প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৮

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৮
Drm Shohag

ইরফান মাইরাকে নিজের থেকে সরানোর জন্য ধাক্কা দিতে গিয়েও থেমে যায়। মাইরা পুরো শরীরের ভর ছেড়ে দেয়ায় ইরফান ভ্রু কোঁচকালো। ডান হাতে মাইরার মাথা ঠেলে তার বুক থেকে সরিয়ে মাইরার মুখপানে তাকায়।
তার ঘরে গিয়ে যে থা’প্প’ড় টা দিয়েছিলে, এর ফলে মেয়েটার বাম গাল হালকা লাল হয়ে আছে। ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। সেন্স হারিয়েছে কেন বুঝলো না। তীক্ষ্ণ চোকে বেশ কিছুক্ষণ মাইরার মুখপানে চেয়ে রইল।
ইনায়ার দিকে তাকিয়ে কণ্ঠে বিরক্তি ঢেলে বলে,
“এই স্টুপিট কে ধরবি না-কি ফেলব?”

ইনায়া দ্রুত এসে মাইরাকে আগলে নেয়। এরপর নিজেই বেশ কসরত করে মাইরাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। মাইরার গালে আলতো থা’প্প’ড় দিয়ে বেশ কয়েকবার ডাকে, মাইরার সাড়া নেই। ইনায়া ভ’য় পায়। ইরফানের দিকে তাকালে দেখে ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। ইনায়া জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“ভাইয়া ডক্টরকে কল কর। মাইরার কিছু হয়েছে। ও তো চোখ খুলছে না।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে পিছন ফিরে যেতে যেতে বলল,
“যাস্ট টু মিনিট’স। রেডি হয়ে বাইরে আয়। আমার লেট হয়েছে।”
ইনায়া ভাইয়ের নির্লিপ্ততায় ভীষণ বিরক্ত হয়, মনে মনে রাগও হয় খুব। একটা মানুষ অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে তবুও তার ভাইয়ের মনে একটুও মায়াদয়া নেই। কণ্ঠে কিছুটা রাগ নিয়ে পিছন ফিরে বলল,
“তোমার প্রবলেম কী ভাইয়া? দেখছ একটা মেয়ে অসুস্থ, আর তুমি হেয়ালি করেই যাচ্ছ। আসলেই তুমি পা’ষা’ণ হয়ে গিয়েছ?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে ইনায়ার দিকে তাকালো। ইনায়া ইরফানের দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বলে,
“ডক্টরকে একটা কল কর অন্তত, প্লিজ!”
ইরফান গটগট পায়ে এগিয়ে এসে রেগে বলে,
“ওর বাঁদরামি না দেখে কলেজ যাবি না?”
ইনায়া বিরক্ত হলো। মানছে মাইরা চঞ্চল। এর জন্য সেন্স হারিয়েছে বলে তাকে সুস্থ করে জাগিয়ে তুলবে না? ইরফান হঠাৎ-ই মাইরার হাত ধরে জোরে টান দিয়ে বসিয়ে দেয়। মাইরা ধড়ফড় করে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
“ও আপু, আমার হাত খুলে গেল, হাত খুলে গেল। আমার হাতকে বাঁচাও। বাঁচাও।”
ইনায়া চোখ বড় বড় করে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা তো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। ইরফান শক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
“সি, এই তোর স্টুপিট এর বাঁদরামি।”
মাইরা ইরফানের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে। বিড়বিড় করে,
‘একটু নাটক করেও শান্তি নেই।’
কথাটা বলে ইনায়ার পিছনে বৃথা লুকানোর চেষ্টা করে। ইরফানের বিরক্তির মাত্রা পেরিয়েছে। ইনায়ার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,

