প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৯

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৯
Drm Shohag

মাইরা ঢোক গিলে দু’হাতে ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়ায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে আবেশিত কণ্ঠে বলে,
“কিসের প্রলেপ দিয়েছ এখানে? আমার চকলেট এর সেপ চেঞ্জ করে ফেলেছ কেন স্টুপিট?”
মাইরা চোখ নামিয়ে রেখে মিনমিন করে বলে,
“ছাড়ুন।”
ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়ায় বুড়ো আঙুল চালিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“এসব ওঠাও এখান থেকে।”
মাইরা চোখ নামিয়ে রেখেছে। কাঁপা কণ্ঠে বলে,
“সরুন।”
ইরফান একটু ঝুঁকে মুখ নামিয়ে মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে,

“স্টুপিট এতো সাজলে কেন?”
মাইরার শরীর শিরশির করে ওঠে। ইরফান ধীরে ধীরে মাইরার পুরো পিঠ জুড়ে হাতের বিচরণ চালায়।
মাইরা ইরফানের বুকে শরীরের ভার ছাড়ে। ইরফান
ডান হাত মাইরার চুলের ভাঁজে নিয়ে গালে হাত ডুবিয়ে মাইরার মুখ উঁচু করে। মাইরার চোখ বন্ধ। ইরফান বা হাতে মাইরার কোমড় জড়িয়ে মাইরাকে নিজের দিকে টেনে নেয়। মাইরার দিকে চেয়ে ইরফান শুকনো ঢোক গিলে। মাইরা মিনমিন করে বলে,
“ছাড়ুন আমায়। আমি পানি খাবো।”
ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়ায় আঙুল চালিয়ে গলা নামিয়ে বলে,
“ওয়েট, আগে এটা উঠিয়ে দিই।”
কথা বলে সাথে সাথেই মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা যেটুকু নিজের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সেটুকুও ছেড়ে দেয়। ইরফান শক্ত করে মাইরাকে নিজের সাথে আগলে নেয়। মাইরা ইরফানকে ঠেলে, ইরফান মাইরার হাতদুটো বা হাতের মুঠোয় নেয়। ডান হাত ঘাড়ের পিছনে নেয়। প্রায় মিনিট পাঁচেক পরও মাইরা ছাড়া না পেয়ে ছটফটায়। ইরফান ভাবলেশহীন। এক পর্যায়ে ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দেয়। মাইরা হাঁপায়। মাথা নিচু করে চোখমুখ খিঁচিয়ে রাখে। ইরফান মাইরার মুখ উঁচু করে মাইরার ভেজা ঠোঁটজোড়ায় হাত চালিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ডিফরেন্ট টেস্ট।”
মাইরার শরীর মৃদু কাঁপছে। ইরফান আবারও বলে,
“এটা উঠছে না কেন স্টুপিট?”
মাইরা কিছু বলতে চায় তার আগেই ইরফান আবারও তার কাজে ব্যস্ত হয়। মাইরা নড়াচড়া করে। মনে মনে বিড়বিড় করে, ‘অ’স’ভ্য লোক, এটা ম্যাড লিপস্টিক। উঠবে না।’
ইরফান মাইরাকে ছেড়ে আবারও তাকায় মাইরার ঠোঁটজোড়ার পানে। যেমন ছিল তেমনি আছে। ইরফান চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“আমার পার্সোনাল চকলেট কখন পাবো? এসব কি লাগিয়েছ স্টুপিট?”
কথাটা বলে আবারও এগোতে নিলে মাইরা দু’হাতে তার ঠোঁট চেপে অসহায় কণ্ঠে বলে,
“আর না।”
ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকায়। বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
কথাটা বলে মাইরার হাত সরিয়ে দেয়। এরপর আবারও নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত হয়। মাইরার কান্না পায়। কি শুরু করেছে এই লোক। ছটফট করে। ইরফান এবার মাইরার লেহেঙ্গার পার্ট বাম কাঁধ থেকে ধীরে ধীরে অনেকটা নামিয়ে দেয়। মাইরা দু’হাতে ইরফানকে গায়ের জোরে ধাক্কা দেয়। ইরফান বুঝতে না পারায় সামান্য পিছিয়ে যায়। মাইরার দিকে রেগে তাকায়। মাইরার গাল চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“স্টুপিট কি প্রবলেম?”
মাইরার বন্ধ চোখের পাতা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরফান মাইরার গালে ভেজা অশ্রু দেখে মাইরার গাল ছেড়ে দেয়। মাইরার কাঁধের দিকে চোখ পড়লে দেখল অনেকটা নামানো। ঢোক গিলে মাইরার মুখপানে তাকায়। বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে
ডান হাতে মাইরার জামা টেনে কাঁধ ঢেকে দেয়। বা হাতে মাইরাকে নিজের সাথে জড়িয়ে মাইরার জামার চেইন লাগিয়ে দেয়। এরপর দু’হাতের আঁজলায় মাইরার মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“ডোন্ট ক্রাই। কিছু করছি না।”
কথাটা বলে দু’হাতে মাইরার ভেজা গাল মুছে দেয়। মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। ইরফান শান্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা চোখ নামিয়ে মিনমিন করে বলে,

“স্যরি!”
ইরফান অবাক হয় মাইরার মুখে স্যরি শব্দটা শুনে। কিছু একটা ভেবে মাইরার আড়ালে ঠোঁট বাঁকিয়ে মৃদু হাসে। মৃদুস্বরে বলে,
“ইট’স ওকে।”
ইরফানের ফোন বেজে ওঠে। ছেলেটা বিরক্ত হলো। ডান হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে তার বাবার কল দেখে রিসিভ করে।
“ইরফান তুমি কোথায়? এদিকে আসো। কাজ আছে।”
ইরফান ছোট্ট করে বলে,
“ওকে।”
এরপর মাইরাকে ছেড়ে দেয়। তাওয়াল নিয়ে মাইরার মুখের উপর ছুঁড়ে মেরে বলে,
“শাওয়ার নাও। ফাস্ট।”
মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। সে শাওয়ার নিলে এই বিয়ে বাড়িতে তাকে কেমন ফকিন্নি ফকিন্নি লাগবে না? ইরফানের কেন যেন রাগ লাগলো। চোখের পলকে মাইরাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে।

ইরফান নিজেও শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে দু’হাতে মাইরাকে জড়িয়ে ধরে। মুখ নামিয়ে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে দেয়। মাইরা কেঁপে ওঠে। তবে ইরফানকে সরানোর চেষ্টা করল না। ইরফান মাইরার গলার ভাঁজে ছোট্ট ছোট্ট অসংখ্য চুমু আঁকে। হঠাৎ-ই সর্বশক্তি দিয়ে দাঁত বসায় গলার নিচে। মাইরা ব্য’থায় গুঙিয়ে ওঠে। ইরফান ছাড়লো না। একচুল ছাড়লো না। ওভাবেই কতক্ষণ যে ধরে রাখলো। মাইরার মনে হচ্ছে জায়গাটা কেটে খুলে পড়ে যাবে। মেয়েটি ফুঁপিয়ে ওঠে। ইরফান তবুও ছাড়লো না। ঝর্ণার পানির নিচে মাইরাকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে দু’জন ভিজছে। মাইরা ফুঁপিয়ে কাঁদে। ইরফান মাইরার গলার নিচে বসানো দাঁত ছাড়ে না। বেশ অনেকক্ষণ পর নিজের মুখে নোনতা স্বাদ লাগলে ইরফান শুষে নেয় নোনতা তরলটুকু পানিসহ। এরপর মাইরাকে ছেড়ে শাওয়ার অফ করে দেয়। মাইরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। গলায় ভীষণ ব্য’থা করছে। ইরফান ডান হাতে তার মুখে লেগে থাকা পানি ঝেড়ে নিল। এরপর মাইরার গলার নিচে কা’ম’ড়ের স্থানটায় আলতো হাতে স্পর্শ করলে মাইরা ব্য’থায় আর্তনাদ করে ওঠে।

ইরফান কিছু বললো না। ভেজা গায়েই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে কাভার্ড থেকে মাইরার একটা জামা নিয়ে বাড়িয়ে দেয় মাইরার দিকে। মাইরা হঠাৎ-ই রেগে ইরফানের উপর হামলে পড়ে। অসংখ্য কিল ঘুষি দিতে দিতে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“অ’স’ভ্য লোক আমায় ছিঁড়ে খেতে চান? আমি ব্য’থা পেয়েছি। খ’বি’শ লোক।”
ইরফান মাইরাকে আটকালো না। মাইরার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে বলে,
“স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা হাঁপিয়ে গিয়ে ইরফানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। সে যে কেন কাঁদছে বুঝতে পারছে না। ইরফান মাইরাকে বা হাতে জড়িয়ে ডান হাতে তাওয়াল তুলে নিয়ে মাইরার চুলগুলো মুছে দিতে থাকে। এরপর মাইরার কাঁধ থেকে জামা নামিয়ে দিলে মাইরা দ্রুত ইরফানের থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে বলে,

“কি করছেন?”
ইরফান ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
“চেঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি। কাম।”
মাইরা দু’হাতে চোখ মুছে মিনমিনে গলায় বলে,
“আমি করছি। আপনি যান প্লিজ!”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“দু’মিনিটে না বেরোলে দরজা ভেঙে নিজ হাতে চেঞ্জ করিয়ে দিব।”
কথাটা বলে মাইরার জামা মাইরার মাথার উপর ছুঁড়ে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়।
মাইরা খুব অল্প সময়েই চেঞ্জ করে, চোখমুখ থেকে সব মেকাপ উঠিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখল ইরফান ভেজা পাঞ্জাবি বদলে সাদা শার্ট আর ব্রাউন কালার প্যান্ট গায়ে জড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নিয়েছে।
ইরফান শার্টের হাতা গুটিয়ে ড্রয়ার থেকে মলম বের করে মাইরার দিকে এগিয়ে আসে। ফর্সা গলায় কা’ম’ড় দেয়া স্থানটা কেমন লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ডান হাতে জায়গাটায় মলম লাগিয়ে দেয়। মাইরা চোখমুখ কুঁচকে নেয় ব্য’থায়। ইরফান চুপচাপ তার কাজ শেষ করে মলম রেখে দেয়।

মাইরার মাথায় তাওয়াল পেঁচানো। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইরফান মাইরার মাথায় পেঁচানো তাওয়াল টান মেরে খুলে দেয়। ভেজা চুলগুলো ঝরঝর করে পিঠে ঝরে পড়ে। ইরফান মাইরার মুখ দু’হাতের আঁজলায় নিয়ে সময় ব্যয় না করে মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে।
মাইরা কেঁপে ওঠে। দু’হাতে ইরফানের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে। কিছুক্ষণ পর ইরফান মাইরাকে ছেড়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,

