প্রণয়ের দহন পর্ব ১৭ || তাসনিম জাহান রিয়া || SA Alhaj

প্রণয়ের দহন পর্ব ১৭
তাসনিম জাহান রিয়া

ইহ। একদম ভাব ধরবে না। আমি আরশি আমি সব পারি। হুহ।
আরিয়ান আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও তাকিয়ে আছি। সত্যি আরিয়ান সব দিক দিয়ে পারফেক্ট। হয়তো দেখতে এতো ফর্সা নয় কিন্তু উনার গায়ের রং উনার জন্য পারফেক্ট। উনার করা প্রত্যেকটা কাজ একদন পারফেক্ট। আমি উনার ট্রিম করা দাড়িগুলো ছুঁয়ে দিচ্ছি। হাতে সুড়সুড়ি লাগার ফলে খিলখিলিয়ে হেসে দিলাম। উনার দৃষ্টি গভীর। উনার এই গভীর দৃষ্টি বোঝার মতো সাধ্য সত্যিই আমার নেই।
জানিস আয়না মানুষের জীবনে সুখ জিনিসটা খুব ক্ষণস্থায়ী। সুখ জিনিসটা কর্পূরের মতো।
মানে?

কিছু না। তোদের বাসায় যাবি আজকে?
তুমি নিয়ে যাবে?
অবশ্যই। যদি তুই যেতে চাস।
তুমি কিন্তু আমাকে আবার তুই তুই করে ডাকছো।
উপস সরি। ভুলে যায় বার বার আর বলবো না।
হুহ মনে থাকে জেনো।
আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে?
যদি দেওয়ার মতো হয় তাহলে অবশ্যই দিব।

তুমি একদিন বলেছিলে, হঠাৎ একটা ঝড় এসে আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিল। এটার মানে আমি বুঝতে পারিনি। আন্টিও একটা এক্সিডেন্টের কথা বলেছিল। প্লিজ আমাকে সব খুলে বলবে।
আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করে, তখন আমি টিনেজার ছিলাম। সবে মাত্র ১৩ পেরিয়ে ১৪ তে পা দিয়েছিলাম। আনহা আর তানহার বয়স ছিল তখন ৫ বছর। তোর হয়তো তানহার কথা মনে নাই। মনে না থাকারই কথা। তুই তানহাকে হয়তো এক থেকে দুই বার দেখেছিস। আনহা আর তানহা ছিল যমজ। তানহা আনহার থেকে ১ মিনিটে ছোট ছিল। একদিন আম্মু তানহা আর আনহাকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিলেন। ড্রাইভার অসবাধনতার কারণে এক্সিডেন্ট হয়। আম্মু আনহাকে বাঁচাতে পারলেও তানহাকে পারেনি। আম্মু এক্সিডেন্টের পূর্বেই ধাক্কা দিয়ে আনহাকে ফেলে দিয়েছিল। যার ফলে আনহা তেমন আহত হয় না। তানহা আর আম্মু গুরুতর ভাবে আহত হয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হুট করেই আরিয়ান কেঁদে দেয়। আরিয়ানের কান্না দেখে আমি হতভম্ব। আরিয়ানের মতো একটা শক্ত মনের মানুষ যে এভাবে কাঁদতে পারে তা আমার ধারণার বাইরে ছিল। উনাকে ছোটবেলা থেকে আমি কখনো কাঁদতে দেখিনি।
তারপর কী হলো? আর তানহায় বা কোথায়?
তানহা আর নেই।
মানে?
আম্মু সুস্থ হয়ে গেলোও তানহা সুস্থ হয়নি।

এক্সিডেন্টের দ্বিতীয় দিন তানহা আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যায়। হয়তো তানহা এখনো আমাদের মাঝে থাকত। আনহার মতোই আমাদের সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখত। কিন্তু ডক্টরের একটা ভুলের জন্য আমি আমার বোনকে চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেললাম। ডক্টদের লোভের জন্য আমার বোন তার জীবন হারিয়ে ফেললো। আমি আনহার থেকেও তানহাকে বেশি ভালোবাসতাম। জানো আনহা আমাকে ভাইয়া ডাকলেও তানহা আমাকে কখনোই ভাইয়া ডাকতো না। সব সময় আমাকে আরিয়ান বলে ডাকতো। আমি প্রথমে রেগে গেলেও পরে ওর হাসি মুখ দেখে আমিও হেসে ফেলতাম। এখনো আমার কানে বাঁজে তানহার আরিয়ান ডাকটা।

আরিয়ান আবার কেঁদে ফেললো। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। আমি কী করবো বুঝতে পারছি না। কীভাবে আরিয়ানকে সান্ত্বনা দিব বুঝতে পারছি না। হুট করেই আরিয়ান নিজের মাথা চেপে ধরে। কেমন যেনো একটা ছটফট করতে থাকে।
আরিয়ান তোমার কী হয়েছে? তুমি এমন করছো কেনো?

আরিয়ান আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আরিয়ানের হঠাৎ করে কী হলো? আমি ওয়াশরুমের সামনে পায়চারি করছি। কিন্তু আরিয়ানের বের হবার নাম গন্ধ নেই। পাক্কা ত্রিশ মিনিট পর আরিয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হলো। মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে। আমি চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
কী হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমাকে দেখে মঙ্গল গ্রহের প্রাণী মনে হচ্ছে? নাকি আমার এক্সট্রা হাত পা গজায়ছে?

আমি কোমড় হাত দিয়ে উনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, তুমি তখন আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলে কেনো? আর দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলে কেনো?
ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে কী তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে যেতে হবে?
আমি এটা আবার কখন বললাম?
এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সরাসরিই তো বলতে পারো তুমি আমার কোলে বসে থাকতে চাও। আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নাই তোমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে।

আমি আবার কখন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বললাম, তোমার কোলে ওঠতে চাই?
আসলেই মেয়েদের মন বুঝা দায়। কখন তারা কী চায়? তারা নিজেরায় জানে না।
এই দেখো একদম মেয়েদের ইনসাল্ট করবা না বলে দিলাম।
আমি মেয়েদের ইনসাল্ট কখন করলাম? মেয়েরা ইনসাল্ট করার জিনিস না আদর করার জিনিস। যেমনঃ এখন আমি তোমাকে আদর করবো।
উনার লাগামহীন কথায় রিতিমতো আমার কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে। হুট করেই আরিয়ান এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো।
ভাইয়া।

আনহার ডাক শুনে আমরা দুজনই দরজার দিকে তাকালাম। সাথে সাথে দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। আনহার সাথে আম্মুও দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। চার জনই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি পড়ে গেছি। আম্মু মুচকি হেসে চলে যায়। আনহা দরজার লক দেখতে দেখতে বলে,
লক তো একদম ঠিক আছে। তাহলে তোরা এমন খোল্লাম খোল্লাম রোমান্স করছিস কেনো? ( আরিয়ান আনহার দিকে কটমট করে তাকাই) আমি যাই তোরা রোমান্স কান্টিনিউ করতে পারিস। আমি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে গেলাম।
কথাটা বলেই আনহা ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিল। আমি এবার আরিয়ানের দিকে কটমট করে তাকালাম।
তুমি আমাকে কোলে নিলে বলেই এমন পরিস্থিতি ক্রিয়েট হয়েছে। এখন আমি আম্মুর সামনে যাব কী করে? কে বলেছিল তোমাকে আমাকে কোলে নিতে?

কাউকে বলতে হবে আমাকে আমার বউকে কোলে নেওয়ার জন্য? নাহলে আমি আমার বউকে কোলে নিতে পারবো না? আমার বউ আমি কোলে নিব নাকি আদর করবো সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার।
দরজা খোলা রেখে বউকে কোলে নিয়ে ঘুরবা? আগে তো দেখবা দরজা খোলা নাকি বন্ধ?
এখন কিন্তু দরজা বন্ধই আছে।
আরিয়ান আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে কথাটা বললো। আমি পিছিয়ে যেতে যেতে বললাম,
মানে?

উফ তুমিই তো বললা দরজা বন্ধ করে তোমার সাথে যা ইচ্ছে তাই করতে পারব। আমি এখন আমার একমাত্র বউকে আদর করবো।
আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাই। উনি আমার গালে আলতো করে স্লাইড করছেন। আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যাই। ওয়াশরুম থেকে উনার হাসির আওয়াজ আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। বেয়াদপ ছেলে এতক্ষণ ধরে আমার সাথে ফাইজলামি করছিল।
আরশি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হবা। আমরা এখনি তোমাদের বাসায় যাব। আমি রেডি হয়ে তোমার জন্য ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করবো। তাড়াতাড়ি চলে এসো।

প্রণয়ের দহন পর্ব ১৬

একদম রেডি হয়ে রুম থেকে বের হই। বের হয়ে দেখি। ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি আরিয়ানের সাথে আনহাও রেডি হয়ে বসে আছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে আনহা আজকে শাড়ী পড়ছে। আব্বু আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার রওনা দিলাম

আরিয়ান ড্রাইভ করছে আমি আর আনহা পিছনে সিটে বসেছি। আমি আনহাকে গুতা দিয়ে বললাম
কী রে কী ব্যাপার? এমনে তো কেউ জুর কে ঘাড় ধরেও তোকে শাড়ী পড়াতে পারে না। আর আজকে নিজে থেকেই পড়লি। কারো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো?
কী যে বলো না ভাবি।
আনহাকে জ্বালাতে জ্বালাতে বাসায় চলে এলাম।

প্রণয়ের দহন পর্ব ১৮