প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৬
Drm Shohag
আবছা অন্ধকার-আবছা আলোর সমন্বয়ে ইরফান আর মাইরা একে অপরকে ঝাপসা দেখল। ইরফানের দৃষ্টিতে মাইরা তার লাজুক চোখজোড়া নামিয়ে নেয়। ইরফান সূক্ষ্ম হাসলো। মাইরা নড়াচড়া করল না, বরং ইরফানের সাথে সিটিয়ে গিয়ে দু’হাতে ইরফানের বুকের কাছের শার্ট আঁকড়ে ধরে ইরফানের বুকে ডান গাল ঠেকিয়ে হঠাৎ-ই ফুঁপিয়ে উঠল। ইরফান বিচলিত হয়। মাইরার মাথা উঠাতে চায়। মাইরা মাথা উঠায় না। ইরফান বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? আর ইউ ওকে? ডোন্ট ক্রাই। কিছু করছি না।”
কথাটা বলে ডান হাতে মাইরার গাল স্পর্শ করে। চুলগুলো খুলে গিয়েছে। মাইরা চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। দু’হাতে ইরফানকে জড়িয়ে ধরল। এরপর চোখ বুজল। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে দেখল মাইরাকে। গালের সাথে পানি লেপ্টে রয়েছে। ইরফান ডান হাতে মাইরার ভেজা গাল মুছে দেয়। দ্বিতীয়বার ইরফান হাত বাড়ালে মাইরা বা হাতে ইরফানের হাত ঝাড়া দেয়। ইরফান তব্দা খেয়ে যায়। চোখ নামিয়ে বলে,
“স্টুপিট, কি প্রবলেম?”
মাইরা ইরফানকে ওভাবেই ধরে রাখল। ইরফানের বুক থেকে মাথা উঠালো না। মাথাটা একটুখানি উঁচিয়ে কান্নামাখা গলায় বলে,
“আপনি হার্টলেস। দু’দিন পর পর আমাকে ভুলে যান। পা’ষা’ণ লোক।”
ইরফান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাইরার কথা শুনলো। মাইরার চোখ থেকে আবারও পানি গড়িয়ে পড়ে। মাইরা চোখ বুজে ইরফানের বুকে মুখ গুঁজল। ইরফান মাইরাকে টেনে মাইরাকে তার মুখোমুখি করে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“কান্নার কারণ এটাই?”
মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান তাকে এভোয়েড করে বলে সে কাঁদছে, ইরফান ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে বুঝতে পেরেই মাইরা দ্রুত চোখ খিঁচিয়ে নিয়ে বলে,
“আমি বাড়ি যাবো।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইরফান গম্ভীর মুখে মাইরার মুখপানে চেয়ে রইল খানিক। কানের পিঠ পেরিয়ে মাইরার চুলের ভাঁজে চার আঙুল চালিয়ে ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। বা হাতে মাইরাকে তার দিকে আরেকটু টেনে নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“You are really a stupid girl. That’s why I don’t like you.”
ইরফানের কথাটা শুনেই মাইরা চোখ মেলে তাকায়। ইরফান মাইরার দিকেই চেয়ে। মাইরা ফোঁসফোঁস করতে করতে একদম ইরফানের মতো করে বলে,
“I hate you mr.”
ইরফানের চোয়াল ঝুলে যায়। বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার পানে। মাইরা ইরফানের বুকে মুখ ঠেকিয়ে মিটিমিটি হাসলো ইরফানের রিয়েকশন দেখে। কিন্তুু সে ইরফানকে জড়িয়ে ধরেছে খেয়াল করতেই ভীষণ লজ্জা পেল। ধীরে ধীরে ইরফানকে ছেড়ে মাথা নিচু করেই পাশের সিটে বসতে চায়, এজন্য একটু সরতে নিলেই ইরফান মাইরার ডান হাতে এক টান দিয়ে নিয়ে মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা হতভম্ব। ইরফান মাইরার গলায় তার ডান হাত আলতো হাতে স্লাইড করতে থাকে, বা হাতের মুঠোয় মাইরার দু’হাত আঁকড়ে ধরে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দেয়। মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। ইরফান মাইরার দু’হাত ছেড়ে খোলা চুলগুলো গলার সামনে থেকে সরিয়ে পিছন দিকে নিয়ে রাখে। ডান হাতে মাইরার মুখ উঁচু করে। মাইরা চোখ বুজে নিয়েছে। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসলো বোধয়। দু’হাতে মাইরার পিঠ আগলে নিয়ে মেয়েটার গলার ভাঁজে মুখ নিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে নেয়। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান ওভাবেই ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“স্টুপিট গার্ল, হেইট কে লাভ এ কনভার্ট করে নিব, ডোন্ট ওয়ারি।”
শুদ্ধ খাবার টেবিলে বসে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিল। তৃণা বেগম সামিয়াকে বললেন শুদ্ধকে খাবার বেড়ে দিতে। সামিয়া মাথা নাড়িয়ে বলে,
“তুমি দাও তৃণা আম্মা।”
তৃণা বেগম বিরক্ত হয়ে বলে,
“কি সমস্যা তোর? দু’দিন পর ওর ঘরে গিয়ে বসে থাকবি। এখন দু’মিনিটের জন্য সামনে যেতে পারিস না? যা খেতে দে আমার ছেলেকে। অপেক্ষা করছে। আমার শরীর টা ভালো লাগছে না।”
সামিয়া ঢোক গিলল। মেয়েটা ভীষণ নাজুক স্বভাবের। তৃণা বেগম তার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলেন,
“খাবার দে যা। আর একবার দোনোমনা করলে থাপ্পড় খাবি।”
তৃণা বেগমের শাসনে মেয়েটি চুপসে যায়। আড়চোখে একবার শুদ্ধর দিকে তাকালো। শুদ্ধ হাসতে হাসতে কারো সাথে কথা বলছে। মাথা নিচু তার। তবে একটু পর পর গা দুলিয়ে হাসছে। সামিয়া বেশ কিছুক্ষণ শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রইল। শুদ্ধর কিছু কথা কানে আসে।
“ওই নানা না প্লিজ!”
কথাটা শুনেই সামিয়া ফিক করে হেসে দিল। শুদ্ধ হাসির শব্দ পেয়ে মাথা তুলে তাকায়। সামিয়াকে তার দিকে চেয়ে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিল। এরপর চোখ সরিয়ে আবারও কথা বলায় ব্যস্ত হয়। শুদ্ধ তাকানোর সাথে সাথেই সামিয়া চোখ সরিয়ে নিয়েছিল। মেয়েটি লজ্জা পেয়েছে।
শুদ্ধর কথা বলা শেষ করে গা টানা দিয়ে তার মাকে ডাকলে সামিয়া এগিয়ে এসে বলে,
“আপনার আম্মা আমাকে খাবার দিতে বলেছে। তার শরীর ভালো না।”
শুদ্ধ সামিয়ার দিকে একবার তাকালো। এরপর কিছু না বলেই চেয়ার থেকে উঠে তার মায়ের ঘরে যায়। সামিয়া বোকা চোখে শুদ্ধর প্রস্থান দেখল। তৃণা বেগম ওই কথাটা যে কথার কথা তাকে বলেছিল, যেন সে শুদ্ধকে খেতে দেয়। এটা সামিয়া বুঝেছিল। কিন্তুু মুখ ফসকে শুদ্ধকে বলে দিয়েছে।
শুদ্ধ তার মায়ের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,
“মা কি হয়েছে তোমার?”
তৃণা বেগম ছেলের কণ্ঠে চোখ মেলে তাকায়। ছেলের চিন্তিত মুখখানা দেখে বলেন,
“কিছু হয়নি তো আমার। তোর কি হয়েছে?”
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,
“ওই মেয়েটা যে বললো তুমি অসুস্থ।”
তৃণা বেগম কপাল চাপড়ালেন। এই সামিয়াকে নিয়ে আর পারে না। শুদ্ধর মুখে হাত বুলিয়ে বলে,
“আমার কিছু হয়নি বাবা। ঘুম পেয়েছে আমার। তুই খেয়ে নে। দুপুরেও তো বাইরে কি খাস না খাস।”
শুদ্ধ তার মাকে দেখে বুঝলো, আসলেই তার মা সুস্থ। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ঘরের লাইট নিভিয়ে দরজা ভিড়িয়ে বাইরে চলে গেল।
শুদ্ধ সামিয়ার দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“আমার মায়ের অসুস্থতা নিয়ে মশকরা করছ? আর একদিন এমন দেখলে থাপড়ে বয়রা বানিয়ে দিব বলে দিলাম।”
সামিয়া মাথা নিচু করে রাখে। সে তো মিথ্যে বলেনি। কিন্তুু তৃণা বেগমের বলা কথাটা মিথ্যে জেনেও ভুল করে শুদ্ধকে বলে ফেলেছে। মিনমিন করে বলে,
“জ্বি, দুঃখিত!”
