প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৫ (৩)

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৫ (৩)
Drm Shohag

ইরফান দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। বারবার ঢোক গিলছে। চোখজোড়ায় অসহায়ত্ব। সে তো বিকাল থেকে একবারও ফোন খুলে দেখেনি, একবার ফোন চেক করলে জানতে পারতো তার বাবা মাইরাকে আনবে না। কথাটা ভাবতেই রাগে চলন্ত গাড়ির স্টিয়ারিং-এ একটা থাপ্পড় মারে।
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মাইরাকে খোঁজে। গাড়ির স্পিড বাড়ায়। প্রায় অর্ধেক সময়ে মাইরার কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রাস্তা ফাঁকা। ইরফান দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। কলেজ গেইটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কেউ নেই তো। ইরফান ফাঁকা কলেজ মাঠটার দিকে কেমন শূণ্য চোখে তাকিয়ে রইল। চোখ দু’টো অসম্ভব লাল। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল কলেজ গেইটের সামনে। এখানে কি করে থাকবে? এতোক্ষণে কেউ এখানে বসে থাকে? ইরফান ঢোক গিলল। একধ্যানে কিছুক্ষণ সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন মাঠটার দিকে চেয়ে থাকে, যেখান দিয়ে আজ সকাল সকাল মাইরা হেঁটে যাচ্ছিল ধীর পায়ে। ইরফান হঠাৎ-ই কেমন করে যেন ডেকে উঠল, ‘বার্ডফ্লাওয়ার?’

ইরফানের ভয়েস খুবই ক্ষীণ ছিল। চোখ দু’টো অসম্ভব লাল। হঠাৎ-ই রাগে কলেজের গেইটে একটা লাথি বসায়। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে খোঁজে মাইরাকে।
রাস্তায় একেবারে মানুষ নেই এমন নয়। টুকটাক লোকজনের যাতায়াত আছে। একজন লোক এগিয়ে আসে। তিনি ইরফানকে কলেজ গেইটে লাথি দিতে দেখেই মূলত এগিয়ে এসেছে। ইরফান গাড়িতে ওঠার জন্য এগিয়ে যায়। লোকটি ইরফানকে দেখল। দেখে তো ভদ্রই লাগে। আচরণ কেমন পা’গ’লদের মতন লাগলো। পিছু ডেকে বলে,
“এই যে ভাই, কোনো প্রবলেম?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইরফান দ্রুত পিছু ফিরে তাকায়। এগিয়ে এসে অশান্ত কণ্ঠে বলে,
“ও কোথায়?”
লোকটি অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। বিব্রতবোধ করে বলে,
“কে?”
ইরফান হঠাৎ-ই লোকটির দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“বাসা কোথায়?”
লোকটি থতমত খেয়ে যায়। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ইরফানকে স্পষ্ট না দেখা গেলেও মোটামুটি বুঝতে পারলো ইরফানের মুখাবয়ব। ইরফান লোকটিকে চুপ থাকে দেখে লোকটির কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“অ্যান্সার মি, ড্যাম ইট।”
লোকটি ইরফানের ভারী গলায় ভীষণ ভয় পায়। যেভাবে জেরা করছে মনে হচ্ছে সন্ত্রাস নয়তো আইনের লোক। লোকটি ভীত স্বরে আঙুল দিয়ে দেখালো দুটো বাসা পরেই তার বাসা। ইরফান লেকটিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“যদি ওকে না পাই, আজকেই তোর শেষ রাত।”
কথাটা বলেই গটগট পায়ে তার গাড়িতে উঠে পড়ে। লোকটি যেমন অদ্ভুদচোখে তাকিয়ে দেখল ইরফানকে, তেমনি ভয় পেল। তার আজ শেষ রাত মানে? বাসায় যাওয়া প্রয়োজন। হাতের সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে একপ্রকার দৌড় লাগালো। বাসার গেইটে আজ ১০ টা তালা লাগাবে। দরকার পড়লে খাটের তলায় গিয়ে থাকবে। কোনো সন্ত্রাসকে জায়গা দিবে না সে তার বাড়ি।

