প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে গল্পের লিংক || আদ্রিতা নিশি

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ১
আদ্রিতা নিশি

❝আমি বিয়েটা করতে চাইনা সারহান ভাই।আপনি বিয়েটা ভেঙ্গে দিন প্লিজ।❞
অরিত্রিকা লাল টুকটুকে শাড়ি পরে ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে আছে।তার মনটা আজ বড্ড বেশী খারাপ।তার মনের গহীনে যেন আমবস্যার ন্যায় অন্ধাকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে।ভেতরে ভেতরে মন খারাপের ঝুলি যেনো মুর্ছে পরছে হৃদয়ে।এক দৃষ্টিতে উদাসীন ভঙ্গিতে চেয়ে আছে আকাশের পাণে।কারণটা হলো বিবাহ। মেয়েদের জীবনটা আসলেই অদ্ভুত!কখন জীবন পাল্টে যায় বোঝা বড়ই কঠিন।অরিত্রিকা বেশ কিছুক্ষণ পরেও সারহানের কোনো উত্তর না পেয়ে আকাশ পাণ হতে চোখ নামিয়ে সামনের দিকের শুভ্র পাঞ্জাবি পরিহিত গম্ভীর শ্যাম পুরুষটির দিকে দৃষ্টিপাত করল।সে আজ অনেকটা সাহস সঞ্চার করে কথাগুলো বলেছে।কিন্তু তখন খেয়াল করেনি সারহান ফোনে কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। সে যে কষ্ট করে কথাগুলো বলেছে শুনেছে কি মানুষটি?

হয়তো শোনেনি। সারহান এখনো ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে কারো সাথে।মুখশ্রী গাম্ভীর্যভাব থাকলেও ভীষণ রে গে আছে তা অস্পষ্ট বুঝতে পারলো অরিত্রিকা।কপালের রগ টানটান হয়ে আছে। অরিত্রিকা দূর হতে কথা শুনে বুঝলো পার্টি অফিসে কোনো ঝামেলা হয়েছে।হয়তো আবারো অন্য দলের মানুষের সাথে মা রামারি করেছে। এ আর নতুন কি?প্রায়দিনই তার দিনের শুরু হয় এসব কাহিনী দিয়ে। অরিত্রিকার অপছন্দের তালিকায় রাজনীতি একদম শীর্ষ অবস্থানে। মা রপিট,খু ন, রাজনীতিবিদ এরাই তার অপছন্দের শীর্ষে অন্তর্ভুক্ত। এসব ভেবেই ভারাক্রান্ত মনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
সারহানের মেজাজ বেশ গরম। মুখশ্রী গম্ভীর, চোয়াল অতিশয় শক্ত। কপালে তীব্র বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। ছাদের অপরপাশ ফিরেই ফোনে কথা বলা ব্যক্তিকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল;

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তোদের বলেছিলাম একা কোনো কাজ করতে যাবিনা।অথচ তোরা আমায় না বলেই ওই তালুকদার সাহেবকে শিক্ষা দিতে গিয়েছিলি।সময় মতো আমি আরো লোক না পাঠালে কি হতো বুঝতে পারছিস?”
অপরপাশ হতে কারো মিইয়ে যাওয়া কন্ঠস্বর শোনা গেলো;
“আর হবেনা ভাই। পরবর্তীতে আপনার প্লেন অনুযায়ী কাজ করবো।”
সারহান বিগড়ে যাওয়া মেজাজে বলল;
“মনে থাকে যেনো।”
“ঠিক আছে ভাই।”
সারহান কল কাটার পরপরই অরিত্রিকার দিকে শান্ত আর শীতল চাহনিতে তাকাল।দেখলো লাল টুকটুকে শাড়ি পরে হালকা সাজে মলিন মুখশ্রীতে তার দিকে তাকিয়ে আছে অরিত্রিকা। ভ্রু কুঁচকে গেলো তার। এমন সাজ দেখেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না সে। বরং, বিরক্তিবোধ করল একটু। ভরাট কন্ঠে জানতে চাইলো;
“বিয়ে কেনো করবিনা?ছেলে পছন্দ হয়নি?”

অরিত্রিকার এই ভরাট কন্ঠ শুনেই প্রাণ যায় যায় অবস্থা। একটু আগে সাহস করে যে কথাটা বলেছে এখন তার উত্তর দিতেই যেনো গলা শুকিয়ে আসছে। শান্ত চাহনি যেনো র ক্ত হীম করে দিচ্ছে। কন্ঠনালী হতে যেনো কথায় বের হচ্ছেনা।
অরিত্রিকা কিছুটা ভ য় দমিয়ে নিজেকে শান্ত করলো। সারহানের মুখ পাণে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে মলিন মুখে করুণ স্বরে বলল;
“সারহান ভাই আমি চাইছি না এই মুহুর্তে বিয়ে করতে।আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই।নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।তারপর বিয়ে নিয়ে ভাববো।আপনি প্লিজ মা,বাবাকে বলুন আমার যেন বিয়ে না দেয়।”

সারহান অরিত্রিকার কথা শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।কিছু একটা মনে পরতেই ভ্রুযুগল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল;
“মেডিকেলের রেজাল্ট তো দুইদিন আগে দিয়েছে।নিশ্চয়ই চান্স পাসনি তাইতো চাচা তোর বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে।আর কি বললি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাস? এখন কার পায়ে দাঁড়িয়ে আছিস?অন্যের পায়ে?”
সারহানের কথা শুনে অরিত্রিকার মুখ গোমড়া হয়ে গেলো। অপ/মানে মুখটা থমথমে হয়ে গেছে তার। শুকনো মুখখানা আরও শুকনো হয়ে গেলো। দুইদিন আগে তার মেডিকেলের রেজাল্ট বেরিয়েছে।কিন্তু দুর্ভা গ্য বশত সে চান্স পায়নি। আসলে এডিমশনের জন্য তেমন সিরিয়াসভাবে পড়েনি।না পড়লে কি আর চান্স পাওয়া যায়? যায় না। এই কারণেই বিয়ে নামক ঝড়ের কবলে এইটুকু বয়সে পড়তে হয়েছে।
অরিত্রিকা সারহানের করা অপমান সাইডে রেখে মুখ গোমড়া করেই বলল;
“ মেডিকেলে চান্স পাইনি দেখে বিয়ে দিয়ে দিবে? এবার চান্স পাইনি তো কি হয়েছে পরের বার আবার এডমিশন দিবো।তখন দেখবেন চান্স পেয়ে যাবো।”
সারহান অরিত্রিকার এমন কথায় কিছুটা বি রক্ত হলো।এই মেয়ে জীবনে কবে সিরিয়াস হবে?। বির/ক্তিবোধ নিয়েই ধ মকে বলল;

“বিয়ে করিবনা আমায় কেনো বলছিস চাচাকে গিয়ে বল।”
অরিত্রিকা কিঞ্চিৎ চমকালো। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো তার। করুণ স্বরে বললো;
“আমি আব্বুকে বলেছিলাম কিন্তু উনি আমার কথা শুনতে নারাজ। আব্বুকে আপনি বলুন না।আপনার কথা তো শোনে।আপনি বুঝিয়ে বললে আব্বু আমায় বিয়ে দিবেনা।”
সারহান নিরব চোখে অরিত্রিকার অশ্রুভেজা চোখের দিকে তাকালো।মেয়েটার নেত্রপল্লব হতে গড়িয়ে পরছে অশ্রু।অশ্রু তে দুগাল ভিজে যাচ্ছে। মুখশ্রী লাল হয়ে আছে কিছুটা ফুলেও গেছে।সারহান বুঝলো এর আগেও অরিত্রিকা কান্নকাটি করেছে।
সারহান ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বলল;
“বিয়ে করবিনা অথচ শাড়ি পরে সেজেগুজে পাত্র পক্ষের সামনে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছিস?আবার বলছিস বিয়ে করার ইচ্ছে নেই?”
অরিত্রিকা আহ তস্বরে বলল;
“আপনি আমায় ভুল বুঝছেন।আমি শাড়ি পরতে চাইনি।আম্মু জোর করে পরিয়ে দিয়েছে।এখনো পাঁচটা বাজেনি। আপনি আব্বুর সাথে কথা বলুন ওরা যেনো না আসে।”
সারহানের ফোন বেজে চলেছে। এখনি পার্টি অফিসে যেতে হবে তার। জরুরী মিটিং আছে। সারহান অরিত্রিকাকে ব্যস্ততা দেখিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল;

“আমার জরুরী পার্টি অফিসে যেতে হবে।আর বিয়েটা যখন করতে চাইছিস না উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে চাচাকে বিয়ে না করার কথাটা বলিস। আমি চাচাকে কিছু বলতে পারবোনা। আসছি।”
অরিত্রিকা আহ ত চোখে সারহানের চলে যাওয়া দেখলো।তার মনে হলো এতোটা পাষা/ণ কেনো সারহান ভাই।?! চাইলেই তো পারতো তার বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে। অথচ দিলোনা।ভাবতেই চক্ষু হতে অশ্রুর ফোঁটা গাল বেয়ে পরতে লাগলো।তার কষ্ট দ্বিগুণ হয়ে উঠল।অরিত্রিকা এ বছর মেডিকেলে এডমিশন দিয়েছিলো।পড়াশোনায় মনোযোগী না হওয়ার কারণে সে চান্স পায়নি।এতেই রুষ্ট হয়েছেন অরিত্রিকার বাবা আজমল চৌধুরী। রা গের কারণেই অরিত্রিকাকে বিয়ে দিতে চাইছেন এই মুহুর্তে ।অরিত্রিকা ফাইরুজ চৌধুরী বাড়ির সকলের কাছে সবচেয়ে আদুরে ছোট সদস্য। সবসময় আদর যত্নে থাকলেও অরিত্রিকার বাবা পড়াশোনার বিষয়ে খুবই কঠোর। আজমল চৌধুরী আর সাথী বেগম দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান সে। অরিন অরিত্রিকার বড় বোন। তার বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয়ে গেছে। আরশাদ চৌধুরী আর তানিয়া বেগম দম্পত্তির বড় সন্তান সারহান ইদায়াত চৌধুরী।তাদের আরোও একটা ছেলে আছে তার নাম সাদাত আসতাফ চৌধুরী।সাদাত আর অরিত্রিকা সমবয়সী।সাদাত অরিত্রিকার থেকে ছয়মাসের বড়। অরিত্রিকার বড় বাবার ছেলে সারহান। তাদের বংশের অধিকাংশ সদস্য রাজনীতির সাথে জড়িত। সেই সুবাদেই সারহানও রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরেছে। আরেকটা কারণও আছে তা হলো ভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলো।

“কিরে অরিত্রি একা এই অবেলায় ছাদে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? আম্মু তোকে নিচে খুঁজে চলেছে।”
অরিন অরিত্রিকে সারা বাড়ি খুঁজে না পেয়ে ছাদে খুঁজতে এসেছে।অরিত্রিকা তখনো নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে ব্যস্ত। চারিপাশের কোনো কিছুই তার খেয়ালে নেই সে তো তার ভাবনায় বিভোর হয়ে আছে।অরিন বোনের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে এগিয়ে গেলো। দেখলো মেয়েটা কান্না করতে ব্যস্ত।
অরিন বোনের চোখের পানি নিজ হাতে মুছিয়ে দিয়ে আদুরে স্বরে বলল;
“এই পাগলী কাঁদছিস কেনো? এখনো তো বিয়ে হয়নি। দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি?”
অরিনের কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই অরিত্রিকার ভাবনার ছেদ ঘটলো। সে অশ্রুসিক্ত নয়নে বোনকে বলল;
“তুই জানিস না আপু। আমি লুকিয়ে শুনেছি আজ দেখতে আসলেই আকদ করিয়ে রাখবে। আব্বু আম্মু বলছিলো কাল রাতে আমি তাদের কথা শুনতে পেয়েছিলাম।সারহান ভাই এতোটা পা/ষান্ড কেনো? সে তো আব্বুকে বলে বিয়েটা ভাঙ্গতে পারতো। অথচ তেমন কিছুই করলোনা। আমি কতোবার বললাম তবুও উনি গুরুত্ব দেইনি। উল্টো আমায় ঝাড়ি দিয়ে চলে গেছেন।”

অরিন কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।সেও জানে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসলেই অরিত্রিকার আকদ করিয়ে রাখা হবে। সেই কারণে কাল বিকেলে সে এসেছে।মা- বাবাকে বুঝিয়েছে যেনো এখনি বিয়ে না দেয়।কিন্তু আজমল চৌধুরীর এক কথা মেয়েকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন।অরিন হতাশা নিয়ে চলে এসেছিলো আর কিছু না বলেই।
অরিন অরিত্রিকাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করে হঠাৎ কিছু একটা মনে করে জানতে চাইলো;
“কিছু মনে করিসনা জানিস তো সারহান ভাই কেমন রা গচটা, গম্ভীর স্বভাবের।আমাদের কথা শোনার টাইম নেই উনার।এবার বলতো বিয়ে না করার কারণ কি শুধু পড়াশোনা করবি এটা? নাকি অন্য কারণও আছে? কারো সাথে প্রেম করিসনা তো আবার?”
অরিত্রিকা এতোক্ষণ কাঁদতে থাকলেও তার মেজাজ বিগ ড়ে গেলো এমন কথায়।রা গাশ্রিত মুখে দাঁতে দাঁত চেপে অরিনকে বলল;

“আমি প্রেম করলে তুই জানতিস না? আর প্রেম করলে আমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থায় থাকতাম? সারহান ভাই এসব জেনেও আমার হাত পা আস্ত রাখতো?”
অরিন বুঝলো তার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল।সে অপরা/ধীর ন্যায় বলল;
“ সরি।আসলে আমি ভেবেছিলাম তোর জীবনে কেউ হয়তো আছে তাই এই ভাবে মরা কান্না করছিস।এবার চল নিচে যাই না হলে মা খুন্তি নিয়ে চলে আসবে। ”
অরিত্রিকা বোনের কথা শুনে রা গে গজগজ করতে করতে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
অরিন দৌড়ে পিছু যেতে যেতে বলল;
“ আরে আস্তে যা। এইভাবে শাড়ি পরে কেউ জোরে হাঁটে? ”

চৌধুরী বাড়িতে যেনো ছোট খাটো বিয়ের আমেজ লেগেছে।বাড়ির সকলে অতিথি আপ্যায়নের বন্দবস্ত করছে।তানিয়া বেগম আর সাথী বেগম বাহারি রকমের খাবার রান্নায় ব্যস্ত।তাদের সাথেই হাত চালিয়ে কাজ করছেন অরিত্রিকার ছোট ফুপি ইসমা বেগম। আজই সকালে আজমল চৌধুরীর কল পেয়ে মেয়েকে সাথে এসেছেন তিনি।
ঘড়িতে এখন চারটা বেজে দশ মিনিট। অরিত্রিকা মুখ ভার করে নিজ রুমে বসে আছে। তারপাশেই বসে আছে তার ছোট ফুপির মেয়ে ইশরা। ইশরা মুখটা গম্ভীর করে অরিত্রিকার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মস্তিষ্কে নানা ধরনের ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে এই মুহুর্তে ।সাদাত কিছুটা দূরে চেয়ারে বসে চিপস খাচ্ছে আর অরিত্রিকা আর ইশরাকে পর্যবেক্ষণ করছে।অন্য সময় হলে এই দুজন বাড়ি মাথায় করে রাখতো। অথচ আজ দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে আছে।
ইশরাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো অরিত্রিকা।সে গরম চোখে বলল;

“আমার দিকে এই ভাবে হাবাগোবার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো? আগে কি আমায় দেখিসনি?”
ইশারা অরিত্রিকার দুই মাসের বড়।দুজনেই এক সাথেই মেডিকেলে এডমিশন দিয়েছিলো। তবে কেউ চান্স পায়নি। পরবর্তী আর একটাই উপায় খোলা আছে পাবলিক ভার্সিটি। দুজনেই সেখানেই এডমিশন দিবে ভেবেছিলো। তার আগেই বিয়ের নামক ভাই রাস চেপে ধরলো অরিত্রিকাকে।
অরিত্রিকা বিরক্তমাখা কন্ঠস্বর শ্রবণ হতেই নড়েচড়ে বসলো ইশরা। মেকি হাসি দিয়ে বলল;
“ আমার ভাবতেই অবাক লাগছে যে মামু মেয়েকে এতো ভালোবাসে সে কিনা রে গে তার কণ্যাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে?আর তুই ও বিয়ে করে নিচ্ছিস?আমিই শুধু সিঙ্গেল রয়ে গেলাম রে।”
সাদাত ইশরার কথায় তাল মিলালো। দুঃখী মুখ করে বলল;
“আমি ও আছি রে।এই ক ষ্টে আমার না ওই যে মমতাজ আপার গান গাইতে ইচ্ছা হচ্ছে। “বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া হাইট্টা যায়,বুকটা ফাইট্টা যায়।”
সাদাতের গান শুনেই ইশরা হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।সাদাতও ইশরার সাথে তাল মিলিয়ে হাসছে।অরিত্রিকা এদের কান্ডের রে গে আগু ন হয়ে গেলো।রা গে ইশরার পিঠে জোরেসড়ে একটা কিল বসিয়ে দিলো।ইশরা আহ! করে আর্ত নাদ করে উঠলো তখনি।সাদাত ধম করে কিলের আওয়াজে হাসি থামিয়ে চুপ করে গেলো।সে মা র খেতে চায় না।
অরিত্রিকা রে গে বলল;

“আর হাসবি? এইদিকে আমি নিজের দুঃখে ম রে যাচ্ছি।আর তোরা আমায় নিয়ে মজা নিচ্ছিস? আমারও সময় আসবে একসময়।এখানে চুপ করে বসে থাক।বেশি কথা বললে রুম থেকে বের করে দিবো।”
ইশরা এখনো ব্য থায় মুখ কুঁচকে আছে।ভালোই লেগেছে পিঠে।সাদাত ভদ্র ছেলের মতো চুপ করে আবারও চিপস্ খেতে লাগলো।যেনো সে কিছুই করেনি।অরিত্রিকার মনটা আবারও অনামিশার ন্যায় অন্ধ কার হয়ে গেলো। চিৎ কার করে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে।
অরিনকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে দেখে তিনজনেই তাকালো সামনের দিকে।অরিন নিচতলা থেকে দৌড়ে দ্বিতীয় তলায় এসেছে।এতেই হাঁপিয়ে গেছে সে।অরিন হাঁপাতে হাঁপাতেই বলল;
” অরিত্রি তোর হবু বরকে কারা যেনো আমাদের বাড়িতে আসার সময় পথিমধ্যে বেদম পিটি য়েছে।বেচারা অবস্থা আশং কাজনক।সিটি হসপিটালে ভর্তি আছে এখন।নিশাদের বাবা কল করেছিলেন এখন।মা,বাবা আর বড়মা হসপিটালে গেছে নিশাদকে দেখতে।”
অরিত্রিকা বোনের মুখে এমন খবর শুনে থম মেরে রইল।মুখ অস্বাভাবিক ভার। তবে এখন তার খুশিতে নাচতে ইচ্ছা হচ্ছে তারমানে আজ বিয়েটা হবেনা।কিন্তু না এখন নাচা যাবেনা।মনে মনে আকাশে উড়ছে সে।খুশির ভাবাবেগ প্রকাশ করা যাবেনা এখন ।সাদাত আর ইশরা কথাটা শুনেই অবাক হয়ে গেলো।
ইশরা তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করল;

“আপু কারা মেরে ছে জানতে পেরেছে?”
”নাহ।তবে পুলিশকে জানানো হয়েছে।”
সেই মুহুর্তেই অরিত্রিকার ফোনে মেসেজ এসেছে।সে মেসেজের আওয়াজে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো সারহান ভাই একটা ভিডিও পাঠিয়েছে।তার একটু রা গ হলো তখন কথা শুনলোনা এখন আবার ভিডিও পাঠাচ্ছে।কিসের ভিডিও এটা।? কৌতুহল বশত ভিডিওটি অন করতেই চমকে উঠলো।ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন ছেলে পেলে মিলে একজনকে বেধ ড়ক মার ধর করছে।সেই একজন আর কেউ নয় তার হবু বর নিশাদ।………

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২