প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৪

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৪
Drm Shohag

তারেক নেওয়াজ কিছুক্ষণ আগে মাইরাকে ডেকে রেডি হতে বলেছেন হসপিটাল নিয়ে যাবে এজন্য। গতকাল বিড়ালের খামচি তে একটা বাড়তি কাজ হয়ে আছে। মাইরা তারেক নেওয়াজ এর কথা চুপচাপ মেনে দ্রুত রেডি হয়ে নিল। সে গোসল করে বেরিয়ে ঘরের চারিপাশে চোখ বুলালো, ইরফানকে কোথাও দেখল না। মাইরা মনে মনে স্বস্তি-ই পেল। উনি ঘরে থাকলে রেডি হতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
রেডি হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে এলো। এখন পর্যন্ত সে মোটামুটি খুশি। তবে ইনায়ার জন্য মন খারাপ হয়। যদিও আগামীকাল না-কি ইনায়া আপু এখানে আসবে। এই ভেবে একটু খুশি খুশি লাগছে। ভাবনার মাঝেই ঘর থেকে তারেক নেওয়াজ বেরিয়ে আসে। এগিয়ে এসে মাইরার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“রেডি হয়েছ আম্মু?”
মাইরা মাথা নেড়ে বলে,
“জ্বি বাবা, চলুন।”

তারেক নেওয়াজ মাইরার হাতের কব্জি ধরে এগিয়ে গেলেন। মাইরা হেসে তারেক নেওয়াজ এর সাথে পা মেলায়। গেটের বাইরে পা রাখলে মনটা কেমন যেন বিষন্নতায় ভরে যায়। আজ থেকে প্রায় অনেকগুলো মাস তার প্রতিটা প্রয়োজনে ইরফান ছিল। সবকাজে ইরফান থাকতো। এখন নেই কেন? ভার্সিটি থেকে যে আসলো! এরপর কোথায় গেল? কোনো কাজে গিয়েছে? কিন্তুু তাকে নিয়ে গিয়ে এই ইনজেকশন দিয়ে এনে কাজ করা যেত না? মাইরার ভীষণ মন খারাপ হলো। সবসময় তার প্রতিটি প্রয়োজনে ইরফানকে পাশে পাওয়ার পর হঠাৎ ইরফানের জায়গায় অন্যকাউকে পেয়ে মেয়েটার ভীষণ মন খারাপ হয়। পা চলছে তবে দৃষ্টি থেমে নেই। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে, তিনি কোথায়? ভাবলো হয়তো সত্যিই কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কাজে গিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

একদম মেইন গেইটের কাছে গিয়ে কি মনে করে যেন পিছু ফিরে ইরফানের বেলকনির দিকে তাকায়। এবারেও হতাশ হয় বেলকনিতে ইরফানকে না দেখতে পেয়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে তাকাতে গিয়েও তাকালো না। দৃষ্টি উপর দিকে উঠালে ছাদের কোণায় ইরফানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাইরা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। পায়ের গতি কমলো। অবাক হয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে রইল। সে তো ভেবেছিল লোকটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট কোনো কাজে ব্যস্ত, তাই তাকে নিয়ে যাচ্ছে না। কিন্তুু উনি তো কোনো কাজ করছেন না। বরং চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট রেখে সিগারেট ফুঁকছে।
মাইরা অবাক হয়ে শুধু ইরফানকে দেখল। গাড়িতে উঠার আগ পর্যন্ত মাইরা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েই রইল ইরফানের দিকে। ভীষণ অভিমান জমলো ছোট্ট মনে। সবসময় তার সাথে থাকা মানুষ হঠাৎ সঙ্গ ছেড়ে দিলে যেমন বিশ্রী অনুভূতি হয়, মাইরার তেমনি হলো। তারেক নেওয়াজ গাড়ির ডোর খুলে দিলে মাইরা উঠে বসে। এরপর আবারও জানালা দিয়ে ছাদের দিকে তাকায়।

ইরফান একহাত পকেটে রেখে আরেক হাতে সিগারেট ফুঁকছে। দৃষ্টি মাইরার পানে। মাইরা তাকিয়ে রইল আরও বেশ খানিকক্ষণ। এরপর অভিমানে চোখজোড়া নামিয়ে নেয়। দৃষ্টি রাস্তার পানে রাখে। সিগারেট খাওয়া তার কাছে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট? মাইরার ইচ্ছে করল, সে ইনজেকশন দিবে না। ইরফান কেন নিয়ে যাবে না তাকে? এইটুকু মানতেই পারছে না মেয়েটা। ভীষণ মন খারাপ নিয়ে আরেকবার ছাদের পানে তাকায়। এখনো ইরফানকে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তারেক নেওয়াজ গাড়ি স্টার্ট দেয়। ধীরে ধীরে ইরফান মিলিয়ে যায়। মাইরার অভিমানের পাল্লা ভারী হয়।

ইনায়া মন খারাপ করে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির কথা মনে পড়ছে। ফাইজ কোথায় গিয়েছে কে জানে। কাল রাতে কি হয়েছে তার একদমই মনে নেই। সকালে উঠে মাথাটাও ভীষণ ভারি ভারি লাগছিল। আজ সারাদিন মাথাটা ভাড় লেগেছে। ফাইজ সকাল সকাল তাকে সকালের খাবার খাইয়ে কোথায় যেন গিয়েছে। তার সাথে কোনো কথাই বলেনি। ইনায়া আসলে বুঝতে পারছে না ফাইজ কি কোনো কারণে রেগে আছে তার উপর? রাতে কি কিছু হয়েছিল যার ফলে ফাইজ তার উপর রেগে আছে? সে তো কিছু মনেই করতে পারছে না। শুধু মনে আছে সে ফাইজের জন্য বসে অপেক্ষা করছিল। তারপর যে কি হয়েছে আর মনে নেই। ভাবনার মাঝেই ফাইজের গলার আওয়াজ পায়।

“লিটল কুইন?”
ইনায়া পিছু ফিরে তাকায়। ফাইজকে কেমন যেন এলোমেলো লাগলো। ফাইজ এগিয়ে আসে। ইনায়া একটা শুতি শাড়ি গায়ে জড়িয়েছে। মাথায় আঁচল টানা। ফাইজ ইনায়াকে দেখে মৃদু হাসলো। দু’হাতের আঁজলায় ইনায়ার মুখটা নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“কেমন আছো লিটল কুইন?”
ইনায়া অবাক হয়ে তাকায়। একটু চুপ থেকে বলে,
“ভালো। আপনি কি কোনো কারণে আমার উপর রাগ করেছেন?”
ফাইজ ইনায়ার গাল থেকে হাত সরিয়ে বিছানায় গিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো। তীব্র হতাশ কণ্ঠে বলে,

“অ্যা’ম স্যরি লিটল কুইন! তোমাকে টাইম দিতে পারছি না। আমি ভীষণ ডিস্টার্ব। আমি ভালো নেই। সুখের দিন বন্ধু ছাড়া পানসে লাগে। বন্ধু নেই, তাই তুমি নামক সুখ আমি উপভোগ করতে পারছি না। কি করব?”
ইনায়া অবাক হলো ফাইজের কথা শুনে। এগিয়ে গিয়ে বলে,
“কি হয়েছে আপনার বন্ধুর সাথে?”
ফাইজ চট করে উঠে দাঁড়ালো। ইনায়ার মাথা থেকে শাড়ির আঁচল টা ফেলে দেয়। পিছনে হাত দিয়ে ইনায়ার চুলগুলো খুলে দেয়। নিরব চোখে ইনায়ার দিকে চেয়ে থাকে। ইনায়া ল’জ্জা পায়। চোখ নামিয়ে নেয়। ফাইজ মৃদু হেসে বলে,
“কিছু বলব না, কিছুই করব না। আপাতত সব তুলে রাখছি লিটল কুইন। তুমি আমাকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট পরামর্শ দাও তো। বন্ধুর অভিমান কিভাবে ভাঙানো যায়?”
ফাইজের প্রথম কথা শুনে ইনায়া ল’জ্জা পেলেও শেষ কথাটা শুনে অবাক হয়ে তাকায় ফাইজের দিকে। প্রশ্ন করে,
“আপনার কোন বন্ধু অভিমান করেছে আপনার উপর?”

ফাইজ মন খারাপ করে বলে,
“শুদ্ধ।”
ইনায়ার বিস্ময়ের মাত্রা বেড়ে পাহাড়চূড়ায় পৌঁছানোর মতো হলো। অতঃপর অবাক হয়ে বলে,
“আপনি মিথ্যা বলছেন। শুদ্ধ ভাই এমন ধরনের মানুষ নয়।”
ফাইজ হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“বিলিভ করছ না কেন? তোমার ভাই এতোটাও সাধু না।”
“কিন্তুু শুদ্ধ ভাই রাগ অভিমান করে থাকতে পারে না। সে ওই ধরনের মানুষই নয়। আপনি তাকে চেনেন না।”
ফাইজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমার লিটল কুইন তো দেখি ভীষণ বোকা। শুদ্ধকে আমার চেয়ে তুমি বেশি চিনো? শুদ্ধ এমনই বুঝলে? ভার্সিটি লাইফে এরকম অনেক ঘটনা ওর সাথে আমার আছে। মাঝে অনেকদিন ঠিকঠাকই ছিল। আবার আমি অনেকদিন পর রেগে ভুলভাল বলেছি। ওর ও লেগে গিয়েছে। এখন কি করা যায় ভাবছি।”
ইনায়ার হঠাৎ শুদ্ধকে জুতো ছুঁড়ে মারার কথা মনে পড়লো। কথাটা মনে আসতেই নিজেই হেসে ফেলল। ফাইজ ভ্রু কুঁচকে বলে,

“হাসছ কেন?”
ইনায়া হাসি আটকে বলল,
“জুতো মারুন। তাহলে শুদ্ধ ভাই খোলস থেকে বেরিয়ে আসবে।”
ফাইজ বোকা চোখে ইনায়ার দিকে তাকালো। শুদ্ধর হাওয়া তার বউয়ের মাঝেও একটু একটু আছে মনে হচ্ছে। ফাইজ কিছু বললো না। তার ভালো লাগছে না। সে সবসময় একটুতে রাগে, কিন্তুু এটা নেয়া যায়। ইরফানও সবসময় রাগে কিন্তুু ওর কারো সাথে তুলনা নেই। ওর টপিক বাদ। তবে এই ফাজিল শুদ্ধ রাগলে ফাইজের ভয় লাগে। এক্কেবারে গার্লফ্রেন্ড এর মতো অভিমান রাগ করে বসে থাকে। সেও বয়ফ্রেন্ড এর মতো বসে বসে শোক পালন করে। কি জীবন তার! আসলেই এরা সব ব্রিটিশ। বিয়ে টা করল, সাথে শান্তিও পালালো। তার সুখ শান্তি আশা করাই বোকামি। শুদ্ধ তাকে জ্বালিয়েই মারবে। ঠিক থাকলে তার কাজে বাগড়া দিবে হাসতে হাসতে। ঝামেলা বাঁধলে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে তাকে অসুস্থ বানাবে। ফাটা কপাল তো তার!

হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরল মাইরা। তারেক নেওয়াজ তাকে নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। মাইরা বাড়িতে প্রবেশ করল। আজ নতুন যে দু’টো কাজের মেয়ে এসেছে, তাদের মাঝে একজন এসে দরজা খুলে দেয়। মাইরা টুকটাক কথা বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ইরফানের ঘরে যায়। দুঃখের ব্যাপার ঘরের কোথাও ইরফান নেই। মাইরার ভীষণ মন খারাপ। মেয়েটা দ্রুত চেঞ্জ করে নিল, এরপর হাতমুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে নেয়।
এখনও ইরফানকে ঘরে না দেখতে পেয়ে মাইরা ছোট ছোট পায়ে ছাদের দিকে যায়। যাওয়ার সময় ইরফানকে তো ছাদে দেখল, যদি সেখানে থাকে। কিন্তুু সে বরাবরই হতাশ! নেই ইরফান। মেয়েটার এতো মন খারাপ হলো। কোথায় লোকটা? সবকিছু কেন যেন বিরক্ত লাগলো। ছাদের কোণায় গিয়ে দাঁড়ালো। বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। সে জানেনা সে ইরফানকে কেন খুঁজছে। কিন্তুু সে খুঁজছে। তাকে ডক্টরের কাছে না নিয়ে গিয়ে বাসায় বসে ছিল এটাই মাইরা মেনে নিতে পারছে না। মেনে নিতে পারছে না বলে আবার নিজের উপরও রাগ লাগছে। ওই লোক যা ইচ্ছে করুক তার কি?

সন্ধ্যার পর পর ইরফানদের বাড়িতে শুদ্ধ এসে হাজির হয়। তার মাকে নিতে এসেছে। তৃণা বেগম সামিয়াকে রেডি হতে বললেন সাথে মাইরাকেও রেডি হতে বললেন। মাইরা ইতস্তত করছিল, শুদ্ধর বাড়ি তে সে কখনো যায়নি। তৃণা বেগম বুঝিয়েছে তারা আবার আগামীকালকেই চলে আসবে। এরপর তৃণা বেগম আবারও যাবে শুদ্ধর বাড় কিন্তুু মাইরাকে এখানেই রেখে যাবে। একদিনের জন্য মাইরা তার সাথে গিয়ে থাকুক। মাইরার এমনিতেই ভীষণ মন খারাপ। ইনায়া আপুও নেই, সাথে ইরফানের জন্যও মন খারাপ লাগছে ভীষণ। তাই রাজি হলো। নতুন জায়গায় গিয়ে একটু থাকলে ভালো লাগবে। তাছাড়া তৃণা বেগম তো তার নিজের মানুষের মতো। তার সাথে যেতে ইতস্তত হওয়ার কিছু নেই। তাই ঝটপট রেডি হয়ে সামিয়া, মাইরা আর তৃণা বেগম শুদ্ধর সাথে বেরিয়ে পড়ে।
শুদ্ধ গাড়ি চালানোর ব্যস্ত। মুড অফ তার। হঠাৎ-ই মাথায় কিছু আসলো। মিটিমিটি হেসে মাইরার উদ্দেশ্যে বলে,

“সিসিটিভি কেমন আছো?”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“সিসিটিভি কে ভাইয়া?”
“তুমি। আর কে আছে এই ক্রেডিট নেয়ার?”
মাইরা মুখ ছোট করে বলে,
“কেমন অদ্ভুদ নাম!”
মাইরার পাশে বসা সামিয়া হেসে ফেলল। শুদ্ধ আবারও বলে,
“ইরফান কোথায় জানো?”
মাইরার মুখচোখে উৎফুল্লতা দেখা যায়। বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“উনি কোথায় ভাইয়া?”
শুদ্ধ শব্দ করে হেসে ফেলে। মাইরা থতমত খেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,

“উনি যেখানেই থাকুক। নেই ভালো হয়েছে। নয়তো আমাকে আপনাদের বাড়িতে যেতে দিতো না।”
শুদ্ধ বা হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরায়। ডান হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে মিটিমিটি হেসে বলে,
“ইরফান একটা ভয়ংকর মিটিংয়ে আছে মাইরা।”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ভয়ংকর মিটিং আবার কেমন?”
“তোমার জন্য ভয়ংকর মিটিং। আমাদের জন্য একদম সাদামাটা।”
তৃণা বেগম ছেলের পাশে সিটে বসে এগিয়ে গিয়ে শুদ্ধর কান টেনে বলে,
“এ্যই বাঁদর ওকে জ্বালাচ্ছিস কেন?”
শুদ্ধ মুখ ছোট করে বলে,
“উফ মা কান ছাড়ো। আমি সবসময় সবাইকে টাটকা খবর দিই। তাই সবাই আমাকে ভিলেন ভাবে, এসব কি নীতি!”
তৃণা বেগম শুদ্ধর কান ছেড়ে বলে,
“তোর টাটকা খবর মানেই তো অপর পাশের মানুষ শুধু জ্বলবে।”

শুদ্ধ হেসে ফেলল। কিন্তুু মাইরা হাসলো না। সামিয়া মেয়েটা শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধকে তার ভালো লাগে। ভীষণ মজার মানুষ সে। কিন্তুু সে ফারাহকে শুদ্ধর সাথে দেখার পর থেকে তার মন খচখচ করে কেন যেন। তৃণা বেগমকে বললে তিনি বলেন এরকম কিছু না। তৃণা বেগমের কথায় যদিও সামিয়া মেয়েটা স্বস্তি পায়, তবে পুরোপুরি না। সামিয়ার মনে প্রশ্ন জাগে, শুদ্ধ কি তাকে চেনে না? তার সাথে যে শুদ্ধর বিয়ে ঠিক এটা কি শুদ্ধ জানে না? মেয়েটা বুঝল না। শুদ্ধ তাকে দেখেনি, কথা বলা তো দূর। তাকে চেনে না এজন্য কথা বলে না, নাকি এভোয়েড করে, এটা সে বুঝতে পারে না।

কিছুক্ষণের মাঝে শুদ্ধ তাদের বাড়ির সামনে গাড়ির ব্রেক কষে। বাড়ির ভেতর গিয়ে শুদ্ধ ইরফানের ফোনে কল করে। রিসিভ হলো না। শুদ্ধ ইরফানের ফোনে ম্যাসেজ করে,
“মাইরাকে আমার বাসায় এনেছি। এখন আমার চাচাতো ভাইকে আনতে যাচ্ছি, বুঝলি? মাইরার থেকে তিন বছরের বড়। হাউ কিউট ম্যাচিং!”
দু’মিনিট না যেতেই শুদ্ধর ফোনে কল আসে ইরফানের। শুদ্ধ রিসিভ করল। ওপাশ থেকে ইরফান রেগে বলে,
“তোকে ছাড়বো না আমি।”
শুদ্ধ দুঃখ দুঃখ মুখ করে বলে,
“আমি বুঝলাম না, তুই আর ফাইজ আমাকে ছাড়তে চাস না কেন? আমি নাহয় বিয়ে করিনি, তাই এতিম। কিন্তুু তোরা তো বিয়ে করেছিস বাবা। বউ এর হক বন্ধুকে দিতে চাস। ছ্যাহ ছ্যাহ! তোদের নিয়ে আমি আর পারিনা বাপু!”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“তোর ভাইকে আনবি না ওখানে, নয়তো ওকেও ছাড়বো না বলে দিচ্ছি।”
শুদ্ধ হতাশ কণ্ঠে বলে,

“আরে ভাই, আমি সুন্দর বলে আমার চাচাতো ভাইও সুন্দর। এসব ভাবনা ঝেড়ে ফেল। তোদের শুধু ধরার ধান্দা!”
ইরফান রেগে বলে,
“ওকে কেন নিয়ে গেলি বে’য়া’দ’ব?”
শুদ্ধ নিঃশব্দে একটু হেসে নিল। এরপর নিজেকে সামলে বলে,
“কার কথা বলছিস বাবু?”
ইরফান দাঁত কিড়মিড় করল। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“বাড়ি গিয়ে যেন আমার বউকে আমার ঘরে পাই।”
বলেই খট করে কল কেটে দিল।
শুদ্ধ হেসে ফেলল। আপাতত বডিতে একটু এনার্জি পাওয়া গেল।
ইরফান বাড়িতে ফিরেছে মিনিট দশেক হলো। হাতঘড়িতে একবার সময় দেখল ১০ টা বাজে। ঘরে মাইরাকে না দেখে বিরক্তি হয়। ঘর থেকে বেরিয়ে রিতাকে পেয়ে গেলে তাকে জিজ্ঞেস করে মাইরার কথা। মেয়েটা জানায়, মাইরা শুদ্ধদের বাড়ি গিয়েছে। আর ফেরেনি। ইরফান বিরক্তিতে চোখমুখ কোঁচকালো। পকেট থেকে ফোন বের করে শুদ্ধ কে কল করে।
“হ্যাঁ বল। মাইরা কি করছে শুনবি?”
ইরফান চুপ করে আছে। শুদ্ধ আবারও বলে,

“মাইরা তো আমার চাচাতো ভাইয়ের কোলে ওঠার জন্য খুব বায়না করছিল, বুঝলি? আমি বুঝিয়ে সুজিয়ে বললাম যে, ইরফান তোমাকে কোলে নেয়ার জন্য দু’পা, দু’হাত খাড়া করে রেখেছে। বেচারি এটা শুনে একটু থামলো।”
কথাগুলো বলে কলটা মিউট করে শব্দ করে হাসলো শুদ্ধ। ওপাশ থেকে ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত গলায় বলে,
“দশ মিনিটে ওকে রেখে যাবি এখানে।”
শুদ্ধ কল আনমিউট করে গলা ঝেড়ে সিরিয়াস হয়ে বলে,
“আরে আজ অনেক রাত হয়েছে, কাল সকালে ওকে দিয়ে আসবো মাকে সহ। আজ ঘুমা বাবু।
একটু থেমে বলে,
ঘুম পাড়ানি মাসি পিষি, মোদের বাড়ি এসো..
ইরফান রেগে চিৎকার করে বলে,
“ওকে দিয়ে যা শুদ্ধ।”
শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানায়। এর বউকে আনাই ভুল হয়েছে। একবার বলেছে দিয়ে আসতে হবে মানে হবেই। হতাশ কণ্ঠে বলে,

“তোর বউ তুই নিয়ে যা। আমাকে বলছিস কেন?”
শুদ্ধর কথা শুনে ইরফান শান্ত হয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“কাজ আছে আমার। তুই রেখে যা। রাগাস না আমায়।”
শুদ্ধর কাছে একটু অদ্ভুদ লাগলো। যে ছেলে সব কাজ ফেলে তার গ্রামের পথ এখান থেকে প্রায় তিনঘণ্টা, সেখানে যেতে পারে। আর এখানে তার বাসায় আসতে ৩০ মিনিটও লাগে না, অথচ ইরফান আসছে না। কাজের দোহাই দিচ্ছে। শুদ্ধ হেসে বলে,
“ওকে যাচ্ছি। তবে যেতে দুই তিন ঘণ্টা লেট হবে।”
“হোয়াই?”
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,

“এতিম ছেলেকে বলছিস তোর বউ রেখে আসতে। আমি একটু আধটু চান্স নিব না! সাদামাটা একটা ডেইট হয়ে যাক তোর বউয়ের সাথে, কি বলিস! এটা আমার অধিকার, বঞ্চিত করলে হবে না। আমি একটু তোর বউকে রাতের শহর ঘুরিয়ে দেখাবো, হাতে হাত রেখে হেঁটে…..”
কল কেটে গিয়েছে। শুদ্ধ হাসলো। যাহ তাকে তো কথা শেষ করতে দিল না। কানে টান দিয়েছে, এবার ঘাড় এমনি আসবে।
ইরফান ডান হাতের মুঠোয় শক্ত করে ফোন চেপে ধরে, যেন ফোন এভাবেই গুড়িয়ে দিবে। শুদ্ধর গলা চেপে ধরতে না পারায় ফোনের উপর সেই ঝাল মেটাচ্ছে।
সময় নষ্ট না করে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। কোনোদিকে তাকালো না। সরাসরি তার বাবার ঘরে ঢুকে পড়ে। রুমা নেওয়াজ ঘরে ছিল না। তারেক নেওয়াজ চেয়ারে বসে অফিসের টুকটাক কাজ করছিল, ইরফানকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,

“কিছু বলবে?”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“ওকে এনে দাও।”
তারেক নেওয়াজ ছেলের কথা বুঝলেন না। প্রশ্নসূচক দৃষ্টি রেখে বলে,
“কাকে?”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,
“তোমার ছেলের বউ কে।”
ইরফানের কথা শুনে তারেক নেওয়াজের কেন যেন হাসি পায়। তবে নিজেকে সামলে বলে,
“মাইরা তো শুদ্ধর বাসায় গিয়েছে। তোমার ফুপি নিয়ে গিয়েছে। কালকেই চলে আসবে, চিন্তা কর না।”
কথাটা বলে আবারও কাজে মনোযোগ দেয়।
ইরফান এগিয়ে এসে রেগে বলে,

“ওকে এক্ষুনি এনে দিবে। অলটাইম, তোমার কথায় সব হবে না।”
ইরফানের কথা শুনে তারেক নেওয়াজ অবাক হয়। বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে,
“ঠিক আছে। কিন্তুু তুমি গেলেই তো পারো। আমাকে বলছো কেন?”
ইরফানের গম্ভীর গলা, তবে শান্ত কণ্ঠে তীব্র আফসোসের সুরে বলে,
“লিটল গার্লের সাথে আমাকে জড়িয়ে তুমি কাজটা একদম ঠিক করনি বাবা।”
তারেক নেওয়াজ অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান আর কিছু বলল না। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে শক্ত গলায় বলে, “ওকে এনে দাও এক্ষুনি।”
তারেক নেওয়াজ প্রশ্নাত্মক চোখে ইরফানের প্রস্থান দেখল। তিনি ইরফানকে একটুও বুঝলেন না। মাইরাকে বিয়ে করে ইরফান এখনো আফসোস করছে। আবার মাইরাকে দূরেও রাখছে না। কেমন যেন, দুটো একসাথে মিলছে না। সবচেয়ে বড় কথা ইরফান মাইরার কাজগুলো তাকে দিয়ে কেন করাচ্ছে? বিকেলে মাইরাকে হসপিটাল নিয়ে গেল, ইরফান বলেছিল। এখন শুদ্ধর বাসা থেকে তাকে আনতে বলছে। ইরফান কি চাইছে? বেশ কিছু প্রশ্ন মাথায় নিয়ে রাতেই মাইরাকে আনতে যাওয়ার জন্য বের হলো। তিনি ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন ইরফানের ব্যবহারে, কথাবার্তায়, চালচলনে।

সময় রাত ১০:১৫।
ফাইজ শুদ্ধর বাড়িতে বেল বাজায়। বেশ কয়েকবার বেল বাজালে মাইরা এসে দরজা খুলে দেয়। ফাইজ মাইরাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘কেমন আছে।’
মাইরা মাথা নেড়ে জবাব দেয়। ফাইজ শুদ্ধর কথা জিজ্ঞেস করলে বলে ঘরে। ফাইজ আর কিছু বলল না। মাইরা অবাক হয়েছে একটু। পরে আবার ভাবলো শুদ্ধ তো তার বন্ধু। আসতেই পারে। সে দরজা আটকে ঘরে চলে যায়।
ফাইজ শুদ্ধর ঘরে গিয়ে দেখল শুদ্ধ টানটান হয়ে শুয়ে আছে। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছে? ভাবনা রেখে শুদ্ধকে ডাকল, “এ্যাই শুদ্ধ?”
ফাইজের গলা পেয়ে শুদ্ধ তড়াক করে চোখ মেলে তাকায়। দেয়ালঘড়িতে একবার সময় দেখল। ভালোই রাত। এ এখানে কেন? দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। খালি গা, পরনে একটা ট্রাউজার। শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে বলে,

“তুই এখানে কেন? আমি যাকে তাকে দাওয়াত দিইনা, ভুল বাড়িতে চলে এসেছিস মনে হচ্ছে।”
ফাইজ কিছু বললো না। শুদ্ধ এগিয়ে এসে কিছু না বলেই কষিয়ে ফাইজের গালে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। ফাইজ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ফাইজের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“ভুল বাসাতেই এসেছিস। বেরো এখান থেকে।”
ফাইজ কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। থাপ্পড় খেয়েও কিছুই বললো না শুদ্ধ কে। রাগলোও না।
উল্টো ঘুরে ঘরের দরজা আটকে দেয়। শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে বলে,
“এসব কি? আমার ইজ্জতে হাত দেয়ার ধান্দা থাকলে এক্ষুনি বেরো। ছেলে হয়ে এসব কি?”
কথাটা বলে শুদ্ধ জিভেয় কা’ম’ড় দিল। আয় হায় সে তো রাগ করে আছে। রাগ করে থাকলে যা তা বলা যায় না। তার মিস্টেক হয়ে গেল! ফাইজ হেসে ফেলল। উল্টো ঘুরে বলে,
“তোর বোনের ইজ্জতে হাত দিতে পারিনি এখনো। তাই ভাবলাম, যে এরজন্য একটু হলেও দায়ী তার ইজ্জতে হাত দিলে মন্দ হয় না! কি বলিস!”

শুদ্ধ বিষম খেয়ে কেশে বলে,
“নাউজুবিল্লাহ! আসতাগফিরুল্লাহ! মাআআআআ বাঁচাও!”
ফাইজ এগিয়ে এসে বলে,
“লাভ নেই, চল শুরু করি!”
শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে বলে,
“কি?”
ফাইজ মিটিমিটি হেসে বলে,
“রোমাঞ্চ।”
শুদ্ধ কেশে উঠল। ব্যাপারটা হলো তার হাসি পাচ্ছে। এখন সে কি করবে? কিছুতেই হাসা যাবে না। অসম্ভব। দ্রুত উল্টো ঘুরে মুখ চেপে ধরল। নিজেকে দু’টো লাগাতে ইচ্ছে করল। ২৪ ঘণ্টাই হলো না, তার আগেই হাসছে! এসব কি? ফাইজ এগিয়ে এসে বলল,
“কি রে প্রিপারেশন নিচ্ছিস না-কি!”

শুদ্ধ পিছু ফিরে রেগে তাকায় ফাইজের দিকে। দৃষ্টি ঘুরে গেল ফাইজের গালে, যে গালে সে থাপ্পড় মেরেছে। খারাপ লাগছে তার। থাপ্পড় টা মারা উচিৎ হয়নি হয়তো। ফাইজকে ঠাণ্ডা দেখে আরও অনুশোচনা হচ্ছে।
ফাইজ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“মনে হচ্ছে আমাকে আর কিছু করতে হবে না।”
শুদ্ধ শান্ত চোখে তাকায় ফাইজের দিকে। এরপর গম্ভীর গলায় বলে,
“যারা আমাকে নিয়ে আফসোস করে তাদের সাথে আমি মরে গেলেও থাকি না।”
ফাইজ অসহায় কণ্ঠে বলে,
“ভুলে যা না ভাই! মন থেকে বলিনি বিশ্বাস কর। রেগে গিয়েছিলাম খুব। তাই ভুলভাল বলেছি। ইনায়া পুরো রাত পরে পরে ঘুমিয়েছে। তুই বল বিয়ের রাত নিয়ে সবার কত স্বপ্ন থাকে। আমার একদম ভেস্তে গিয়েছে। তাই মাথা ঠিক ছিল না।”
শুদ্ধ বুঝল ফাইজের কথা। মুখ বাঁকিয়ে বলল,

“আমি তো দুই-তিন ঘণ্টা প্যারা দিতে চেয়েছিলাম। তোর ভাইকে একটা ঘুমের ওষুধের চার ভাগের এক ভাগ দিতে বলেছিলাম। ওর ডোজ সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা থাকতো। তোর ভাই মাতব্বরি করল, তুই আমায় নিয়ে আফসোস করছিস! যা এবার। আমার লাগবে না তোকে। তোকেও আমাকে লাগবে না।”
কথাটা বলে ফাইজকে ঠেললে ফাইজ শুদ্ধকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অসহায় কণ্ঠে বলে,
“তোরও লাগবে আমাকে। আমারও লাগবে তোকে। বা’ল আমি রেগে কি যে বলছি, ভুলে যা সোনা ভাই আমার। তোর জন্য আমি বা’স’র টা করতে পারছি না। তাইলে বুঝ তোকে আমার লাগবে না-কি!”
কথাটা বলতে বলতে ফাইজ শুদ্ধর পিঠে আলতো হাতে কয়েকটা থাপ্পড় দেয়। শুদ্ধ হাসলো। কিন্তুু শব্দ করল না। গম্ভীর গলায় বলে,
“একটা শর্তে ভুলে যাব।”

ফাইজ শুদ্ধ কে ছেড়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি শর্ত? সবকিছুতে রাজি হয়ে যাচ্ছি। বল।”
শুদ্ধ গাল চুলকে মিটিমিটি হাসলো। অতঃপর বলে,
“তোর বা’সর ঘরে আমাকে এক কোণে জায়গা দিতে হবে।”
ফাইজ চোখমুখ কুঁচকে তাকায়। এই বেয়া’দব জীবনে শুধরোবে না৷ রেগে বলল,
“আমি বা’সর করবোই না। এবার শান্তিতে থাক।”
শুদ্ধ অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
“কি বলছিস? আমার বোনকে বিয়ে করার আগে ডক্টর টা দেখাবি না? ইনায়ার তো কপাল পুড়লো!”
ফাইজ বিরক্ত চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে যেতে যেতে বলে,
“যাহ আমার কাজ শেষ৷ তোর বোন ওয়েট করছে।”

শুদ্ধ ফাইজকে টেনে ধরে বলে,
“আমাকে উশকে দিয়ে পালাচ্ছিস কেন? আয় রোমান্স করে যা। আমি রেডি। আয় সোনা।”
ফাইজ চোখমুখ কুঁচকে তাকায়। রেগে বলে,
“এই বে’য়া’দ’ব আমি ফান করলাম। ছাড় আমায়।”
শুদ্ধ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
“বাট আমি সিরিয়াস। দাঁড়া ইনায়াকে জানিয়ে দিচ্ছি।”
কথাটা বলে সত্যি সত্যিই ইনায়াকে কল করল। ফাইজ দ্রুত শুদ্ধর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে চায়। ততক্ষণে ইনায়া কল রিসিভ করেছে। শুদ্ধ চেঁচিয়ে বলে,

“ইনায়া তোর বর আমাকে চুমু খেতে চাইছে। তোর হক আমাকে দিতে এসেছে। তুই দেখতে চাইলে ভিডিও কলে আয়।”
কথাটা বলে মুখ চেপে হেসে ফাইজের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এসো ফাইজ সোনা। তোমার আদর না পেয়ে পেয়ে আমি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছি গো! এসো।”
ফাইজ কটমট দৃষ্টিতে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। ওপাশে ইনায়া তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। অবাক হয়ে বলে,
“শুদ্ধ ভাই কি হয়েছে?”
ফাইজ শুদ্ধর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আমার লাইফে ব্রিটিশের আগমণ ঘটেছে। তুমি ঘুমাও লিটল কুইন। আজ আমি শুদ্ধ বাবুকে একটু আদর করব। অভিমান ভেঙে একটা আবদার করেছে। পূরণ না করে থাকতে পারছি না। বাই লিটল কুইন।”
বলেই কল কেটে দিল। শুদ্ধ হাসছে। ফাইজ শুদ্ধর ফোন বেডের উপর ফোন ছুঁড়ে ফেলে সত্যি সত্যিই শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে তাকায়। আমতা আমতা করে বলে,
“কি করছিস? আমি নিষ্পাপ বাচ্চা।”
ফাইজ কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তোকে পাপী বানাবো আমি এখন। আয় সোনা বাবু।”
শুদ্ধ লজ্জা পাওয়ার ভান করে দু’হাতে মুখ ঢেকে বলে,
“যাহ দুষ্ট! আমি লজ্জা পাচ্ছি।”

ফাইজ রেগে বলে,
“বে’য়া’দ’ব তোর লজ্জা আমি ভাঙাচ্ছি আয়।”
কথাটা বলে এগিয়ে আসলে শুদ্ধ চিংড়ি মাছের মতো লাফ দিয়ে বেলকনির দিকে যেতে নিলে ফাইজ শুদ্ধর ট্রাউজার টেনে ধরে। শুদ্ধ দ্রুত দু’হাতে তার ট্রাউজার টেনে চিল্লিয়ে বলে,
“আয় হায়! ছাড়। বোনের ইজ্জতে নজর দিতে লজ্জা করে না? ছ্যাহ ছ্যাহ কি দিনকাল আসলো! ওগো ফারাহ, দেখে যাও তোমার ভাই তোমার হকে নজর দিচ্ছে।”
ফাইজ শুদ্ধর ট্রাউজার ছেড়ে দিল। যে তিন চারটে বোতাম খুলেছিল সেগুলো লাগালো। শুদ্ধর কাণ্ড দেখে হাসছে। শুদ্ধ দু’হাতে তার ট্রাউজার ধরে আছে এখনো। কি বে’য়া’দ’ব ভাবা যায়? তার সম্পদে হাত দিতে যাচ্ছিল।
ফাইজ বেরিয়ে যেতে নিলে শুদ্ধ হঠাৎ-ই ফাইজের সামনে দাঁড়িয়ে ফাইজের অপর গালে আগের মতো করেই জোর খাঁটিয়ে আরেকটা থাপ্পড় মেরে দেয়। ফাইজ এবার অনেক বেশি অবাক হয়ে তাকায় শুদ্ধর দিকে। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“মারলি কেন?”
শুদ্ধ রেগে বলে,
“লেট করে আসলি কেন?”
কথাটা বলেই ফাইজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বিষাদ কণ্ঠে বলে,
“তোর আরও আগে আসা উচিৎ ছিল ফাইজ। আমার দমবন্ধ লাগছিল তুই লেট করলি বলে! প্রথম থাপ্পড় লেট করে আসার জন্য খেয়েছিস। দ্বিতীয় টা, না বোঝার জন্য।”
ফাইজ মৃদু হাসলো। কিছু বললো না।

তারেক নেওয়াজ মাইরাকে শুদ্ধর বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। মাইরা ধীরে পায়ে এগিয়ে যায় ইরফানের রুমের দিকে। তৃণা বেগম তারেক নেওয়াজ কে অনেকবার বলেছিল মাইরা থাকুক। কিন্তুু মাইরা নিজেই তৃণা বেগমকে না করে দিয়েছে। তার কেন যেন ভালো লাগছে না কোথাও। সে কেন যেন খুব ডিস্টার্ব। কিছুই ভালো লাগছে না। ইরফানের উপর ভীষণ অভিমান তার। ইরফান তাকে হসপিটালেও নিয়ে যায়নি। আবার এখন শুদ্ধ ভাইদের বাড়ি থেকেও নিতে যায়নি। এগুলো তো ইরফান-ই সবসময় করতো। মাইরা কখনো ভাবেনি এসব। কিন্তুু আজ হঠাৎ ইরফানকে তার পাশে না পেয়ে ভীষণ অশান্তি লাগছে।
মাইরা দরজা ঠেলে ভেতরে দৃষ্টি দেয়। তখনই ইরফান তার ঘরের ভেতরে যে রুমটা আছে সেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। মাইরাকে দেখে ইরফান দরজা লক করে মাইরার দিকে এগিয়ে আসে। মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান হঠাৎ-ই পায়ের গতি বাড়িয়ে মাইরাকে টেনে তার ঠোঁট দু’টো আঁকড়ে ধরে। মাইরা স্তম্ভিত হয়ে যায়। মেয়েটা বুঝতেই পারেনি।
মাইরা শান্ত। কয়েক সেকেন্ড পেরোতেই ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দিল। মাইরা মাথা নিচু করে রেখেছে। ইরফান ঢোক গিলে মৃদুস্বরে বলে,

“স্যরি!”
মাইরা অবাক হয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। মেয়েটার মাঝে লজ্জা সংকোচ কোনোটাই নেই। সে ইরফানকে চিনতে পারছেনা। তার দু’চোখে বিশাল কৌতুহল। ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়া মুছে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“ডিনার করেছ?”
মাইরা নিরবে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁসূচক সম্মতি দেয়। ইরফান মাইরার থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। আবারও তার সেই ঘরের দিকে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বলে,
“ঘুমাও।”

মাইরা ইরফানের দিকে তাকিয়ে রইল। তার খারাপ লাগছে কেন যেন। ঢোক গিলে ইতস্তত করে প্রশ্ন করে,
“আপনি কোথায় ছিলেন?”
ইরফান ঘরের দরজার লক খুলে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
“অফিস। হোয়াই?”
মাইরা মাথা নিচু করে রাখে। ছোট করে বলে, ‘এমনি।’

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৩

তার ভীষণ ইচ্ছে করল, ইরফানকে জিজ্ঞেস করতে, ইরফান কেন তাকে হসপিটাল নিয়ে গেল না? তখন তো অফিসে ছিল না!
এখন কেন শুদ্ধ ভাইয়ার বাড়ি থেকে তাকে আনলো না? কিন্তুু মনের কথা মনেই চাপা পড়ে থাকলো। জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৫