প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২২

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২২
আদ্রিতা নিশি

সারহানের ক্রো ধে গর্জনরত হিংস্রা ত্মক চাহনীতে নিশাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রা গে শরীর থরথরিয়ে কাঁপছে তার। মুখশ্রী লাল হয়ে গেছে। নিশাদ ছটফট করছে।দুহাতে চেষ্টা করেও গলা হতে সারহানের হাত ছাড়াতে পারছেনা। জিভ বেরিয়ে গেছে, চোখ উল্টে যাচ্ছে।অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আবির গাড়ির ভেতর হতে সারহানের এমন ধ্বং সাত্মক রুপ দেখে তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে আসলো। ইনানও সারহানের এমন রুপ দেখে ভয় পেয়ে গেছে।সেও দেখলো পরিস্থিতি উতপ্ত। এখনই সারহানকে না থামালে নিশাদকে মেরেই ফেলবে। নিজ চোখে সারহানের এমন ভয়া বহ রুপ বেশ কয়েকবার চক্ষু সম্মুখে দেখেছে। সে গাড়িতে আর বসে না থেকে দ্রুততার সহিত গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে গেলো সারহানের দিকে। আবির আর ইনান সারহানের হাত থেকে নিশাদকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।নিশাদের অবস্থা শোচনীয়। চক্ষুদ্বয় হতে পানি গড়িয়ে পরছে। শরীর অসার হয়ে আসছে। সারহান নিশাদের দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসলো। সে নিশাদের গলা হঠাৎই ছেড়ে দিলো।নিশাদ ধুলোমাখা রাস্তায় ধপাস করে বসে পরলো। দুর্বল শরীরে চোখ ঘোলা হয়ে এসেছে। কাশতে কাশতে জীবন যেনো যায় যায় অবস্থা। ঠোঁটের কোণে কিছুটা র ক্তের অস্তিত্ব। শরীর ঘেমে স্রোত হয়ে গেছে।

সারহান নিশাদের করুণ অবস্থা দেখে স্বাভাবিক রইল। তারসাথে নিশাদের মতো চুনো পুঁটি লাগতে আসছে ভাবতেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো সারহান।আবির আর ইনান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সারহানের দিকে।তারা জানে সহজে সারহান রাগ বা কারো গায়ে হাত দেয়না। হয়তো নিশাদ কোনো উল্টোপাল্টা কথা বলেছে।এই কারণেই রেগে গেছে এতোটা।
সারহান নিজের শার্ট টেনে ঠিক করতে করতে আবিরকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো~ গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে আয়।
আবির ভাবলো নিশাদকে শিক্ষা দিতে গিয়ে হাঁপিয়ে গিয়েছে। হয়তো পানি খাবে। সে কথামতো গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে আসলো।আবির আসতেই সারহান পানির বোতল হাতে নিয়ে নিশাদকে যে হাতে গলা টিপে ধরে ছিলো সেই হাত ধুয়ে ফেললো।আবির আর ইনান তাজ্জব বনে গেলো। বিস্মিত চোখে সারহানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ভেবেছিলো এক আর হলো আরেক। সারহান হাত ধুয়ে আবিরের হাতে বোতল ধরিয়ে দিতেই খেয়াল করলো দুজনে তার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সারহান কথায় বিরক্তি ঢেলে বললো~ এমন করে দুজন আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস?
আবির আর ইনানের ধ্যান ভাঙলো।আবির থতমত খেয়ে বললো~ আমি ভেবেছিলাম তুই হয়তো পানি খাবি।
সারহান বিরক্তিভাব এঁটে বললো~ গর্দভ একটা।
আবিরের মুখ গোমড়া হয়ে গেলো। ইনান নিজেকে বাচাতে গাড়ির দিকে ছুটে গেলো।
নয়ন তালুকদার ভাগ্নেকে খুঁজতে খুঁজতে পার্কিং প্লেসে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে আসলেন।এসেই দেখলেন নিশাদের বিধ্বস্ত মুখ।দেখেই চমকে উঠলেন। নিশাদ তখনও স্বাভাবিক হয়নি ।জোরে জোরে শ্বাস টেনে যাচ্ছে।গলায় আঙুলের দাগ স্পষ্ট।

নয়ন তালুকদার নিশাদকে দেখে ভয়ার্ত কন্ঠে বললেন ~ নিশাদ এই অবস্থা কি করে হয়েছে?
নিশাদ কথা বলার অবস্থায় নেই তবুও নয়ন তালুকদারের কথা শুনে অতি কষ্টে উচ্চারণ করলো~ সারহান।
নয়ন তালুকদার সারহানকে তখনো খেয়াল করেননি। তিনি সারহানের নাম শুনতেই মাথায় রা গ উঠে গেলো তখনি।রাগান্বিত হয়ে আশে পাশে তাকিয়ে সারহানকে দেখার প্রয়াস চালালো।সামনে পেলেই খু ন করবে। কতো বড় কলিজা হয়েছে যে নিশাদকে আবারও মেরেছে।সারহান বক্ষে দুহাত গুজে মামা ভাগ্নের কাহিনী দেখছে।নয়ন তালুকদার সারহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফুঁসে উঠলেন। ফুঁসে সারহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।
নয়ন তালুকদার ক্ষিপ্র হয়ে বললেন~ নিশাদকে তুই মে/রেছিস।
সারহান আশেপাশে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো~অবশ্যই আমি মে রেছি।আমি ছাড়া ওই অসভ্যটা, বাস্টার্ডটা কে মারার সাহস কারো নেই।
~নিশাদকে অস ভ্য বললি তুই?
সারহান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো ~বলেছি। আপনার ভাগ্নেকে অরিত্রিকার পিছু ছাড়তে বলুন। লাস্ট টাইম ওয়ার্ন করলাম কাজ না হলে আপনার ভাগ্নে কে এমন সুস্থ অবস্থায় চোখের সামনে দেখবেন না।
নয়ন তালুকদার কিছু বলবেন এমন সময় সারহান ইগনোর করে নিজ গাড়িতে গিয়ে বসলো।

প্রিয় কল্পপুরুষ,
প্রিয় কল্পপুরুষ বললাম কারণ আপনার নাম ধরে সম্বোধন করার সময় এখনো আসেনি। আশা করছি খুব শীঘ্রই প্রিয় বলে আপনার নাম সম্বোধন করতে পারবো।আজ প্রথম নিজের মনে লুকিয়ে রাখা কথাগুলো সাদা কাগজে নিখুঁতভাবে লিখার চেষ্টা করছি।”কিছু অনুভূতি খুবই অবাধ্য হয়।প্রণয়ানুভূতি ও তেমনই অবাধ্য।মন গহীনে অসময়ে হঠাৎ ই আপনার জন্য অদ্ভুত অনুভূতিগুলো প্রজাপতির ন্যায় পাখা মেলে উড়তে থাকে।আপনি নামক প্রণয়াসুখ যেনো যেনো ব্যধিতে পরিণত হয়েছে।তীক্ষ্ণ ভালোবাসাগুলো ইচ্ছে করছে আপনার কাছে প্রকাশ করি। আমার মনের গহীনে লুক্কায়িত আপনাকে নিয়ে ছন্নছাড়া ভালোলাগা গুলো যেনো অনুভূতির শীর্ষে।কখনো ভাবিনি আপনার মতো কঠিন,গম্ভীর,কাঠখোট্টা শ্যাম পুরুষের প্রণয়ে আমার মতো চঞ্চলা অষ্টাদশী কন্যা গভীর ভাবে আঁটকে যাবে ভাবতেই অবাক হয়ে যাই।আমি বয়সে আপনার থেকে অনেকটা ছোট হলেও আমার মনে আপনার জন্য থাকা অনুভূতি ঠুনকো নয়। আপনি আমাকে কেনো বুঝেন না বলুনতো। আপনার বিরহে যেনো প্রতিনিয়ত পুড়/ছি। হৃদয়ের দহন কি আপনি দেখছেন না। জানেন আপনাকে নিয়ে কত শত কল্পনা করেছি। কল্পনা কি কখনো বাস্তব হবে না? হয়তো হবে। আবার না ও হতে পারে। আমি কখনো আপনার দ্বারে নিজের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করবো না। আপনি আমার মনে আপনার জন্য প্রণয়ানুভূতি উপলব্ধি করুন।আপনার মনে আমার জন্য ভালোবাসার জন্ম হোক। আমি চাই আমাদের পরিণয় পবিত্র হোক।ভালোবাসি আমার প্রিয় কল্প পুরুষ, ভালোবাসি আপনাকে।

ইতি
আপনিময় কল্প পুরুষে বিমোহিত এক কিশোরী🦋
অরিত্রিকা নিজ মনে চলমান কথাগুলো সাদা কাগজের ভাজে উগড়ে দিলো নিমেষেই।লিখা শেষ হতেই কলম থামিয়ে দিলো সে। আজ প্রথম কাউকে চিঠি লিখছে সে কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। স্থির চিত্তে সে তাকিয়ে রইল সাদা কাগজের বক্ষে কালো বর্ণের লেখা নিজ অন্তঃস্থলে জমে থাকা প্রঘাঢ় ভালোবাসা।ওষ্ঠে ঝুলে আছে মিষ্টি হাসি।কেমন যেনো লজ্জা ভাব অনুভূত হচ্ছে।অরিত্রিকার মাঝে মাঝে বড্ড অদ্ভুত মনে হয় নিজের কাছে।সারহান নামক মানুষটিকে নিয়ে কখনো তার মনে অদ্ভুত ভাবনা, ভালোলাগা আসেনি তবে এখন প্রায়শই এমন ভাবনায় মস্তকে চলমান। হঠাৎ করেই একজনকে ভালোলাগা তারপর তার প্রতি ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার সূচনা। অরিত্রিকা ইশরার সাথে কথা বলার পর থেকেই প্রশ্নগুলো নিজেকে করেছে কয়েকবার। অনুভব করেছে সারহানের প্রতি তার ফিলিংস মোটেও ঠুনকো নয় বরং অনেকটাই দৃঢ়।সে তো একজনে আসক্ত হয়েছে তবে কি মানুষটা তাকে বুঝবে?এই ভাবনাই কুরে কুরে খাচ্ছে তাকে।মস্তিষ্কে নানা রকমের চিন্তা ঘুর পাক খাচ্ছে।তার অনুভূতি কি মাঝেই লুকিয়ে রাখবে নাকি প্রকাশ করবে বুঝতে পারছে না।আরেকটু সময় নেওয়া দরকার।

সাদাত অরিত্রিকা অনেকক্ষণ ধরে রুমের বাহির হতে ডেকে যাচ্ছে অথচ কোনো সাড়াশব্দ নেই।সাদাত প্রচন্ড বিরক্ত হলো। সে দরজা নক করে রুমে প্রবেশ করলো।সাদাত রুমে আসতেই দেখলো অরিত্রিকা পড়ার টেবিলে বসে আছে। আনমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে।সাদাতের ভ্রু কুঁচকে গেলো।কি এমন ভাবছে যে দিন দুনিয়া ভুলে অন্য গ্রহে চলে গেছে।সে এগিয়ে এসে টেবিলের দিকে উঁকি দিলো।তখনই দেখতে পেলো অরিত্রিকার লেখা চিঠি।সে কৌতুহল বশত চিঠিতে লিখা প্রতিটি লাইন আওড়ালো।পুরো চিঠি পড়তে চমকে গেলো সে। স্তম্ভিত চোখে অরিত্রিকার দিকে তাকালো। চোখের সামনে প্রেমপত্র দেখে অবাক হয়ে গেছে সে। অরিত্রিকার মনে এমন কিছু ছিলো তা যেনো মানতেই পারছেনা। কিন্তু কল্পপুরুষ এটা আবার কে? নানা ভাবনায় জর্জরিত সাদাতের মস্তিষ্ক। মনে মনে ভয়ে আছে সে বাড়ির কেউ জানলে এবার আর অরিত্রিকাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।সারহান ভাই জানতে পারলেই তান্ডব শুরু হয়ে যাবে। সাদাত অরিত্রিকার টেবিল হতে চিঠিটি খপ করে হাতের মুঠোয় পুরে নিলো। অরিত্রিকা হঠাৎ এমন হওয়াতে হচকচিয়ে উঠলো।সামনে টেবিলে তাকাতেই চিঠিটি না দেখে পিছু ফিরলো। দেখলো সাদাত চিঠি হাতে মিটমিটয়ে হাসছে। এবার ব্ল্যাকমেইল করে কিছু হাতিয়ে নিয়ে যাবে।

অরিত্রিকা সাদাতকে সামনে দেখে ভ/য় পেয়ে গেলো কিছুটা। বদমাশটা নিশ্চয়ই সব পড়ে নিয়েছে। এখন তো তাকে খুব ক্ষেপাবে।ব্ল্যাকমেইল করবে। উফ এখন কি হবে তার।
সাদাত মিটমিটিয়ে হেসে বললো~ বাহহ। চিঠিও লেখা হচ্ছে দেখছি।
অরিত্রিকা থমথমে মুখে বললো~ চিঠিটা দে।
সাদাত চিঠিটা নাড়িয়ে দেখতে দেখতে বললো~ এইটা এখন ভাইকে দিবো। তখন কি হবে ভাবতে পারছিস?তোর ওই আশিককে তোর চোখের সামনেই গাছে ঝুলিয়ে পিটা/বে। আহ! কতো সুন্দর দৃশ্য।
অরিত্রিকা ক্ষুদ্ধ হলো। কে বলবে তার ভালোলাগার মানুষ আর কেউ নয় তোর ওই যন্ত্র মানব ভাই। সাদাতের মুখে কথাটা শুনে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে সাদাতকে দেখছে সে। অরিত্রিকা সাদাতের থেকে চিঠিটা নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো।সাদাত চিঠিটা ওপরের দিকে হাত দ্বারা উঁচিয়ে রেখেছে।সাদাত অরিত্রিকার থেকে লম্বা হওয়ায় অরিত্রিকা লাফিয়েও চিঠি ধরতে পারলো না।অরিত্রিকা রাগে তার খাতা দিয়ে সাদাতকে হঠাৎ মারতে শুরু করলো। সাদাত নিজেকে বাঁচাতে রুম থেকে দৌড়ে চলে গেলো। অরিত্রিকাও পিছু পিছু ছুটলো। রুম থেকে বেরোতেই দেখলো সাদাত সিঁড়ি বেয়ে নিচে দৌড়ে যাচ্ছে। অরিত্রিকা ও সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো দ্রুততার সহিত। ডাইনিং রুম পেরিয়ে বাড়ির সামনে বাগানের চারপাশে দুজন চক্কর দিচ্ছে।

অরিত্রিকা দৌড়াতে দৌড়াতে বললো~ ভাই প্লিজ দিয়ে দে। আমি তোকে অনেকগুলো চকলেট খাওয়াবো।
সাদাত তা শুনে হেসে বললো~ আমি কি মেয়ে নাকি!মেয়েরা চকলেট খায়। অন্যকিছু অফার কর।
অরিত্রিকা আর দৌড়াতে পারছেনা না। সে অনেকটা হাঁপিয়ে গিয়েছে। বাগানটা তিন চার ঘূর্ণন ঘুরেছে।এখন তার মাথা ঘুরছে। সে ধপ করে বাগানের পাশে ঘাসে বসে পরলো। সাদাত তা দেখে অনেকটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। সেও হাঁপিয়ে গিয়েছে।অরিত্রিকা হাঁপিয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো~ আচ্ছা তুই যা বলবি তাই করবো। এবার চিঠিটা দে।
~ সত্যি বলছিস তো?
~বলছি।
~ ঠিক আছে। শোন প্রথমে আমি তোর ওই কল্পপুরুষের নাম জানতে চাই আর দ্বিতীয় আগামীকাল রেস্টুরেন্টে কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে যাবো সব বিল তোকে দিতে হবে।
অরিত্রিকার মুখ অসহায়ের ন্যায় হয়ে গেলো। কি বলবে সে।একজনের কাছে আরেকজনকে ভালোবাসে কিভাবে বলবে। সাদাতকে ভরসা নেই বাড়িতে যদি সবাইকে বলে দেয়?
সাদাত অরিত্রিকাকে চুপ থাকতে দেখে মিচকে হেসে বললো~আচ্ছা ভাবতে থাক ততক্ষণ আমি তোর লিখা চিঠি আরেকবার পড়ি।তখন ভালোভাবে পড়তে পারিনি।

অরিত্রিকার রা/গ যেনো আরও বেড়ে গেলো। সারহানের থেকে কম নয় এই সাদাত। ভাইয়ের মতোই হয়েছে একবারে।অরিত্রিকা ফন্দি আটলো। সে সারহানের নাম নিবেনা। অন্য কারো নাম বলবে। সাদাত উৎসাহিত হয়ে কয়েক লাইন পড়তেই হঠাৎ কেউ একজন চিঠিটি টান দিয়ে নিয়ে নিলো। সাদাত চমকে পিছে তাকালো।তাকাতেই গলা শুকিয়ে গেলো তার। ভয়ার্ত চোখে একবার অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে আবার সারহানের দিকে তাকালো।
সারহান সাদাতের দিকে তাকিয়ে বাগানের পাশে ঘাসের ওপর বসে থাকা ক্লান্ত শরীরে বসে থাকা অরিত্রিকার দিকে তাকালো। অরিত্রিকা তখন ও ধ্যানমগ্ন।সারহান চোখ সরিয়ে সাদাতের দিকে তাকালো। সাদাতকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে বললো~ চলাচলের পথের মাঝে দাঁড়িয়ে কি এমন পড়ছিলি?
সাদাত হাসার চেষ্টা করে বললো~ তেমন কিছু না ভাই। একটা নোটস পড়ছিলাম।
~বাহ। উন্নতি হয়েছে দেখছি। আমিও দেখি আমার ভাই কি এমন ইমপোর্টেন্ট নোটস পড়ছিলো যে আশে পাশে তার খেয়াল নেই।
সারহান হাতে থাকা চিঠিটি দু হাতে মেলে পড়তে শুরু করলো।সাদাতের ভয়ে ঘাম ঝরছে। সে ভাবলো এই সুযোগ পালাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ ধীরে ধীরে পেছাতে পেছাতে কিছুটা,দূর যেতেই এক দৌড়ে সদর দরজা পেরিয়ে গেলো।

সারহান চিঠিটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করলো।প্রতিটি শব্দ যেনো কারো জন্য গভীর ভালোবাসায় জড়ানো। অনুভূতিমিশ্রিত প্রতিটি বাক্য সারহানের মনে গেঁথে গেছে। সে জানে চিঠি লেখিকা আর কেউ নয় অরিত্রিকা।কারণ অরিত্রিকার হাতের লেখা তার চেনা। ভালোবাসা মিশ্রিত প্রণয়াবেগ প্রতিটি বাক্যে যেনো নিখুঁত হাতে অষ্টাদশী কন্যার মনের ভাব যেনো যুবকের মনের গহীনে অদৃশ্য অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম নিতে বাধ্য করছে। সারহান চিঠি থেকে চোখ সরিয়ে শান্ত দৃষ্টি ফেলে অরিত্রিকার দিকে তাকালো।অরিত্রিকা চিঠি হাতে সারহানকে দেখে আশ্চর্যিত হয়েছে।
অরিত্রিকা কাচুমাচু ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো। সে আড়চোখে সারহানের দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে সারহানের দিকে এগিয়ে আসলো। সারহান হাতে থাকা চিঠি নিজ পকেটে ভাজ করে রেখে দিলো।অরিত্রিকা অবাক চোখে সারহানের দিকে তাকালো।সারহান ভাই তার লেখা চিঠি কেনো নিজের কাছে রাখলেন!

সারহান অরিত্রিকার অবাকতার রেষ কাটানোর জন্য বললো~ চিঠিটা আমার কাছে রেখে দিলাম।
অরিত্রিকা অস্ফুট স্বরে বললো~ আমার চিঠি আপনি কেনো রাখবেন?
সারহান অরিত্রিকার অগোচরে মৃদু হাসলো।নিজেকে স্বাভাবিক করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো~ চিঠির লেখাগুলো ভালো লেগেছে তাই।
অরিত্রিকা অবিশ্বাস্য চোখে সারহানের দিকে তাকিয়ে রইল।যন্ত্র মানবের প্রেমপত্র ভালো লেগেছে?আর তাকে কিছু বললো না কেনো?
অরিত্রিকা বিস্মিত হয়ে বললো ~আপনার ভালো লেগেছে?

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২১

অরিত্রিকার কথায় সারহান শান্ত স্বরে প্রতিত্তোর করলো~ মন থেকে কোনো কিছু লিখলে সেখানে ভালোবাসার ছোঁয়া থাকে।তেমনই চিঠির প্রতিটা কথা ভালো লেগেছে।সেখানে প্রতিটি উল্লেখিত বাক্য যেনো প্রানবন্ত।যে লিখেছে তাকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দিয়ে দিস।আর বলে দিস আমি এটা আর কখনো ফেরত দেবো না।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২৩