প্রণয়ের প্রিয়কাহন পর্ব ১৬
শার্লিন হাসান
জাইমা চটজলদি বলে, ” আমার বিয়েতে তোমায় দাওয়াত দিয়েছে কে?”
পোহা থতমত খেয়ে যায়। বলে, “মানে?”
তখন ইশরাত জাইমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “তোমার বিহেভিয়ার এতো বাজে কেন জাইমা? ও তোমার সিনিয়র, সাথে গেস্ট। আমাদের পরিবারে এসব চলে না।”
জাইমা বিরক্ত হয়ে বলে, “গেস্ট গেস্টের মতো থাকতে পারেনা? ও আমার দোষ গুণ নিয়ে কথা বলছে কেন?”
“দেখলে,কেমন ঝগড়ুটে?”
পোহার কথায় ইশরাত কিছু বলেনা। জাইমা আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমাকে কী ঝগড়ুটে মনে হয়?”
জাইমার ভোলা ভালা কথায় আনায়া মৃদু হাসে। পোহা বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইশরাতও তার পেছন দিয়ে চলে যেতে আনায়া জাইমার কাছে আসে। পাশে বসে বলে, “এই পোহাকে কিছু বলোনা। ইশরাত,আমার শাশুড়ী ওকে মাথায় করে রাখে।”
“জানো, ও আমায় সেদিন বলেছিলো, মর্মকে বিয়ের চিন্তা বাদ দাও। আবার ও নাকী মর্মর গার্লফ্রেন্ড।”
“ও নিশ্চয়ই ভাইয়াকে পছন্দ করে।”
“তাহলে বিয়ে করলো না কেন?”
“ভাইয়া ওকে কখনোই বিয়ে করত না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জাইমা হাসে। আনায়ার হাত নিজের হাতে মুঠোয় নিয়ে চুমু দিয়ে বলে, “তুমি ভীষণ মিষ্টি—ভাবী।”
“কিসের ভাবী? বলবে, আপু। ভাবী শব্দটা পরপর লাগে। আপু ডেকো, কেমন নিজের বোনের মতো লাগবে।”
“ঠিক আছে আপু।”
জাইমার কথায় আনায়া হাসে। জাইমার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে, “তুমি ভীষণ মিশুক একটা মেয়ে জাইমা।”
“হ্যাঁ, জানি। তুমিও তো।”
দু’জন এক যোগে হেঁসে উঠে। এরই মাঝে জামিলা এবং রাহেলা খান রুমে আসেন। দাদীকে দেখে জাইমা এক গাল হাসে। রাহেলা খান কাছে আসতে জাইমাকে বসা থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “দাদী তোমার জাইমা ম্যারিড।”
“আলহামদুলিল্লাহ। সুখী হও বোন আমার।”
কথাটা বলে জাইমার কপালে চুমু দেয় রাহেলা খান। জামিলা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “ও বাড়িতে গিয়ে হাত পা,মুখ সামলে রেখো। তোমাকে বিশ্বাস নেই! দেখা যাবে দুইদিনে ওনাদের বাড়ি পুড়িয়ে তামা করে দিয়েছ। আনায়া মা, ওকে একা,একা রান্না ঘরে ছেড়ো না।”
বিয়ের দিন মায়ের থেকে নিজের কাজকর্মের এরকম রিভিউ পেতে জাইমা চোখমুখ কুঁচকে নেয়। আওয়াজ করে বলে, “আম্মু, আগামী কালকে এসব বললে হতো না? আজকেই কেন বলতে গেলে?”
“তোমাকে বিশ্বাস নেই।”
“চলে যাব। আর জ্বালাব না কিন্তু। মনে রেখো।”
জাইমার কথা টা সাধারণ হলেও জামিলার বুকে বিঁধেছে। তার বাড়ি মাতিয়ে রাখা তার আদরের কন্যা আরেক বাড়িতে স্থায়ী হয়ে যাবে। ইশ! বুকের গভীরে কী যে যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে। জামিলা কথা বলতে পারল না। তার কথা জেনো, মাছের কাঁটার মতন গলায় বিঁধে যন্ত্রণা দিতে আরম্ভ করলো। জাইমা মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসে। জামিলা মেয়ের হাসি দেখে কিছু বলেনা।
এদিকে জাইমার খারাপও লাগছে আবার ভালোও লাগছে। তবে ভালোর থেকে খারাপ টাই বেশি অনুভব হচ্ছে। তার চিরচেনা রুম,বারান্দা, বাড়িতে সে অতিথি হয়ে গেলো। কী অদ্ভুত আর যন্ত্রণা দেওয়ার মতন নিয়ম। যাক গে! বাস্তবতা তো আর চাদরে ঢাকা যাবে না। বাস্তবতা হলো দর্পণের উপর প্রতিফলিত হওয়া প্রতিবিম্বের ন্যায়।
ঘড়ির কাটা সন্ধ্যা ছয়টার ঘর ছুঁয়েছে। অনেকে চলে গেছে। শুধু বর বউ বাকী আছে। তাঁদের সাথে আছে আনায়া, ইশরাকের ভাই ইরফান সাথে তার বউ আনায়া এবং ইরা। ইশরাত, পোহা বাকীরা সবাই চলে গেছে। জাইমা নিরবে কাঁদছে। জামিলা,সাজ্জাদ খানও কাঁদছে। রাহেলা খানও কান্না করছেন অবিরত। ইশরাক অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো জাইমার কান্নার কারণে। কিছু বলেনি।
জাইমার বউ সাজা শেষ। শখ মিটেছে। কিন্তু বরের বাড়ি যেতে হবে এটা রিয়েলাইজ করতে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। সে তো বউ সাজার পক্ষে, বরের বাড়ি যাওয়ার পক্ষে না। সাজ্জাদ খান জাইমার হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। ইশরাক দাঁড়ানো। জাইমা ইশরাককে দেখে কান্না থামায়। তখন আনায়া বলে, “অনেক কান্না করেছ, এবার হাসি মুখে গাড়িতে উঠো। আমরা তো তোমার পরিবারই তাইনা?”
জাইমা একনজর ইশরাককে দেখে। তেমন খেয়াল করা হয়নি। তবে এই পর্যন্ত যতবার সে ইশরাককে দেখেছে ততবারই শুট পড়া, বা শার্টের সাথে ইন করা অবস্থায়। বিয়েতে তার গোলামেরপুত সাদা পাঞ্জাবির সাথে কটি পরে এসেছে। দেখতে মাশাআল্লাহ ভীষণ সুন্দর লাগছে। জাইমা তার বরকে দেখে খুশি হয়ে যায়। সত্যি বেটা ভীষণ সুন্দর। জাইমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, “জিতছি ভাই জিতছি। আমার বর হাজারে একজন।”
কিন্তু সেসব আর হলোনা। ইশরাকের পাশে জাইমাকে বসানো হয়। সামনে ইরফান এবং আনায়া বসেছে। ইরা তার নতুন বউ এবং পাপার মাঝে বসা। ইরফান সবাইকে বিদায় দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। জাইমা ইরার সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠে। ইশরাক মুখ ভার করে বাইরে তাকিয়ে আছে। আজকে পোহা জাইমার নামে অনেকগুলি বিচার দিয়ে বাসায় ফিরেছে। সেসব নিয়েই ইশরাকের মন ভার।
জাইমার মতো ছটফটে স্বভাবের মেয়ের কাছে মুখের উপর জবাব দেওয়া কোন ব্যপার না। সেখানে কী বলেছে? তার বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছে কে! মেয়েটার হয়ত ধারণা নেই ইশরাকের আন্টির মেয়ে পোহা। কত ভালো বন্ডিং তাদের। এ কথা পোহার মায়ের কানে উঠলে বা রাজিয়া আহমেদের কানে উঠলেই চলবে। কী যে হবে!
ইশরাক চিন্তিত জাইমার কার্যকলাপ নিয়ে। বাড়ি গিয়ে না জানি কী কী ঘটায়। কত হাজার বিচার আসবে তার নামে। জাইমাকে নিয়ে ভাবার মাঝে খান মহলের সাদা দেওয়ালের গেট পেরিয়ে গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করে। ইশরাক ইরাকে নিয়ে নেমে যায়। সবাই গাড়ি থেকে নেমে যায় জাইমা বাদে। তখন আনায়া ইশরাককে বলে, “জাইমাকে নিয়ে ভেতরে আসো।”
ইশরাক গম্ভীর মুখ করে জাইমার পাশের দরজার সামনে দাঁড়ায়। দৃষ্টি সামনে স্থির করে হাত বাড়ায়। জাইমা হাসিমুখে ইশরাকের হাতের উপর হাত রেখে উঠে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতে পড়ে যেতে নেয়। মূলত তার দোপাট্টার আঁচল একপাশ দিয়ে নেমে গেছে। সেটাতেই পা পড়েছে। ইশরাক জাইমাকে ধরে দাঁড় করায়৷ কাটকাট গলায় বলে, “আর ইউ ওকে?”
জাইমা মাথা নাড়ায়। ইশরাকের হাত ছেড়ে দিয়ে দোপাট্টা ঠিক করে নেয়। দু’জন পাশাপাশি হেঁটে ভেতরে যায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাকীরা। সাজেদ খানের হাতে ফুলের বুকে। জাইমা যেতে তাকে ফুলের বুকে দিয়ে বলেন, “ওয়েলকাম টু আওয়ার হোম।”
রাজিয়া আহমেদের হাতে ছুটানো ফুলের পাপড়ি। সেগুলো জাইমার দিকে ছুঁড়ে দেন হাসিমুখেই। জাইমা ভেতরে যায়। সোফায় বসলে তাকে ঠান্ডা শরবত দেওয়া হয়।
সবার দিকে একনজর তাকিয়ে ইশরাক নিজের রুমে চলে যায়। রুমে আসতেই দেখে তার কুকুর টা মেঝেতে শুয়ে আছে। ইশরাককে দেখা মাত্র ঘেউ ঘেউ করে উঠে। ইশরাক গিয়ে ডোডো র পাশে বসে। মাথায় হাত দিয়ে বলে, “রাগ করেছিস?”
ডোডো পুনরায় ঘেউ,ঘেউ করে উঠে। ইশরাক ডোডোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। চলে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
সাজেদ খান জাইমার সাথে গল্প গুঁজবে মেতে উঠেন। জাইমাও সেই খুশি। তার শ্বশুর মশাই ভালোই গল্প করে। সেও মন খুলে গল্প করে। জাইমাকে, সাজেদ খানের ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
আটটার দিকে জাইমাকে ইশরাকের রুমের নিয়ে আসে আনায়া। ইশরাক তখন সোফায় বসেছিল ডোডোকে নিয়ে। জাইমাকে দেখে সে নড়েচড়ে বসে। এদিকে ডোডো জাইমাকে দেখা মাত্র ঘেউ ঘেউ করে উঠতে জাইমা মৃদু কেঁপে উঠে। তার কুকুরে ফোবিয়া। একদম সহ্য হয়না। এদিকে তার বর কুকুর পালে। জাইমাকে রুমে দিয়ে আনায়া বলে, “তুমি চেঞ্জ করে নেও। আমি আসছি।”
কথাটা বলে আনায়া বেরিয়ে যায়। জাইমা সামনে এগোয়। বিয়েতে যা দিয়েছে সব শাড়ি। থ্রি-পিস বানানো বাকী। সেজন্য নিজের আনা থ্রি-পিসই জাইমা ব্যাগ থেকে বের করে। ইশরাকের রুমটা তেমন করে দেখা হয়নি। জাইমা থ্রি পিস হাতে নিয়ে দাঁড়াতে ইশরাক ওয়াশরুম এবং চেঞ্জিং রুম দু’টোই দেখিয়ে দেয়। জাইমা ইশরাকের দিকে তাকায়। কথা বলার জন্য মন ছটফট করছে। কিন্তু ইশরাকের মুখ ভার। সে তখন থেকেই খেয়াল করেছে জাইমা। কিন্তু কারণ কী? সেটা অজানা। জাইমা শাড়ির আঁচল নাড়াচাড়া করতে করতে ইশরাককে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে বিয়ে করে আপনার ফিলিংস কেমন?”
ইশরাক জাইমাকে উপরনিচ পরখ করে। রাশভারি গলায় জবাব দে, “অনেকবড় শ্বাস!
যেটাকে দীর্ঘশ্বাস বলে।”
জাইমার হাসি মাখা মুখটা মিলিয়ে যায়। ইশরাক সেদিকে খেয়াল করেনা। কিন্তু জাইমার খারাপ লাগছে। সে কী ভালো বউ হতে পারবে না? ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জাইমা প্রতিত্ত্যুর করে, “আমি কিছু ভুল করেছি?”
ইশরাক চকিত তাকায়। সে কথার জবাব না দিয়ে বলে, “চেঞ্জ করে আসুন।”
“আমি আপনার বিয়ে করা বউ। এখনো ‘আপনি’ করে সম্মোধন করছেন?”
“সময় লাগবে।”
“তাহলে নেচে নেচে বিয়ে করতে গিয়েছেন কেন?”
“আপনার উল্টাপাল্টা কার্যক্রম, বানানো গল্প দিয়ে ফিউচারে নাটক করব সেজন্য।”
“ওই কুত্তারবাচ্চা টা এখানে কী করছে?”
ইশরাকের রাগ হয়। জাইমাকে ধমকে বলে, “ও কুত্তার বাচ্চা না,আমার বাচ্চা। ওর নাম ডোডো।”
“ছেহ্! মানুষ আবার কুত্তার বাপ হয় কেমনে?”
“শাট আপ! যান তো এখান থেকে। আর দুই মিনিট থাকলে প্রশ্ন করতে,করতে আমার মাথা পাগল করে দিবেন।”
“চেহারাটাই যা সুন্দর ব্যবহার পাশে বসে থাকা কুত্তার চেহারার থেকেও জঘন্য।”
“মিস মৈশানী,ফাজিল মেয়ে। কথাবার্তা এরকম কেন?”
ধমকে বলে ইশরাক। জাইমা মুখ বাঁকায়। ঠিক সে মূহুর্তে আগমন হয় পোহা এবং ইরার। সে নক না করেই রুমে ঢুকে গেছে। অবশ্য, ইশরাক জাইমার তর্কবিতর্ক শেষের গুলো কানে এসেছে তার। পোহা এসেই ডোডোর কাছে যায়। ইরা ইশরাকের কাছে। জাইমা দাঁড়ানো। ইশরাকের পাশে ডোডো বসা। ডোডোর পাশে গিয়ে পোহা বসে। অর্থাৎ তারা দু’জন একটা সোফায় পাশাপাশি বসা। পোহার কাজে জাইমা খানিক বিরক্ত হয় সাথে অবাক। ইশরাক কিছু বলেনি। পোহা ডোডোর কপালে হাত দিয়ে বলে, “কী কিউট বাচ্চা। ইরা দেখো না ডোডো কীভাবে তাকিয়ে আছে।”
ইশরাক সেদিকে তাকায়। জাইমা তাকিয়ে আছে সেদিকে। ডোডো সোফা থেকে নেমে যায়। ইরা জাইমাকে বলে, “সুন্দুর বউ আসো না। আমরা গল্প করব।”
জাইমা জবাব দেয়না। সে পোহার দিকে তাকিয়ে আছে। ডোডো যেতে পোহা কিছুটা ইশরাকের সাথে চেপে বসে। তখন আবার ইশরাক উঠে দাঁড়ায়। জাইমার দিকে তাকিয়ে বলে, “এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে পা ব্যাথা করবেন নাকী যাবেন?”
জাইমা আমতাআমতা করে বলে, “আপনি বাইরে যান।”
“হ্যাঁ যাব।”
কথাটা বলে ইশরাক ইরাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। ইশরাক যেতে জাইমা তেড়েফুঁড়ে আসে পোহার দিকে। চোয়াল শক্ত করে বলে, “এভাবে গায়ের উপর ঢলে পড়ো কেন? ইশরাক এখন বিবাহিত, তার বউ আছে। ওর থেকে দূরে থাকবে।”
পোহা হাসে! জাইমার এক গাল মৃদু টেনে বলে, “কেন খারাপ লাগছে বুঝি?”
“কারোর রুমে আসতে হলে পারমিশন নিতে হয়। সেটাও শেখোনি?”
“তোমরা তো রোমান্স করছিলে না, যে নক করে আসব।”
“ম্যানার্স শেখোনি কখনো?”
“সেটা নিজেকে প্রশ্ন করো। এতো বড় বাড়ি, এতো সুন্দর পরিবার,এতো টাকা পয়সা, তাদের,ভদ্রতা,নাম সেই পরিবেশে এসে কীভাবে কী ব্যবহার করতে হয়,কথা বলতে হয় সেটা শেখোনি?”
“আমার সব শেখা আছে। শুধু ব্যক্তি ভেদে ব্যবহার চেঞ্জ হয়। এনি ওয়ে, এই পরিবারটা আমার। তুমি ভুলে গেছ? আমার দাদর দুই ছেলে। যার একজনের মেয়ে আমি, আরেকজনের ছেলে ইশরাক। এই পরিবারটা আমারও। তুমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করো, তুমি কোথায়, কার বাড়িতে এসেছ? তোমার মনে হয়না, তোমার থেকেও আমার বেশি অধিকার এবং আপনজন এই বাড়ির লোকজন। সেখানে তুমি যেভাবে আমাকে ট্রিট করছ,মনে হয় আমি ভেসে এসেছি। শোন, তিন কবুল বলে এ বাড়িতে পা রেখেছি। ইশরাক খান মর্মের অর্ধাঙ্গিনী আমি।”
“হ্যাঁ, দেখি কয়দিন টিকে এই বিয়ে।”
জাইমা জবাব দেয়না। সোজা চেঞ্জিং রুমে চলে যায়। পোহা বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রাগে চোয়াল শক্ত করে নিয়েছে সে। ইশরাক কেন জাইমাকে বিয়ে করতে রাজী হলো? তাঁদের বিয়েটাও হয়ে গেলো!! পোহা আর ভাবতে পারছেনা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। ইশরাককে সে ভীষণ পছন্দ করে। এভাবে সে অন্য কারোর হয়ে গেলো? তাও জাইমার মতো ইমম্যাচিউর মেয়েকে বিয়ে করল? এই বাড়িতে তার যাতায়াত অনেকদিনের। সেখানে কী একদিনেও ইশরাকের চোখে পড়েনি? একদিনও ইশরাকের ভালো লাগেনি তাকে? ওই জাইমার মতন উড়নচণ্ডী মেয়ে তো দুই দিনের পরিচেয়ে আসলো। এর মাঝেই পছন্দ হয়ে গেলো?
সবাই মিলে ডিনার করতে বসেছে। জাইমা বেশ আনমনা। খাবার গলা দিয়ে নামছে না। এতো রাগ উঠছে ইশরাকের প্রতি। কয়েক লোকমা খেয়ে পানি ঢেলে দিয়েছে জাইমা। রাগে কী যে করতে ইচ্ছে করছে। রাগটা পোহাকে নিয়ে ইশরাকের প্র্তি। ইশরাকের কী চোখে পড়েনা, পোহা যে তার আশেপাশে থাকে। গা ঘেঁষে!
আনায়া, ইরফান,ইশরাত চেয়েছিল রুম সাজাতে। ইশরাক বারণ করে দিয়েছে। এসব তার পছন্দ না। জাইমা বসেছিল, ইশরাকের খাওয়া শেষ হতে সে ইরাকে গুড নাইট দেয়। জাইমার দিকে একনজর তাকায়। সে আনমনা হয়ে বসে আছে। ইশরাক মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা আরম্ভ করে।
জাইমা সোফায় বসে,বসে ঝিমাচ্ছে। আনায়া এসে তার পাশে বসে। জাইমাকে বলে, “রুমে দিয়ে আসব?”
“না। ইশরাক চলে গেছে?”
“তুমি খেয়াল করোনি?”
“না।”
“আচ্ছা আসো।”
আনায়া জাইমার হাত ধরে এগিয়ে যায়। ইশরাকের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে নক করে। ইশরাক তখন রুম জুড়ে পায়চারি করছিল। আনায়াকে দেখে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে, ‘ভেতরে আসো।”
আনায়া জাইমাকে নিয়ে ভেতরে যায়। ইশরাক ডোডোর দিকে তাকায়। আনায়াকে বলে, “যাওয়ার সময় ডোডোকে নিয়ে যাবে। মৈশানী ওকে পছন্দ করছে না।”
আনায়া জাইমার হাত ছাড়ে। ডোডোকে ডেকে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ডোডো যেতে ইশরাক দরজাটা লক করে দেয়। জাইমা ঠায় দাঁড়ানো। ইশরাক এসে জাইমার সামনে দাঁড়ায়। লিলিপুট উচ্চতার বউকে দেখে মৃদু হাসে। জাইমাকে অভয় দিয়ে বলে, “রুমটা নিজের মনে করে ইউজ করবেন। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন।”
জাইমা জবাব দেয়না। ইশরাক খাটের কাছে আসে। যদিও সেটা গুছানো। জাইমা মিনমিন কন্ঠে বলে, “আমি কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারিনা।”
ইশরাক বেডের ডানপাশ দেখিয়ে বলে, “এই কর্ণার আপনার, ওই কর্ণার আমার। আজকে থেকে আমার কোলবালিশ আপনার জন্য বরাদ্দ করলাম।”
জাইমা মাথা নাড়ায়। নিজের কর্ণারে শুয়ে পড়ে। মনটা ভীষণ ভার হয়ে আছে। তবে ইশরাককে সে কিছু বলছেনা। বলার জন্য মন ছটফট করলেও সে চুপ। ইশরাক লাইট অফ করে,ড্রিম কাইট অন করে শুয়ে পড়ে। জাইমা কোলবালিশে মাথা রাখে। ইশরাকের দিকে একনজর তাকায়। অনেকক্ষণ ভেবে বলে, “পোহার সাথে আপনার কোন কিছু ছিলো?”
“না।কেন?”
“সত্যি ছিলো না?”
“ও আমার কাজিন। বোনের মতো, এর বাইরে কিছুনা।”
“তাহলে ও আপনার গায়ে ঢলে পড়ে কেন?”
“কোথায়?”
“আজকে সোফায় বসেছিল। ডোডো উঠে যাওয়ার পর ও আপনার গা ঘেঁষে বসেছে।”
“সেজন্যই তো উঠে চলে গেলাম।”
“এই আপনি সব নোটিশ করেন?”
“গুড নাইট। ঘুমান মিস মৈশানী।”
“আরেহ শুনুন না?”
“জ্বী,বলুন। শুনছি।”
প্রণয়ের প্রিয়কাহন পর্ব ১৫
“এই পোহা আপনাকে পছন্দ করে।”
“তারপর?”
“তারপর মানে?”
ইশরাক জবাব দেয়না। জাইমাও আর কথা বাড়ায়না। দু’জন দুই প্রান্তে শুয়ে,ঘুমিয়ে পড়ে।