প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৪
Drm Shohag
“কি হয়েছে লিটল কুইন? কাঁদছো কেন?”
ইনায়া কানে ফোন নিয়ে কাঁদছে তো কাঁদছেই। ফোঁপাতে ফোঁপাতে কথাই বলতে পারে না মেয়েটা। ফাইজ বিচলিত হয়। কি হলো তার লিটল কুইনের? আবারও অসহায় কণ্ঠে বলে,
“লিটল কুইন অ্যা’ম স্যরি! বাট এটা তো অন্তত বলো আমি কি করেছি।”
ইনায়া কথা বলে না। ফাইজ আবারও বলে,
“লিটল কুইন? কি হয়েছে তোমার? প্লিজ বলো। আমি কোনো ভুল করেছি? তাহলে শুধরে নিব তো।”
ইনায়া সময় নিয়ে কোনোরকমে কান্না আটকে নাক টেনে বলে,
“অ’স’ভ্য, ফা’জিল, ন’ষ্ট লোক। আপনাকে আমি জীবনেও বিয়ে করব না।”
ফাইজ তব্দা খেয়ে যায়। সে কিছু বলার আগেই ইনায়া আবারও বলে,
“১০০ টা এক্স ছিল। তাদের নিয়ে ঘুরে এখন আমাকে বিয়ে করতে এসেছেন। আপনাকে আমি দেখে নিব ফা’জিল লোক।”
বলেই খট করে কল কেটে দেয়।
ওপাশে ফাইজের সব মাথার উপর দিয়ে গেল। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল কল কাটার শব্দে। তার এক্স ছিল? সেটা কে? সে তো নিজেই জানে না। বিয়ের একদিন আগে কোন বেয়া’দব তার বিয়ে ভা’ঙছে? আবার তার লিটল কুইনকে কাঁদাচ্ছে। ইনায়ার নাম্বারে আবারও কল দিলে ব্যস্ত দেখায়। বার বার কল দেয়, একই কেস। বুঝল, অলরেডি ব্লক লিস্টে চলে গিয়েছে তার নাম্বার।
উপায় না পেয়ে দ্রুত ইরফানের ফোনে কল দেয়।
ইরফান খাওয়ার মাঝে পকেট থেকে ফোন বের করলো না। একবার, দুইবার, তিনবারের বারও যখন কল কেটে যায় তখন মাইরা খেতে খেতে বলে,
“কল ধরছেন না কেন? যদি কারো অনেক প্রয়োজন হয়?”
ইরফান শেষবার খাবার মুখে নিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা ঢোক গিলে মেকি হেসে বলে,
“আপনার ভালোর জন্যই তো বলছি।”
ইরফান চোখ ঘুরিয়ে মাইরার প্লেটের দিকে তাকালো। এখনো অর্ধেক খাবার প্লেটেই পড়ে আছে। গম্ভীর গলায় বলে,
“এতো শখ কোলে ওঠার?”
মাইরা বোকাচোখে চেয়ে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“মানে?”
ইরফান মাইরার দিকে একটু ঝুঁকলে মাইরা চোখ বড় বড় করে বলে,
“নাআআআ। খাচ্ছি খাচ্ছি।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার মুখপানে। মৃদুস্বরে বলে, “ফাস্ট।”
মাইরা অসহায় মুখ করে খাওয়ার গতি বাড়ায়। ইরফান উঠে গিয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে। এগিয়ে এসে আবারও মাইরার পাশের চেয়ারে বসে ফাইজকে কল ব্যাক করে কল লাউডে দিয়ে ফোন স্ক্রোল করতে থাকে। ওপাশ থেকে ফাইজ রেগে বলে,
“এই শালা আমার কোন জন্মে এক্স ছিল?”
পাশ থেকে মাইরা খুকখুক করে কেশে ওঠে। ইরফান পানি খাওয়ার জন্য তার মুখের দিকে গ্লাস বাড়িয়েছিল, মাইরার কাশির শব্দে দ্রুত মাইরার সামনে গ্লাস রাখে। মাইরা সামনে গ্লাস দেখেই দ্রুত পানি খায়। ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“কি প্রবলেম?”
“আরে তোর বোন কেঁদেকেটে অবস্থা খা’রা’প করে দিয়েছে। আমার নাকি ১০০ টা এক্স ছিল। কোন জন্মে ছিল সেগুলো? এইসব কথা ওর কানে ঢুকিয়েছে কে?”
