প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৪

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৪
Drm Shohag

“আপা আইসা পড়ছি।”
সিএনজি ওয়ালার ডাকে মাইরা মাথা সোজা করে। সবকিছু কেমন ঘুরছে। চোখ দিয়ে যেন গরম ধোঁয়া বের নির্গত হয়। একটু সময় নিয়ে বসে রইল চুপ করে। এরপর ধীরে ধীরে সিএনজি থেকে নেমে দাঁড়ায়। ব্যাগ থেকে কত টাকা যেন বের করে লোকটার হাতে দেয়। ঢুলতে ঢুলতে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সিএনজি ওয়ালা অবাক হলো। মেয়েটা তাকে ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়েছে। ভাড়া ২০০ টাকা। দ্রুত সিএনজি থেকে নেমে মাইরার পিছে গিয়ে বলে,
“আপা আপনার বাকি টাকা।”
মাইরা কথা বলতে পারছে না। তবুও হালকা হেসে ছোট্ট করে বলে, “দিয়ে দিন চাচা।”
লোকটি বাকি টাকাটা মাইরার হাতে দিয়ে দেয়। মাইরা মৃদুস্বরে বলে, “আপনি খুব ভালো চাচা।”
কথাটা বলে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সিএনজি ওয়ালা লোকটি সেখান থেকে চলে যায়।
মাইরা মেইন গেইট ধরে দাঁড়িয়ে পড়ে। গেটের দারোয়ান রহমত চাচা মাইরাকে এভাবে দেখে দ্রুত এগিয়ে এসে বলে,

“ঠিক আছো মা?”
মাইরা মাথা নামিয়েই বলে,
“চাচা ভেতর থেকে একটু কাউকে ডাকবেন? আমি হাঁটতে পারছি না।”
বয়স্ক লোকটি দ্রুত দৌড়ে ভেতরে গেল। মেইন গেট থেকে ভেতরে রাস্তার মতো বেশ অনেকটা জায়গা পেরিয়ে একদম মাথায় ইরফানদের বাড়ি। রহমত ভেতরে গিয়ে রিতাকে ডেকে আনে। রিতা বাইরে এসে মাইরাকে এভাবে দেখে অবাক হয়। সবচেয়ে অবাক হয় মাইরাকে একা দেখে। আশেপাশে ইনায়াকে খুঁজে। মাইরাকে জিজ্ঞেস করে ইনায়ার কথা। মাইরা মৃদুস্বরে বলে,
“ওরা আসবে। আমায় ঘরে দিয়ে এসো প্লিজ আপু।”
রিতা অসহায় চোখে তাকালো মাইরার দিকে। মাইরার থেকে সে দুই বছরের বড়। মাইরা সেই থেকেই তাকে আপু বলে ডাকে। নাম ধরে ডাকতে বলে, অথচ ডাকে না।
রিতা জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি হয়েছে ভাবি?”
মাইরা কিছু বলে না। রিতাকে ধরে ধীরপায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। রিতা আবারও জিজ্ঞেস করলে মাইরা দুর্বল কণ্ঠ তবে শক্ত গলায় বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি তোমার ভাবি নই বুঝলে? নাম ধরে ডাকতে না পারলে ডাকবে না আমায়।”
রিতার মুখটা একটুখানি হয়। মাইরা তো এভাবে কথা বলে না। কি হয়েছে। একটুপর মাইরা ঢোক গিলে বলল,
“স্যরি আপু! ভাবি ডাক ভালো লাগে না। তুমি আমায় নাম ধরে ডাকলে আমার খুব ভালো লাগে।”
রিতা মৃদু হাসলো। মাথা নেড়ে ‘আচ্ছা’ বলে। মাইরাকে রিতা মাইরার ঘরে রেখে আসে। এরপর মাইরার কথা অনুযায়ী দ্রুত একটা টাফলিন আর পানি এগিয়ে দিলে মাইরা খেয়ে নেয়। গা থেকে বোরখা ছেড়ে খোঁপা করা চুলগুলো খুলে দেয়। এরই মাঝে রুমা নেওয়াজ মাইরার ঘরে এসে মাইরাকে একা দেখে অবাক হয়। এগিয়ে এসে বলে,
“ইনায়া কোথায়? তুমি একা কেন?”

মাইরা রুমা নেওয়াজ এর দিকে তাকালো। ভদ্রমহিলা আরও কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। মাইরাকে কেমন অস্বাভাবিক লাগলো। চোখমুখ কেমন ফোলা, লাল। বাম গালে চোখ পড়লে দেখল পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। মাইরা অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় একটুতেই স্পষ্ট বোঝা যায়। রুমা নেওয়াজ ঢোক গিলল। ঘণ্টা ১ আগেই ইরফানের বাবা ইরফানকে না পেয়ে রেগে বেরিয়ে গিয়েছে। অফিসে কাজ ছিল অথচ ইরফান সেখানে যায়নি। তার মানে মাইরার সাথে ছিল? আর মেয়েটাকে আবারও মেরেছে? তিনি কি বলবেন বুঝলেন না। ইরফানের বাবা যদি জানে ইরফান আবারও মাইরাকে মেরেছে বাবা ছেলের মাঝেই তো একটা যুদ্ধ লেগে যাবে।
মাইরা গলা ঝেড়ে মৃদু হেসে বলে,

“কিছু বললেন মা?”
রুমা নেওয়াজ এর ধ্যান ভাঙে। এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি অসুস্থ? আর ইনায়া কোথায়? তুমি একা কেন?”
মাইরা মুখে হাসি নিয়েই আদোআদো স্বরে উত্তর দেয়,
“আসলে আমার প্রচণ্ড মাথা ব্য’থা করছে তাই চলে এসেছি। আপু আসবে পরে।”
রুমা নেওয়াজ মাইরার দিকে তাকিয়ে থাকলো বেশ কিছুক্ষণ। মেয়েটা কেমন যেন। থা’প্প’ড় যে খেয়েছে এটা তিনি বুঝেছেন। আর কেঁদেছেও,, কিন্তুু কীভাবে হেসে কথা বলে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“ইরফান তোমাকে আবার মেরেছে?”
মাইরা অবাক হয়। কিভাবে বুঝল? মাইরা কিছু বলার আগেই রুমা নেওয়াজ হতাশার স্বরে বলে,
“খেয়েছ?”

মাইরা মাথা নেড়ে বলে,
“জ্বি, এসে ওষুধ খেয়েছি।”
“আচ্ছা শোও তাহলে। ভালো লাগবে।”
কথাটা বলে তিনি বেরিয়ে যান।
মাইরার চোখজোড়ায় পানি। রুমা নেওয়াজ বেরিয়ে গেলে রিতা মাইরার পাশে বসে বলে,
“ভাবি ভাইজান তোমায় মারছে, সেজন্য কাঁদছ?”
মাইরা হেসে বলে,
“উহু! তার জন্য কাঁদতে আমার বয়েই গেছে। তুমি আমায় ভাবি ডাক ছাড়তে পারছো না। এইজন্য কাঁদছি আমি।”
রিতা মানলো না। মাইরা মজা করার মানুষ সে জানে। মন খা’রা’প করে বলে,
“ভাইজান এমনিতে খুব ভালো। রাগ হইলে একটু অস্বাভাবিক আচরণ করে। তুমি মন খা’রা’প কর না।”
মাইরা ঝাপসা চোখ মুছে বলে,
“থা’প্প’ড় খেয়ে বাচ্চারা কাঁদে আপু। আর বড় রা কাঁদে ছোট্ট ছোট্ট শব্দ শুনে, কারণ ওগুলোর ভার থা’প্প’ড় এর চেয়ে অনেক বেশি হয়।”

রিতা বোকাচোখে মাইরার দিকে তাকিয়ে রইল। মাইরা কথাটা বলে বেড থেকে নেমে ধীরে ধীরে ওয়াশরুমে যায়। এরপর দেয়াল ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বারবার মনে পড়ে, ‘ডিভোর্স ইজ বেটার।’ চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। কি আশ্চর্য তার খা’রা’প লাগছে কেন? ভালোই হবে ওই পা’ষা’ণ লোকটা তাকে ছেড়ে দিলে তাকে আর মার খেতে হবে না। কিন্তুু সে চায় না ওই পা’ষা’ণ লোকটা তাকে ছেড়ে দিক। আরও দু’টো থা’প্প’ড় দিয়ে তাকে রেখে দেয়া যায় না? সে নাহয় বোবা হয়ে থাকবে। নিজের ভাবনায় নিজের উপরই কেমন বিরক্ত হলো। থাকবে না সে। মানুষ কত ভালোবাসা পেয়েও সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসে। আর সে শুধু থা’প্প’ড় খেয়ে বেরতে পারবে না? তবুও কেন যে ক’ষ্ট হয়। নিজেকে সামলে কোনোরকমে ওজু করে বাইরে বেরিয়ে বসে বসে নামাজ পড়ে নেয়। এরপর ঘরের দরজা ভিড়িয়ে শুয়ে পড়ে।

ইরফান গাড়ি নিয়ে কোথায় কোথায় যে খুঁজল মাইরাকে, সে নিজেও জানে না। ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে। মাইরার উপর এতো বেশি রাগ হলো, তা বোঝানো দায়। ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে তার বাসার দিকে যায়, নজর রাস্তার আশেপাশে ছিল। শুদ্ধ তার গাড়ি নিয়ে খোঁজায় ব্যস্ত। ফাইজ ইনায়া আর ফারাহ কে নিয়ে গিয়েছে।
রুমা নেওয়াজ ইরফানের ফোনে অনেকবার কল দিয়েছে। ইরফান কল রিসিভ করে না। উপায় না পেয়ে শুদ্ধর নাম্বারে কল দেয়। মাইরা একা কেন বাসায় আসলো? আর ইনায়া কোথায়, ইরফান কোথায় সেসব-ই শুনলো।
ভীষণ চিন্তিত তিনি ছেলেকে নিয়ে সাথে মাইরাকে নিয়ে। কি করবে এদের? কিছুই বুঝতে পারছে না।
“তোর বউ বাড়ি গিয়েছে।”
ইরফান গাড়ির দরজা খুলে এক পা বাইরে বের করে ড্রাইভিং সিটে বসে। চোখগুলো লাল। শুদ্ধর কথা শুনে মৃদুস্বরে বলে, “ওকে।”

“বাড়ি যা। রাত হয়েছে। মামা মামি দু’জনেই কল দিয়েছিল অনেকবার।”
ইরফান কিছু বললো না। শুদ্ধ হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,
“এতোক্ষণ যাকে মরার মতো খুঁজলি, খবর পেয়ে যাচ্ছিস না কেন?”
ইরফান রাগে চিৎকার করে বলে,
“ওর কাছে গেলে ও আমার হাতে আগে বেহিসাব থা’প্প’ড় খাবে। ওর সাহস কি করে হয় এই রাতে একা একা বাড়ি যাওয়ার?”
শুদ্ধ পাশেই দাঁড়িয়ে চুপ করে থাকলো কিছু সময়। এরপর চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“তুই কি করেছিস মাইরার সাথে?”
ইরফান কিছু বলে না। রাগে শরীর কাঁপছে তার। চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানে। শুদ্ধ কিছুটা রেগে বলে,
“তুই আবার মেয়েটাকে মে’রে’ছিস। কি চাইছিস তুই বল তো?”
ইরফান বেশ কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে থাকে। এরপর শক্ত গলায় বলে,
“ওই স্টুপিটকে খু’ন করতে চাইছি।”
শুদ্ধ রে’গে বলে,

“ইরফান তোর বোঝা উচিৎ মাইরার বয়স ১৫+,,
তোর হাফ বসয়ী একটা মেয়ে। বাচ্চা মেয়ে। ওকে প্লিজ সেভাবেই ট্রিট কর। ওর থেকে বড়দের মতো বিহেভ এক্সপেক্ট গুলোকে চাপা দে। নয়তো তুই যা চাইলি সেটাই কর, ডিভোর্স দিয়ে দে। কারণ তোদের এই রিলেশনের কোনো ফিউচার নেই। মেয়েটার জন্য আমার খা’রা’প লাগে।”
ইরফান কিছু বললো না। শুদ্ধ অবাক হয়। ডিভোর্সের কথাটায় ইরফান কেমন যেন শান্ত হয়ে যায়, যেন ভাবতে বসে, কিভাবে ডিভোর্স হবে। অর্থাৎ ইরফান সত্যিই ডিভোর্সের ব্যাপারে ভাবছে। শুদ্ধ কিছু বলে না। এভাবে মার খাওয়া, এদের রিলেশন এমন অস্বাভাবিকতা,, এর চেয়ে হয়তো ডিভোর্স টাই বেটার। মৃদুস্বরে বলল,
“বাড়ি যা।”
ইরফান আরও দু’টো সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। শুদ্ধর কপালে চিন্তার ভাঁজ।

ইনায়া গাড়িতে চিন্তিত বদনে বসে আছে। মাইরা একা একা কেন বাড়ি গেল সেই চিন্তায় শেষ মেয়েটা। তাদের সাথেই তো কি সুন্দর হেসেখেলে বাইরে বেরিয়েছে, কি যে হলো। তবে বাসায় পৌঁছেছে শুনে কিছুটা নিশ্চিন্ত আছে।
ফাইজ গাড়ি থামালে ইনায়া ফারাহকে ভেতরে আসতে বললে আরেকদিন যাবে বলে, আজ এমনিতেই অনেক রাত হয়েছে। ইনায়া আর জোর করে না। ফাইজ ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে এসে ইনায়ার পাশের ডোর খুলে দিলে ইনায়া নিঃশব্দে বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। ফাইজ তীক্ষ্ণ চোখে ইনায়ার মুখপানে চেয়ে। ইনায়া এগোলে ফাইজ ইনায়ার হাত তার বা হাতে মুঠোয় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ইনায়া হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।ফাইজ মৃদুস্বরে বলে,
“লিটল কুইন রাগ করেছ?”
ইনায়া কিছু বলে না। নিরব থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। ফাইজ নরম স্বরে বলে,
“স্যরি লিটল কুইন।”
ইনায়া অবাক হয়ে তাকায় ফাইজের দিকে। ফাইজকে গোমড়ামুখে তার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে। চোখ নামিয়ে মিনমিন করে বলে,

“হাত ছাড়ুন।”
ফাইজ মৃদু হেসে বলে,
“ওকে তোমার ফোন দিচ্ছি, এবার চলবে?”
ইনায়া মাথা উঠিয়ে খুশি হয়ে বলে,
“দিন তবে।”
ফাইজ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। ভাবনার মাঝেই ফাইজের পকেটে ফোন ভাইব্রেট হয়। ডান হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল ইনায়ার ফোন বাজছে। একটা মেয়ের নামে সেভ করা। ফাইজ গলা ঝেড়ে বলে,
“ফ্রেন্ডদের সাথে কি বেশি পার্সোনাল কিছু বলো? আমি শুনতে পারি?”
ইনায়া কি বলবে বুঝলো না। ফাইজ কল রিসিভ করে লাউডে দেয়। ওপাশ থেকে গরগর করে একটি মেয়ে বলে,
“বান্ধবী তোর পার্সোনাল বখাটের সাথে কেমন ডেট হলো রে? ম্যাসেনঞ্জারে ম্যাসেজ দিলাম, সিন করিস না। সেসব থাক। এখন বল। কি কি করলো সে? চুমু টুমু খেয়েছে? কোথায় কোথায় খেয়েছে?”
ইনায়া লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকতে পারছে না শুধু। পা উঁচু করে বা হাতে তার ফোন নিতে চাইলে ফাইজ ফোন উঁচু করে ধরে। ঠোঁট টিপে হাসছে সে। দৃষ্টি ইনায়ার দিকে। ইনায়া কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“প্লিজ কল কাটুন।”

ফাইজ গলা ঝেড়ে ফোনের ভলিউম কমিয়ে দেয়। ফোন ইনায়ার হাতে দিয়ে ইশারায় কথা বলতে বলে। ইনায়া দ্রুত কল কেটে দেয়। ফাইজ তার থুতনির পাশে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ঘষে, আর মিটিমিটি হাসে। ইনায়া যেতে নিলে ফাইজ ইনায়ার হাত ছাড়ে না। ইনায়া মাথা নিচু করে বলে,
“প্লিজ হাত ছাড়ুন।”
ফাইজ ইনায়ার হাত থেকে ফোন টান মেরে নিয়ে নিল। ইনায়া অবাক হয়ে বলে,
“নিলেন কেন?”
ফাইজ উত্তর করল না ইনায়ার কথার। ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে,
“ডেট করলে কি’স করতে হয় লিটল কুইন? তুমি তো পেকে গিয়েছ তোমার ফ্রেন্ডদের জন্য। মনে হয় আমিই পিছিয়ে পড়ে আছি।”
ইনায়া কাঁপা গলায় বলে,
“আমি বাড়ি যাব।”

ফাইজ হেসে ফেলে। ইনায়ার ফোনে কিছু কাজ করে, ওভাবেই হেসে বলে,
“ডোন্ট ওয়ারি,, বিয়ের আগে আমি অলওয়েজ পিছিয়ে থাকবো।”
এরপর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“একটা ছোট্ট আবদার পূরণ কর। এরপর ফোন নিয়ে ভেতরে যাও।”
ইনায়া চোরা চোখে ফাইজের দিকে তাকায়। ফাইজ হেসে বলে,
“তোমার ফোনের পাসওয়ার্ড তোমার ভয়েসে শুনতে ইচ্ছে করছে লিটল কুইন।”
ইনায়া তার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। মাথা নাড়িয়ে বলে,
“হাত ছাড়ুন। আমি ঘরে যাব।”
“লিটল কুইন? স্পিক আপ। ফিরিয়ে দিও না।”

ফাইজের কণ্ঠ অতি নমনীয়। ইনায়া চোখ তুলে তাকায়। ফাইজ শীতল চোখে চেয়ে আলতো হেসে বলে, “প্লিজ!”
ইনায়া ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নেয়। ফাইজের এভাবে আবদার কেন যেন ইনায়া চাইলেও ফেরাতে পারলো না। চোখ খিঁচিয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
“মাই পার্সোনাল ব্যাড বয়।”
ফাইজ ফিসফিসিয়ে বলে,
“এইতো তোমার পার্সোনাল ব্যড বয়, মাই লিটল কুইন।”
ইনায়া দ্রুত বলে,
“আমার ফোন দিন।”
ফাইজ ইনায়ার হাতে ফোন দিয়ে ইনায়ার হাত ছেড়ে দেয়। ইনায়া ছাড়া পেয়ে দ্রুতপায়ে বাড়ির ভেতরে যায়। পিছু ফিরে তাকায় না। ফাইজ মুখ গোল করে শ্বাস ফেলে মৃদু হেসে বিড়বিড় করে, “আর সহে না রে এ অপেক্ষা!”

“এটা কখন কিনলে?”
“তোর বয়ফ্রেন্ড দিয়েছে।”
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমার বয়ফ্রেন্ড কে?”
ফাইজ ফারাহের হাতে ফোন প্যাকেজ হাতে দিয়ে বলে,
“সেটা তুই জানিস। তুই এমন ছিঁদকাদুনে কেন বল তো?”
ফারাহ রেগে বলে,
“আর তুমি এতো বিয়ে পা’গল কেন বলো তো?”
ফারাহের কথায় ফাইজ থতমত খেয়ে তাকায়। বেয়া’দব বোন হয়েছে। শুধু বড় ভাইয়ের পিছনে লাগে। ফাইজ তার ঘরে যেতে যেতে বলে,

“ইরফানের বউয়ের এক্সাম শেষ হয় না কেন বুঝিনা। বোর্ডের মাস্টার গুলোও মীরজাফর হতে চাইছে নাকি!”
ফারাহ বোকা চোখে তাকিয়ে দেখল ফাইজের দিকে। পাগল না-কি তার ভাই। কি বলে নিজেই জানে না। হাতের প্যাকেজ নিয়ে তার ঘরে যায়। এটাই তো শুদ্ধর হাতে ছিল। ঘরে গিয়ে আগে পুরো ফোনের প্যাকেজিং খুলল। একদম নতুন, তবে এটা কেনার পর একবার খোলা হয়েছিল, এরপর আবারও আগের মতো করেই রেখেছে। ফারাহ বুঝল। ভেতর থেকে ফোনটা বের করে উল্টেপাল্টে দেখল। বুক ধুকপুক করছে। এটা শুদ্ধ ভাইয়ের কেনা ফোন। কিন্তুু সে যে বলল, এটা সামিয়া নামের ওই মেয়েটার জন্য কিনছে। হঠাৎ-ই ফোন শব্দ করে বেজে ওঠে। তবে ফোনের সেট করা কোনো রিংটেন নয়, ভয়েস~

“ভালোবাসার খেলাটায় আমি জিতে গেছি ফারাহ শুনছো?
এ্যাই ফারাহ? ভালোবাসি কিন্তুু!”
হাজারো আবেগ মেশানো কোমল সুরে কয়েকটি শব্দ, যে কণ্ঠ শুদ্ধর।
ফারাহের হাত কাঁপছে। কল করেছে শুদ্ধ ভাই। আর রিংটোন এটা। বারবার একই সুরে কথাগুলো বাজছে। ফারাহ ঢোক গিলছে। ফোন বাজতে বাজতে কেটে যায়। সেকেন্ড বার কল আসলে ফারাহ কল রিসিভ করে ধীরে ধীরে ফোন কানে ধরে। চোখজোড়ায় পানি টইটুম্বুর। ওপাশ থেকে শুদ্ধ বলে,
“ফারাহ? আমার হবু বউ কে ফোন দিতে গিয়ে তোমার কাছে চলে গিয়েছে। মিস্টেক। এখন কি করি বলো তো?”
ফারাহ কাতর গলায় ফুঁপিয়ে বলে,

“শুদ্ধ ভাই!”
শুদ্ধ ঠোঁট টিপে হেসে আবেগপ্রবণ গলায় বলে,
“এইতো আমি ফারাহ।”
“আমি তোমাকে ভালোবাসি না।”
শুদ্ধ শব্দ করে হেসে বলে,
“ভালোবাসা টা তবে পেয়ে গেলাম আমি, ফারাহ বুঝেছ?”
ফারাহ কথা বলতে পারে না। ফোঁপায়। শুদ্ধ প্রাণখোলা হাসি হাসে। একটু পর থেমে বলে,
“ওহে লাবণ্যময়ী,, আরেকটু শব্দ করে কাঁদবে প্লিজ!”
ফারাহ নাক টেনে কল কেটে দেয়। অলপেপারে ভেসে ওঠে তার কান্নাভেজা মুখ, আর তার দিকে হেসে তাকিয়ে আছে শুদ্ধ। পিকটা সাইড থেকে তোলা। ফারাহ হঠাৎ-ই কান্নার মাঝে হেসে ফেলে। আবারও ফোনে রিং হয়,
“ভালোবাসার খেলাটায় আমি জিতে গেছি ফারাহ শুনছো?
এ্যাই ফারাহ? ভালোবাসি কিন্তুু!”
ফারাহ মন দিয়ে শুনছে কথাগুলো। কিন্তুু কল রিসিভ করল না। চোখমুখ লাল, তবে মুখায়বয়বে উজ্জ্বল
খুশির ঝিলিক।

রাত প্রায় একটার কাছাকাছি। ইরফান বাড়িতে এসে চাবির সাহায্যে লক খুলে ভেতরে যায়। ডাইনিং-এ বসে তারেক নেওয়াজ ছেলের অপেক্ষা করছিলেন। ইরফানকে পোষাক বিহীন দেখে তিনি বিস্ময় নিয়ে তাকালো। এগিয়ে এসে বলে,
“তোমার এই অবস্থা কেন?”
ইরফান তার ঘরের দিকে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বলে,
“কাজ ছিল।”
কাজ ছিল মানে? এভাবে উদাম গায়ে বাইরে থেকে কি কাজ করে আসলো ইরফান, ভদ্রলোক বুঝলেন না।
তারেক নেওয়াজ মূলত ইরফান অফিসে না যাওয়ায় রেগে আছে। মাইরার ব্যাপার তিনি জানেন না। ইরফান অফিসে যাবে বলেও আর যায়নি। রেগে বলে,
“তুমি কি পণ করেছ আমাদের বিজনেসে ধস নামিয়েই ছাড়বে?”
ইরফান বিরক্ত হলো। সিড়ি উঠতে উঠতে বলে,
“নেক্সট ডে সব সামলে নিব, ডোন্ট ওয়ারি।”

কথাটা বলে ইরফান দ্রুতপায়ে তার ঘরে চলে যায়। তারেক নেওয়াজ ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। এই ছেলে আর ভালো হলো না। তিনি হতাশ! সামলে নিবে বলেছে যখন, নিবে সামলে। যখন যা মনে হবে করবে, বলেও লাভ নেই। এই যেমন মাইরাকে এনে রেখেছে। এক্সামের মাঝে কেন আনলো তার কারণও বলে না। তিনি কাজে ব্যস্ত থাকায় মাইরার সাথে তার সেভাবে কথাই হয়নি, ফলে শুনতেও পারেননি কেন এনেছে মাইরাকে। বিরক্ত হয়ে তার ঘরে চলে যায়।
ইরফান তার ঘরে গিয়ে আগে শাওয়ার নেয় প্রায় ৩০ মিনিট সময় নিয়ে। চোখেমুখে রাগের আভা। যখনই ভাবছে মাইরা এই রাতে একা একা এই পথ এসেছে, তখনই মাথা পুরো গরম হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে সামলাতে চায়, কিন্তুু ব্যর্থ। ইচ্ছে করছে আগে ওই স্টুপিট কে গিয়ে থা’প্প’ড় দিয়ে রাস্তাঘাটে একা ঘোরার সাধ মেটাতে। শাওয়ার শেষে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।

একটা কালো ট্রাউজার পরে নিল। তবে শরীরে কিছু জড়ালো না। উদাম শরীরে দ্রুতপায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। মাইরার ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে।
দরজা ঠেলে ভেতরে চোখ পড়লে মুহূর্তেই চোখজোড়া শীতলতায় ভরে যায়। রাগ আপনাআপনি নিভে যায় খানিক। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে দরজা ভিড়িয়ে দেয়। ঘরের লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছে কেন বুঝলো না। ধীরপায়ে এগিয়ে এসে মাইরার মাথার কাছে দাঁড়ায়। গম্ভীর চোখে দৃষ্টি আবদ্ধ করে মাইরার মুখপানে।

মাইরা ইরফানের ঘরে ঠিক যেভাবে ঘুমিয়েছিল, আজও সেভাবেই ঘুমিয়েছে। দরজা বরাবর মাথা রেখে বিছানার কিনারায় মাথা রেখে চুলগুলো ছেড়ে দেয়া, যা মেঝে ছুঁয়েছে। ফ্যানের বাতাসে মেঝে ছুঁয়ে থাকা চুলগুলো মৃদুভাবে দোলে। মাইরার বাম গালে চোখ পড়লে ইরফান ঢোক গিলে। পাঁচ আঙুলের দাগ স্পষ্ট। চোখ বুজে শ্বাস ফেলল।
একটু পর মাইরার মাথার কাছে ডান পা ভাঁজ করে বসে। সামান্য ঝুঁকে মাইরার বাম গালে তার ডান হাতের আঙুলগুলো ছোঁয়ালে মাইরা ঘুমের মাঝেই কেঁপে ওঠে। ইরফান মাইরার বন্ধ চোখের পাতায় দৃষ্টি দেয়। ফুলের পাপড়ির ন্যায় মসৃণ ফর্সা দীর্ঘ চোখের পাতায় ডান হাতের বুড়ো আঙুল দ্বারা আলতো করে ছুঁইয়ে দেয়।
মাইরা ঘুমের ঘোরে ডান কাত হয়ে ইরফানের দিকে হেলে আসে। ইরফান মাইরার পুরো মুখটা নিঁখুতভাবে অবলোকন করল, দৃষ্টি ঘুরিয়ে ডান গালে চোখ স্থির করে, ফর্সা গালে লালচে দাগগুলোর দিকে অসহায় চোখে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।

এরপর বসা থেকে উঠে দ্রুতপায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আসে হাত ভর্তি করে।
আবারও মাইরার পাশে বসে আলতো হাতে মাইরার গালে বরফ লাগিয়ে দেয়। মাইরা কেঁপে ওঠে। এগিয়ে এসে তার হাতের কাছে ইরফানের বা হাত পেয়ে হাতের তালুর উপর ডান গাল রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
ইরফান ঝুঁকে আছে মাইরার উপর। মাইরার মুখের দিকে চেয়ে ডান হাতে আবারও মাইরার গালে বরফ লাগিয়ে দেয়। এবার মাইরা আর নড়ে না। ইরফান সময় নিয়ে বরফ দিয়ে দিল মাইরার গালে। এরপর ডান হাতের ছোট ছোট বরফের টুকরোগুলো ছুঁড়ে ফেলে। ভেজা গালে চুলের কিছু অংশ হেলে আসলে হাত বাড়িয়ে তা কানের পিঠে গুঁজে দেয়।
ঢোক গিলে মুখ নামিয়ে ভেজা গালে ঠোঁট দাবায়। কতক্ষণ যে এভাবে থাকলো তার ইয়ত্তা নেই, মাইরা নড়ে উঠলে ইরফান মাইরার গাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে নেয়। মাথা খানিক উঁচু করে মাইরার ফোলা ফোলা মুখে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এরপর মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে গলা নামিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“স্যরি ফর দ্যট।”

কথাটা বলে কানের পিঠে শব্দ করে একটা চুমু খায়।
মাইরা ঘুমের মাঝে ফুঁপিয়ে ওঠে। ইরফান দ্রুত মাইরার মুখের দিকে তাকায়। চোখ বন্ধ মাইরার। কি যেন বিড়বিড় করে। ইরফান আরেকটু এগিয়ে গেলে আদোআদো স্বরে শুনতে পায়,
“বাবা মেলায় যাওয়ার কথা বলে ফাঁকি দিয়ে আকাশে চলে গেল। বাবা, বাবা!”
কথাগুলো খুবই অস্পষ্ট শোনায়। বন্ধ চোখের কোণ ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরফানের বা হাতে মাইরা ডান গাল পেতে রাখায়, ইরফানের হাতের তালুতে টুপটুপ করে মেয়েটার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরফান ঢোক গিলে মাইরার দিকে চেয়ে থাকে। চোখমুখে অসহায়ত্ব ভিড় করে।
মাইরাকে চিৎ করে শোয়ায়। মুখ নামিয়ে মাইরার ডান চোখের কিনারায় ছোট করে একটা চুমু আঁকে। বা হাতে মাইরার বা চোখের কোণ মুছে দেয়।
এরপর মাইরাকে কোলে তুলে লম্বা করে বালিশে শুইয়ে দেয়। উঠে গিয়ে ঘরের লাইট অফ করে দেয়।
বাম কাত হয়ে মাইরার পাশে শুয়ে পড়ে ইরফান। মাইরার পেট জড়িয়ে মাইরাকে টেনে মাইরার পিঠ তার বুকে লাগিয়ে শুইয়ে দেয়।
এরপর মাইরার পেট থেকে হাত সরিয়ে নেয়। হাত বাড়িয়ে মাইরাকে আর ধরল না। দু’হাত আড়াআড়ি ভাবে বুকে ভাঁজ করে নেয়। লম্বা শ্বাস টেনে চোখ বুজে।
ফ্যানের বাতাসে মাইরার চুলগুলো ইরফানের মুখের উপর লুটোপুটি খায়। ইরফান সরালো না চুল, উঠে গিয়ে তার স্বভাবসুলভ ফ্যান অফ করে এসি ছাড়লো না। শক্ত হয়ে চোখ বুজে রইল।

