প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬৭
Drm Shohag
ইরফান এগিয়ে এসে মাইরার সামনে হাঁটুমুড়ে বসে। মৃদুস্বরে ডাকে,
– বার্ডফ্লাওয়ার?
ইরফানের কণ্ঠ ভাঙা মনে হলো। মাইরার কান্না থেমেছে। মাইরার এভাবে কাঁদতে ভালো লাগে না। মেয়েটা নিজের কান্না নিজেই যেন সহ্য করতে পারছে না। সে মনে মনে ঠিক করল সে আর কাঁদবে না। তার শিসওয়ালা কষ্ট পায়। ওমন কঠোর মানুষকে এতো দুর্বল দেখতে মাইরার একটুও ভালো লাগে না। মাইরা দু’হাতে তার ভেজা মুখ মুছল। এরপর এগিয়ে এসে ইরফানের সামনে বসে। হাঁটুতে ভর দিয়ে একটু উঁচু হয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। অন্ধকার হওয়ায় তেমন দেখতে পেল না। নাক টেনে বলে,
– আপনার ফোন টা একটু দিন তো।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কি করবে?
মাইরা কিছু না বলে নিজেই ইরফানের পকেট হাতিয়ে ফোন বের করল। এরপর ফোনের লক খুলতে চাইলে পারে না। বিরক্ত হয়ে বলে,
– আগে আপনি বার্ডফ্লাওয়ার পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। এরপর চেঞ্জ করে কি দিয়েছেন?
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
– মাই বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা কিছু বলল না। সে ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে ইরফানের দিকে তাক করলে ইরফান চোখমুখ কুঁচকে চোখ বুজে নেয়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কি করছ?
মাইরা বা হাতে ফোন ধরে ডান হাত ইরফানের গালে হাত দিয়ে মলিন সুরে বলে,
– শিসওয়ালা আপনার হার্ট অনেক দুর্বল।
মাইরার কথা শুনে ইরফান চোখ মেলে তাকায়।
মাইরার হাতের লাইট টা একটু বাঁকিয়ে দেয়। দু’পা ভাঁজ করে মাঠের মাঝে বসে। দু’হাতে মাইরাকে টেনে তার কোলে বসিয়ে মাইরার গালে নাক ঘষে বলে,
– যাস্ট ফর ইউ।
মাইরা প্রশান্তিময় হাসলো। একটু ভেবে বলে,
– কিন্তু আপনি তো ভুল করছেন। আপনি জানেন না? রোগীদের হাসিখুশি রাখতে হয়। আর আপনি উল্টে নিজেই বসে বসে কাঁদছেন।
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– আমি কাঁদিনি।
মাইরা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– আপনি যে মিথ্যা বলার উপর পিএইচডি করেছেন সেটা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে?
ইরফান কিছু বলতে চায়, তার আগেই মাইরা দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে বেশ শক্তি খাঁটিয়ে পিছন দিকে ধাক্কা দেয়। ইরফান বুঝতে না পারায় পিছন দিকে হেলে ঠাস করে পড়ে যায়। তার উপর মাইরা। ইরফান চোখমুখ কুঁচকে বলে,
– স্টুপিট কি করছ? এখানে অনেক নোংরা।
মাইরা দু’হাতে ইরফানের গলা চেপে ধরে হেসে বলে,
– আপনাকে মে’রে ফেলব, বুঝলেন? মা’রার জন্য কে আবার পরিষ্কার জায়গা খোঁজে?
ইরফান মাইরার মুখপানে চেয়ে রইল নিরবে। এটুকু সময়ের মাঝেই মেয়েটা এভাবে হাসছে কিভাবে? ইরফান ভীষণ অবাক হলো। মাইরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– আপনি কি কি আসলেই গণ্ডার? আমি তো ভালোই জোর খাঁটিয়ে আপনার গলা ধরেছি। আপনি এমন স্বাভাবিক কেন?
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– কজ, তুমি অপুষ্টির পেসেন্ট।
মাইরা ইরফানের গলা ছেড়ে ইরফানের পেটের উপর উঠে বসে। ইরফান চুপচাপ মাইরার কার্যকলাপ দেখছে। মাইরা গাল ফুলিয়ে বলে,
– আপনি তো আমার দেয়া গণ্ডার নাম একদম স্বার্থক করে দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে একটু ব্য’থা পাওয়ার ভান করবেন বুঝবেন? নয়তো আপনি সত্যি সত্যি আকৃতিতেও গণ্ডার হয়ে গেলে তখন আমি অকালে বিধবা হয়ে যাব।
ইরফান অদ্ভুদভাবে বলে,
– এসব স্টুপিটদের মতো কথা কোথায় পাও?
মাইরা ইরফানের উপর সটান হয়ে শুয়ে পড়ল। দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে ইরফানের কানের কাছে মুখ নিয়ে আবেগি সুরে ডাকে,
– শিসওয়ালা?
ইরফান দু’হাতে মাইরার কোমড় জড়িয়ে ধরল। মৃদুস্বরে বলে,
– বলো বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা মিটিমিটি হেসে বলে,
– বিশ্বাস করুন, আমি এসব আজগুবি কথা আপনার পেট থেকে পেয়েছি।
ইরফান চোখমুখ কুঁচকে নেয়। মাইরাকে আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে,
– বাঁদরামি অফ করবে না?
মাইরা ইরফানের কাঁধে মুখ ঠেকিয়ে খিলখিলিয়ে হাসে। হাসতে হাসতেই বলে,
– আচ্ছা আপনি কি ভেবেছিলেন? আমি আপনাকে ভালোবাসার কথা বলব? শুনুন এসব কথা বলা স্বামীদের কাজ। বউদের কাজ স্বামীদের মুখ থেকে শোনা।
ইরফান মাইরার কথা শুনলো। ডান হাতে মাইরার হিজাব আলগা করে দেয়। এরপর গলার ভাঁজে ঠোঁট দাবালে মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান ঠোঁট বাঁকায়। বিড়বিড় করে বলে,
– ইউ নো? হাসবেন্ডদের আরও অনেক কাজ আছে। তোমাকে সুস্থ করে নিয়ে সব বোঝাবো।
মাইরা মাথা তুলে ইরফানের চোখের দিকে তাকায়। মলিন গলায় বলে,
– আপনার আঙ্কেলের কথা শুনেও আপনি কেন ভাবছেন, আমি বাঁচবো?
ইরফান রে’গে বলে,
– আঙ্কেল না হলে মা’র্ডার করে দিয়ে আসতাম তাকে।
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান চোখ বুজে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। নিজেকে শান্ত করে। মৃদুস্বরে বলে,
– কানাডায় আমার পরিচিত অনেকে আছে। আমি আমার এক ফ্রেন্ডের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। তার বাবা ডক্টর। সে তার বাবাকে রিপোর্ট দেখিয়েছে। আমি কথা বলেছি তার সাথে। তিনি বলেছেন, তোমার অপারেশন করাতে হবে না। কানাডার ট্রিটমেন্ট এর মান অনেক উন্নত। বাংলাদেশের ট্রিটমেন্ট এর মান অনেক লো। এরা তিল কে তাল করে। আঙ্কেল নিজের লোক বলে আমি তার কাছে গিয়েছিলাম। বাট, সে তো বাংলাদেশের-ই ডক্টর। ফা’ল’তু টাইম ওয়েস্ট করেছি। ডিজগাস্টিং!
একটু থেমে বলে,
– আজকেই কানাডার ফ্লাইটে উঠব। বুঝেছ?
মাইরা ঠোঁট উল্টে বলে,
– আবার কোথায় কোথায় নিয়ে যাবেন আমাকে?
ইরফান দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
– প্রয়েজন পড়লে পুরো বিশ্বের অল কান্ট্রিতে তোমাকে নিয়ে যাব, অান্ডারস্ট্যান্ড?
মাইরা দু’হাতের কনুই ইরফানের বুকে ঠেকিয়ে, দু’হাতের উপর তার থুতনি রেখে বলে,
– সব দেশের সরকার আপনার শ্বশুর হয়?
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– স্টুপিট। ইউ নো, আমি অলরেডি কতগুলো কান্ট্রির সাথে ইনভলভ?
মাইরা ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,
– কিভাবে?
ইরফান মাইরার গালে হাত গলিয়ে বলে,
– বিজনেস পারপাসে। আই প্রমিস ইউ, তোমার কিচ্ছু হবে না।
মাইরা চোখ বুজে মৃদু হাসলো। সে তো তার শিসওয়ালার একটুখানি ভালোবাসা চেয়েছিল। অথচ তার শিসওয়ালা তাকে তার চাওয়ার চেয়েও কতগুণ বেশি ভালোবাসে?
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– আমার বডি তোমার বেড মনে হচ্ছে?
মাইরা চোখ খুলে ইরফানের দিকে তাকায়। একটু ল’জ্জা পায়। মুখ লুকাতে ইরফানের বুকে মুখ ঠেকিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– হ্যাঁ, আমার পার্সোনাল বেড মনে হচ্ছে।
মাইরার উত্তরে ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। মৃদুস্বরে বলে,
– এতো উন্নতি হয়েছে কবে?
মাইরা ইরফানের কথার উত্তর করল না। একটু পর মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
– আপনি আমাকে পছন্দ করেন না, এই মিথ্যা বলতেন কেন?
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
– আই ডোন্ট লাইক ইউ, ইট’স ট্রু।
মাইরা রে’গে তাকায় ইরফানের দিকে। দু’হাতে আগের চেয়েও জোরে ইরফানের গলা চেপে বলে,
– খ’বি’শ লোক। মিথ্যাবাদী।
ইরফান চোখমুখ কুঁচকে বলে,
– স্টুপিট কি করছ?
কথাটা বলে মাইরাকে ঘাষের উপর ফেলে ইরফান মাইরার উপর আধশোয়া হয়। মাইরা ইরফানের গলা ছেড়ে চোখ বড় বড় করে বলে,
– কি করছেন? সরুন।
ইরফান মাইরার মাথা থেকে হিজাব সরিয়ে দেয়। এরপর মাইরার গলায় মুখ গুঁজে বিড়বিড় করে,
– এতোক্ষণ জ্বালিয়েছ। এবার স্টপ। রাত ১ টায় ফ্লাইট। ততক্ষণ এখানে ঘুমাও।
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। মাঠের মাঝে তাকে ঘুমাতে বলছে। একটু আগে নিজে চেঁচালো, এখানে না-কি নোংরা। আর এখন দেখো। ইরফানকে ঠেলে বলে,
– এখন আপনার গায়ে নোংরা লাগছে না?
ইরফান বিড়বিড় করে,
– নো। মেনে গিয়েছি।
ইরফানের কথা শুনে মাইরা কপাল চাপড়ালো। চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকায়। এই জায়গায় ১০০ হাত দূরেও কোনো মানুষ নেই। হেলিকপ্টার দাঁড় করানো। কিন্তু কোনো মানুষ নেই। চারপাশে কেমন অন্ধকার। মাইরা ঢোক গিলে ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। ভীত কণ্ঠে বলে,
– সরুন। এটা কোথায় এনেছেন আমাকে? মনে হচ্ছে এখানে জ্বিনেরাও থাকে না।
ইরফান মাথা তুলে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা মিনমিন করে বলে,
– আমি বাড়ি যেতে চাই, প্লিজ!
ইরফান মাইরার পিঠের নিচে হাত দিয়ে মাইরাকে সহ উঠে বসল। এরপর মাইরাকে নিয়েই উঠে দাঁড়ালো। নিচু হয়ে মাঠ থেকে তার ফোন উঠিয়ে ক্যাপ্টেনকে কে কল করে এখানে আসতে বলে।
মাইরা আগে সেভাবে খেয়াল না করলেও এখন বারবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছে। জায়গাটা আসলেই কেমন যেন ভুতুড়ে টাইপ। মেয়েটা ইরফানের দিকে সিটিয়ে দাঁড়ায়। ইরফান ফোন পকেটে রেখে মাইরার গালে হাত দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– হোয়াট হ্যাপেন্ড?
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– আপনি কি জানেন এখানে জ্বিন থাকে?
কথাটা বলে আবারও এদিক-ওদিক তাকায় মাইরা।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আই নো। তোমাকে ওদের সাথে পরিচয় করাতেই এখানে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করতে বলেছি।
মাইরা তড়াক করে ইরফানের দিকে তাকায়। দু’হাতে ইরফানের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
– অ’স’ভ্য লোক আপনি আমার সাথে মজা করছেন? আমি ভ’য় পাচ্ছি।
ইরফান ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। মাইরাকে কোলে তুলে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে হেলিকপ্টারের ভেতর বসে। মাইরার আবারও খা’রা’প লাগে। দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে রাখে। কাঁদতে চাইলো না, তবুও দু’ফোঁটা পানি চোখের কোণ ঘেঁষে গড়িয়ে পড়ে। ইরফান মাইরাকে নিজের সাথে জড়িয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– ইউ নো বার্ডফ্লাওয়ার? তুমি ঠিক আছো। বে’য়া’দ’ব ডক্টর আমার বার্ডফ্লাওয়ারের ভুল ট্রিটমেন্ট করিয়ে তোমার চোখের পানি ওয়েস্ট করিয়েছে। বাংলাদেশে এসে ওদের ডক্টরের লাইসেন্স কেড়ে নিব আমি। ওয়েট।
ইরফানের কথায় মাইরা হেসে ফেলল। ইরফান মাইরার মাথায় হিজাব টেনে দিয়ে হিজাবের উপরের একটু চুমু আঁকে। এরপর মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে রাখে। আগের চেয়ে কিছুটা ভালো লাগছে। ইরফান চট্টগ্রাম থাকতেই মাইরার সব রিপোর্ট থেকে শুরু করে এভরিথিং তার কানাডার ফ্রেন্ডকে দেয়।
বেশ কিছুক্ষণ আগেই সে ইরফানকে মেইল করে ইনফর্ম করে।
মাইরার ফুল কন্ডিশন ইরফান তার ফ্রেন্ড এর বাবাকেই সরাসরি বলে। সব শুনে ভদ্রলোক খুবই স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে বিষয়টি। যদিও দূর থেকে ১০০% সিওর কিছু বলতে পারছে না। তবে ইরফানের হাতে আপাতত যা আছে তা দিয়ে মাইরার কন্ডিশন অপারেশনের দিকে যায়নি। আপাতত এটুকুই অনেক বড় স্বস্তির।
ইরফান দাঁড়িয়ে আছে এয়ারপোর্টের সামনে। পাশেই মাইরা। ইরফানের বা হাতের মুঠোয় মাইরার ডান হাত। মাইরা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশটা দেখছে।
ইরফান মাইরাকে নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিল। সবার সাথে দেখা করে, খাবার খেয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল। কিছুক্ষণ আগেই এসে পৌঁছেছে। ইরফানের সাথে শুদ্ধ আর ফাইজ এসেছে। ফাইজ ইরফানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
– সব ঠিক হয়ে যাবে। টেনশন নিস না।
ইরফান ছোট করে বলে,
– হুম।
ফাইজ মাইরার দিকে চেয়ে মৃদুহেসে বলে,
– অল দ্য বেস্ট মাইরা। সুস্থ হয়ে ফিরে এসো। আমরা অপেক্ষা করব।
মাইরা মৃদু হেসে মাথা নাড়ে। এরপর ফাইজ ইরফানের থেকে বিদায় নিয়ে তার কাজে যায়। শুদ্ধ কোথা থেকে একটা পানির বোতল এনে ইরফানের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
এরপর মাইরার দিকে তাকিয়ে হেসে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,
– ওহে আমার মেলায় হারিয়ে যাওয়া বোন, অবশ্যই সুস্থ হয়ে ফিরবে বুঝেছ?
শুদ্ধর কথা বলার ধরনে মাইরা হেসে ফেলল। মাথা নেড়ে বলে,
– দোয়া করবেন ভাইয়া।
শুদ্ধ অসহায় মুখ করে বলে,
– আসতাগফিরুল্লাহ! এটা তুমি কি বললে মাইরা?
মাইরা একটু ভ’য় পেল। সে আবার কি বলল! ভুলভাল কিছু বলে ফেলল না-কি! আমতা আমতা করে বলে,
– কি বললাম ভাইয়া?
শুদ্ধ ইরফানের দিকে চেয়ে মিটিমিটি হেসে বলে,
– ভাই তোর বুক কি বেশি জ্বলছে? বিশ্বাস কর, তোর সারা বডি জ্বললেও আমি মাইরার জন্য দোয়া করব।
ইরফান বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে শুদ্ধর দিকে।
শুদ্ধ হাসল। এরপর মাইরার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
– মাইরা কোনো কানাডিয়ান ছেলেকে ভালো লাগলে সাথে সাথে আমাকে একটা খবর দিবে, বুঝেছ? আফটার অল আমি তোমার বড় ভাই বলে কথা! আমার একটা দায়িত্ব আছে না?
মাইরা এবার মনে মনে হেসে মাথা নেড়ে বলে,
– সত্যি ভাইয়া? কানাডিয়ান ছেলেদের সামনে থেকে দেখা আমার স্বপ্ন। হাউ কিউ….
ইরফান রে’গে চিল্লিয়ে বলে,
– সাটআপ।
শুদ্ধ হাসছে। মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– স্টুপিট গার্ল, রাগাচ্ছো কেন আমায়?
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– আপনি রাগছেন কেন?
ইরফান রে’গে বলে,
– থা’প্প’ড় খেতে না চাইলে মুখ বন্ধ রাখো।
মাইরা মুখ ফুলায়। এই লোকের এই কথা এ জীবনে যাবে না। মাইরা সামনের দিকে তাকালে চোখে পড়ল শুদ্ধর পিছন দিক থেকে সামান্য বাম দিকে নাছিমকে তার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাইরা বিব্রতবোধ করে। লোকটাকে তার অকারেণেই ভালো লাগে না। এমন নয় যে নাছিম বখাটে, তাকে ডিস্টার্ব করে। কিন্তু নাছিমের দৃষ্টি মাইরার কাছে ভীষণ অস্বস্তিকর লাগে। মাইরা ডানদিকে ইরফানের দিকে সিটিয়ে দাঁড়ায়, যেন মাইরাকে নাছিম দেখতে না পায়। নাছিম বোধয় বুঝল মাইরার মনোভাব। মৃদু হাসলো তা দেখে।
ইরফান শুদ্ধর দিকে চেয়ে রে’গে বলে,
– ইন ফিউচার, বার্ডফ্লাওয়ারের আশেপাশে নাছিমকে দেখলে,, আই সোয়ার, ওর অবস্থা সাহেল এর মতো করব আমি।
শুদ্ধ থতমত খেয়ে তাকায়। দ্রুত পিছু ফিরে তাকালে দেখল নাছিম এখনো মাইরার দিকে তাকিয়ে আছে। মাইরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শুদ্ধ কিছু বলার আগেই ইরফান মাইরাসহ উল্টো করে ঘুরে মাইরার হাত শক্ত করে ধরে এয়ারপোর্টের এন্ট্রি গেইটের ভেতর প্রবেশ করে। মাইরা ইরফানের দিকে তাকায় একটু পর পর। সাহেল নামটা পরিচিত লাগলো তার কাছে, কিন্তু মনে করতে পারলো না। ইরফান সেই লোকের সাথে কি করেছে? তার আশেপাশে থাকলে, এই লোকটার সাথেও তাই করবে বলল। মাইরার হিসাব মিলতে গিয়েও একটুর জন্য মেলেনা, কারণ সে সাহেলকে চিনতেই পারছে না।
শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। উল্টো ঘুরে এগিয়ে গিয়ে নাছিমের সামনে দাঁড়ায়। নাছিমের দৃষ্টি মাইরা আর ইরফানের গমন পথে। শুদ্ধ নাছিমের মাথাটা তার দু’হাতে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
– মাইরা চলে গিয়েছে।
নাছিম থতমত খেয়ে তাকায়। মেকি রাগ দেখিয়ে বলে,
– সামনে থেকে সর। ডিস্টার্ব করিস না।
কথাটা বলে নাছিম বাইক স্টার্ট দেয়।
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– এটা আমার বাইক সোনা। তোরা এখন আমার সাথে সাথে আমার বাইকটার দিকেও এমন কুনজর দিচ্ছিস কেন বুঝলাম না। আমি কিউট, আমার জিনিসও কিউট হবে স্বাভাবিক। কিন্তু তোরা আমার দিকে কু-নজর দিতে দিতে দেখছি আমি শুদ্ধকে অশুদ্ধ করেই ছাড়বি।
নাছিম বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– তোর মুখ ব্য’থা করে না?
শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
– না তো। তোর কান ব্য’থা করে?
নাছিম কিছু বলল না। শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– মাইরা হয়তো সুস্থ হয়ে যাবে বুঝলি? কিন্তু তোর নিজেকে সুস্থ করা উচিৎ। ইরফানের মন মে’জা’জ ভালো নেই বলে ঝামেলা করেনি। নয়তো আজ ওর হাতে মার খেতি।
নাছিমের মুখ মলিন হয়। অসহায় কণ্ঠে বলে,
– আমি তো শুধু দেখি বার্বি ডলকে। চাইনি তো।
শুদ্ধ সিরিয়াসনেস রেখে বলে,
– আমি একটা জিনিস ভাবলাম। তুই আর অন্তরা দু’টোই ছ্যাকাখোর।
এরপর নাছিমের দিকে জহুরি চোখে চেয়ে বলে,
– তুই কি অন্তরাকে বোনের নজরে দেখিস?
নাছিম রে’গে বলে, – জীবনেও না।
শুদ্ধ হেসে বলে,
– তাহলে তোদের বিয়ে দিয়ে দিই। আর পাঁচজন স্বামী-স্ত্রী রা গলা ধরে পিরীত করে। তোরা নাহয় গলা ধরে শোক পালন করবি। হাউ কিউট ইউনিক কাপল!
নাছিম শুদ্ধর বাম হাঁটু বরাবর জোরেসোরে এক লাথি বসায়। শুদ্ধ একটু পিছিয়ে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে। বেচারা কথার তালে বুঝতেই পারেনি। নাছিম রে’গে বলে,
– পারলে ওকে খু’ন করব আমি। সাথে তোকেও।
কথাটা বলে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। শুদ্ধ চেঁচিয়ে ওঠে।
– এই বে’য়া’দ’ব আমার বাইক দিয়ে যা। শা’লা এদের রা’গ উঠলে শুধু আমার বাইক নিয়ে টানাটানি করে ক্যান বুঝলাম না। ইশ! এই লাথির বদলা যদি না নিয়েছি রে নাছিম, আমার শুদ্ধ নাম পাল্টে আমি নিজেই অশুদ্ধ রাখবো। বে’দ্দ’প পোলা।
কানাডায় ফিরে ইরফান মাইরাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গিয়েছিল। প্রায় তিন ঘণ্টার মতো সময় নিয়ে মাইরাকে বেশ ভালোভাবে চেক-আপ করে জানিয়েছে, টিউমার মোটামুটি অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে, তবে ক্যান্সারে ট্রান্সফার হয়নি এখনো। ক্যান্সারে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই নিকটে।
তিনি একমাসের ঔষধ দিয়েছেন, এতে যদি কাজ হয়, তাহলে অপারেশন করাতে হবে না। এরপর আবারও ছয়মাস কোর্সের ঔষধ দিবেন। আর যদি এই একমাসে কোনো উন্নতি না হয়, তবে অপারেশন করাতে হবে।
কথাগুলো ভেবে ইরফান দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বুজল। মাইরা ডক্টরের কাছ থেকে ফিরে ঘুমিয়েছে। মেয়েটি আবারও কেঁদেছিল নিঃশব্দে। ইরফানের নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগে। তার বার্ডফ্লাওয়ারের এই রোগ কেন হলো? আরও কত কত রোগ আছে, যেগুলোর নিরাময় এট লিস্ট এতো কঠিন নয়, সব রেখে আল্লাহ কেন এটাই তার বার্ডফ্লাওয়ারের মাঝে দিয়ে দিল? ইরফানের চোখ দু’টো জ্বালা করে। মাইরার কণ্ঠ পেয়ে ইরফান দ্রুত চোখ মেলে তাকায়।
মাইরা ঘুমঘুম চোখে বেডের উপর বসে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান দ্রুত উঠে গিয়ে মাইরার সামনে বসল। মাইরা তার ঘুমঘুম চোখ কচলে বলে,
– আপনার চোখ লাল কেন?
ইরফান মাইরার কথা এড়িয়ে গিয়ে বলে,
– কি খাবে?
মাইরা ইরফানের দিকে তাকিয়ে রইলো৷ মাইরার খা’রা’প লাগে। লোকটা তার জন্য কত চিন্তা করে। মাইরা মৃদুস্বরে বলে,
– আমি ঠিক হয়ে যাব শিসওয়ালা।
ইরফান মাইরা চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে মৃদু হেসে বলে,
– আই নো, তোমার কিচ্ছু হবে না।
মাইরা মাথা নিচু করে বলে,
– আমার এখানে ভালো লাগছে না।
ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে বলে,
– বিড়াল এনেছি।
মাইরা তড়াক করে ইরফানের দিকে তাকায়৷ বিদেশি বিড়ালগুলো এতো কিউট হয়। মাইরা এর আগে সামনে থেকে কখনো দেখেনি। এখানে এসে রাস্তায় অনেকের কাছে মাইরা এটা দেখে ইরফানের কাছে আবদার করেছিল। ইরফান তাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিল। মাইরাও গাল ফুলিয়ে ছিল। ইরফানের সাথে আর কথা বলেনি, বাড়ি এসে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। এখন বিড়াল এনেছে শুনে তার চোখ দু’টো চকচক করে ওঠে। উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে,
– সত্যি এনেছেন?
ইরফান ছোট করে বলে,
– হুম।
মাইরা বেড থেকে নেমে ঘর থেকে বেরোতে গিয়েও পিছু ফিরে দু’হাত ইরফানের গালে দিয়ে হেসে বলে,
– শিসওয়ালা আপনি কত্ত ভালো! অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
কথাটা বলে মাইরা দৌড় লাগায় ঘরের বাইরে। ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– স্টুপিট, ধীরে যাও। পড়ে যাবে।
মাইরা শুনলে তো!
_
দেখতে দেখতে ১৫ দিন কেটে যায়। শুদ্ধ কানাডায় এসেছে ভার্সিটির কাজে। মূলত ইরফানের সাথে দেখা করাই মেইন উদ্দেশ্য ছিল, সাথে ভার্সিটির কাজও পড়ে গিয়েছে।
ইরফান বেডের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে বসে। বুকে দু’হাত আড়াআড়িভাবে গুঁজে রাখা। কপালে চিন্তার ভাঁজ। ডান পায়ের উপর বাম পা উঠিয়ে রাখা। শুদ্ধ ডিভানে বসে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– আহাদের বাবা লাস্টে মাইরার কথা কি বলেছে?
শুদ্ধর কথায় ইরফান চোখ মেলে তাকায়। চোখদুটো হালকা লাল। শুদ্ধর একটু খা’রা’প লাগলো। ইরফান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– টেন পার্সেন্ট রিকোভার করেছে।
ইরফানের কণ্ঠে প্রাণ নেই। শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
– এটাই কি কম? একটু ধৈর্য ধর। আরও ১৫ দিন বাকি আছে।
ইরফান ঘাড় বাঁকিয়ে খুলে রাখা দরজা বরাবর সোফার দিকে তাকায়। যেখানে মাইরা বিড়ালটিকে কোলে নিয়ে কি কি কথা বলছে, থেকে থেকে খিলখিল করে হেসে উঠছে। ইরফান ঢোক গিলে। হাস্যজ্জ্বল মাইরার পানে চেয়েই আক্ষেপের সুরে বলে,
– দ্যট’স নট এনাফ। এভাবে চললে ওকে অপারেশন করাতে হবে। আর অপারেশন করালে….
ইরফান থেমে যায়। কণ্ঠ কাঁপছে। শুদ্ধ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইরফানের পানে। নিজেকে সামলায়। এরপর মৃদু হেসে বলে,
– মাইরার মাঝে অসাধারণ এক প্রতিভা আছে বুঝলি? ও সবসময় হাসতে পারে। মন থেকে হাসে মেয়েটা। আর এটা ওর রিকোভারের মেইন মেডিসিন, বুঝলি?
ইরফান মাইরার পানেই চেয়ে। শুদ্ধর কথা শুনে ইরফান নিজেও সূক্ষ্ম হাসলো।
মাইরার কোল থেকে বিড়ালটি নেমে যায়। মাইরা সোফা থেকে নেমে তার পাশে থাকা ল্যাপটপটি একটি টেবিলের উপর রেখে দেয়। একটু আগে মাইরা তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, ইনায়া সবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছে। তার মা আর ভাইয়ের সাথে কলে কথা হয়েছে৷ তবে দেখতে পায়নি। মাইরার একটু মন খা’রা’প হয়। ইরফান বলেছে, আর ১৫ দিন পর তাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাবে, এই ভেবে মাইরার মন ভালো হয়।
তবে মাইরার কাছে এই বাড়িটা বেশ লাগে। পুরো পাঁচটি রুম। ওয়াশরুম গুলো-ই একটা রুমের সমান। বেলকনিগুলোও কি বিশাল! মাইরার তো ইচ্ছে করে, এই বাড়ি তুলে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে।
বিড়ালটিকে ইরফানের ঘরের দিকে যেতে দেখে মাইরা-ও পিছু পিছু আসে। বিড়ালটি শুদ্ধর পায়ের কাছে গিয়ে লেজ নাড়ায়। শুদ্ধ খেয়াল করেনি। পায়ের কাছে সুড়সুড়ি লাগায় শুদ্ধ নিচু হয়ে বিড়াল দেখে চিংড়ি মাছের মতো লাফ দিয়ে ডিফানের উপর পা তুলে বসে। ডান দিকে ফিরে দু’টো হাঁচি দেয়।
মাইরা শুদ্ধর কান্ড দেখে পেট চেপে হাসছে। শুদ্ধ নাক ডলে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
– ইন্না-লিল্লাহ! আমার শত্রুকে এ বাড়ি কে ঢুকতে দিল? এই ইরফান এটাকে বের কর।
কথাটা বলে আবারও হাঁচি দেয়। মাইরা এগিয়ে এসে বিড়ালটিকে কোলে নিয়ে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বলে,
– কি বলছেন ভাইয়া? ও আমার বাচ্চা লিও। ওকে বের করে দিতে বলছেন কেন?
শুদ্ধ নাক ডলে অদ্ভুতভাবে মাইরার দিকে তাকায়৷ এরপর মাইরার কোলে বিড়ালটির দিকে তাকায়। আবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। আরও একবার হাঁচি দিয়ে নাক ডলে বলে,
– কি রে ইরফান, তোর ডিএনএ তে যে প্রবলেম তা তো জানতাম না। কি বাচ্চা পয়দা করলি রে!
এ তো যে সে বাচ্চা নয়, একেবারে পশম ওয়ালা বিড়াল।
বলছি, তুই এতো ফাস্ট! ১৫ দিনেই বাচ্চা জন্ম দিয়ে দিলি? কি পাওয়ারফুল ডিএনএ রে তোর!
কথাটা বলে আরও দু’বার হাঁচি দিল শুদ্ধ। এই বিড়ালে তার এতো এলার্জি রে! এর সাথে এ বাড়ি থাকবে কি করে!
শুদ্ধর কথায় মাইরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চেয়ে আছে শুদ্ধর দিকে। ইরফান বিরক্ত চোখে চেয়ে আছে। মাইরা বোকাচোখে চেয়ে বলে,
– আপনার কথা বুঝিনি ভাইয়া।
শুদ্ধর চোখ নাক লাল হয়ে গিয়েছে। সে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে মিটিমিটি হেসে বলে,
– ইরফান তোমাকে হাতে কলমে বোঝাবে।
শুদ্ধ বেরিয়ে যেতেই মাইরা ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান কটমট দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। রূঢ় কণ্ঠে বলে,
– আমি বিড়ালের বাবা?
মাইরা ঠোঁট উল্টে বলে,
– না তো! কেন লিও কি আপনাকে বাবা বলে ডেকেছিল না-কি?
ইরফান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হাত বাড়িয়ে মাইরাকে ডাকে,
– কাম।
মাইরা বিড়ালটিকে নিয়েই ইরফানের পাশে গিয়ে বসল। ইরফান বিরক্ত হয় মাইরার কোলে বিড়ালটিকে দেখে। সারাদিন এর সাথে চিপকে থাকে তার বউটা। মাঝে মাঝে ইরফানের ইচ্ছে করে একে আছাড় মেরে নাড়িভুড়ি বের করে দিতে। কিন্তু মাইরার জন্য সে ইচ্ছেকে মে’রে ফেলতে হয়। ইরফান বিড়ালটির মাথার কাছে চিমটি দিয়ে ধরে উঁচু করে বিড়ালটিকে মেঝেতে নামিয়ে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে রে’গে বলে,
– আরে ওকে এভাবে ধরছেন কেন? আপনি আসলেই পা’ষা’ণ। একটা বিড়ালের প্রতিও আপনার সামান্যতম মায়া নেই।
ইরফান তার কাজ শেষ করে মাইরাকে তার কোলে বসিয়ে নেয়। মাইরা ঘাড় নিচু করে দেখতে চায়, বিড়ালটি কোনদিকে গেল। ইরফান দু’হাতে মাইরা দু’গাল চেপে নিজের দিকে ফেরায়। মাইরা কিছু বলার আগেই ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
– বিড়ালের বাবা হওয়ার কোনো ইন্টারেস্ট আমার নেই। অ্যান্ড তোমাকে-ও বিড়ালের মা বানানোর ইন্টারেস্ট নেই। ওকে?
একটু থেমে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
– তুমি আমার বেবির মা হবে, আন্ডারস্ট্যান্ড?
ইরফানের কথায় মাইরার কেমন অদ্ভুদ অনুভূতি হলো। কথার তালে হঠাৎ-ই বলে ফেলে,
– কবে?
কথাটা বলে মাইরা থতমত খেয়ে যায়। ভীষণ ল’জ্জা পায় মেয়েটা। ইরফানের দৃষ্টি থেকে বাঁচতে দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়। ইরফানের কোল থেকে নামতে চাইলে ইরফান হাতের বাঁধরন আরও শক্ত করে।
মাইরার নত মুখপানে চেয়ে ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসে। মাইরাকে নিজের দিকে আরেকটু টেনে নিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
– তুমি কবে আমার বেবির মা হতে চাইছ বার্ডফ্লাওয়ার?
মাইরা চোখ খিঁচে নেয়। ইশ! বেফাঁস কথা বলে বলে শুধু ফেঁসে যায়। একটু পর চোখ মেলে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। আমতা আমতা করে বলতে নেয়,
– শিস…
বাকিটুকু আর বের করতে পারে না। ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা চোখ বুজে পিছন দিকে হেলে পড়তে নেয়। ইরফান দু’হাতে আগলে নেয় অনুভূতির জোয়ারে ভাসতে থাকা তার বার্ডফ্লাওয়ারকে।
দেখতে দেখতে আরও পাঁচদিন পেরিয়ে গিয়েছে। শুদ্ধ কানাডাতেই আছে। ভার্সিটির জন্য তার মোটামুটি কাজের চাপ আছে।
ঘড়ির কাটায় জানান দেয় রাত ১২ টা। শুদ্ধ ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। ফারাহ’কে বেশ কয়েকবার কল করে। কল রিসিভ হয় না। ফারাহ’র ভার্সিটি এখন। না ধরাই স্বাভাবিক। শুদ্ধ তবুও বিরক্ত হলো। পুরো পাঁচদিন দেখেনি তার পাখিটাকে। কি জ্বালা! বিয়ে করেও বিরহ তার। এই পাঁচদিনে মাইরার আগের চেয়েও অনেকটা উন্নতি হয়েছে। শুদ্ধ স্বস্তি পায়। ইরফান টা বাংলাদেশে গেলে সে আগে বিয়ে করবে। এসব দূরত্ব আর নেয়া যায় না। হঠাৎ-ই পিছন থেকে কেমন যেন জড়ানো কণ্ঠ পায়। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে পিছু ফিরে তাকায়। হালকা আলোয় ইরফানকে স্পষ্টই দেখল। ভাবনার মাঝেই ইরফান এলোমেলো পায়ে এগিয়ে আসে শুদ্ধর দিকে। আঙুল উঁচিয়ে বলে,
– আমার বউ কোথায়?
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকায় ইরফানের দিকে। এগিয়ে গিয়ে বলে,
– মাইরা তো ঘুমিয়েছে। তুই-ই তো বললি ঘণ্টাখানেক আগে।
ইরফান ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না। চোখ খোলে আবার বোজে। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– তুই কি অসুস্থ না-কি?
ইরফান এলোমেলো কণ্ঠে বলে,
– আমার অনেক কষ্ট
শুদ্ধ অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। এর হয়েছে কি? ভাবনার মাঝেই ইরফান এলোমেলো পায়ে এসে হঠাৎ-ই শুদ্ধকে জড়িয়ে ধরে।
শুদ্ধ তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। এই ইহজীবনে ইরফান এমন করেছে বলে তো তার মনে পড়ে না। ইরফানের কাঁধে হাত রেখে চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬৬ (২)
– এই ইরফান ঠিক আছিস?
ইরফান শুদ্ধকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে ভাঙা গলায় বলে,
– নো নো। আমি ঠিক নেই। ইউ নো? বার্ডফ্লাওয়ার শুধু আমাকে হার্ট করে। সি ইজ আ সেলফিশ গার্ল।