“ইট’স মাই পোর্সোনাল চকলেট। এর উপর ফালতু প্রলেপ দিলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব, স্টুপিট।”
এরপর মাইরাকে ছেড়ে টেবিলের উপর থেকে হাতঘড়ি নিয়ে হাতে পড়তে পড়তে ঘর থেকে বেরোনোর উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। মাইরা চুপচাপ বেডের উপর বাম কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। এই ফকিন্নির বেশে সে বেরোবে না। তার চেয়ে ঘুমিয়ে নিক, সেই ভালো। এই লোকের তো তার সুখ সহ্য হয় না।
ইরফান আড়চোখে মাইরাকে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বিয়ে বাড়িতে অনেকে ছেলেরা এসেছে। যারা অলরেডি মাইরাকে কত হাজার বার যে দেখেছে ভাবতেই মেজাজ বিগড়ে যায়। এর প্রতিফলন ঘটিয়েছে হয়তো বাইট দিয়ে।
সবচেয়ে বড় কথা এখানে নাছিম এসেছে। ওর বার্ডফ্লাওয়ার কে আর একবার বার্বি ডল ডাকলে সে ভরা বিয়ে বাড়িতেই মারপিট শুরু করত, যা সে চায়নি। তাছাড়া সবাইকে পিটিয়ে হাত নোংরা করার চেয়ে তার বার্ডফ্লাওয়ার ঘরে থাকুক। সেও নিশ্চিন্তে কাজ করুক।

ফাইজ স্টেজে বসেছে। শুদ্ধ বেশ কিছুক্ষণ ফাইজের পাশে দাঁড়িয়ে পায়চারি করল। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ফাইজের উদ্দেশ্যে বলে,
“শা’লা স্বার্থপর। একা একা বিয়ে করতে ক’ষ্ট লাগছে না?”
ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে,
“বা’ল যা ভাগ তো। কবুল বলার আগে তোর ছায়া আমার উপর ফেলিস না। ব্রিটিশ এর দাদা।”
শুদ্ধ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় ফাইজে দিকে। বিরক্ত হয়ে বাড়ির ভেতর পথ ধরে।
মিশকা শুদ্ধর খালাতো বোন। যার আপন ভাই সাহেল। আর ইরফানের বড় ফুপিয় মেয়ে। সে কিছুক্ষণ আগেই বিয়ে বাড়িতে এসেছে। তার ভাই হসপিটাল। মা আছে সেখানে। তার মা-ই তাকে জোর করে পাঠালো এখানে। কেউ ইনায়ার বিয়েতে না থাকলে খা’রা’প দেখায়। মিশকার কোলে একটা ছয় মাসের বাচ্চা। শুদ্ধ বাড়ির ভেতর পা রাখলে মিশকার সাথে দেখা হয়ে যায়। শুদ্ধ হেসে বলে,

“আপু কেমন আছো?
বাচ্চাটার গাল টেনে বলে, “এর নাম যেন কি?”
মিশকা তার ছেলের দিকে চেয়ে বলে,
“মিরাজ।”
শুদ্ধ বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলে,
“দুলাভাই এসেছে?”
“এসেছে। বাইরে গেল।”
শুদ্ধ বাচ্চাটার গালে দু’টো চুমু খেয়ে হাসে। একটু দূরেই চোখ পড়লে ফারাহকে দেখে হাসি মিলিয়ে যায়। ফারাহ ভেজা চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ এই ব্যাপারে ফারাহকে জ্বালালো না, বরং দ্রুত বাচ্চাটাকে মিশকার কোলে দিয়ে কিছু না বলেই ফারাহের দিকে এগিয়ে যায়। ফারাহ শুদ্ধকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেতে নিলে শুদ্ধ একপ্রকার দৌড়ে ফারাহ’র হাত টেনে ধরে। ফারাহ হাত মুচড়িয়ে বলে,

“আমার হাত ছাড়ো।”
শুদ্ধ বোঝানোর স্বরে বলে,
“তুমি আবার আমায় ভুল বুঝছো কেন ফারাহ?”
ফারাহ ভেজা কণ্ঠে হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলে,
“বুঝিনি, হাত ছাড়ো আমার।”
শুদ্ধ বোঝানোর স্বরে বলে,
“দেখো ওর একটা বাচ্চাও হয়ে গিয়েছে। আমার তো ছেলের মতো। ওকে আদর করেছি। তুমি চাও ওকে কোলে নিতে?”
ফারাহ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

“আমার বাচ্চা ভালো লাগে না। আমার হাত ছাড়ো।”
শুদ্ধ শব্দ করে হেসে ফেলল। ফারাহ’র হাত টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
“তুমি মিথ্যা বলতে একদমই কাঁচা ফারাহ।”
বলতে বলতে মিশকার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর শুদ্ধ মিশকার উদ্দেশ্যে বলে,
“আপু আমার হবু বউয়ের কোলে তোমার বাচ্চাটাকে দাও তো। একটু অভিজ্ঞতা হবে তাহলে।”
শুদ্ধর হবু বউ সম্মোধনে ফারাহ’র কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হয়।
ফারাহকে দেখে মিশকা একটু বিব্রতবোধ করে। ফারাহ’র সাথে অনেক আগে কেমন জ’ঘ’ণ্য বিহেভ করেছিল ভেবেই এমন লাগলো। তবে নিজেকে সামলে তার বাচ্চাকে ফারাহ’র দিকে এগিয়ে দিলে বাচ্চাটাও হাত মেলে দেয় ফারাহ’র দিকে। ফারাহ ছোট্ট বাচ্চাটির তার কাছে আসার আবেদন ফিরিয়ে দিতে পারলো না। বরং খুশিই হলো। কোলে নিয়ে বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।

