প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬৯

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬৯
Drm Shohag

শুদ্ধ রেডি হয়েছে। আর ঘণ্টাখানেক পর তার ফ্লাইট। ইরফানের উদ্দেশ্যে বলে,
– মাইরাকে নিয়ে দ্রুত আয়। আমি বিয়ে করব।
ইরফান ল্যাপটপে আঙুল চালানো স্টপ করে ভ্রু কুঁচকে তাকায় শুদ্ধর দিকে। গম্ভীর গলায় বলে,
– কয়বার বিয়ে করবি?
ইরফানের কথা শুনে শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে তাকায়। মাথায় হাত দিয়ে বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
– এ খবর-ও জানিস তুই?
ইরফান আবারও তার কাজে মনোযোগ দেয়, সাথে বলে,

– আই নো এভরিথিং।
শুদ্ধ কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
– তুই আসলেই এক নাম্বার সিসিটিভি।
সে ঠিক-ই বলেছিল, এরা বর বউ দু’টোই সিসিটিভি।
মাইরা বেলকনি থেকে ঘরে আসলে শুদ্ধ হেসে বলে,
– মাইরা বিয়ে করবে?
মাইরা ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,
– কাকে ভাইয়া?
শুদ্ধ হেসে বলে,
– ইরফানকে।
একটু থেমে মিটিমিটি হেসে বলে,
– তুমি চাইলে যে কোনো ছেলেকেই করতে পারো। আমি সব ম্যানেজ করব।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাইরা আড়চোখে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান শুদ্ধর দিকে রে’গে তাকিয়ে আছে। মাইরা মনে মনে হাসলো। ইরফানকে রাগাতে ভালোই লাগে। সবচেয়ে বড় কথা ইরফানকে রাগানো ভীষণ সহজ।
মাইরা শুদ্ধর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
– ভাইয়া আপনার ফোন বের করুন। আমি আপনাকে দেখাচ্ছি আমার কীরকম ছেলে পছন্দ।
শুদ্ধ মাইরার কথায় হেসে ফেলল। পকেট থেকে ফোন বের করে মিটিমিটি হাসছে।
ইরফান তার কোল থেকে ল্যাপটপ ঠাস করে বেডের উপর রাখে। এরপর বড় বড় পা ফেলে মাইরার পাশে দাঁড়িয়ে মাইরার হাত শক্ত হাতে চেপে ধরে রে’গে বলে,
– থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।
মাইরা বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

– আগে ছেলেটাকে দেখিয়ে দিই। একটু অপেক্ষা করুন আমার প্রথম স্বামী।
শুদ্ধ হাসতে হাসতে ডিভানে শুয়ে পড়ছে এক প্রকার। এই মাইরা একটা জিনিস। তার কয়েকশো কাঠি উপরে।
মাইরা পাশ ফিরে তাকালে শুদ্ধকে ডিফানে বসে হাসতে দেখে বলে,
– কি হলো ভাইয়া ছেলেদের দেখান।
ইরফান রে’গে চিল্লিয়ে বলে,
– সাটআপ
মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। শুদ্ধ পেট চেপে হাসছে। ইরফান মাইরার পেট চেপে উঁচু করে তার পিছনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এরপর শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রে’গে বলে,
– এখান থেকে বের হো।
শুদ্ধ বসা থেকে দাঁড়িয়ে তার ফোন মাইরার দিকে তাক করে বলে,
– মাইরা দেখ তো একে পছন্দ হয়?

ইরফান শুদ্ধর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ঘরের বাইরে ছুঁড়ে মারলে শুদ্ধ চোখ বড় বড় দৌড়ে গিয়ে ফোন কেচ ধরে নেয়। ইরফান শুদ্ধর মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। শুদ্ধ ওপাশ থেকে হাসছে। আগে তো সে একা একা জ্বালাতো। এখন তার এক সঙ্গী হয়েছে। তার ৭০% কাজ মাইরা নিজেই করে দেয়। দরজার ওপাশ থেকে আবারও গলা উঁচু করে বলে,
– মাইরা আমি সব ছেলেদের পিক কালেক্ট করে রাখছি। তুমি পরে চুজ করে রেখ।
মাইরা এপাশ থেকে তাল মিলিয়ে বলে,
– ওকে ভাইয়া।
ইরফান রে’গে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা ভেঙচি কাটে। সারাদিন তাকে ডোন্ট লাইক ইউ বলে। সেও এভাবে জ্বালাবে। দেখ বাছা কেমন লাগে। মাইরা ইরফানের দৃষ্টি পাত্তা না দিয়ে বলকনিতে যেতে নিলে ইরফান মাইরাকে টেনে তার সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। মাইরা ইরফানকে ঠেলে বলে,

– কি করছেন?
ইরফান মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
– বিয়ে করবে?
মাইরা দ্রুত দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– না না, করব না করব না।
ইরফান মাইরার গালে ডান হাতের বুড়ো আঙুল স্লাইড করতে করতে বলে,
– করতে হবে।
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান আবারও বলে,
– কাকে যেন বিয়ে করবে?
মাইরা ঢোক গিলে। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– তোমাকে এগেইন বিয়ে দিব।
মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকায়। ইরফানের ঠোঁটের কোণে হাসি চোখে পড়ে মাইরার। খা’রা’প লোক, নিজের বউকে বিয়ে দিতে চায়! ইরফানের ফোনে কল আসায় সে মাইরাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। মাইরা ছাড়া পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে পিছু ফিরে বলে,

– শাহরুখ খান দেখতে কি সুন্দর! আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। আপনি কি ব্যবস্থা করবেন?
ইরফান কল রিসিভ করতে গিয়েও করল না। পিছু ফিরে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা মেকি হেসে বলে,
– শাহরুখ খান হলে আমি বিয়েতে এক পায়ে রাজি।
ইরফান দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় মাইরার দিকে। ইচ্ছে করছে একে থা’প্প’ড় দিয়ে বাঁদরামি ছুটাতে। মাইরা মিটিমিটি হেসে বলে,
– সে কি আমার বর হবে?
ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে মাইরা এক দৌড় দেয়। ইরফান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হাতের ফোন বেডের উপর ছুঁড়ে মারে। শুদ্ধ মাইরাকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে দেখল। ঘরে এসে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তোর বউ কে তাড়া করেছিস কেন?
ইরফান রে’গে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– তোর গ্রামে থেকে থেকে ও একটা বাঁদর হয়েছে।
এরপর বিড়বিড় করে,
– জ্বালিয়ে মারে, যতসব স্টুপিট বাঁদরের দল।
শুদ্ধ অদ্ভুদভাবে তাকায়। এটা কেমন যুক্তি! ইরফানের বিয়ের আগে সে তো মাইরাকে চিনতোই না। মাইরা তো তার চেয়েও দশ কাঠি উপরে।
আর এই বে’য়া’দ’ব, তারা এক গ্রামের ছেলেমেয়ে বলে তাকে দোষী করছে। তবে একটু হাসিও পেল। আহারে! মাইরার জ্বালায় এখনি অতিষ্ঠ তার ভাইটা। গলা ঝেড়ে মিটিমিটি হেসে বলে,
– কেবল তো শুরু সোনা। বাকি জীবন তো পড়েই আছে। সহ্য করতে শেখ। এসব-ই এখন তোর নিত্যদিনের সঙ্গী। হাজার হোক তোর স্পেশাল বাঁদর বউ বলে কথা!
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। এগিয়ে গিয়ে বেড থেকে ফোন তুলে কাউকে কল ব্যাক করে।

কানাডায় আসার পুরোপুরি একমাস পূর্ণ হয়েছে ইরফান-মাইরার।
সকাল সকাল নামাজ পড়ে মাইরা বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। বাড়ির বাইরে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে খোলামেলা। দু’পাশে বেশ কিছু গাছপালা আছে। অনেকটা বাগানের মতো।।মাইরা এতোদিন এখানে থাকলেও সেভাবে বাইরে আসা হয়নি তার। আজ মন ভীষণ ফুরফুরে। আগামীকাল বাংলাদেশ যাবে মূলত এজন্যই মন ভীষণ ভালো। কতদিন পর নিজের দেশে পা রাখবে, সবাইকে দেখতে পাবে ভাবতেই মনটা আরও উৎফুল্ল হয়।

এইখানকার জায়গা গুলো অনেক পরিষ্কার! মাইরার ভীষণ ভালো লাগে। তবে এ দেশের পরিষ্কার জায়গার চেয়ে নিজের দেশের একটু-আধটু নোংরাও ভালো মনে হলো মাইরার। নিজের দেশে আলাদা এক শান্তি পাওয়া যায়।
মাইরা এসব ভাবতে ভাবতে ছোটোখাটো বাগানের ভেতর প্রবেশ করে। এখানে বেশ অনেক ধরনের ফলের গাছ। দু’একটা ফুলের গাছ দেখল। তবে ফলের গাছ বেশি। মাইরার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগলো আপেলের গাছ। এগিয়ে গিয়ে একটা আপেল ছিঁড়ে নেয় গাছ থেকে। এরপর হাঁটতে হাঁটতে আপেলে কা’ম’ড় বসায়। বেশ ভালো লাগলো। এক কোণার দিকে কিছু একটা চোখে পড়ে মাইরার। মাইরা ভীষণ অবাক হয়। পরিচিত ঠেকল তার কাছে। দ্রুতপায়ে এগিয়ে যায় মাইরা। হাতের আপেলটি প্রায় শেষ। পুরোটা মুখে পুড়ে গাছটির সামনে বসে পড়ে মাইরা। এটা তো সেই টিয়া পাখির মতো দেখতে। এটা আসলে কি? মাইরা বুঝতে পারলো না। তাকে একবার গ্রামে এক বাচ্চা এনে দিয়েছিল, তার কাছে কি যে ইউনিক আর ভালো লেগেছিল, সেই গাছ এখানে। মাইরার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। মাটিতে পা ছড়িয়ে বসে ফুলগুলো একটা একটা করে ছিঁড়তে বসে গেল।

ইরফান কোথা থেকে যেন ক্যামেরা হাতে নিয়ে দাঁড়ায় বাগানের মাথায়। তার সেকেন্ড ক্যামেরা কানাডায় রেখে গিয়েছিল। আজ হঠাৎ বের করে নিয়ে এসেছে। অনেকদিন পর ক্যামেরা হাতে নিয়েছে। উদ্দেশ্য প্রকৃতি নয়, বরং মাইরা। মাইরাকে চেনার পর থেকে সেই আগের মতো প্রকৃতির পিক ক্যাপচার করার প্রবল ইচ্ছের ব্যাপারটা তার মাঝে কেন যেন নেই। সে ক্যামেরা হাতে নিলে আশেপাশে মাইরাকে খুঁজে বেড়ায়।
বাগানে তার লাগানো বার্ডফ্লাওয়ারের গাছের কাছে মাইরাকে বসে থাকতে দেখে ক্যামেরা হাতে বাইরে এসেছে।
মাইরা অনেকগুলো বার্ডফ্লাওয়ার গাছ থেকে ছিঁড়ে তার কোলের উপর রাখে। এরপর একটি ফুল তার মুখের সামনে ধরে পাখির মতো করে। মাইরার এতো অবাক লাগে। মেয়েটা ভেবে পায় না, এই ইউনিক ফুলগুলো এতো জীবন্ত লাগে কেন তার কাছে? মনে হয়, জলজ্যান্ত টিয়া পাখি কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে।

মাইরার হঠাৎ-ই ডানদিকে নজর পড়লে ইরফানকে চোখে পড়ে। দু’হাতের মুঠোয় ফুলগুলো নিয়ে সে উঠে পড়ে। এরপর একপ্রকার দৌড়ে ইরফানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হেসে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় ইরফানের হাতে ক্যামেরা দেখে। মাইরা দু’পা পিছিয়ে যায়। ইরফানের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলায়। ইরফানের পরনে কালো শার্ট, কালো প্যান্ট, হাতে কালো ক্যামেরা। মাইরা কিছু একটা ভেবে আবারও ইরফানের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
– আপনাকে আমার চেনা চেনা লাগছে।
ইরফানের ক্যামেরা সহ হাত নামিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা একটু ভেবে তড়াক করে বলে,
– আপনি কি ক্যামেরা নিয়ে আমাদের গ্রামে যেতেন?

ইরফান মাথা নিচু করে সূক্ষ্ম হাসে। মাইরা চোখ ছোট ছোট করে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। মাইরার মনে পড়ল, যেদিন একটি বাচ্চা তাকে এই ফুল এনে দিয়েছিল, সেদিন-ই ক্যামেরা হাতে একজনকে দেখেছিল সে, তার সামনে ক্যামেরা এসে পড়েছিল। মাইরা সেই ক্যামেরা কুড়িয়ে নিয়ে লোকটাকে দিতে গিয়েছিল বলে, লোকটি তাকে কি ধমক টা-ই না দিয়েছিল। আর এমন ধমক তো ইরফানও দেয়। আবার ওমন ক্যামেরা হাতেও দাঁড়িয়ে আছে। সেদিন মাস্ক পড়ে থাকায় চেহারাটা দেখতে পায়নি। মাইরা চোখ বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
– আপনি-ই সেই লোক?
ইরফান মাইরার বিস্ময় মুখপানে কিছু সময় চেয়ে থাকে। ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। এরপর হঠাৎ-ই মাইরাকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। মাইরা তব্দা খেয়ে যায়। ইরফান মাইরার কানের পিঠে আলতো কা’ম’ড় দেয়। মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,

– হান্ড্রেড পার্সেন্ট রিকোভার করেছ। তোমার অপারেশন ক্যান্সেল।
কথাটা বলে ইরফান মাইরার কানের পিঠে চুমু খায় একটা। ডক্টর মাইরাকে তিন মাসের ওষুধ দিয়েছে। এই কোর্স শেষে আবাও তিন মাসের কোর্সের ওষুধ দিবেন। ডক্টর পুরোপুরি নিশ্চয়তা দিয়েছে, মাইরা সুস্থ হয়ে যাবে। ইরফান বুক ভরে শ্বাস নেয়। বিড়বিড় করে,
– মাই বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা মৃদু হাসলো। দু’হাতে ফুলগুলো ধরে রেখেই ইরফানের পিঠে দু’হাত রাখে। সে তার শিসওয়ালার বুকে বাঁচবে। কথাটা ভাবতেই মাইরার মুখের হাসি দীর্ঘ হয়। কত কষ্ট পেয়েছে তারা দু’জন। আল্লাহ সব ঠিক করে দিয়েছেন। মাইরা আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া করে।
ইরফান মাইরাকে জড়িয়ে ধরে রেখেই মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ছোট করে বলে,

– তোমার হাতে যে ফ্লাওয়ার, এটার নাম কি জানো?
মাইরা ইরফানের বুকে মাথা রেখেই মাথা নেড়ে বলে,
– না তো। এটার নাম কি?
ইরফান মৃদু হেসে মাইরার কানের পিঠে আরেকটা চুমু এঁকে মৃদুস্বরে বলে,
– জীবন্ত বার্ডফ্লাওয়ারের হাতে ঘুমন্ত বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা বুঝতে না পেরে বলে,
– মানে?
ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। এরপর মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– তুমি জীবন্ত বার্ডফ্লাওয়ার, আর তোমার হাতের ওটা ঘুমন্ত বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা বোধয় বুঝেছে। অবাক হয়ে বলে,

– এই ফুলের নাম বার্ডফ্লাওয়ার?
ইরফান ছোট করে বলে, – হুম
এরপর তার বা হাতে মাইরার খোঁপা করা চুল খুলে দেয়। এরপর মাইরার হাত থেকে একটা বার্ডফ্লাওয়ার নিয়ে বেশ কসরত করে মাইরার বাম কানের পিঠে গুঁজে দেয়। মাইরা চোখের পাতা ফেলে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান তার কাজ শেষ করে মাইরার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– চুপচাপ দাঁড়াও এখানে।
কথাটা বলে ইরফান ক্যামেরা হাতে নিয়ে মাইরার দিকে চেয়েই পিছন দিকে পিছিয়ে যায়। মাইরা ইরফানকে দেখে মৃদু হাসে। ইরফান মাইরার থেকে বেশ খানিকটা দূরে গিয়ে মাইরার দিকে ক্যামেরা তাক করে। মাইরা অবাক হয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফানকে তার কাছে কি সুন্দর লাগছে! না চাইতেও মাইরা ঠোঁটের কোণের হাসি দীর্ঘ হয়। ইরফান মাইরার বেশ কয়েকটা পিক উঠায়। মাইরা আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এক দৌড়ে ইরফানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

দৌড়ানোর জন্য ইরফান রে’গে মাইরাকে কিছু বলতে চায়, তার আগেই মাইরা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
– আমাকে পিকগুলো দেখান। আমি দেখতে চাই।
ইরফান আর কিছু বললো না। মাইরাকে টেনে তার বুকের সাথে মাইরার পিঠ লাগিয়ে মাইরাকে দাঁড় করায়। এরপর মাইরাকে দু’হাতের মাঝে বন্ধনীর রেখে সামনে ক্যামেরা ধরে মাইরার তোলা পিকগুলো বের করে। মাইরা বেশ মনোযোগের সহিত তার পিক দেখে। বেশ অনেকগুলো পিক মাইরার, যার মধ্যে, কিছু পিক কিছুক্ষণ আগের। যখন মাইরা বার্ডফ্লাওয়ার নিয়ে মাটিতে বসে ছিল তখনকার কিছু পিক।
মাইরা বার্ডফ্লাওয়ার হাতে নিয়েছে এমনভাবে যেন একটি টিয়া পাখির পাখা সে অতি যত্নে ধরেছে। এভাবে বেশ কয়েকটি পিক।
মাইরার কানের পিঠে গুঁজে রাখা ফুল, যেন তার কানের পিঠে একটি টিয়া পাখি বসে আছে।
মাইরা দৌড়ে আসছে ইরফানের দিকে এভাবে পিক। প্রতিটি পিক দেখে মাইরার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। মাইরা ক্যামেরার দিকে তাকিয়েই হেসে বলে,

– আপনি তো অনেক সুন্দর পিক উঠান। পুরাই জোশ ক্যামেরাম্যান!
ইরফান সামান্য নিচু হয়ে মাইরার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে আড়চোখে মাইরার দিকে তাকায়। সূক্ষ্ম হাসে। এরপর মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে একটি সুরের শিস বাজায়। মাইরার পুরো শরীরে কেমন শীতল স্রোত বয়। ইরফানের কণ্ঠে এই শিস শুনলে মাইরার যে কতটা অদ্ভুদ অনুভূতি হয়, তা কি করে বোঝাবে!
একটু পর ইরফান থেমে সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে ওঠে,
– তুমি আকাশের বুকে
বিশালতার উপমা,
তুমি আমার চোখেতে
সরলতার প্রতিমা…..

মাইরা ঘাড় বাঁকিয়ে পিছু ফিরে ইরফানের দিকে তাকায়। চোখজোড়া ভরে ওঠে। ইরফান মাইরার চোখে পানি থেকে থেমে যায়। মাইরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ডান হাত মাইরার গালে রেখে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
– হোয়াট হ্যাপেন্ড? কাঁদছ কেন?
মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। তার খা’রা’প লাগছে ইরফানের সেই রাতের কথাগুলো মনে করে। তার শিসওয়ালা তাকে কত ভালোবাসে। কিন্তু সে কত কষ্ট দিয়ে দিয়েছে। ইরফান আবারও নরম সুরে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে? বলো?
মাইরা চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। নাক টেনে বলে,
– আমি অনেক স্যরি শিসওয়ালা!
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– হোয়াই?
মাইরা ঠোঁট উল্টে বলে,

– আমি আর আপনার থেকে কিছু লুকিয়ে রেখে আপনাকে কষ্ট দিব না।
ইরফান বুঝল মাইরার কথা। সামান্য হেসে মৃদুস্বরে বলে,
– ইট’স ওকে। তাছাড়া, লুকিয়ে রাখতে চাইলেও আর পারবে না।
মাইরা আর কিছু বলল না। একটু চুপ থেকে হঠাৎ-ই বলে,
– এই বাড়িটা কার? বাড়ির মালিক নেই?
ইরফান পিছু ফিরে তাদের সাদা বাড়িটির দিকে তাকায়। এরপর আবারও মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
– বাড়িতে মালিকের নেইম লেখা আছে।
মাইরা অবাক হয়ে বলে,
– কোথায়?
– চেক কর।

মাইরা আশেপাশে তাকিয়ে খোঁজে। হঠাৎ-ই উপর দিকে চোখ পড়লে দেখল, বাড়ির উপরে অনেক বড় করে খোদাই করে লেখা, ‘Birdflower’
লেখার কালারটি হালকা সোনালি টাইপ, যেন চিকচিক করছে। মাইরা এতোদিনে একবারও খেয়াল করেনি। বিস্ময় দৃষ্টিতে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এরপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– এটা….
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– ফুল এক মান্ত নিজের বাড়িতে থেকে, আজ মালিককে খুঁজছো? ইন্টারেসটিং!
মাইরা কথা বলার ভাষা হারায়। বাড়িটা তার এতো পছন্দ হয়েছিল, এখানে আসার পর পর তার ইচ্ছে করত, এই বাড়িটা তুলে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে। এখন জানছে বাড়িটা তার। ইরফানকে যত দেখে তত অবাক হয়। কিছু একটা ভেবে বলে,

– এই বাড়ি কবে বানিয়েছেন?
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে, – ওয়ান ইয়ার এগো।
মাইরা অবাক হলো। তার বিয়ের তো ছয় মাস-ও হয়নি। ইরফান এই বাড়ি এক বছর আগে তার জন্য কিভাবে বানিয়েছে? হিসাব মিলল না তার। কিছু একটা ভেবে বলে,
– আপনি কি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন? একদম কথা ঘোরাবেন না বলে দিলাম।
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকায় মাইরার দিকে। গম্ভীর গলায় বলে,
– চিনতাম।
মাইরা অবাক হয়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কবে থেকে চিনতেন?
ইরফান তার ক্যামেরায় দৃষ্টি রেখে বলে,
– টু ইয়ারস
মাইরা বিস্ময় কণ্ঠে চেঁচিয়ে ওঠে,
– কিহহহহ!
ইরফান মাইরার দিকে ভ্র কুঁচকে তাকায়। মাইরা জহুরি চোখে চেয়ে বলে,
– আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। আপনি আমাকে কিভাবে চিনতেন?
ইরফান ডান হাতের দু’আঙুল দিয়ে মাইরার মাথায় একটা টোকা দিয়ে সূক্ষ্ম হেসে বলে,

– বাংলাদেশে গিয়ে বলব।
মাইরা তার দু’হাতে ইরফানের হাত ধরে বলে,
– এখানেই বলুন প্লিজ!
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– নো।
মাইরা বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– এখানে বলবেন না কেন?
ইরফান ক্যামেরায় দৃষ্টি রেখে রেখে বলে,
– মাই উইশ!
মাইরা গাল ফুলায়। বিড়বিড় করে, – ঘাড়ত্যাড়া একটা।
ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে, – কি আমি?
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায়। কিছু একটা মনে পড়তেই আমতা আমতা করে বলে, – নে’শা’খোর।
ইরফান রে’গে বলে,

– আবার এসব ফা’ল’তু কথা বলছো?
মাইরাও রে’গে বলে,
– হ্যাঁ, তো আপনি নেশা করতে পারলে আমি বলতে পারবো না কেন?
ইরফান মাইরার চুল কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
– আমি এসব খাই না। আহাদ আমার অগোচরে কোনোভাবে খাইয়ে দিয়েছিল। এর জন্য ও তিনটা থা’প্প’ড় খেয়েছে। তুমি আর একবার এসব ফা’ল’তু ট্যাগ আমাকে লাগালে তোমার উপর বাইট এর বর্ষণ ঝরবে। বি কেয়ারফুল।
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে শুকনো ঢোক গিলে। ইরফান ঠোঁট বাঁকালো সামান্য। এরপর গলা নামিয়ে বলে,
– ইউ নো বার্ডফ্লাওয়ার? যেদিন থেকে রোমান্স এর ক্লাস স্টার্ট করব,, মেবি, ইউ কান্ট হ্যান্ডেল মি।
আপাতত রেস্ট নেয়ার সুযোগ দিয়েছি। আমাকে শান্ত থাকতে দাও।

তোমার পানিশমেন্ট কখনো অফ হবে না। যাস্ট পানিশমেন্টের সিস্টেম চেঞ্জ হবে।
মাইরা ইরফানের কথাগুলো শুনে জমে যায়। মাথা নিচু করে বারবার ঢোক গিলে। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে। মাইরাকে জড়িয়ে ধরতে গেলে মাইরা হঠাৎ-ই নিচু হয়ে ইরফানের পাশ দিয়ে দৌড় দেয়। ইরফান বুঝতেই পারেনি। মাইরা দৌড়াতে দৌড়াতে পিছু ফিরে শব্দ করে হাসে। ইরফান বিরক্তি চোখে তাকায় মাইরার দিকে। উফ! এই বাঁদরকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না।
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে হঠাৎ-ই উল্টে পড়তে নিলে ইরফান দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মাইরার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে। মাইরা দ্রুত দু’হাতে ইরফানের শার্ট খামচে ধরে। ইরফান রে’গে বলে,

– তুমি কি আমার হাতে থা’প্প’ড় খেতে চাইছো?
মাইরা ইনোসেনট ফেস বানিয়ে দু’দিকে মাথা নাড়ে। ইরফান আবারও গম্ভীর গলায় বলে,
– বাঁদরামি ছাড়বে না?
মাইরা আবারও দু’দিকে মাথা নাড়ে। কি ইশারা করেছে বুঝতে পেরেই চোখ বড় বড় করে দ্রুত উপর-নীচ মাথা নাড়ে। ইরফান বিড়বিড় করে,
– স্টুপিট।
কথাটা বলে হাতের ক্যামেরা পাশেই আলতো হাতে ছুঁড়ে ফেলে। এরপর দু’হাতে মাইরাকে নিজের দিকে আরেকটু টেনে নেয়। মুখ এগিয়ে নিলে মাইরা দ্রুত ডানদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ইরফানের মুখ মাইরার গলায় গিয়ে ঠেকে। ইরফান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মাইরার গলায় দাঁত বসায়। মাইরা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান ক্ষতস্থানে একটি গাঢ় চুমু আঁকে। এরপর মাথা তুলে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– বাঁদরামি করছ কেন?
মাইরা ঘাড় ঘুরিয়ে ইরফানের দিকে তাকায়৷ ডান হাত উঠিয়ে গলায় হাত বুলিয়ে অসহায় চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। মিনমিন করে বলে,
– আমি ব্রাশ করিনি।
ইরফান ডান হাত মাইরার মাথার পিছনে চুলের ভাঁজে রেখে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
– নো নিড।
কথাটা বলেই মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা চোখ বুজে নেয়।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে মাইরা আর ইরফান দাঁড়িয়ে আছে এক কোণায়। মাইরার মাথা কেমন যেন ঘুরছে। ইরফান বা হাতে মাইরাকে নিজের সাথে আগলে নেয়। মাইরা কিছু বলল না। কিছুক্ষণের মাঝেই শুদ্ধ গাড়ি নিয়ে আসলে ইরফান মাইরা ব্যাক সিটে উঠে পড়ে। মাইরার ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে। ইরফান কোনো কথা ছাড়াই মাইরার মাথা তার বুকে চেপে রাখে। মাইরাও নিজের দুর্বল শরীর ইরফানের বুকে এলিয়ে চোখ বুজে নেয়। ইরফান মাইরার কপালে একটা চুমু আঁকলে শুদ্ধ সামনে থেকে হেসে বলে,

– আসতাগফিরুল্লাহ! আমার মতো মাসুম বাচ্চার সামনে এসব কি করছিস সোনা?
ইরফান বিরক্ত চোখে শুদ্ধর দিকে তাকায়। মুখ নামিয়ে মাইরার ঠোঁটজোড়ায় একটা চুমু আঁকে। এটুকু সময়ের মাঝেই মাইরা ঘুমিয়েছে। শুদ্ধ ল’জ্জা পাওয়ার ভান করে বলে,
– আজ আমি ল’জ্জার টিকা নিয়েছি বলে শুধু শ’ল’ম-ই পাচ্ছি।
ইরফান সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে নেয়।

বাসায় ফিরেছে ইরফান, মাইরা। রুমা নেওয়াজ এগিয়ে এসে মাইরাকে জড়িয়ে ধরে। মাইরা নিজেও তার শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে। মাইরার ভীষণ লাগে তার শ্বাশুড়ির এমন মায়ের মতো আচরণ। রুমা নেওয়াজ মাইরাকে ছেড়ে মাইরার কপালে চুমু এঁকে বলে,
– কেমন আছো আম্মু? এখন শরীর কেমন তোমার?
মাইরা মৃদু হেসে বলে,
– যাদের কপালে মায়ের মতো শ্বাশুড়ি থাকে, তারা আবার খা’রা’প থাকে না-কি!
মাইরার কথায় রুমা নেওয়াজ মৃদু হাসলো। ইরফানের বাবার থেকে মাইরার ব্যপারে শোনার পর, এরপর মাইরা অসুস্থতা সবমিলিয়ে রুমা নেওয়াজ এর মাইরার উপর কি যে মায়া হয়! এই যে খেয়াল রাখে, তবুও তার মনে খুঁত লাগে, তার আদর, ভালোবাসায় কমতি নেই তো!
তারেক নেওয়াজ এগিয়ে এসে বলে,

– মেয়ে তো সবার আগে আমার। কিন্তু মেয়ে দেখি মা কে পেয়ে বাবা কে ভুলে যাচ্ছে।
তারেক নেওয়াজ এর কথায় মাইরা হেসে ফেলল। শ্বাশুড়ি কে ছেড়ে শ্বশুরের সামনে গিয়ে বলে,
– বাবা আমার মনে হচ্ছে আপনি হিংসুটে হয়ে গিয়েছেন।
তারেক নেওয়াজ হেসে মাইরার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– মেয়ের জন্য একটু আধটু হওয়াই যায়!
মাইরা আবারও হাসলো। তারেক নেওয়াজ মৃদুস্বরে বলে,
– রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আম্মু। পরে কথা হবে।
মাইরা মাথা নেড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপর উঠতে নিলে ইরফান ঝট করে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে বলে,

– আরে কি করছেন? নামান আমায়।
শুদ্ধ আয়েশ করে সোফায় বসে হেসে বলে,
– মামা জানো? মুরগিকে খপ করে ধরাই শেয়ালের কাজ।
তারেক নেওয়াজ বোধয় শুদ্ধর কথা বুঝেছে। এই বাঁদর ছেলেকে কে না চেনে। তবে কিছু বলল না। শুধু একটু হাসলো। মাইরার প্রতি ইরফানের এই কেয়ার তার জীবনে অনেক বড় কিছু পাওয়া মনে হয়।
মাইরা ইরফানের বুকে একটা কিল দিয়ে বলে,
– অ’স’ভ্য লোক, নামান বলছি।
ইরফান ভাবলেশহীনভাবে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে গম্ভীর স্বরে বলে,
– নো।
মাইরা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। এমনিতেও তার শরীর দুর্বল লাগছে খুব। তাই বলে সবার সামনে কোলে নিতে হবে? এই লোকটা জীবনেও ভালো হবে না।

মাইরা ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছিল। মাত্র ঘুম থেকে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে ইরফানকে দেখল না। বেড থেকে নেমে বাইরে দৃষ্টি দিলে দেখল বিকাল গড়িয়েছে। সন্ধ্যা নামবে নামবে ভাব। মাইরা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে ইনায়ার ঘর থেকে ইনায়ার কথা শুনতে পেয়ে মাইরা দ্রুত ইনায়ার ঘরে যায়। ইনায়া ফোনে কথা বলছিল। মাইরাকে দেখে ফোনে আর একটু কথা বলে ফোন রেখে দেয়। মাইরা এগিয়ে গিয়ে ইনায়ার পাশে বেডের উপর পা তুলে বসে। জড়িয়ে ধরে হেসে বলে,
– আপু কখন আসলে এই বাড়ি?
ইনায়া মাইরার পিঠে হাত দিয়ে বলে,
– কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। তুমি ঘুমিয়েছিলে, তাই ডাকিনি।
মাইরা ইনায়াকে ছেড়ে বলে,

– আপু তোমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন। বাচ্চাটা কবে বের হবে?
মাইরার প্রথম কথায় ইনায়া একটু ল’জ্জা একটু পেলেও মাইরার বাচ্চামি কথায় হেসে ফেলে। মাইরা উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে,
– আমি খালা হওয়ার জন্য খুবই এক্সাইটেড।
ইনায়া হেসে বলে,
– কিন্তু তুমি তো মামি হবে।
মাইরা মুখ ফুলিয়ে বলে,
– ও হ্যাঁ। খালা মামি দু’টোই হবো। তোমার বোন হই না আমি? সেদিক থেকে আমি আগে খালা। তারপর তোমার ভাইয়ার জন্য মামি হয়ে যাব।
ইনায়া হাসলো মাইরার কথা শুনে। মাইরার হঠাৎ-ই পাশের টেবিলে একটা ওয়ালমেট এর মতো কিছু চোখে পড়লে হাত বাড়িয়ে সেটি হাতে নেয়। শক্ত কাগজের উপর অনেক সুন্দর একটি প্রকৃতির দৃশ্য! চারিদিকে গাছপালা, উঁচু উঁচু পাহাড়, কিছু পাহাড়ের গা ঘেঁষে বেয়ে ঝর্ণা বেয়ে নেমেছে।
মাইরার অবাক হয়ে বলে,

– ওয়াও! কি সুন্দর! এটা কোন জায়গা আপু? মনে হচ্ছে কেউ ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুলেছে।
ইনায়া হেসে বলে,
– কোন জায়গা আমি তো নিজেও জানিনা। আর এটা ক্যামেরা পিক নয়।
মাইরা অবাক হয়ে বলে,
– তাহলে কি?
ইনায়া হেসে বলে,
– ভাইয়ার হাতে আঁকানো। অনেক আগে এঁকেছিল। আমি তুলে রেখেছিলাম। আজ বের করেছি, বাঁধাই করে এনে নিয়ে যাবো।
মাইরা বিস্ময় চোখে তাকায় ইনায়ার দিকে। গালে হাতে দিয়ে বলে,
– কিহহ! এতো সুন্দর আঁকার হাত! আমার তো বিশ্বাস-ই হচ্ছে না এটা হাতে আঁকানো।
ইনায়া হেসে বলে,

– ভাইয়ার আঁকার হাত ছোটবেলা থেকেই ভালো। অনেক আগে টুকটাক এমন আঁকতো। আমি জেদ করেও কিছু কিছু এঁকে নিতাম।
মাইরা গালে হাত দিয়ে দৃশ্যটির দিকে তাকিয়ে বলে,
– তোমার ভাইয়ার কত গুণ! আমি তো পুরাই ফিদা হয়ে গেলাম গো!
মাইরার কথা শুনে ইনায়া হেসে বলে,
– তোমার-ই বর। যতখুশি ফিদা হও।
মাইরা একটু ল’জ্জা পেল। তবে কিছু বলল না। মৃদু হাসলো।

মাইরা ইনায়ার ঘর থেকে এসে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেয়। এরপর বেডের উপর গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। ইরফান কোথায় গিয়েছে? ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে দেখছে না। মাইরার ভালো লাগছে না।
হঠাৎ-ই তার চোখে পড়ে ইরফানের সেই ভেতরের ঘরের দরজা বেশ অনেকটা খোলা। মাইরার চোখ দু’টো চকচক করে ওঠে। এই ঘরে কি আছে, তার দেখার অনেক ইচ্ছা। আজ সুযোগ পেয়েছে। দ্রুত বেড থেকে নেমে ঘরটির সামনে দাঁড়ায়। দরজা ঠেলে ভেতরে দৃষ্টি দিলে ঘরটি অন্ধকার লাগলো, তবে একেবারে অন্ধকার নয়। ডিম লাইট জ্বালানো হয়তো। মাইরা মাথা নিচু করে দেখে দেখে ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর মাথা উঁচু করে সামনে তাকালে জোরেসোরে এক চিৎকার দেয়।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৬৮

ইরফান কিছু কাজে অফিসে গিয়েছিল। মাত্র ফিরেছে। যখন-ই তার ঘরে প্রবেশ করেছে। পাশের রুম থেকে মাইরার চিৎকার শুনে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় সেদিকে। ঘরটিতে গিয়ে আগে ঘরের সবগুলো লাইট জ্বালিয়ে দেয়। মাইরা ইরফানকে দেখে দ্রুত ইরফানকে জড়িয়ে ধরে চোখ খিঁচে নেয়। ইরফান দু’হাতে আগলে নেয় মাইরাকে। মৃদুস্বরে বলে,
– ডোন্ট ওয়ারি। অ্যা’ম হেয়ার।
কথাটা বলে মাইরার মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ায় ইরফান।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭০