প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬৮

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬৮
Drm Shohag

ইরফান এলোমেলো পায়ে ছাদের কিনারায় গিয়ে প্রাচীর উপর উঠে বসতে চায়, শুদ্ধ দ্রুতপায়ে গিয়ে ইরফানকে ধরে বলে,
– আরে কি করছিস? যেভাবে ঢুলছিস পড়বি তো।
ইরফান পিছু ফিরে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধর গায়ে হেলে গিয়ে বলে,
– তাহলে তুই আমাকে কোলে নে।
শুদ্ধ তব্দা খেয়ে বলে,
– এ্যাঁ!
ইরফান বিরক্ত হয়ে আবারও ঢুলতে ঢুলতে ছাদের মেঝেতে বসে। পিছনে রেলিঙের সাথে হেলান দেয়। ডান পা মেলে রেখে বা পা ভাঁজ করে, বা পায়ের উপর বা হাত রাখে।
শুদ্ধ এতোক্ষণে বুঝেছে সে এক মাতালের সাথে আছে। কিন্তু একে এসব ছাইপাঁশ খাইয়েছে কে? ইরফান তো এসব খাওয়ার বান্দা নয়। উল্টে এসবের নাম কেউ নিলে ইরফান ঠাস করে লাগিয়ে দিবে, সে নিজেই এসব খেয়ে এসেছে। শুদ্ধর বিশ্বাস হলো না। এসব ভাবনা রেখে ইরফানের দিকে এগিয়ে গিয়ে ডাকে,

– ইরফান?
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
– আমার সুস্থ বার্ডফ্লাওয়ার কে আমার কাছে এনে দিবি ব্রো?
ইউ নো? ওকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হয়।
ইরফানের কথায় শুদ্ধ হাঁটু গেড়ে বসল। ইরফান মাথা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– ওকে ছাড়া টু ইয়ার’স থেকেছি। তখনও কষ্ট হতো।
আর এখন ভীষণ ভীষণ কষ্ট হয়, ও কবে সুস্থ হবে?
তখন ভাবতাম, ওকে একদিন পেয়ে যাবো। আর এখন ভাবতে হয়, ওকে কি হারিয়ে ফেলব? এটা ভাবলে আমার শ্বাসকষ্ট হয়। আমার তো শ্বাসকষ্ট নেই, রাইট? তবুও এটা কোথা থেকে আসে?
শুদ্ধ ইরফানের পাশ বরাবর একটু সামনে বসল। চুপচাপ ইরফানের দিকে তাকিয়ে রইল। ইরফান রেলিঙের সাথে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। চোখ বুজে রেখেই আবারও বলে,
– আমি কি অনেক বেশি নি’কৃ’ষ্ট হাসবেন্ড? বার্ডফ্লাওয়ার আমার থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল কেন?
আমি ওকে থা’প্প’ড় মেরেছি বলে ও এতো বড় শাস্তি দিল আমায়? ও আমার কাছে এসে কেন অভিযোগ করল না? প্রতিটা থা’প্প’ড় এর বিনিময়ে ও আমায় হাজারটা লাথি দিতো। ও চাইলে আমি আমার এই হাত দু’টো কেটে ফেলতাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু ও আমাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে আমায় এতো বাজেভাবে হার্ট করল। কেন করল এমন?
শুদ্ধ অসহায় চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে।
মাইরা ঘুম থেকে উঠে ইরফানকে না পেয়ে ছাদের দিকে উঠে এসেছিল। ইরফানকে ছাদের মেঝেতে বসে বলা প্রতিটি কথা শুনলো ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে। কখন যে চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে, তা টের পেল না। ছাদের কোণায় দাঁড়িয়ে ভেজা চোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে রইল। তার শিসওয়ালা কে সে কত কষ্ট দিয়ে দিয়েছে! মাইরার মনে পড়লো, ইরফান যখন তাকে থা’প্প’ড় দিতো, তখন মাইরার ভীষণ খা’রা’প লাগতো। কিন্তু পরে ভাবতো, লোকটা তাকে নিজের ইচ্ছেয় বিয়ে করেনি, তাই একটু-আধটু মারছে, মাইরাও মার খেয়ে ভুলে যত। এখনও ভুলে গিয়েছে। কিন্তু লোকটা ভাবছে, সে ইরফানকে শাস্তি দিতে এমন করেছে। সে তো জানতোই না, তার শিসওয়ালা তাকে ভালোবাসে। জানলে কি কখনো এমন করত?
ইরফান একটু থেমে ডান হাত বুকের বা পাশে রেখে আবারও অস্ফুটস্বরে বলে,

– এইতো এখানে ব্য’থা হয় খুব। ও আমার এখানে কেন এতো ব্য’থা দিল? ও তো বার্ডফ্লাওয়ার। বার্ডফ্লাওয়ার মানে তো ফুল। ফুলদের মন নরম হয় না?
আমি তো পা’ষা’ণ, কিন্তু আমার বার্ডফ্লাওয়ার তো নরম ফুল, তবে ও কেন আমায় পা’ষা’ণদের মতো আমার হার্টে এতো আঘাত করল?
ইরফানের কণ্ঠে অসহায়ত্ব। কণ্ঠ ভাঙা।
ছাদের অপর পাশে লাইট জ্বালানো। সেই আলোর কিছু অংশ ইরফানের মুখের উপর এসে পড়ায় ইরফানকে স্পষ্ট দেখা গেল। ইরফানের গাল ভেজা। বন্ধ চোখের পাতা বেয়ে জল গড়িয়েছে। শুদ্ধ অবাক হলো না, ইরফানকে তার কাছে আপাতত একটা বাচ্চা লাগলো। যারা অকপটে তাদের মনের কথা যার তার সামনে উগলে দেয়।
মাইরা ইরফানের পানে চেয়ে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়। অসহায় চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। তার শিসওয়ালাকে সে অনেক কষ্ট দিয়ে দিয়েছে? মাইরার নিজের উপর ভীষণ রা’গ হয়। কান্নামাখা চোখে চেয়ে বিড়বিড় করে, – স্যরি শিসওয়ালা।
একটু পর ইরফান চোখ মেলে তাকায়। শুদ্ধর দিকে এগিয়ে গিয়ে ঝাপসা চোখে চেয়ে বলে,

– তুই কে?
শুদ্ধ ইরফানের কথায় হেসে ফেলল। হাসি আটকে বলে,
– আমি তোর ভাই। ভুলে গেলি?
ইরফান চোখ দু’টো টেনে তুলে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করে বলে,
– ও হ্যাঁ। তুই শুদ্ধ বাঁদর, রাইট?
শুদ্ধর মুখটা প্যাঁচার মতো হয়ে যায়। বে’দ্দ’প, তাকে ইনসাল্ট করছে। ইরফান বাচ্চাদের মতো করে বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ার আমাকে কষ্ট দিয়েছে জানিস ব্রো?
শুদ্ধর মায়া হলো। ইরফানের চোখ থেকে থেকে আবারও পানি গড়িয়ে পড়ে। শুদ্ধ এবার বেশ অবাক হয়। এমন ইরফানকে সে এই জীবনে দেখেনি। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছে ইরফান ভীষণ কঠোর মনের। সেই ছেলে তার সামনে বসে বসে বাচ্চাদের মতো চোখের পানি ফেলছে। ইরফান একটু পর পর শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে। শুদ্ধর দিকে চেয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,

– বার্ডফ্লাওয়ার সেলফিশদের মতো ম’রে যেতে চাইলো। আমার কথা ভাবলো না একবারও। ও না থাকলে আমার হার্টে ব্য’থা করবে, ও এটা একবারও ভাবলো না। এটা কি ঠিক করেছে বল? বার্ডফ্লাওয়ার ছাড়া শিসওয়ালা বাঁচবে না। বার্ডফ্লাওয়ার এটা বোঝে না কেন?
ইরফান কথাগুলো বলে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে ঝাপসা চোখে, যেন শুদ্ধর কাছে এর উত্তর আছে, আর ইরফান অধীর আগ্রহে উত্তরের অপেক্ষা করছে।
ইরফানের কথাগুলো শুনে মাইরা দু’হাতে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদে। তার শিসওয়ালা তাকে ছাড়া বাঁচবে না। সে সত্যিই স্বার্থপর। সে কেন বোঝেনি তার শিসওয়ালা কে? তার শিসওয়ালা তার কত যত্ন করতো। আর সে সেসব যত্নকে ভুলভাল নাম দিতো।
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– শিসওয়ালা কে?
ইরফান চোখ বুজে ডান দিকে ঘাড় কাত করে। মৃদু হেসে বলে,

– আমি বার্ডফ্লাওয়ারের শিসওয়ালা। তুই জানিস না? ইট’স ভেরি ব্যাড। বার্ডফ্লাওয়ার ভালোবেসে কি সুন্দর করে শিসওয়ালা ডাকে। ও খুব ভালো।
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– একটু আগেই তো বললি তোর বার্ডফ…..
ইরফান রে’গে দুর্বল শরীরে ডান হাতে শুদ্ধর বুকে ধাক্কা দেয়। আঙুল উঁচিয়ে বলে,
– একদম এই নাম উচ্চারণ করবি না। শিসওয়ালা ছাড়া আর কেউ বার্ডফ্লাওয়ারের নাম মুখে নিলে ওর মুখ একদম ভেঙে দিব, আন্ডারস্ট্যান্ড?
শুদ্ধ হেসে ফেলে ইরফানের কথায়। হাত তালি দিয়ে বলে,
– ওয়াহ! কি ভালুপাশা! তা নাহয় তোর ওর নিক নেইম বললাম না। কিন্তু তুই নিজেই তো মাইরাকে সেলফিশ গার্ল বললি। আবার ভালো-ও বললি। আসলে ও কোনটা?
ইরফান আবারও মুখটা অসহায় করে ফেলে। শুদ্ধর দিকে হেলে গিয়ে শুদ্ধর কাঁধে কপাল ঠেকায়। শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়৷ ইরফান ওভাবেই ভাঙা গলায় বলে,

– সি ইজ আ ম্যাজিকাল গার্ল। ও যখন শিসওয়ালা বলে ডাকে, তখন আমার হার্ট একদম বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আর ও যে আমার থেকে দূরে যেতে চেয়েছিল, আমাকে একা ফেলে যেতে চেয়েছিল, এটা ভাবলে আমার হার্টে আগুন ধরে যায়। সো, সি হিজ আ গুড গার্ল অ্যান্ড সেলফিশ গার্ল। বাট, হোয়াই ইজ সি সো সেলফিশ?
শুদ্ধর কাঁধের কাছে ভেজা লাগে। বুঝল ইরফানের চোখের পানিতে তার শার্ট ভিজেছে। তার খা’রা’প লাগলো। ইরফানের পিঠে হাত দিয়ে বলে,
– বাচ্চা মেয়ে। বুঝতে পারেনি। এসব ভুলে যা।
ইরফান ঢুলতে ঢুলতে শুদ্ধর কাঁধ থেকে উঠে সোজা হয়ে বসে। জড়ানো কণ্ঠে বলে,
– নো। সি ইজ নট আ লিটল গার্ল।
শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– তোর থেকে তো ছোট? এসব ভুলে যা ভাই।
ইরফান আবার শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে বলে,
– আই কান্ট। বার্ডফ্লাওয়ার সুস্থ হবে ব্রো?

শুদ্ধ ইরফানের টলমল চোখের দিকে তাকালো। এই ছেলের চোখে এতো পানি, এ অ্যালকোহল না খেলে তো শুদ্ধ জীবনে জানতেই পারতো না। হাহ! শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
– মাইরা তো অনেকটা সুস্থ হয়ে গিয়েছেই। বাংলাদেশের ডক্টর রা যেভাবে উপস্থাপন করেছিল, মাইরার ব্যাপার মোটেও তেমন না। এখানে এসে তো বুঝেছিস না-কি! আর পাঁচজনের থেকে হয়তো ওর টিউমার কিছুটা বড় হয়েছে, সেখানে ওর ছয় মাসের জায়গায় এক বছর লাগবে। বাট সুস্থ তো হবে। রিলাক্স থাক।
ইরফান অসহায় কণ্ঠে বলে,
– আই কান্ট।
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কিছুই পারিস না? মাইরা জানায়নি বলে সেই কষ্টে দেবদাস হচ্ছিস, ওর অসুস্থে কঙ্কাল হচ্ছিস। তো পারিস টা কি?
ইরফান চোখ বোজে আবার মেলে। এরপর হেসে বলে,
– ইউ নো? আমি বার্ডফ্লাওয়ারকে অনেক ভালোবাসতে পারি।
শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে তাকায়। হায়হায় কত অসম্ভব কথা ইরফানের মুখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত তার ফোনের ভিডিও অন করে ইরফানের সামনে ধরে। এ স্বাভাবিক থাকলে জীবনেও এর মুখ দিয়ে এসব বের হবে না। তাই এই কাজ। শুদ্ধ হেসে বলে,

– আবার বল তো সোনা। তুই কি পারিস?
ইরফান আবারও বলে,
– আমি আমার বার্ডফ্লাওয়ার কে অনেক ভালোবাসতে বাসি। আন্ডারস্ট্যান্ড?
শুদ্ধ হাসলো। বাহ! এবার একে আরও সুন্দর উপায়ে জ্বালানো যাবে।
ইরফানের কথা শুনে মাইরার আরও কান্না পায়। তার শিসওয়ালা তাকে এতো ভালোবাসে কিভাবে?
ইরফান রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে নেয়। এরপর মলিন গলায় বলে,
– আমি আমার বার্ডফ্লাওয়ারের জন্য ভালোবেসে, যত্ন করে ৩০ জোড়া জুতো কিনেছিলাম। প্রতিটা জুতো পায়ে আমি আমার বার্ডফ্লাওয়ারকে কল্পনা করেছিলাম, সবগুলো পরিয়ে আমি আমার বার্ডফ্লাওয়ারকে দেখব ভেবেছিলাম। কিন্তু ও সবসময় আমার ভালোবাসা অন্যদের দিয়ে দেয়। আমার ভালোবাসা শুধু আমার বার্ডফ্লাওয়ারের কাছে থাকবে। কিন্তু ও রাখেনা আমার ভালোবাসা ওর কাছে। কেন এমন করে ও? অন্যদের দিতে ইচ্ছে হয়েছিল, তবে আমায় একবার বলতো, আমি ওর পছন্দের সবাইকে আরও দশগুণ করে কিনে দিতাম। কিন্তু ও কেন আমার ভালোবাসা অন্যদের দিয়ে দেয়?

শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এসব তো সে জানেনা। তবে এখন জানলো। ইরফানের কাজ তো স্বাভাবিক লাগলো৷ কিন্তু মাইরা আবার সেসব কাকে দিয়ে দিয়েছে। শুদ্ধর কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগলো না। কিছু একটা ভেবে বলে,
– এজন্য সেদিন মাইরাকে মেরেছিলি না-কি?
ইরফান বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়িয়ে বলে,
– হু। আমার রা’গ হয়ে গেলে কি যেন হয়ে যায়। আমি না চাইতেও ওকে আ’ঘা’ত করি। বাট আমি চাই আমার বার্ডফ্লাওয়ারের গায়ে একটা টোকা না লাগুক। আমার ভীষণ অসহায় লাগে নিজেকে। আমি আমার বার্ডফ্লাওয়ার কে নিজেই আঘাত করি।

ওকে থা’প্প’ড় দিলে আমার বুকে ব্যথা হয়। ও কেন বোঝেনা? ও আমার অপছন্দের কাজ এভোয়েড করে আমার ব্য’থা কেন কমিয়ে দেয় না? আমার বার্ডফ্লাওয়ার আমায় কেন বোঝে না? একটু বুঝলে কি হয়?
কি অভিমানী আবদার! শুদ্ধর ভালোই লাগলো ইরফানের কথাগুলো। ঠিক-ই তো তার হৃদয়হীন ভাইটার মন বুঝলে কি হয় মাইরার? কথাটা ভেবে শুদ্ধ হেসে ফেলল। মাইরা বাচ্চা মেয়ে, ও কিভাবে বুঝবে? সে এর সাথে ছোট থেকে বড় হলো, তাই একে এতোদিনে বুঝে উঠতে পারলো না! আর মাইরা দু’দিনে এসে বুঝে যাবে? তবে আজ নেশা করায় বেশ বুঝলো, ইরফান মাইরার জন্য কত অভিমান, অভিযোগ জমিয়ে রেখেছে। শুদ্ধর ভালো লাগলো যেমন, তেমন মুগ্ধ-ও হলো। তার ভাইটা আসলেই ভীষণরকমভাবে ভালোবাসতে পারে।
মাইরা ইরফানের দিকে অনেকটা এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ইরফানের আক্ষেপ সাথে অভিযোগ শুনলো। দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব। সে তো না বুঝে ওই জুতোগুলো দিয়েছিল, বুঝলে তো দিতো না। তার নিজের উপরও রা’গ হলো। আসলেই সে শিসওয়ালা কে একটুও বোঝে না, কথাটা ভেবে মুখটা ছোট করে ফেলে।
ইরফান মাথা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে চোখ বুজে রেখে বলে,

– বার্ডফ্লাওয়ারের উপর ভীষণ রাগ হয়, ভীষণ অভিমান হয়, খুব বলতে ইচ্ছে করে, ও কেন আমার থেকে লুকিয়েছিল?
কিন্তু আমার জিজ্ঞেস করতেই ভয় হয়, যদি ওর ব্রেইনে সামান্য একটুও চাপ পড়ে।
একটু থেমে ভারী গলায় বলে,
– আমার বার্ডফ্লাওয়ারের যদি কিছু হয়, তবে আমায় ওর উপরে শুইয়ে দিবি, ওকে? আমি ওর বুকে ঘুমাতে চাই, নয়তো ওকে আমার উপর শুইয়ে দিবি। ওকে ঘুম পাড়িয়ে আমি ঘুমিয়ে যাবো। দিবি তো?
এ পর্যায়ে শুদ্ধর মুখ মলিন হয়। ইরফান শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছল আবারও। এরপর আয়েশ করে আধশোয়া হয় রেলিঙের সাথে। শুদ্ধর কেন যেন এই সময় এসে চোখজড়া ভিজে উঠল। ছেলেটা কতক্ষণ যে ইরফানের পানে চেয়ে রইল।
মাইরার চোখ থেকে আবারও পানি গড়িয়ে পড়ে। মেয়েটা দু’হাতে চোখ মুছে ইরফানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শুদ্ধ মাইরাকে দেখে উঠে দাঁড়ায়। হেসে বলে,

– আরে মাইরা, তুমি এখানে?
মাইরা নাক টেনে বলে,
– উনার কি হয়েছে ভাইয়া?
শুদ্ধ ইরফানের দিকে তাকায় একবার। এরপর মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– তুমি-ই দেখ, তোমার উনার কি হয়েছে।
কথাটা বলে শুদ্ধ ছাদ থেকে নামতে নামতে বলে,
– নিচে নামতে হেল্প লাগবে ডাক দিও।
মাইরা বুঝলো না, নিচে নামতে শুদ্ধর হেল্প কেন লাগবে। এসব রেখে মাইরা ইরফানের সামনে বসে। ইরফান চোখ বুজে দু’হাত বুকে আড়াআড়ি ভাবে গুঁজে রেখেছে। মাইরা ইরফানের হাত ধরে ডাকে,
– শুনছেন? ঘরে চলুন।
ইরফান বিরক্ত হয়। চোখ মেলে তাকায়। মাইরাকে ঝাপসা দেখল। তাকে কোনো মেয়ে টাচ করেছে বুঝতে পেরে হঠাৎ-ই মাইরার হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

– হু আর ইউ? ডোন্ট টাচ মি।
মাইরার কান্না পায়। মেয়েটা ভাবে ইরফান তার উপর রে’গে আছে। তাই এমন করছে। ঠোঁট চেপে কান্না আটকে আবারও তার দু’হাতে ইরফানের হাত ধরলে ইরফান ঢুলতে ঢুলতে সোজা হয়ে বসে। জড়ানো কণ্ঠে বলে,
– কে তুমি? আমায় টাচ করছ কেন? ইউ নো? আমার বার্ডফ্লাওয়ার ছাড়া আমাকে কেউ টাচ করলে তার হাত আমি ভেঙে গুড়িয়ে দিই। যাও আমার বার্ডফ্লাওয়ারকে ডেকে নিয়ে এসো। ওকে বলো, আমার হার্টে ব্য’থা করছে। ও না আসলে এই ব্য’থা কমবে না। যাও ওকে এনে দাও আমার কাছে। গো, গো।
কথাগুলো বলে ইরফান আবারও রেলিঙের সাথে হেলান দেয়। মাইরা তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। সে হাসবে না কাঁদবে বুঝলো না। লোকটার স্মৃতিশক্তি গেল না-কি! তাকে চিনতে পারছে না কেন? আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ইরফানকে ঝাঁকিয়ে ডাকে,

– শিসওয়ালা আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না কেন?
ইরফান আবারও সোজা হয়। এগিয়ে এসে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
– হু আর ইউ? আমাকে ডিস্টার্ব করছ কেন?
মাইরা ঠোঁট উল্টে বলে,
– আমি-ই তো আপনার বার্ডফ্লাওয়ার।
কথাটা বলে ইরফানের কপালে হাত দিয়ে বলে,
– আপনার কি জ্বর এসেছে?
ইরফানকে এমন ঢুলতে দেখে মাইরা ইরফানের মুখের সামনে তার মুখ নিয়ে বলে,
– কি হয়েছে আপনার?
ইরফান চোখ কচলে ভালোভাবে মাইরাকে দেখার চেষ্টা করল। এলোমেলো কণ্ঠে বলে,

– বার্ডফ্লাওয়ার তুমি কোথায় ছিলে?
মাইরা ইরফানের গালে হাত দিয়ে বলে,
– আমি তো ঘুমিয়েছিলাম। আপনার কি হয়েছে শিসওয়ালা?
ইরফান বাচ্চাদের মতো করে বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ার আমাকে কষ্ট দিয়েছে।
মাইরার ভীষণ খা’রা’প লাগলো। ইরফান তার দুর্বল শরীরেই মাইরাকে জড়িয়ে তার কোলে বসালো৷ এরপর মাইরার গলায় মুখ গুঁজে বিড়বিড় করে,
– মাই বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা ইরফানকে ঠেলে বলে,
– ঘরে চলুন।
ইরফান বিরক্ত হয়। মাথা তুলে মাইরার দিকে চেয়ে রে’গে বলে,
– স্টুপিট গার্ল, ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
কথাটা বলে মাইরা গালে নাক ঘষল। এরপর মাইরার ঠোঁটজোড়ায় চুমু আঁকলো। মাইরার মুখে কেমন বিশ্রী গন্ধ লাগে। ইরফানকে ঠেলে বলে,

– কি খেয়েছেন আপনি?
কথাটা বলে নাক চেপে ধরে। ইরফান মাইরার কাঁধে মাথা রেখে তার শরীরের ভার ছেড়ে দিলে মাইরা পিছন দিকে হেলে ঠাস করে পড়ে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে। ইশ! পিঠে কত ব্য’থা পেল! ইরফানকে ঠেলতে ঠেলতে বলে,
– উফ! উঠুন। আমি ভর্তা হয়ে গেলাম। আপনি এমন মাতালদের মতো….
কথাটা বলতে বলতে মাইরা থেমে গেল। কিছু বুঝল বোধয়। ইরফানের মুখের বিশ্রী গন্ধ সাথে এমন অদ্ভুদ আচরণের কারণ তাহলে ছাইপাঁশ খাওয়া? তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। মাইরার ভীষণ রা’গ হয়। এই লোক এসব ছাইপাঁশ খায়? ছিঃ!
ইরফান মাইরার গলায় মুখ গুঁজে কি যে বিড়বিড় করে। মাইরা রেগেমেগে দু’হাতে ইরফানের মাথার চুল টেনে ধরে। তেজী কণ্ঠে বলে,
– অ’স’ভ্য লোক। আপনি এসব কি খেয়ে এসেছেন?
ইরফান বিরক্ত হলো। মাইরার গলায় নাক ঘষে বিড়বিড় করে,
– স্টুপিট বার্ডফ্লাওয়ার।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ইরফান থম মেরে বসে আছে। মাথা ভারি হয়ে আছে। ঘাড় কেমন ব্য’থা হয়ে আছে। বেড থেকে নেমে ঘাড় এদিক-ওদিক নাড়ায়। কালকে রাত থেকে কিছু মনে করতে পারছে না। রাত ১০ টার পর আহাদদের বাড়িতে গিয়েছিল আহাদের বাবার সাথে মাইরার ব্যাপারে কথা বলতে। তারপর এই বাড়িতে আসলো কি করে? মনে করতে পারে না। মাইরা ঘরে এসে ইরফানকে উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে ইরফানের সামনে দাঁড়ায়। কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
– আমি এই দেশে থাকবো না। আমাকে বাংলাদেশে রেখে আসুন।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– হোয়াই?
মাইরা রে’গে বলে,

– আমি কোনো নেশা’খোর এর সাথে থাকবো না। আমাকে রেখে আসুন।
ইরফান অদ্ভুদভাবে বলে,
– হোয়াট? স্টুপিট এর মতো কি বলছ?
মাইরা ইরফানের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে,
– হ্যাঁ এখন তো ভাঁজা মাছ উল্টে খেতে জানবেন না। যা ইচ্ছা না জানুন। আমি আপনার সাথে থাকবো না। শেষ।
ইরফান রে’গে শক্তহাতে মাইরার গাল চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– আর একদিন যদি বলেছ, আমার সাথে থাকবে না। একদম মে’রে ফেলব।
মাইরা গালে ব্য’থা পায়। ইরফানের এভাবে বলায় খা’রা’প লাগলো। চোখ দু’টো টলমল করে ওঠে। দৃষ্টি নামিয়ে মলিন গলায় বলে,
– এমনিতেও যখন তখন ম’রে যেতে পারি। আপনাকে আর কষ্ট করে মে’রে ফেলতে হবে না।
মাইরার কথায় ইরফানের হাত শিথীল হয়। মাইরা নাক টানে। ইরফান মাইরাকে বা হাতে জড়িয়ে নেয়। ডান হাতে মাইরার চুল কানের পিঠে গুঁজে বলে,

– ৬০% রিকোভার করেছ। কিচ্ছু হবে না তোমার।
মাইরা মাথা তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। আবারও নাক টেনে বলে,
– আপনি কিভাবে জানলেন?
ইরফান মাইরার ভেজা চোখ মুছে দিয়ে বলে,
– গতকাল রাতে তুমি ঘুমিয়ে গেলে আহাদদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।
মাইরা কিছু বলল না। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
– আমাকে রাগাবে না।
মাইরার কাল রাতের কথা মনে পড়ল। ইরফান বলছিল, রে’গে গেলে আমার কি যেন হয়ে যায়। তাকে আঘাত করে নিজেই কষ্ট পায়। কথাটা মনে পড়তেই মাইরার মুখে কিছুটা হাসি ফোটে। কিন্তু ইরফান ওসব খেয়েছিল কেন? ভাবতেই বিরক্ত হলো। এমনিতেই ইরফানের সিগারেট খাওয়াই তার এতো বিরক্ত লাগে, তার সাথে আরেকটা অসহ্যকর জিনিস অ্যাড হয়েছে। মাইরাকে চুপ দেখে ইরফান মৃদুস্বরে বলে,

– নেশা’খোর কাকে বললে?
মাইরা সাথে সাথে বলে,
– আপনাকে। আপনি এসব খান কেন? আপনি আসলেই অনেক অ’স’ভ্য লোক, সেটা জানেন?
ইরফান মাইরাকে ছেড়ে গম্ভীর গলায় বলে,
– স্টুপিট আমি এসব খাই না।
মাইরা মুখ বাঁকায়। এই লোক তো জীবনেও কিছু স্বীকার করেনা। ইরফান ওয়াশরুমে চলে যায়। রা’গ লাগছে আহাদের উপর। এবার বুঝেছে, গতরাত থেকে তার কেন কিছু মনে নেই। ওই বে’য়া’দ’ব তাকে কোনোভাবে এসব খাইয়েছে। মেজাজ খারাপ হলো তার। ওকে হাতে কাছে পেলে আগে কষিয়ে কয়েকটা থা’প্প’ড় দিবে বলে মনে মনে পণ করল।

দেখতে দেখতে আরও তিনদিন পেরিয়েছে। শুদ্ধ আগামীকাল বাংলাদেশে ব্যাক করবে। কিন্তু তার দুঃখের শেষ নেই। বেশ কয়েকবার ফারাহকে কল করলে চার বারের বার কল রিসিভ হয়। শুদ্ধ রে’গে বলে,
– এই বে’য়া’দ’ব মেয়ে, আমার ফোন ধর না কেন? এমনিই বিয়ে করেও দেবদাস হয়ে ঘুরছি। এর মধ্যে এমন মেয়ে কপালে জুটেছে, সারাদিন একবার স্বামীর খোঁজ নেয় না। তুমি এতো পা’ষা’ণ নারী কেন ফারাহ পাখি? ইরফানের মতো আমারও কত কষ্ট! আহারে!
ফারাহ শুদ্ধর কথা রেখে উৎফুল্ল মনে বলে,
– শুদ্ধ ভাই শো….
শুদ্ধ বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। রে’গে বলে,
– এই ফারাহ এই, স্বামীকে ভাই ডাকছ? কালকে গিয়ে আগে দু’টো থা’প্প’ড় দিয়ে ভাই ডাক ছুটাবো তোমার! বা’লের কপাল আমার।
ফারাহ মুখ ফুলিয়ে রাখলো। শুদ্ধ নিজেকে শান্ত করল। মুখ গোল করে শ্বাস ফেলে বলে,
– ফারাহ পাখি আমার সুগার মারাত্মক কমে গিয়েছে গো।
ফারাহ চিন্তিত কণ্ঠে বলে,

– কি হয়েছে তোমার?
শুদ্ধ বেডের উপর শুয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– বিলিভ মি ফারাহ পাখি, ফারাহ নামের স্পেশাল সুগারের অভাবে আমি অনেক শুকিয়ে গিয়েছি। যেদিন ইরফান বাংলাদেশে পা রাখবে, আমি সেদিন-ই খাট কিনব।
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– মানে?
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
– মানে তো অনেক কিছুই। কোথা থেকে শুরু করব পাখি?
ফারাহ বোধয় বুঝল শুদ্ধর মনোভাব। ফোনের ওপাশেই মেয়েটা ল’জ্জা পায়। এসব রেখে বলে,
– আমি ফুপু হব।
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– মানে?
ফারাহ হেসে বলে,

– ভাইয়া বাবা হবে।
কথাটা শেনা মাত্র-ই শুদ্ধ দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসে। মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– কিহ! ওই শা’লা আমাকে রেখে কি করে বাবা হতে যাচ্ছে? এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা!
ফারাহ তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। সে কি বলল, আর শুদ্ধ কি রিয়েকশন দিচ্ছে। শুদ্ধ আফসোসের সুরে বলে,
– তোমার ভাইটা এটা কিভাবে করতে পারলো পাখি? আমাকে এভাবে পিছিয়ে দিল? আমি সবকিছুতেই ফার্স্ট, কিন্তু বাবা হব পরে? নাহ, মনে হচ্ছে ইরফানের জন্য আর ওয়েট করা যাবে না। কালকেই গিয়ে আগে আমি খাট কিনব। এসব আর মেনে নেয়া যাচ্ছে না।
ফারাহ ওপাশ থেকে খট করে কল কেটে দেয়। এই লোকের মুখে যদি একটুও লাগাম থাকতো!
শুদ্ধ মুখটা অসহায় করে রাখলো। তার বউটাও কেটে দিল! এসব কি? সে বাবা হওয়ার জন্য খাট কিনতে চাইছে, দোষের কি আছে এতে?

মাইরা ইনায়ার সাথে কথা বলে ফোন রাখলো। সে দিন গুনছে, বাংলাদেশে যাওয়ার আর কত দিন আছে। গুণে গুণে সাতদিন আছে। মাইরা ভীষণ এক্সাইটেড। ইনায়া মা হবে, কি দারুণ ব্যাপার! সে কবে যাবে আর ইনায়াকে বাচ্চাসহ দেখবে। ভাবতেই কি যে খুশি লাগছে।
হঠাৎ-ই তার লিও’র কথা মনে পড়লে মাইরা বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। লিও কে খেতে দেয়নি সে। প্রায় বিকাল হয়ে এসেছে। মাইরা দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখল লিও শব্দ করে মাছ খাচ্ছে। মাইরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সে তো খেতে দেয়নি। তবে কে দিল? ইরফান দিয়েছে? মাইরা ঘরে আসে, তখন-ই ইরফান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। মাইরা এগিয়ে এসে বলে,

– লিও কে আপনি খেতে দিয়েছেন?
ইরফান ছোট করে বলে,
– হুম।
মাইরা খুশি হয়। লোকটা তো ওকে দেখলেই দূর দূরে করে। আজ খেতে দেয়ায় মাইরা ভীষণ ভালো লাগলো। খুশি হয়ে বলে,
– আপনি অনেক ভালো শিসওয়ালা। আমি আপনাকে করলার জুস, ভাঁজি, ভর্তা, পাউডার সব করে খাওয়াবো।
ইরফান চোখমুখ কুঁচকে তাকায়। বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– এসব খাবার খাওয়া তোমার বন্ধ।
মাইরা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
– আমার মুখ দিয়ে আমি খাবো। আপনি বারবার নিষেধ করবেন না তো। আমার অনেক পছন্দের খাবার এটা। আপনি নাক ছিটকান বলে আমার খুব কষ্ট হয়।
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– তোমার জন্য এখন আমাকে এসব অখাদ্যের গুণগান গাইতে হবে?
মাইরা অবুঝের মতো মাথা উপর-নীচ করে বলে,
– অবশ্যই। আপনি না আমাকে ভালোবাসেন!
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,

– বাসি না।
মাইরা বিরক্ত হলো। সে তো ভুলেই গিয়েছিল এই লোকটা তার ত্যাড়া শ্বাশুড়ি মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে ঘাড়ত্যাড়া হয়ে জন্মেছে।
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– এসব অখাদ্য খাওয়ার হ্যাবিট ছেড়ে দিবে।
মাইরা রে’গে বলে,
– আমার মুখ দিয়ে আমি খাবো।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। এগিয়ে এসে বলে,
– মুখ তোমার। রাইটস আমার। আন্ডারস্ট্যান্ড?
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– তাহলে আপনার মুখ-ও আপনার। রাইটস আমার। আপনার সিগারেট খাওয়া বন্ধ।
ইরফান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার দিকে। রে’গে বলে,

– স্টুপিট কি বলছো? মাথা ঠিক আছে? ইট’স ইম্পসিবল।
মাইরা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
– তাহলে আমার করলা খাওয়া ছেড়ে দেওয়াও ইম্পসিবল।
কথাটা বলে উল্টো ঘুরে ঘর থেকে বেরোনোর জন্য পা বাড়ালে ইরফান মাইরাকে টেনে মাইরার গাল চেপে রূঢ় কণ্ঠে বলে,
– স্টুপিট গার্ল, তুমি ঠিক করেই নিয়েছ, আমাকে শান্ত থাকতে দিবে না, রাইট?
মাইরা গালে হালকা ব্য’থা পেল। অসহায় কণ্ঠে আবেগ নিয়ে ডাকে,
– শিসওয়ালা?
সাথে সাথে ইরফানের দৃষ্টি শীতল হয়। হাত আলগা হয়। মাইরা ইরফানের দিকে তাকিয়ে বুঝল ইরফানের উইকনেস। দারুণ তো! কথাটা ভেবে মুখ লুকিয়ে মিটিমিটি হাসলো। এরপর হঠাৎ-ই ইরফানকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬৭

– আপনার সব শান্তি আমি ভেঁজে ভেঁজে খাবো শিসওয়ালা, বুঝলেন?
কথাটা বলে হাসতে হাসতে দৌড় লাগায়। ইরফান বিড়বিড় করল,
– স্টুপিট বাঁদর।
গলা চড়িয়ে বলে,
– পড়ে গেলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬৯