প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৫
Drm Shohag
ইরফান ঢোক গিলল। লম্বা শ্বাস টেনে মাইরার কাঁধে হাত রেখে মাইরাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দাঁড় করায়। মাইরা আবারও ইরফানের দিকে সিটিয়ে আসে। ইরফান বাঁধা দিল না। সে ঠোঁট বাঁকায়। দু’হাতে মাইরার গাল ধরে উপর দিকে করে। মাইরা চোখ বুজে। চোখের পানিতে গাল ভিজে একাকার। ইরফান ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“কাঁদছো কেন?”
মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। তার সামনে ইরফানকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঢোক গিলে মেয়েটা। ইরফান তার খসখসে ডান হাত দ্বারা মাইরার মুখ মুছে দেয়। মৃদুস্বরে বলে,
“আর কখনো শাড়ি পরবে না।”
মাইরা চোখের পাতা ফেলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইরফান মাইরাকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। মাইরা উল্টো ঘুরে পড়ে যাওয়া আঁচল কাঁধে টেনে তোলে। ইরফান মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়ানো মাইরার সামনে দাঁড়ায় ইরফান। মাইরা দ্রুত দু’পা পিছিয়ে যেতে চায়, ইরফান মাইরাকে টেনে ধরে। মাইরা শুকনো মুখে ইরফানের দিকে তাকায়,, ইরফান মাইরার মুখ বরাবর তার মুখ নিয়ে মোহনীয় গলায় বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ইউ নো, শাড়ি পরে তোমায় কতটা জ’ঘ’ণ্য লাগে? আর কখনো পরবে না,, আন্ডারস্ট্যান্ড?”
মাইরা চোখ নামিয়ে নিয়েছে। ইরফানের কথায় রাগ হওয়ার কথা। কিন্তুু তার রাগ হলো না। বরং ইরফানের ভয়েস টোনে তার শরীরে অদ্ভুত শিরশিরানি অনুভূতি হয়।
ইরফান মাইরার গলার নিচে তিলটায় ডান হাতের বুড়ো আঙুল ছুঁইয়ে দৃষ্টি সেথায় নিবদ্ধ রেখে গলা নামিয়ে বলে,
“ইউ আর আ ভেরি লিটল গার্ল। লিটল গার্ল দের জন্য শাড়ি নয়।”
মাইরা ঢোক গিলে ইরফানকে ঠেলে তার থেকে সরাতে চায়। ইরফানের বোধয় পছন্দ হলো না মাইরার এমন ব্যবহার। বা হাতের গতি বৃদ্ধি করে শক্ত হাতে মাইরাকে নিজের সাথে চেপে ধরে। মাইরা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান তাকায় মাইরার পানে। গম্ভীর গলায় বলে,
“আম্মুর অজুহাতে আর কখনো শাড়ি পরবে না, ওকে?”
মাইরার মন খা’রা’প হয়। শাড়ি মেয়েদের সৌন্দর্য। শুনেছে স্বামীরা নাকি মেয়েদের শাড়ি পরে দেখতে খুব পছন্দ করে। আর ইরফান তাকে শাড়ি পরতেই দেয় না। পরলেও বলে জ’ঘ’ণ্য লাগছে। ইরফান অনবরত মাইরার গলার নিচে স্লাইড করে, মাইরা মিনমিন করে বলে, “হাত সরান।”
ইরফান মাইরার নত মুখপানে তাকায়। ইরফানের চোখদুটো কেমন যেন লাল হয়ে গিয়েছে। মাইরা মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফানের চোখ লাল। মাইরা ঢোক গিলে প্রশ্ন করে,
“আপনি কি অসুস্থ?”
ইরফান ছোট্ট করে বলে,
“হুমমমম।”
মাইরা তার গলার ইরফানের স্লাইড করা হাত বা হাতে ধরে ফেলে। মিনমিন করে বলে,
“কি অসুখ আপনার?”
ইরফান মাইরার মুখপানে চোখ বুলিয়ে কণ্ঠে বিরক্তি ঢেলে বলে,
“শাড়ি পরেছ কেন স্টুপিট?”
মাইরা আবারও মিনমিন করে বলে,
“আপনার আম্মুই তো বললো।”
ইরফান শুষ্ক ঢোক গিলে। মাইরার পেট জড়িয়ে উঁচু করে ধরে বেডের কাছে নিয়ে আসে। বেডের পাশে দাঁড়িয়ে বাম পা মাটিতে রেখেই ডান পা বেডের উপর রাখে। এরপর মাইরাকে তার ডান পায়ের উরুতে বসিয়ে দেয়। মাইরা মৃদু চেঁচিয়ে দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে। কাঁপা কণ্ঠে বলেন,
“নামান আমায়। পড়ে যাব।”
ইরফান শান্ত চোখে মাইরার মুখপানে চায়। ডান হাতে মাইরার কোমড় জড়িয়ে বাম হাতে মাইরার সামনে আসা চুলগুলো পিছনে নিয়ে যায়। দৃষ্টি মাইরার গলার নিচে তিলটায় নিবদ্ধ। মাইরা ইরফানের দৃষ্টিতে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। কাঁপা কণ্ঠে কিছু বলতে চায়, “আপনি…..
বলতে পারে না। ইরফান তার আগেই মাইরার গলায় মুখ গুঁজে দিয়েছে। মাইরার শরীর ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। ইরফানের পায়ের উপর ঝুলিয়ে বসা, দু’হাতে ইরফানের জড়িয়ে ধরা গলায়, হাতের বাঁধন ঢিল হয় আপনাআপনি। পড়ে যেতে নিলে ইরফান দু’হাতে শক্ত করে মাইরার কোমড় জড়িয়ে ধরে। লম্বা শ্বাস টানে। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান মুখ নামিয়ে মাইরার তিলটার উপর তার শুষ্ক ঠোঁটজোড়া রেখে বিড়বিড়িয়ে বলে,
“মাই বার্ডফ্লাওয়ার।”
মাইরা ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। ইরফান বোধয় বিরক্ত হলো। তিলটার উপর বেশ অনেকটা শক্তি খাঁটিয়ে দাঁত বসায়। মাইরা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান ছেঠে দেয়, তবে মুখ তোলে না। সেভাবেই বেশ কিছুক্ষণ থেকে ছোট্ট একটা শব্দহীন চুমু এঁকে দেয় ক্ষ’তস্থানে। মাইরা বোধয় বুঝল। হৃদপিণ্ড লাফিয়ে বেরিয়ে আসবে বোধয় মেয়েটার।
ইরফান মাথা তুলে তাকায় মাইরার মুখপানে। মাইরা মাথা নিচু করে চোখ বুজে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“শাড়ি পরে আমায় অসুস্থ বানিয়ে বলো, আমি অসুস্থ কি-না! স্টুপিট গার্ল।
ইরফানের কথা মেয়েটার মাথার উপর দিয়ে গেল। সে শাড়ি পরলে এই লোক অসুস্থ হবে কেন? কি অদ্ভুদ যুক্তিহীন কথাবার্তা।
ইরফান মাইরাকে মেঝেতে দাঁড় করিয়ে দেয়। মাইরা পড়ে যেতে নিলে ইরফান আগলে নেয় মাইরাকে। ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। বা হাতে মাইরাকে নিজের সাথে আগলে ধরে ডান হাতে কা’ম’ড় দেয়া স্থান স্পর্শ করে। একটুতেই কেমন লাল হয়ে গিয়েছে। ইরফান সূক্ষ্ম হাসলো। মৃদুস্বরে বলে,
“ইট’স আ পানিশমেন্ট ফো ইউ। আরও ইচ্ছে আছে শাড়ি পরার?”
মাইরা ইরফানের থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। এলোমেলো শাড়ি পরিহিত মাইরাকে দেখে ইরফান বারবার ঢোক গিলে। কপালে দু’আঙুলের সাহায্যে স্লাইড করে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অতঃপর মাইরার পানে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“শাড়ি তুমি খুলবে না-কি আমি?”
মাইরা মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,
“আপনি যান।”
ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে এসে গম্ভীর স্বরে বলে, “নো। আই থিংক তুমি আমার দেয়া পানিশমেন্ট লাইক করছ, তাই এখনো দাঁড়িয়ে আছো, অ্যা’ম আই রাইট?”
কথাটা বলে মাইরার দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলে মাইরার দু’হাত ইরফানের পেটে রেখে ঠেলে দেয়। মিনমিন করে করে বলে,
“খুলছি তো শাড়ি। আপনি যান প্লিজ!”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে, “নো।”
মাইরা বুঝলো এই লোক যাবে না। তাকে ওয়াশরুমেই যেতে হবে। কি আর করার। ভাবনার মাঝেই ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“ফাইভ মিনিট’স টাইম। ফাস্ট চেঞ্জ কর।”
কথাটা বলে বেলকনিতে চলে যায়। মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। দৌড়ে গিয়ে বেলকনির দরজা আটকে দেয় এপাশ থেকে।
এরপর দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থম মেরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। ডান হাতে ইরফানের কা’ম’ড় দেয়া স্থানে হাত দিলে ব্য’থা পায়। কেঁপে ওঠে কেমন। ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করে।
একটা কালো জামা বের করে ফটাফট শাড়ি পাল্টে জামা পরে নেয় মাইরা। এর মাঝে খুকখুক করে বেশ কয়েকবার কাশল।
ওপাশ থেকে ইরফান রেগে বলে,
“স্টুপিট, ওপেন দ্য ডোর।।”
মাইরা ঢোক গিলে। ওড়না ছাড়াই দৌড়ে দরজা খুলতে গিয়ে আবারও পিছিয়ে আসে। ওড়না খুঁজতে থাকে বাট খুঁজে পায় না। মুখটা অসহায় হয়ে আছে। ওপাশে ইরফান বিরক্ত হয়। মাইরা উপায় না পেয়ে শাড়ি গায়ের উপর জড়িয়ে দ্রুত দরজা খুলে দেয়। ইরফান রেগে বলে,
“হোয়াট’স ই’ওর প্রবলেম স্টুপিট?”
মাইরা দু’পা পিছিয়ে গিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
“স্যরি!”
ইরফান দেখল মাইরা নিজের গায়ে শাড়ি পেঁচিয়ে রেখেছে। বিরক্ত হলো। একে শাড়ি খুলতে বলল। আবারও সেই শাড়ি পেঁচিয়ে রেখেছে।
ইরফান মাইরার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে শাড়ি নিয়ে টান দিতে নিলে মাইরা উঁকি করে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মাইরা অনবরত কাশতে থাকে। ইরফান হতভম্ব হয়ে যায়। মাইরার গাল দু’হাতে ধরে মাইরার মুখপানে তাকালে দেখল কাশতে কাশতে মেয়েটার চোখমুখ কেমন লাল হয়ে গিয়েছে। ইরফান বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“কি প্রবলেম হচ্ছে তোমার?”
মাইরা ঠেলে ইরফানকে সরিয়ে দিতে চায়। কোনোরকমে হাসফাস করতে করতে বলে,
“আপনি সিগারেট খেয়েছেন। আমার বমি আসছে। ওয়াক!”
ইরফানের মনে পড়লো মাইরার অ্যাজমার প্রবলেম এর কথা। অনুতপ্ত স্বরে বলে,
“স্যরি লিটল গার্ল।”
মাইরা ইরফানের কথা শুনলোই না। তার বমি আসছে। এই লোক মনে হয় সিগারেট গায়ে মাখিয়ে নিয়ে এসেছে। হঠাৎ-ই হাসফাস করতে করতেই রেগে বলে,
“সরবেন আপনি? দেখছেন না আমার বমি পাচ্ছে, এসব ছাইপাঁশ খেয়ে ঘেঁষাঘেঁষি করছেন কেন? উফ!”
ইরফান ভ্রু কোঁচকালো। অ্যাজমা থাকলে নিঃশ্বাস নিতে ক’ষ্ট হয়। এই মেয়ের বমি পাচ্ছে কেন? মাইরার চেঁচানোয় রেগে বলে,
“স্টুপিট গার্ল, আমায় রাগ দেখালে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরা আবারও উঁকি করতে নিলে ইরফান মুহূর্তেই নরম গলায় বলে,
“স্যরি স্যরি! কোথায় ক’ষ্ট হচ্ছে তোমার?”
মাইরা চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফানকে ঠেলে। এই লোকের গা ভর্তি সিগারেট। ইরফান কিছু একটা ভেবে নিজেই মাইরার থেকে খানিকটা দূরে সরে গায়ের কোট খুলে ছুঁড়ে ফেলল। এরপর দ্রুত হাত চালিয়ে শার্টের বোতাম গুলো খুলে শার্ট ছুঁড়ে মারলো। এরপর মাইরার গাল ধরে মৃদুস্বরে বলে,
“এখনো প্রবলেম হচ্ছে?”
মাইরার নাড়িভুড়ি সব উল্টে আসছে। কি জ’ঘ’ণ্য গন্ধ। ইরফানকে ধাক্কা দিলে ইরফন মাইরাকে টেনে ধরে। চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“কি প্রবলেম হচ্ছে তোমার? টেল মি স্টুপিট।”
মাইরা মুখ চেপে কাশে। কোনোরকমে বলে,
“ছাড়ুন। আমার বমি আসছে। বাথরুমে যাব আমি।”
ইরফান দ্রুত মাইরাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।
মাইরা কয়েক সেকেন্ড এর মাঝেই গলগল করে বমি করে দেয়। পিছু দাঁড়িয়ে ইরফান দেখল মাইরা বমি করছে। ভীষণ চিন্তিত হয় ছেলেটা। মাইরাকে আগলে ধরলে মাইরা ছ্যাত করে ওঠে। কিন্তুু শরীর দুর্বল এর জন্য নিজেকে ছাড়াতে পারলো না। মাইরার কান্না পাচ্ছে। এমন উঁকি আসলে কি যে অ’স’হ্য লাগে। ইরফান ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার মুখ মুছে দেয়। মাইরা ঘাড় বাঁকিয়ে দুর্বল কণ্ঠে বলে,
“কি করছেন?”
ইরফান কিছু বলল না। ট্যাপ ছেড়ে নিজের হাত ধুয়ে মাইরার মুখে পানি দিয়ে দেয়। মাইরা ইরফানকে আটকে নিজেই বেসিনে ভালোভাবে মুখ ধুঁয়ে নিল। এখন একটু ভালো লাগছে। উঁকি করলে বেশি খা’রা’প লাগে। ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায় নিজের থেকে। ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“কি প্রবলেম? রাগিয়ো না আমায়।”
মাইরা বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমি ব্রাশ করব, সরুন।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“নো।”
ইরফানের মুখ থেকে আবারও সিগারেটের গন্ধে মাইরা দু’হাতে তার মুখ চেপে ধরে। ইরফান ভ্রু কোঁচকালো। নিজের উপর-ই বিরক্ত লাগলো। এই বাচ্চার উপরও বিরক্ত লাগলো। সে কি এমন খেয়েছে? মানুষ বি’ষ খেয়েও এমন করে না। এই স্টুপিট সিগারেটের গন্ধে যেমন করছে। বেসিনের উপর চোখ বুলিয়ে মাউথ ওয়াশ খুজল। না পেয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,
“মাউথ ওয়াশ নেই তোমার?”
মাইরা তার মুখ চেপে বোকা চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। ইরফান বিরক্ত হয়ে মাইরাকে ছেড়ে মাইরার ছোট ব্রাশ তুলে নেয় হাতে। মাইরা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। ইরফান মাইরার ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে নিজের মুখে নিলে মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে,
“আল্লাহ! এটা আমার ব্রাশ!”
কথাটা বলে ইরফানের হাত ধরে টানলে ইরফান মাইরাকে বা হাতে চেপে ধরে দ্রুত মুখ থেকে গন্ধ বের করার জন্য কোনোরকমে একটু ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে নেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে। ইরফান মুখ ধুয়ে মাইরার দিকে তাকালে মাইরার দৃষ্টি দেখে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা অবুঝ গলায় বলে,
“ওটা আমার ব্রাশ ছিল।”
“সো হোয়াট?”
মাইরা কি বলবে বুঝতে পারছে না। ইরফান মাইরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“সিগারেটের স্মেল স’হ্য করতে শেখ।”
মাইরা মুখ কুঁচকে বলে,
“পারবো না। ইয়াক!”
ইরফান মাইরার দিকে শান্ত চোখে তাকায়। মাইরা ঢোক গিলে। সে সিগারেটের গন্ধ স’হ্য করতে পারে না বলে এটাও তার দোষ হয়ে গেল?
ইরফান মাইরার ভেজা ঠোঁটজোড়ায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মৃদুস্বরে বলে,
“ইট’স ওকে। মাউথ ওয়াশ করে নিব।”
মাইরা বোকা চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। ইরফানরে মুখ তার মুখের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে মাইরা দ্রুত দু’হাতে তার মুখ চেপে ধরে।
ইরফান বিরক্তি চোখে মাইরার চোখের দিকে তাকালো। বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধমকে বলে,
“সারাজীবন স্টুপিট-ই থাকবে?”
ইরফানের ধমক খেয়ে মাইরা কেঁপে ওঠে। পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। ইরফান
মাইরাকে ছেড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইরফান বেরিয়ে গেলে মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
একটাই ব্রাশ ছিল তার, ব্রাশ করে বেসিনের মধ্যে ফেলে চলে গেল। কি অদ্ভুদ! মাইরা ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল ইরফান দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। একটু পর কল কেটে দ্রুত শার্ট আর কোট গায়ে জড়ালো আবারও। মাইরা এক কোণায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ দেখল ইরফানকে। ইরফান রেডি হয়ে দ্রুত ডোর খুলে বাইরে এক পা রেখেও আবার পিছু এসে বলে,
“এই ঘর থেকে এক পা বাইরে রাখলে পা কেটে ফেলব।”
কথাটা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দেয়।
মাইরা অসহায় মুখে বন্ধ দরজার দিকে চেয়ে থাকে। সে ভেবেছিল এই লোকটা চলে গেলেই সে দৌড় দিবে। ছাদে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। মাইরা বিকেলে একবার গিয়েছিল। ওখানে সবাই মেহেদী দিবে। সেও দিবে। কিন্তুু কিভাবে? তাকে তো বন্দী করে রেখে গেল।
“কোথাও যাচ্ছিস?”
সাহেল এর কথায় ইরফান দাঁড়িয়ে গেল। পিছু ফিরে তাকালো না। সাহেল নিজেই ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে বলে,
“এতোক্ষণ কি করলি তোর বউ এর ঘরে? ওকে তো মানিস না।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“It’s my personal matter.”
সাহেল হেসে বলল,
“আমার ওকে ভালো লেগেছে।”
ইরফান রেগে সাহেলের কলার চেপে ধরে। সাহেল ইরফানের থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নেয়। ময়লা ঝাড়ার মতো কয়েকবার ঝেড়ে বলে,
“কি যেন নাম, ওহ হ্যাঁ, মাইরা। হাউ কিউট! অন্তরার চেয়েও ভয়ংকর সুন্দরী। এজন্যই এতো ফাস্ট পা পিছলে পড়লি?”
ইরফান শক্ত চোখে সাহেলের দিকে চেয়ে আছে। সাহলে বাঁকা হেসে বলে,
“আফসোস! মাইরা সুন্দরী…”
আর বলতে পারে না। ইরফান ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরেসোরে এক ঘুষি মেরে দেয় সাহেলের নাক বরাবর। সাহেল কয়েক পা পিছিয়ে যায়। ইরফানের দিকে তেড়ে আসলে শুদ্ধ দৌড়ে এসে সাহেলকে টেনে ধরে। সাহেল রেগে শুদ্ধ কে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“আমাকে আটকাস কেন? ওকে আটকাতে পারিস না?”
শুদ্ধ ইরফানের দিকে তাকায় একবার আবার সাহেলের দিকে। চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“মারামারি করছিস কেন তোরা?”
সাহেল ডান পাশে থুতু ফেলে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
“মাইরাকে আমার লাগবে।”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ইরফান আবারও তেড়ে আসতে নিলে শুদ্ধ ইরফানকে জাপ্টে ধরে বলে,
“রাগাচ্ছে তোকে। থাম থাম। মা’রা’মা’রি করিস না।”
ইরফান রাগান্বিত স্বরে বলে,
“যাস্ট আর একবার আমার ওয়াইফের নাম উচ্চারণ করলে, ওর জবান কেটে কু’কু’রকে খাওয়াবো।”
কথাটা বলে শুদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে গটগট পায়ে বাড়ির ভেতর চলে যায়। বাইরে আর বের হলো না।
শুদ্ধ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাহেলের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“রাগাচ্ছিস ভালো কথা। মারামারিতে গেলি কেন?”
সাহেল রেগে বলে,
“আমি ওকে রাগাইনি। যা বলছি কাট কাট বলেছি। আমার মাইরাকে চাই মানে চাই।”
শুদ্ধ কেমন করে যেন তাকালো সাহেলের দিকে। অবাক হয়ে বলে,
“তুই তো ভালোবাসিস……”
সাহেল নির্দ্বিধায় বলে,
“মাইরাকে দেখে ওকে আর ভালো লাগছে না। ইট’স সিম্পল।”
শুদ্ধ কি বলবে খুঁজে পেল না। এভাবে ভালোবাসা যায়? কই সে তো ফারাহকে প্রায় চার বছর আগে থেকে ভালোবেসে আসছে। কখনো তো মনে হয়নি অন্যকেউ ফারাহের থেকে বেশি সুন্দর। বরং ফারাহকেই ভিন্ন সময়ে ভিন্নরকম সুন্দরভাবে আবিষ্কার করেছে।
শুদ্ধর ভাবনার মাঝেই সাহেল বাঁকা হেসে বলে,
“ইরফানের স্বভাব আমার জিনিসে ভাগ বসানো। এই বাড়ি এসে মাইরাকে আমি পছন্দ করলাম, এখন শুনছি এটা ওর বউ। সে যাই হোক, ইরফান মন থেকে মেনেছে মাইরাকে। এজন্যই এখন ওই মেয়েকে আমার চাই, ব্যাস।”
শুদ্ধ অবাক হয়ে বলে,
“ইরফানের সাথে পারবি না। ফালতু ঝামেলা করিস না। আমি ফান করেছিলাম খুব ভালো করেই জানিস।”
সাহেল গা টানা দিয়ে বলে,
“বাট আমি ফান করিনি, না তো করছি।”
শুদ্ধ রেগে বলে,
“তুই ইচ্ছে করে ঝামেলা করতে চাইছিস।”
সাহেল হেসে বলে,
“ইরফানের সাথে তোর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমায় নয়। আমার সাথে নিজেকে গুলিয়ে ফেলছিস কেন?”
শুদ্ধ রেগে সাহেলকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“তোর প্রবলেম কি? ভাইয়ের বউয়ের দিকে নজর দেয়া, এসব কি ধরনের স্বভাব?”
সাহেল শুদ্ধর চেয়েও জোরে ধাক্কা দেয় শুদ্ধকে। অতঃপর শক্ত গলায় বলে,
“ও যখন আমার ভালোবাসার দিকে নজর দিয়েছিল তখন তোর এসব নীতি কথা কোথায় গিয়েছিল?”
শুদ্ধ বিরক্ত হয়। মেজাজ খা’রা’প হচ্ছে তার। বিরক্ত হয়ে বাড়ির ভেতর যেতে যেতে বলে,
“ভালোবাসা কি সেটাই তো বুঝিস না। ভালো মানুষ হো আগে। তাহলে অন্যকে দোষারোপ করার স্বভাব টা যাবে।”
সাহেল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
ইরফান মাইরার ঘরের দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। মাইরা বেডের উপর বসে ছিল মন খা’রা’প করে। ইরফানকে দেখে দ্রুত বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। ইরফান শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইরার দিকে। সাহেলের সামনে শাড়ি পরেছিল ভাবতেই রাগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। মাইরা ঢোক গিলে। ভালো মানুষ বের হয়ে গেল তো! এতো রেগে ফিরলো কেন? মাইরা ভীত স্বরে বলে,
“আপনার কি হয়ে…
কথাটা শেষ করার আগেই ইরফান ঝরের বেগে মাইরার গাল চেপে ধরে। রাগান্বিত স্বরে বলে,
“কেন শাড়ি পরলি বল? এই বল, অন্যদিন পরতে পারিস না? আজ কেন পরলি?”
মাইরা ভীষণ ভয় পায় ইরফানকে দেখে। ইরফান মাইরার ভীত মুখপানে তাকায়। নিরবে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
মাইরাকে ছেড়ে কয়েকবার শ্বাস নেয়। রাগে দরজায় একটা লাথি বসায়। মাইরা কেঁপে ওঠে।
ইরফান গায়ের কোট খুলে ছুঁড়ে ফেলল। মাইরাকে বা হাতে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে গটগট পায়ে ওয়াশরুমে যায়।
মাইরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না, আসলে সে কি করেছে। দরজার ওপাশে রিয়ার কণ্ঠ পায়। রিয়া বারবার করাঘাত করে মাইরাকে ডাকছে। মাইরা ধীরপায়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলে রিয়া হেসে একটি শাড়ি এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ভাবি এই শাড়িটা পড়ে ছাদে আসো। মেহেদী দিবো সবাই মিলে। তাড়াতাড়ি আসো কিন্তুু।”
মাইরা রিয়ার হাতের শাড়ী নিয়ে জোরপূর্বক হাসলো। রিয়া শাড়ি টা দিয়েই দৌড় দিল। তাদেরও রেডি হতে হবে।
মাইরা শাড়ীর দিকে চেয়ে আছে। ইরফান একটু আগেও তো শাড়ী পরা নিয়ে ভীষণ রেগে গিয়েছে। ভাবনার মাঝেই পিছন থেকে ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“ওখানে কি করছ?”
মাইরা দ্রুত পিছু ফিরে তাকায়। ইরফানের মাথার চুল ভেজা চুপচুপে হয়ে আছে। চুল বেয়ে টপটপ করে ঘাড়ে পানি পড়ছে। চোখমুখ ভেজা। মাইরা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
“আপনি মাথা মুছছেন না কেন?”
ইরফান মাইরার হাতে থাকা শাড়ির দিকে তাকায়। এগিয়ে এসে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“শাড়ি পরতে চাও?”
মাইরা ভীত চোখে তাকায়। আপনাআপনি গলায় হাত চলে যায়। ঢোক গিলে দ্রুত মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে বলে,
“না না, চাই না।”
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“গুড গার্ল।”
মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“আমি ছাদে যেতে চাই।”
ইরফান রেগে তাকায়। মাইরা ঢোক গিলে মিনমিন করে বলে,
“ছাদে সবাই মেহেদী দিবে। আমি যেতে চাই, প্লিজ!”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“নো।”
মাইরার কান্না পায়। হাতের শাড়িটার দিকে তাকালো। সবাই একরকম শাড়ি পরবে বলেই দিয়ে গিয়েছে রিয়া আপু। মাইরা জানে। সে তো পরবে না শাড়ি। তবুও লোকটা তাকে ছাদেও যেতে দিবে না? ভেবেই কান্না পায়। এভাবে বন্দী করে রাখছে কেন? সে একটু হাসলেও এই লোকের স’হ্য হয় না। ভেজা চোখে চেয়ে বলে,
“আমি ইনায়া আপুদের কাছে যেতে চাই। হাতে মেহেদী দিতে চাই।”
ইরফান ধমকে বলে,
“এক কথা বারবার বললে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব স্টুপিট।”
মাইরা ছলছল দৃষ্টিতে তাকায় ইরফানের পানে। হাতের শাড়ি ছুঁড়ে ফেলে বেডের উপর পা তুলে হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে পড়ে।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। নিচে পড়ে থাকা শাড়ির দিকে তাকালো। তাকে কি এই পুচকি রা’গ দেখালো?
ভেবেই তার রা’গ হলো। কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। মাইরার ফোঁপানোর আওয়াজ পেয়ে একটু দমলো।
কিছু একটা ভেবে মাইরার পাশে দাঁড়িয়ে তার ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে,
“তুমি চাইলে গেইম খেলতে পারো।”
মাইরা মাথা তুলে তাকায়। এইটুকু সময়েই কেঁদেছে অনেক। ইরফানের বারিয়ে রাখা ফোনের দিকে চেয়ে রেগে বলে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৪
“আমাকে আপনার পাঁচ বছরের বাচ্চা মনে হয়?”
কথাটা বলে ইরফানের ফোন নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে। ইরফান হতভম্ব। অবাক হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা তার ফোনের দিকে তাকায়।
মাইরা নিজেও ঢোক গিলে। কি করে ফেলল এটা?
আজ তাকে কে বাঁচাতে আসবে? ভেবেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।