প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪২ (২)

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪২ (২)
Drm Shohag

মাইরা একটু একটু করে ইরফানকে প্যাকেটের প্রায় সব ভাতই খাইয়ে দিল। ইরফান পুরোটা সময় মাইরার দিকে চেয়েছিল। মেয়েটা ভীষণ অস্বস্তি নিয়ে ইরফানকে খাইয়েছে। এ জীবনে নিজে ছাড়া তার একমাত্র ছোট ভাইকে খাইয়েছিল। আজ আরেকজন অ্যাড হলো।
খাবার শেষে ইরফান পানি খেয়ে নেয়। মাইরাকে তার পায়ের উপর থেকে নামিয়ে দেয়। মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। যেন কোনো অসাধ্য সাধন করেছে। কিন্তুু সে তো খেতে পারলো না। অসহায় চোখে ফাঁকা প্যাকেটের দিকে চেয়ে রইল। বিড়বিড় করে, “স্বার্থপর লোক একটা। সব খেয়ে নিল।”

ইরফান পানির বোতল ফ্রন্ট সিটের পকেটে রেখে দেয়। তার বাম পাশ থেকে মাইরার হিজাব নিয়ে মুখ মুছে নেয়। মাইরা আড়চোখে ইরফানের কার্যকলাপ দেখছে।
ইরফান এগিয়ে এসে মাইরার পাশ ঘেঁষে বসে। মাইরা আড়চোখে তাকালো। কিছু বললো না। ইরফান ফোন স্ক্রোল করতে করতে প্রশ্ন করে,
“তোমার ড্রিম কি?”
মাইরা ইরফানের প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। এভাবে কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেনি তাকে। একটু পর নিজেকে সামলে বলে,
“কিছু না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইরফান মাইরার দিকে তাকালে দেখল মাইরা মাথা নিচু করে আছে। ইরফান মাইরার কোলের উপর থেকে ফাঁকা প্যাকেট টা নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। মাইরা মুখ বাঁকালো। কি স্বার্থপর! নিজে সব খেয়ে তার খাওয়ার কথা ভুলে গেল। যদিও প্রথমে যেটুকু খেয়েছিল তাতে খিদে কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
ইরফান গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে,
“কোন কলেজে পড়তে চাও? দ্যান কোন ভার্সিটি? মেডিকেল অর ইন্জিনিয়ারিং সাইট? কোনো উইশ নেই?”
মাইরা ইরফানের দিকে তাকায়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“আমি তো কলেজ চিনি না। কিন্তুু আপনাদের ভার্সিটি অনেক ভালো, আমি শুনেছি। আমাদের গ্রামেও সবাই এই ভার্সিটির নাম সবচেয়ে বেশি বলে।”
একটু থেমে প্রশ্ন করে,
“আপনাদের ভার্সিটি এতো ভালো কেন?”

ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরার বোকা প্রশ্নে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হেসে উত্তর দেয়,
“কজ, ইন ফিউচার, ওখানে তুমি পড়বে।”
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে ছিল। ইরফান হেসেছে মনে হলো। মাইরা অভিজ্ঞ চোখে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করছে, ইরফান আসলেই হেসেছে? এই লোককে হাসতে দেখার কৌতুহল মাইরার এ জীবনে মিটবে না। কারণ এই লোক তো হাসেই না। মনে তো হলো হাসলো। কিন্তুু মাইরা বুঝে পায় না। তবে ইরফানের বলা কথাটা মনে পড়লে অদ্ভুদ ভাবে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান আর কিছু বললো না। গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির ড্যাশবোর্ডের উপর রাখা আরও একটি প্যাকেট নিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে মাইরার দিকে বাড়িয়ে দেয়। মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“এটা কোথায় পেলেন?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“পেট থকে বের করে ভরিয়েছি।”
মাইরা মুখ কুঁচকে তাকালো ইরফানের দিকে। ইরফানের হাত থেকে প্যাকেটটি নিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিল।

সকাল ৭ টা।
শুদ্ধ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। সারারাত ঠিকঠাক ঘুম হয়নি। মনমেজাজ লাস্ট কবে এতো খারাপ ছিল সেটাই ভাবার ট্রাই করছে। একে তো মিথ্যা ব্লেম আবার ফাইজের সেই কথা। তার উপর তার মা তো এক বাড়তি ঝামেলা বাঁধিয়েে রেখেছেই।
বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে বেলকনি থেকে ঘরে আসে। কিছুক্ষণ পাইচারি করে ঘরে। এরপর ঘর থেকে বেরোলে তার মাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। তৃণা বেগম শুদ্ধকে দেখে তার ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“চোখ এমন লাল কেন? রাতে ঘুমাসনি?”
শুদ্ধ চুপচাপ মায়ের দিকে বেশ অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে। একটু আগেও যে খারাপ লাগা কাজ করছিল, এতো অশান্তি লাগছিল, মায়ের হাসিমুখ দেখে কেন যেন সব মিলিয়ে গেল। মনটা ফুরফুরে লাগলো আগের চেয়ে। তৃণা বেগমের হাত ধরে ঘরের ভেতর আনে। এরপর তৃণা বেগমকে তার বেডে বসিয়ে শুদ্ধ তার মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে,

“মা, চুল টেনে দাও। রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি।”
তৃণা বেগম মৃদু হাসলেন। তবে কিছুটা চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,
“শরীর খারাপ নাকি? জ্বর বাঁধিয়েছিস?”
কথা বলতে বলতে শুদ্ধর কপাল, গাল, গলা চেক করল। নাহ শরীর তো ঠাণ্ডাই। শুদ্ধ তৃপ্তির হাসি হেসে বলে,
“কোনো কারণ নেই। ঘুম পাড়াও আমায়। আজকে ভার্সিটি শেষে ইরফানদের বাড়ি থেকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো। ছয় মাসের আগে যদি গ্রামে যেতে চেয়েছ, তবে খবর আছে তোমার। তোমার আদরের অভাবে আমি শুকিয়ে যাচ্ছি।”
তৃণা বেগম শুদ্ধর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মৃদু হেসে বলেন,

“যতদিন থাকতে পারবো থাকবো।”
একটু থেমে বলে, “বাবা কিছু কথা আছে তোর সাথে।”
শুদ্ধ চোখ বুজেই বলে,
“বলো।”
“তোকে বলেছিলাম মনে আছে, তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। ওই যে সামিয়া। ওকে কিন্তুু আমার সাথে এখানে এনেছি। খুব ভালো মেয়ে বুঝলি? আমার খুব যত্ন করে। ওকে তোর বউ করে আনার বহুদিনের শখ আমার। ইনায়া মায়ের বিয়েটা তো হয়ে গেল। ইরফান বাবাও বিয়ে করে নিয়েছে। তুইও এবার বিয়েটা করে নে বাবা।”
শুদ্ধর রাগ হওয়ার কথা। ভীষণ রাগ। এই যে মাকে দেখার আগে পর্যন্ত এটা ভেবে রেগে ছিল। কিন্তুু এখন কেন যে রাগ লাগছে না। শুদ্ধ মায়ের কোল থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে। এরপর তৃণা বেগমের দু’হাত নিজের দু’হাতের মাঝে নিয়ে বলে,

“তুমি সেই মেয়েকে অনেক পছন্দ কর?”
তৃণা বেগম হেসে বলেন,
“খুব পছন্দ করি। তোর সাথে ওকে খুব মানাবে বাবা। খুব লক্ষী একটা মেয়ে।”
“আচ্ছা মা, আমি যদি তোমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে না করে অন্যকাউকে বিয়ে করি? তুমি কি করবে?”
শুদ্ধর কথায় তৃণা বেগমের মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে যায়। একটু পর আবারও হেসে বলে,
“আমি জানি আমার বাপ এমন করবে না। সামিয়া কালকে রাতে কি বলছিল জানিস? বলে, তোর তো পছন্দ থাকতে পারে। আমি খুব হেসেছিলাম। তোর পছন্দ থাকলে আমি অবশ্যই জানতাম। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার ছেলে আমার পছন্দ রেখে নিজের পছন্দের মূল্য দিবে না, এটা আমি জানি।”
শুদ্ধ তার মায়ের কথায় একটুও অবাক হয়নি। তার মা এমন এটা সে জানে। কিন্তুু কোথাও একটা শূণ্যতা ঘিরে ধরল। তার মায়ের মুখের দিকে তাকালো। তাকিয়েই রইল। সে যখন ক্লাস এইটে পড়ে, তখন তার বাবা মারা যায়। তার বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট একটা সীমিত টাকা আসতো, সেই টাকা দিয়ে তার মা তাকে নিয়ে খুব কষ্ট করে তাকে এই পর্যায়ে এনেছে।

তার মা ভীষণ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন একজন মহিলা। তার বাবার মৃত্যুর পর তাদের যে অভাব দেখা দিয়েছিল, তিনি কখনো কারো সাহায্য নেয়নি। এই যে ইরফানদের অবস্থা এতো ভালো, তার মামা সবসময় বলতো শুদ্ধর পড়াশোনা নিয়ে যেন তার বোন চিন্তা না করে। তবে তৃণা বেগম উত্তর দিতেন, ‘আমার স্বামী যা রেখে গিয়েছেন সেটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আর ভবিষ্যতে যা প্রয়োজন হবে তা আমার ছেলেই দিবে।’
শুদ্ধ কিন্তুু বিলাসিতার মাঝে মানুষ হয়নি। আজকে এই জায়গায় এসেছে তার মায়ের জন্য।
তার মায়ের দুঃখ-কষ্ট পাড়ি দিয়ে, সাথে গ্রাম্য মধ্যবিত্ত এক জীবন পাড়ি দিয়ে আজকের শুদ্ধ। আচ্ছা যে মায়ের একমাত্র আশা, ভরসা, বাঁচার অবলম্বন সবকিছু তার ছেলে হয়। সেই ছেলে তার মা কে কিভাবে ক’ষ্ট দিতে পারে? শুদ্ধর গলা শুকিয়ে আসলো। ভীষণ ভীতু মনে হলে নিজেকে। সে কি সাহসী? মায়ের সামনে সাহসী ছেলে হওয়াটা কি ঠিক? শুদ্ধর মন বলে ঠিক নয়। বরং মায়ের সামনে ভীতু হওয়াটাই অধিক সঠিক। এই যে শুদ্ধ ভীতু হয়ে বসে আছে। যে একটি বাক্য তার মায়ের হাসিমুখ কেড়ে নিবে, সে বাক্য উচ্চারণ করতে সে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। তার মায়ের হাসিমুখ কাড়তে সে ভীষণ ভীতু।

এখানে ভুলটা আসলে কার? সে ফারাহকে মন দিয়েছিল এজন্য? না-কি তার মা অন্য একটি মেয়েকে তার বউমা করার স্বপ্ন দেখেছে এজন্য?
শুদ্ধর একটা কথা ভেবে হাসি পায়। সে যদি ভার্সিটির লেকচারার না হতো, সেই আগে যেমন এক মধ্যবিত্ত লাইফ লিড করতো এমন হলে তো তার বিয়েই হতো না। আর এখন কাকে রেখে কাকে বিয়ে করবে সেটা ভেবে কুল পায় না। ফারাহ এখন ভার্সিটি পড়ছে। আর সে ফারাহকে পছন্দ করতো তার ভার্সিটি লাইফ থেকে। সে ফারাহকে পাওয়ার স্বপ্ন কখনো দেখেনি। কারণ সে জানতো মধ্যবিত্ত ছেলেদের শুধু ভালোবাসা যায়। তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার স্বপ্ন দেখা মানা। কিন্তুু যখন তার লাইফ সেটেল হয় তখন থেকে ফারাহকে পাওয়ার স্বপ্ন বুনেছিল। কিন্তুু এখন মায়ের হাসি কেড়ে নিবে কীভাবে?

তৃণা বেগমকে ছেড়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় শুদ্ধ। চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শার্ট চেঞ্জ করে, নিজেকে পরিপাটি করে নেয়। এরপর তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“ভার্সিটি শেষে তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো। লেট করবে না। রেডি হয়ে থেকো মা।”
তৃণা বেগম বলেন
“খেয়ে যা। আর তোর ভার্সিটি এতো তাড়াতাড়ি?”
শুদ্ধ হাতঘড়িতে সময় দেখল ৮ টার কাছাকাছি। মৃদু হেসে বলে,
“একটা কাজ আছে। কাজটা সেড়ে ভার্সিটি যাবো। বাইরে খেয়ে নিব। এখন আসি।”
কথাটা বলেই দ্রুতপায়ে বেরিয়ে যায়।

গতরাত প্রায় ২ টার দিকে ইরফান আর মাইরা বাড়ি ফিরেছিল। মাইরা সকাল সকাল উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। এ বাড়ি আসার পর মাইরা সেভাবে কখনো কোনো কাজ করেনি। আজ তো বাসায় অনেক মানুষ। এজন্য ভাবলো সে তার শ্বাশুড়ি আর রিতাকে গিয়ে একটুখানি হেল্প করুন। তার নিজের বাড়ি থাকতে তো অনেক কাজ করতো, এখানে এসে করা হয়নি। ভাবনা নিয়ে ঝটপট ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
সবার জন্য নাস্তা বানানোয় হেল্প করছিল মাইরা রিতার সঙ্গে। হঠাৎ মনে পড়ল ইরফানকে কফি দেয়া হয়নি। এখন তো অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। মাইরা রিতাকে কিছু সময় একা কাজ করতে বলে নিজে উঠে ইরফানের জন্য এক মগ কফি বানিয়ে ইরফানের ঘরের দিকে যায়। ঘরে গিয়ে ইরফানকে বেডের উপর হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে মাইরা এগিয়ে গেল। গলা ঝেড়ে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলে,

“আপনার কফি।”
মাইরার কণ্ঠে ইরফান চোখ মেলে তাকায়। নিরবে মাইরার হাত থেকে কফির মগ টা নিয়ে চুমুক দেয়। মাইরা দ্রুত ঘর থেকে বেরোনোর উদ্দেশ্যে উল্টো ঘুরে যেতে নিলে ইরফান মাইরার হাত টেনে ধরে। মাইরা পিছু ফিরে তাকায়। ইরফান বিরক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা হাত ছাড়াতে চায়। ইরফান বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলে,
“আবার কোথায় যাচ্ছো?”
“আমি কাজ করছি। হাত ছাড়ুন।”
ইরফান মাইরার হাত ধরে টেনে এনে তার সামনে বসিয়ে গম্ভীর বলে,
“বসো। ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।”
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে কৌতুহলী চোখে প্রশ্ন করে, “কি?”
ইরফান বা হাতে মাইরার ডান হাতের কব্জি ধরে রেখে ডান হাতে কফির মগে চুমুক দেয় মাইরার পানে চেয়ে। মাইরা অধৈর্য গলায় বলে,

“কি বলবেন?”
ইরফান কিছু বললো না। মাইরার দিকে চেয়ে পুরো কফি টা শেষ করল। এরপর হাতের মগ বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে প্রশ্ন করে,
“তুমি বলেছিলে, তোমার সৎ মা। এটা কি রেগে বলেছিলে?”
মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“মানে?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আই থিংক, উনি তোমার সৎ মা নয়, অ্য’ম আই রাইট?”

মাইরা কি বলবে বুঝল না। এই লোক এসব কি আবোলতাবোল বকছে। মাইরার মনে পড়লো গতকাল তার মা ইরফানকে কিছু বলছিল। সে স্টেজ এর সামনে থেকে ভেতরে আসার সময় তার মা আর ইরফানকে একসাথে দেখেছিল। অতঃপর ইরফানকে প্রশ্ন করে,
“গতকাল মা আপনাকে কি বলেছিল?”
ইরফান মাইরার কথা শুনে অন্যমনস্ক হলো। তার মনে আছে মাইরা একদিন রেগে বলে ফেলেছিল, মাইরার সৎ মা। কিন্তুু ভদ্রমহিলাকে দেখে একদমই তেমন মনে হয়নি তার। মাইরার দিকে চেয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করে,
“উনি আসলেই তোমার সৎ মা?”
মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। তার মনটা বিষাদে ছেঁয়ে যায়। সে কখনো বুঝতে পারতো না এটা তার সৎ মা। তার মা তো তাকে বুঝতেই দিতো না। ইরফানের যেমন মনে হচ্ছে উনি তার সৎ মা নয়, মাইরারও তেমন মনে হতো। কিন্তুু এখানে বিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে উনি আসলে মাইরার সৎ মা। চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানির কণা জমে। ছোট করে বলে,

“হুম।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“বাট সি ইজ আ গুড মাদার।”
মাইরা অবাক হয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,
“আই থিংক, তুমি তোমার মায়ের ব্যাপারে অনেক স্ট্রিক্ট। বাট হোয়াই?”
মাইরার কানে বাজে তার মা ভালো। তিনি ভালো মা? সত্যিই? তবে সে যে বিয়ে করতে চায়নি। পা ধরতেও বাকি ছিল না, কিন্তুু তার কথা শুনলোই না। সে তো খুব বড় হয়ে যায়নি। তার বান্ধীদের কারো বিয়ে হয়নি। শুধুমাত্র তার-ই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। লাবিব এর বাবা তাকে দেখতে পারেনা ঠিক আছে। সে তো বলেনি তাকে রাজকন্যার মতো করে রাখতে। সে বলেছিল তার কিচ্ছু লাগবে না। কিন্তুু সে শেনেনি। শুনবে কি করে? সৎ মা না?
কেন যেন মাইরার রাগ হলো ইরফান তার মাকে ভালো বলায়। রেগে বলে,

“আপনার তাকে ভালো মনে হয়? আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে বুঝলেন? আমার খোঁজ নেয়নি। সবচেয়ে বড় কথা আমি তার পা ধরে বলেছিলাম, আমি বিয়ে করতে চাই না। আমাকে আর একটু সময় দিক, আমি পড়াশুনা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসবো। কিন্তুু আমার কথা শোনেই নি। আর আমাকে তো বিয়ের পর শুধু চড়-থা’প্প’ড় খেতে হয়েছে।
যদিও আমি ভেবেছিলাম ওর চেয়েও করুণ পরিণতি হবে আমার। কথায় আছে না, পরের বাড়ি রাজরাণী হয়ে থাকার চেয়ে নিজের বাড়ি কাজের মেয়ে হয়ে থাকা ভালো। সেটাই চেয়েছিলাম আমি। কিন্তুু আমার কথা শোনেননি উনি।”
কথাগুলো বলে মাইরা একটু দম নেয়। চোখ বুজে শ্বাস নেয়। এরপর আবারও বলে,

“আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছে ভালো কথা, যার সাথে বিয়ে দিয়েছে তার মতামত টা অন্তত নিত। অথচ এমন এক মানুষের সাথে বিয়ে দিয়েছে, যে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করেছে আমাকে। আমার মা নিজ হাতেই আমার জীবনে কাঁটায় ভরিয়ে দিয়েছে। আমার বয়স কি খুব বেশি? আমার বয়সী মেয়েদের কারোর-ই বিয়ে হয়নি। আমার বান্ধবীরা সবাই এখনো হেসেখেলে দিন পার করে, আর আমি ঘরবন্দী হয়ে বসে আছি, বিবাহিত হয়ে গিয়েছি।
এ সবকিছুর জন্য আমার মা-ই দায়ী। আর আপনি তাকে ভালো…”
থেমে গেল মাইরা। কথা জড়িয়ে আসে। চোখ নামিয়ে নেয়। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।
মাইরার লাস্ট কথাগুলোয় যেন ভীষণ আক্ষেপ ঝরে পড়লো। সে কেন বিবাহিত? এটা যেন এখন মাইরার উপর একটা বোঝা! তার মতে সে তো ছোট।

ইরফান স্তব্ধ চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। ঢোক গিলল কেন যেন। মাইরার দিকে কতক্ষণ যে তাকিয়ে রইল সে সময়ের হিসাব নেই। চোখের পলক পড়লো না একবারো। ছোট করে বলে,
“ইট’স ওকে।”
কথাটা বলে মাইরার হাত ছেড়ে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“ইউ ক্যান গো।”
এরপর গটগট পায়ে বেলকনিতে চলে যায়। মাইরা মাথা তুলে পিটপিট করে ইরফানের দিকে তাকায়। তার বলা কথাগুলো ভেবে সে ঢোক গিলল। মায়ের প্রতি অভিযোগ দিতে গিয়ে ইরফান জড়িয়ে গিয়েছে। মাইরা কেন বলল এসব? মিথ্যা তো বলেনি। মাইরা ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে বেলকনির দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সিগারেট এর গন্ধ এসে নাকে বারি খায়। মাইরা খুকখুক করে কেশে ওঠে। ইরফান পিছু ফিরে তাকালো না, সিগারেট নিভিয়েও দিল না। মাইরা কি বলবে বুঝলো না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। একটু পর পর কাশছে। ইরফান বিরক্ত হয়ে হাতের সিগারেট দু’আঙুলে চেপে নিভিয়ে দিল। তবে পিছু ফিরল না। মাইরাকে আর কিছুই বললো না। মাইরার কেন যেন খা’রা’প লাগছে। হঠাৎ-ই কেমন যেন চুপ হয়ে গেল ইরফান। মাইরা মিনমিন করে বলে,

“আমি আসলে আপনাকে….”
মাইরার কথার মাঝেই ইরফান ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগে দেয়ালে তিনটে পরপর পাঞ্চ মারে। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান মাইরার পাশ কেটে হনহন করে বেলকনি থেকে ঘরে এসে তার ঘরের ভেতর থাকা ঘরটায় গিয়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
মাইরার ভীষণ খা’রা’প লাগছে। সে কি ভুলভাল কিছু বলে দিয়েছে? আবার ভাবলো লোকটা তো কারণ ছাড়াই রে’গে যায়। কিন্তুু সে রেগে যাওয়ার মতো কি বলেছে? বুঝতে পারছে না মেয়েটা। ইরফানের বন্ধ করে দেয়া দরজার পানে অনেকক্ষণ চেয়ে রইল। অপেক্ষা করল ইরফানের বের হওয়ার। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও যখন ইরফান বের হয় না, তখন মাইরা উপায় না পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রিতাকে অপেক্ষা করতে বলে এসে অনেক সময় চলে গেল। কিন্তুু ইরফান এমন কেন করল? রেগে তো তাকে কিছু অন্তত বলে, এইবার যে কিছুই বললো না, কেমন অদ্ভুদ বিহেভ করল! ভাবনা নিয়েই মাইরা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়।

শুদ্ধ ফাইজদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করায়। মুখাবয়ব গম্ভীর। গেটের সামনে গিয়ে বেল চাপে বারকয়েক। কিছুক্ষণ পর এসে কেউ দরজা খুলে দেয়। শুদ্ধ মাথা নিচু করে কিছু ভাবছিল, দরজা খুলে দিলে মাথা উঁচু করে সামনে তাকালে ফারাহকে দেখে কেমন অদ্ভুদ চোখে তাকালো। মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠেই এসেছে। শুদ্ধ ঢোক গিলে নিজেকে সামলায়। এরপর হেসে বলে,
“সকাল সকাল এই জ’ঘ’ণ্য মুখ টা আমার সামনে না আনলে খুব কি ক্ষ’তি হতো ফারাহ?”
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে তাকায় শুদ্ধর দিকে। বোঝার চেষ্টা করছে তাকে কি অপমান করল তার চেহারা নিয়ে? কি খারাপ ভাবা যায়? রেগে বলে,
“তো এ বাড়ি এসেছ কেন? তোমাকে তো কেউ দাওয়াত দেয়নি।”
শুদ্ধ ফারাহকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে গিয়ে বলে,
“তোমার এক কাজিনের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য আসলাম। দাওয়াত খেতে কে এসেছে? দিলেও নিব না। যার তার বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে পেট খারাপ করার কোনো ইচ্ছে নেই, বুঝলে?’
“একদম আমাদের বাড়ির খাবারের দুর্নাম করবে না।”
শুদ্ধ পকেট থেকে থেকে ফোন বের করে কাউকে কল দিয়ে ফোন কানে ধরে। এরপর ফারাহ’র দিকে চেয়ে হেসে বলে,

“তোমাদের বাড়ির খাবার তো ভালো। তোমার বাতাস খাবারের সাথে মিশে আমার পেট খারাপ হয়, আমার কি দোষ বলো?”
ফারাহ কটমট দৃষ্টিতে তাকালো শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ হঠাৎ-ই সিরিয়াস হয়ে ফোনে ওপাশের ব্যক্তিতে শক্ত গলায় বলে,
“ছাদে আসো। এক্ষুনি।”
কথাটা বলে ফোন কেটে দ্রুত পায় সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠে। যাওয়ার পথে ফাইজের সাথে দেখা হলো। ফাইজ তার ঘর থেকে বেরিয়ে শুদ্ধকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। শুদ্ধ খুব স্বাভাবিক ভাবেই ফাইজের পাশ কাটিয়ে ছাদের দিকে বড় বড় পা ফেলে যায়। ফাইজ পিছু ফিরে বলে,
“আবার কোন বে’য়া’দ’বি করতে এসেছিস?”
শুদ্ধ উত্তর করল না। দ্রুতপায়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে যায়। ছাদের গেইটের সামনে ফাইজের কাজিন রাসেল কে দেখে হাসলো। এগিয়ে গিয়ে রাসেল এর কাঁধে হাত দিয়ে ছাদে পা রেখে হেসে বললো,
“কেমন আছো?”
রাসেল শুদ্ধর ব্যবহারে খুশি হলো। রাসেল এর বয়স হবে ২২-২৩ বছর। ফাইজ শুদ্ধ এদের চেয়ে অনেক ছোট ছেলেটা। শুদ্ধর কথায় হেসে উত্তর করল,

“ভালো আছি শুদ্ধ ভাই। আপনি কি বলবেন?”
শুদ্ধ রাসেল এর কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নেয়। রাসেল এর সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে,
“মদ খাও ভালো কথা নয়, আমার বোন কে দিতে গেলে কেন? দিয়েছ অবশ্যই ভালো করনি, এটা তোমার বড় ভাইকে বলোনি কেন?”
রাসেল আমতা আমতা করে বলল,
“ভাই আপনি তো ঘুমের ওষুধ দিতে বলেছিলেন। আমি কম পাওয়ারের ওষুধ এর সাথে খুব সামান্য একটু মিশিয়ে দিয়েছিলাম।”
কথাটা বলতে দেরি হলেও রাসেল এর গালে শক্ত থাপ্পড় পড়তে দেরি হয়নি। রাসেল অবাক হয়ে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ রাসেল এর কলার ধরে দাঁতে দাঁতে চেপে বলে,

“আমাকে যতটা ভালো ভাবো, আমি ততটা ভালো নই, বরং তার চেয়েও অনেক বেশি খারাপ। বোনের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় বলে অপরাধ করলে পায়ে পড়ে বসে থাকবো, এসব ভাবলে ভুল। এসব অ’স’ভ্য’তামি আমার ফ্যামিলি রিলেটেড কারো সাথে করলে হাত কেটে ফেলব একদম।”
ফাইজ শুদ্ধর পিছে এসে দাঁড়িয়েছিল ছাদের দরজায়। ভেতরে পা রাখতেই দেখল শুদ্ধ রাসেল কে থাপ্পড় মারলো। ফাইজ অবাক হয়। শুদ্ধ তার কাজিন কে এভাবে মারছে কেন?
ভাবনার মাঝেই শুদ্ধ রাসেল কে ছেড়ে গটগট পায়ে ছাদ থেকে নামতে গেলে ফাইজ কে দেখে একবার দাঁড়ায়। পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে ফাইজ শুদ্ধর কলার ধরে রেগে বলে,

“এতো অ’স’ভ্য হয়েছিস কবে থেকে? বোনকে ছাইপাশ খাইয়ে, বাড়ি বয়ে এসে আমার ভাইকে মেরে যাচ্ছিস? এসব কি?”
শুদ্ধ রেগে ফাইজকে ধাক্কা দেয়। বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“আমার ইচ্ছে। যা ইচ্ছে করব। তোর কি? আমার পায়ে আমি হেঁটে এসেছি। আমার হাত দিয়ে আমি মেরেছি।”
ফাইজ রেগে শুদ্ধকে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। শুদ্ধ অবাক হয়ে তাকায় ফাইজের দিকে। ফাইজ রেগে বলে,
“আসলেই তোর মতো বে’য়া’দ’ব বন্ধু পেয়ে আফসোস হচ্ছে আমার। ভুল করে একটু অনুশোচনা টুকুও নেই তোর মাঝে।”
শুদ্ধ বেশ কিছুক্ষণ ফাইজের দিকে নির্জীব চোখে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ-ই শব্দ করে হেসে দেয়। চোখ দু’টো ঝাপসা ঠেকল। ঘাড় বাঁকিয়ে কয়েকবার পলক ঝাপটে নিল। এরপর ফাইজের দিকে চেয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“বা’লের বন্ধু। আমাকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে আফসোস করছিস? থাকলাম না যা। তুই কি আফসোস করবি, আফসোস তো আমার লাগছে। নামে বন্ধু হয়ে বসে আছিস। কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। এরকম নামের বন্ধু আমার নিজেরই লাগবে না।”

পাশ থেকে রাসেল এসে ফাইজের উদ্দেশ্যে বলে,
“ফাইজ ভাই, ভাবির শরবতে আমি একটু মদ মিশিয়ে দিয়েছিলাম। স্যরি ভাই। মজা করতে চেয়েছিলাম। তোমাদের এতো ঝামেলা হবে বুঝলে এরকম করতাম না।”
রাসেল এর কথায় ফাইজ অবাক হয়ে শুদ্ধর দিকেই তাকিয়ে রইল। শুদ্ধ হাসছে। বিদ্রুপের হাসি। ফাইজের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তোর আফসোসের পাল্লা কমিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার। মনে হচ্ছে আমার আফসোসের পাল্লা ভারি হতে যাচ্ছে। আমার বন্ধু আমায় চিনতো না ভেবে এতো হাসি পাচ্ছে, এমন জোক্স আমি জীবনেও ফিল করিনি। তবে শুনেছি বহু।”
ফাইজ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে চাইলো, তার আগেই শুদ্ধ প্যান্টের পকেটে দু’হাত গুঁজে দ্রুতপায়ে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলো। হঠাৎ-ই গেয়ে ওঠে,
“কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার
বন্ধু হারিয়ে যায়,
কেন হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভিড়
হারানোর তালিকায়।”
[Singer – Shayan]
ফাইজ পিছু থেকে অপরাধী গলায় একবার ডাকলো, ‘শুদ্ধ?’
শুদ্ধ মাথা নিচু করে হাসল। পায়ের গতি বাড়িয়ে সিঁড়ির ধাপ দ্রুত শেষ করতে চাইল। ডান হাত প্যান্টের পকেট থেকে বের করে ডান হাতের বাহুতে থাকা শার্ট দ্বারা ঝাপসা চোখজোড়া পরিষ্কার করল।

ইরফান বেডের উপর বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। কিছু একটা ভেবে ফোন নিয়ে কাউকে কল দিয়ে সাউন্ড লাউডে দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই ওপাশে কল রিসিভ করে কেউ একজন স্যার সম্মোধন করে সালাম দেয়। ইরফান সালামের উত্তর নিয়ে বলে,
“নুসরাত হাফ পাস্ট টেন এ যে ক্লাস নেয়ার কথা ছিল সেটা হাফ পাস্ট নাইন এ নিব। সবাইকে জানিয়ে দাও।”
ওপাশ থেকে মেয়েটা সময় দেখল প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। আমতা আমতা করে বলে,
“স্যার, আর মাত্র এক ঘন্টা সময় আছে। আমি কিভাবে…”
ইরফান বিরক্ত হয়। ল্যাপটপে আঙুল চালায় আর গম্ভীর গলায় বলে,
“সবাইকে জানানোর জন্য হাইলি টেন মিনিট’স এনাফ।”
নুসরাত ফোনের ওপাশে মুখ বাঁকায়। অতঃপর বলে,
“স্যার গতরাতে না বলে দেওয়ায় অনেকে ক্লাসে অ্যাটেন্ড করতে পারবে না।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

“দ্যট ইজ দেয়ার ফেইলর। ক্লাস টাইম হাফ পাস্ট নাইন। ইট’স ফাইনাল।”
বলেই কল কেটে দেয়। ওপাশে নুসরাত হতাশার শ্বাস ফেলে। তার বিরহের গান গাইতে ইচ্ছে করল,
‘আগে যদি জানতাম বন্ধুউউউ… এমন ত্যাড়া স্যার পাবোআআ.. তবে জীবনে সিআর হইতাম নাআআআ।’
মাইরা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। ইরফান লাউডে সেই মেয়ের সাথে কথা বললো, সবই শুনেছে সে। মাইরা অবাক হলো। স্যারদের কি স্টুডেন্টদের সাথে এভাবে কথা বলতে হয়? ব্যাপারটায় বিরক্ত হলো সে।
ইরফান ল্যাপটপ রেখে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। প্যান্ট আগেই পরেছে। কাভার্ড থেকে সাদা শার্ট বের করে পরে নেয়। তারপর কালো স্যুট পরে নেয়। কাজগুলো সব খুব মনোযোগের সহিত করেছে। মাইরা ঘরের ভেতর আসে। ইরফান একবারও তাকালো না মাইরার দিকে। সে নিজেকে পটিপাটি করে হাতঘড়ি পরে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নেয়। এরপর ডান হাত পকেটে রেখে ঘর থেকে বেরোনোর উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
মাইরা খেয়াল করেছে ইরফান একবারও তার দিকে তাকালো না। তখন যে ভয়ংকর রেগে গেল, এখনও কি রেগে আছে তার উপর? ঢোক গিলে মিনমিন করে বলে,

“শুনছেন?”
ইরফানের পা থেমে যায়। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?”
ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে আসে ধীরে ধীরে। মাইরা ঢোক গিলে বলে, “আমি আসলে…
ইরফান এগোতে এগোতে গম্ভীর গলায় বলে,
“তুমি আসলে….
মাইরার এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। ইরফান শক্ত কণ্ঠে বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪২

“এই ঘরে যেন তোমাকে আর না দেখি।”
কথাটা বলে মাইরার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে আসে। এরপর চাবি দিয়ে তার ডোর লক করে দেয়। মাইরা অবাক হয়ে চেয়ে আছে। ইরফান আবারও মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে হুমকির স্বরে বলে,
“আই রিপিট, এই ঘরের আশেপাশে যেন তোমাকে না দেখি। কথার হেরফের হলে পা দু’টো কাটতে অনলি টু সেকেণ্ড টাইম নিব।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৩