প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৩

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৩
Drm Shohag

রুমা নেওয়াজ শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলেন। পিছু ফিরে জাহারাকে তার মাকে জড়িয়ে কাঁদতে দেখে তার মন পুড়লো ভীষণ। ইনায়া যেমন তার মেয়ে জাহারাও তো তার আরেকটা মেয়ে। মেয়ের মন ভাঙলে মায়ের তো মন পুড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
এগিয়ে গিয়ে জাহারার মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“কেন মাইরাকে মারতে গেলি মা? জানিস তো ইরফান কেমন, তোর ইচ্ছে পূরণ করার সাধ্য আমার নেই। কারণ ইরফান নিজে তা চায় না। ওকে ভুলে যা মা।”

জাহারা নিরবে কাঁদে। কান্নার গতি বাড়ে। খালার কথার উত্তর করে না। তার ক’ষ্ট কে বুঝবে? তার তো মাইরার সাথে কোনো শত্রুতা নেই। এতো বাজে কথা সে কখনো কাউকে বলেনি। অপরিচিত কাউকে কখনো মারেনি। কিন্তুু মাইরার সাথে কিভাবে যেন এমন করল। তার যে ইরফান ভাইয়ের পাশে কাউকে সহ্য হয় না। সে কি করবে?
রুমা নেওয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে জাহারাকে ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন। পাশেই জাহারার মা চোখের পানি মুছে বোনের পাশে হেঁটে এগিয়ে যান।
তারেক নেওয়াজ জাহারার উপর বিরক্ত। এতোদিন তার ছেলেটার হাতে মার খেয়ে খেয়ে তার বন্ধুর মেয়ের নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল, এখন তার স্ত্রীর বোনের মেয়ে এসে মেরে দিচ্ছে। তিনি নিজের কাছেই ভীষণ অনুতপ্ত হয়। মাইরাকে ভালো রাখতে পারছেন না তিনি। তবে ইরফানের আজকের বিহেভিয়ার এ বেশ খুশিও হয়েছেন বটে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চারপাশে চোখ বুলায়। ছোটখাটো একটা ঝড় হয়ে গিয়েছে। একদিন পর মেয়ের বিয়ে, আর এসব কি হচ্ছে। বাবা হিসেবে বাড়ির এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় যদিও তার রা’গ করার কথা ইরফানের উপর। তবে তার রা’গ হলো না। কোথাও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করল। টেবিল কিনতে হবে। মেয়ের বিয়ে। ভাঙা টেবিল সাজিয়ে রাখলে তো হবে না!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সবাই সবার মতো প্রস্থান করলে ইনায়া দ্রুত মাইরার ঘরে আসে। মাইরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। দরজায় শব্দ পেয়ে মাথা তুলে তাকায়। ইনায়াকে দেখে চোখের পানি মুছে নেয়। ইনায়া মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“কি হয়েছে মাইরা? জাহারা আপু তোমাকে সত্যিই মে’রে’ছে?”
মাইরা মাথা নিচু করে বলল,
“আসলে জাহারা আপুর দোষ না। সে তোমার ভাইয়াকে পছন্দ করে। আর এজন্য আমাকে তোমার ভাইয়ার পাশে জাহারা আপু মেনে নিতে পারে না। এজন্যই রেগে গিয়ে একটা মেরেছে। বাদ দাও আপু।”
ইনায়া অবাক হয় মাইরাকে দেখে। তার মনে প্রশ্ন জাগে, মেয়েটা এতো অদ্ভুদ কেন? আগে যখন তার ভাইয়া মা’রতো, তখন মাইরা বলেছিল, আসলে জোর করে বিয়ে দেয়ায় উনি রেগে মে’রে দেয়। তার ভাইয়ের নাকি কোনো দোষ নেই। আর এখন জাহারা আপুর মার খেয়ে বলছে, জাহারা আপু ইরফান ভাইয়াকে পছন্দ করে বলে রে’গে মে’রে’ছে। জাহারা আপুর নাকি কোনো দোষ নেই।
বিস্ময় কণ্ঠে প্রশ্ন করে,

