প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৬

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৬
Drm Shohag

মাইরা ঢোক গিলে কান্নামাখা চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান শক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটার মুখ জুড়ে ভীতি জমা হয়। ইরফান মাইরার মুখাবয়বে দৃষ্টি বুলায়।
মাইরা মেঝেতে পড়ে থাকা ফোনের দিকে তাকায়। ফোনের কোনো পার্ট খুলে যায়নি। মাইরা ইরফানের পাশ কেটে ধীরপায়ে মেঝে থেকে ফোনটা তুলে নেয় হাতে। ইরফান চুপচাপ দেখছে মাইরার কর্মকাণ্ড। মাইরা ভয়ে ভয়ে ইরফানের সামনে এসে দাঁড়ায়। কাঁপা হাতে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলে,

“স্যরি!”
ইরফান নিরবে চেয়ে আছে মাইরার কাঁপা হাতের দিকে। কিছু না বলে চুপ করে মাইরার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বেডের উপর রাখে। মাইরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“ইট’স ভ্যালুলেস। সো, ডোন্ট প্যানিক।
মাইরা কিছু বলে না। ইরফান আবারও বলে,
ভয় পাও, আবার তাকেই রাগ দেখাও, ইন্টারেস্টিং!”
মাইরা উশখুশ করে। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ঘুমাও।”
মাইরা মাথা তুলে তাকায়। মিনমিন করে বলে,
“একবার ছাদে যাই প্লিজ!”
ইরফান হঠাৎ-ই মাইরাকে সাপ্টে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ছটফট করে বলে,
“কি করছেন? ছাড়ুন আমায়।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইরফান দু’হাতে মাইরাকে তার সাথে চেপে ধরে, তার দু’পায়ের মাঝে মাইরার দু’পা রেখে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে দেয়। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফানের ভেজা মাথা থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। মাইরা বলতে গেলে ইরফানের নিচে পড়ে আছে। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
“ইউ নো, আজ সারাদিন ভীষণ ছোটাছুটি করেছি। আই নিড টু স্লিপ। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
মাইরা ঢোক গিলে চোখ বুজে নেয়। ইরফান দীর্ঘশ্বাস টানে। মাইরার শরীর শিরশির করে ওঠে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে চুপ করে চোখ বুজল।
মজার ব্যাপার ঘুমানোর কথা ইরফানের, ঘুমিয়েছে মাইরা। ভারি নিঃশ্বাস ইরফানের গলায় গিয়ে ধাক্কা খায়। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দেয়। মাইরার মুখ চোখে তার মাথার পানির ছিঁটেফোঁটা ডান হাতে মুছে দিল। কিছু একটা ভেবে ঠোঁট বাঁকিয়ে মৃদু হাসে। গলার নিচে কা’ম’ড়ের জায়গাটা চেক করে হাসি দীর্ঘ হয়। বিড়বিড় করে,

“মাই বার্ডফ্লাওয়ার, বাট ইউ আর আ ভেরি স্টুপিট গার্ল। আই ডোন্ট লাইট ইউ।”
কথাটা বলে মুখ নামিয়ে গলার নিচে তিলের উপর শব্দ করে একটা চুমু আঁকে।
এরপর মাইরাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বেডের উপর থেকে তার ফোন নিয়ে অন করে দেখল গ্লাস ফেটেছে। ইরফান আড়চোখে মাইরার দিকে তাকায়। গম্ভীর মুখে মাইরার দিকে চেয়ে থাকে কিছু সময়। এরপর গায়ে শার্ট জড়িয়ে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর নির্দ্বিধায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ড্রয়িং রুমে সবাই বসে গল্প করছিল। ইরফানের কোলে মাইরাকে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সবাই কথা হারিয়ে চুপ হয়ে রইল। ইরফানের বড় ফুপি, ছোট ফুপি, মামি, মামা, কাকি, কাকা,ইরফানের বাবা, মা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। শুধুমাত্র ইরফানের খালা ঝাপসা চোখে চেয়ে রইল। তার মেয়েটা যে ভালো নেই। রুমা নেওয়াজ এগিয়ে এসে বললেন,

“মাইরাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”
ইরফান সিঁড়ি উঠতে উঠতে বলে,
“আমার ঘরে।”
তারেক নেওয়াজ মৃদু হেসে বলে,
“কয়দিনের জন্য?”
ইরফান মাইরার ঘুমন্ত মুখপানে চেয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হেসে বলে,
“লাইফটাইম।”
ইরফানের কথায় সবাই হেসে ফেলল। ইরফান পাত্তা দিল না। দ্রুত পায়ে সিঁড়ির ধাপগুলো পেরিয়ে তার ঘরের দিকে এগোয়। ছাদ থেকে সাহেল নেমে আসে। ইরফানের কোলে মাইরাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”
ইরফান কোনো উত্তর করল না। তার ঘরে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল। সাহেল বিরক্ত চোখে ইরফানের ঘরের দিকে চেয়ে রইল।
ইরফান মাইরাকে তার বেডে শুইয়ে উঠতে নেয়। মাইরা ঘুমের ঘোরে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে। কি যেন বিড়বিড় করে, ইরফান বোঝার চেষ্টা করল। বুঝতেও পারল। ‘খ’বি’শ লোক। আমায় পছন্দ করে না।’
ইরফান ভ্রু কুঁচকে মাইরার দিকে চেয়ে সেও মাইরার পাশে শুয়ে পড়ল। মাইরাকে টেনে নিল তার দিকে। অতঃপর গম্ভীর গলায় বলে,

“ইউ আর রাইট। আই ডোন্ট লাইক ইউ, স্টুপিট গার্ল।”
কিছুক্ষণ পর পকেট থেকে ফোন বর করে শুদ্ধ কে কল করে।
“মেহেদী ডিজাইনারকে পাঠা।”
ওপাশ থেকে শুদ্ধ হেসে বলে,
“কোন রুমে?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমার রুমে।”
“তুই মেহেদী পরবি? ছিঃ ছিঃ! অনেক জ’ঘ’ণ্য লাগবে বিশ্বাস কর।”
ইরফান বিরক্ত হয়। শুদ্ধ আবারও হেসে বলে,
“পাঠালাম না তাহলে। তোকে মেহেদী দিলে ভালো লাগবে না।”
ইরফান রেগে বলে,
“একটা মেয়েকে পাঠা। ফাস্ট।”
বলেই কল কেটে দেয়।

কিছুক্ষণ পর দরজায় কেউ নক করলে ইরফান গিয়ে দরজা খুলে দেয়। অপরিচিত এক মেয়েকে দেখে সাইড দিলে মেয়েটি ভেতরে আসলে ইরফান দরজা লাগিয়ে দেয়। মেয়েটি টক সাইডে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
“স্যার কাকে মেহেদী দিয়ে দিব?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“বেডে শুয়ে আছে।”
মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে দেখল মাইরা ঘুমিয়ে। একটু ঝুঁকে মাইরাকে ডাকতে নিলে ইরফান শক্ত গলায় বলে,
“স্টপ।”
মেয়েটি ইরফানের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে,
“আপনি যে বললেন উনাকে মেহেদী দিয়ে দিতে? উনি তো ঘুমাচ্ছে।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“সো হোয়াট? এভাবেই দিয়ে দিতে হবে।”
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল,
“ওকে স্যার।”

এরপর মেয়েটি মাইরার পাশে বসে মেহেদী দেয়া স্টার্ট করে। ইরফান একটা চেয়ার টেনে বসে তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার হাতের দিকে চেয়ে রইল। মাইরা ঘুমের মাঝে নড়েচড়ে হাত নাড়ায়। মেয়েটা বিরক্ত হয় ভীষণ। এভাবে মেহেদী দেয়া যায়? অর্ধেক ও হয়নি। অথচ এই সময়ে পুরো দু’হাত ভরে মেহেদী দেয়া হয়ে যেত। কিছু বলতেও পারছে না। একবার বলেছিল ডাক দেয়ার কথা। এই ছেলে তাকে ধমকে চুপ করিয়ে রেখেছে। মেয়েটা কপাল চাপড়ায়। এ কোথায় এসে ফেঁসে গেল আল্লাহ!
ইরফান মেয়েটাকে থেমে যেতে দেখে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মেয়েটা থতমত খেয়ে বলে,
“জ্বি ভাইয়া এইতো দিচ্ছি।”
বিড়বিড় করে, “ভাই রে, সি সি ক্যামেরা বসে আছে। কেমনে দিই!”
মাইরার মুখের দিকে তাকালো। মেয়েটা খুব সুন্দর! কিন্তুু কোন দেশের রাণী এ, সেটাই জানতে ইচ্ছে করল মেয়েটার। উফ! ভীষণ বিরক্ত সে এভাবে মেহেদী দিতে দিতে।
এক পর্যায়ে এক হাতের মেহেদী দেয়া কমপ্লিট করে মেয়েটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আরেকটা হাতে দিয়ে দিতে হবে ভেবেই মেয়েটার হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করল। ইরফান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

“ইউ ক্যান গো নাও।”
মেয়েটা আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো মনে মনে নেচে ওঠে। এই জীবনে মেহেদী দিয়ে দিতে এতো বিরক্ত লাগেনি। কারণ কখনো কোনো ঘুমন্ত নারীকে দিয়ে দিতে হয়নি। দ্রুত বেড থেকে নেমে মেয়েটা বেরিয়ে যেতে নিলে ইরফান গম্ভীর স্বরে বলে,
“আমার একটা মেহেদী লাগবে।”
মেয়েটা পিছু ফিরে ইরফানের দিকে তাকায়। মাইরাকে দিয়ে দেয়া হাতের মেহেদী টাই ইরফানের দিকে বাড়িয়ে দিলে ইরফান নিঃশব্দে মেহেদী নিয়ে নেয় মেয়েটার থেকে। মেয়েটি বেরিয়ে গেলে ইরফান দরজা আটকে মাইরার পাশে বসে।
এরপর মাইরার ডান হাত তীক্ষ্ণ চোখে পরোখ করে। হাতে মেহেদী তুলে নেয়। খুব মনোযোগ সহকারে মাইরার ডান হাতে মেহেদী দেয়া স্টার্ট করে। কিছুক্ষণ পর মাইরা ঘুমের মাঝে ইরফানের দিকে হেলে বা হাত তুলে ঠাস করে একদম ইরফানের বুকে ফেলে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
হাতের মেহেদী রেখে মাইরার হাত তার বুক থেকে সরালো। মাইরার হাত চেক করে দেখল হালকা ছড়িয়ে গিয়েছে। মাথা নিচু করে তার বুকে তাকালো, ফর্সা বুকের মাঝ বরাবর অনেকটা মেহেদী লেগে গিয়েছে।
ইরফান মাইরার বাম হাতে ধরে বসে থাকলো, শুকিয়ে গেলে ডান হাতে দিয়ে দেয়। এভাবে হাতের উল্টো পিঠেও দিয়ে দেয়। বাম হাতের উল্টোপিঠে দিয়ে দেয়।

পরদিন মাইরা ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম অবাক হয়েছে ইরফানের ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করে, এরপর দু’হাত ভর্তি মেহেদী দেখে মেয়েটা আরও অবাক হয়। ইরফানকে খুঁজে পায় না। ইনায়াকে জিজ্ঞেস করলে বলে, মেহেদী ডিজাইনার এক আপু এসে আমার হাতে দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তুু মাইরার তিন পাশে একরকম আর বাম হাতের তলায় অন্যরকম লাগে মেহেদী দেয়ার ধরন। একজনই দিলে এমন তফাৎ হবে কেন? যদিও সবগুলোই খুব সুন্দর হয়েছে। মাইরা ভীষণ খুশি। ভেবেছিল মেহেদী দিতে পারবে না। কিন্তুু লোকটা অতটাও খা’রা’প না। ভালোই। কিন্তুু তার ঘর থেকে এই ঘরে কেন এনেছে তাকে? খুঁজেও পায় না লোকটাকে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। মাইরা আজ সারাদিন মোটামুটি ইনায়াদের সাথেই ছিল। একদম শান্তিতে ছিল। ইরফানকে একবারের জন্যও দেখেনি। থাকলে নিশ্চয়ই তাকে আবারও বন্দী করে রাখতো। মাইরা জামা পড়ে ইনায়ার ঘরে যাচ্ছিল তখন ইরফানের ছোট ফুপি মাইরার সামনে এসে দাঁড়ায়। মিষ্টি হেসে বলে,

“আম্মু তুমি শাড়ি পরনি যে?”
মাইরা ঢোক গিলল। শাড়ি পরলে ইরফান যদি হঠাৎ চলে আসে। আর তার সাথে উল্টাপাল্টা শুরু করে দেয়। মৃদগ হেসে বলল,
“ফুপি জামাতেই ভালো লাগছে।”
পাশ থেকে ইরফানের কাকি দাঁড়িয়ে বলে,
“এটা কেমন কথা। এমনিতেও বিয়ের পর মেয়েরা শাড়ি পরে। এই মেয়ে তো দেখি শুধু জামা পরেই থাকে। এখন একটা অনুষ্ঠানে সবাই শাড়ি পরছে। তবুও পরছে না।”
ইরফানের ছোট ফুপি তার ভাই বউকে চুপ করিয়ে বলল,
“তুমি শাড়ি পরতে পারো না?”
মাইরা ইরফানের কাকির কথায় মাথা নিচু করে ছিল। ফুপির কথায় মাথা তুলে বলে,
“জ্বি পারি।”
“তাহলে শাড়ি পরে এসো যাও।”

মাইরা উপায় না পেয়ে সম্মতি জানিয়ে জানিয়ে তার ঘরে গিয়ে হলুদ শাড়ি পরে নেয়। এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে ইনায়ার ঘরে না গিয়ে একেবারে ছাদে যায়। ছাদেই সবাই আছে। মাইরার মনটা ফুরফুরে লাগছে। সবার মতো একরকম শাড়ি পরতে পেরেছে ভেবে। ছাদে গিয়ে দেখল ইনায়াকে স্টেজ এর মাঝখানে বসিয়ে চারপাশে তার কাজিনেরা ঘিরে রেখেছে। মাইরা স্বভাবসুলভ এক দৌড়ে গিয়ে ডাকে,
“ইনায়া আপু।”
ইনায়া হেসে হাত বাড়িয়ে বলে,
“এই মাইরা, তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকছো কেন? আজ ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমার পাশ থেকে নড়াচড়া করলে খবর আছে তোমার।”
রিয়া হেসে বলে,
“ভাবি তোমার জামাই আজ শাড়ি পরতে দিল?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“সে নেই।”
মিশকা মাইরাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“পুতুলের মতো বউ তো। তাই আমাদের নিরামিষ ভাই তার বউকে লুকিয়ে রাখতে চায়।”
তামান্না বলে ওঠে,

“আসলে আমাদের নিরামিষ ভাইয়ের মাঝে তো আমিষ নেই। আর মেয়েরা কি আর নিরামিষ বরকে চায়? তাই ভাইয়া ভয় পায় কোনো আমিষ মানুষ যদি তার পুতুলের মতো বউকে নিয়ে ভেগে যায়।”
তামান্নার কথায় সবাই জোরে হাসলো। ইনায়া বলে ওঠে,
“আপু তোমরা সবাই চুপ কর। আমার বোনকে আর ল’জ্জা দিও না তো।”
মাইরা অসহায় মুখ করে ইনায়ার দিকেই চেয়ে রইল। রিয়া মাইরার অপর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“তোমার হিজাব পরা টা অনেক সুন্দর হয় ভাবি। কালকে আমাকে তুমি হিজাব বেঁধে দিবা, ওকে?”
মাইরা মৃদু হেসে বলে,
“আচ্ছা আপু।”
মিশকা মাইরার হাত উল্টেপাল্টে দেখে বলে,
“তোমার দুই হাতে দুই রকম করে মেহেদী দেয়া কেন? তুমি ঘরে বসে একা একা দিয়েছিলে নাকি?”
মাইরা মিনমিন করে বলে,
“আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। জানি না। তাছাড়া আমি মেহেদী দিতে পারিনা।”
তামান্না বলে ওঠে,

“আরে ইরফান ভাইয়ের তো আর্টের হাত ভালো। ভাই দিয়ে দিয়েছে হয়তো।”
সবাই মাথা নাড়লো। হতে পারে। মাইরা অবাক হয়ে হাতে তার হাতের দিকে চেয়ে থাকে। ওই লোক দিয়ে দিয়েছে? কিভাবে সম্ভব? ভাবনার মাঝেই ইনায়া বলে ওঠে,
“আরে তোমরা ভুল ভাবছো। ভাইয়া জীবনেও দিয়ে দিবে না। এই বিরক্তির কাজ ভাইয়া বসে বসে করবে? তোমাদের তাই মনে হয়?”
ইনায়ার কথাও ফেলে দেয়ার মতো না। মাইরা জাহারাকে না দেখে বলে,
“জাহারা আপু কোথায়?”
মিশকা বলে ওঠে,
“অনেক ডেকেছি, আসেনা। কি যে হয়েছে। বিরক্ত লেগে গিয়েছে আমার।”
ইনায়া আর মাইরা কিছু বলল না। মন খারাপ হয় তাদের জাহারার জন্য।
হঠাৎ-ই কোথা থেকে যেন রাতুল আর শিহাব এসে দাঁড়ায়। রাতুল বলে,
“গাইস তোমরা কি করছ?”
সবাই চিল্লিয়ে বলে ওঠে,

“তোমরা যাও। আমাদের এখানে কি হ্যাঁ?”
রাতুল পাত্তা না দিয়ে একটা চেয়ারে আয়েশ করে বসে বলে,
“ইরফান ভাইয়ের বউ, আমাদের ভাবি একখান গান শোনাও তো।”
মাইরা বিব্রতবোধ করে। সাথে সাথেই বলে ওঠে,
“আমি তো গান পারিনা।”
রাতুল চেঁচিয়ে বলে,
“ডাহা মিথ্যা কথা। সবাই গান পারে। বাথরুম সিঙ্গার হলেও সবার মাঝেই সিঙ্গারের প্রতিভা আছে।”
তামান্না বলে ওঠে,
“ভাইয়া তাহলে আপনিই একটা গান শোনান। পাশেই মাইক আছে।”
রাতুল ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। শিহাবের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“তোরা সবাই মুগ্ধতার ঠেলায় অজ্ঞান হয়ে যাবি আমার গান শুনে। তাই আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”
সবাই একসাথে বলে উঠল,

“প্লিজ তাড়াতাড়ি আপনার সুন্দর গান গেয়ে আমাদের অজ্ঞান হওয়ার সুযোগ করে দিন।”
মিশকা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“মুগ্ধতার ঠেলায় অজ্ঞান হব না। বলুন আপনার জ’ঘ’ণ্য ভয়েস টোনে অজ্ঞান হব।”
রাতুল চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,
“ঝগরুটাইয়া মাইয়া।”
মিশকা রেগে তাকায় রাতুলের দিকে। রাতুল পাত্তা দিল না।
মাইরা হেসে বলে,
“বাথরুমের সিঙ্গার হয়ে গান গাইলেও প্রবলেম নেই ভাইয়া। আমরা সব হজম করার ক্ষমতা রাখি।”
রাতুল শার্টের কলার তুলে যেতে যেতে বলে,
“নতুন ভাবির আবদার ফেললাম না। গাইস তোমরা সবাই প্রস্তুুত হয়ে যাও।”
রাতুল পাশে গিয়ে হাতে হ্যান্ড মাইক তুলে নেয়। এখানে আপাতত ইরফানের কাজিন ছাড়াও আরও অনেকেই আছে।
রাতুল গলা ঝেড়ে বলে,

“এই গান উৎসর্গ করছি মিস মিশকাকে।”
সবাই হাত তালি দিল। রাতুল বাঁকা হেসে গাইতে শুরু করল,
“মিশকা চলেছে একা পথে,
সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে,
রাগ করে না, কুশ্রী গো,
রাগলে তোমায় লাগে আরও কালো।
মিশকা চলেছে এক পথে
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে,
হার মেনেছে রাতের কালো
রাগলে তোমায় লাগে আরও কালো।”
রাতুলের গান শুনে সবাই হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ছে। রাতুল নিজেও মুখের সামনে থেকে মাইক সরিয়ে হেসে ফেলেছে। মিশকা আগুন চোখে রাতুলের দিকে চেয়ে আছে। মাইরা পেট চেপে হাসতে হাসতে কোনোরকমে বলে,

“হায় আল্লাহ! আমার পেট ব্য’থা করছে। এটা কি ছিল!”
সবার একই অবস্থা। মিশকা চিৎকার করে ওঠে।
“সবাই থামোওওওওও।”
মিশকার চিৎকারে সবাই একটু দমলো। মিশকা ধুপধাপ পা ফেলে নিচে নামতে গেলে মাইরা দৌড়ে গিয়ে মিশকাকে ধরে ফেলে। কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলে,
“আপু তুমি চলে গেলে ভালো লাগবে না। প্লিজ যেও না।”
মিশকা দাঁত কিড়মিড় করে সামনে দাঁড়ানো রাতুলের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান ভাইয়ের এই চাচাতো ভাইকে তো সে দেখে নিবে। কত্ত বড় সাহস তাকে নিয়ে মজা করে। মাইরার কথায় মিশকা এক কোণায় গিয়ে বসল। রাতুল মিশকার দিকে চেয়ে হাসছে। ভালোই লাগে এই মেয়েকে জব্দ করতে। তার কথার শুধু চেটাং চেটাং উত্তর দেয়। এবার বুঝো মজা!
রাতুল গলা ঝেড়ে বলে,

“গাইস এবার একটা সুন্দর গান গাইবো। সবাই শোনো।”
সবাই হাত নেড়ে উৎসাহ দিল। রাতুল হেসে গাইতে শুরু করে,
“ও আমার বন্ধু গো,
চিরসাথী পথচলার
তোমারই জন্য গড়েছি আমি
মঞ্জিল ভালোবাসা।
একসাথে রয়েছি দু’জন
একই ডোরে বাঁধা দুটি প্রাণ,
ছিঁড়বেনা কভু এই বাঁধন,
আসলে আসুক তুফান।
তুমি আমারই
বলব শতবার।”
হঠাৎ-ই রাতুল থেমে গিয়ে বলে,
“আরে ইরফান ভাই, এই গান তোমাকে আর ভাবিকে উৎসর্গ করলাম, বুঝলে?”
রাতুলের কথা শুনে সবাই তাকালো ইরফানের দিকে। মাইরা দ্রুত পিছু ঘুরে ইরফানকে দেখে ঢোক গিলে। ইরফান শান্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে।
ইরফান কোনো কথা না বলে মাইরার হাত ধরে ছাদ থেকে নামতে গেলে মাইরা ভয় পায়। আল্লাহ এই লোক সারাদিন পর কোথা থেকে আসলো? সে তো শাড়ি পরেছে, তাকে এখন কি বলবে?
পিছন থেকে ইনায়া উঠে এসে বলে,

“ভাইয়া মাইরাকে রেখে যাও।”
ইরফান শুনলো না। ইরফানের কাজিনরা বলে,
“আরে বউকে নিয়ে যাচ্ছে। তুই ইরফান ভাইয়ের ভিলেন হচ্ছিস কেন আজব!”
ইনায়া মুখ বাঁকালো। ছাই তার ভাই। মাইরাকে ধমকাবে নয়তো থাপ’ড়াবে এজন্যই তো নিয়ে যাচ্ছে।
মাইরা ইরফানের পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারে না। মিনমিন করে বলে,
“আর পরব না শাড়ি। স্যরি!”
ইরফান কিছু বললো না। মাইরা উল্টে পড়তে নিলে ইরফান পিছু ফিরে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা ঢোক গিলে। চেঁচালো না। ইরফানের দিকে চেয়ে রইল। ইরফান চুপচাপ দ্রুতপায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। একেবারে তার ঘরে গিয়ে মাইরাকে নামিয়ে দিয়ে দরজা আটকে মাইরার সামনে এসে দাঁড়ায়। মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান ঠাণ্ডা গলায় প্রশ্ন করে,

“আমাকে না বলে ওখানে কেন গিয়েছিলে?”
মাইরা ঢোক গিলে বলে,
“আপনি তো ছিলেন না।”
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
“আমি না থাকলে চুপচাপ ঘরেই বসে থাকবে।”
মাইরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ইরফানের দিকে। এই লোককে মাঝে মাঝে এতো বেশি অচেনা লাগে, সে ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনা।
ইরফান আবারও প্রশ্ন করে,
“ডিনার করেছ?”
মাইরা আগের চেয়েও অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কিছু বলেছি আমি।”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“খেয়েছি।”
ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে এসে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দ্বারা মাইরার কপালের ঘাম মুছে মৃদুস্বরে বলে,
“ইচ্ছে তো করছে থা’প্প’ড় দিয়ে পুরো বডির মানচিত্র পাল্টে দিতে। শাড়ি পরার সাধ মেটাবো, স্টুপিট।”
মাইরা ঢোক গিলল। মিনমিন করে বলে,

“আপনার ফুপি বলেছে, আমার কি দোষ।”
ইরফান ধমকে মাইরার গাল চেপে বলে,
“এই মুখ কি শুধু অসময়ে চালানোর জন্য?”
মাইরা ইরফানের হাত ধরে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। ইরফান ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“সব সুদে-আসলে ফেরত দিব স্টুপিট গার্ল। যাস্ট ওয়েট।”
বলে ছেড়ে দেয় মাইরার গাল। এরপর ওয়াশরুমে চলে যায়।
মাইরা বোকা চোখে ইরফানের প্রস্থান দেখল। ইরফান কি ফেরত দেয়ার কথা বললো, সে একটু অনুমানও করতে পারলো না।
ডান হাতে কপাল স্পর্শ করে যেখান থেকে ইরফান মাত্র ঘাম মুছে দিল। ভালো লাগলো কেন যেন ইরফানের এইটুকু কাজ। মৃদু হাসলো।

কিছুক্ষণ পর ইরফান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। মাইরা ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। চোখ সরাতে নিয়েও সরায় না। চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বুক, হাত অসংখ্য জায়গায় কাটা। কেমন ভয়ংকর লাগছে। মাইরা চোখ বড় বড় করে চিৎকার দিয়ে ওঠে। ইরফান দ্রুত পায়ে মাইরার দিকে এগিয়ে এসে ধমকে বলে,
“স্টুপিট চিৎকার করছ কেন?”
মাইরা ভীত স্বরে বলে,
“আপনার এই অবস্থা কি করে হলো?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে নিজের দিকে তাকালো। বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“নাথিং।”
মাইরা ভয় পেয়ে বলে,
“আপনার এক্সি’ডেন্ট হয়েছে। পা’গ’ল আপনি? হসপিটাল যাননি কেন?”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“স্টুপিট, ইট’স নরমাল। কাম।”
মাইরা চেঁচিয়ে বলে,
“আপনি যাবেন? আমি সবাইকে বলছি দাঁড়ান।”
ইরফান রেগে মাইরাকে তার সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। ধমকে বলে,
“দশ লাইন বেশি বুঝলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব।”
মাইরা নিজেকে ছাড়াতে চায়।
ইরফান ধমকে বলে, “আমায় রাগিয়ো না।”

এরপর মাইরাকে ছেড়ে ঘরের ডিম লাইট দিয়ে বেডে গিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পঠলো। ডান হাত চোখের উপর রাখে। জিরো লাইট মূলত মাইরার জন্য দিয়েছে।
মাইরা মিনমিন করে বলে,
“আপনি ওষুধ লাগান প্লিজ।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“নো নিড।”
মাইরা ঢোক গিলে। এই লোক একটা ত্যাড়া। বিরক্ত লাগলো তার। কোথায় কি করে এসেছে আল্লাহ জানে।
মৃদু আলোয় ইরফানের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইরফান একটু পর পর ডান হাতে কপাল স্লাইড করে। মাইরা এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আপনার কি মাথা ব্য’থা করছে?”
ইরফান কিছু বললো না। মাইরা একটা চেয়ার টেনে ইরফানের মাথার কাছে বসে ইরফানের চুলের ভাঁজে হাত রাখে। চুলের ভাঁজে নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে। মাইরা আবারও প্রশ্ন করে,
“আপনি কি এক্সি’ডেন্ট করেছেন?”
ইরফান আড়াআড়ি ভাবে দু’হাত বুকে গুঁজে গম্ভীর গলায় বলে,
“নো।”
মাইরা চিন্তিত হয়। এক্সিডেন্ট না হলে এসব কিভাবে হলো? মাইরা মিনমিন করে আবারও বলে,
“তাহলে?”
ইরফান বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বলে,
“সাট আপ।”

মাইরা কেঁপে ওঠে। রেগে চুলগুলো জোরে টেনে দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়। দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে দূরে সরে দাঁড়ায়। ইরফান চোখ মেলে তাকায়। রেগে বলে,
“স্টুপিট তোমার এতো সাহস বেড়েছে কবে? থা’প্প’ড় খাওয়ার শখ জেগেছে?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“আমি ছাদে যেতে চাই। আমাকে শুধু আটকে রাখছেন কেন?”
ইরফান চোখ বুজে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“এখানেই থাকতে হবে। জ্বালিয়ো না। গতরাতে তোমার টর্চারে ঘুম হয়নি আমার।”

মাইরা বুঝলো না সে কখন এই লোককে টর্চার করল। সে তো গতকাল ঘুমিয়ে ছিল। মন খা’রা’প করে বসে থাকলো। প্রায় ১০ টার কাছাকাছি। মাইরা বিরক্ত হয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। অনেকক্ষণ থেকে ঘরের লাইট অফ থাকায় জিরো লাইটের আলোয় ঘরের সবকিছু স্পষ্ট দেখা গেল। মাইরা ইরফানের ঘরের ভেতরের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ায়। দরজা ঠেলে, খোলে না। বুঝল লক করা। বাইরে হাতল ধরে অনেকক্ষণ ঘুরায়, বরাবরই ব্যর্থ। ইনায়া বলেছিল এই ঘরে ইরফান অবসর সময়ে আসে। মাইরার দেখার ইচ্ছে, এই লোক অবসর সময়ে করে টা কি? কিন্তুু দেখবে টা কিভাবে? বিরক্ত লাগলো। সে কি এই রুমের ভেতর গিয়ে সব খেয়ে ফেলবে? খুলে রাখলে কি হয়?
টেবিলের উপর ফাস্টএইড বক্স পেয়ে মাইরা ইরফানের দিকে তাকালো। চেক করে দেখল কেটে ফেটে গেলে যা যা লাগে অনেক কিছুই আছে। মাইরা বক্স টা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বেডের উপর উঠে বসে। ইরফানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারলো লোকটা ঘুমিয়েছে। মাইরা তার জ্ঞানে যেটুকু পারল, তুলো দিয়ে বুক, পেট, হাতে তুলো দিয়ে মুছে মলম লাগিয়ে দিল। ইরফানের মুখের দিকে তাকালে দেখে ইরফানের কপালে বিরক্তির ভাঁজ। তবে ঘুম ভাঙেনি। মাইরা এগিয়ে গিয়ে ইরফানের পায়ের প্যান্ট টেনে তুলল। ইরফান নড়েচড়ে ওঠে। ঘুমের ঘোড়ে বিরক্তিতে বিড়বিড় করে,

“স্টুপিট জ্বালিয়ো না।”
মাইরা একটু থেমে ছোট একটা টর্চ লাইট পেয়ে পায়ের দিকে ধরলে মেয়েটা ভয়ে ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। জায়গায় জায়গায় কেমন জখম হয়ে আছে। ক্ষ’ত গুলো খুব বেশি গভীর না হলেও কেমন র’ক্ত জমাট বেঁধে আছে।।মাইরার খুবই খা’রা’প লাগলো। সে আলতো হাতে সবখানে মলম লাগিয়ে দেয়। বিরক্ত ও হয় এই লোকটার এতো কেয়ারলেসে। মলম লাগানো শেষ হলে ইরফানের মাথার কাছে বসে ইরফানের মুখের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে। যদিও মুখের আদল অতটাও স্পষ্ট নয় ঝাপসা আলোয়, তবে যেটুকু দেখা যায় তাতেই চেয়ে রইল। হাসি ফুটে উঠল ঠোঁটের কোণে।

মাইরা ইরফানের ঘর থেকে বেরিয়ে ইনায়ার ঘরে গিয়েছে। সবাই ছাদ থেকে নেমে এসে সে ঘরেই গিয়েছে। মাইরা মূলত আজ ইরফান ঘুমানোর পর ইরফানের দরজা কিভাবে যেন খুলতে সফল হয়েছে। মেয়েটা তো খুশিতে এক প্রকার লাফিয়ে ইনায়ার ঘরে আসে। তার মাথায় একটা দারুণ বুদ্ধি এসেছে। ভেবেই হাসি পাচ্ছে। ইনায়ার ঘরে যাওয়ার আগে তার ফোন নিতে ভুলেনি। ইনায়ার ঘরে মিশকা, রিয়া, তামান্না বসে গল্প করছিল। মাইরা এক দৌড়ে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“আপুরা আমি এসেছি।”
মাইরাকে দেখে সবাই হাসতে হাসতে বলে,
“বর ছাড়লো তবে?”
মাইরা ল’জ্জা পেয়ে বলে,
“উনি ঘুমিয়েছে। পালিয়ে এসেছি। এসব বাদ দাও। আমার মাথায় দারুণ একটা বুদ্ধি এসেছে।”
সবাই একসাথে বলে ওঠে, “কি?”
মাইরা সবাইকে বললে সকলে হাসতে হাসতে বলে,
“তোমার মাথায় এসব বুদ্ধি আসে কিভাবে ভাবি?”
মাইরা ইনায়ার দিকে আঙুল তাক করে বলে,
“আপু তুমি রাজি? বর তো তোমার। তুমি রাজি না হলে সব ভেস্তে যাবে।”
ইনায়া হেসে বলল,

“১০০% রাজি। শুরু কর।”
কারো ফোনে টাকা না থাকায় মাইরা তার ফোনে টাকা ধার নেয়। এরপর ইনায়ার ফোন থেকে ফাইজের নাম্বার নিয়ে মাইরার ফোনে কল দেয়। সবাই মিটিমিটি হাসছে। মাইরা গলা পরিষ্কার করে ফোন কানে ধরে করার অপেক্ষায়। ফার্স্ট বার রিসিভ না হলে সকলে হতাশ হয়। এরপর আবারও কল দেয় মাইরা। সেকেন্ড বার কল রিসিভ হয়। মাইরা মুখ চেপে হাসি আটকায়। এরপর স্বাভাবিক হয়ে বলে,
“হ্যালো জান।”
ওপাশে ফাইজ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল। আগামীকাল বিয়ে, ইনায়া তাকে ব্লক করে রেখেছে। এক বিয়ের এক্সাইটমেন্ট, আরেক ইনায়ার এমন বিহেভিয়ার এ বেচারার একদম করুণ অবস্থা। শুদ্ধ ফাইজের পাশেই দাঁড়িয়ে। সে আজ ফাইজের সাথেই থাকছে। বন্ধু হয়ে ভাইয়ের প্রক্সি দিচ্ছে। বরযাত্রী হয়ে যাবে বলে।
এদিকে ফাইজ কানে ফোন নিয়ে তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। ওপাশ থেকে মাইরা আবারও বলে,
“হ্যালো জান, প্রাণ কথা বলছো না কেন?”

ফাইজ খুকখুক করে কেশে ওঠে। ওপাশে মাইরার পাশে একেকটা বিছানায় বসে মুখ চেপে হাসছে। শুদ্ধ পাশ থেকে বলে,
“কথা না বলে এমন কাশছিস কেন?”
কথাটা বলে ফাইজের থেকে ফোন নিয়ে লাউডে দেয়।
মাইরা আবারও বলে,
“জান প্লিজ কথা বলো। তুমি আমাকে কিভাবে ভুলে যেতে পারো? তুমি কি করে অন্যকাউকে বিয়ে করে নিচ্ছ জান? আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। জান প্লিজ তুমি আমাকে বিয়ে কর। ওসব ইনায়া ফিনায়াকে আউট করে দাও।”
শুদ্ধ নিজেও কেশে উঠল মাইরার কথা শুনে। নাম্বার টা চেক করে ভ্রু কোঁচকালো। পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো। গলা শুনেই তার চেনা চেনা লেগেছে। নাম্বার দেখে সিওর হলো এটা মাইরা। কি বিচ্ছু ভাবা যায়? শব্দ করে বলে ওঠে, “ওহ মাই গড!”
ফাইজ বলে ওঠে, “কি?”
শুদ্ধ বলতে গিয়েও থেমে যায়। পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে তার। নিজেকে সামলালো। মাইরার সঙ্গ দেয়াই যায় একটু। অতঃপর বলে উঠল,

“তোর সত্যিই এক্স ছিল ফাইজ? ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! আমার বোনটাকে এভাবে ঠকাতে পারলি?”
ফাইজ হা করে চেয়ে আছে শুদ্ধর দিকে। রে’গে বলে,
“আরে তুই কার কথা বিলিভ করছিস? একে আমি চিনি না।”
শুদ্ধ ফাইজের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে রুমের ভেতর যেতে যেতে বলে,
“এসব কি হচ্ছে। আমার বোনটার কপাল পুড়লো।”
কথাটা বলে ঘরে গিয়ে ফিক করে হেসে দেয় শুদ্ধ। ওরে আল্লাহ! এই মাইরা একখান জিনিস!
ওপাশ থেকে মাইরা আবারও বলে,

“হ্যালো জান, তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না জান। তোমার কণ্ঠ না শুনলে আমি কানে কম শুনি জান। তুমি অন্যকাউকে বিয়ে করছ ভেবে আমি খেতে পারছি না। হ্যালো প্রাণ!”
ফাইজ রাগে চিৎকার করে বলে,
“কোন বেয়া’দম ছেমড়ি রে! একবার সামনে পাই। কান ফাটিয়ে বয়রা করে দিলে বুঝবি, সত্যি সত্যি কানে না শুনলে কেমন লাগে!”
বলেই খট করে কল কেটে দিল ফাইজ। রাগে শরীর কাঁপছে। এমনিই ইনায়া তার ব্লক খুলছে না শুদ্ধ ব্রিটিশের জন্য। এর মধ্যে আরেক ব্রিটিশ হাজির!
ওপাশ থেকে মাইরা তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। তাকে এভাবে অপমান করল? সবাই হাসছে। একজন আরেকজনের গায়ের উপর ঢলে পড়ছে। মাইরা রেগে বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৫

“ইনায়া আপু তোমার বর আমায় অপমান করল।”
ইনায়া হাসতে হাসতে বলে,
“উফ মাইরা! তোমার এক্টিং যাস্ট ফাটাফাটি!”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৭