শুদ্ধ হেসে তাকিয়ে আছে ফারাহ’র দিকে। পকেট থেকে ফোন বের করে ফটাফট ফারাহ আর বাচ্চাটাির অনেকগুলো পিক উঠাতে ব্যস্ত হয়। ফারাহ রেগে বলে,
“কি করছ?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“তোমাকে এতোক্ষণ জ’ঘ’ণ্য লাগছিল, বাচ্চাটাকে নিয়ে একটু ভালো লাগছে। এই সুযোগে তোমার পিক উঠিয়ে নিচ্ছি। মিশকা আপু তার বাচ্চাকে নিয়ে নিলে আবারও তোমার সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে।”
ফারাহ মিশকার কোলে বাচ্চাটি দিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে যায়। শুদ্ধ ফারাহ’র পিছু পিছু যায়। মিশকা হাসলো। শুদ্ধর সাথে যে কোনো ঘটনা ঘটেছিল সে তো ভুলেই গিয়েছিল বলতে গেলে। ফারাহকে দেখে মনে পড়ল।

ফারাহ ইনায়ার ঘরে এসে দেখল মিশকা মেয়েটা ইনায়ার পাশে বসে আছে। ইনায়া বলে ওঠে,
“ফারাহ আপু এসো। আমাদের মাঝে দু’টো মিশকা। একজনকে ডাকলে আরেকজন শোনে। ব্যাপারটা অনেক ইন্টারেস্টিং।”
ইনায়ার মামাতো বোন মিশকা বলে ওঠে,
“তোর মাথায় তোর ফুফাতো ভাই রাতুললাইয়ার মতো গোবর ভরা তাই উল্টাপাল্টা করিস।”
মিশকার কথায় সবাই হেসে ফেলল। ইনায়া কটমট দৃষ্টিতে মিশকার দিকে চেয়ে থাকে। ইনায়ার ফুফাতো বোন মিশকা ইনায়াকে একহাতে জড়িয়ে বলে,
“আরে আপু আজকে ওর বিয়ে। আজকের দিনটা ওকে ছাড় দাও তোমরা।”
ফারাহ’র ভালো লাগলো না। যত যাইহোক। দিনশেষে এই মেয়েকে তার পছন্দ না। একটুও পছন্দ না। নিরবে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

ইনায়ার ঘর থেকে বেরিয়ে ফারাহ মাইরাকে খুঁজছে। অনেকক্ষণ আগে ইনায়ার ঘর থেকে বেরিয়েছে মাইরা। বললো খোঁপা খুলে গিয়েছে, পাঁচমিনিটে আসছে। অথচ ঘণ্টা পার হলো। এখনো তো আসলো না। হাঁটতে হাঁটতে দেখল শুদ্ধ ইরফানদের ড্রয়িং রুমে সোফায় গা এলিয়ে চোখ বুজে আছে। বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। শুদ্ধকে ক্লান্ত লাগছে। ফারাহ এগিয়ে যাওয়ার আগেই একটি মেয়েকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। মেয়েটি শুদ্ধকে ডাকে। ফারাহ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে।
একটি মেয়ের ডাকে শুদ্ধ চোখ মেলে তাকায়। মেয়েটিকে সে চিনলো না। তবে ইরফানের মামা বাড়ির দিকের কোনো আত্মীয় হবে হয়তো। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে কিছু বলার আগেই মেয়েটি হাত বাড়িয়ে বলে,
“হাই ভাইয়া, আমি লিয়ানা। আপনি?”
শুদ্ধ হাসলো না। বিরক্ত হলো। বিয়ে বাড়ির এতো কাজ রে! ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। আশেপাশে এমন কেউ নেইও তাকে এক গ্লাস শরবত দেয়ার মতো। কিন্তুু এই মেয়ের কাছে চাইলো না। হাবভাব ভালো না। কিছু না বলেই আবারও চোখ বুঝল। মেয়েটা বোকা চোখে তাকালো শুদ্ধর দিকে।

একটু পর শুদ্ধ শরীর টানা দিয়ে চোখ মেলে মেয়েটাকে এখনো তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দিকে এক রামধমক দেয়ার জন্য মুখ খুলতে নিয়েও চেপে গেল একটু দূরে ফারাহকে দেখে। হাজার ক্লান্তির মাঝেও একটু শান্তি লাগলো। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। অতঃপর মিটিমিটি হেসে মেয়েটির দিকে চেয়ে একটু শব্দ করে বলে,
“আমি শুদ্ধ। এক গ্লাস ঠাণ্ডা শরবত খাওয়াও তো সুন্দরী।”
মেয়েটি খুশি হলো। এই বাড়িতে তার বহুবার আসা হয়েছে। ইরফানের মাকে খুব ভালোই চেনে। ইনায়ার সাথে তার ভালো সম্পর্ক। এজন্য ইনায়ার বিয়েতে তার আসা। এখন স্বার্থক লাগছে। শুদ্ধকে সে চেনে। ভালো লাগে তার এই ছেলেকে। শুদ্ধ হয়তো তাকে চেনে না। শুদ্ধর এতো সুন্দর সম্মোধনে একটা আবদার পেয়ে মেয়েটা একপ্রকার মনে মনে নাচতে নাচতে যায়। ফারাহ কটমট দৃষ্টিতে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। সে গটগট পায়ে রান্না ঘরের দিকে গেল। গিয়ে দেখল মেয়েটি শরবত বানাতে লেগে পরেছে। ফারাহ ইরফানের মাকে বলল,

“আন্টি গরম পানি আছে?”
রুমা নেওয়াজ ফারাহকে রান্নাঘরে দেখে বলে,
“আরে আম্মু তুমি এখানে এসেছ কেন?”
ফারাহ মেয়েটির দিকে তাকালো। হাত নিশপিশ করছে ঠাস করে থা’প্প’ড় দেয়ার জন্য। শুদ্ধর জন্য কেন শরবত বানাবে এই ভেবে।
রুমা নেওয়াজ ভাবলেন গরম পানি দিয়ে হয়তো কিছু করবে। কাজের চাপে জিজ্ঞেস না করে একটা গ্লাসে অর্ধেক টা গরম পানি নিয়ে ফারাহের দিকে এগিয়ে দেয়। ফারাহ গ্লাস টা নিয়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে শুদ্ধর কাছে এসে দাঁড়ায়। শুদ্ধ ফারাহকে দেখে বলে,
“ফারাহ, সুন্দরী টার কি শরবত বানানো হলো?”

ফারাহ চোখের পলকে শুদ্ধর বা পায়ের হাঁটু বরাবর গরম পানি ঢেলে দেয়। শুদ্ধ চেঁচিয়ে ওঠে। আশেপাশে অনেক মানুষ আছে। যদিও তারা এক কোণার দিকে। অনেকেই তাকালো শুদ্ধর চেঁচানোয়। শুদ্ধ এদিক-ওদিক তাকিয়ে নিজেকে দমালো। বসা থেকে দাঁড়িয়ে অসহায় মুখ করে বলল,
“কি করলে এটা? উফ! কি ছিল মগে?”
ফারাহ কটমট দৃষ্টিতে শুদ্ধর দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“সুন্দরীর হাতের শরবত ঢেলে এবার পা ঠাণ্ডা কর।”
শুদ্ধ পা নাড়ায়। ইশ! তার হবু বউটা শুধু তাকে জ্বালাচ্ছে। অসহায় কণ্ঠে ডাকে,
“ফারাহ? পা জ্বলছে তো!”

ফারাহ পাত্তা দিল না। হাতের মগ টেবিলের উপর রেখে দিল। গরম পানি নিয়ে আসলেও শুদ্ধর পায়ে ঢালার আগে বেসিনের নল থেকে ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে নিয়েছিল। তবে ভালোই গরম ছিল। একটু ছ্যাঁকা তো দিতেই হতো। অ’স’ভ্য ছেলে, শুধু তাকে জ্বালাতে আসে। এবার থেকে সেও পুড়িয়ে ছাড়বে।
একটু দূরেই সামিয়া দাঁড়িয়ে। একবার ফারাহ’র দিকে তাকায়, আরেকবার শুদ্ধর দিকে তাকায়। মেয়েটা ঢোক গিলল। শুদ্ধর সাথে ফারাহ’র কি সম্পর্ক সেটা ভেবেই কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকলো। আবার ভাবলো হয়তো চেনাজানা কেউ। সে তো শুদ্ধর পরিচিত সবাইকে চেনে না।
একটু পর রান্নাঘর থেকে লিয়ানা মেয়েটা হাতে শরবত এনে শুদ্ধর দিকে এগিয়ে দিলে শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে তাকায়। ফারাহ কটমট দৃষ্টিতে এই মেয়ের দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ মেকি হেসে ফারাহকে ইশারায় দেখিয়ে দিয়ে বলল,
“ওকে দাও। আমি খেয়েছি।”

কথাটা বলে আবারও সোফায় বসল। চোখমুখ কুঁচকে পা মেলে দিল। ইশ! তার হবু বউটার এতো তেজ! শুধু তাকে পোড়ায়!
ফারাহ অনেকটা এগিয়ে গেলে সামিয়া মেয়েটাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। তখনই সেখানে শুদ্ধর মা এসে দাঁড়ায়। ফারাহকে তিনি চিনেন। এর আগেও দেখেছে। তার ছেলের বন্ধু ফাইজের বোন ফারাহ। আর এখন তো তাদের মেয়ে ইনায়ার ননদিনী। শুদ্ধর মা হেসে বলেন,
“ফারাহ আম্মু কেমন আছো?”
ফারাহ শুদ্ধর মাকে দেখে ছোট্ট করে সালাম দেয়। মৃদু হেসে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি। আপনি কেমন আছেন?”
শুদ্ধর মা মৃদু হেসে বলে,

“ভালো আছি মা। তুমি একা একা এখানে কি করছ?”
“এমনিতেই এসেছিলাম আন্টি।
আড়চোখে সামিয়ার দিকে তাকায়। মেয়েটা এভাবে শুদ্ধর মায়ের পাশ ঘেষে আছে কেন বুঝল না। মাইরা বলল মেয়েটা তার আম্মাজানের বউমা। কৌতুহল দমাতে না পেরে আমতা আমতা করে সামিয়াকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করে,
ও আপনার কে হয় আন্টি?”
তৃণা বেগম সামিয়ার এক হাত ধরে বললেন,
“এটা আমার বউমা। তুমি তো শুদ্ধকে চিনো। তোমার ভাইয়ের বন্ধু। সামিয়া ওর বউ।”
ফারাহ বিস্ময় নিয়ে সামিয়া মেয়েটার দিকে তাকায়। সামিয়া মৃদু হেসে তাকিয়ে আছে ফারাহের দিকে। ফারাহ ঢোক গিলল। কোনোরকমে বলে,
“উনার বিয়ে…”
তৃণা বেগম কথার মাঝেই মৃদু হেসে বলে,

“ঠিক করে রেখেছি। আমাদের ইনায়ার বিয়ের পর পরই ছেলেটার হাতে বউ তুলে দিব।”
ফারাহ কি বলবে বুঝতে পারছে না। তৃণা বেগম শুদ্ধর খালার ডাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলেন,
“তোমরা এদিকে আসো মা।”
ফারাহ’র সামিয়ার অনামিকা আঙুলে একটা আংটি চোখে পড়ল। মেয়েটার চোখ ঝাপসা। ঢোক গিলে সামিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
“আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
সামিয়া মাথা নেড়ে বলে,
“জ্বি আপু বলুন।”
ফারাহ চোখ বুজে দুঃখ মিশ্রিত শ্বাস নেয়। এরপর বলে,

“তোমার হাতের এই আংটি কে দিয়েছে?”
সামিয়া হেসে জবাবে বলে,
“তৃণা আম্মায় দিয়েছে আপু, তার ছেলের জন্য।”
ফারাহ’র শরীর অসাড় হয়ে আসে। মাথা ঝিমঝিম করছে। শুদ্ধর মাকে আম্মা ডাকতে শুরু করে দিয়েছে?
সামিয়া সেখানে আর দাঁড়ালো না। সময় ব্যয় না করে শুদ্ধর মায়ের পিছু পিছু যায়। মেয়েটা একা একা। সেভাবে কাউকে না চেনায় শুদ্ধর মায়ের সাথে সাথেই থাকছে।
এদিকে ফারাহ’র পা যেন টলছে। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। কি শুনল সে? পিছু ফিরে দূরে বসা শুদ্ধর দিকে তাকায়। ধীর পায়ে এগিয়ে যায়, পা চলছে না, তবুও টেনেই নিয়ে যায়। শুদ্ধর পাশে দাঁড়িয়ে কান্না মিশ্রিত গলায় ডাকে, “শুদ্ধ ভাই?”

শুদ্ধ পা মেলে বসে ফোন স্ক্রোল করছিল। ফারাহ’র অন্যরকম কণ্ঠ শুনে মাথা তুলে তাকায়। ফারাহ’র চোখমুখ লাল, সাথে চোখের পানিতে গাল ভেজা।
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে চায় ফারাহ’র দিকে। এভাবে কাঁদছে কেন মেয়েটা? দ্রুত বসা থেকে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে ফোন রেখে বলে,
“কাঁদছ কেন ফারাহ? কি হয়েছে?”
ফারাহ’র চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। শুদ্ধ আশেপাশে তাকায়। এরপর ফারাহ’র দিকে তাকায়। তাকে মলম লাগাতে না পারলে ফারাহ যে কান্না করে তা তো জানে শুদ্ধ।
গলায় নামিয়ে বলে,
“ফারাহ কান্না কর না। দেখ অনেক মানুষ। আমার পায়ে তেমন জ্বলছে না। এমনি ঠিক হয়ে যাবে। প্লিজ কান্না থামাও।”

ফারাহ নিরব চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে টুপটুপ করে অশ্রু বিসর্জন দেয়। শুদ্ধ কপাল চাপড়ালো। এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা যায় না। ফারাহ’র হাত তার ডান হাতের মুঠোয় নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
“আচ্ছা আসো। নিজ হাতে মলম লাগিয়ে দিও। তবুও কান্না থামাও।”
এই বাড়িতে শুদ্ধর বরাদ্দকৃত রুমে গিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা মলম এনে বেডের উপর বসে। পা মেলে বা পায়ের প্যান্ট উপরে তুলতে নেয়, আর বলে,
“নাও মলম লাগাও। নিজেই পোড়াও, নিজেই কাঁদো। এতো প্রেম কোনখানে রাখি আমি!”
ফারাহ হঠাৎ-ই শব্দ করে কেঁদে দেয়। শুদ্ধ থতমত খেয়ে তাকায় ফারাহ’র দিকে। দ্রুত বেড থেকে নেমে ফারাহ’র সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ফারাহ কি হয়েছে?”

ফারাহ’র কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গিয়েছে। শুদ্ধ বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“ফারাহ কান্না থামাও। এটা বিয়ে বাড়ি। বাড়ি ভর্তি মানুষ। কেউ শুনে ফেলবে তো।”
ফারাহ শুনলো না। কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে কি যেন বলে। শুদ্ধর কপালে চিন্তার ভাঁজ। ফারাহ তো এভাবে কাঁদার মেয়ে নয়। বিচলিত হলো। তার ফারাহ এভাবে কাঁদছে কেন? সেও তো কাঁদায়। এভাবে তো কাঁদে না। এতো দুঃখ থাকে না সে কান্নায়। শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,
“ফারাহ প্লিজ এভাবে কান্না কর না। কি হয়েছে তোমার? এদিকে কেউ চলে আসলে আমাদের উল্টাপাল্টা ভাববে।”
ফারাহ আগের মতোই কাঁদতে থাকে। শুদ্ধ দোনোমনা করে দু’হাতে ফারাহ’র গাল আগলে নিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
“আমার কাজে বেশি ক’ষ্ট পেয়েছ? ওই মেয়েকে আমি চিনিনা ফারাহ। বিলিভ মি, ও একদমই সুন্দরী নয়। আর কাউকে সুন্দরী বলব না।
একটু থেমে বলে,
মিশকা আপুর সাথে কথা বলেছি বলে ক’ষ্ট পেয়েছ? আর বলব না, তার বাচ্চার সাথেও বলব না। পাক্কা।
প্লিজ কান্না অফ কর।”

ফারাহকে আগের মতোই কাঁদতে দেখে শুদ্ধর মুখে অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে। মৃদুস্বরে বলে,
“আমার ফারাহ। প্লিজ কান্না থামাও। এভাবে কাঁদলে আমার ক’ষ্ট হয়।”
ফারাহ পিটপিট করে তাকায় শুদ্ধর দিকে। দু’হাতে শুদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“তুমি খুব খা’রা’প শুদ্ধ ভাই। সবসময় আমাকে কাঁদাও।”
শুদ্ধ ফারাহ’রর দু’গাল মুছে দিয়ে বলে,
“আচ্ছা আর কাঁদাব না। কেন কাঁদছ এবার বলো।”

ফারাহ রেগে শুদ্ধর হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দেয়। শুদ্ধ কিছু বলল না। সে ফারাহ’র দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। ফারাহ কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে। শব্দ করে কাঁদে। শুদ্ধর বুকের বা পাশে কেমন চিনচিন করল। ফারাহ’র এই কান্নায় এতো দুঃখ মেশানো কেন? তার ভালোবাসার কান্নাময় বেদনা ছেলেটাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল যেন। দ্রুত ফারাহ’র সামনে হাঁটু মুড়ে বসে কোমল স্বরে ডাকে,
“ফারাহ?”
ফারাহ দু’হাতে মুখ লুকিয়ে কাঁদতেই থাকে। শুদ্ধ ফারাহ’র মুখ জোর করে উঠিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“কেউ কি কিছু বলেছে তোমায়? কোনো ছেলে ডিস্টার্ব করেছে?
একটু থেমে বলে, সৌরভ কিছু করেছে?”
ফারাহ কিছুই বলে না। শুদ্ধর নিজেকে কেমন দিশেহারা লাগে। আবারও বলে,

“আমার ফারাহ, প্লিজ বলো কি হয়েছে তোমার? আমার কোনো কাজে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছ? কোন কাজ বলো? আমি আর করব না সে কাজ। একবার যাস্ট বলো আমাকে।”
ফারাহ’র কোনো রেসপন্স না পেয়ে শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,
“এই ফারাহ, আমার বুক ব্য’থা করছে কিন্তুু।”
ফারাহ হঠাৎ-ই হাঁটুতে ভর দিয়ে শুদ্ধর দিকে এগিয়ে গিয়ে দু’হাতে শুদ্ধর গলা জড়িয়ে শুদ্ধর কাঁধে মুখ গুঁজে দেয়। শুদ্ধ এক মুহূর্তের জন্য কেমন স্তম্ভিত হয়ে যায়। এই প্রথম ফারাহ এভাবে তাকে জড়িয়ে ধরল। ছেলেটা বোধয় কারেন্ট শক খেয়েছে, সেভাবে তব্দা খেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। ফারাহ শুদ্ধর গলায় মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“তুমি খুব খা’রা’প শুদ্ধ ভাই। আমি তোমাকে একদম চাই না। তুমি শুধু কাঁদাও আমায়, শুধু ক’ষ্ট দাও, একটুও ভালোবাসো না আমাকে। তুমি একটুও ভালো নয়।”
শুদ্ধ ফারাহ’র অভিযোগ চুপ করে শুনলো। হাত বাড়িয়ে ফারাহকে জড়িয়ে ধরল না। বরং নিজের থেকে ফারাহকে ছাড়িয়ে নিয়ে দু’হাত ফারাহ’র গালে রেখে মৃদুস্বরে বলে,
“আর কাঁদাবো না, কিন্তুু তুমি শুধু এই কারণে কাঁদছ না, আমি জানি। কি হয়েছে বলো আমাকে।”
ফারাহ রেগে শুদ্ধর হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দেয়। সামিয়াকে আংটি দিয়ে দিয়েছে। আর এখানে তাকে দরদ দেখাতে এসেছে। কাঁদতে কাঁদতেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। শুদ্ধ দ্রুত বসা থেকে দাঁড়িয়ে ফারাহ’র হাত টেনে বলে,
“ফারাহ বলে যাও প্লিজ! কি হয়েছে তোমার?”
ফারাহ জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রাগে চিৎকার করে বলে,
“হাত ছাড়ো তুমি আমার। ভাইয়ার বিয়ের পর এক সপ্তাহের মাঝেই আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিব। তোমার মতো ছেলেকে জীবনেও চাই না আমার।”

শুদ্ধ রেগে যায়। ডান হাতে ফারাহ’র গাল শক্তহাতে চেপে বলে,
“এই জিভ রাখবো না আর একবার এসব ফা’ল’তু কথা বললে। বে’য়া’দব মেয়ে। আমাকে চাইতে বলেছি আমি? আমি চাই তো। এটাই যথেষ্ট। তোমাকে চাইতে হবে না আমাকে।”
ফারাহ চোখ নামিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। শুদ্ধ ফারাহ’র গাল ছেড়ে চোখ বুজে শ্বাস নেয়। নিজেকে দমিয়ে নেয়। এরপর চোখ খুলে দু’হাতে ফারাহ’র গাল আলতো ছুঁইয়ে অনুতপ্ত স্বরে বলে,
“স্যরি! ব্য’থা পেয়েছ?”
ফারাহ কিছু বলে না। নিরবে কেঁদে ভাসায়। শুদ্ধ আবারও আদুরে স্বরে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে ফারাহ? বলো? না বললে শুধরাবো কি করে বলো তো? যে কারণে ক’ষ্ট পাচ্ছো, তার অস্তিত্ব রাখবো না। একবার শুধু বলো আমায়।”