শুদ্ধ নিজে নিজেই টেবিলের উপর রাখা খাবার তার প্লেটে বেড়ে নেয়। সামিয়া এগিয়ে এসে বলে,
“আপনি বসুন। আমি দিচ্ছি।”
শুদ্ধ বিরক্ত হলো। ইদানিং মেয়েটাকে তার আশেপাশে বেশি দেখে, যেটাতে সে খুবই আনইজি ফিল করে। কোনো উত্তরই করল না। সামিয়া এক পাশে দু’হাত একসাথে জমা করে দাঁড়িয়ে রইল। শুদ্ধ তার মতো চুপচাপ খেয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে নিল। এরপর কোনোদিকে না তাকিয়ে তার ঘরের দিকে যেতে নিলে কোনো কিছুর শব্দ পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। পিছু ফিরে দু’পা এগিয়ে আসলে দেখল সামিয়া মাটিতে বসে আছে। শুদ্ধ অদ্ভুদভাবে তাকায়। শব্দ পেয়েছে মানে পড়ে গিয়েছে। এতো বড় মেয়ে পড়লো কেমনে? সামিয়া ওঠার চেষ্টা করছে, বেচারি যেমন লজ্জা পেয়েছে তেমনি কোমড়ে ব্য’থা পেয়েছে।
শুদ্ধ এগিয়ে এগিয়ে গিয়ে কিছু দেখে জিভেয় কা’ম’ড় দিল। সে যখন ফোন কথা বলছিল তখন ধান্দায় কখনো গ্লাস থেকে পানি ফেলছিল, কখনো ছিটিয়ে দিচ্ছিল। বুঝলো এ মেয়ে তার ফেলা পানিতে পিছলা খেয়ে পড়েছে। শুদ্ধর হাসি পেল। নিজেকে না দমিয়ে শব্দ করে হেসে ফেলল। সামিয়া লজ্জায় চোখমুখ খিঁচিয়ে নেয়।
শুদ্ধ একটু পর নিজেকে দমিয়ে নিল। এভাবে হাস ঠিক নয়। কিন্তুু এতো ঠিক ভুল মনে থাকে না-কি! মেয়েটা উঠতে পারছে না দেখে সামিয়াকে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েও দ্রুত হাত সরিয়ে আনলো। আয় হায় করছিল টা কি? তার ফারাহ পাখির সম্পদ অন্য কেউ ছুঁয়ে দিলে তার-ই তো বুক ফাটে। সামিয়া শুদ্ধর হাত বাড়ানো চোখে পড়েছিল, সাথে সাথে গুটিয়ে নিতে দেখে মেয়েটা অবাক হয়ে শুদ্ধর দিকে তাকায়। শুদ্ধ তার মায়ের ঘরের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বলে,
“ওগো আমার সুস্থ মা, বেরিয়ে এসো। তোমার মেহমান পড়ে গিয়েছে। এসো এসো।”
সামিয়া অবাক হয়ে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রইল। শুদ্ধ তার মাকে বেরিয়ে আসতে দেখে তার ঘরের দিকে চলে যায়। তৃণা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে সামিয়াকে মেঝেতে দেখে দ্রুত এগিয়ে গেলেন। শুদ্ধর কানে আসলো মায়ের কথা,
“পড়লি কিভাবে? দেখে চলবি না?”
শুদ্ধ হাসলো। তার মা তে জানে না, তার মহান ছেলের জন্য বেচারি মেহমান ঠাস হয়ে গিয়েছে। ভাবনার মাঝেই শুদ্ধর ফোনে কল আসে। অন্তরার নাম্বার দেখে শুদ্ধ ভ্রু কোঁচকালো। বেশি না ভেবে কল রিসিভ করে। কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে অন্তরা ভাঙা গলায় বলে,
“শুদ্ধ একটু দেখা করতে পারবি?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কোন সুখে? রাত বাজে নয়টা। বাইরে গেলে একমাত্র আমার বউয়ের জন্যই যাবো। নয়তো নেভার।”
অন্তরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ফাইজের বোন তো এক সরল সোজা, কি সুন্দর একটা মেয়ে। তোর মতো বাদরের গলায় ফারাহ মুক্তো টা কেন ঝুলতে চাইছে বুঝলাম না।”
শুদ্ধ ইনোসেন্ট মুখ করে বলে,
“কিহ! ফারাহ মুক্তো! ইম্পসিবল। ও সাক্ষাৎ ডাইনি আমার সেকেন্ড মা। আমায় মারাত্মক জ্বালায়, কই একটু বিয়ের আগে থেকে স্বামীর সেবা করার প্রাকটিস করবে, তা না করে শুধু ডাইনিদের মতো দেমাগ দেখায়। বিয়ে না করতেই জীবন আমার ত্যানাত্যানা, ফ্যানাফ্যানা সব করে দিচ্ছে ইয়ার।”
অন্তরা এতো দুঃখের মাঝেও হেসে ফেলল শুদ্ধর কথায়। অতঃপর বলে,
“ভাই আমি একটু দুঃখ প্রকাশ করতে কল করলাম। তুই আমারে হাসিয়েই মারবি না-কি! তুই সবার জীবন ত্যানাত্যানা করে দিয়ে এসব বলছিস! লাইক সিরিয়াসলি!”
শুদ্ধ নিজেও একটু হাসলো। একটু পরেই মুখটা ইনোসেন্ট বানিয়ে বলে,
“আমি নিষ্পাপ বাচ্চা।”
“হ্যাঁ খুব। এতো নিষ্পাপ বাচ্চা যে পাঁচ বছরের বাচ্চাও তোকে দেখে আফসোস করবে, তারা এতো ছোট হয়েও আমাদের শুদ্ধর মতো নিষ্পাপ হতে পারলো না কেন!”
শুদ্ধ ভোতা মুখ করে রাখলো। অন্তরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“ইরফানের সাথে দেখা হয়েছিল।”
শুদ্ধ সাথে সাথে বলে ওঠে,
“খাইছেরে! কয়টা থাপ্পড় খেলি? আমি যদিও ভার্সিটিতে একটু ট্রাই করলাম তোকে থাপ্পড় খাওয়ানোর। তুই তো পালালি। যাক এখন তো খেয়েছিস। বলছি, ভালো মতো খেতে পেরেছিস তো? পেট ভরেছে?”
অন্তরা বিরক্ত হলো। শুদ্ধ হাসলো। অতঃপর এসব রেখে সিরিয়াস হয়ে বলে,
“কাহিনী বল।”
মাইরাকে নিয়ে বলা ইরফানের কথাগুলো ভেবে অন্তরার চোখজোড়া ভিজে উঠল। তাকে দেখিয়ে ইরফানের মাইরাকে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা চোখে ভাসতেই অন্তরার কেমন দমবন্ধ লাগলো। একটু চুপ থেকে নাক টেনে বলে,
“তোর ভাইয়ের কি একটুও দয়ামায়া নেই শুদ্ধ? এতোদিন ভাবতাম মন-ই নেই। কিন্তুু বউকে নিয়ে যে সিরিয়াস, এখন বুঝলাম মন আছে। কিন্তুু অন্যরা কি মানুষ না? তোর ভাই এতো আয়োজন করে মানুষকে কষ্ট দেয় কেন বল তো?”
শুদ্ধ চুপ করে শুনলো। কোনো উত্তর করল না। এসব তো নতুন নয়। অন্তরা আবারও বলে,
“অামি তো বলছি না তোর ভাইকে, তাকে আমাকেই ভালোবাসতে হবে। আমি কাকে ভালোবাসবো না বাসবো, সেসব তোর ভাই কেন ঠিক করবে?”
শুদ্ধ এবারেও কিছু বললো না। মুখ টা মলিন তার। সে কি করবে? তার হাতে তো কিছু নেই। অন্তরা ডান হাতে চোখের পানি মুছে বলে,
“আমার ওই মাইরাকে ক্ষু’ণ করতে ইচ্ছে করছে শুদ্ধ। আমি এতোদিন ভাবতাম ইরফান হয়তো আমাকে না মানলেও কাউকে ভালোবাসবেনা। এটা ভেবে একটু হলেও শান্তি পেতাম যে ও আমার না হলেও অন্য কারোর ও তো না।
কিন্তুু ও কীভাবে কাউকে নিয়ে এতো ডেস্পারেট হতে পারে? ওকে মাইরাকে নিয়ে এতো ডেস্পারেট হতে দেখে আমার দমবন্ধ লাগছে। মেয়েটা আমার ছোট বোনের চেয়েও অনেক ছোট। কিন্তুুু আমি ওকে সহ্য করতে পারছি না।”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ভার্সিটির কিছু এখানে রিপিট করিস না। তোর সব ইচ্ছে মনেই চেপে রাখ। ইরফান মাইরার ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস। আর ও কেমন সেটা তোকে নতুন করে চেনাতে হবে না আমার।
এসব রেখে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে কড়া ঘুম দে।”
অন্তরার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। নাক টেনে বলে,
“ইরফান যে বলতো আমি ওর ভালো ফ্রেন্ড। সেটাও ভুলে গিয়েছে? বন্ধুত্বের কথা ভেবেও তো আমার সাথে দু’টো ভালো কথা বলা যায়। ভালো নাহয় না বাসলো, বন্ধুত্ব ভেঙে গেলে মানুষের একটু হলেও তো কষ্ট হয়। ইরফানের হয় না। ও এমন কেন?”
শুদ্ধ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। এরপর চাপা শ্বাস ফেলে বলে,
“ও নিজেকে এক্সপ্লেইন করতে পারে না। তোদের মাঝে ঝামেলা হওয়ার পর ওর ডিস্টার্ব থাকার ব্যাপারটা আমি খেয়াল করেছি। ছোট থেকে একসাথে আছি। একটু একটু নিজে থেকে যা বুঝেছি আর কি। ও তো মুখে বলার মানুষ নয়। সব জেনেও এসব বলছিস কেন?”
অন্তরা নিরবে কাঁদলো। এরপর বলে,
“ইরফানকে আমার সাথে বন্ধু হয়ে কথা বলতে বলবি শুদ্ধ? আমি শুধু চাই ও আমার সাথে দু’টো কথা বলুক। আমাকে ক্ষমা করুক।”
শুদ্ধ মৃদুস্বরে বলে,
“বলবো। কান্না থামা মেরি মা। তোর বউমাকে একটু শেখা তো কিভাবে স্বামী সেবা করতে হয়!”
অন্তরা নাক টেনে টেনে বলে,
“বিয়ে কবে করবি?”
শুদ্ধ একটু আনমনা হয়ে বলে,
“মাকে কিভাবে ম্যানেজ করবো, সেটা ভাবছি। বলবো তো অবশ্যই। একটু টাইম নিচ্ছি। প্যারা নাই। মা আমার বহুত বালা। ছেলের পছন্দ ফিরাবে না। কিন্তুু মাকে কষ্ট দিতে একটু ভয় লাগে ইয়ার।”
অন্তরা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“তাহলে ফারাহ কে ভুলে যা।”
শুদ্ধ চেঁচিয়ে ওঠে,
“ইম্পসিবল। মা আর ফারাহ দু’জনেই আমার ঘরে থাকবে। বা’ল! কই একটু সাহস দিবি, তা না, উল্টে বেদ্দব মার্কা কথা বলিস!”
অন্তরা হাসলো। তাদের মাঝে এক খাঁটি প্রেমিক শুদ্ধ। ভার্সিটি লাইফ থেকে জানপ্রাণ দিয়ে একজনকে ভালোবাসে। তাদের ফ্রেন্ডসার্কেলের মাঝে নাছিম আর অন্তরা এই কথা জানতো। ফাইজকে জানায়নি, ফাইজের বোন ফারাহ, এজন্য। শুদ্ধ সবসময় তাকে আর নাছিম কে বলতো, সে মধ্যবিত্ত, তার জন্য ফারাহ নয়।
কিন্তুু যখন শুদ্ধ সেটেল হয়, সে নিজেই ফাইজকে বলেছিল। ইরফানকে বলতে গিয়েছিল। ইরফানের অ্যান্সার ছিল, ‘I know everything.’
শুদ্ধর মাথায় হাত।
শুদ্ধ ইরফানের কথাগুলো ভেবে বিড়বিড় করে,
“শা’লা বর বউ দু’টোই সিসিটিভি।”
ইরফান তার বাবাকে কল করে বলে দিয়েছে মাইরা তার সাথেই আছে। ইরফান মাইরাকে নিয়ে একটা শপিংমলে যায়। মাইরার হাত তার হাতের মুঠোয় রেখে চারপাশে চোখ বুলিয়ে একটা গ্রীণ কালারের জামা চুজ করল। এরপর জামাটি নিয়ে মাইরার সামনে নিয়ে ট্রায়াল রুমে যেতে বলে। মাইরা এসব জায়গায় কখনো আসেনি। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে তার। আমতা আমতা করে বলে,
“আমি বাইরে চেঞ্জ করতে চাই না।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মৃদুস্বরে বলে,
“হোয়াই?”
মাইরা কি বলবে বুঝতে পারে না। মিনমিন করে বলে,
“বাড়ি চলুন।”
ইরফান গলা নামিয়ে বলে,
“ওকে, গাড়িতে এসো। চেঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফানের হাত থেকে জামা কেড়ে নিয়ে দ্রুত ট্রায়াল রুমের দিকে যায়। ইরফান দু’হাত প্যান্টের পকেটে রেখে মাইরার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে। কিছুকক্ষণের মাঝে মাইরা জামাটা গায়ে জড়িয়ে ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
হাঁটুর নিচ পর্যন্ত গ্রীণ কালারের গোল জামা, সেইম কালারের একটা চুড়ি পায়জামা, সাথে ওড়না মাথায় দেয়া। মাইরা ধীর পায়ে এগিয়ে আসে ইরফানের দিকে। মাথা নিচু তার। মাইরার পায়ে কিছুক্ষণ আগে ইরফানের কিনে দেয়া একজোড়া ব্ল্যাক কালার জুতো।
ইরফান মাইরার আলতো পায়ে হেঁটে আসা গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখে। তার মনে হলো মেঝে ব্য’থা পাবে এজন্য মাইরা এতো আলতোভাবে মেঝেতে পা ফেলছে। ব্যাপারটায় বিরক্ত নয় বরং ভালো লাগা কাজ করলো। দৃষ্টি উপরের দিকে তুলে তাকায়। মাথা নিচু করে তার দিকেই এগিয়ে আসছে মেয়েটি। ইরফানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল। বিড়বিড় করল,
“মাই গ্রীণ বার্ড ফ্লাওয়ার।”
কয়েক সেকেন্ড পেরোতেই হঠাৎ-ই ইরফানের ঠোঁটে লেগে থাকা হাসি মিলিয়ে গিয়ে দু’চোখে ক্রোধ জমা হয়। চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় মাইরার থেকে দু’হাত দূরত্বে মাইরার দিকে এগিয়ে যাওয়া একটি ছেলেকে দেখে।
বড় বড় পা ফেলে বা হাতে মাইরাকে টেনে তার বাম পাশে এনে মাইরার মাথার পিছনে হাত দিয়ে তার বুকের বা পাশে মাইরার কপাল চেপে ধরে।
এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় না করে ছেলেটির সামনে ডান পা বাড়িয়ে দেয়। সামনে কাচের টেবিলের উপর ভারি কাচ ছিল, ছেলেটি সেই কাচের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে। কাচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ছেলেটির আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে থাকলো কিছু সময়। সামনের কাচ কে টার্গেট করেই ইরফান ছেলেটিকে ফেলেছে।
আশপাশ থেকে মানুষজন এগিয়ে আসে। ইরফান ভাবলেশহীন। মাইরা মাথা উঠাতে চাইলে ইরফান মাইরার কোমড় ধরে উঁচু করে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। মাইরা দ্রুত মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতে চাইলে ইরফান দু’হাতে মাইরার গাল চেপে মৃদুস্বরে বলে,
“ডোন্ট লুক।”
মাইরা অবাক হয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান খুব স্বাভাবিকভাবে মাইরার দিকে ভালোভাবে দৃষ্টি বুলিয়ে চেক করে বলে,
“সাইজ ঠিক আছে?”
মাইরা এসব রেখে ইরফানের উদ্দেশ্যে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“পিছনে কি হয়েছে?”
ইরফান পিছনে একবার তাকালো। ছেলেটির মুখ পুরো র’ক্তা’ক্ত হয়ে গিয়েছে। ইরফান দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার পানে চেয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“নাথিং।”
এরপর মাইরার কোমড়ের দিকে হাত দিয়ে চেক করতে চায় জামাটা কি ঢিল হয়েছে নাকি টাইট। মাইরার ইরফানের হাত আঁকড়ে ধরে বলে,
“কি করছেন? ঠিক হয়েছে তো!”
ইরফান আর কিছু বললো না। মাইরার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“গো।”
মাইরা পিছনে তাকাতে মাথা ঘোরাতে চায়। তার আগেই ইরফান পিছন দিয়ে মাইরার কপালে হাত দিয়ে মাইরার মাথা তার বুকে চেপে ধমকে বলে,
“স্টুপিট, আমাকে রাগিয়ো না। যেতে বলেছি আমি।”
মাইরা অসহায় চোখে তাকালো। এই লোকটা এমন কেন? কি হয়েছে পিছনে? সবার কথা শুনে মনে হচ্ছে কেউ গুরুতর আহত হয়েছে। কিন্তুু কিভাবে? কিছু ভাঙার আওয়াজও পেয়েছে। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“গো।”
মাইরা এগিয়ে যায়। ইরফান মাইরার পিছু পিছু।
ছেলেটি মাইরার দিকে অদ্ভুদচোখে তাকিয়ে ছিল, সাথে ইচ্ছা করে মাইরাকে ধাক্কা দিতে চাইছিল। ছেলেটির সামনে বরাবর আয়না থাকায় কোনো কিছুই ইরফানের চোখ এড়ায়নি।
ইরফান ঘাড় বাঁকিয়ে একবার মেঝেতে কাতরানো আহত ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে, “বাস্টার্ড।”
ইরফান মাইরাকে ট্রায়াল রুমে নিয়ে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করিয়েছে মূলত মাইরাকে রিলাক্সে খাবার খাওয়ানোর জন্য। প্রায় সকাল থেকে কলেজ ড্রেস পড়ে ছিল, আর মাইরার শুকনো মুখ দেখে সে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার সময়টুকু নষ্ট করেনি। মাইরাকে চেঞ্জ করিয়ে সরাসরি একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে। ইরফান মাইরার হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে। মাইরা আশেপাশে চোখ বুলায়। খুব সুন্দর লাগলো জায়গাটি তার কাছে। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। পুরো রেস্টুরেন্ট জুড়ে অনেক সুন্দর লাইটিং করা। মাইরা শপিংমলের ঘটনা মাথা থেকে বের করতে পারছিল না। তবে এখানে এসে তার মন ভালো হয়। ইরফান মাইরাকে নিয়ে এক কোণায় গিয়ে বসে। মাইরাও চুপচাপ ইরফানের পাশে ভদ্র হয়ে বসে। ইরফান মাইরাকে জিজ্ঞেস করল না। নিজে থেকেই মাইরার জন্য হাসের মাংস দিয়ে বাশমতি চালের ভাত দিতে বলে ওয়েটারকে। মাইরা অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের দিকে।
মাইরার ভীষণ প্রিয় হাসের মাংস। মাইরার মনে প্রশ্ন জাগে, লোকটা কি জানে তার হাসের মাংস পছন্দ? দুপুরেও না খেয়ে তার পেট একদম ফাঁকা।
এই খাবার টা ওই যে একদিন ইরফান তাকে গাড়িতে এনে দিয়েছিল, এরপর আর খাওয়া হয়নি। মেয়েটির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ইরফান কারো সাথে কলে কথা বলছে।
মাইরার হঠাৎ-ই ঠাণ্ডা লাগে। এখানে এসি দেয়া। এসিতে মাইরা বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। মেয়েটা দু’হাতে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। ইরফান ব্যাপারটা খেয়াল করতেই বা হাতে মাইরাকে টেনে তার কোলে বসায়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এখানে আশেপাশে কত মানুষ। মাইরা বিড়বিড় করে,
“ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান মাইরার কথা শুনলো না। ফোন টেবিলে রেখে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কথা বলতে থাকে। দু’হাতে মাইরাকে তার বন্ধনীর মাঝে নিয়ে নেয়। এরপর মাইরার উদ্দেশ্যে মৃদুস্বরে বলে,
“আর শীত করবে না। ডোন্ট টক।”
মাইরা ঢোক গিলল। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল তেমন কেউ তাকায়নি তাদের দিকে। দু’একজন মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। মাইরা লজ্জা পেল, তবে কিছু বললো না। তার অনুভূতি বুঝতে পারে না। তবে মনটা কি ভীষণ ফুরফুরে লাগলো! তার সত্যিই এখন আর শীত করছে না।
মাইরার অস্বস্তি হয়েছে ইরফানের কোলে বসে খেতে। মেয়েটা অনেকবার নামিয়ে দিতে বলেছে। ইরফান ধমকে থামিয়ে দিয়েছে। মাইরা উপায় না পেয়ে মাথা নিচু করে গপাগপ খেয়ে নেয়। আশেপাশে আর তাকায় নি।
“একটা গান শোনা।”
শুদ্ধর কথায় ইরফান বিরক্ত হলো। সে একমনে ফোন স্ক্রোল করছে। শুদ্ধ হতাশ কণ্ঠে নাছিম এর উদ্দেশ্যে বলে,
“আজ আমার কাকের গলা, মানুষের কোকিলের গলা, তাই আমায় দাম দিচ্ছে না কেউ।”
নাছিম হাসল শুদ্ধর কথায়। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মাঝে ইরফান আর অন্তরার গানের গলা অনেক ভালো। তবে ইরফানের গানের গলা একেবারে মারাত্মক ভালো বলা যায়। কিন্তুু এই ইরফানটার হাতে পায়ে ধরেও একটা গান শুনতে পারে না তারা।
নাছিম বেঞ্চের দু’পাশে দু’পা দিয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
“আরে শোনা একটা গান। অনেকদিন পর আবদার করলাম। বুন্দু হই না? শোনা।”
কোথা থেকে অন্তরা এসে নাছিমের থেকে একটু দূরত্ব রেখে বসে বলে,
“কি হয়েছে?”
শুদ্ধ হতাশ কণ্ঠে বলে,
“আমিও তোদের মতো কোকিল হতে চাই। ইরফানের ভাব আর নেয়া যাচ্ছে না।”
অন্তরা ইরফানের দিকে আড়চোখে চেয়ে হাসে। এরপর হঠাৎ-ই একটা গান গেয়ে ওঠে।
“ভালোবাসি তোমায়..
ভালোবেসে যাবো…
জনম জনমে..
সাথী হবো…..
ইরফান বোধয় শুনলো না। অন্তরা ইরফানের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে গানটা গাইলো। সবাই বাহবা দিল। শুদ্ধ এবার ইরফানকে তেল মাখে।
“ও কোকিল, কোকিল সোনা। একটা গান শোনা। তোকে আমি তুন্দল বউ কিনে দিব। দু’লাইন শোনা, নে।”
ইরফান বিরক্ত হলো। দুঃখের বিষয় ইরফানকে এতো তেল দিলেও ইরফান শেষমেশ দু’লাইনও গান গাইলো না। সবাই হতাশ হলো। কখনো ইচ্ছে করলে ইরফান একা একাই গায়। শুদ্ধ ফাইজ কেউ এসে তার পাশে বসলে স্টপ হয়ে যায়। এভাবেই তাদের বেশ কয়েকবার ইরফানের গলায় গান শোনা হয়েছে।
সেই দিনের কথাগুলো ভেবে শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে ইরফানের বাসায় এসেছে। ইরফানকে অন্তরার কথা বলতেই ইরফান রেগে যায়। শুদ্ধ তাদের ভার্সিটি লাইফের ছোট্ট একটা ভিডিও অপেন করে দেখায় ইরফানকে। শুদ্ধর এই অভ্যাস আছে। অনেক ভিডিও তার কাছে সেভ আছে। ইরফান কিছু বলল না। শুধু দেখল তাদের সবার ভার্সিটি লাইফের ছোট্ট ছোট্ট কাহিনীগুলো।
শুদ্ধ ফোন পকেটে রেখে বলে,
“অন্তরার সাথে ফ্রেন্ডশিপ টা ঠিক করে নে ইরফান। আগের কথা ভুলে যা।”
ইরফান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। রেগে বলে,
“ইম্পসিবল।”
শুদ্ধ অসহায় চোখে চেয়ে বলে,
“ইরফান অন্তরা আমাদের ফ্রেন্ড। আগের সব ভুলে যা। অন্তরা ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হওয়ার জন্যও কষ্ট পায়।”
ইরফান চোখ বুজে শ্বাস ফেলে। এরপর শান্ত গলায় বলে,
“She was like my sister. বাট সে নিজ হাতে এই রিলেশন ডিসট্রয় করে দিয়েছে।”
কথাটা বলে আর দাঁড়ায় না। শুদ্ধ চুপ করে রইলো। ইরফানের কথাটা ভাবলো। কেন যেন প্রাণহীন হাসলো। তার ভীষণ আফসোস হলো, ইরফান বোনের মতো অন্তরাকে হারিয়ে খুব ভালো নেই। অথচ সে ছাপ এই ছেলেটা তার কোথাও একবিন্দু কেন রাখে না!
ইরফান শুদ্ধর ঘর থেকে নিজের ঘরে আসে। মাইরা বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইরফান ঘড়িতে একবার সময় দেখল। রাত ১১ টা।
বেশ অনেকক্ষণ মাইরার মুখপানে চেয়ে রইল ইরফান। এগিয়ে এসে মাইরার কাছ ঘেষে দাঁড়ায়। মাইরা নড়েচড়ে ওঠে। চুলগুলো মুখের উপর আসায় মাইরা বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে নেয়। ইরফান একটু ঝুঁকে ডান হাতে মাইরার অবাধ্য চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দেয়। ঠোঁট বাঁকিয়ে সামান্য হেসে মৃদুস্বরে গেয়ে ওঠে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৫
“তোকে একা রে দেখার
লুকিয়ে কি মজা!
সে তো আমি ছাড়া
কেউ জানে না…