“দুই মিনিট এর এক সেকেন্ড লেট করলে তোকে শূলে চড়াবো আমি। আর এই স্টুপিট এর আশেপাশে যদি দেখেছি, তো একটা থা’প্প’ড় ও মাটিতে পড়বে না।”
মাইরা, ইনায়া দু’জনেই কেঁপে ওঠে। ইনায়া দ্রুত বিছানা থেকে নেমে তার ঘরের দিকে দৌড় লাগায়। মাইরা ভীত স্বরে চেঁচিয়ে বলে,
“আপু আমাকে নিয়ে যাও দয়া করে। আমার সামনে বাঘ। বাঁচাও, বাঁচাও।”
ইনায়া অসহায় চোখে পিছন ফিরে তাকায়। ইরফানের দিকে তাকালে ইরফানের দৃষ্টি দেখে আর এগোয় না। সে লেট করলে থা’প্প’ড় তো তাকে খেতে হবে। তাই দ্রুত তার ঘরের দিকে পা চালালো।
এদিকে মাইরা ভয় পাচ্ছে। কতগুলো বেফাঁস কথা বলেছে, আবার এক্টিং করে ওই লোকের গায়ে পড়েছিল, এখন তার কি হবে? নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে সামান্য মাথা তুলে ইরফানের দিকে চায়। ইরফানের দৃষ্টির নড়চড় নেই। মাইরা জানে এই দৃষ্টি মানে তাকে এখন ধোঁয়ার পরিকল্পনা করছে। মাইরার মনে পড়ে এই লোকটা ইনায়া আপুকে তার সাথে মিশতে নিষেধ করেছে। নিজের মাঝে জমানো ভয় সাময়িক পালিয়ে গেল। মাইরা হঠাৎ-ই রেগে বলে ওঠে,

“আপনার এতো বড় সাহস? আমার সাথে আপুকে মিশতে নিষেধ করছেন। আপনি জানেন মুভি, গল্পের কত নায়ক পা’গ’ল থাকে। আমি নাহয় আপনাকে সেরকম পা’গ’ল বলেছি, আর আমি যেহেতু আপনার-ই বউ, তাই একটু এক্টিং প্রাকটিস করছিলাম। আপনি তো দেখছি আসলেই মূর্খ।”
ইরফান ঘর থেকে বেরুনোর জন্য দু’পা এগিয়েছিল। মাইরার কথা শুনে তার পা থেমে যায়। রাগে, বিরক্তিতে নিজের মাথার চুল টেনে ধরল। আর নিতে পারছে না একে। ঝড়ের বেগে এসে মাইরার গাল চেপে ধরে ডান হাতে।
মাইরা ভয়ে কেঁপে ওঠে। দু’হাতে ইরফানের হাত চেপে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। ঢোক গিলে কিছু বলতে চায়। তবে ইরফান এতো জোরে গাল চেপে ধরেছে, কথা বলতে চাইলেও পারছেনা। ইরফান নিজেই মাইরাকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। সবকিছু এতো অস’হ্য লাগছে।
মাইরা কিছুটা ছিটকে বিছানায় পড়ে। দু’হাতে দু’গালে হাত বোলায়। ইরফানের ফিরিয়ে রাখা পিঠের দিকে চেয়ে বলে,

“আপনি আসলেই পা’গ’ল। আমার গাল দু’টো সরকারি পেয়েছে। উফ!”
ইরফান উল্টো ঘুরে মাইরার দিকে তেড়ে আসতে নিলে মাইরা বিছানা থেকে লাফ দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দেয়। উদ্দেশ্য ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিবে। ওয়াশরুম থেকে দু’পা পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ইরফান বড়বড় পা ফেলে এসে মাইরার হাত শক্ত করে টেনে ধরে।
পিছন থেকে জাহারা বলে,
“কি করছ তোমরা?”
ইরফান মাইরার হাত ছাড়লো না। বিরক্ত হয়ে পিছন ফিরে তাকায়। মাইরা জাহারাকে দেখে ভীত কণ্ঠে শব্দ করে বলে,
“আপু এই জ’ল্লা’দ কে নিয়ে যাও। যখন যা পাচ্ছে আমার সেটা ধরে টানছে শুধু।”

জাহারা চোখ বড় বড় করে তাকায়। মাইরা কথাটা বলেই শক্তি খাঁটিয়ে ওয়াশরুমের দিকে একটু এগিয়ে যেতে চায়, ইরফান পিছন ফিরে তাকানোয় বুঝতে পারে নি। মাইরা পিছন দিকে পেছানোয় ইরফান নিজেও তাল সামলাতে পারেনি, মাইরার দিকে হেলে গেলে মাইরা ইরফানের ধাক্কা খেয়ে ঠাস করে বাথরুমের মেঝেতে পড়ে যায়। ইরফান নিজেও হুমড়ি খেয়ে পড়ে মাইরার উপর। বালতি ভর্তি পানি ছিল, সব ঢেলে পড়ে ইরফানের মাথায়, সে পানির গন্তব্যপথ হয় ইরফানের নিচে অবস্থানরত মাইরার মুখ। ইরফান হতভম্ব হয়ে যায়।
মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে,
“আল্লাহ, আমার কোমড়, আল্লাহ বাঁচাও। আমায় মেরে ফেলল গো এই স্বামী নামক অ-স্বামীটা আমায় মেরে ফেলল।”
ইরফান ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়াতে নিলে পায়ের নিচে সাবান পড়ে পিছলে গিয়ে আবারও মাইরার উপর ঠাস করে পড়ে যায়। মাইরা আরও জোরে চেঁচিয়ে ওঠে। মেয়েটা মারাত্মক ব্য’থা পেয়েছে। ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত হাতে মাইরার মুখ চেপে বলে,
“স্টপ ইডিয়েট।”

এতো চিৎকারে রুমা নেওয়াজ সহ ইরফানের খালা এগিয়ে আসেন মাইরার ঘরে। রুমা নেওয়াজ এগিয়ে এসে বলেন,
“কি হয়েছে? এমন চিৎকার করছ কেন?”
ঘরের কোথাও মাইরাকে না দেখতে পেয়ে জাহারার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মেয়েটা কোথায় চিৎকার করছে জাহারা?”
জাহারা ঢোক গিলছে বারবার। তার অনুভূতি বোঝা যায় না। কাঁপা হাতে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলে রুমা নেওয়াজ দ্রুত এগিয়ে যায় সেদিকে। ততক্ষণে ইরফান উঠে দাঁড়িয়েছে। ঝাঁকড়া চুল থেকে টুপটুপ করে পানি ঝরে পড়ছে। রুমা নেওয়াজ এগিয়ে গিয়ে ইরফানকে এ অবস্থায় দেখে বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“একি? তুমি ভিজলে কি করে?”
ইরফানের মস্তিষ্কে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। মায়ের কথার উত্তর করল না। ইরফানের খালা ওয়াশরুমের ভেতরে নজর করলে মাইরাকে ভেজা বেড়াল হয়ে ওয়াশরুমের মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে বলে,
“আরে এ মেয়ে ওখানে শুয়ে কি করছে?”
মাইরা ধীরে ধীরে উঠে বসে। ডানহাত কোমড়ে রাখে। সকালের কাণ্ডগুলোর পর শরীরে যা একটু একটু ব্য’থা ছিল এখন সেগুলো হাজারগুণ বেরে গিয়েছে। সব এই বেয়া’দব লোকের জন্য। শ্বাশুড়ি, খালা শ্বাশুড়ি কাউকে খেয়াল না করেই চেঁচিয়ে বলে উঠল,

“এই অস’ভ্য লোক, আপনি কি আর শোয়ার জায়গা পাননি, আমার মতো একটা মাসুম বাচ্চার উপর এসে আপনাকে শুতে হলো? অস’ভ্য লোক একটা। শুধু সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে, আমার ই’জ্জ’ত নেয়ার নয়তো ধুপধাপ মেরে দেওয়ার। আমার কোমড় খুলে গেল বোধয়! বেয়া’দব লোক একটা।”
মাইরা নিজের মতো বকে যাচ্ছে, আর কোমড়ে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। মাথা তার নিচু। বাইরে যে এতোগুলো মানুষ মাইরা দেখেইনি, দেখলেও বা কি? তার মুখ তো বন্ধ হওয়ার নয়। মাইরার কথা শুনে রুমা নেওয়াজ, ইরফানের খালা দু’জনেই বিব্রতবোধ করল।
এদিকে মাইরার প্রতি কথা যেন ইরফানের মস্তিষ্কে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করল। অনেকক্ষণ সহ্য করল এই বাঁচাল কে। আর পারল না। আগুন চোখে উল্টো ফিরে দাঁড়ালো। মাইরাকে এক ঝটকায় তুলে বাম গালে সর্বশক্তি দিয়ে থা’প্প’ড় মেরে দিল। মাইরার দুর্বল শরীরটা নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মাথা গিয়ে ঠেকে ওয়াশরুমের মেঝেতে। মেয়েটা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
রুমা নেওয়াজ দ্রুত এগিয়ে এসে ইরফানের হাত ধরে টেনে বলে,

“ইরফান ও ছোট মানুষ। মেরো না।”
ইরফান রক্তলাল চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা কাঁদতে কাঁদতে মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকায়। হাতের কাছে মগ পেয়ে সেটা নিয়ে ইরফানের দিকে ছুঁড়ে মারে। মগটা গিয়ে লাগে ইরফানের বুকে। ইরফান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মাইরার দিকে এগোতে নিলে মাইরা ভয়ে জোরে কেঁদে দেয়।
রুমা নেওয়াজ ইরফানকে টেনে বাইরে বের করে আনে। মাইরা কাঁদতে কাঁদতে জড়ানো কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলে,
“তোকে জেলের ভাত খাওয়াবো আমি শয়’তান লোক। আমার পুরো শরীরটা সরকারি পেয়েছে। আর দু’দিন পর আমি পঁচে যাব। তোকে টাক করিয়ে ছাড়ব আমি।”
ইরফান মায়ের হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে ক্রোধান্বিত চোখে চেয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে চিৎকার করে বলে,

“এই বেয়া’দব বাঁচাল মেয়েকে আমার সামনে আর একবার দেখলে,, আই সোয়ার, ওকে আমি খু’ন করে ফেলব।”
কথাটা বলে হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ইরফানের কথায় প্রত্যেকে কেমন কেঁপে ওঠে। জাহারা যদিও ভ’য় পেয়েছে ইরফান ভাইয়ের এতো রা’গ দেখে। তবে খুশিও হয়েছে বেশ। এতোক্ষণ যা উল্টাপাল্টা ভেবেছে সব হাওয়া হয়ে গিয়েছে। মাইরার উপর বিরক্ত হলো। এই মেয়েটা আসলেই অস’হ্য। ফালতু কথা বলা এর স্বভাব।
ইনায়া রেডি হয়ে এসে তার ভাইকে ভেজা বেড়াল হয়ে মাইরার ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে অবাক হয়। মাইরা আবার কি করল? দ্রুত ঘরে ঢুকে ভেতরে তার খালা, খালাতো বোনকে দেখে আরও অবাক হয়।
এর মধ্যে রুমা নেওয়াজ এগিয়ে গিয়ে মাইরাকে ধরে ধরে ওঠালো। মাইরা দাঁড়াতেই পারছে না। রুমা নেওয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মাইরাকে ধরে ওয়াশরুমের বাইরে আনে। ইনায়া মাইরাকে এভাবে দেখে ভ’য় পেয়ে যায়। দৌড়ে গিয়ে মাইরাকে ধরে ধীরে ধীরে এনে বিছানায় বসায়।
রুমা নেওয়াজ মাইরাকে ছেড়ে রেগে বললেন,

