়ে যায়। মাইরা ব্য’থা পেয়ে মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। পিছনে মাথা ডলে ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে কোমড়ে দু’হাত রেখে রেগে বলে,
“আপনি আমার চুল ছিঁড়লেন কেন?”
ইরফান চোখ বুজে ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। মাইরার সাথে লেগে গিয়ে ইনায়ার দিকে ফোন বাড়িয়ে দেয়। মাইরা বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ-ই ইরফান তার সাথে লেগে দাঁড়ানোয় মাইরার মুখ ইরফানের বুকের সাথে লাগে। মাইরা ঢোক গিলে দ্রুত ইরফানের থেকে সরে দাঁড়ায়। বিড়বিড় করে, “অ’সভ্য লোক।”
ইরফান ইনায়াকে ফোন দিয়ে আড়চোখে তাকায় মাইরার দিকে। গম্ভীর গলায় বলে,
“আমাকে কফি দিয়ে যাবে আমার রুমে। ফাস্ট।”
মাইরা ইনায়ার পাশে গিয়ে বলে,
“আমি আপুর সাথে গল্প করব। আপনি অন্যকাউকে বলুন।”
ইরফান রেগে বলে,
“তোমাকে আসতে বলেছি আমি।”
মাইরা মন খা’রা’প করে বলে,
“ও ইনায়া আপু, দেখো তো তোমার ভাই আমাকে খাঁটিয়ে মারছে শুধু। আমি তো কালকেই চলে যাবো। একদিন তোমার সাথে গল্প করি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইনায়া ফোন হাতে ধরে একবার মাইরা আরেকবার তার ভাইয়ের দিকে তাকায়।
এসব রেখে ফোন লাউডে দিলে ওপাশ থেকে ফারাহ কথা বলে। মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“এটা কে আপু?”
ইনায়া ইরফানের দিকে তাকায়। ইনায়ার দৃষ্টি দেখে মাইরাও ইরফানের দিকে তাকায়। এমন খেয়ে ফেলা চোখে তাকিয়ে আছে কেন লোকটা। মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“কি করেছি আমি?”
ইরফান কিছু বলল না। একই দৃষ্টিতে মাইরার দিকে চেয়ে রইল। মাইরা ঢোক গিলে। এই লোকটা এমন করে কেন। আমতা আমতা করে বলে, “আপনি যান।”
ইরফানের গম্ভীর স্বর, “নো।”
ওপাশ থেকে ফারাহ বলে,
“ইনায়া ভাবি আমার সাথে বের হবে? ফোন কিনতে যাবো। প্লিজ তুমিও চলো।”
ইনায়া বলে,
“আমি তো ফোন তেমন চিনিনা আপু।”
“ভাইয়া কিনে দিবে, তুমি আর আমি সাথে থাকবো। প্লিজ চলো।”
ফাইজ থাকবে শুনে ইনায়া ঢোক গিলে। ইনায়া ইরফানের দিকে তাকালে ইরফান বলে, “রেডি হয়ে যা। দ্রুত ফিরবি।”
ইনায়া মাথা নাড়লো। ভাইয়া বলেছে মানে তো যেতেই হবে। অতঃপর ঢোক গিলে শুকনো গলায় বলে, “আচ্ছা আপু।”
পাশ থেকে মাইরা মন খারাপ করে বলে,
“আমি আবার কালকেই চলে যাবো আপু। আমার তো এক্সাম। কালকে ফোন কিনলে হবে কি-না শোনো তো। আমি আজ তোমার সাথে একটু গল্প করি!”
ফোন লাউডে থাকায় ওপাশে থাকা ফারাহ শুনতে পায় মাইরার কথা। অতঃপর বলে,”
“কে কথা বলে ইনায়া ভাবি?”
ইনায়া ইরফানের দিকে তাকালো। ভাইয়ার বউ বললে ভাইয়া রেগে যায় কি-না সেই ভয় পায়। মাইরা নিজেই বলে,
“আমি ইনায়া আপুর ভাইয়ের বউ, আপু।”
ইনায়া মাইরার কথায় অবাক না হলেও ওপাশ থেকে ফারাহ হেসে বলে,
“তুমিও চলো আমাদের সাথে ইরফান ভাইয়ের বউ। আমরা রাস্তায় গল্প করব।”
মাইরা খুশি হয়ে বলে,
“ওকে ওকে,, আমিও যাবো।”
ইরফান ইনায়ার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ফোন কানে নিয়ে বলে,
“শুধু ইনায়া যাবে। ফাইজকে বলবে ইনায়াকে দ্রুত বাসায় পৌঁছে দিতে।”
বলেই কল কেটে দেয়।
মাইরা রেগে বলে,
“আমি আপুদের সাথে গেলে আপনার প্রবলেম কি? আমি যাবো।”
ইরফান কিছু বললো না। বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
“কফি আনো, ফাস্ট।”
মাইরা পিছন থেকে রেগে বলে,
“আমার বয়েই গেছে। পারবো না আমি। খ’বিশ লোক। আমার সব শান্তি কেড়ে নিচ্ছে।”
ইনায়া মাইরার মুখ চেপে ধরে বলে,
“মাইরা চুপ কর। ভাইয়া মারবে।”
মাইরা অসহায় মুখে তাকালো ইনায়ার দিকে। ইনায়ার খারাপ লাগলো। কিন্তুু ভাইয়া বলেছে মাইরা যাবে না, মানে যাবে না। এখানে তার কি করার? সে নিজেই যেতে ভয় পাচ্ছে, কিন্তুু তার ভাই বলেছে, এখন তো যেতেই হবে।
মাইরা কিছু একটা ভেবে বলে,
“চিন্তা কর না আপু। আমি বাবার থেকে অনুমতি আনছি। আমি একা একা থাকবো না। বইও তো নেই। তুমি রেডি হও।”
কথাটা বলে ঘরের বাইরে বের হয়ে দ্রুতপায়ে এগিয়ে যায়। ইরফানের ঘর পাস করে যাওয়ার সময় হাতে টান পড়ে, কিছু বোঝার আগেই ইরফান মাইরাকে তার ঘরে টেনে নিয়ে ডোর লক করে দেয়। মাইরা চিৎকার করার আগেই ইরফান মাইরার মুখ চেপে বলে,
“কফি আনতে বলেছি না?”
মাইরা দু’হাতে তার মুখ থেকে ইরফানের হাত সরাতে চায়। তবে ব্যর্থ হয়। উম উম করে। ইরফান শান্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“কোথাও যাবে না তুমি।”
কথাটা বলে মাইরার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। দূরে সরে দাঁড়ায় মাইরার থেকে। মাইরা ছাড়া পেয়ে দ্রুত দরজা টেনে খুলতে চায়, পারে না। এই ঘরের লকটা কেমন যেন, সে পারেনা। পিছু ফিরে বলে,
“কফি আনার জন্য তো দরজা খুলতে হবে। খুলে দিন।”
ইরফান ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে বলে,
“নো নিড।”
মাইরার মুখটা অসহায় হয়ে যায়। এখন সে এই রুম থেকে বের হবে কি করে? অসহায় কণ্ঠে বলে,
“দরজা খুলে দিন।”
ইরফান ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় মাইরার পানে। মাইরা খেয়াল করল ইরফানের চোখ লাল। একটু এগিয়ে এসে বলল,
“আপনি কি অসুস্থ?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“তোমার কি মনে হয়?”
মাইরা কি বলবে বুঝতে পারে না। আমতা আমতা করে বলে,
“মনে হচ্ছে অসুস্থ।”
ইরফান চোখ বুজে বলে,
“হাসবেন্ড সিক থাকলে ওয়াইফের বাইরে বেরোনো নিষেধ। সো, তোমার বাইরে যাওয়া ক্যান্সেল।”
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায় ইরফানের দিকে। একদম ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে কোমড়ে ডান হাত রেখে রেগে বলে,
“আপনি আমাকে বউ মানেন না। স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন না-কি?”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলায়। মনে হলো গোল জামা পরিহিত এক ছোট পুতুল কোমড়ে হাত দিয়ে নাকের পাটা ফুলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরফানের মুখাবয়ব স্বাভাবিক। তবে দৃষ্টির প্রখরতা তীব্র।
মাইরা ইরফানের দৃষ্টি খেয়াল করে ওড়না দিয়ে মাথায় কাপড় টেনে নিজেকে ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
“একদম মেয়েদের শরীরের দিকে ঝুঁকবেন না। এসব ছেলেরা চরম লেভেলের অ’সভ্য হয়। আপনাকে তো সভ্যই লাগে। তো হঠাৎ ওমন অ’সভ্য হয়ে যাচ্ছেন কেন?”
মাইরা কথা শুনে ইরফানের চোখেমুখে বিস্ময় ভর করে। তাকে ক্যারেক্টারলেস বলছে এইটুকু মেয়ে? ইচ্ছে করল ঠাটিয়ে একটা থা’প্প’ড় দিতে। রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট আমার ক্যারেক্টারে আঙুল তুলছ? থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরা ঢোক গিলে বলে,
“আমি ভুল কি বলেছি? বউ মানবেন না৷ আবার অস’ভ্য কাজ করতে আসবেন। মেয়েদের দেখলেই ছেলেদের মাথা ঠিক থাকে না শুনেছি। এখন তো আপনিও ওমন হয়ে যাচ্ছেন।”
ইরফান ঝড়ের বেগে উঠে দাঁড়িয়ে মাইরার গাল চেপে রাগান্বিত স্বরে হিসহিসিয়ে বলে,
“ইউ নো, ইরফান নেওয়াজ কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায় না। ইডিয়ট।”
মাইরা ভয়ে কেঁদে দিবে প্রায়। এই লোকটা মুহূর্তেই এমন রেগে বোম হয়ে যায় কেন। আমতা আমতা করে বলে,
“স্যরি স্যরি! আসলে আমি বলতে চেয়েছি আপনার উপর জ্বিন ভর করে মাঝে মাঝে। আপনার দোষ নেই। আমাদের গ্রামে অনেকজনকে জ্বিন ধরত। সত্যি বলছি, বিশ্বাস করুন। আপনি প্লিজ একবার কবিরাজ টা দেখিয়ে আসুন।”
ইরফান হাসবে না রাগবে বুঝল না। এই গাধাকে কি বোঝাবে সে। মেজাজ খা’রা’প করে দিয়েছে। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে মাইরার গাল ছেড়ে দু’কদম পিছিয়ে দাঁড়ায়। মাইরা ঢোক গিলে। আরও রেগে গেল না-কি! একটুখানি চোখ তুলে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান এখনও শক্ত চোখে তার দিকে চেয়ে। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয় মাইরা। মাথা থেকে ওড়না পড়ে গিয়ে চুলগুলোর কিছু অংশ সামনে হেলে আসে।
“পুচকি মেয়ে, তোমার বডিতে আছে টা কী, যে আমি অ্যাট্রাকটেড হবো? বাইরে তোমার চেয়ে হাজার হাজার অ্যাট্রাকটিভ মেয়েরা ঘুরে বেড়ায়।
অ্যান্ড দ্য মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট পয়েন্ট, আই ডোন্ট লাইক ইউ। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
ইরফানের গম্ভীর গলায় কথাগুল শুনে মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি মেঝে জুড়ে ঘোরায়। খারাপ লোক তাকে কি অপমান করছে? ছোট মাথায় অতকিছু ধরলো না। আমতা আমতা করে বলে,
“আমি তো জ্বিনের কথা বলেছি।”
ইরফান ধমকে বলে,
“তোমার জ্বিনের অ্যাট্রাক্ট হতে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন পড়বে, স্টুপিট।”
এরপর এগিয়ে এসে মাইরার ওড়না মাথার উপর টান মেরে মাইরার মুখসহ প্রায় অর্ধেক ঢেকে দেয়, শক্ত হাতে মাইরার হাত টেনে দরজা খুলে মাইরাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“যদি আর একবার এলোমেলো হয়ে আমার সামনে আসতে দেখেছি তো আরও দশটা জ্বিনকে ডেকে এনে সব পেন্ডিং কাজ এক্ষুনি ফিনিশ করে ফেলব, ইডিয়ট।”
বলেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
মাইরা হা করে চেয়ে থাকে। লাস্টের কথাটা পুরো মাথার উপর দিয়ে গেল। মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়ায় বিরক্ত হলো।
তারেক নেওয়াজ এর ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করল,
‘খ’বিশ লোক,, নিজেই টেনে নিয়ে গেল আবার নিজেই ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল। আমি কখন বললাম সে আমাকে পছন্দ করে? সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করবে, আই ডোন্ট লাইক ইউ, আই ডোন্ট লাইক ইউ।’
লাস্ট কথাটা ইরফানের মতো করে মুখ ভেঙিয়ে বলে।
ফারাহ আর মাইরা ফাইজের গাড়ির ব্যাক সিটে উঠে বসে। ইনায়া উঠতে নিলে ফাইজ ইনায়ার হাত টেনে শব্দ করে গাড়ির ডোর লাগায়। ইনায়া যেন কারেন্ট শক খেয়েছে, ঝট করে পিছু ফিরে তাকায়। ফাইজ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে ইনায়ার দিকে। ইনায়া চোখ নামিয়ে নেয়। চোখ বিুজে ঢোক গিলে। ফাইজ শক্ত কণ্ঠে বলে,
“সামনের সিটে বসো।”
ইনায়া কিছু বলতে চায়। তার আগেই ফাইজ মৃদুস্বরে বলে ওঠে,
“লিটল কুইন? আমার কথা শোনো। আমি ভীষণ রেগে আছি তোমার উপর। রাগ বাড়িয়ো আর প্লিজ!”
ইনায়া অবাক হয়ে তাকায় ফাইজের দিকে। ফাইজের মুখ গম্ভীর। তবে কণ্ঠস্বর নরম ছিল। ফাইজ ইনায়ার হাত ছাড়লো না। সামনের ডোর খুলে দিলে ইনায়া ধীরে ধীরে উঠে উঠে। ফাইজ চুপচাপ দেখল। শব্দ করে দরজা লাগালো। ইনায়া কেঁপে ওঠে। ফাইজ রেগে আছে বুঝেছে। ফাইজ উঠে বসলে ইনায়া আড়চোখে একবার তাকায়। ফাইজ ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইনায়ার দিকে। ইনায়া সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়। ফাইজ এগিয়ে গিয়ে সিল্ট বেল্ট লাগাতে নিলে ইনায়া হঠাৎ ফাইজকে তার কাছে খেয়াল করতেই মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে। ফাইজ ইনায়ার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে সিল্ট বেল্ট লাগিয়ে দেয়।
পিছন থেকে মাইরা গলা ঝেড়ে বলে,
“আমি আর ফারাহ আপু কি অন্য গাড়িতে যাবো ভাইয়া?”
ফাইজ ভ্রু কুঁচকে পিছন ফিরে তাকালো। নিজের জায়গায় ঠিক হয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,
“এই যে ইরফানের বউ শোনো,, তোমাকে একটা দায়িত্ব দিলে ঠিকঠাক পালন করতে পারবে?”
মাইরা উৎসাহ নিয়ে বলে,
“কি দায়িত্ব ভাইয়া?”
ফাইজ গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
“তোমার ননদিনী যেন আমাকে এভোয়েড না করে এজন্য তুমি ট্রিকস ইউস করবে। পারবে না?”
মাইরা ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,
“কিন্তুু ইনায়া আপু তো আপনাকে পছন্দ….”
ইনায়া পিছু ফিরে বলে,
“মাইরা?”
মাইরা ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থেমে যায়। ইনায়া চোখের ইশারায় চুপ করতে বলে। মাইরা বুঝলো চুপ করতে বলছে, তাই আর কিছু বললো না। ফারাহ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। ফাইজ আড়চোখে ইনায়ার দিকে তাকায়। ঠোঁট বাঁকিয়ে একটুখানি হাসে। কিছুক্ষণ পর ফোনে কল আসে। ফাইজ গাড়ির সামনে থেকে ডান হাতে ফোন তুলে রিসিভ করে কানে দেয়।
“ওই স্টুপিট কোথায়?”
ফাইজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কোন স্টুপিট?”
ইরফান রাগে ফোঁসফোঁস করছে। এই মেয়েকে নিষেধ করেছিল যেতে কিন্তুু তার কথা শুনল না, কোন ফাঁকে চলে গিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ওকে নামিয়ে দিয়ে যা।”
ফাইজ বুঝল ইরফান মাইরার কথা বলছে। না বোঝার ভান করে বলল,
“একটু ভালো করে বল, আমি চিনতে পারছি না।”
ইরফান বিরক্তির স্বরে বলে, “কোথায় আছিস?”
ফাইজ মৃদুস্বরে বলে,
“নেটওয়ার্ক প্রবলেম, পরে কথা বলছি।”
বলেই কল কেটে দেয়। মনে মনে হাসছে। ভাবছে ইরফানের থেকে ওর বউয়ের মাঝে কি করে একটু ডিস্টেন্স তৈরী করা যায়! নাকানিচুবানি খাওয়ালে কেমন হয়? কিন্তুু পাশে ইনায়াকে দেখে সে ইচ্ছে আপাতত চাপা দিল। হাফ বউটাকে আজ শায়েস্তা করবে। তার ফোন ধরে না। সেই সাহস ছুটাবে। এরপর ইরফানকে সুন্দরমতো চুবানি খাওয়াবে। ভাইটা ঘাড়ত্যাড়া আর বোন হয়েছে ত্যাড়া।
ফোনের শোরুমের সামনে গাড়ি সাইড করে ফাইজ। ফারহা, মাইরা পিছন থেকে নেমে দাঁড়ায়। ফাইজ গাড়ি থেকে নেমে ইনায়ার পাশে দাঁড়ায়। ইনায়া ফারাহ আর মাইরার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে ফাইজ তার বা হাতে ইনায়ার ডান হাত আগলে নেয়। ইনায়া অবাক হয়ে মাথা তুলে তাকায়। ফাইজ তাকালো না ইনায়ার দিকে। হাত ধরে ফারাহের উদ্দেশ্যে বলে,
“ফোন চুজ কর, এসে কিনছি।”
কথাটা বলে বা দিকে এগোতে নিলে ইনায়া অবাক হয়ে বলে,
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?”
ফাইজ ঘাড় নামিয়ে ইনায়ার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে, “তোমায় শায়েস্তা করতে।”
ফাইজের পাশে মাইরা দাঁড়িয়ে বলে,
“এক্সকিউজ মি ভাইয়া!”
ফাইজ থতমত খেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। মাইরার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে, “হোয়াট?”
মাইরা বিড়বিড় করে, ‘ওহ এর মাঝেও ইংরেজদের স্বভাব আছে।’
ইনায়া ফাইজের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চায়। মোচড়ামুচড়ি করে। ফাইজ ভাবলেশহীনভাবে ইনায়ার হাতের বাঁধন আরও শক্তহাতে ধরে। ছেলেটা চটেছে বেশ। তবে নিজেকে সামলে রেখেছে বহু কষ্টে।
মাইরা ইনায়া আর ফাইজের হাতের দিকে দেখল, এরপর ইনায়ার মুখের দিকে। ইনায়া তার দিকেই চেয়ে আছে। মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আপু কি হয়েছে তোমার?”
ইনায়া কিছু বলার আগেই ফাইজ বলে,
“তুমি কিছু বলবে?”
মাইরা ফাইজের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, আপুকে ছাড়ুন।”
ফাইজ অবাক হয়ে বলে, “হোয়াট?”
মাইরা মৃদু হেসে বলে,
“আপনাদের তো বিয়ে হয়নি ভাইয়া। আমি ইনায়া আপুর ভাবি, তাই আমার দায়িত্ব হলো, ইনায়া আপুকে যেন কোনো পরপুরুষ না নিয়ে যেতে পারে।”
এরপর ইনায়ার অপর হাত ধরে বলে,
“এসো আপু, আমরা সবাই মিলে ফারাহ আপুর ফোন পছন্দ করি।”
ফাইজ অবাক হয়ে তাকায় মাইরার দিকে। ইনায়ার হাত ছাড়ে না। বিড়বিড় করে,
“মীরজাফরের তো কমতি ছিল না আমার জীবনে। এই নিউ মীরজাফর কোথা থেকে উদয় হলো?”
নিজেকে সামলে মৃদু হেসে বলে,
“মিসেস ইরফান নেওয়াজ, আমার হাফ বউয়ের সাথে আমার এক ভয়াবহ ইম্পর্ট্যান্ট প্রায়ভেট মিটিং আছে। প্লিজ হেল্প মি!”
ফাইজের সম্মোধনে মাইরার কেমন যেন দেহ জুড়ে শীতল স্রোত বয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলো। ইরফানের গম্ভীর মুখটা ভেসে ওঠে। আসলেই সে ওই লোকটা বউ। কেমন অদ্ভুদ শোনালো। গাড়ির সেই ভরদুপুরের কথা মনে পড়লো, মনে হয় তৃষ্ণা পেয়ে গেল। কিন্তুু এখানে আসার আগে ইরফানের ব্যবহারে সব ফুস হয়ে গেল। বিড়বিড় করল, ‘অ’সভ্য লোক।’
এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“ইনায়া আপু যাও তাহলে। ভাইয়া আপনারা যান। বাই বাই।”
বলে ফারাহের হাত ধরে শোরুমের ভেতরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
ইনায়া মাইরা আর ফারাহকে যেতে দেখলে কিছু বলতে চায়। তার আগেই ফাইজ ইনায়ার ডান কাঁধ বরাবর ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,
“লিটল কুইন, নো মোর ওয়ার্ডস। আমায় আর রাগিয়ো না।”
ইনায়ার মুখে অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে। ফাইজ ইনায়ার হাত ধরে সামনের দিকে নিয়ে যায়। ইনায়া হাঁটছে পিছু পিছু।
একটি ছোট ক্যাফেতে ফাইজ আর ইনায়া দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে কেউ নেই। ইনায়ার মনে হচ্ছে এটা পার্সোনাল ভাবে বুক করেছে। ফাইজ কারো সাথে ফোনে কথা বলছে, তবে ইনায়ার হাত ছাড়েনি।আরও বেশ কিছুক্ষণ কলে কথা বলে ফোন রাখল। এরপর ইনায়ার হাত ছেড়ে ইনায়ার সামনে দাঁড়ায়। ইনায়ার মাথা নিচু। ফাইজ এক পা এগিয়ে আসে ইনায়ার দিকে। ইনায়া দ্রুত পিছিয়ে যায় দু’পা। ফাইজ গম্ভীর গলায় বলে,
“হোয়াট’স ইওর প্রবলেম লিটল কুইন? আমার ফোন কল রিসিভ হয় না কেন?”
ইনায়া মাথা নিচু করে ঢোক গিলে বলে, “আমি তো আপনাকে ঠিককরে চিনিনা।”
ফাইজ ভ্রু কুঁচকে উঁচু গলায় বলে,
“চেনার জন্য কথা বলতে হয় কথা। এ্যাই মেয়ে, তোমার কোনো আইডিয়া আছে তোমার এই ব্যাড হ্যাবিট এর জন্য আমি রাতে ঘুমাতে পারছি না?”
ইনায়া ভয় পায়। তবে কোনো কথা বলে না। ফাইজ নিজেকে সামলে ছোট করে বলে,
“স্যরি!”
ইনায়া অবাক হয়। লোকটা কি পা’গল নাকি? এই ধমকায়, তো এই ভালো। ফাইজ আবারও বলে,
“কল রিসিভ কেন হয় না? বলো।”
ইনায়া মিনমন করে বলে,
“আমার আপনাকে ভয় লাগে।”
ফাইজ অদ্ভুদচোখে তাকায়। সে বাঘ না ভাল্লুক যে এই মেয়ে তাকে ভয় পায়? অবাক হয়ে বলে, “হোয়াই?”
ইনায়া কি বলবে বুঝতে পারে না। ফাইজ দ্রুত ইনায়ার দিকে চেপে গেলে ইনায়া মাথা তুলে ভীত স্বরে বলে, “দূরে থাকুন।”
ফাইজ থেমে যায়। ইনায়ার মুখপানে চেয়ে কেমন যেন স্তম্ভিত হয়ে যায়। তার হাফ বউটা কি সুন্দর! আর দূরত্ব সহে না।
ইনায়া মাথা নিচু করে নেয়। ফাইজ ধমকে বলে, “কেন ভয় পাও আমায়?”
ইনায়া ঢোক গিলে বলে, “আপনি হাসেন না।”
ফাইজ অদ্ভুদচোখে তাকালো। সে তো হাসে প্রয়োজন পড়লে। এখন সারাদিন হিহি করবে? ইরফান যে এই ইহজীবনে হেসেছে কি-না তার তো খবর নেই। অতঃপর বলে,
“রোবটের বোনের আবদার তার জামাই সারাদিন হাহা হিহি করবে। সারাদিন হাসবো কীভাবে আমি?”
লাস্ট কথাটা শক্ত গলায় বলে। ইনায়ার কান্না পাচ্ছে। এই লোকটা এমন কেন? ভালো করে কথাই বলতে পারে না। ফাইজ নিজেকে সামলে এপাশ-ওপাশ হেঁটে বলে,
“মারাত্মক রেগে আছি বুঝলে? ইচ্ছে তো করছে তোমাকে ক’ষিয়ে দু’টো থা’প্প’ড় দিয়ে এসব হ্যাবিট ছুটিয়ে দিই। বাট বিয়ের আগেই কিছু করতে চাইছি না। বিয়ের পর ভয় ছুটাবো থাপড়িয়ে, ওয়েট।”
ইনায়া মাথা নিচু করেই চোখ বড়বড় করে তাকায়। তার মানে তাকে বিয়ের পর মারবে? কত বড় সাহস? সেটা আবার বলছে? মাথা তুলে রেগে বলে,
“আপনি বউ পেটাবেন সেটা আবার আমাকে বলছেন?”
ফাইজ মনে মনে হাসে। তবে উপরে স্বাভাবিক। এইবার ঠিক জায়গায় বারুদ পড়েছে। এখন জ্বলুক। অতঃপর গলা ঝেড়ে নরম সুরে বলে,
“অভিয়েসলি লিটল কুইন। জিম করছি তো বউকে পেটাবো বলেই। হাফ বউ? ব্য’থা পেলে আবার আমিই সারিয়ে দিব, নো টেনশন।”
ইনায়া এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। লোকটা তার সাথে মজা করছে, বুঝল। ইনায়াকে আবারও চুপ হয়ে যেতে দেখে রাগ হয় ফাইজের। একে কি সত্যি সত্যি থা’প্প’ড় দিলে মুখ থেকে কথা বেরোবে? নিজেকে সামলে অসহায় কণ্ঠে বলে,
“আমাকে কি এখন বাচ্চাদের মতো রাস্তায় ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? না-কি…
ইনায়া আনমনে বলে, “থাকুন।”
ফাইজ অবাক হয়। ইনায়া কথাটা বলে নিজেই বোকাবনে যায়। ফাইজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ডান হাত পকেটে গুঁজে বলে,
“আগে বলবে না লিটল কুইন? ইট’স ওকে,, অ্যা’ম রেডি।”
ইনায়া ঘনঘন দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“না না, আমি এমনি বলেছি।
ফাইজ হেসে বলে,
“আমার কুইনের মনে তবে এই চলে!”
ইনায়া লজ্জায় মাথা নিচু করে সিটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ফাইজ মৃদু হেসে ইনায়ার হাত ধরে এক কোণায় বসে বলে,
“কি খাবে বলো?”
ইনায়া ফাইজের পাশে বসে উশখুশ করে। মৃদুস্বরে বলে, “কিছু না।”
ফাইজ এক কাপ কফি অর্ডার করে। এরপর ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়ে থাকে ইনায়ার দিকে। মৃদু হেসে বলে, “আই নো, ইউ লাইক মি।”
ইনায়া ঘাড় ঘুরিয়ে ফাইজের দিকে তাকিয়ে ফটাফট বলে, “মোটাও না।”
ফাইজ ইনায়ার দিকে চেয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে। ইনায়া থতমত খেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ফাইজ ফিসফিসিয়ে বলে,
“কবে যে শুনব! মোটেও হ্যাঁ।”
“আপু তোমার ভাইয়া তো আসে না। চলো আমরা বাইরে ঘুরি।”
ফারাহ মাইরার হাত ধরে বলল,
“না মাইরা। এখন রাত। বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। চলে আসবে ওরা।”
মাইরা হেসে বলে,
“আপু কিছু হবে না। চলো না যাই। এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। আমি তো গ্রামে কতরাতে বেরিয়েছি। কিচ্ছু হবে না এসো তো।”
এটা বলে ফারাহের হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে যায়। আশেপাশে ফুসকার দোকান খোঁজে। কিছুটা দূরে পেয়েও যায়।
“আপু তোমার ফুসকা কেমন লাগে?”
ফারাহ হেসে বলে,
“এটার ভালো লাগার পরিমাণ মাপা যাবে না।”
মাইরা হেসে ফুসকার দোকানের দিকে এগিয়ে যায়। পাশে ফারাহ।
“মামা বেশি ঝাল দিয়ে পাঁচ প্লেট ফুসকা দিন।”
ফারাহ চোখ বড় বড় করে বলে, “এতো কি করবে?”
মাইরা হেসে বলে, “আমার তিন প্লেট, তোমার দুই প্লেট। তুমিও তিনটা খাবে?”
ফারাহ মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না, ভালো লাগে। বাট এতো খেতে পারিনা।”
কিছুক্ষণ পর একে একে মাইরাদের দিকে ফুসকার প্লেট দিলে মাইরা ঝটপট খাওয়া শুরু করে। পাশে ফারাহ খায়। তিন প্লেট ফুসকা মাইরার খাওয়া শেষ। ফারাহের এখনো খাওয়া হয়নি। মেয়েটা অবাক হয়ে বলে, “এতো দ্রুত কিভাবে খেলে?”
মাইরা হাত ঝেড়ে বলে, “ওভাবেই। আইসক্রিম খাবে?”
ফারাহ দেখল মাইরার চোখমুখ অসম্ভব লাল। ফর্সা হওয়ায় বেশি বোঝা যায়। সেও ঝাল খায়। বাট মাইরার মতো অস্বাভাবিক না। খাওয়ার মাঝে মাইরা আরও ঝাল চেয়ে নিয়েছে। ফারাহ মুখের ফুসকা ধীরেসুস্থে গিলে বলে,
“আমি আর কিছু খাবো না বোন।”
মাইরা সামনের দোকানের দিকে যেতে যেতে বলে,
“ওকে তুমি তাহলে এগুলো শেষ কর। আমি কিনে আনছি দু’মিনিটে।”
চারটে ভ্যানিলা কোণ আইসক্রিম আর একটা মালাই কিনে নেয়। ভাগ্যিস আসার আগে টাকা ব্যাগে ভরেছিলে। দোকানদারকে টাকা দিয়ে একটা কোণ আইসক্রিম ছিঁড়ে একটা কা’ম’ড় দেয়। রাস্তায় নেমে এগোয়, সামনে চোখ পড়লে চোখ বড়বড় হয়ে যায়। পাঁচ ছয়টা কুকুর তার আশেপাশে কেমন হায়েনার মতো চেয়ে আছে। মাইরা চোখ বড়বড় করে তাকায়। আত্মা শুকিয়ে কাঠ। বেখেয়ালে হাতের আইসক্রিম মুখে মেখে যায়। সে সময় নষ্ট না করে এক চিৎকার দিয়ে পিছন দিকে দৌড় দেয়। কুকুরগুলোও তার পিছে দৌড়ায়।
ইরফান জানতো ফাইজরা ফোন কিনতে আসছে। ফাইজ কোথায় ফোন কিনতে আসতে পারে সে জানে। তাই দ্রুত এখানে এসেছিল। ফারাহকে ফুসকা খেতে দেখে তাকে মাইরার কথা জিজ্ঞেস করলে সামনের দোকান দেখিয়ে দেয়, ইরফান এগিয়ে গেলে মাইরাকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়। দোকান থেকে চোখ ফিরিয়ে সামনের দিকে চোখ পড়লে অবাক হয়। একটা মেয়ে দৌড়াচ্ছে, পিছে কুকুর। এটা মাইরা ছাড়া আর কে হবে। ইরফান দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়, পিছন থেকে বলে,
“হেই স্টুপিট, স্টপ।”
মাইরা ইরফানের গলা পেয়ে একবার পিছু ফিরে তাকায়। এতো কুকুরকে দেখে তার অবস্থা খারাপ। দৌড়ের গতি বাড়ায়। মাইরা যত দৌড়ায়, রাস্তা তত শুনশান হয়, অন্ধকার ঘিরে ধরে। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে মাইরা দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তার এপার থেকে ওপারে যায়, এরপর উল্টো ঘুরে দৌড় লাগায়।
ইরফান রেগে ফায়ার হয়ে যায় মাইরার উপর। একে তো সে মানা করা সত্ত্বেও এসেছে। আরেক হলো একা একা মাতব্বরি করে দোকানে গিয়েছে আর এখন ইডিয়টদের মতো কুকুরকে দেখে দৌড়াচ্ছে। হাতের কাছে পেয়ে আগে একটা চড় লাগবে। মাইরা দৌড়ায় জান হাতে নিয়ে।
ইরফান দ্রুত রাস্তার এপার থেকে ওপারে যায়। মাইরা কিছুদূর দৌড়াতেই একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
ইরফান রাস্তা পেরিয়ে মাইরার পিছে এসে দাঁড়ায়। মাইরা গাড়ির ডিকিটে দু’হাত রেখে হাঁপায়। ইরফান ঘাড় বাঁকিয়ে দেখল কুকুরগুলোও দাঁড়িয়ে পড়েছে তার পিছনে। রাগ তার সপ্ত আসমানে পৌঁছেছে। ঝট করে মাইরাকে তার দিকে ফেরায়। মাইরাকে চেপে ধরে গাড়ির সাথে। ডানহাতে মাইরার গাল চেপে ধরে শক্ত করে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আসতে নিষেধ করেছিলাম না?”
মাইরা ভীত চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। কুকুরের থেকে বেঁচে বাঘের খাঁচায় পড়ল। গাল দু’টো দাঁতের সাথে লেগে কেটে গেল বোধয়।
ইরফান দেখল মাইরার হাতে একটা পলিথিন। ভেতরে বেশ কয়েকটা আইসক্রিম। বিরক্ত হয়ে গাল ছেড়ে মাইরার হাত থেকে আইসক্রিম এর পলিথিনি নিয়ে কুকুরগুলোর দিকে ছুঁড়ে ফেলে। মাইরা চেঁচিয়ে বলে,
“আমার আইসক্রিম।”
ইরফান রাগান্বিত স্বরে বলে,
“এতোগুলো আইসক্রিম খাবে? তুমি গরু?”
মাইরা রেগে যায়। তার খেতে ভালো লাগে সে খাবে। এই লোক তাকে গরু বলবে কেন? মাইরা রেগে বলে,
“একদম গরু বলবেন না আমাকে। আপনি যে গণ্ডার!”
ইরফান চোখ গরম করে তাকায়। মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“আপনার তো কোনো অনুভূতি নেই। হৃদয়হীন লোক, গণ্ডারদের ও থাকে না। ভুল তো কিছু বলিনি। আমার গাল কে’টে দিল পা’ষা’ণ লোক।”
কথাটা বলে ডান গালে হাত বুলায়। তার বা পাশে খেয়াল করতেই মাইরা ঢোক গিলে। দু’টো কুকুর দাঁড়িয়ে।
মেয়েটা ভ’য় পেয়ে ইরফানের বুকে সিটিয়ে গিয়ে বলে,
“ওদের তাড়িয়ে দিন প্লিজ!”
ইরফান মাইরার দিকে রেগে তাকিয়ে ছিল। মাইরার কাজে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। তার গাড়ি এই ফাঁকা জায়গায় সাইড করে এই স্টুপিটের কাছে আসতে চেয়েছিল। কিন্তুু এটা তো বাঁদর, তাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এর পিছে দৌড়িয়ে সেই তার গাড়ির কাছেই আসলো।
বিরক্তির শ্বাস ফেলে দু’হাতে মাইরার কোমড় ধরে গাড়ির ডিকিতে বসিয়ে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে, “আরে কি করছেন? পড়ে গেলাম পড়ে গেলাম।”
ইরফান ধমক দেয়, “সাট আপ।”
মাইরা কেঁপে ওঠে। গাড়ির ডিকির উপর বসিয়েছে বুঝে তার দু’পা তুলে বসল। ইরফানের পিছনে তাকিয়ে দেখল সবগুলো কুকুর তার আইসক্রিমগুলো খেয়ে নিচ্ছে। অসহায় চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল খানিক।
মাইরা গাড়ির ডিকিতে বসায় পিছন থেকে রোড লাইটের আলো এসে মাইরার মুখ জুড়ে ছিটিয়ে পড়ে।
ইরফান অদ্ভুদভাবে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। মেয়েটার ঠোঁটের চারপাশে চকলেট লাগানো। ঠিক যেমন বাচ্চারা চকলেট খেয়ে পুরো মুখ মাখিয়ে ফেলে। মাইরা ইরফানের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট গলায় আবদার করে,
“আমি আইসক্রিম খেতে চাই, প্লিজ!”
ইরফান শুষ্ক ঠোঁটজোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নেয়। ঠাণ্ডা গলায় মৃদুস্বরে বলে,
“কিনে দিব।”
মাইরা ইরফানের দৃষ্টি দেখে থমকায়। আজ দুপুরের কথা মনে পড়ে। বোরখা জর্জেট এর হওয়ায় শুধু পিছলে যায় সে সহ। মাইরা উপর দিকে উঠতে নেয়। ইরফান মাইরার কোমড়ের পিছনে বা হাতে দিয়ে টেনে আনে তার দিকে। মাইরা ভয় পেয়ে ইরফানের দু’কাঁধে হাত রাখে।
মাইরা দু’পা আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে বসেছে, ইরফান বোধয় বিরক্ত হলো। কপালে বিরক্তির ভাঁজ। তবে কিছু বললো না। ডান হাতের বুড়ো আঙুল দ্বারা মাইরার ঠোঁট মুছে দিতে দিতে শীতল কণ্ঠে বলে,
“ইউ আর আ রিয়েলি ভেরি লিটল গার্ল।”
মাইরা দু’হাতে ইরফানের হাত ধরে মিনমিন করে বলে,
“আমি বাড়ি যাব।”
ইরফান মাইরার হাত দু’টো তা বা হাতে চেপে ডান হাতে আবারও মাইরার ঠোঁটের চারপাশে লেগে থাকা চকলেট মুছে দিতে দিতে বলে,
“নিয়ে যাব।”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“আপনাকে আমার ভয় লাগছে।”
“কমিয়ে দিব।”
ইরফানের ভয়েস টোন চেঞ্জ। নরম স্বর। মাইরা ইরফানের এই ভয়েস নিতে পারে না। তার ভীষণ তৃষ্ণা পায়। ঢোক গিলে অবুঝ গলায় বলে,
“আমার তৃষ্ণা পেয়েছে।”
ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে আবারও একই স্বরে বলে,
“মিটিয়ে দিব।”
মাইরা এদিক-ওদিক তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“আমার হাত ছাড়ুন।”
“সময় হোক।”
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২১
মাইরার এলোমেলো দৃষ্টি। ইরফান মাইরার ঠোঁট থেকে আঙুল সরিয়ে ডান গালের উপর আনে। ফোলা ফোলা ফর্সা গালে আলতো করে অনবরত আঙুল ঘোরায়, দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার চোখে নিবদ্ধ করে।
ছোট করে শ্বাস ফেলে তার চিরাচরিত গম্ভীর গলার সাথে কিছুটা নমনীয়তা মিশিয়ে প্রশ্ন করে,
“আমি হার্টলেস?”