সকাল সকাল চিৎকার চেঁচামেচিতে মাইরার ঘুম ভেঙে যায়। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় মাইরা। ঘরময় দিনের ঝাপসা আলো দেখে বুঝলো সকাল হয়ে গিয়েছে কিন্তুু সে জাগা পায়নি। এমন জোরে জোরে কথা বলছে কে? ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে ভিড়ানো দরজা খুলে বাইরে নজর দিলে ইরফান আর তারেক নেওয়াজ কে মেইন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে। এখানে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
“মাইরাকে রেখে দ্রুত ফিরবে।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“স্যরি! ওকে নিয়ে যেতে পারবো না।”
তারেক নেওয়াজ রেগে যায়।
“পারবে না মানে? তাহলে এনেছিলে কেন?”
“কাজ ছিল।”
“মাইরাকে দিয়ে কি কাজ তোমার? কাজ করেছ ভালো কথা। এখন ওকে রেখে এসো। ওর এক্সাম, ভুলে গিয়েছ?”
ইরফান বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বলে,

“তুমি রেখে এসো। আমি অফিস সামলে নিব, ডোন্ট ওয়ারি।”
তারেক নেওয়াজ নিজেকে শান্ত করে। তার ভাবনা মাইরা আর ইরফান একসাথে থাকলে তাদের সম্পর্কের উন্নতি হবে। মাইরা রিলেটেড কাজগুলো তিনি ইরফানের কাঁধে দিতে চায়। অতঃপর বলে,
“মাইরা কে তুমিই রেখে আসবে। এটাই আমার শেষ কথা।”
ইরফান রেগে হঠাৎ-ই চিৎকার করে ওঠে,
“বলেছি তো, ওই স্টুপিট কে রেখে আসতে পারবো না। গলায় বাচ্চা ঝুলিয়ে দিয়েছ, চুপ আছি। আর বাড়াবাড়ি কর না। আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও।”
কথাটা বলে হনহন করে বাইরে বেরিয়ে যায়। তারেক নেওয়াজ কি বলবেন বুঝলেন না। নিরব চোখে চেয়ে দেখল শুধু ছেলের প্রস্থান। তিনি ছেলেকে নিয়ে হতাশ! তবে মাইরার কি হবে?

মাইরা ধীর পায়ে ঘরের ভেতর আসে। এরপর দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়। পানিতে টইটুম্বুর চোখ থেকে দু’ফোঁটা জল কণা টুপ করে গড়িয়ে পড়ে। দেয়াল ঘড়িতে দেখল সকাল ৬ টা বাজে। ওয়াশরুমে গিয়ে ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নেয়। এরপর গায়ে বোরখা জড়িয়ে নেয়। সাথে এমনিতেও কিছু আনেনি তাই আর কিছু নিতে হলো না। হাতে পার্স নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। আশেপাশে কাউকে না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। একটু এগিয়ে গিয়ে রিতাকে পেয়ে গেলে বলে,
“আপু এখন কাউকে বলো না আমি যাচ্ছি। আমি পৌঁছে বাবাকে কল করে বলে দিব।”
রিতা ডাইনিং টেবিলের উপর কাচের গ্লাস রেখে অবাক হয়ে বলে,
“কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
মাইরা মৃদু হেসে বলে,

“গ্রামে। তুমি এক্ষুনি কাউকে বলো না প্লিজ!”
রিতা অবাক হয়ে বলে,
“এতো দূরের রাস্তা তুমি একাই যাবা? দাঁড়াও আমি চাচারে বলি।”
মাইরা রিতার হাত আটকে বলে,
“বলো না আপু। আমি পারব। একা চলতে না শিখে রাখলে পরে প্রবলেম হবে।”
লাস্ট কথাটা কেমন মলিন গলায় বলে।
এরপর আবারও মৃদু হেসে বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৩

আমার এক্সাম বুঝলে? গ্রামে গিয়ে পড়বো। এখানে বইও নেই। আসছি আপু। বাই।”
কথাটা বলে ডান হাতে একটা পার্স নিয়ে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে যায়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনে তাকালে মেইন গেইট দিয়ে ইরফানকে ঢুকতে দেখে। মাথা নিচু করে ইরফান এগিয়ে আসছে। মাইরা ঢোক গিলে। তাকে দেখে নিলে এই লোক কি করবে সেসব ভাবতে চায় না। তবে লোকটার সামনে পড়তে চায় না। একটুও চায় না।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৫