“তোমার মুখটা বন্ধ রাখতে পারো না?”
মাইরা কান্নামাখা চোখে বলে,
“আপনার ছেলেকে একটু বললেই তো হয়, হাত না চালাতে। কতগুলো মেরেছে আমায় আজ।”
রুমা নেওয়াজ বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে রইল। মাইরাকে রেডি হয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“রেডি হয়েছ কেন?”
মাইরা দু’হাতে চোখ মুছে ভাঙা গলায় বলল,
“আমি আপুর সাথে আপুর কলেজে যাব।”
রুমা নেওয়াজ ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আজ কলেজ যেও না। দেখো কোথায় কোথায় ব্য’থা পেয়েছে। এ তো মুখ বন্ধ রাখতে পারে না। ইরফানকে কিছু বলে লাভ আছে? দু’টো দুই মেরুর। তোমার বাবা তো বিয়ে দিয়ে উদ্ধার করে ফেলেছেন। এখন যত জ্বালা হয়েছে আমার।”
তারেক নেওয়াজ বাইরে থেকে ফিরে স্ত্রীর কথা অনুসরণ করে মাইরার ঘরে এসে বলে,
“কি হয়েছে?”

স্বামীর কণ্ঠে রুমা নেওয়াজ পিছন ফিরে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“কিচ্ছু জানি না আমি। মেয়েটা মরে গেলে জেলের ভাত খেও বসে বসে।”
তারেক নেওয়াজ ভ্রু কোঁচকালো। এগিয়ে এসে মাইরাকে দেখে অবাক হয়। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। কেঁদেছে বোঝা যাচ্ছে। দু’গাল অসম্ভব লাল হয়ে আছে। রুমা নেওয়াজ আর কিছুই বলল না। তার অসহ্য লাগছে এসব। তিনি খুব ভালো করেই জানেন তার ছেলে কেমন একরোখা। এজন্য বিয়ের আগেই স্বামীকে বারণ করেছিলেন। কিন্তুু তার স্বামী তো আরেকজন। কেউ তার কথা শোনে না। এখন তার বাসায় পড়ে পড়ে একটা মেয়ে এভাবে মার খাচ্ছে আর সে দেখছে। ব্যাপারটায় তিনি যেমন বিরক্ত, তেমনি আহত।
তারেক নেওয়াজ গম্ভীর মুখে মাইরার দিকে চেয়ে থাকল কিছুক্ষণ। এরপর গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে,
“ইরফান তোমায় আবার মেরেছে আম্মু?”
মাইরা চোখ তুলে তাকায়। তারেক নেওয়াজ এর গম্ভীর গলা শুনে মাইরা অবাক হয়। মাইরাকে চুপ থাকতে দেখে তারেক নেওয়াজ ধমকে প্রশ্ন করে ওঠে,

“কি হলো বলো? মিথ্যে বলবে না একদম।”
মাইরা কেঁপে ওঠে। চোখ নামিয়ে নেয়। বিড়বিড় করে,
“বাবারও ছেলের মতো রূপ বের হচ্ছে, দেখি।”
তারেক নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“মাইরা আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।”
মাইরা ঢোক গিলে। তারেক নেওয়াজ তাকে আম্মু ছাড়া ডাকে না। এখন নাম ধরে ডাকল। তার মানে সিরিয়াস রেগেছে। মাইরার ছোট মাথায় এটাই খেলল। মাথা উপর-নিচ করে সম্মতি দেয়, ‘ইরফান তাকে মেরেছে।’
তারেক নেওয়াজ এর রাগে কপালে রগ ফুলে উঠলো। আর একটা কথাও বললো না। ইরফানের খালা, জাহারা ঘর থেকে বেরিয়া যায়। তারেক নেওয়াজ পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করে।
“ভার্সিটি যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করে যেও।”

শুদ্ধ একটা ক্যাফের দিকে যাচ্ছিল। সে আর ইরফানের যাওয়ার কথা। একজনের সাথে মিট করার কথা আছে। এরপর সেখান থেকে একসঙ্গে ভার্সিটি যাবে। এজন্য আগে আগে বেরিয়েছিল।
মামার কথায় অবাক হয়। নিরবে সম্মতি দিয়ে কল রাখে। এরপর ইরফানের নাম্বারে কল দেয়। ড্রাইভ করতে করতেই বেশ কয়েকবার ইরফানকে কল করল। ফোন তুলল না। শুদ্ধ ভ্রু কোঁচকালো। কি হয়েছে? মামার কণ্ঠ যদিও গম্ভীর। তবে আজ একটু বেশিই অদ্ভুদ ঠেকল। ইরফানও কল ধরছে না। খানিক চিন্তা হলো। ফোন রেখে গাড়ির স্পিড বাড়ায়।

ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেলে মাইরা ইনায়া কে বলে,
“আপু বাবা কি অনেক রাগী?”
ইনায়া মলিন মুখে বলে,
“কিছুটা। যখন প্রয়োজন পড়ে তখন-ই একটু রাগে।”
মাইরা এলোমেলো হিজাবটা মাথা থেকে খুলে ফেলল। এরপর ধীরে ধীরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে বলল,
“আপু তুমি কলেজ যাও। আমি আরেকদিন তোমার সাথে যাব।
একটু থেমে ভাঙা গলায় বলল,
কোমড়ে অনেক ব্য’থা পেয়েছি আপু।”
ইনায়ার কান্না পাচ্ছে। মাইরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“কলেজ না গেলে কিছু হবে না। তুমি কিছু খেয়ে ব্য’থার ওষুধ খেয়ে নাও। তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।”
মাইরা মৃদু হেসে বলল,

“তুমি খুব ভালো আপু।”
ইনায়া কিছু বলল না। মাইরার দিকে চেয়ে রইল। গাল দু’টো কেমন লাল হয়ে আছে। মাইরা চোখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে আছে। কোমড়ের ব্য’থা মেয়েটাকে কাবু করে নিয়েছে। তাই কথা বলছে না হয়তো। মায়ের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। সবসময় হাসিখুশি মেয়েটা হঠাৎ-ই ফুঁপিয়ে উঠল। ইনায়া ভয় পেয়ে বলে,
“মাইরা? বেশি ব্য’থা করছে?”
মাইরা কান্নাগুলো গিলে নিল বহুকষ্টে। অতঃপর দু’হাতে চোখ মুছে মলিন হেসে বলল,
“আপু জানো, ছেলেমেয়েরা যখন অনেক অসুস্থ হয়, তখন তাদের মা ছেলেমেয়েদের অনেক যত্ন করে আগলে নেয়। এই জিনিসটা ভীষণ সুন্দর না বলো?”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মাইরার দিকে। মাইরা কেন বললো এই কথাটা? মাইরা হঠাৎ-ই হেসে বলল,
“আপু তুমি কলেজ যাও। আমি ঠিক আছি।”
ইনায়া রেগে বলল,

“তুমি আসলে অনেক বড় মাইরা। কিন্তুু আমি আপাতত তোমার বড় বোন। তাই আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে। কোথাও যাব না আমি।৷ তুমি চুপচাপ থাকো। আমি খাবার আনছি। খাবার খেয়ে ওষুধ খাবে। বুঝলে?”
কথাগুলো বলে ইনায়া বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
মাইরা মৃদু হেসে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
বিড়বিড় করে, ‘এই আপুটা বেস্ট আপু।’

শুদ্ধ ইরফানদের বাসায় এসে ইরফানের ঘরে যাওয়ার জন্য দোতলায় উঠতে নিলে তারেক নেওয়াজ বলে,
“তোমাকে আমার সাথে দেখা করতে আসতে বলেছি। ওই বে’পো’রোয়া ছেলের সাথে নয়।”
শুদ্ধ তার পা প্রথম সিড়িতে রেখেছিল। মামার কথায় দ্রুত পিছিয়ে আসে। বুঝল তার মামা গরম। আর তা ইরফান রিলেটেড। তারেক নেওয়াজের ঘর নিচ তলাতেই। তিনি তার ঘরে যেতে যেতে বলেন,
“আমার ঘরে এসো।”
শুদ্ধ চিন্তিত বদনে তার মামার পিছু যায়। ঘাঁড় বাঁকিয়ে একবার উপরে তাকায়। ইরফান কি বাসায় আছে? না-কি ক্যাফেতে চলে গিয়েছে? দরকার তো তার। ইরফান গেলে সে থেকে গেলে কেমন হবে ব্যাপারটা? আবার ভাবলো ইরফান চলে গেলে তার মামার সাথে ঝামেলা করলো কে? ভাবনা নিয়ে তার মামার ঘরে প্রবেশ করে। তারেক নেওয়াজ গম্ভীর গলায় বলে,

“তোমার বাবার অনুপস্থিতিতে তুমি আমাকে তোমার গার্ডিয়ান মানো, তাই তো শুদ্ধ?”
মামার কথায় অদ্ভুদভাবে তাকালো শুদ্ধ। হঠাৎ এভাবে কথা বলছে কেন মামা? চিন্তা নিয়েই মৃদু হেসে বলল,
“জ্বি মামা, অবশ্যই।”
তারেক নেওয়াজ এবার খানিকটা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। অতঃপর বলল,
“তা বেশ। তবে আমার কথা মানতে তোমার কোনো প্রবলেম নেই তাই তো?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। এবার তার বেশ ভালোই চিন্তা হচ্ছে। কি মানতে হবে তাকে? সে কিছু বলার আগেই তারেক নেওয়াজ উল্টো ঘুরে পিছনে দু’হাত একসঙ্গে বেঁধে বলল,
“তোমার জন্য মেয়ে ঠিক করেছি আমি। তোমার মায়ের সে মেয়েকে ভীষণ পছন্দ। তাই তার মতামত নেয়া আছে। আর তুমি তো বললেই আমাকে তোমার গার্ডিয়ান মানো। তবে আমার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে দিবে না অবশ্যই, তাই না?”
তারেক নেওয়াজ এর কথা শুনে শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে তাকায়। বারবার ঢোক গিলে। তারেক নেওয়াজ একটু থেমে বলে,

“মেয়েটা মাইরা। ইরফান ওকে কিছুতেই মানতে পারছে না, পারবেও না হয়তো। আর ওদের শুধু নামেই বিয়ে হয়েছিল। আমি ওদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছি। তুমি বিয়ের প্রিপারেশন নাও।”
শুদ্ধ তার মামার প্রথম কথা শুনেই ভেবেছিল কোথাও বসা প্রয়োজন তার। এগিয়ে গিয়ে বিছানার উপর বসতে নিয়েছিল। কিন্তুু দ্বিতীয় কথা শুনে তার বসার জায়গা আর বিছানায় হয়নি, ঠাস করে মেঝেতে পড়ে গিয়েছে।
তারেক নেওয়াজ শব্দ পেয়ে পিছন ফিরে শুদ্ধকে মেঝেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তুমি নিচে কি করছ?”
শুদ্ধ কথা বলতে ভুলে গিয়েছে। বিস্ময় নিয়ে তারেক নেওয়াজ এর দিকে চেয়ে আছে। তারেক নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ডিভোর্সের ব্যাপারে তোমায় কিছু করতে হবে না। আমি সব ব্যবস্থা করব।”
শুদ্ধ দ্রুত বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭

“না না মামা। আমি থাকতে আপনি কেন কষ্ট করবেন। আমি সব ব্যবস্থা করব। আপনি নিশ্চিতে থাকুন।”
দরজা থেকে ইরফানের গম্ভীর গলায় শক্ত কণ্ঠ ভেসে আসে,
“এখানে কি করছিস?”
শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে দরজার পানে তাকালো। ইরফান রক্তলাল চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ ঢোক গিলল। একবার তারেক নেওয়াজ এর দিকে তাকালো। তিনি তার ছেলের পানে রেগে তাকিয়ে আছে। তার ছেলে শুদ্ধর পানে। শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বিড়বিড় করছে,
“আজ আমি অসহায় বলে! বাবা ছেলের মাঝ থেকে আমায় কে বাঁচাবে? হু?”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৯