ফারাহ কিছু বলল না। তার গালে রাখা শুদ্ধর দু’হাত তার দু’হাতে ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নেয়। এরপর নিজের দু’হাতে মুখ মুছে ধুপধাপ পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। শুদ্ধ অসহায় চোখে চেয়ে রইল। চোখ দু’টো কেমন লাল হয়ে গিয়েছে শুদ্ধর।
কি হয়েছে ফারাহ’র? সে তো বুঝতে পারছে না। মেয়েটার যা জেদ! বলছেনা মানে বলবেই না। এখন কি করবে সে? উফ! মাথা য’ন্ত্র’ণা শুরু হলো। এসব আর নেয়া যায় না।

মাইরা ইরফানের ঘরের বেডের উপর হাঁটুতে থুতনি ঠেকিয়ে চুপ করে বসে আছে। ঘাড় উঁচিয়ে একবার ঘড়িতে সময় দেখল। বিকেল চারটে বাজে। তার কান্না পাচ্ছে। সে কতকিছু প্ল্যান করে রেখেছিল ইনায়ার বিয়ের জন্য। সব ভেস্তে দিয়েছে ওই লোকটা। সবাই মজা করছে, আর সে ঘরে শোক পালন করছে। ভাবতে ভাবতে সত্যিই সত্যিই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।
কিছুক্ষণ আগে রিতা এসে ঘরে এক প্লেট খাবার দিয়ে গিয়েছে। খাবে না সে। ঘাপটি মেরে বসে আছে। ওই নির্দয় লোকটাই খাক, বাইরে ঘুরে বেড়াক। সব ওই লোকটদই করুক। সে কিছুই করবে না।
হঠাৎ-ই দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মাইরা ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে ইরফানকে দেখে দ্রুত উল্টো ঘুরে শুয়ে চোখ বুজে নেয়। দেখবেই না এই অ’স’ভ্য লোককে।
ইরফান ঘরের দরজা আটকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে মাইরার দিকে। টেবিলে খাবার ভর্তি প্লেট দেখে বিরক্ত হলো। কমপক্ষে ৪৫ মিনিট আগে এর ঘরে খাবার পাঠিয়েছে অথচ এই স্টুপিট এখনো খায়নি।
গম্ভীর গলায় বলে,

“স্টুপিট খাওনি কেন?”
মাইরা ঘাবটি মেরে চোখ বুজে রইল। ইরফান মাইরার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়। ধমকে বলে,
“থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব। কি প্রবলেম?”
মাইরা বিরক্ত হয়ে যায়। ইরফানের হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে রেগে বলে,
“খাবো না আমি। আপনি যান তো। অ’স’হ্য লোক একটা।”
কথাটা বলে আবারও ঠাস করে শুয়ে পড়ে। ইরফান রেগে যায়। এই হাঁটুর বয়সী মেয়ে তাকে রাগ দেখাচ্ছে। ব্যাপারটা হজম হয় না তার।
ইরফান আবারও টান মেরে মাইরাকে বসিয়ে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আমাকে রাগিয়ো না। চুপচাপ খেয়ে নাও। ফাস্ট। আমাকে যেতে হবে।”
মাইরা চিল্লিয়ে বলে,

“তো যান। আপনাকে কে ধরে রেখেছে?”
ইরফান রেগে মাইরার গাল চেপে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“স্টুপিট চিৎকার করছ কেন? খেতে বলেছি আমি।”
মাইরা কান্নার ভান করে ইরফানের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“আমার খিদে পায়নি। খাবো না আমি। সরুন।”
ইরফান মাইরার গাল ছেড়ে দেয়। একটু পিছিয়ে গিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“It’s ok. I will eat. I am very hungry.”
কথাটা বলে হাতঘড়ি খুলে টেবিলের উপর রাখলো। এরপর শার্টের বোতাম একে একে খুলতে লাগলো।
মাইরা পিটপিট করে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। খাওয়ার জন্য শার্ট খুলতে হয়? অবাক হয়ে বলল,
“তো খান। কিন্তুু আপনি কাপড় পরে খেতে পারেন না?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,
“নো। মানুষ খাওয়ার জন্য সব খুলে ফেলতে হয়।”
মাইরা অবাক হয়ে বলে,

“মানে? আপনি কোন মানুষকে খাবেন?”
ইরফান গায়ের শার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেলে বলে,
“তোমাকে।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। আমতা আমতা করে বলে,
“ম মা মানে?”
কথাটা বলে কোনোরকমে ধীরে ধীরে ডান দিকে সরে গিয়ে বেড থেকে নামতে গেলে ইরফান বেডের উপর উঠে মাইরাকে টেনে ঠাস করে শুইয়ে দেয়। মাইরা চিৎপটাং হয়ে পড়ে যায়। দ্রুত উঠতে নিলে ইরফান মাইরার উপর শুয়ে তার দু’হাতে মাইরার দু’হাত চেপে ধরে বেডের সাথে। মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
“হায় আল্লাহ! কি করছেন? ছাড়ুন আমায়।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৮

ইরফান মাইরার গলায় মুখে গুঁজে লম্বা শ্বাস টানে। মাইরা কেঁপে ওঠে। কান্নামাখা গলায় বলে,
“সরুন। আপনি কি ভারী! ভর্তা হয়ে গেলাম আমি।”
ইরফান মাইরার গলায় নাক ঘষে শীতল কণ্ঠে বিড়বিড়িয়ে বলে,
“ডোন্ট ডিস্টাব মি স্টুপিট। তোমাকে খেতে দাও।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪০