প্রণয়ের দহন পর্ব ১৪ || তাসনিম জাহান রিয়া || SA Alhaj

প্রণয়ের দহন পর্ব ১৪
তাসনিম জাহান রিয়া

কথাগুলো বলে আরিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমি দরজা ঘেষে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ি ফ্লোরে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। কানের কাছে বার বার বাঁজছে আরিয়ানের বলা শেষ কথাগুলো। একদিন তুই ঠিকই আমার ভালোবাসাটা বুঝবি। কিন্তু সেদিন তুই আমাকে খোঁজে পাবি না। সেদিন হারিয়ে যাব তোর শহর থেকে অনেক দূরে।
আরিয়ান কেনো বার বার দুরে চলে যাওয়ার কথা বলে। আরিয়ান কী বুঝে না ওর দূরে চলে যাওয়ার কথা শুনলে আমার কষ্ট হয়। আরিয়ান কেনো আমার সাথে এমন ব্যবহার করলো? আমি তো আরিয়ানের এসব ব্যবহার মেনে নিতে পারছি না। এই ভালো তো এই খারাপ। এই কেয়ারিং এই অত্যাচার।

আর আরিয়ান এসব কী বলে গেলো? কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি নিহানের সাথে কখন রঙলীলা করলাম? আরিয়ানকে এসব আঁজে বাজে কথা কে বললো?
উঠে দাঁড়ালাম ডুলু ডুলু পায়ে বেলকনিতে চলে এলান। কার্পেটের ওপর দপ করে বসে পড়লাম। হঠাৎ আমার হাতের ফোনের মেসেজ টোন বেঁজে ওঠলো। লক খুলতে খুলতে টুং টাং শব্দ করে বেশ কিছু মেসেজ আসে। সবগুলো মেসেজই এক নাম্বার থেকে এসেছে। মেসেজগুলো আননোন নাম্বার থেকে এসেছে। আমি মেসেজ ওপেন করি।
কী ভাবছো? আমি তোমার প্রণয়ের দহনে পুড়বো আর তুমি সুখে শান্তিতে সংসার করবে? তা আমি কখনো হতে দিব না। আমি যেমন তোমার প্রণয়ের দহনে পুড়েছি তেমন তোমাকেও পুড়তে হবে। তুমি যদি আমার না হও। আমি তোমাকে আর কারো সাথে সুখে শান্তিতে সংসার করতে দিব না।

আমাকে চিনতে পারছো? নাকি ভুলে গেছো? এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? নাকি ভুলে যাওয়ার অভিনয় করছো? তুমি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আমি ভুলতে দিব না।
আচ্ছা যাও আমি নিজেই আমার পরিচয় দিচ্ছি। আমি নিহান। তোমার ভালোবাসা। যাকে এক মুহূর্ত না দেখলে তুমি পাগল হয়ে যাও। পাগলি একটা।
পিরিতি কাঁঠালের আটা
লাগলে পড়ে ছাড়ে না।
খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে বেবি। বাই জানেমান।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তার মানে নিহান সবকিছু করেছে। আরিয়ানকে নিহানই ভুল বুঝিয়েছে। আরিয়ান নিহানের কথায় আমাকে ভুল বুঝলো। আমাকে সত্যিটা বলার সুযোগটাও দিল না। আমি এতোদিনে আরিয়ানের একটু বিশ্বাস পর্যন্ত অর্জন করতে পারলাম না। অন্যের কথা শুনে আমাকে অবিশ্বাস করলো।
চোখ বন্ধ করে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দিলাম। আমার কিছু ভালো লাগছে না সবকিছু অসহ্য লাগছে। কী সুন্দর ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাস লাগছে। অন্য সময় হলে চোখ বন্ধ করে বাতাস উপভোগ করতাম। কিন্তু আজকে বাতাসটাও আমার কাছে বিষাক্ত লাগছে।
গৌধুলগ্ন এখন। সূর্য তার রক্তিম আভা চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমিও ঘুমে ঢুলছি। চোখের পাতা খোলে রাখায় দায় হয়ে গেছে। এক সময়গুলো বন্ধ হয়ে এলো। হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।

হুট করেই ঘুমটা ভেঙে গেলো। ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণ আমার পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। অনেক ক্ষুধা লাগছে। এখন কিছু না খেলে আমি শেষ। চারদিকে অন্ধকার তার মানে রাত হয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি ওঠে বসে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘড়ির কাটা ১২ টায় অবস্থান করছে।
আশ্চর্য বিষয় আমি এতক্ষণ ধরে ঘুমুচ্ছি কেউ আমাকে ডাক দিল না। এট লিস্ট খাওয়ার জন্য হলেও তো ডাকবে। আমি বিছানায় এলাম কী করে? আরিয়ান নিয়ে আসছে? কিন্তু আরিয়ান তো রুমে নাই। আমার ঘুমের মাঝে হাঁটার অভ্যাস হয়ে গেলো নাকি। ঘুমের মাঝে হেঁটে হেঁটে বেলকনি থেকে বিছানায় চলে আসছি।

বেলকনিতে একটা মানুষের ছায়া মূর্তি দেখা যাচ্ছে। আমার আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এটা আরিয়ান। আমি বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে গেলাম বেলকনির দিকে। আরিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো কিছু খোঁজে পেলাম না। না আছে চাঁদ না আছে তাঁরা। শূন্য আকাশ। শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার।
মানুষ অনেক সময় অনেক কিছু কোনো কারণ ছাড়ায় করে। যে করে তারে কাছে সেটা ভালো লাগলেও অন্যদের কাছে সেটা পাগলামি মনে হয়।

আমি আরিয়ানের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আরিয়ানের কাঁদে হাত দিতে গিয়েও বার বার সরিয়ে নিচ্ছি। আরিয়ান এখনো আমার ওপর রেগে আছে। এখন যদি এতো রাতে সিনক্রিয়েট করে তাহলে সবাই জেগে যাবে। ব্যাপারটা অনেক বিশ্রী হবে। ডাকতে ইতস্তত বোধ করছি। ঠোঁটটা হালকা ভিঁজিয়ে নিয়ে গলার স্বর নামিয়ে বললাম,
আরিয়ান।

আরিয়ানের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আগের মতোই ভাবলেশহীন ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এবার আরিয়ানের কাধে হাত রাখলাম। আরিয়ান একবার আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে আবার আকাশ দেখায় ব্যস্ত হয়ে যায়।
আরিয়ান তুমি এখনো আমার ওপর রেগে আছো। আজকে নিহান আমাকে ভার্সিটিতে ডেকে ছিল। কিন্তু আমি শুনেও না শোনার ভান করে চলে আসছি। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাই না? তাহলে নিজের ভালোবাসার প্রতি তোমার এতটুকু বিশ্বাস নেই? তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস না করো। তাহলে এই ফোনটা দেখো। তবেই তুমি সবকিছু বুঝতে পারবা। নিহান আমাকে বিকেল বেলা মেসেজ দিয়েছিল যে তোমার সাথে আমাকে সুখে ………..

তোর কথা শোনা বা মোবাইল দেখার প্রয়োজন আমার নেই। আমি তোকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি। কী বলতো নিজের ভালোবাসার মানুষের সম্পর্কে এতো খারাপ খারাপ কথা শুনলে কারোরই মাথা ঠিক থাকার কথা না। আমারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার ওপর নিহানের সাথে তোর এমন অন্তরঙ্গ ছবি দেখে নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। জানি ছবিগুলো ফেইক। তবু তোর ওপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। এই কারণে যে তুই এমন একটা ছেলেকে ভালোবাসলি যে তোর সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দুই বার ভাবে না। নিহানের ওপরও প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। একটা মেয়েকে ভালোবাসে না বলে তার সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দুইবার ভাববে না। এসব ভেবেই রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিল। তখন তুই রুমে এলি। তোকে দেখেই সব রাগ উগ্রে দিলাম। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝিস না আই’ম সরি।
আমি আরিয়ানের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।

তোকে হারানোর ভয় আমাকে প্রতি মুহূর্তে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। মনে হয় এই বুঝি তোকে হারিয়ে ফেললাম। তোকে হারানোর ভয়ে আমি রাতে ঘুমুতে পারি না। মনে হয় আমি ঘুমুলেই নিহান এসে তোকে নিয়ে যাবে। নিহানের কথা শুনে নিহানের সাথে তোর এমন ছবি দেখে মনে হচ্ছিল এবার বুঝি সত্যিই তোকে হারিয়ে ফেললাম। নিহান তোকে আমার কাছ থেকে কেঁড়েই নিল। তোকে হারানোর ভয়ে আমি তোর সাথে আরো বেশি রুড বিহেইভ করি। তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। তোকে এক মুহূর্ত না দেখলে আমার পৃথিবী শূন্য হয়ে যায়। তুই ছেড়ে গেলে আমি সত্যিই মরে যাব।
হুশশশশ। আর কোনোদিন মরার কথা বলবা না। আমি কোনোদিন তোমাকে ছেড়ে যাবো না। এই হাতটা যখন একবার ধরেছি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর ছাড়বো না। ঐ একটা নিহান কেনো শত নিহান আসলেও তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না। বুঝছো?

প্রণয়ের দহন পর্ব ১৩

আরিয়ান মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। তারপর শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে আরিয়ান। আমার প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগছে। আরিয়ান জড়িয়ে ধরলেই তো আর ক্ষুধা কমে যাবে না। আমি আরিয়ানের কাছ থেকে ছাড়া পাবার জন্য মুচরা মুচরি শুরু করে দেই।
এমন ছটফট করছিস কেনো!
আমাকে প্লিজ ছাড়। আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগছে।
তোর ক্ষুধা মিটানোর জন্য তো আমি আছি।
প্লিজ ফাজলামো করো না। তুমি তো জানো আমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না।
আচ্ছা যা আর ফাজলামো করবো না। চল খেয়ে নিবি। আমি তোর খাবার আগেই রুমে নিয়ে আসছি। তুই রুমে গিয়ে দেখ বেড সাইড টেবিলের ওপর খাবার রাখা আছে খেয়ে নে। আমি একটা ফোন করে আসছি।
আচ্ছা।

আরিয়ানের কথা মতো আমি রুমে এসে খেয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আরিয়ান আসছে না দেখে আমি শুয়ে পড়লাম। আমি শুতেই আরিয়ান রুমে এসে নিজেও শুয়ে পড়ে। আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
তোর ক্ষুধা তো আমি মিটালাম। আমার ক্ষুধাও তো তোর মিটাতে হবে।

খুব সকালে চিৎকার চেঁচামেচিতে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। আমাদের রুমে সামনে এভাবে চিৎকার কেনো করছে? দরজাতে কেউ থাপ্পড় দিচ্ছে ধাম ধাম শব্দে হচ্ছে। বাইরে আব্বু, আম্মু, আনহা আর….

প্রণয়ের দহন পর্ব ১৫