কলেজে মাইরা ফোন নিয়ে যায় না। আর এইটাই মাইরার সবচেয়ে প্রবলেম হয়েছে বোধয়। ফোন না আনার কারণে কাউকে কল করতে পারেনি। সবার নাম্বার ফোনে সেভ আছে। কারে নাম্বার-ই তো মুখস্থ নেই। আর এ কারণেই সে কাউকে কল করে জানাতে পারেনি সে তার এক মেডাম এর বাসায় এসেছে। বাবা এসে যেন নিয়ে যায়। অন্তরা ম্যাম নিজেই রেখে আসতো। কিন্তুু তার কি যেন কাজ পড়ে গিয়েছে। তাকে বাসায় রেখে দ্রুত বেরিয়ে যায়। মাইরাকে বলে গিয়েছে উনি এসে মাইরাকে মাইরার বাড়ি রেখে আসবে। মাইরার বাড়ি এখানে থেকে বেশ অনেকটা দূর। তাই অন্তরা তার কাজ ফেলে মাইরাকে পৌঁছে দিতে পারেনি। তার কাজ শেষ করে মাইরাকে পৌঁছে দিবে বলে বেরিয়ে গিয়েছে।

মাইরা আশেপাশে তাকালো। এই বাড়িতে তেমন কাউকে দেখল না। একজন আধবয়স্ক মহিলা দেখল, যাকে কাজের মহিলা মনে হলো। আর একজন বয়স্ক লোক ছিল। একবার বাইরে বেরিয়েছিল। মাইরার চিন্তা হয়। অনেক রাত হয়েছে তো। আর কখন বাড়ি যাবে? বাবা টেনশন করছে নিশ্চয়ই। সে জানাতেও পারছে না। ইরফানের কথা মাথায় আসলে মুখটা মলিন হয়ে যায়। মনের কোণে প্রশ্ন উঁকি দেয়, উনি কি তাকে নিয়ে টেনশন করবে? তাকে নিয়ে যে এখন খুব কম ভাবে লোকটা।
ভাবনার মাঝেই অন্তরা গেস্ট রুমে প্রবেশ করে। মাইরা অন্তরাকে দেখে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে অশান্ত কণ্ঠে বলে,
“ম্যাম আপনি কি আমাকে এখন রেখে আসতে পারবেন?”
অন্তরা বাইরে থেকে এসে চেঞ্জ করেনি। মাইরাকে রেখে এসে একবারে চেঞ্জ করবে। মৃদুস্বরে বলে,
“এসো। হাঁটতে পারছো এখন?”
মাইরা মাথা নেড়ে বলে,
“জ্বি ম্যাম।”

অন্তরা মাইরাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। মাইরা এগিয়ে গিয়ে রাস্তার একপাশে সাইড করক রাখা গাড়ির পাশে দাঁড়ায়। অন্তরা তার বাসার কাজের মহিলার সাথে টুকটাক কথা বলছে।
মাইরা এদিক-ওদিক তাকায়। হঠাৎ-ই তার উপর যেন কেউ ঝাঁপিয়ে পড়লো। মাইরা মৃদু চেঁচিয়ে ওঠে। তার হৃদপিণ্ড লাফিয়ে ওঠে। ইরফান শক্ত করে মাইরাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। তার বডিতে যত শক্তি ছিল সব ঢেলে দিয়ে যেন মাইরাকে তার সাথে চেপে ধরার অদম্য চেষ্টায় নামলো।
মাইরার দম আটকে আসে। মেয়েটা এক চুল পরিমাণ নড়তে পারে না। প্রথমে ভয় পেলেও কয়েক সেকেন্ডেই বুঝেছে এটা ইরফান। ইরফানের শরীরে থাকা পারফিউম এর স্মেল মাইরা চিনতে ভুল করবে কি করে? কিন্তুু মেয়েটা নড়তে না পেরে ভেতরে ভেতরে হাসফাস করে। কাঁপা কণ্ঠে থেমে থেমে বলে,
“ছাড়ুন আমায়।”

ইরফান বোধয় শুনতেই পেল না মাইরার কথা। হাতের বাঁধন আরও শক্ত করল। মাইরার মনে হচ্ছে হাড়গোড় সব ভেঙে যাবে, হাঁপানো কণ্ঠে বলে, “আমায় ছাড়ুন। হায় আল্লাহ!”
ইরফান থেমে থেমে বলে,
“কোথায় ছিলে তুমি? আমি অনেক খুঁজেছি তোমায়।”
মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফানের গলা ভীষণ অদ্ভুদ লাগলো। সবচেয়ে বড় কথা ইরফানের মুখে এরকম কথা আশা করা যায়! ইরফান মাইরাকে আরও নিজের দিকে টানলো। মাইরার মনে হচ্ছে সে ওই কার্টুনের মোটু পাতলুর মতো চ্যাটকা লেগে যাবে নিশ্চিত।
কিছুকক্ষণ পর ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দু’হাতের মাঝে মাইরার দু’গাল আগলে নিয়ে মাইরার মুখের দিকে তাকায়। অশান্ত কণ্ঠে বলে,
“কোথায় ছিলে তুমি? আর ইউ ওকে? কেউ কিছু করেছে তোমায়? অ্যা’ম হেয়ার, টেল মি! ব্য’থা পেয়েছ কোথাও?”
কথাগুলো বলতে বলতে মাইরার দু’হাত উল্টেপাল্টে দেখে। এরপর মাইরার দু’গালে হাত রেখে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“টেল মি। আর ইউ ওকে?

মাইরা ইরফানের দিকে বিস্ময় ভরা চাহনিতে তাকায়। ইরফানের চোখ দু’টো দেখে মাইরার নিজেরই চোখ জ্বলে উঠল। ইরফানের দু’চোখে যেন র’ক্ত জমাট বেঁধেছে। মাইরা কিছু বলার আগেই ইরফান আবারও দু’হাতে মাইরাকে শক্ত করে তার সাথে জড়িয়ে ধরে। মাইরা বাকহারা হয়ে রইল।
অন্তরা তার কাজের মহিলাকে বিদায় দিয়ে তার গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। কয়েক পা এগোলেই তার পা থমকে যায়। ইরফানের একদম মুখের উপর রোড লাইটের তীব্র আলো আঁচড়ে পড়েছে, ফলস্বরূপ ইরফানকে স্পষ্ট দেখতে পেল অন্তরা। ইরফানের চোখ বন্ধ। অন্তরা চোখ নামিয়ে দেখল মাইরা তার দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে। তার শরীর কাঁপছে। অস্ফুটস্বরে আওড়ায়, ‘ইরফান?’

ইরফান চোখ মেলে মাইরাকে ছাড়তে নিয়েও ছাড়লো না। দৃষ্টি তার সামনে। ভীষণ পরিচিত ঠেকল মেয়েটাকে। রাস্তার অপর পাশের রোড লাইটের আলো অন্তরার দিকে থাকায় ইরফানের অন্তরাকে চিনতে একটুও কষ্ট হলো না। ভ্রু কুঁচকে সেকেন্ড কয়েক অন্তরার পানে চেয়ে থাকে। কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফুটে ওঠে।
অন্তরা নিজেকে সামলে নিল। এবার পালালো না। এগিয়ে এসে বিস্ময় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“ইরফান তুমি এখানে? মাইরা তোমার কে হয়?”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। তার ম্যাম ইরফানকে চিনে? ইরফানের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়, কিন্তুু ইরফান ছাড়লো না মাইরাকে। ভ্রু কুঁচকে অন্তরার দিকে চেয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“You are a very annoying girl.”

অন্তরা ইরফানের কথায় অবাক হলো না। বরং মৃদু হাসলো। তবে চোখ দু’টো খুব ভালো করে মুছে নিল। তবুও বারবার ভিজে যাচ্ছে। অপরাধী চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফানের চোখেমুখে রাগ ফুটে ওঠে।
অন্তরা মাইরার পিঠ এর দিকে তাকালো, যেখানে ইরফানের শক্ত একজোড়া হাতের অবস্থান। শুদ্ধ বলেছিল, ইরফান বাচ্চা মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে, সেটাও ইরফানের ইচ্ছের বিরুদ্ধে। সেটা কি তবে মাইরা? নাকি মাইরা ইরফানের কোনো বোন? কিন্তুু বোনকে কেউ এভাবে জড়িয়ে ধরে? ইরফান তো বউকে জড়িয়ে ধরার মানুষও নয়। সবচেয়ে বড় কথা মাইরার মতো মানুষকে ইরফান দু’চোখে সহ্যই করতে পারে না। সেখানে এই দৃশ্য টা অন্তরাকে কেমন গোলকধাঁধায় ফেলল যেন।
অন্তরা আবারও কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলে তার আগেই ইরফান সময় নষ্ট না করে মাইরাকে ছেড়ে দ্রুত মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“কি করছেন?”

মেয়েটা তার ম্যামের সামনে এমন সিচুয়েশনে পড়ে ভীষণ লজ্জায় পড়েছে।
ইরফান মাইরাকে নিয়ে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে তার গাড়ির ড্রাইভিং সিটে আগে সে বসে। এরপর তার কোলে মাইরাকে বসিয়ে দেয়। এরপর শব্দ করে গাড়ির দরজা লাগায়। মাইরা পিটপিট করে চেয়ে থাকে ইরফানের দিকে। মেয়েটা বোঝার চেষ্টায়, ইরফান কি করছে।
ইরফান বা হাতে মাইরার কোমড় জড়িয়ে ধরে, ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার মুখে লেগে থাকা ঘাম মুছে দেয় যত্নের সহিত। মাইরার মাথার হিজাব খুব সাবধানে খুলে মাথা থেকে নামিয়ে দেয়। গাড়ির গ্লাস তুলে দিয়ে এসি ছেড়ে দেয়।
সব কাজ শেষে মাইরার মুখের দিকে তাকায়। মাইরা ইরফানের দিকেই চেয়ে আছে। দু’জনের চোখাচোখি হয়। ইরফান শক্ত কণ্ঠে বলে,
“এখানে কিভাবে আসলে?”
মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফানের চোখ দেখেই তার ভয় লাগছে। মাইরা কিছু বলার আগেই ইরফান মাইরাকে তার কোল থেকে নামিয়ে সিটে বসিয়ে দেয়। এরপর সে বাইরে বেরিয়ে গাড়ির দরজা লাগাতে নিলে মাইরা দ্রুত বলে ওঠে,

“কোথায় যাচ্ছেন?”
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলে,
“আসছি, ওয়েট।”
এরপর শব্দ করে গাড়ির ডোর আটকে দেয়। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান গটগট পায়ে অন্তরার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অন্তরা ইরফানকে দেখেই চোখ মুছে নিল। লাভের লাভ কিছুই হয় না, বারবার চোখ ভিজে যায় শুধু। নিজেকে সামলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ও কি তোমার বোন?”
অন্তরার কথা শেষ হতে না হতেই ইরফান রাগান্বিত স্বরে বলে,
“বউ। বউ হয় আমার। নট বোন। তুমি ওকে এখানে নিয়ে এসেছ, বাট হোয়াই?”
অন্তরা অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফানের কথা বলার ভঙ্গিমায় অন্তরা মেয়েটা ভীষণ অবাক হলো। এভাবে বউ বলে স্বীকার করে নিল? তার মানে ইরফান কি মেয়েটাকে বউ মানে? তার ভীষণ কষ্ট হলো। দমবন্ধ লাগলো। ভেজা চোখজোড়ায় আবারও নতুন জলকণার আবির্ভাব হলো।
অন্তরার চোখের পর্দায় সেদিনের ঘটনা ভেসে ওঠে, যেদিন অন্তরা খুব শখ করে তার ভালোবাসার কথা ইরফানকে বলতে গিয়েছিল। ইরফান মাঠের এক কোণায় বেঞ্চে বসেছিল। সবাই অনেক কথাই বলছিল, তবে ইরফান কেউ কিছু আস্ক করলে হু হা উত্তর করছিল, নয়তো ফোনে মগ্ন ছিল। অন্তরা ইরফানকে গিয়ে একটু সাইডে ডাকে। ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলেছিল,

“এখানেই বলো। অর আউট।”
অন্তরা অসহায় চোখে তাকায়। ইরফান এমন কেন? ভীষণ কাঠখোট্টা এক মানুষ। ইরফানের বিহেভিয়ার তাদের ফ্রেন্ডসার্কেলের সবাই জানতো, তাই কেউ কিছু মনে করত না। অন্তরাও সেইম। ইরফানের বিরক্তি ভরা কণ্ঠ, এভাবে চলে যেতে বলা গায়ে না মেখে ইরফানকে অনেকবার রিকুয়েস্ট করে। শুদ্ধ ফাইজ ওরাও ইরফানকে ঠেলে পাঠায়। ইরফান চরম বিরক্তি নিয়ে একটু দূরে এসে দাঁড়িয়েছিল ঠিকই। তবে মনোযোগ ছিল ফোনে। অন্তরা হতাশ হয়। বুঝল এভাবেই বলতে হবে। অতঃপর গলা ঝেড়ে বলে,
“ইরফান আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে।”
ইরফান ফোনের মাঝে ডুবে। অন্তরার দিকে তাকালো না। গম্ভীর গলায় বলে,
“বলো।”

অন্তরার বিরক্ত লাগে। আফসোস হয়, এই ছেলেকে সে কেন ভালোবাসলো। কেমন অদ্ভুদ! কিছু করার নেই। সে ভালোবাসে ইরফানকে। অতঃপর ইরফানের দিকে তাকিয়ে থেমে থেমে বলে,
“ইরফান আমি তোমাকে পছন্দ করি।”
ইরফান কয়েক সেকেন্ড এর জন্য দৃষ্টি ঘোরায়। তবে মাথা উঁচু করল না। ফ্রেন্ডরা একে অপরকে পছন্দ না করলে সেখানে ফ্রেন্ডশিপ হবে কি করে! সেই ভাবনা থেকেই ইরফান আবারও ফোনে মগ্ন হয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“ওকে। অাই লাইক ইউ ঠু।”
অন্তরা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় ইরফানের দিকে। উত্তেজনায় কথা বেরোয় না মুখ থেকে। হঠাৎ-ই শব্দ করে থেমে থেমে বলে ওঠে,
“ইরফান তুমি সত্যিই আমাকে…
মেয়েটা আর বলতেই পারছে না উত্তেজনায়। যা আশা করেনি, তা না চাইতেই পেয়ে যাওয়ার যে ব্যাপার, অন্তরার ঠিক সেই অনুভূতি হচ্ছে। ইরফান অন্তরার অদ্ভুদ কণ্ঠে ফোন থেকে চোখ তুলে তাকায়। অন্তরার দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,

“হোয়াট?”
অন্তরা নিজেকে সামলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি সত্যিই আমাকে পছন্দ কর ইরফান? কবে থেকে পছন্দ কর?”
ইরফান বিরক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে অন্তরার দিকে। এরপর চোখ নামিয়ে আবারও ফোনে দৃষ্টি দেয়। অন্তরা হেসে বলে,
“তুমি আমাকে কবে বিয়ে করবে ইরফান?”
ইরফান বিস্ময় চোখে তাকায় অন্তরার দিকে। রেগে বলে,
“হোয়াট ননসেন্স!”
অন্তরা হেসে বলে,
“তুমিই তো বললে তুমি আমাকে পছন্দ কর। বিয়ে করবে না আমাকে?”
ইরফান বাকহারা হয়ে তাকিয়ে আছে অন্তরার দিকে। মেজাজ তিড়বিড় করে বাড়তে লাগলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“You are my good friend. I like you for that. Nothing else.”

অন্তরার মুখ চুপসে যায়। এতোক্ষণের উৎফুল্লতা সব ফুস হয়ে যায়। মন খারাপ হয়ে যায় অন্তরার। তবে খুব বেশি মন খারাপ হয়নি। সে জানতোই ইরফান এমন কিছু বলবে। ইরফান সামান্য একটা কথা বললেই যা রিয়েকশন দেয়, ইরফানকে মানাতে তার কাঠখড় পোড়াতে হবে খুব, সে জানে। অতঃপর আমতা আমতা করে বলে,
“ইরফান আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। একটু বোঝার চেষ্টা কর।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে উল্টে ঘুরে জায়গাটা প্রস্থান করতে এগোতে নিলে অন্তরা তার দু’হাতে ইরফানেরর হাত টেনে ধরে। ইরফান অন্তরার দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“হাত ছাড়ো।”

অন্তরা ছাড়লো না। ইরফান তো একটু আধটু এমন বলবেই। তাই বলে কি সে ছেড়ে দিবে?
তাদের ফ্রেন্ডসার্কেলে তিনজন মেয়ে ফ্রেন্ড আছে। তবে কেউ কখনো মজা করেও ইরফানকে টাচ করার সাহস পায়নি। অথচ আজ অন্তরা ভালোবাসার তাগিদে সব ভুলে অসাধ্য সাধন করতে নেমেছে যেন।
ইরফান তার হাতের দিকে একবার তাকালো। যে হাত অন্তরা ধরে আছে।।রাগে চোখ দু’টো যেন জ্বলে উঠল। অন্তরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
“ইরফান প্লিজ আমাকে বিয়ে কর। আমি তোমাকে…
কথাটা আর শেষ করতে পারেনি অন্তরা। ইরফান ঝাড়া মেরে তার হাত সরিয়ে নিয়ে রাগে অন্তরার গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। অন্তরা কয়েক পা পিছিয়ে যায়। বিস্ময় দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে তাকায়। কিছুটা দূরেই শুদ্ধ, ফাইজ সহ তাদের সব ফ্রেন্ডরা বসা ছিল। অন্তরাকে ইরফানের হাতে থাপ্পড় খেতে দেখে তারা অবাক হয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে। শুদ্ধ ইরফানের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

“ইরফান কি হয়েছে? ওকে মারলি কেন?”
ইরফান অন্তরার দিকে জ্বলন্ত চোখে চেয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে,
“আর একবার আমার সামনে একে দেখলে, আনলিমিটেড থাপ্পড় দিয়ে বে’য়া’দ’বি ছাড়িয়ে দিব।”
ইরফানের কথায় সবাই বিস্ময় দৃষ্টিতে একবার ইরফানের দিকে তাকায়, আরেকবার অন্তরার দিকে তাকায়। অন্তরা চোখ বুজে নেয়। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। শুদ্ধ কিছু বলতে চাইলে তার আগেই ইরফান গটগট পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে।
এরপর প্রায় এক সপ্তাহ অন্তরা আর ভার্সিটি আসেনি। ইরফান একদমই নির্লিপ্ত ছিল যেন কিছুই হয়নি। এক সপ্তাহ পর অন্তরা ভার্সিটি এসে ইরফানের সামনে দাঁড়ায়। ইরফান অন্তরার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অন্তরা ভেজা চোখে কান্নামাখা গলায় বলে,
“ইরফান, আমি তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না। তুমি তো কাউকে পছন্দ কর না। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

“But I have no feelings for you.”
অন্তরা হঠাৎ-ই কান্নামাখা গলায় তেজি কণ্ঠে বলে,
“কেন নেই ফিলিংস? আমি তোমার জন্য এতো কাঁদছি, তবুও তোমার একটুও মায়া হয়না? কি করলে ফিলিংস আসবে? ছেলেরা তো দেহের পা’গ’ল হয়। তোমার লাগলে বলো, এক্ষুনি দিয়ে দিচ্ছি। তবুও আমায় মেনে না…..”
ইরফান এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় না করে অন্তরার গালে শক্তপোক্ত এক থাপ্পড় মেরে দেয়। অন্তরা নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়।
ইরফান জ্বলন্ত চোখে অন্তরার দিকে তাকিয়ে রাগে চিৎকার করে বলে,
“তোদের মতো মেয়েদের উপর ইরফান নেওয়াজ থুতু ফেলতেও হাজার বার ভাবে।”
শুদ্ধ দূর থেকে ইরফানকে এতো রাগতে দেখে একপ্রকার দৌড়ে এসে বলে,
“ইরফান কি হয়েছে? অন্তরা কি হয়েছে?”
ইরফান অন্তরার দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“She is a naughty girl.”
কথাটা বলে এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না। উল্টো ঘুরে যেতে যেতে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“এইসব ফালতু ইমোশন নিয়ে আর একবার আমার সামনে আসলে এর ফল ভালো হবে না।”
শুদ্ধ বিস্ময় চোখে ইরফানের প্রস্থান দেখল।
সেদিন অন্তরা শুদ্ধর কাছে বসে অনেক কেঁদেছিল, সে ইরফানকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না, শুদ্ধ যেন তার ভাইকে বোঝায়।
শুদ্ধ প্রথম প্রথম অন্তরার অবস্থা দেখে ইরফানকে বোঝানোর ট্রাই করেছে। উল্টে সেও দু’চারটে থাপ্পড় খেয়ে ফিরে এসেছে। বুঝে গিয়েছে এসব সম্ভব নয়। উপায় না পেয়ে তারা সব ফ্রেন্ড রা অন্তরাকেই মুভ অন করানোর ট্রাই করে, বেচারি চুপচাপ শুনতো। দিন শেষে যেই লাউ সেই কদু হয়ে অন্তরা এখনো সিঙ্গেল।

ইরফানের কথায় অন্তরার ধ্যান ভাঙে। ইরফান ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“যদি আমার ওয়াইফ এর গায়ে একটা আঁচড়ও লাগে তোমার দ্বারা। আই সোয়ার, দুনিয়াতেই তোমাকে মিনি জা’হা’ন্না’ম থেকে ঘুরিয়ে আনবো।”
অন্তরা কেঁপে ওঠে ইরফানের কথায়। সাথে বিস্ময় চোখে তাকায়। ইরফান কথাটা কেন বললো সে বুঝেছে। ভার্সিটিতে একটা মেয়ে ইরফানের সাথে টুকটাক কথা বলতো। অন্তরা ভেবেছিল ইরফান সে মেয়েকে পছন্দ করে বলে তাকে মানছে না। এজন্য সে সেই মেয়েটাকে অনেক বাজে কথা শুনিয়েছিল, সাথে থাপ্পড়ও মে’রে’ছিল। এই কথা ইরফানের কানে গিয়েছিল তবে ইরফান এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত ছিল। কিন্তুু আজ ইরফান সেই সেইম কাজ মাইরার ক্ষেত্রে অন্তরার প্রতি এমন মনোভাব থেকে এই কথাটা বললো। অন্তরা সেই কাজের জন্য আবারও যেমনি অনুতপ্ত হলো, তেমনি মাইরার প্রতি ইরফানের এতোটা কনসার্ন দেখে ভীষণ অবাক হলো। ঢোক গিলে বলে,
“তোমার ওয়াইফকে আমি হেল্প করেছি। ক্ষ’তি করিনি।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,

“I don’t believe you.”
অন্তরার খারাপ লাগলো। ইরফানের চোখ অসম্ভব লাল দেখে অন্তরা চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“তুমি কি অসুস্থ ইরফান? এখানেই আমার বাসা। তুমি চাইলে রেস্ট নিতে পারো।”
ইরফানের চোখ জ্বলে উঠল যেন। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“নো নিড।”
অন্তরা মাথা নিচু করে নিল। খুব বুঝলো ইরফানের প্রতি সে কনসার্ন দেখিয়েছে বলে ইরফান আরও এক ধাপ রেগে গিয়েছে। অন্তরার ভীষণ খারাপ লাগে। সে তো ইরফানকে বলেনি তাকে ভালোবাসুক। সে যদি ভুল করেও তার অনুভূতি প্রকাশ করে ফেলে, ইরফান প্রচণ্ড রেগে যায়।
ইরফান দু’হাত হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে দাঁড়ালো। অন্তরার দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“ভার্সিটি গিয়েছিলে আজ, হিসাব অনুযায়ী তোমার থাপ্পড় পাওনা ছিল, বাট ডিসিশন চেঞ্জ করলাম। থাপ্পড় হোক বা আদর সবকিছুর অধিকার যাস্ট আমার ওয়াইফ এর।”
অন্তরার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। ইরফান একটু থেমে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,

“ইউ নো? হু অ্যা’ম আই?”
অন্তরা প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান কিছু একটা ভেবে ঘাড় বাঁকিয়ে তার গাড়ির দিকে তাকালে দেখল মাইরা গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তাদের দিকে। ইরফান বিরক্ত হলো। একে গাড়িতে বসিয়ে রেখে এসেছে, এই স্টুপিট গার্ল বেরিয়ে এসেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে অন্তরার দিকে চেয়ে চোখের ইশারায় মাইরাকে দেখিয়ে বলে,
“অ্যা’ম হার পার্সোনাল প্রোপার্টি।”
অন্তরা অবাকের উপর অবাক হয়। মাইরার দিকে তাকায় অন্তরা। মেয়েটা চোখে পরার মতো সুন্দর। কিন্তুু ইরফানের কাছে এসব ম্যাটার করে না অন্তরা জানে। অন্তরার তবুও ইচ্ছে করল ইরফানকে অপমান করতে দু’টো কথা শোনাতে। তার আগেই ইরফান শক্ত কণ্ঠে বলে,
“আমার পার্সোনাল প্রোপার্টি অর আমার ওয়াইফ এর পার্সোনাল প্রোপার্টি,, যেখানেই কেউ নজর দিবে, তার চোখ দু’টো তুলতে আমি যাস্ট একবারও ভাববো না।”
অন্তরা চোখ বুজে নেয়। ইরফানের দিকে নজর দেয়ায়, তাকে হুঁশিয়ার করছে। অন্তরার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, আমার মন দিয়ে আমি যাকে ইচ্ছা ভালোবাসবো, তুমি চোখ তুলে নেয়ার কে? কিন্তুু মুখ দিয়ে কথাগুলো বের করতে পারে না। উল্টো নিজেকে সামলে বলে,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি না ইরফান।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,

“গুড।”
কথাটা বলে ইরফান উল্টো ঘুরে যেতে নিলে অন্তরা বলে ওঠে,
“মাইরা তোমার অপজিট ক্যারেক্টারের। মাইরার মতো মেয়েকে তুমি ভীষণ অপছন্দ কর। আমি ঠিক বললাম তো ইরফান?”
ইরফানের পা থেমে যায়। রাস্তার অপজিটে দাঁড়ানো মাইরার পানে তাকায়। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মাইরা বোকা বোকা কৌতুহলী চোখজোড়া খুব সূক্ষ্ম চোখে ইরফান পরোখ করে। হলদেটে আলোর কিছুটা মাইরার বাম গাল দখল করে নিয়েছে। ইরফান মাইরার মুখপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে সূক্ষ্ম হেসে উত্তর দেয়,
“You are right. I don’t like her. But she is my deepest feeling.”

অন্তরার চোখে এতোকক্ষোণের জমানো অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। ইরফানের লাস্ট কথাটা তীরের ন্যায় বুকে বিঁধল। ভার্সিটিতে থাকতে এতো এতো কেঁদেও দিনশেষে অন্তরা শুনেছে, তার প্রতি ইরফানের কোনো অনুভূতি নেই,, সেই একই কথা উল্টে গিয়ে পজিটিভ হয়ে গেল অন্য এক নারীর জন্য। এটাই বুঝি ভাগ্য? সে কি করলে ইরফানকে পেত? সে শান্তশিষ্ট। ইরফান এমন মেয়েকেই পছন্দ করে। আর মাইরা মেয়েটা ভীষণ দূরন্ত, যে ক্যারেক্টার ইরফানের ভীষণ অপছন্দের। কি লাভ পছন্দের তালিকায় থেকে, যদি না হৃদয়ে ঠাই না পাওয়া যায়!
ইরফান কথাটা বলেই গটগট পায়ে মাইরার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মাইরা অভিমানী চোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে। ইরফান কিছু বললো না। দু’হাতের আঁজলায় মাইরার মুখটা নেয়। মাইরাকে ডান দিকে একটু সরিয়ে নিয়ে এসে মাইরার ঠোঁটজোড়ায় ছোট্ট একটা চুমু আঁকে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এটা রাস্তা। মাঝেমাঝে টুকটাক মানুষ যাতায়াত করছে। সবচেয়ে বড় কথা এখানে মাইরার ম্যাম দাঁড়িয়ে আছে। মাইরার ল’জ্জায় মাথা কেটে ফেলতে ইচ্ছে করল।

অন্তরা ইরফানের এমন কান্ড দেখে চোখ সরিয়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়ায়। সেখানে আর দাঁড়ালো না। খুব ভালোই বুঝল, সে মাইরাকে ইরফানের অপছন্দের তালিকায় রাখার প্রশ্ন তুলেছিল বলে ইরফান মাইরাকে নিয়ে স্বীকারোক্তির পাশাপাশি কাজেও অ্যান্সার দিয়ে দিল।
অন্তরার চোখের বাঁধ ভেঙেছে। দ্রুত পা চালালো তার বাড়ির দিকে। তার ভাগ্য টা এমন না হলেও পারতো!
মাইরা ইরফানের দিকে রেগে তাকায়। অ’স’ভ্য লোক একটা। ইরফান ভাবলেশহীন। বা হাতে মাইরাকে উঁচু করে ধরে গাড়িতে গিয়ে বসে। এবারেও ইরফান মাইরাকে তার কোলে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। মাইরার মনে ভীষণ অভিমান। লোকটা তাকে ইচ্ছে করেই নিতে আসে না কবে থেকে। যদি আসতো! তবে কি এমন হতো!
ইরফান কোল থেকে নেমে পাশের সিটে যেতে চায়। ইরফান মাইরাকে তার সাথে চেপে ধরে গম্ভীর গলায় বলে,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরা মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বলে,
“ছাড়ুন আমায়। আমায় তো ভুলেই গেছেন আপনি। এখন কেন এসেছেন?”
ইরফান মাইরার পিঠ তার বুকে লাগিয়ে বসায়। এরপর মাইরার কাঁধে থুতনি রাখে। দু’হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ণ হেসে মৃদুস্বরে বলে,
“স্টুপিট, বড় হও। নয়তো আরও ভুলে যাবো।”

কথাটা বলে গাড়ির ভেতরের লাইট অফ করে দেয়। বা হাতে মাইরার মাথার উপর থাকা হিজাব নামিয়ে দেয়। ডান পাশের কাঁধ থেকে হিজাব নামিয়ে দেয়। দৃষ্টি সামনে, ডান হাতে স্টিয়ারিং ঘোরায়। এরপর বা হাতে মাইরার পেট বরাবর হাত রেখে ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার গলার ভাঁজে মুখ গুঁজে শব্দ করে একটা চুমু খায়। এরপর দৃষ্টি রাখে রাস্তার পানে। মাইরা কারেন্ট শক খাওয়ার মতো ঝটকা খায়। মেয়েটা বুঝতেই পারেনি। জমে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকে। ইরফান আবারও মাইরার কাঁধে তার থুতনি ঠেকিয়ক দু’হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে মৃদুস্বরে বলে,
“আর কখনো অপরিচিত কারো সাথে একা কোথাও যাবে না। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
মাইরা মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে,
“অন্তরা ম্যামকে আপনি কিভাবে চিনেন?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“ডোন্ট নো।”

মাইরা ঘাড় বাঁকিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনি বলছেন না কেন আমাকে?”
ইরফান গাড়ি সাইড করে। এরপর দু’হাতে মাইরাকে তার দিকে টেনে নিয়ে বলে,
“ফালতু কোয়শ্চন এর অ্যান্সার করি না আমি। কেন গিয়েছিলে ওখানে?”
মাইরা উত্তর করে না। এই লোক তার কোয়শ্চন এর অ্যান্সার দেয় না। সেও দিবে না। মাথা নিচু করে মুখ বাঁকায়। ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কিছু আস্ক করেছি!”
মাইরা মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে অভিমানী কণ্ঠে বলে,
“আপনি আমাকে বলেননি। আমিও বলব না।”
কথাটা বলে ইরফানের কোল থেকে উঠতে চায়। ইরফান মাইরার হাত টেনে গম্ভীর গলায় বলে,
“She was my friend.”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৫ (২)

মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান মাইরার গালে হাত ডুবিয়ে মাইরার ঠোঁটজোড়ায় দৃষ্টি রেখে শীতল কণ্ঠে বলে,
“I want feedback. You know? I am very thirsty.”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৬