ইরফান একটু থেমে কিছু একটা ভেবে নির্দ্বিধায় বলে,
“শুদ্ধ।”
ওপাশে ফাইজ বোকা বনে যায়। তাই তো। তার এই জাত শত্রু থাকতে সে আবার চিরুনি অভিজান চালাচ্ছে কেন। এই বেয়া’দবকে সে ছাড়বে না। দ্রুত ইরফানের কল কেটে দেয়।
এদিকে মাইরা মার্বেলের ন্যায় চোখ বড় বড় করে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান মাইরার দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“আপনি কেমন ভাই, যার ১০০ টা এক্স ছিল তার সাথে নিজের বোনের বিয়ে ঠিক করেছেন।”
ইরফান ধমকে বলে,
“সাট আপ।”
মাইরা ধমক খেয়ে কেঁপে ওঠে। ইরফান নিজেকে শান্ত করে ফোনে দৃষ্টি রেখে শান্ত গলায় প্রশ্ন করে,
“এক্স থাকলে তাকে বিয়ে করা যায় না?”
মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। উত্তরে বলে,
“কখনোই না। এ্যাহ! সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস কোন আ’বা’ল চায়?”
ইরফান ঠাণ্ডা গলায় প্রশ্ন করে,
“তুমি কি চাও?”
মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। কথার পিঠে বলে ফেলে,
“আমার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে।”
ইরফান ফোনে দৃষ্টি রেখেই ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। মৃদুস্বরে বলে,
“তোমার হাসবেন্ড ফার্স্ট হ্যান্ড নাকি সেকেন্ড হ্যান্ড?”
মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইরফানের কথাটা বোঝার চেষ্টা করছে বোধয়।
ইরফান হাতের ফোন রেখে মাইরার দিকে ফিরে বলে,
“আপাতত যে কোলে বসতে চাইছ, এটা সিওর।”
মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে, “নাআআআ।”
ইরফান রেগে বলে,
“খাচ্ছ না কেন স্টুপিট। পাঁচ মিনিটে সব শেষ না করলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব।”
মাইরা মাথা নিচু করে মুখ ভেঙিয়ে গপগপ করে খেতে থাকে। খাওয়া শেষে ইরফানের দিকে তাকালে ইরফান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। গটগট পায়ে তার রুমের দিকে যায়। মাইরার মাথায় প্রশ্ন ঘুরছে। ইরফানের কি এক্স ছিল? ইরফানকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করল, কিন্তুু সাহসে কুলায় না মেয়েটার। আবার বিড়বিড় করে, ‘এমন খ’বিশ লোকের পাশে দু’মিনিট ও কোনো মেয়ে টিকতে পারবে না। এক্স তো দূরে থাক।’
“এই বেয়া’দব শালা তোর ল’জ্জা করে না ছোট বোনের পিছে লাগতে?”
শুদ্ধ টানটান হয়ে আয়েস করে বিছানায় শুয়ে আছে। হেসে বলল,
“ল’জ্জা তো নারীদের ভূষণ আমার সম্মন্ধি। আমি কেন এসব নিয়ে ঘুরব?”
ফাইজ দাঁত কিড়মিড় করল। একে হাতের কাছে পেলে এক্ষুনি খু’ন করত। আর স’হ্য করা যাচ্ছে না। রাগে চিৎকার করে বলে,
“আমার বউকে কাঁদালি কেন? তোকে ছাড়বো না বলে দিচ্ছি।”
শুদ্ধ পাত্তা না দিয়ে বলে,
“চাইলেও ছাড়তে পারবি না সোনা। আমি তোর হবু সম্মন্ধি যে!”
ফাইজ রেগে বলে,
“আমার বোনকে কি করে বিয়ে করিস সেটাই আমি দেখব। বেয়া’দব। এতোদিন আমার পিছে লেগে আমার ছোট বউটাকে কাঁদাচ্ছিস।”
শুদ্ধ মুখটা ইনোসেন্ট করে বলে,
“সত্যি কেঁদেছে ইনায়া?
ফাইজ ওপাশ থেকে চিৎকার করে বলে,
“না, হেসেছে।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“তাহলে তুই এতো প্যারা নিচ্ছিস কেন? হাসিমুখ দেখতে পারছিস না বলে? পিক তুলে দিব?”
“খবরদার আমার বউ এর আশেপাশে গিয়েছিস তো, তোকে কেটে কুচিকুচি করব আমি বেয়া’দব।”
শুদ্ধ মন খা’রা’পের ভান করে বলে,
“বুঝেছি বুঝেছি তোর বউ কেঁদেছে। আমার তো তোর বোনকে কাঁদানো দায়িত্ব। বউকে না। ও কাঁদলো কেন রে? আমি শুধু তোর কলিগদের সাথে থাকা পিকগুলো দিয়েছি। বিশ্বাস কর, যারা তোর কোলে উঠতে চাইছিল শুধু তাদের টাই দিয়েছি। দূরত্ব আছে যাদের মাঝে ওদের টা দিইনি। আসলে তুই বস হিসেবে কলিগদের সাথে কত অমায়িক সেটাই বোঝাতে চেয়েছি আর কি! ভালো করিনি ব্রো?”
ফাইজ হ’তা’শার নিঃশ্বাস ফেলল। এর মতো বেয়া’দব কে বন্ধু হিসেবে বয়ে বেড়াতেই জান যায় অবস্থা। আবার তার বোনকে বিয়ে করে আরেকটা সম্পর্ক বাড়াবে। এর অত্যা’চার স’হ্য করবে কি করে? শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলল,
“ইরফানের জন্য সিনিয়র মেয়ে দেখছি, তোর জন্য দেখব নাকি?”
ফাইজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আমাদের কারো জন্য দেখতে হবে না। তুই বরং তোর জন্যই দেখ। কারণ আমি আজকেই ফারাহের বিয়ে ঠিক করতে যাচ্ছি। আমার বিয়ের পরদিন ওর বিয়ে হবে। তোর মতো বেয়া’দবকে আমার সম্মন্ধি বানানোর কোনো ইচ্ছে নাই।”
বলেই খট করে কল কেটে দিল। শুদ্ধ বোকা বনে চেঁচিয়ে উঠল,
“এ্যাই আমার বউ!”
ততক্ষণে কল কেটে গিয়েছে। কি জ্বালা! সে একটু নাহয় মজা করেছে। তাই বলে তার বউকে তার থেকে কেড়ে নিবে? কত্ত বড় সাহস!
ও মজা করেছে নাকি? না না কোনো রিস্ক নেয়া যাবে না। যদি সত্যি সত্যি তার না হওয়া বউটাকে অন্যের সামনে বসায়। এমনিতেই তার বউ তার থেকে দূরে সরার সুতো খুঁজে বেড়ায়। না না লেট করা যাবে না। এক্ষুনি যেতে হবে। ভাবনা নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরোলে গায়ে এসে শক্ত কিছুর আঘাত লাগে। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে ডান পাশ ফিরে তাকায়। ইনায়াকে রে’গে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুদ্ধ ভড়কে যায়। ভাবনার মাঝেই ইনায়া তার হাত থেকে আরেকটি জুতো শুদ্ধর দিকে ছুড়ে মারলে শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে দ্রুত বসে পড়ে। হায় আল্লাহ! সবাই তার পিছে লাগছে কেন? ইনায়া রে’গে বলে,
“তোমাকে আমি ছাড়বো না শুদ্ধ ভাই।”
বলতে বলতে আরেকটি জুতো হাতে তুলে নিয়েছে। শুদ্ধ কোনোদিকে না তাকিয়ে এক দৌড়ে দরজার দিকে যায়। পিছন থেকে একটার পর একটা জুতো আসছে। শুদ্ধ চিল্লিয়ে বলে,
“ছিঃ ছিঃ ছিঃ! বড় ভাইকে এসব কি দিয়ে আপ্যায়ণ করছিস?”
ইনায়া রে’গে বলে,
“তোমাকে এর চেয়েও জ’ঘ’ণ্যভাবে আপ্যায়ণ করা উচিৎ, আমার বিয়ে ভাঙতে চাও কেন তুমি?”
শুদ্ধ পিছু ফিরে একবার তাকালে দেখল ইনায়া আবারও জুতো ছুঁড়ে মারছে। শুদ্ধ লাফ দিয়ে দু’পা ডান দিকে যায়।
মাইরা খেয়ে উঠে তার ঘরে যেতে চেয়েছিল তার আগেই এই জুতো ছোড়াছুড়ির পাল্লায় বেচারি তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে।
শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে মাইরাকে বলে,
“মাইরা তোমার ননদিনী কে বোঝাও তো, আমি তার বড় ভাই। আমাকে উঠতে বসতে সালাম দেয়া উচিৎ ওর।”
ইনায়া রে’গে বলে,
“কোনোদিন দিব না সালাম। দরকার পড়লে রাস্তার কু’কু’রকে সালাম দিব, তাও তোমাকে না।”
মাইরা একবার ইনায়াকে দেখছে আরেকবার শুদ্ধকে দেখছে।
শুদ্ধ কোনোরকমে দরজা খুলে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে,
“কি রে আমার জুতো কই?”
ইনায়া দু’হাতে দু’টো জুতো ছুঁড়ে মারে শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ চিংড়ি মাছের মতো লাফ দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। একটুর জন্য লাগলো না। শেষমষ বোনের হাতে জুতোর বারি! দ্রুত জুতো দু’টো পরে নিয়ে বাইরে বের হয়।
একটু পর শুদ্ধ বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে বলে,
“বেয়া’দব বোন। তোর খবর আমি বাংলােশের সব নিউজে করব। উপরে বড় বড় করে লিখে দিব, ‘বেয়া’দব আলী’ যে তার বড় ভাইকে ন্যূনতম সম্মান করে না। শা’লী পা’পি’ষ্ঠ।”
ইনায়া রেগে বলে,
“তোমাকে সম্মান করলেই আমি পা’পি’ষ্ঠ হয়ে যাব। তখন ভালো মানুষেরা কাঁদতে শুরু করবে পা’পি’ষ্ঠ কে সম্মান করার শোকে।”
শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে। কত বড় বেয়া’দব বোন। তাকে অপমান করছে। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“ফাইজের ভেতর কিন্তুু তোর ভাইয়ের মতো থা’প্প’ড় এর মেশিন সেট করব। আমার পিছে লাগিস?”
ইনায়া চেঁচিয়ে বলে,
“আর আমি তোমার বউ এর ভেতর ঝাল এর ড্রাম সেট করব, যেন তুমি তাকে টাচ করলেই ঝালের শক লাগে।”
শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানায়। তার না হওয়া বউ তো এমনিই কারেন্ট মরিচ। আরও হলে তাকে মঙ্গলগ্রহ যাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। ভাবনার মাঝেই আরেকটি জুতো শুদ্ধর মুখের দিকে আসলে বেচারা শুদ্ধ ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
ইনায়া কেঁদেকেটে অনেকগুলো জুতো নিয়ে এসেছিল শুদ্ধকে মারতে। কত্তবড় সাহস তাকে কাঁদায়? তার পার্সোনাল ব্যাড বয়কে নিয়ে উল্টাপাল্টা বলে। মাইরা ইনায়ার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“কি হয়েছে আপু?”
রুমা নেওয়াজ বোনের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
“কি হয়েছে এমন চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?”
বলতে বলতে দেখল ইনায়ার পাশে কয়েকটা জুতো। আবার দূরে কোথাও কোথাও ছড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে জুতোর র্যাক থেকে সব জুতো বের করেছে। রুমা নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কি হয়েছে? তুই জুতো নিয়ে কি করছিস?”
ইনায়া নিজেকে সামলে তার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,
“কু’কু’র এসেছিল, তাকে তাড়িয়ে দিয়েছি।’
রুমা নেওয়াজ অবাক হলেন। তাদের বাসায় কু’কু’র কোন দিক দিয়ে আসবে। এই জীবনে তো আসেনি। আজ হঠাৎ কোন দিক দিয়ে আসলো?
মাইরা ইনায়ার পিছু পিছু যায়। সে কিছুই বুঝলো না, হয়েছে কি ইনায়া আপুর।
মাইরা ইনায়ার ঘরে গিয়ে ইনায়াকে জিজ্ঞেস করে,
“আপু কি হয়েছে তোমার? তোমার হবু বরের নাকি ১০০ টা এক্স?”
ইনায়া রে’গে বলে,
“মাইরা?”
মাইরা ঝাঁকি দিয়ে উঠে বুকে থুতু দেয়। এরা দুইভাইবোন একই মনে হচ্ছে। রেগে গেলে কি করে নিজেই জানে না। ইনায়া নিজেকে সামলে নাক টেনে শান্ত গলায় বলে,
“শুদ্ধ ভাই মিথ্যে বলেছিল আমাকে। ভাইয়া এসে আমাকে বলেছে। শুদ্ধ ভাইয়ের জন্য আমি তাকে ভুল বুঝে ব্লক করে দিয়েছি সবখান থেকে।”
মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। নাহ, দুই ভাইবোন এক নয়। ইনায়া ইরফানের রাগের এক কাঠিতেও নয়। অতঃপর বলল,
“তাহলে এখন ব্লক খুলে দাও। তাই বলে শুদ্ধ ভাইয়াকে জুতো মারলে শেষমেশ?”
বলতে বলতে হেসে ফেলল মাইরা। ইনায়া দু’হাতে চোখ মুছে বলে,
“ঠিক করেছি।”
ইনায়া তার ফোন এনে মাইরাকে সেই পিকগুলো দেখালো যেগুলো শুদ্ধ তাকে দিয়েছিল। প্রতিটি পিকে কোনো না কোনো মেয়ে ফাইজের একদম গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“এভাবে কেন দাঁড়িয়েছে?”
ইনায়া নাক টেনে বলে,
“কলিগ হয়তো। এজন্য বেশি ফ্রি। বাট আমি ছুটাবো এই মেয়েদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি, দাঁড়াও। ব্লক খুলবো না। মরে যাক এই লোক ওপাশে।”
ইনায়ার কথায় মাইরা হেসে ফেলে। ইনায়ার কাঁধে ডান হাত দিয়ে বলে,
“তোমার তো অনেক বুদ্ধি আপু।”
ইনায়া মুখ ফুলিয়ে রাখলো। তার ভালো লাগছে না। এরা যে ফাইজের এক্স এটা তো বিশ্বাস হচ্ছিলো না। যদিও মানুষটাকে সেভাবে জানে না ইনায়া। মনে মনে একটু একটু পছন্দ করে। এক্স থাকতেই পারে, সে তো আর মন পড়তে পারে না। কিন্তুু ইরফান এসে শুদ্ধ ভাইয়ের বাঁদরামির কথা বললে ইনায়া বুঝতে পারে। তবে ইনায়া ভীষণ রে’গে আছে। এসব কি ধরনের ঘেঁষাঘেঁষি। সে জীবনেও মানবে না। সে যদি ওই ব’জ্জা’ত লোককে শায়েস্তা না করেছে তবে তার নামও ইনায়া নয়।
মাইরার হঠাৎ ইরফানের কথা মাথায় আসে। ইরফানও কি এভাবে দাঁড়ায় মেয়েদের সাথে? ভাবতেই কেমন যেন লাগলো। আনমনে প্রশ্ন করে,
“আপু তোমার ভাইয়ার ভার্সিটিতে কি ম্যাডাম আছে?”
ইনায়া মৃদু হেসে বলে,
“হ্যাঁ থাকবে না কেন? স্যার ম্যাডাম ছাড়া ভার্সিটি চলবে কি করে?”
মাইরা বোকা বনে যায়। কথা তো সত্য। নিজেই নিজের মাথায় চাটি বসায় নিজের বোকা বোকা প্রশ্নে। আরেকটি প্রশ্ন উঁকি দেয় মনে। ভার্সিটির মেয়েরা তো তার চেয়ে বড়। ইরফান তাদের পড়ায়। ভাবতেই মাইরার কেমন যেন প্রচণ্ড বিরক্ত লাগলো। মেয়েটার কাছে টিচারের পেশা একদমই ভালো লাগলো না।
ইনায়া চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“কেন জিজ্ঞেস করলে মাইরা?”
ইনায়ার কথায় মাইরা থতমত খেয়ে মেকি হেসে বলে,
“এমনিই।”
কথাটা বলে আবারও আনমনা হয়। ছোট মাথায় কতশত চিন্তা জমা হলো।
দুপুর গড়িয়ে ধরনীর বুকে সন্ধ্যা নেমেছে। মাইরা নামাজ পড়ে তার ঘর থেকে বের হলে রুমা নেওয়াজ কে দেখে মৃদু হেসে বলে,
“কিছু বলবেন মা?”
রুমা নেওয়াজ চুপ করে তাকিয়ে রইল মাইরার দিকে। মেয়েটাকে সে একটু আধটু কটু কথা শুনিয়েছিল। তবে মাইরা তার সাথে হেসে হেসেই কথা বলে, যেন কিছুই হয়নি। রুমা নেওয়াজ গলা ঝেড়ে হাতের শাড়ি এগিয়ে দিল। মাইরা পিটপিট করে তাকায় শাড়ির পানে। লাল টুকটুকে একটি শাড়ি। রুমা নেওয়াজ মৃদুস্বরে বলেন,
“এটা পরে থাকবে। বাড়িতে অনেক মেহমান আসবে। তোমাকে দেখতে চাইবে। শাড়িটা পরে নিজেকে পরিপাটি করে নাও।”
মাইরা বিনা বাক্যে শ্বাশুড়ির থেকে শাড়ি নিল।
“পরতে পারবে?”
মাইরা হেসে বলে,
“চেষ্টা করে দেখি। আমি এর আগে আপনাকে আর আম্মাজানকে পরিয়ে দিতে দেখেছি।”
রুমা নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আম্মাজান কে?”
“শুদ্ধ ভাইয়ার মা।”
রুমা নেওয়াজ কেমন করে যেন তাকালো মাইরার দিকে। আম্মাজান? তবে কিছু বললো না। নিঃশব্দে তার ঘরের দিকে গেলে মাইরা মৃদু হেসে তাকিয়ে রইল রুমা নেওয়াজ এর দিকে। শুনেছিল শ্বাশুড়ি রা নাকি আরেকটা মা হয়। তার তো একটা মা-ই নেই। আরেকটা মা ও সেভাবে ভাবে না তার কথা। হঠাৎ-ই ফিক করে হেসে দিল। মাঝে মাঝে কিছু অদ্ভুদ ব্যাপারে ক’ষ্ট পাওয়া দেখে নিজেরই হাসি পায়। ভাবনা রেখে খুশি মনে তার ঘরে গেল শাড়িটা নিয়ে।
অনেক কসরত করে মাইরা লাল শাড়িটা গায়ে জড়িয়েছে। অনেক ভালো না হলেও মোটামুটি ভালো হয়েছে। খা’রা’প লাগছে না। নিজে নিজে পরতে পেরে ভীষণ খুশি মাইরা। অনেক সময় নিয়ে শাড়ি গায়ে জড়িয়েছে মেয়েটা।
ইনায়ার বিয়ে উপলক্ষে ইরফানের সব কাজিনসহ তাদের বাবা মা এসেছে।
সাহেল ইরফানের বড় ফুপির ছেলে, শিহাব ইরফানের ছোট ফুপির ছেলে, মিশকা, তামান্না ইরফানের মামাতো বোন।
রাতুল, রিয়া ইরফানের চাচাতো ভাইবোন। এরা সবাই মিলে তার মা বাবাকে নিয়ে এসেছে।
মাইরা অসহায় চোখে চেয়ে আছে, কারণ তার গলায় গুণে গুণে চারটে চেইন পরিয়ে দিয়েছে ইরফানের মামি, দু’জন বড় ফুপি, একজন কাকি সবাই এক এক করে মাইরাকে চেইন পরিয়ে দিয়েছে। মাইরা সবার মাঝে মধ্যমণি হয়ে বসে আছে। মেয়েটার কেন যেন ভীষণ অদ্ভুদ লাগছে।
ইরফানের বড় ফুপি মাইরার থুতনিতে হাত বুলিয়ে, সে হাত তার ঠোঁটে ছুঁইয়ে বলে,
“এমন এক পরী-ই তো খুঁজছি আমার সাহেল এর জন্য।”
মাইরা ল’জ্জা পায়। শুদ্ধ জুতোর বারি খেয়ে গিয়েছিল ফাইজের বাড়ি। আবারও এসেছে। তার খালা মামি মামারা এসেছে, কাজিন এসেছে,, দেখা তো করতে হবে। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তার খালার কথাটা শুনে নেয়। এগিয়ে এসে বলে,
“খালামণি তোমার সাথে আমার ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।”
শুদ্ধর কথায় সবার মনোযোগ শুদ্ধর দিকে যায়। মাইরাকে নিয়ে ইরফানের মামিরা বসেছে মূলত মাইরার ঘরে। শুদ্ধ উঁকি দিয়ে ভেতরে ফাঁকফোকর দিয়ে এসেছে। ইরফানের ফুপি শুদ্ধ কে দেখে বলে,
“আমার বাবা এতোক্ষণ পর কই থেকে আসলি?”
শুদ্ধ হেসে তার খালাকে এক হাতে জড়িয়ে নেয়। ফিসফিস করে বলে,
“শোনো, সাহেল এর জন্য মাইরাকে নিতে পারো। ইরফান তো মানে না মাইরাকে। বুঝলা?”
শুদ্ধর কথা সবাই না শুনলেও তার বড় খালা আর মাইরা শুনতে পেয়েছে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধর বড় খালা শুদ্ধর কান টেনে বলে,
“আসতে না আসতেই বাঁদরামি শুরু করেছিস?”
এরই মধ্যে সাহেল ঘরে প্রবেশ করে। এগিয়ে এসে শুদ্ধর পাশে দাঁড়িয়ে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা ক্রিম কালারের এর একটি হিজাব মাথার উপর দিয়েছে। এতো মানুষের জন্যই মূলত নিজেকে একটু আধটু ঢাকার প্রয়াশ। সাহেল গলা ঝেড়ে মাইরার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আম্মু আমাকে একটা রুম দিতে বলো। ভীষণ টায়ার্ড আমি।”
শুদ্ধ সাহেল কে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“তোর পাত্রী দেখছি আমরা। আর তুই আছিস রুম নিয়ে। আরে এবার বিয়ে টা করে নে।”
সাহেল ভ্রু কুঁচকে বলে,
“মেয়ে কোথায়?”
শুদ্ধ মেকি হেসে বলে,
“আরে ব’লদ। ইরফান তো ওর বউকে মানে না। তাই তুই ওকে বিয়ে করবি। রাজি?”
সাহেল বিরক্ত চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। রে’গে বলে,
“এসেই আমার হাতে থা’প্প’ড় খেতে না চাইলে বাজে বকা অফ কর। এমনিতেই অন্যকেউ ভেবে ওর জন্য দিলে ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। পরে দেখি ইরফানের বউ। দিল তো ভেঙেচুরে শেষ। তুই আবার লবণ ছিটিয়ে দিতে আসছিস!”
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
“আরে তোর দিল জোড়া লাগাতে এসেছি। এই ঘরে মাইরা থাকে। ইরফান ইরফানের ঘরে। এইবার বোঝ তবে কেস টা কি! বুঝলি কিছু? তাই বলছি তুই মাইরাকে পটাতে নেমে পর। যে কয়দিন আছিস, পটিয়ে নে।”
সাহেল মাথা চুলকে বলে,
“এসব কিভাবে করে? আমার দ্বারা তো হয় না।”
শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলে,
“ইরফানের পা’ছার সাথে পা’ছা ঘ’ষা দিয়ে এসে আমার কাছে টিপস চাইছিস, যা ভাগ। নিরামিষের দল কোনহানকার।”
সাহেল রেগে বলে,
“মুখের ভা’ষা ঠিক কর শা’লা।”
“খবরদার আমার কোনো পাতানো বোনের দিকে নজর দিয়েছিস তো!”
সাহেল মাইরার দিকে তাকালো। মাইরা শুদ্ধ আর সাহেল এর দিকেই তাকিয়েছিল। এরা কি ফুসুরফাসুর করছে সেটাই বোঝার জন্য। কিন্তুু সাহেল এর সাথে চোখে চোখ পরায় বেচারি থতমত খেয়ে দ্রুত মাথা নিচু করে নিয়েছে। ইশ! তাকে কি ভাবলো!
সাহেল মৃদু হাসলো। এই মেয়ে তো আস্ত এক পুতুল। একে নাকি ইরফান মানে না। বিয়ের পর পরই শুনেছিল, ইরফান এক বাচ্চাকে বিয়ে করেছে, আর ইরফান তাকে মানে না। তারা সবাই এটা জানে। কিন্তুু তার মায়েরা সবসময় বলে কখনো না কখনো তো মেনে নিবে। কবে মানবে, তার আগে সে পটিয়ে নিলে মন্দ হয় না, ভেবেই আরেকটু হাসি দীর্ঘ হয়।
কিছুক্ষণ পর মিশকা, তামান্না, রিয়া মাইরার ঘরে আসে। পিছু পিছু রাতুল, শিহাবও আসে। রাতুল মাইরার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,
“হাই নতুন ভাবি!”
মাইরা বিব্রতবোধ করে। সাহেল রাতুলকে টেনে বলে,
“একশ হাত দূরে থাকবি।”
রাতুল চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“তোর কোথায় জ্বলছে? ধরতে চাইলাম ইরফানের বউ এর হাত। জ্বলছে তোর! কি ভয়া’বহ রোগ!”
শুদ্ধ রাতুল গায়ে চাপড় মেরে বলে,
“কারেক্ট। তুই পয়েন্ট ধরতে পেরেছিস তাই না?”
সাহেল রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। বেয়া’দব একটা। মাইরার পাশে বসা রিয়া বলে ওঠে,
“তোমরা এই ঘর ফাঁকা কর তো ভাই।”
কেউ কিছু বলার আগেই ইরফান দরজায় দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“কি হচ্ছে এখানে?”
ইরফানের কথায় সবাই দরজার দিকে তাকালো। মাইরাও মাথা তুলে তাকায়। ইরফান শক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা ঢোক গিলল। সে আবার কি করল? ইরফান ঘরের ভেতর প্রবেশ করলে সব ছেলেরা একসাথে বলে ওঠে,
“ইরফান তোর খবর কি?
মেয়েরা বলে ওঠে,
“কেমন আছো ইরফান ভাই?”
ইরফান মাইরার দিকে চেয়েই উত্তর করে,
“ভালো। ঘর থেকে বের হও সবাই।”
ইরফানের কথায় সবাই একটু অবাক হয়। ইনায়া দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে বলে,
“ভাইয়া সরে দাঁড়াও। ভেতরে যাব।”
ইরফান সরলো না। বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
“এই ঘর এক সেকেন্ড এর মাঝে ফাঁকা চাই।”
শুদ্ধ মিটিমিটি হাসছে। আর কেউ না বুঝলেও সে তো বুঝেছে। ইরফানের কথা কেউ অমান্য করল না। মন খা’রা’প করে সবাই বেরিয়ে গেল। সাহেল ভ্রু কোঁচকালো। শুদ্ধ যে বলল এটা মাইরার ঘর। তাহলে ইরফান কি করবে? ইরফানের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“এটা তো মাইরার ঘর। তুই এখানে কি করবি?”
ইরফানের স’হ্য হলো না সাহেল এর নাম ধরে ডাকা। শক্ত চোখে সাহেলের দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“সেই কৈফিয়ত….”
শুদ্ধ সাহেলকে টেনে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। এই দু’টোর দ্বন্দ্ব লাগলে ছাড়ানো যায় না। দু’টোই সমান সমান বলা যায়। সাহেল ৪০% ত্যাড়া, ইরফান ৬০% এই আরকি।
সাহেল শুদ্ধ কে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“কি প্রবলেম? এভাবে টেনে আনলি কেন?”
শুদ্ধ মেকি হেসে বলল,
“চল তোকে আমি বাঘ-মামার গল্প শোনাই। এক জঙ্গলে ছিল এক বাঘ মামা। আর ছিল এক সিংহ। তারপর….”
সাহেল বিরক্ত হয়ে বলে,
“তোকে আমার পাঁচ বছরের বাচ্চা মনে হচ্ছে?”
শুদ্ধ হেসে সাহেলের থুতনি ধরে বলে,
“তোকে আমার সন্টু ইন্টু মিন্টু মনে হচ্ছে। এই নামগুলো শুনলেই মনে হয়, ছোট বাচ্চারা ভাত খাবেনা বলে বায়না করছে, আর তাদের মা তাদের জোর করে খাওয়াচ্ছে।”
সাহেল বিরক্ত হয়ে বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে যায়। শুদ্ধ হাসলো।
ইনায়া মন খা’রা’প করে বলে,
“ভাইয়া একটা দিনই তো। একদিন আমরা সবাই মিলে একসাথে থাকি?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“নিজেদের ঘরে যা।”
ইনায়া খুশি হয়ে হাত নেড়ে বলে,
“মাইরা আসো, দ্রুত।”
মাইরা বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। এগোতে নিলে ইরফান মাইরার হাত টেনে ধরে। শক্ত গলায় বলে,
“তোমাকে যেতে বলেছি আমি?”
মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে তাকায়। ওপাশ থেকে ইনায়া অবাক হয় ভাইয়ের ব্যবহারে। ইরফান ইনায়ার দিকে চেয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বলে,
“যাবি এখান থেকে?”
হঠাৎ-ই শুদ্ধ কোথা থেকে এসে ইরফানের সামনে তার ফোনের স্ক্রিন ধরে। ইরফান বিরক্তি মুখে চোখ সরাতে গিয়েও সরায় না। শুদ্ধ মিটিমিটি হাসছে। ইরফান রা’গে শুদ্ধর ফোন চোখের পলকে নিয়ে আঁছাড় মারলো। শুদ্ধ চেঁচিয়ে বলে,
“মাআআআআআ! আমার প্রথম বউ!”
ইনায়া এক দৌড় দেয়। তার ভাই কোনো কারণে রে’গে আছে বুঝেছে। এদিকে মাইরা বারবার ঢোক গিলছে। শুদ্ধ অসহায় চোখে তার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকেই একটা ফোন কিনতে হবে! ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান মাইরার দিকে শক্ত চোখে চেয়ে আছে। শুদ্ধ কিছু একটা ভেবে বলে,
“ইরফান ওর কোনো দোষ নেই। ওকে….”
আর কিছু বলার আগেই ইরফান শুদ্ধর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়। শুদ্ধর অসহায় লাগলো। সাহেল মাইরার পাশে বসেছিল একবার। ওইরকম ইনটেনশনে না। টাচও করেনি। সে বসে মাইরার দিকে চেয়েছিল মুগ্ধ নয়নে। শুদ্ধ তো এতো বড় সুযোগ হাত ছাড়া করার বান্দা নয়। কিন্তুু এর জন্য মাইরাকে আবার যদি এই ভরা মানুষের মাঝে মারে! কি কেলেঙ্কারি টাই না হবে, ভেবেই শুদ্ধ নিজের করা কাজে কেন যেন অনুতপ্ত হলো। ভাবনা রেখে ফোনটা কুড়িয়ে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে এগিয়ে গেল।
“শাড়ি পরেছ কেন?”
ইরফানের শক্ত কণ্ঠে মাইরা কেঁপে ওঠে। আমতা আমতা করে বলে,
“মা পরতে বলেছিল।”
ইরফান রেগে ধমকে বলে,
“পরতে বললেই পরবে? সেন্স নেই? খোলো এসব। এক্ষুনি খোলো।”
বলতে বলতে নিজেই মাইরার মাথার হিজাব ছুঁড়ে ফেলে। বাম কাঁধে থাকা শাড়ির আঁচল টান মেরে খুলে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। লজ্জায় দ্রুত উল্টো ঘুরে দাঁড়ায়। ইরফান রেগে মাইরাকে টেনে তার দিকে ফেরায়। মাইরা আঁচল টা তোলার সময় পায়নি। ল’জ্জায় মেয়েটা কেঁদে দিয়েছে। ইরফান কেমন করে যেন মাইরার পুরো শরীরে চোখ বুলায়। হঠাৎ-ই কেমন অস্বাভাবিক লাগলো নিজেকে। বারবার ঢোক গিলল।
ইরফানের দৃষ্টিতে মাইরার শরীর নেতিয়ে আসে।
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৩
ইরফান মাথা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে শাড়ির আঁচল ধরে ঘুরাতে নিলে মাইরা দ্রুত এগিয়ে এসে ইরফানের সাথে সিটিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়। দু’হাতে মুখ ঢেকে ইরফানের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে যায়।
ইরফান সাথে সাথে মাইরাকে ধাক্কা দিতে নিলে মাইরা ফুঁপিয়ে বলে,
“প্লিজ এমন করবেন না। আমি খুলছি শাড়ি। আমি পড়ব না আর শাড়ি। স্যরি!”