“তুমি এমন কেন মাইরা?”
মাইরার মন খা’রা’প হয়। ইরফানের মা তাকে ভুল বুঝেছে, তখন তার কথা শুনে বুঝেছে। তিনি ভেবেছেন মাইরা ইরফানকে সব বলেছে। কিন্তুু মাইরা একটুও চায়নি এই ব্যাপার ইরফান জানুক। অতঃপর মাইরা ইনায়ার দু’হাত ধরে বলে,
“আপু বিশ্বাস কর, আমি তোমার ভাইয়াকে এসব বলিনি। আমি একদম জানাতে চায়নি তোমার ভাইয়াকে। বাট চেষ্টা করেও পারলাম না।
আমি স্যরি আপু! তোমার বিয়ের একদিন আগে আমার জন্য পরিবেশটাই কেমন ন’ষ্ট হয়ে গেল। স্যরি আপু!”
ইনায়া কপাল চাপড়ে বলল,
“আরে বোকা মেয়ে আমি তোমাকে ভালো বলেছি। তুমি ভাইয়াকে বলেছ এসব বলিনি।”
মাইরা বোকা চোখে তাকিয়ে বলে,
“কেন?”
ইনায়া মৃদু হেসে বলল,
“কারণ তুমি ভালো তাই। এবার আসল কাহিনী বলো তো।”
মাইরা ইনায়াকে সবকিছু সুন্দরভাবে বলে। ইনায়া সবচেয়ে বেশি অবাক হয় জাহারা ইরফানকে পছন্দ করে শুনে। সে কখনোই বুঝতে পারেনি জাহারা ইরফানকে পছন্দ করে।
মাইরা ইনায়াকে ঝাঁকিয়ে বলে,
“আপু তোমার খালামণিরা কি চলে গিয়েছে?”
ইনায়া মাথা নেড়ে বলল,
“যেতে চাইলেও আম্মু যেতে দিবে না, চিন্তা কর না।”
মাইরা মন খারাপ করে রইল। তার খা’রা’প লাগছে বাসার সুস্থ পরিবেশটা কেমন উলটপালট হয়ে গেলো।

শুক্রবার।
জুম্মার নামাজ শেষে তারেক নেওয়াজ বাড়িতে প্রবেশ করেন। মাথা থেকে টুপি হাতে নিয়ে পাঞ্জাবির পকেটে রেখে সোফায় বসেন। কিছুক্ষণের মাঝেই ইরফান আর শুদ্ধ ফেরে। ইরফান কোনোদিকে তাকায় না। গটগট পায়ে তার ঘরের উদ্দেশ্যে পা চালায়। তারেক নেওয়াজ শান্ত চোখে দেখলেন ছেলের প্রস্থান। অন্যান্য দিন গুলোয় নামাজ পড়ে এসে সবাই একসাথে খেয়ে তবেই ঘরে যেত। এখন ইরফানকে ডাকলেও যে শুনবে না তা তারেক নেওয়াজ খুব ভালোই জানেন। তাই চুপ থাকলেন। রুমা নেওয়াজ ঝাপসা চোখে ছেলের প্রস্থান দেখলেন। তার মুখে খাবার যাবে কি করে ছেলে না খেয়ে থাকলে?
রুমা নেওয়াজ তার বোন আর জাহারাকে একপ্রকার জোর করেই রেখেছে। মেয়ের বিয়ে। সেখানে বোন থাকবে না? কি করে মানবেন তিনি?
খাবার টেবিলে আসতে জোর করেছিল কিন্তুু আসেনি। মেয়ের কাজে মা ভীষণ ল’জ্জিত সাথে মেয়ের জন্য ভীষণ মন খারাপ। আজ আরও আত্মীয় স্বজন আসলে জাহারার মন একটু আধটু ভালো হবে ভেবে একটু স্বস্তি পান। কিন্তুু তার ছেলে কে কি করবেন? সে যে কারো কথা শোনে না। কখন খাবে ছেলেটা? রাতে খাবে? তাও জানেন না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি তার ঘরের দিকে এগিয়ে যান।
শুদ্ধ বাম হাত পকেটে গুঁজে ভাবছে কি করা যায়। তার মামাকে দেখল, মামির প্রস্থান দেখল। আজ সকালের ঘটনার পর ইরফান এখানে বসে খাবে ইহা তো বিলাসিতা। তবে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।
মাইরার ঘরের দিকে পা চালায় শুদ্ধ। ভিড়ানো দরজায় নক করে বলে,

“মাইরা আছো?”
মাইরা ঘর থেকেই বের হচ্ছিল, শুদ্ধর ডাকে ভিড়ানো দরজা মেলে দাঁড়িয়ে বলে,
“জ্বি ভাইয়া?”
শুদ্ধকে ঘরের ভেতর আর যেতে হলো না। শুদ্ধ গলা ঝেড়ে বলে,
“ইরফানের ভীষণ মাথা ব্য’থা করছে। তুমি কি একটু দেখবে?”
মাইরা চিন্তিত হলো। আজ সকালে যা কান্ড ঘটলো মাথা ব্য’থা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মাইরা শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি দেখছি ভাইয়া। উনি কোথায়?”
শুদ্ধ মনে মনে হাসছে। এরা দু’টোই তো সাংঘাতিক প্রেমিক-প্রেমিকা মনে হচ্ছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
“ওর ঘরেই আছে। দেখো তো কি অবস্থা। সকালে খায়নি, এখনো খেতে চাইছে না। এজন্য হয়তো, বুঝলে?”
মাইরা অস্থির কণ্ঠে বলে,
“আচ্ছা ভাইয়া আমি দেখছি।”
কথাটা বলে দ্রুতপায়ে রান্নাঘরে গেল। ডায়নিং-এ দেখল কেউ নেই। টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখা। মাইরা হয়তো বুঝলো। অন্যদিন হলে এতোক্ষণে সবাই খেতে বসে যেত। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নাঘরে গিয়ে ইরফানের জন্য এক মগ কফি করে আনে। শুদ্ধ মিটিমিটি হাসছে। বাহ! খুব উন্নতি হয়েছে তো এদের।
মাইরা সিড়িতে এক পা রেখেও পিছিয়ে আসে। এই লোকের যা রা’গ, সকালের কথা মনে পড়লে এখনো ভ’য় লাগে। ভাবলো সে না যাক, শুদ্ধ তো আছেই। শুদ্ধ গিয়ে কফিটা দিয়ে আসুক। এই ভেবে পিছিয়ে আসে। শুদ্ধর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

“ভাইয়া আপনার ভাইকে এটা দিয়ে আসুন।”
শুদ্ধ সোফায় বসে ফোন স্ক্রোল করছিল। মাইরার কথায় চোখ তুলে তাকায়। সোজা হয়ে বসে বলে,
“কিছু বললে মাইরা?”
মাইরা কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আপনার ভাইকে এটা দিয়ে আসুন। মাথা ব্য’থা করছে বললেন যে!”
শুদ্ধ মৃদু হেসে বলল,
“তুমি যাও মাইরা। আমি একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করছি।”
কথাটা বলে আবারও ফেনে ব্যস্ত হয়ে যায়। মাইরা অসহায় চোখে তাকায়। এখন তাকেই যেতে হবে? নিরুপায় হয়ে সে নিজেই এগিয়ে গেল।

মাইরা ইরফানের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভিড়ানো দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিয়ে চারপাশে চোখ বুলায়। ইরফানকে ঘরে না দেখে ভ্রু কোঁচকালো। নেই তো। ঘরের ভেতর প্রবেশ করলে ইরফান বেলকনি থেকে তার ঘরে এসে মাইরাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মাইরা ইরফানকে দেখে হা করে চেয়ে আছে। ইরফানের মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলায়৷ সাদা পাঞ্জাবি, সাদা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহিত ইরফানকে দেখে মাইরা অবাক না হয়ে পারলো না। এই লোককে ভুলেও পাঞ্জাবি পরে দেখেনি মাইরা। একদম অন্যরকম লাগছে ইরফানকে। মাইরার মনে হলো এই ইরফান নতুন ইরফান। শুভ্র কাপড়ে মোড়া ইরফানকে মাইরার কাছে এক নির্মল পুরুষ মনে হলো। যে খুব শান্ত, সুদর্শন এক পুরুষ। মাইরা মনে মনে আওড়ায়, ‘সুদর্শন শুভ্র পুরুষ।’
ইরফান মাইরার সামনে এসে দু’হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে দাঁড়ায়। গম্ভীর গলায় বলে,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
ইরফানের কথায় মাইরার ধ্যান ভাঙে। মাথা নিচু করে নেয়। চোখ বুজে নিজেকে দু’টো কথা শোনায় এভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য। ইরফান মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে। হাতে কফির মগ দেখে ভ্রু কোঁচকালো। আবারও বলে,
“কি চাই?”
মাইরা ঢোক গিলে মাথা তুলে পিটপিট করে তাকায় ইরফানের পানে। মিনমিন করে বলে,
“আপনার কফি।”
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে আছে। এই দুপুরে তার জন্য কফি এনেছে কেন এ মেয়ে? ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কেন এনেছ?”
মাইরা ফট করে বলে ফেলে,
“আপনার তো মাথা ব্য’থা, এজন্য এনেছি। নিন খেয়ে নিন। একদম সেরে যাবে।”
ইরফান মনে করার চেষ্টা করল তার কখন মাথা ব্য’থা করছিল আর সে একে কফি আনতে বলেছিল কি-না। কিন্তুু মনে করতে পারলো না। ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তোমাকে কে বলেছে আমার হেডেক?”
মাইরা ফটাফট উত্তর দেয়,
“শুদ্ধ ভাইয়াই তো বললো।”
ইরফানের কোঁচকানো কপাল টানটান হলো এবার। মাইরাকে শুদ্ধর এমন কথা বলার কারণ খুঁজে পেল না। নিঃশব্দে মাইরার হাত থেকে কফির কাপ নিয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করে,
“দুপুরে খেয়েছ?”
মাইরা অবাক হয় ইরফানের ব্যবহারে। ইরফান এরকম ব্যবহার একদম নতুন করছে এমন নয়। তবে বেশিরভাগ সময় তো ধমকা ধমকি করতেই সময় পার করে। ভাবনা রেখে মৃদুস্বরে বলল,

“খাইনি। আপনি খাবেন না?”
ইরফান কফির মগ বেডসাইড টেবিলে রেখে অদ্ভুদভাবে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরার থেকে এমন কথা হয়তো ইরফান আশা করেনি। এগিয়ে এসে বলে,
“নো৷ তুমি খাওনি কেন?
হাত ঘড়িতে একবার সময় দেখল, ঘড়ির কাটা ২:৩০ এর ঘর পেরিয়েছে। ইরফান বিরক্ত হয়। মাইরার দিকে চেয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“না খেয়ে থাকার বুদ্ধি করেছ? এমনিতেই তো বডিতে কিছু নেই।”
মাইরা রে’গে যায়। তাকে কি অপমান করল লোকটা? এই লোকটা আসলে শুধু বাইরেই সুদর্শন, ভেতরে কু’দর্শন। রে’গে দু’হাত কোমড়ে রেখে বলে,
“আমার শরীরে অনেক কিছুই আছে। শুধু দেখার জন্য আপনার ভালো একজোড়া চোখ নেই, বুঝলেন?”
ইরফানের তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে থাকে মাইরার পানে। দু’পা পিছিয়ে গিয়ে প্যান্টের পকেটে দু’হাত গুঁজে দাঁড়ায়। মাইরার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলায়। সবুজ রঙের গোল জামা, পায়জামা ওড়না পরিহিত মেয়েটাকে নিঁখুতভাবে পরোখ করল। মনে মনে আওড়ায় তার ব্যক্তিগত নাম। ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে বোধয়। মাইরা বোঝে না। ইরফান নিজেকে স্বাভাবিক করে গম্ভীর গলায় বলে,

“দেখাও তবে।”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কি?”
ইরফান আবারও মাইরার একদম সামনে দাঁড়িয়ে মাইরার প্রশ্নাত্মক মুখপানে চেয়ে বরফ শীতল গলায় বলে,
“তোমার বডিতে যা যা আছে সেসব।”
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফানের দৃষ্টি দেখেই বুঝলো এই লোক উল্টাপাল্টা মিন করছে। মাইরা দ্রুত চোখ নামিয়ে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। মনে মনে ইরফানকে ধুয়ে দেয়। কত্ত বড় খা’রা’প লোক, তার কথাকে উল্টেপাল্টে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ-ই মাথা তুলে বলে,
“আমি বলতে চেয়েছি আমি ওতোটাও চিকন না।”
ইরফান বুকে দু’হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে গম্ভীর গলায় বলে,
“দেখাও।”
মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। এই লোকটা কেমন যেন। এমনিতেই সে সকালে লোকটার শার্ট ভিজিয়ে দিয়েছিল কেঁদেকেটে। এতোক্ষণ সেটা মনে না পড়লেও এখন মনে পড়ে ল’জ্জা লাগছে। সাথে আরও যুক্ত করছে লোকটা। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। ইরফান মাইরার নত হওয়া মুখপানে চেয়ে সামান্য ঠোঁট বাঁকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
“ইউ আর আ ভেরি লিটল গার্ল।”

মাইরার মনে হলো ইরফান কথাটা রসিকের ছলে হেসে বলল। তড়াক করে মাথা তুলে তাকায়। কিন্তুু ইরফানকে সেই স্বভাবসুলভ গম্ভীর মুখে দেখে হতাশ হয়। তবে অবাক হয় না। তারই মনের ভুল ভেবে নিজেরই নিজের মাথায় থা’প্প’ড় দিতে ইচ্ছে করল।
ইরফান মাইরার দিকে চেয়েই ডান পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করে।
“রিতাকে বল, এক প্লেট ভাত যেন আমার রুমে দিয়ে যায়।”
এরপর কল কেটে দেয়। মাইরা বোকাচোখে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
“কাকে ভাত আনতে বললেন? আপনি রুমে খাবেন?”
ইরফান ফোন স্ক্রোল করতে করতে বলে,
“নো।”
“তাহলে আনতে বললেন কেন?”
“তুমি খাবে।”
মাইরা হা করে চেয়ে আছে। সে এই লোককে নিতে আসলো। উল্টে ইনিই তাকে ঘরে বসিয়ে রাখার পায়তারা করছে। মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“আমি এখানে খাবো না। আপনি নিচে চলুন।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“কেউ খায়নি। আপনার বাবা মা সবাই সবার ঘরে বসে আছে। আপনি তাদের ছেলে না? ছেলে হয়ে নিজেও ঘরে মুখ ফুলিয়ে বসে আছেন।”

ইরফান অবাক হয়ে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা ইরফানকে চুপ থাকতে দেখে বলে,
“আপনার আম্মু খায়নি বুঝলেন? আমার মনে হয় আপনার জন্যই। আর আপনার খালামণি, জাহারা..”
ইরফান ধমক দেয়, ‘সাট আপ।
ইরফানের ধমক খেয়ে মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। মুখ ফুলিয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে। মাইরাকে তার দিকে এমন মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইরফান অদ্ভুদচোখে তাকায়।
রিতা হাতে ভাতের প্লেট নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে ডাক দিলে ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“রেখে যাও।”
মাইরা রিতাকে ভেতরে আসার সুযোগ দিলোই না। তার আগেই ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে রিতার হাত থেকে প্লেট টা নিজের ডান হাতে নিয়ে রিতার হাত বা হাতে আঁকড়ে ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ইরফান পিছন থেকে রেগে ডাকে,
“স্টুপিট, স্টপ।”
মাইরা শুনলো না। এই ঘাড়ত্যাড়া লোককে সে নিজেই খেতে দিবে না। ভালো করে বলছিল তার বাবা মা কেউ খায় নি, তাকে ধমকে চুপ করিয়ে দিল। থাকুক বসে। অনাহারেই থাকুক।
ইরফান পিছু পিছু বেরিয়ে আসে। দ্রুতপায়ে হেঁটে পিছন থেকে ডান হাতে মাইরার পেট চেপে ধরে। মাইরার পা থেমে যায়।
ইরফান রিতাকে বলে,

“রিতা প্লেট নিয়ে নিচে যাও। আমরা আসছি।”
ইরফানের কথা অনুযায়ী রিতা মাইরার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে নেয়। মাইরাও ছেড়ে দেয় বিনাবাক্যে। ইরফান পেটের বা পাশে খামচে ধরেছে। মেয়েটা বলতেও পারছে না, সইতেও পারছে না। রিতা সামনে এগিয়ে গেলে ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“অবাধ্য হলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব।”
মাইরা তার দু’হাতে ইরফানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। থেমে থেমে বলে,
“ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান মাইরাকে তার দিকে ফিরিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়। মাইরা মাথা নিচু করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইরফান মাইরার পানে দৃষ্টি রেখে মৃদুস্বরে বলে,
“ইউ আর আ গুড গার্ল।”
মাইরা ঝট করে মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকায়। চোখে চোখ পড়লে মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। ওড়নার ফাঁক দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট বেরিয়ে আসা চুলগুলো ইরফান দু’হাত পিছন দিকে ঠেলে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

“বাট আই ডোন্ট লাইক ইউ।”
কথাটা শুনেই মাইরার রা’গ হয়। মাথা খানিক নিচু তার। এইটা শুনলে ইচ্ছে করে এই লোকের সব চুল ছিঁড়ে ফেলতে। ইরফানের হাত এখনো তার ওড়নার ফাঁকের ভেতর মাথায়। মাইরা তার দু’হাত তুলে ইরফানের দু’হাতে শক্তি খাঁটিয়ে খামচি দেয়, ইরফান তব্দা খেয়ে যায়, বেচারা এরকম কিছু আশা করেনি। দ্রুত তার দু’হাত সরিয়ে নেয় মাইরার মাথা থেকে।
মাইরাকে আর পায় কে। ইরফানের দিকে তাকালো না আর। ছাড়া পেয়ে এক দৌড় দেয়। বিড়বিড় করে, ‘খ’বিশ লোক।’
ইরফান গম্ভীর মুখে তার দু’হাতের দিকে তাকালো। নখ বসিয়ে চামড়া উঠিয়ে দিয়েছে। ইরফান মাথা তুলে মাইরার দিকে তাকায়। বিড়বিড় করে, “স্টুপিট বাঁদর।”
বড় বড় পা ফেলে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে মাইরাকে টেনে ধরে। মাইরা চেঁচিয়ে উঠতে চায়। ইরফান ডান হাতে মাইরার মুখ চেপে ধরে। বা হাতে মাইরার কোমর চেপে খানিক উঁচু করে তার ঘরে নিয়ে যায়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। হায় আল্লাহ আজ সে শেষ। ইরফান তার ঘরে গিয়ে বাম পা দিয়ে দরজা শব্দ করে লাগায়। মাইরাকে নামিয়ে দেয়। মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিলে মাইরা ইরফানকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চায়, হাঁপানো কণ্ঠে বলে,
“উফ! ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান মাইরাকে তার সাথে চেপে ঠাণ্ডা গলায় প্রশ্ন করে, “রেগেছ কেন?”
মাইরা নড়াচড়া থামিয়ে দেয়। সে যে খামচি দিল তার খবর না নিয়ে তার রাগের খবর নিচ্ছে। মাইরা অবাক নয়নে তাকায় ইরফানের পানে। ইরফান শান্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। ইরফান বা হাতে মাইরাকে তার সাথে চেপে ডান হাত পিছনে নিয়ে মাইরার জামার চেইন একটানে খুলে দেয়। মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। কাঁপা কণ্ঠে বলে,

“কি করছেন?”
ইরফান মাইরার মুখপানে চেয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“বডি চেক।”
মাইরা ভীত কণ্ঠে বলে,
“ছাড়ুন আমায়। আর খামচি দিব না।”
ইরফান মাইরার ভীত মুখপানে দৃষ্টি ঘুরায়। মৃদুস্বরে বলে, “ভয় পাচ্ছো কেন?”
মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। মিনমিন করে বলে,
“ছাড়ু…
কথাটা শেষ করতে পারেনি। ইরফান মাইরার জামার মাঝে হাত গলিয়ে দেয়। মাইরার শরীর অবশ হয়ে আসে। কাঁপা গলায় আবারও কিছু বলতে চায়, জড়িয়ে আসে কথা। মাথা নিচু করে শরীর ছেড়ে দেয়। ইরফান আগলে নেয় মাইরাকে। আড়ালে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে। মাইরার ঘাড়ের নিচে পিঠের উপরি অংশের ডান সাইডে দু’আঙুলের আলতো স্পর্শ দেয়। মাথা নিচু করে চোখ বুজে তার বুকে লেগে দাঁড়ানো মাইরার দিকে আড়চোখে চেয়ে মোহনীয় গলায় বলে,

“Here is a brown mole.(তিল)”
মাইরার পুরো শরীর শিরশির করে ওঠে। এই লোক জানলো কি করে তার এখানে তিল? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে মেয়েটার।
ইরফান আবারও একই সুরে বলে,
“I am waiting to eat this.”
মাইরার শরীর ঝিমিয়ে আসে। ইরফানের এসব কথায় মেয়েটার ছোট্ট শরীর ভেঙে আসে। দু’হাতে ঠেলে ইরফানকে সরাতে চায়। কাঁপা গলায় বলে,
“আমার খিদে পেয়েছে। ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান মাইরার দিকে তাকায়। মৃদুস্বরে বলে,
“I am also hungry, bir…”
থেমে যায় ইরফান। মাইরার অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার পানে।
জামার চেইন লাগিয়ে দেয়। মাইরাকে ছেড়ে দু’হাতের আঁজলায় মাইরার ছোট্ট মুখটা নিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,
“আর ইউ ওকে?”

মাইরা ঢোক গিলে। চোখ বুজে আছে সে। ইরফান মাইরার শুকিয়ে আসা মুখটার দিকে চেয়ে রইল কিছু সময়। কিছু একটা ভেবে মাইরাকে ছেড়ে দাঁড়ায়।
মাইরা পড়ে যেতে নিলে ইরফান দ্রুত মাইরাকে দু’হাতে আগলে নেয়। চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? তোমার কি শ্বাসকষ্ট হচ্ছে?”
মাইরা চোখ বুজেই মিনমিন করে বলে,
“আপনি কাছে আসলে আমার শ্বাসকষ্ট চাপ দেয়। দূরে সরুন।”
ইরফান তব্দা খেয়ে চেয়ে থাকে মাইরার দিকে। এই স্টুপিট আসলেই তাকে জ্বালানোর জন্যই এসেছে। কিছু একটা ভেবে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে। মৃদুস্বরে বলে,
“ইট’স ওকে। রিলাক্স।”
এরপর মাইরাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে মাইরাকে ছেড়ে দাঁড়ায়।
মাইরা ছাড়া পেয়েই লম্বা শ্বাস নেয়। ইরফানকে পাস করে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজা টেনে খুলতে চায় তবে পারে না। ইরফান উল্টো ঘুরে তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা ব্যর্থ হয়ে কতক্ষণ উল্টো ঘুরেই দাঁড়িয়ে রইল। তার ভেতর এখনো কাঁপছে। কথা বলবে কি করে? দরজাও খুলতে পারছে না। বারবার শুকনো ঢোক গিলছে। ইরফান নিজেই এগিয়ে এসে মাইরার পিঠ ঘেঁষে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে লক খুলে দেয়। দরজা খোলার জন্য এখান থেকে পিছু যেতে হবে। ইরফান তো সরে না। মাইরার দৃষ্টি এলোমেলো। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরাকে পরোখ করছে। মাইরা এক পর্যায়ে মিনমিন করে বলে,

“সরুন।”
ইরফান নিরেট কণ্ঠে বলে,
“স্টুপিট, এইসব কাঁপা-কাঁপি থামানোর মেডিসিন নিয়ে, কাঁপা-কাঁপি স্টপ না করলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরার কান্না পাচ্ছে। কি করল সে? ইরফান মাইরার কাঁধে পড়ে থাকা ওড়না টেনে মাথায় তুলে দেয়। মৃদুস্বরে বলে, “গো।”
কথাটা বলে মাইরার থেকে সরে দাঁড়ায়।
মাইরা সুযোগ পেয়ে দ্রুত দরজা টেনে খুলে এক দৌড় দেয়। ইরফান পিছন থেকে ধমকে বলে,
“পড়ে গেলে থা’প্প’ড় সব গালে পড়বে, স্টুপিট গার্ল।”
কথাটা বলে ইরফান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এরপর গটগট পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। সিঁড়ি বেয়ে মাইরাকে ধীরে ধীরে নামতে দেখল। ইরফান মাইরার পিছু পিছু নামতে থাকে।
রুমা নেওয়াজ তারেক নেওয়াজ আর শুদ্ধকে খাবার দিয়ে ঘরের দিকে যাচ্ছিল। মাইরার পিছু পিছু ইরফানকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখে অবাক হয়ে তাকায়। তারেক নেওয়াজ ও খানিট টা অবাক হয়। শুদ্ধ মিটিমিটি হাসছে। মনে মনে ভাবে,

‘এই মাইরা তো বহুত কাজের।’
মাইরা ডাইনিং-এ এসে সবাইকে দেখে কিছু বললো না। তার ঘরের দিকে যেতে নিলে ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“রাগিয়ো না আমায়।”
মাইরার পা থেমে যায়। ওরে আল্লাহ এই লোক তার পিছুপিছু চলে এসেছে?
তারেক নেওয়াজ মাইরাকে ডাকলেন,
“মাইরা আম্মু এসো। আরও খাবে কখন? অনেক বাজে তো।”
শ্বশুরের কথায় মাইরা আর তার ঘরের দিকে যেতে পারলো না। ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। সামনে বসা শুদ্ধ হেসে তার পাশের চেয়ার দেখিয়ে দিয়ে বলে,
“মাইরা এখানে এসে বসো।”
ইরফান চোখের পলকে শুদ্ধর পাশে এসে দাঁড়ায়। শুদ্ধ তার প্লেট এর দিকে তাকিয়ে হাসছে। হঠাৎ-ই তার পাতে এক গ্লাস পানি পড়তে দেখে শুদ্ধ হা হয়ে যায়। মাত্র ভাত মুখে নিতে চেয়েছিল, তার আগেই কেল্লা ফতে। শুদ্ধর মুখ অসহায় হয়ে যায়। যদিও আর দু’বার মুখে নিলেই শেষ হয়ে যেত। কি আর করার।
এদিকে ইরফানের কান্ডে রুমা নেওয়াজ, তারেক নেওয়াজ অবাক হয়। তবে কিছু বলে না। শুদ্ধ পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“বুক বেশি পুড়লে একটু ছ্যাঁক দিয়ে আয়। আমি তোর বউকে পাহারা দিচ্ছি। কোনো শেয়ালকে ঘেঁষতে দিব না যা, পাক্কা।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,

“তুই তো নিজেই শেয়াল।”
শুদ্ধ আসমান থেকে পড়ার ভান করে বলে,
“আসতাগফিরুল্লাহ! আমার মতো এক নারীতে আসক্ত ছেলেকে শেয়াল বলতে তোর বাঁধল না?”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“ইন ফিউচার, তুই মেয়ে হয়ে গেলেও ওর জন্য শেয়াল-ই থাকবি। এখন দূর হো এখান থেকে।”
শুদ্ধ এই জীবনে এতো শক খেয়েছে কি-না সেটাই ভাবছে। মাথায় হাত চলে গিয়েছে কখন বুঝলো না। তার মামা মামির দিকে তাকিয়ে মেকি হাসলো। তারা তো আর শুনতে পাচ্ছে না, তাদের ছেলে না মানা বউ এর জন্য আতেল হয়ে বসে আছে। নিজেকে সামলে গলা নামিয়ে বলে,
“বলছি, ফুল কি বসতে দিয়েছিল?”
“হোয়াট?”

“ফুল পাঠালাম যে ঘরে। মৌমাছি সে ফুলের মধুর টানে পিছু পিছু চলে এলো। বসতে দেয়নি তাই না?
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে গলা নামিয়ে বলে,
“ফালতু কথা স্টপ করে যা এখান থেকে। আমি আম্মুর জন্য এসেছি।”
শুদ্ধ হাত টেনে বলে,
“সে তুই মামির জন্য আয় নয়তো মামার জন্য আয়,, মধু না পাঠালে তো আর আসতি না। ভালো ভালো, চালিয়ে যা।”
বলে যেতে যেতে বলে,
“মাইরা আজ কিন্তুু দূর দূরান্ত থেকে আমাদের অনেক কাজিন আসবে। তুমি ভালোভাবে পরিপাটি হয়ে সাজবে কেমন?”
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ মিটিমিটি হাসছে। রুমা নেওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“মামি তোমার বউমাকে পারলে শাড়ি পরিয়ে রাখবে এই কয়দিন। দেখবে সবাই তোমার বউমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকবে।
ইরফানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
স্পেশালি আমাদের এতো এতো সিঙ্গেল ভাইগুলোর প্রশংসা তো মাইরার প্রাপ্য।”
ইরফান রেগে ডান হাতে শুদ্ধর কলার চেপে ধরে। রুমা নেওয়াজ, তারেক নেওয়াজ অবাক হয়ে দেখছে ইরফান আর শুদ্ধ কে। তারেক নেওয়াজ অবাক হয়ে বলেন,
“কি হয়েছে তোমাদের?”

বাবার কথায় ইরফান শুদ্ধর কলার ছেড়ে দেয়। বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। চোখ ঘুরিয়ে মাইরার দিকে তাকালো। মাইরা তার বাবার চেয়ারের পাশে মাথা নিচু করে বসে আছে। ইরফান এগিয়ে গিয়ে মাইরার পাশের চেয়ার টেনে বসল। দু’হাতের পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে শান্ত গলায় বলে,
“আম্মু খাবার দাও।”
রুমা নেওয়াজের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ইরফান মাইরাকে পর পর খাবার বেড়ে দেয়। তারেক নেওয়াজ এর খাওয়া শেষ। তিনি ইরফানের সাথে ইনায়ার বিয়ের ব্যাপারে টুকটাক কথা বলে ঘরে চলে যান।
রুমা নেওয়াজ খাবার বেড়ে নিয়ে রিতাকে সাথে নিয়ে তার বোনের রুমের দিকে যান। তারা তো এখানে আসছে না। কি আর করার।
মাইরা ইরফানের পাশে বসে উশখুশ করে। ঘরের কথা ভুলতেই পারছে না। তার মধ্যে এই লোক তার কলিজার মধ্যে উঠে আসতে চাইছে।
ইরফান খাওয়ার মাঝে গলা নামিয়ে বলে,
“এসব কাঁপা-কাঁপি, নড়া’নড়ি স্টপ করে খাবার ফিনিশ কর। নয়তো এক্ষুনি কোলে বসাবো। স্টুপিট।”
কথাটা বলে ইরফান বা হাতে মাইরারকে টেনে তার পাশ ঘেঁষে বসিয়ে দেয়। মাইরা মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে। শুদ্ধ সোফায় বসে ফোনে ব্যস্ত। মাইরা, ইরফানকে উপর থেকে দেখা গেলেও ইরফানের কর্মকাণ্ড দেখা গেল না। তবুও শুদ্ধ মাথা নিচু করেই মিটিমিটি হেসে বলে,
“থাক তোদের প্রাইভেসি দিচ্ছি।”
কথাটা বলে তার বরাদ্দকৃত ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।
এদিকে মাইরা শক্ত হয়ে বসে আছে। ল’জ্জায় মাথা কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। আর নিতেই পারছে না। কি পরিমাণ বে’হায়া লোক হলে এখানে বসে এমন করে। রেগে বলে,

“ছাড়ুন বলছি।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“নো।”
মাইরা রেগে এঁটো হাত দিয়ে ইরফানের পেটের কাছে খামচে ধরে। ইরফান খাবার মুখে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার হাতের দিকে। সাদা পাঞ্জাবি হলুদ হয়ে গিয়েছে মুহূর্তেই। ঘাড় বাঁকিয়ে শান্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা ল’জ্জা রেখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে রে’গে বলে,
“ছাড়বেন আপনি? আমি খেতে পারছি না অ’স’ভ্য লোক।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে ভাবলেশহীনভাবে গম্ভীর স্বরে বলে,
“ওকে ফাইন। কোলে নিচ্ছি, ওয়েট।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“ইইই নাআআ। খাচ্ছি তো!”
কথাটা বলে মাথা নিচু করে দ্রুত ভাত মাখানোয় ব্যস্ত হলো।
ইরফান ঠোঁট বাকিয়ে একটু হাসলো বোধয়। মাইরাকে ছেড়ে বা হাত টেবিলের উপর রেখে বিড়বিড় করে, “লিটল গার্ল।”

শুদ্ধ ইনায়াকে দেখে দাঁড়িয়ে বলে,
“ওদিকে কই যাস?”
ইনায়া শুদ্ধর কথায় উত্তর দেয়, “মাইরার সাথে খাবো বলে যাচ্ছি। কেন?”
শুদ্ধ ভারাক্রান্ত মুখ নিয়ে ইনায়ার দিকে চেয়ে বলে,
“তোকে দেখে সত্যিই আমার খুব মায়া হয় জানিস বোন। তোর একদিন পর বিয়ে, অথচ তুই ফাইজের এক্সদের কথা জানতেই পারলি না।”
ইনায়া চোখ বড় বড় করে তাকায়। অবাক হয়ে বলে,
“সত্যি উনার এক্স ছিল? তুমি মিথ্যা বলছো না তো?”
শুদ্ধর পেট ফেটে হাস পায়। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে মুখজুড়ে আগের চেয়েও দুঃখ ফুটিয়ে বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩২

“ঘরে গিয়ে ফোন চেক কর। প্রমাণসহ দিচ্ছি।”
ইনায়ার আর কিসের খাওয়া। একপ্রকার দৌড়ে তার ঘরে গেল। শুদ্ধ হাসতে হাসতে ফাইজের নাম্বারে টাইপ করে,
‘বিয়ের জন্য ভয়া’বহ কিউট গিফট আজকেই দিতে যাচ্ছি ব্রো। আমার গিফট রেডি কর।’

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৪