প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৩ (২)
Drm Shohag
ইরফান কথাটা বলে মাইরাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। দু’হাতের আঁজলায় মাইরার মুখটা নেয়। মাইরার চোখ বন্ধ। চোখের কোণে পানি। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
“কাঁদছো কেন?”
মাইরা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। রেগে বলে, “আপনি একটা অ’স’ভ্য।”
ইরফান মাইরার নাকের নোসপিনটার উপর আঙুল চালিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“ওকে। বাট ইট’স নরমাল। এসবের হ্যাবিট করে নাও।”
মাইরা বোকা চোখে চেয়ে বলে, “কোন সব?”
ইরফান নোসপিনের উপর বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে। মাইরা চোখ বুজে নেয়। ইরফান ঠোঁট বাকিয়ে বলে, “গাধা।”
মাইরা বিরক্ত হয়। এই লোকটা কি তাকে এসব ফালতু নামেই ডাকতে থাকবে? নিজে একটা গন্ডার হয়ে তাকে গাধা বলে। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে বলে,
“এক কাপ কোল্ড কফি আনবে। টাইম ফাইভ মিনিট’স। গো।”
মাইরা ছাড়া পেয়ে এক দৌড় দেয়। সে আর এখানে থাকে! পালাতে পারলে বাঁচে। শাড়ির উপর এখনো ওড়না জড়ানো। তবে মাথা থেকে ওড়না অনেক আগেই পড়ে গিয়েছে। ইরফান বিরক্ত চোখে চেয়ে বিড়বিড় করে,_____”স্টুপিট।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শুদ্ধ ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। তার মায়ের সাথে রাগ করে এখন খারাপ লাগছে। একটি ট্রাউজার পরে নিল, একটি ছাই রঙা টিশার্ট পরে নেয়। ইরফানদের বাসায় যেতে চাইলো, তার গ্রান্ডমা আসছে। অথচ সে রেগেমেগে তার মাকে কষ্ট দিয়ে বসে আছে। আসলে তখন হুট করেই রাগ উঠে গেল, কি যে ভুলভাল কথা বললো! এখন নিজে নিজে ভীষণ অনুশোচনাবোধ করছে ছেলেটা।
তখনই তার ফোনে টুং করে একটি নোটিফিকেশন আসে। শুদ্ধ ভেজা চুলে একবার হাত চালায়। ফোন টা নিয়ে ম্যাসেজ অপশন চেক করলে দেখল ইরফানের নাম্বার থেকে একটি মেসেজ এসেছে। শুদ্ধ অবাক হয়। এই ইহজীবনে তো এমন ঘটনা ঘটেনি। বিস্ময় চেপে মেসেজটি চেক করল। তিন লাইনের মেসেজটি পড়ে শুদ্ধর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বুকটা কেমন ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠল। কোনোরকমে আওড়ালো,______”ফারাহ পাখি!”
টেবিলের উপর থেকে গাড়ির চাবিটা নিল কাঁপা হাতে। এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় না করে যেমন ছিল তেমনি বের হলো রুম থেকে। একপ্রকার দৌড়ে তার মায়ের রুমে গিয়ে দেখল তৃণা বেগম বিছানায় সাথে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে আছে। শুদ্ধ হুট করেই তার মাকে জড়িয়ে ধরল। তৃণা বেগম থমকে যায়। তখনই দরজায় এসে সামিয়া দাঁড়ায়। শুদ্ধকে দেখে ভেতরে পা রাখতে গিয়েও থেমে যায়।
শুদ্ধ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,______”অ্য’ম স্যরি মা! আমি জানি তুমি আমার বেস্ট মা। প্লিজ মা তুমি আমার কথায় কষ্ট নিও না। রে’গে বলে ফেলেছি। আমায় ক্ষমা কর মা।”
তৃণা বেগমের হৃদয়ে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়। একটু আগের শুদ্ধর বলা কথাগুলো যেন নিমিষেই ভুলে গেল। শুদ্ধর পিঠে হাত রাখল নিঃশব্দে। শুদ্ধ তার মাকে ছেড়ে তার মায়ের দু’হাত আঁকড়ে ধরে। কাঁপা কণ্ঠে বলে,_____”মায়ের অভি’শাপ খুব খা’রা’প। তুমি কি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে আমায় অভি’শাপ দিয়েছিলে মা?”
