প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৭ (২)
Drm Shohag
ইরফান মাইরাকে বা হাতে আগলে নিল। মৃদুস্বরে বলে,
“ডোন্ট ক্রাই।”
মাইরা দু’মিনিটেই নিজেকে সামলে নিল। ইরফানকে জড়িয়ে ধরেছে বুঝতে পেরেই দ্রুত ইরফানকে ছেড়ে দেয়। তবে ইরফান মাইরাকে ছাড়লো না। বা হাতে মাইরাকে তার সাথে জড়িয়ে রেখে ডান হাতে মাইরার ভেজা মুখ মুছে দেয়। এরপর এক সেকেন্ড ও সময় ব্যয় না করে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা দ্রুত বলে ওঠে,
“কি করছেন?”
ইরফান উত্তর করল না। পায়ের গতি বাড়িয়ে কলেজ গেইট থেকে বেরিয়ে যায়। অনেকেই অবাক হয়ে ইরফান আর মাইরার দিকে চেয়ে রইল। ইরফান সেসব পাত্তা দিল না। মাইরাকে নিয়ে গটগট পায়ে কলেজ মাঠ থেকে বেরিয়ে সোজা তার গাড়িতে বসিয়ে দেয়। মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে তাকিয়ে তাকে। ইরফান মাইরার সিল্ট বেল্ট বাঁধতে গিয়ে মাইরার কোলের উপর থাকা মাইরার ডান হাত টা চোখে পড়লে বাকহারা হয়। দ্রুত মাইরার ডান হাতটা উঠিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“এসব কি করে হয়েছে?”
মাইরা ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরার দিকে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। মাইরা ঢোক গিলল। তার মনে পড়ে, জাহারার সাথে ঝামেলা হওয়ায় ইরফান জাহারার সাথে কত খা’রা’প আচরণ করেছিল, তাদের সম্পর্ক টা কেমন বাজে হয়ে গিয়েছে শুধুমাত্র তার জন্য। এখন ইরফানের বান্ধবীর সাথেও সেইম কাহিনী ঘটলে একটুও ভালো হবে না। মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। মিনমিন করে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“পড়ে গিয়ে….”
মাইরা কথাটা শেষ করতে পারলো না। ইরফান মাইরাকে দু’হাতে তুলে সে সিটে বসে পড়ে। এরপর মাইরাকে তার কোলে বসিয়ে দেয়। এরপর গাড়ির দরজা লাগিয়ে দেয়।
মাইরা ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান মাইরার হাতের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান ড্যাশবোর্ড এর উপর থেকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে মাইরার হাতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। এরপর মাইরার দিকে তাকালে দেখল মাইরা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইরফান বা হাতে মাইরার মুখে লেগে থাকা ছোট্ট ছোট্ট ঘামের কণা মুছে দেয়। এরপর মাইরার হিজাবের পিন খুলে দেয়, নরমালি মাথার উপর হিজাব টা দিয়ে রাখে। এরপর মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“এটা কিভাবে হয়েছে?”
মাইরা ঢোক গিলে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মিনমিন করে বলে,
“এমনি। কিছু…”
ইরফান ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“মিথ্যা বলার স্বভাব আমি লাইক করি না।”
মাইরা কি বলবে বুঝতে পারে না। তার বারবার জাহারা আপুর কথা মনে পড়ছে। কত ঝামেলা হয়েছিল তখন। এই লোকটার মাথা যা গরম, আবার কি করবে কে জানে। মাইরা ঢোক গিলে বলে,
“ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। ওখানে….”
ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়ায় তার ঠোঁটজোড়া রাখে। অবাক করার বিষয়, ইরফান তার মুখ খুললো না। শুধু চেপে রাখলো মাইরার ঠোঁটজোড়া। চোখ বুজে ধীরে ধীরে ঠোঁট নাড়িয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“একটা মিথ্যা বলবি না। কে এতো আঘাত করেছে তোকে? টেল মি লিটল গার্ল।”
ইরফানের হঠাৎ এমন অদ্ভুদ কান্ডে মাইরা ঢোক গিলে। কেমন অদ্ভুদ অনুভূতিরা যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়লো। মাইরা টিকতে না পেরে দ্রুত তার মুখ সরিয়ে নেয় ডান দিকে। ইরফানের ডান হাত মাইরার কোমড়ে। বা হাতে মাইরার ডান হাতের কব্জি ধরে আছে। মাইরা সরে যাওয়ায় ইরফান বিরক্ত হলো। দ্রুত বা হাত তুলে মাইরার মুখ তার দিকে ফেরায়। মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। ইরফান হঠাৎ-ই শক্ত গলায় বলে,
“স্টুপিট গার্ল, আমায় রাগিয়ে কত শান্তি পাস তুই? একটা সিম্পল কথা বলতে এতো টাইম লাগবে কেন? স্পিক আপ। কোন বাস্টার্ড এই কাজ করেছে। আই নো, এখানে কেউ স্কেলের আঘাত করেছে। সো, আর একটা ওয়ার্ড মিথ্যা বলবি তো, ওই রোডের মাঝখানে গিয়ে তোকে খাবো।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। এই লোক পা’গ’ল নাকি?
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। কণ্ঠ আগের চেয়ে একটু নরম করে, তবুও ভীষণ ভারী লাগে।
“অন্তরা আজ তোমাদের ক্লাস নিয়েছিল?”
মাইরা অবাক হয়। দুই সেকেন্ড আগেই তাকে তুই তুই বলে মুখে ফেনা তুলল। এখন আবার..
ইরফান বা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট গার্ল রে, আমারে আর কত রাগাবি তুই!”
মাইরা এতো অদ্ভুদভাবে ইরফানের দিকে তাকায়, যেন মঙ্গলগ্রহ থেকে ইরফান মাত্র নেমে এলো। ইরফান মাইরার দিকে মুখ এগোতে নিলে মাইরা চোখ বুজে বলে ওঠে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ ক্লাস নিয়েছিল নিয়েছিল।”
ইরফানের চোখে মুখে ক্রোধ জমা হয়। দ্রুত গাড়ির ডোর খুলে বেরিয়ে যায়। মাইরা ইরফানকে বেরিয়ে যেতে দেখে ডেকে ওঠে,
“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
ইরফান তাকালো না। ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে এগিয়ে যায় কলেজ গেইটের দিকে। মাইরা হতাশ হলো। চিন্তিত হলো লোকটা কি বুঝে ফেলেছে? তার ভালো লাগছে না। অনেক কান্নার ফলে চোখ জুড়ে ক্লান্তি নেমে আসে। মাইরা সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজল।
অন্তরা অফিস রুমে বসে ছিল। তার মাথা ব্য’থা করছে। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছে সে। ইরফান অফিস রুমে প্রবেশ করলে ইরফানের সাথে প্রায় সবা স্যার হাত মিলিয়ে সালাম বিনিময় করে। তাদের কলেজ থেকে কিছুটার দূরেই ভার্সিটির টিচার ইরফান এটা মোটামুটি সবাই জানে। একটা পরিচিতি আছে। সেখান থেকেই ইরফানকে সবাই মেহমানদের মতো আপ্যায়ন করতে চাইলো। তবে ইরফান ছোট করে শুধু বলে,
“কাজে এসেছি। ব্যস্ত হবেন না।”
কথাটা বলে ইরফান অন্তরার ডেস্কের সামনে গিয়ে শক্ত গলায় ডাকে,
“মিস অন্তরা?”
ইরফানের কণ্ঠ পেয়ে অন্তরা তড়াক করে চোখ মেলে তাকায়। অবাক হয় ইরফানের এমন সম্মোধনে সাথে ইরফানকে এখানে দেখে। দ্রুত বসা থেকে দাঁড়িয়ে বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“ইরফান তুমি?”
ইরফান বা হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে রেখে ডান হাতে গাল চুলকায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অন্তরার পানে। অন্তরা ঢোক গিলে বলে,
“ইরফান বসো না! কিছু বলবে?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“তোমার কি ভুলে যাওয়ার রোগ আছে অন্তরা?”
অন্তরা অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের কথায়। কোনোরকমে বলে,
“মানে? তুমি….
আর বলতে পারে না। তার আগেই ইরফান সর্বশক্তি দিয়ে অন্তরার বাম গালে সাপটে এক থাপ্পড় মেরে দেয়। অন্তরার কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। অন্তরা অবাক হয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চায়, তার আগেই একই গালে পর পর আরও দু’টো থাপ্পড় পড়ে। অন্তরার মনে হলো তার গালের মাংস ছিঁড়ে পড়ে যাবে।
ইরফান অন্তরার দিকে জ্বলন্ত চোখে চেয়ে অত্যন্ত কঠোর স্বরে বলে,
“ডিসিশন নিয়েছিলাম কোনো ডাস্টবিন টাচ করব না। বাট সামটাইমস, ডাস্ট ক্লিন করতে ডাস্টবিন টাচ করা, ইট’স ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট।”
কথাটা বলে ইরফান তার ডান হাতে দু’বার ফু দেয়, যেন ধূলো ঝাড়লো। এরপর চোখের পলকে আরও দু’টো থাপ্পড় পর পর অন্তরার গালে বসায়।
পুরে পাঁচটা দাবাং মার্কা চড় তাও আবার একই গালে খেয়ে অন্তরার মনে হলো সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। ইরফান এখানে আর দাঁড়ালো না। দু’হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে উল্টো ঘুরে বাইরে যেতে যেতে শক্ত গলায় বলে,
“It was the initial (প্রাথমিক) dose.
বলেছিলাম, আমার ওয়াইফ এর গায়ে একটা আঁচড় লাগলে তোকে মিনি জা’হা’ন্না’ম থেকে ঘুরিয়ে আনবো। Prepare for that.”
ইরফান রুমের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে পিছু ফিরেই গম্ভীর স্বরে বলে,
“আমার ওয়াইফ এর ব্রেইন থেকে বে’য়া’দ’ব নারীর স্মৃতি মুছতে হবে। আদারওয়াইজ, তোকে মিনি জা’হা’ন্না’মের সব ডোজ এক্ষুনি দিয়ে দিতাম।”
কথাটা বলে আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না এখানে ইরফান। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায়। অন্তরা তার ডেস্ক দু’হাতে ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।
এখানে কয়েকজন স্যার মেডাম ছিল তারা আগেই চলে গিয়েছে বিধায় অন্তরার এ অবস্থা কেউ দেখতে পেল না।
ইরফান মাইরাকে নিয়ে সর্বপ্রথম একটি শপিংমলে যায়। গতদিনের মতোই একটি ড্রেস চুজ করে মাইরাকে ট্রায়াল রুম থেকে চেঞ্জ করে আসতে বলে, সাথে জুতো কিনে দেয়।
আজ ইরফান মাইরার জন্য চুজ করেছে একটি ব্রাউন কালারের সিম্পল স্টোনের কাজ করা জামা। সাথে ব্রাউন কালার জুতো।
শপিংমল থেকে বেরিয়ে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে মাইরাকে খাইয়ে ইরফান তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
মাইরা ইরফানের পাশের সিটে বসে। একটু পর পর ইরফানের দিকে তাকায়। তখন যে কোথায় গিয়েছিল কে জানে? এখন তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছে না। বেশ অনেক সময় পেরোলে মাইরা মিনমিন করে প্রশ্ন করে,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
মাইরা কথাটা বলার ঠিক এক মিনিট পরেই ইরফান গাড়ির ব্রেক কষে গাড়ি সাইড করে। এরপর এক সেকেন্ড ও সময় ব্যয় না করে তার পাশের সিট থেকে মাইরাকে টেনে তার কোলে বসায়। মাইরা কিছু বলার আগেই ইরফান অত্যন্ত শীতল কণ্ঠে বলে,
“কোথায় যেতে যাও?”
মাইরা পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে ইরফানের দিকে।
ধরনীর বুকে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। ইরফান সময় নষ্ট না কে মাইরাকে নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়। এরপর মাইরার ডান হাত তার বা হাতের মুঠোয় নিয়ে এগিয়ে যায়। মাইরা আর কিছু বললো না। চুপচাপ ইরফানের সাথে পা মেলায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল জায়গাটা অনেক সাজানো। অনেক লাইটিং করা।
ইরফান এক জায়গায় গিয়ে দু’টো টিকিট কাটলো। এরপর একটা সাজানো গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। আশেপাশে অনেক মানুষ। ইরফান বা হাতের বাহুবন্ধনীর মাঝে মাইরাকে আগলে নেয়। মাইরা বিস্ময় চোখে তাকায়। বাইরে থেকে বুঝতে পারছিল না মেয়েটা। এটা তো মেলা। মুহূর্তেই মাইরার চোখ দু’টো চকচক করে ওঠে। ঘাড় বাঁকিয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। মাথা উঁচু করে হেসে বলে,
“এটা মেলা?”
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলে, “হুম।”
মাইরা কি বলবে বুঝলো না। তাদের গ্রামে মেলা হয়, শহরেও এমন মেলা হয়? তার মেলায় ঘুরতে ভীষণ ভালো লাগে। না চাইতেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। ইরফান মাথা নিচু করে মাইরার পানে চেয়ে আছে। মাইরা মাথা উঁচু করে মৃদু হেসে বলে,
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।”
ইরফান মাইরাকে তার দিকে ফিরিয়ে দাঁড় করায়। মৃদুস্বরে বলে,
“এসব কোথা থেকে শিখেছ?”
মাইরা বোকা চোখে প্রশ্ন করে,
“কি?”
ইরফান মাইরার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে ছোট করে বলে, “নাথিং।”
কিছুদূর এগিয়ে গেলে মাইরা দাঁড়িয়ে যায় ফুসকার দোকান দেখে। ইরফান পিছু ফিরে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা পাশেই ফুসকার দোকান দেখিয়ে বলে,
“আমি ফুসকা খেতে চাই।”
ইরফান মাইরাকে নিয়ে গিয়ে সেখানে একটা টেবিলে নেয়। মাইরা বসল। ঝাল ঝাল করে মেয়েটা পুরো তিন প্লেট ফুসকা খেয়েছে। আবারও ইরফানের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলে,
“আরেক প্লেট খেতে চাই।”
ইরফান বিস্ময় নিয়ে তাকায় মাইরার পানে। অবাক হয়ে বলে,
“কাঁদছো কেন?”
মাইরা মাথা নাড়িয়ে বলে,
“কাঁদছি না। ঝাল খেয়েছি তাই।”
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
“ওকে, এবার মিষ্টি দিয়ে খাও।”
মাইরা হা করে তাকায়। মিষ্টি দিয়ে কেউ ফুসকা খায়? মাথা নাড়িয়ে বলে,
“প্লিজ! এটাই প্লেট লাস্ট। এখানকার ফুসকা অনেক মজা।”
ইরফান মানলে মাইরার কথা। আরও এক প্লেট দিতে বলে মাইরাকে। মাইরা এবারের প্লেট থেকে থেকে দু’টো ফুসকা খয়ে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান তার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। মাইরা মুখের টুকু গিলে নিয়ে ইরফানের দিকে একটা ফুসকা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“একটা খেয়ে দেখুন। আমি এতো মজার ফুসকা কখনো খাইনি।”
ইরফান মাইরার মুখের দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখমুখ কেমন লাল। অথচ হাসছে। ইরফান ঢোক গিলে মাইরার হাতের দিকে মুখ বাড়িয়ে সত্যি সত্যি হা করল। মাইরা তো বেজায় খুশি। দ্রুত হাতের ফুসকা ইরফানের মুখে পুড়ে দেয়। ইরফান দু’বার মুখ নাড়িয়ে চোখ বড় বড় করে তাকায় মাইরার দিকে। তার নাক কান সহ অন্তর টা জ্বলে গেল বোধয়। মুখ নাড়ানো থামিয়ে দেয়। মাইরা হেসে তাকিয়ে আছে ইরফানের দিকে। একটা চুটকি বাজিয়ে হেসে বলে
“মজা না? আরেকটা খাবেন?”
ইরফান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। মাইরা ভীত চোখে তাকায়। ইরফানের কি ভালো লাগেনি? মাইরা ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“কি হয়েছে আপনার? চোখমুখ এমন লাল হলো কেন?
একটু থেমে বলে,
আসলে ঝাল খেলে একটু আধটু এমনই হয়। কিন্তুু অনেক মজা না বলুন?”
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে মুখের টুকু কেমনে যে গিলে নিল, সে নিজেও জানে না। এরপর মাইরার দিকে এগিয়ে নিরেট কণ্ঠে বলে,
“I need my personal chocolate right now. It’s more delicious.”
মাইরা চোখ বড় বড় তাকায়। ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে আসলে মাইরা দ্রুত তার ঠোঁটজোড়া চেপে ধরে মিনমিন করে বলে,
“না প্লিজ! মানুষ।”
ইরফান আশেপাশে তাকিয়ে বিরক্ত হলো। তার মুখ জ্বলে যাচ্ছে। একটা হাফ লিটারের পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে এক নিঃশ্বাসে পুরো বোতলের পানি খেয়ে নেয়। মাইরা বোধয় বুঝল ইরফানের মুখচোখ দেখে, লোকটা ঝাল সহ্য করতে পারে না। মনে মনে একটু অনুতপ্ত ও হলো। কিন্তুু সে তো জোর করেনি। তাকে বললেই তো হতো, সে খাবে না।
মাইরা অনেক অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের জিনিসটার দিকে। তাদের গ্রামের মেলায় নাগর দোলা দেখেছে। আরও অনেক কিছুই থাকতো তবে এইখানে যে জিনিসটা দেখছে একদম নৌকার মতো, একবার এ মাথায় যায়, আরেকবার ও মাথায় যায়। এটা সে সামনা-সামনি কখনো দেখেনি। আজ প্রথম সামনা-সামনি দেখে মাইরা ভীষণ অবাক হয়। সাথে খুব ভালো ও লাগে। বাচ্চাদের মতো একটা লাফ দিতে ইচ্ছে করল তার। ইরফান তার হাত ধরে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিল। মাইরা হঠাৎ-ই ইরফানের পাশ থেকে ইরফানের একদম সামনে দাঁড়ায়। মাথা উঁচু করে আবদার করে,
“শুনুন, আমি ওখানে উঠতে চাই।”
ইরফান মাইরার দিকে তাকালো। কলে কিছু একটা বলে কল কেটে ফোন পকেটে রাখলো। মাইরার দিকে তাকািয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“কোথায় উঠতে চাও?”
মাইরা ইরফানের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে তার পিছনে থাকা সেই নৌকার দিকে আঙুল তাক করে বলে,
“ওখানে, প্লিজ উঠি? আমি এটা কখনো সামনা-সামনি দেখিনি।”
ইরফান মাইরার হাত ধরে সেদিকে এগিয়ে যায়। বেশ অনেগুলো টিকিট কাটে। মাইরা ভীষণ খুশি হয়। এখন অনেকে উঠেছে। অনেকে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। মাইরার যদিও একটু ভয় ভয় লাগছে। তবে অনেক ভালোও লাগছে। এইবারের লোকজন নেমে গেলে ইরফান মাইরাকে নিয়ে উঠে বসে। নৌকার বাম পাশের একদম মাথা থেকে কিছুটা নিচের দিকে বসেছে। মাইরা ইরফানকে ঘেঁষে বসেছে। দু’হাতে ইরফানে বা হাত জড়িয়ে বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। ইরফান নৌকার এপাশের প্রায় সবগুলো সিট নিজেদের জন্য-ই যাস্ট নিয়েছে। পুরোটা নিতে চেয়েছিল, বাট তারা রাজি হয়নি। ইরফান মেনে নিয়েছে। মাইরাকে নিয়ে একপাশে একা বসতে পারবে এই অনুমতি পেয়েছে।
ইরফান আড়চোখে একবার তাকালো। রাতের অন্ধকারে তেমন স্পষ্ট দেখতে পেল না মাইরাকে। ভাবনার মাঝেই নৌকা ধীরে ধীরে দুলতে শুরু করে। প্রথমে মাইরা তেমন ভয় না পেলেও একটু সময় যেতেই যখন নৌকার বেগ বাড়ে। মাইরার মনে হলো সে পড়ে যাচ্ছে। ছোটখাটো এক চিৎকার দিয়ে ওঠে। ইরফান বিচলিত হয়। দ্রুত মাইরাকে দু’হাতে আগলে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরা ইরফানের দিকে চেপে অসহায় কণ্ঠে বিড়বিড় করে,
“আমি পড়ে যাচ্ছি। আমাকে ধরুন।”
ইরফান মাইরাকে তার কোলে বসিয়ে নেয়। মাইরা কিছু বললো না। উল্টে দু’হাতে ইরফানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ইরফানের গলায় মুখ ঠেকিয়ে চোখ বুজল। ইরফান বা হাতে মাইরার কপাল টাচ করে দেখল মাইরা ঘেমে গিয়েছে। মেয়েটা কাঁপছে মৃদু। বুঝল, ভয় পাওয়ার ফল এসব। মুখ নামিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“নেমে যাচ্ছি।”
মাইরা দ্রুত চোখ মেলে বলে,
“না।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ভয় পাচ্ছো কেন?”
মাইরা মিনমিন করে বলে,
“তবুও ভালো লাগে।”
ইরফান খুবই ঝাপসা আলোয় মাইরাকে ভীষণ ঝাপসা দেখল। মাইরা আবারও চোখ বুজে ইরফানকে শক্ত করে ধরল। ইরফান আর কিছু বললো না। বা হাত তার গলায় মুখ গুঁজে রাখা মাইরার মুখ খানিকটা উঁচু করে ধরে। মাইরা চোখ মেলে তাকায়। অন্ধকারের মাঝে সেভাবে কিছু দেখা গেল না। তবে ঝাপসা ইরফান যে তার দিকেই চেয়ে আছে বুঝল। ইরফান বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“আমাকে জ্বালাচ্ছো কেন স্টুপিট গার্ল?”
মাইরা বুঝলো না সে কীভাবে জ্বালাচ্ছে। বোকাচোখে ঝাপসা ইরফানের দিকে চেয়ে থাকলো। নৌকার দোলায় ভয় পেয়ে দ্রুত ইরফানের দিকে আরও চেপে বসতে চায়, চোখমুখ খিঁচিয়ে নেয়। ইরফান বা হাতে মাইরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার গলার ভাঁজে হাত দেয়। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান মুখ নামিয়ে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে শ্বাস টানে। মাইরার পুরে শরীর শিরশির করে ওঠে। ইরফান মাইরার গলায় ছোট ছোট চুমু আঁকে। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মিনমিন করে করে,
“সরুন।”
ইরফান সরলো না। বরং মাইরার গলা থেকে নেমে সামান্য নিচে ঠোঁট ছোঁয়ায়। মাইরা হাসফাস করে। সব ভয় পালিয়ে গিয়েছে। এখন তো এই লোকটাকে ভয় লাগছে। আশেপাশে তাকাতে নিলে ইরফান মাইরাকে টেনে ধরে। বিড়বিড় করে,
“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
মাইরার মাথা থেকে পা পর্যন্ত যেন বিদুৎ চমকায়। মাইরা মিনমিন করে বলে,
“সরুন, মানুষ।”
ইরফান মাইরার গলার মাঝ বরাবর আলতো করে দাঁত বসিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে,
“নো।”
মাইরা চোখ বুজল। যদিও অন্ধকারের কারণে দেখা যাচ্ছে না। বাট কেমন যেন লাগছে মাইরার। ইরফান হঠাৎ-ই মাইরার গলায় শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে মুখ তুলে তাকায়। মাইরাকে টেনে নেয় তার দিকে। মাইরা ইরফানের গলা দু’হাতে জড়িয়ে ধরা হাত ছাড়েনি। ইরফান স্বাভাবিক হওয়ায় নৌকার দোলায় মাইরা আবারও ভয় পায়। মুখ নামিয়ে নেয়। ইরফান সূক্ষ্ম হাসলো।
দু’হাতে মাইরাকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় মাইরাকে ইরফান। এরপর মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে একটা গানের লিরিক্স অনুযায়ী শিষ বাজায়,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৭
“আলো ভরা কালো চোখে…
কি মাধুরী গো কি মাধুরি!…..
মাইরা কেমন যেন স্তম্ভিত হয়ে যায়। ইরফানের গলায় মুখ গুঁজে রাখা ঠোঁট দু’টো বিস্ময়ে ফাঁক হয়ে যায়। বন্ধ চোখের পাতা খুলে যায়। এ জীবনে এমন শক খেয়েছে বলে মনে কড়ছে না তার।