তৃণা বেগম বিস্ময় চোখে তাকালেন ছেলের দিকে। শুদ্ধর চোখ দু’টো লাল। ভদ্রমহিলা শুদ্ধর গালে হাত দিয়ে বলে,_____”সন্তান যত বড় অপরাধ-ই করুক না কেন! মায়েরা কখনো তার সন্তানদের খারাপ চায় না বাবা।”
শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,____”তবে আমার ফারাহ ভালো নেই কেন মা? ওর অবস্থা ভালো নয়। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে…
কথা জড়িয়ে আসে। আবারও বলে,___আমার ফারাহ’র জন্য দোয়া করবে মা? ওর কিছু হলে আমার বাঁচা মুশকিল হয়ে যাবে। প্লিজ মা তুমি দোয়া কর।”
তৃণা বেগম বিস্ময় চোখে তাকায়। ফাইজের বোন ফারাহ’র কথা বলছে শুদ্ধ? শুদ্ধর চোখের কোণে জমা চিকচিক জলকণা তৃণা বেগমের চোখ এড়ায় না। তার ছেলেটা ওই মেয়েটার জন্য এতো ভাবে? আর সে আরেকজনের সাথে শুদ্ধকে বাঁধতে চাইছিল। নিজেকে সামলে বললেন,____”করবো দোয়া।”
শুদ্ধ আবারও তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,____”থ্যাঙ্কিউ মা।”
এরপর তার মাকে ছেড়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,____”আমি ওর কাছে যাচ্ছি মা।”
তৃণা বেগম অবাক হয়ে শুধু দেখলেন তার ছেলেটাকে। শুদ্ধ ঘর থেকে বেরোনোর সময় সামিয়ার সাথে ধাক্কা খেতে গিয়ে নিজেকে সামলে নেয়। মাথা নিচু করেই জড়িয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলে,____”স্যরি! আমার ফারাহকে অভি’শাপ দিবে না প্লিজ! ওর কোনো দোষ নেই। আমি এগেইন স্যরি!”
কথাগুলো বলে দ্রুত পায়ে বাড়ির বাইরে বের হতে অগ্রসর হয়। ডান হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে চোখের কোণে লেগে থাকা পানি ছিটকে ফেলল একবার। সামিয়া পিছন থেকে শুদ্ধকে শুধু দেখেই গেল। তার আফসোস হলো। শুদ্ধর এতো ভালোবাসা না পাওয়ার আফসোস! ফারাহকে ভাগ্যবতীর তালিকায় রাখলো। মনে মনে খুব করে চাইলো, শুদ্ধ আর ফারাহ যেন খুব ভালো থাকে। চাইতে কষ্ট হলেও চাইলো। কারণ শুদ্ধ যে সে মেয়েকে ভালোবাসে! তা আবার অল্প নয়, অনেক বেশি। সে হয়তো শুদ্ধকেই এতোটা ভালোবাসতে পারেনি এখনো। তবুও ভীষণ আক্ষেপ হলো এমন মানুষের ভালোবাসা না পাওয়ার আক্ষেপ। ভেজা চোখজোড়া, মলিন মুখ, নির্জীব দৃষ্টি নিয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেয়েটা।
ইরফানের দেয়া হসপিটালের অ্যাড্রেস অনুযায়ী শুদ্ধ এসে পৌঁছায়৷ একপ্রকার দৌড়িয়ে হসপিটালের ভেতর প্রবেশ করে। রিসিপশনে গিয়ে ফারাহ নামের পেসেন্ট কোন রুমে তা জিজ্ঞেস করলে, সেখান থেকে জানায় এই নামের কোনো রোগী নেই। শুদ্ধ দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে ইরফানের নাম্বারে কল করে। কিন্তুু পায় না। সে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হসপিটালের একদম ভেতরে গেল। যেতে যেতে ফাইজকে কল করল। সেও কল ধরল না। শুদ্ধর এতো রাগ হলো সবগুলোর উপর। এরা কল ধরে না কেন? এসব রেখে শুদ্ধ প্রায় পুরো হসপিটাল খুঁজল। এতো বড় হসপিটাল! খুঁজতে খুঁজতে ছেলেটা নাজেহাল। তার মাথা কাজ করছে না। ফারাহ কোথায়? হসপিটালের কোথাও ফারাহকে না পেয়ে শুদ্ধ বেরিয়ে আসে হসপিটাল থেকে। রাস্তার ধারে বসে দু’হাতে মাথার চুল টেনে ধরা গলায় বিড়বিড় করে,
“এ্যাই ফারাহ পাখি, কোথায় তুমি? উফ! আর জীবনে কাঁদাবো না তোমায়। প্লিজ এসো।”
মাইরা ইরফানকে কফি দিতে না গিয়ে ছাদে এসেছে। ফারাহ আর ইনায়ার সাথে বসে আবারও গল্প করছে। সে যে কাজ করে এসেছে এটা তো বলাই হলো না। অতঃপর বলে ওঠে,_____”ফারাহ আপু, শুদ্ধ ভাইয়া খুব তাড়াতাড়ি তোমার দিকে ধেয়ে আসছে।”
ইনায়া চোখ ছোট ছোট করে বলে,____”তুমি কিভাবে জানলে মাইরা?”
মাইরা ফিসফিস করে বলে,_____”তোমাদের ইরফান ভাইয়ের ফোন থেকে শুদ্ধ ভাইয়াকে ম্যাসেজ করেছি, ফারাহ এক্সিডেন্ট করেছে। অবস্থা খুব ক্রিটিকাল। আর একটা হসপিটালে এ্যাড্রেস লিখে দিয়েছি। তোমাকে মেরেছে এজন্য এটা ছোটখাটো শাস্তিও হয়ে গেল, সাথে তোমার কাছে ছুটতে ছুটতে আসবে। কেমন লাগলো?”
মাইরার কথা শুনে ইনায়া ফারাহ দু’জনেই চোখ বড় বড় করে তাকায়৷ ইনায়া মাথায় হাত দিয়ে বিস্ময় কণ্ঠে বলে,_____”মাইরা এটা কি করেছ তুমি?”
ফারাহ ভীত স্বরে বলে,____”শুদ্ধ ভাই জানতে পারলে আমায় মেরেই ফেলবে আজ।”
মাইরা মৃদু হেসে বলে,
“দ্রুত সম্পর্ক ঠিক করতে চাইলে একটু আধটু রাগ-ই ভালো। শুদ্ধ ভাইয়া কষ্টও পাবে জানি। কিন্তুু তুমি সেখানে অনেক ভালোবাসাও খুঁজে পাবে। তোমার মনে যে একটু একটু রাগ আছে মার খেয়ে,, এতো ভালোবাসা পেয়ে সব ভুলে যাবে। বুঝলে?”
ফারাহ অবাক হলো মাইরার কথা শুনে। এতোটুকু মেয়ের কাছে ফারাহ হয়তো এতো গুছানো কথা আশা করেনি। ইনায়া চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে বলে,
“ভাইয়ার হাতে আগে মার খেয়ে খেয়ে মনে হচ্ছে তুমি অভিজ্ঞ হয়ে গিয়েছ মাইরা! তাছাড়া তোমাকে মারের জন্য ভাইয়ার জন্য কি শাস্তি রেডি করছ? শুদ্ধ ভাই তো ফারাহ আপুকে মাত্র একবার মেরেছে।”
মাইরা মন খারাপ করে বলে,
“তোমাদের তো পরিবার আছে। তাই একটু-আধটু জামাইকে শাস্তি দিয়ে বাবার বাড়ি গিয়ে থাকতে পারবা। কিন্তুু…
বলতে গিয়েও থেমে যায়। অতঃপর নিজেকে সামলে বলে,
“তোমার ভাইয়া একটা খ’বি’শ লোক। আমার নাক…
বলতে বলতে থেমে গেল। মেকি হেসে বলল,
“মানে তোমার ভাইয়া গন্ডার।”
মাইরার কথায় ফারাহ হেসে বলে,
“তুমি ইরফান ভাইয়ের এসব কি নাম দিয়েছ। এসব শুনলে তো ইরফান ভাই তোমাকে আরও মারবে!”
ইনায়া হঠাৎ-ই মাইরার পিছনে তাকিয়ে বলে ওঠে,____”ভাইয়া কিছু বলবে?”
ইনায়ার কথায় মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়।
ইনায়ার চোখ অনুসরণ করে দ্রুত পিছু ফিরে মাথা উঁচু করে তাকায়। ইরফানকে গম্ভীর চোখে তার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে ঢোক গিলে। সে তো কফি নিয়ে যায়নি। এই লোকটার মতিগতি ভালো না। মাইরা ঢোক গিলে কিছু বলার আগেই ইরফান ঝুঁকে মাইরাকে কোলে তুলে নিল। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফান বড় বড় পা ফেলে ছাদ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। ইনায়া ফারাহ কিছু বললো না। ফারাহ’র তো টেনশনে ঘাম ছুটে যাচ্ছে। এমনিতেই জ্বর একেবারে ছাড়ছে না।
মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,_____”আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ! আমি কোল্ড কফি বানাতে পারি না।”
ইরফান সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে গম্ভীর গলায় বলে,____”নো নিড।”
ইরফান ঘরে গিয়ে মাইরাকে বেড এর উপর বসিয়ে ডোর লক করে দেয়। এরপর এগিয়ে এসে মাইরার দিকে চেয়ে শার্টের বোতাম খুলতে থাকে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফানের দাদির কথাগুলো মনে পড়লে তার শরীরে কাঁপন ধরে। মাইরা দ্রুত বেডের অপর পাশ দিয়ে নামতে গেলে ইরফান মাইরার হাত টেনে রেগে বলে,_____”ডিস্টার্ব নট অ্যালোড।”
ইরফানের পকেটে অনেকক্ষণ থেকে ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। ইরফান ডান হাতে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে শুদ্ধর নাম্বার দেখে বিরক্ত হয়। কল রিসিভ করে কিছু না শুনেই রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
কথাটা বলেই ফোন অফ করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
মাইরা তার হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়। ভীত কণ্ঠে বলে,_____”আমায় ছেড়ে দিন।”
ইরফান ডান হাতে গায়ের শার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেলে। মাইরার গায়ে জড়ানো ওড়নাটা টেনে ছুঁড়ে ফেলে। মাইরার অবস্থা বেহাল। কাঁধ উম্মুক্ত হয়ে যায়, সাথে শাড়িটা বেশ খোলামেলাভাবে পরানোয় মাইরাকে ইরফানের কাছে কেমন অন্যরকম লাগলো। ইরফান মাইরার সামনে বসে মাইরার মুখপানে তাকায়। চোখেমুখে মাদকতা। মাইরা ইরফানের দৃষ্টিতে থমকায়। ইরফানের বুকে দু’হাতে ঠেলে কাঁপা কণ্ঠে বলে,_____”কি করবেন আপনি?”
ইরফান দু’হাতে মাইরাকে টেনে তার সাথে জড়িয়ে নেয়। গলায় মুখ গুঁজে বিড়বিড় করে,____”তুমি বড় হয়েছ, তার প্রুফ নিব স্টুপিট গার্ল। একদম ডিস্টার্ব করবে না।”
মাইরা থেমে থেমে বলে,_____”না আমি বড় হয়নি। আমাকে ছেড়ে দিন।”
ইরফান বিরক্তি চোখে তাকায় মাইরার দিকে। মৃদুস্বরে বলে,_____”বলেছি না? ডিস্টার্ব করবে না? থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরা ঢোক গিলে। ইরফান ডান হাতে মাইরার কাঁধে থাকা আঁচল টান মেরে নামিয়ে দেয়। মাইরা দ্রুত ইরফানের সাথে লেগে যায়, যেন ইরফান তাকে দেখতে না পায়। মাইরা কাঁপা কণ্ঠে বলে,____”আমি বাড়ি যেতে চাই। ভাইইই..”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,_____”তোমার চুনোপুঁটি ভাই আমার থেকে তোমাকে বাঁচাবে?”
মাইরা ঢোক গিলে বলে,____”আমায় ছেড়ে দিন।”
মাইরার শরীর হালকা কাঁপছে। ইরফান জোর করে মাইরাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল। মাইরা দু’হাতে ইরফানকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চায়। ইরফান কয়েকবার মাইরার আঁচল ফেলে রাখা বডিতে দৃষ্টি বুলায়। শুকনো ঢোক গিলে মাইরাকে টেনে তার উম্মুক্ত বুকে আবারও জড়িয়ে নেয়। গলায় নাক ঘষে জড়ানো কণ্ঠে বলে,_____”I want to eat you.”
মাইরা মোচড়ামুচড়ি করে নিজেকে ছাড়াতে চায়। ইরফান হাতের বাঁধন আলগা করল। মাইরা দ্রুত ইরফানের দিকে সরে যায়। শাড়ির আঁচল তুলতে নিলে ইরফান মাইরাকে ঠাস করে বেডের উপর শুইয়ে দিয়ে মাইরাকে বেডের সাথে চেপে ধরে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান রেগে বলে,_____”স্টুপিট গার্ল আমাকে রাগাচ্ছো কেন?”
ইরফান রেগে বললেও কথার টোন কোমল। মাইরা ভয় পায়। কান্নামাখা গলায় বলে,_____”প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি ছোট।”
ইরফান মাইরার গলায় মুখ গুঁজে এলোমেলো কণ্ঠে বলে,____”ডিস্টার্ব কর না। তোমাকে পুরো বাসা ভর্তি চকলেট আইসক্রিম এনে দিব, ওকে?”
মাইরা ঢোক গিলে। ইরফানকে তার আপাতত একটা মাতাল লাগছে। বারবার শুকনো ঢোক গিলে মেয়েটা। ইরফানকে ঠেলে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,____”সরুন প্লিজ! আমার আপনাকে ভয় লাগছে।”
ইরফান মাথা তুলে তাকায় মাইরার দিকে। বিরক্তি কণ্ঠে বলে,_____”স্টুপিট মারছি তোমায়? ভয় পাচ্ছো কেন? আর একটা ফালতু কথা বললে থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব।”
মাইরা কান্নামাখা গলায় বলে,___”ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,____”উফ! শুধু ছাড়ুন ছাড়ুন করছ কেন? সারাজীবন ছাড়লে খাবো কবে স্টুপিট?”
মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,___”আমি আপনাকে আপনার পছন্দের সব খাবার রান্না করে দিব, প্রমিস।”
ইরফান মাইরাকে তার দিকে টেনে নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,____”No need. You are my most favourite dish.”
মাইরার ভীতি ঢোক গিলে। ইরফানের দাদির বলা কথা ভেবেই গায়ে কাঁটা দেয়। থেমে থেমে আবারও বলে, ______”ছাড়ুন আ…”
ইরফান রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,____”আর একবার এই ছাড়ুন ওয়ার্ড উচ্চারণ করলে তোকে খু’ন করব স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান মাইরার দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে মাইরার গালের সাথে তার গাল আলতো ঘষে। আদুরে সুরে বলে,_____”ইউ আর আ গুড গার্ল। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
মাইরা চাপ দাঁড়ির ঘর্ষণে গালে হালকা ব্য’থা পায়। তবে তা গায়ে মাখে না। এলোমেলো ইরফানকে দেখে সে হাসফাস করে। নড়াচড়া করতে চাইলেও পারলো না। ইরফান ঘনিষ্ঠ হয়। মাইরা ফুঁপিয়ে ওঠে। ইরফান বিড়বিড় করে,____”ডোন্ট ক্রাই, লিটল গার্ল।”
হঠাৎ-ই দরজায় লাগাতার কেউ ধাক্কায়। ইরফান বিরক্তি হয়। মাইরাকে টেনে নেয় আরও। দরজায় করাঘাত বেড়েই চলেছে। ইরফান চরম বিরক্তিতে মাথা তুলে তাকায়। মাইরার দিকে তাকিয়ে দেখল, মাইরা ফোঁপাচ্ছে, চোখমুখ লাল। ইরফান মাইরাকে আবারও টেনে নিয়ে আদুরে সুরে বিড়বিড় করে,____”মারছি না তো, আদর করছি। কাঁদে না লিটল গার্ল।”
মাইরা ইরফানের কথা তো শুনলোই না। উল্টে আরও ফোঁপায়। দরজায় করাঘাত বেড়েই চলেছে, যেন ভেঙে ফেলবে। ইরফান রেগে তাকায় দরজার দিকে। দরজার ওপাশের ব্যক্তিকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারলে বোধয় শান্তি পেত! মাইরা নিজেকে একটু আলগা অনুভব করতেই ইরফানের বক্ষদেশের তল থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। ইরফান দৃষ্টি ঘুরিয়ে তার নিচে অবস্থানরত নাজেহাল মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা সরে যেতে চাইছে বুঝতেই রেগেমেগে মাইরার উপর থেকে উঠে পড়ে। বেডের কোণায় একটা লাথি দিয়ে চিৎকার করে বলে,_____”এই বা’লের বউ তো এ জীবনে বড় হবে না, তার সাথে কোন জা’নো’য়া’র আমার রুমে যুদ্ধ করতে এসেছে।”
মাইরা ছাড়া পেয়ে দ্রুত শোয়া থেকে উঠে খাটের এক কোণা থেকে তার খুলে ফেলা শাড়ি টেনে নিয়ে নিজেকে পেঁচিয়ে নেয়। উল্টো ঘুরে ফোঁপায়। ইরফানকে তার ভয় লাগছে।
দরজার ওপাশে শুদ্ধ সমানে দরজা ধাক্কায়। ফাইজ বারবার বলছে,____”শুদ্ধ কি হয়েছে? এরকম করছিস কেন?”
শুদ্ধ রেগে তাকায় ফাইজের দিকে। শুদ্ধর চোখ দু’টো অসম্ভব লাল। ফাইজ বুঝলো না শুদ্ধর কি হয়েছে। শুদ্ধ ফাইজের হাত থেকে ফোন নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ছুঁড়ে মেরে ফাইজের কলার ধরে চেঁচিয়ে বলে,___”আর জীবনে যদি তোকে ফোন ইউস করতে দেখেছি না! তোর একদিন কি আমার দশদিন। যে ফোনে কল করলে কল ধরবি না, সেটা ইউস করবি কেন?”
ফাইজ বিস্ময় চোখে শুদ্ধর দিকে তাকায়। মেঝেতে পড়ে থাকা তার ফোন গুঁড়ো। দ্রুত সেদিকে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা কুড়িয়ে দেখল, ফোনের অবস্থা করুণ। শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,___”এটা কি করলি? আমার ফোনে ইম্পর্ট্যান্ট কত কিছু আছে।”
শুদ্ধ শুনলো না। আবারও ইরফানের দরজায় ধাক্কায়। মাথা পুরো আগুন হয়ে আছে তার। ইরফান হনহন করে গিয়ে ঘরের দরজা খুলে সামনে শুদ্ধকে দেখে রেগে কিছু বলার আগেই শুদ্ধ গায়ের জোরে ইরফানকে একটা ধাক্কা দেয়। ইরফান কয়েক পা পিছিয়ে যায়। জ্বলন্ত চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। ইরফান শুদ্ধকে ওর চেয়েও জোরে ধাক্কা দিয়ে সেও বাইরে বেরিয়ে এসে তার ঘরের দরজা টেনে দিয়ে শুদ্ধর কলার ধরে চিৎকার করে বলে,______”এই ডিস্টার্বের বাচ্চা কেন এসেছিস বল?”
শুদ্ধ নিজেও রেগে চিৎকার করে বলে,_____”আমার বউ কোথায়? কি করেছিস ওকে? বল? ও কোথায়?”
ইরফান বিরক্তি নিয়ে বলে,____”তুই আবার কবে বিয়ে করলি?”
শুদ্ধ ইরফানকে ধাক্কা দিয়ে বলে,______”আমার বউকে এনে দে। নয়তো তোর খবর আছে বলে দিচ্ছি।”
ইরফান শুদ্ধর দিকে তেড়ে আসতে নিলে ফাইজ দু’জনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলে,____”ভাই তোরা থাম। আমি এ বাড়ির জামাই। তোরা দু’টো মারামারি করছিস বোন জামাইয়ের সামনে। আমাকে একটু আপ্যায়ণ কর।”
শুদ্ধ ফাইজকে তার সামনে থেকে সরিয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে রেগে বলে,___”আমার ফারাহ কোথায়? বল?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,____”আই ডোন্ট নো।”
শুদ্ধর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এর সাথে ফারাহকে পাঠালো। ওর ফোনে ম্যাসেজ দিল ফারাহ’র মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়েছে। হসপিটালের এ্যাড্রেস দিল। এখন বলছে আই ডোন্ট নো! রেগেমেগে ইরফানের দিকে তেড়ে যেতে নিলে ফাইজ শুদ্ধ কে টেনে ধরে বলে,
“আরে ফারাহ তো এ বাড়িতেই। ওকে আর ইনায়াকে নিতেই তো আসলাম আমি।”
শুদ্ধ ফাইজের দিকে চেয়ে অবাক হয়ে বলে,___”ওর এক্সিডেন্ট হয়নি?”
কার?
ফারাহ’র।
শুদ্ধর কথা ফাইজ, ইরফান কেউই বুঝলো না। শুদ্ধ ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,____”তুই আমাকে ম্যাসেজ দিস নি, ফারাহ এক্সিডেন্ট করেছে?”
ইরফান দু’হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে গম্ভীর গলায় বলে,______”নো।”
শুদ্ধ অবাক হলো। ইরফান তো মিথ্যা বলবে না। তাছাড়া ফাইজ, ইরফান সবাই একদম স্বাভাবিক। তবে? ভাবনার মাঝেই পাশ থেকে ইনায়া ডেকে ওঠে,____”শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ সহ সকলে ডান দিকে পাশ ফিরে তাকায়। শুদ্ধর অসহায়ত্বে ভরা চোখদু’টো সর্বপ্রথম ফারাহ’র উপরেই পড়লো। ফারাহকে সুস্থভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একপ্রকার দৌড়ে গিয়ে ফারাহকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ফারাহ থমকায়। শুদ্ধর দ্রুতগতিতে চলমান হৃৎস্পন্দন শুনতে পায়। তার খারাপ লাগছে, শুদ্ধ নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে মিথ্যা খবর পেয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছে। সবার সামনে এভাবে ধরায় ফারাহ ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। শুদ্ধ বিড়বিড় করে,___”আমার জান আমার ফারাহ পাখি।”
ফারাহ চোখ বুজে নেয়।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। ফাইজ ইনায়া অবাক হয় শুদ্ধর কান্ডে। ইনায়া যদিও জানে, তবে ফাইজ তো কিছু জানেনা। সে শুদ্ধর এই কাজে ভীষণ বিরক্ত হলো। শুদ্ধকে ছাড়াতে যাওয়ার জন্য দু’পা বাড়ালে শুদ্ধ হঠাৎ-ই ফারাহকে ছেড়ে ফারাহ’র বাম গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। ফলস্বরূপ ফারাহ মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
ফাইজের পা থেমে যায়। সে আর ইনায়া বিস্ময় চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। ফাইজ দ্রুত তার বোনের পাশে হাঁটুগেড়ে বসে পড়ে। ইনায়া দ্রুত ফাইজের অপর পাশে বসে। ফাইজ ফারাহকে আগলে নিয়ে শুদ্ধর দিকে চেয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,_____”আমার অসুস্থ বোনটাকে তুই এভাবে মারলি কেন?”
শুদ্ধ চেঁচিয়ে বলে,_____”ওরা সব মিলে কি করেছে জানিস? আমাকে ইরফানের ফোন থেকে মেসেজ পাঠিয়েছে ফারাহ এক্সিডেন্ট করেছে, অবস্থা ভালো না। হসপিটালের এ্যাড্রেস দিয়ে দিয়েছে। আমিও পা’গ’লের মতো ছুটতে ছুটতে গিয়েছি। জান হাতে নিয়ে পুরো হসপিটাল একটা একটা করে সব রুম খুঁজেছি। কোথাও পায়নি। তোর বোনটা কি আমাকে একটুও মানুষ ভাবে না? আর কত?”
কথাগুলো বলতে বলতে চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়লো। চোখ বুজে নিজেকে শান্ত করতে চাইলো।
ফাইজ বিস্ময় দৃষ্টিতে শুদ্ধর দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এরপর দৃষ্টি নামিয়ে তার বুকে পড়ে থাকা বোনটার দিকে তাকায়। ফারাহ’র চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। ফাইজ ফারাহকে ধরে থাকায় বুঝলো ফারাহ’র গায়ে জ্বর এখনো আছে।
ইরফান খুব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে চেয়ে আছে, যেন কিছুই হয়নি। তার ফোন মাইরার নেয়ার কারণ এবার বুঝলো। ইনায়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে শুদ্ধর পাশে গিয়ে বলে,_____”তুমি না জেনে ফারাহ আপুকে কেন দোষারোপ কর শুদ্ধ ভাই? আমি, ফারাহ আপু কেউই এই ব্যাপারে জানতাম না। মাইরা এই কাজ আমাদের না জানিয়েই করেছে।”
শুদ্ধ চুপ করে শুনলো ইনায়ার কথা। কিছু বললো না। ফারাহ’র ব্যাপারে রাগ উঠলে কেন যেন সেটা সামলে নিতে পারে না। আগে এতোটা ছিল না। লাস্ট কয়েকদিন হলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। ভীষণ ডিস্টার্ব সে।
ফাইজ ইনায়াকে ধরে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। একটু গিয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,____”লিটল কুইন এসো।”
ইনায়া ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে ফাইজের পাশে দাঁড়ালে ফাইজ ডান হাতে ইনায়ার হাত ধরে। বা হাতে ফারাহকে ধরে এগিয়ে যায়। শুদ্ধ কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। ফাইজ ভীষণ রেগে আছে। এখানে কিছু বললে সিনক্রিয়েট করবে। তাই চুপ থাকলো।
ফারাহ খুব ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে পা ফেলে সিঁড়ি নামছে। শুদ্ধ অসহায় চোখে চেয়ে রইল। সে সবকিছু কেমন যেন ঘেটে দিচ্ছে। কি করবে এখন?
হঠাৎ-ই উল্টো ঘুরে ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,___”তোর বউকে থাপ্পড় মার যা।”
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ আবারও রেগে বলে,_____”তুই তোর বউকে থাপ্পড় মারবি? না-কি আমি মারব?”
কথাটা বলতে দেরি হলেও ইরফানের শক্ত থাপ্পড় শুদ্ধর গালে পড়তে দেরি হয়নি। শুদ্ধ নিজেও রেগে ইরফানের গালে থাপ্পড় মেরে দেয়। ইরফান পূর্বের চেয়েও দ্বিগুণ রেগে পরপর আরও দু’টো থাপ্পড় মেরে দেয় শুদ্ধর গালে। শুদ্ধ কিছু বলার আগেই ইরফান শুদ্ধর কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,_____”ভুলেও ওকে টাচ করার কথা মুখে আনিস না। আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না বলে দিচ্ছি।”
শুদ্ধ গালে হাত বুলিয়ে বলে,___”কি জোর মাইরি হাতে! লোহার প্রলেপ লাগিয়েছিস না-কি হাতে? আমি কত আদর করে মারলাম। আর তুই, শা’লা অকৃতজ্ঞ।”
ইরফান রেগে বলে,_____”ওকে মারতে বলার তুই কে?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,_____”ও আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে, বাঁদরামি করেছে, এখন আমি ওকে মারব। তুই সর তো।”
ইরফান রাগান্বিত স্বরে বলে,______”আর থাপ্পড় খেতে না চাইলে ওর চিন্তা মাথা থেকে ডিলিট করে ফেল।”
শুদ্ধ রেগে বলে,____”ও বাঁদরামি করেছে, ওকে কিছু বলবি না?”
ইরফান ভাবলেশহীনভাবে বলে,_____”নো। ও লিটল গার্ল। ও বাঁদরামি না করলে আর কে করবে?”
শুদ্ধ মাথায় হাত দিয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,____”ওমাগো এ তো দেখি ভূতের মুখে রাম রাম। তোর কি একটুও মনে নেই রে, এই লোহার তৈরী হাত দিয়ে তুই মেয়েটার নরম তুলতুলে গাল…
শুদ্ধ কথা শেষ করার আগেই ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,____”ওকে নিয়ে আর একটা কমেন্ট করলে তোকে ছাড়বো না বলে দিচ্ছি।”
শুদ্ধ চরম বিরক্তি নিয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। দুই দু’টো বেশি মারলো তাকে। সে আর ঘাটলো না। নয়তো এখানে মারামারি লেগে যাবে। এমনিতেই তার মনের অবস্থা কাহিল। তবে ফারাহকে সুস্থ দেখে বডিতে একটু এনার্জি পেয়েছে। অতঃপর বিরক্তি কণ্ঠে বলে,____”দেখ ভাই, আমাকে ফারাহ ধরার জন্য আছে। তোরা আর ধরাধরি করে আমি শুদ্ধকে অশুদ্ধ করিস না!”
ইরফান বিরক্তি নিয়ে শুদ্ধর দিকে চেয়ে রইল।
শুদ্ধ উল্টো ঘুরতে নিয়েও কিছু একটা দেখে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। ইরফানের ফর্সা বুকে নখের আঁচরের জায়গা টায় চোখ পড়লে অদ্ভুদভাবে বলে,_____”ওমা এসব বিশেষ আঁচড় তোর বডিতে কেন রে! তুই কি করছিলি?”
ইরফান বিরক্তি চোখে উল্টো ঘুরে তার ঘরের ভেতর যায়। শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে বলে,____”তোর না মানা বউয়ের সাথে এসব, ছ্যাহ! কি নি’র্ল’জ্জ রে তুই! মাইরাকে বের করে দে। আমি ওকে শাসন করে আমার কাছে রাখি। বাচ্চা মেয়েটা তোর কাছে একদম নিরাপদ নয়।
গলা উঁচিয়ে ডাকল,____”মাইরাআআ বেরিয়ে এসো। আমি তেমাকে বাঁচাতে এসেছি।”
ইরফান রেগেমেগে শুদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে বলে,_____”তোর মুখ কিন্তু আমি সেলাই করব শুদ্ধ বে’য়া’দ’ব।”
শুদ্ধর চোখ দু’টো বেশ লাল। তবুও মিটিমিটি হেসে বলে,____”সে তুই আমার যা খুশি সেলাই কর। আমি একটা বিড়ালকে কিছুতেই বাঘের খাঁচায় রেখে যেতে পারি না। আমি ভাই দরদী মানুষ। আহারে মাইরা টার জন্য কী কষ্ট হচ্ছে আমার! মাইরা বোনু নো টেনশন, আমি এসে গেছি। শুধু একটা থাপ্পড় মেরেই তোমাকে ভা…..
ভাই বলতে গিয়ে থেমে গেল। অতঃপর মিটিমিটি হেসে বলে,____আদর দিব। এসো বোনু থুক্কু জানু বেরিয়ে এসো।”
ইরফান রেগেমেগে শুদ্ধর দিকে তেড়ে গিয়ে রাগান্বিত স্বরে চিৎকার করে বলে,____”তোকে আমি পিস পিস করে কাটবো শুদ্ধ। শুধু একবার হাতের কাছে পাই।”
শুদ্ধ আগেই দৌড় দিয়েছে। ইরফান ভস্ম করে দেয়া চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে রইল। এরপর তার ঘরের ভেতর গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগায়। যেন শুদ্ধ কে আঁছাড় মারলো।
মাইরা শাড়ি চেঞ্জ করে জামা পরেছে। এতো জোরে দরজা লাগানোর শব্দ পেয়ে ইরফানের দিকে ভীত চোখে তাকায়। ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো। মাইরা বেডের এক কোণায় হাঁটু মুড়ে বসে আছে। ইরফান ঘরের লাইট অফ করে জিরো লাইট দিয়ে দ্রুত পায়ে বেডের উপর গিয়ে মাইরাকে টেনে তার সাথে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। মাইরা আবারও ভীত হয়। নিজেকে ছাড়াতে চায় ইরফানের থেকে। ইরফান তার দু’পায়ের মাঝে মাইরার দু’পা নিল। দু’হাতে শক্ত করে ধরল।
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৩
মাইরা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,____”ছাড়ুন আ…”
কথা শেষ করার আগেই ইরফান হঠাৎ-ই শোয়া থেকে বসে বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে পানিভর্তি গ্লাস নিয়ে টেবিলের সাথে বারি দিয়ে গ্লাসটা ভেঙে চোখা অংশ টুকু মাইরার গলার সামনে গেড়ে দেয়ার মতো করে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,____”আরেকবার ছাড়ার কথা বল? কি হলো বল? বলছিস না কেন? বল?”