প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২৭
আদ্রিতা নিশি
“ব্রেকিং নিউজ – আজ বিকেল সাড়ে চার ঘটিকায় নাটোর রোডে রাজশাহী সিটি ১ এর এমপির পার্সোনাল গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। ঘটনাস্থলে এমপি মহোদয় সহ দলের আরও দুজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের সকলকে রাজশাহী মেডিকেলে জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।”
প্রতিটি টিভি চ্যানেলে এক্সিডেন্টের খবর দেখাচ্ছে।দেশ জুড়ে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে। একজন এমপির মৃত্যুতে দেশের নেতা কর্মীরা যেনো মরিয়া হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ সোশাল মিডিয়াতে দুঃখ প্রকাশ করছে, কেউ বা শোক প্রকাশে ব্যস্ত। প্রেস,মিডিয়া এমপির বাড়িতে যেনো হুমড়ি খেয়ে পরেছে। এদিকে চৌধুরী বাড়ির সামনে ভীড় জমিয়েছে সাংবাদিকরা। তাদের ভেতরে কেউ ঢুকতে দিচ্ছেনা।সিকিউরিটি গার্ড মেইন দরজা তালাবদ্ধ করে রেখেছে। তানিয়া বেগম ছেলের শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। সাথী বেগমও কান্না করেই যাচ্ছেন। তবুও নিজেকে সামলে তানিয়া বেগমকে স্বান্তনা দিতে ব্যস্ত তিনি।সন্তানের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।কি অবস্থায় আছে? এসব শুনে যে কোনো মা ভেঙ্গে পরবে। সাথী বেগম সারহানকে নিজের ছেলের মতোই দেখেন। ছেলেটা যে কি অবস্থায় আছে এই নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ সময় পার করছেন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইসমা বেগম সারহানের খবর শুনে কাজ কর্ম ফেলে ইশরাকে সাথে নিয়ে চলে এসেছেন। আসতেই দেখতে পেলেন তানিয়া বেগমের বিধ্বস্ত অবস্থা।দেখেই হু হু করে তার মন কেঁদে উঠলো ইসমা বেগমের মন।তিনি সদর দরজা পেরিয়ে ডাইনিং রুমে এসে তানিয়া বেগমের পাশে বসলেন।
ইসমা বেগম করুণ স্বরে বললেন~ ভাবি একটু শান্ত হোন। দেখবেন সারহানের কিছু হয়নি। একদম ঠিক আছে।
তানিয়া বেগম উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলেন।কান্নারত কন্ঠে বললেন~ আমার ছেলে ভালো নেই। আমায় সারহানের কাছে নিয়ে চলো। আমার সোনার টুকরা ছেলে। ওর কিছু হলে আমি ম/রে যাবো। আমাকে আমার ছেলের কাছে নিয়ে যাও।
~ভাবি আমরা যাবো তো সারহানের কাছে। একটু শান্ত হোন।
ইসমা বেগম আশে পাশে তাকিয়ে সাথী বেগমকে জিজ্ঞেস করলেন~ বড় ভাই আর ছোট ভাই কোথায়?
সাথী বেগম অশ্রু মুছে বললেন~ সারহানের খোঁজে বেরিয়েছে।
~ এখনো খবর পাওয়া যায়নি?
~ সারহানের সাথে আবির ছিলো কিন্তু ওর ফোনও বন্ধ।আরও কয়েকজনকে কল করা হয়েছে কেউ ফোন তুলছে না। শুধু নাটোরে এক্সিডেন্ট হয়েছে এটাই খবর পাওয়া গেছে।
ইশরা ডাইনিং রুমে অরিত্রিকাকে না দেখতে পেয়ে অবাক হলো। এই মেয়ে গেলো কোথায়? নিচে সবাই কান্না করছে আর অরিত্রিকা অনুপস্থিত?
ইশরা সাথী বেগমকে জিজ্ঞেস করলো~মামী অরিত্রিকা কোথায়?
~হয়তো রুমে আছে। মেয়েটা যে কখন গেলো এখনো নিচে আসলো না।
ইশরা আর দেরী করলো না। দ্রুত পায়ে হেঁটে গেলো অরিত্রিকার রুমের দিকে। না জানি মেয়েটা কি করছে?
ইশরা অরিত্রিকার রুমের সামনে আসতেই দেখতে পেলো দরজা বন্ধ।সে হালকা করে দরজা ধাক্কা দিলো।ধাক্কা দিতেই দরজা তখনই খুলে গেলো। ইশরা সময় নষ্ট না করে রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলো অরিত্রিকা মেঝেতে এলোমেলো অবস্থায় পরে আছে। ইশরা চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেছে। সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো অরিত্রিকার কাছে। অরিত্রিকার মাথা বরাবর বসতেই দেখলো অরিত্রিকার মুখ ফেকাসে হয়ে গেছে। চোখ মুখও মলিন, জীর্ণ শীর্ণ হয়ে আছে।
ইশরা আতংকগ্রস্থ হয়ে অরিত্রিকাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো~ এই অরিত্রিকা ওঠ। কি হয়েছে? আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস? এই বনু ওঠ না প্লিজ। তোর অবস্থা দেখে আমার ভয় লাগছে।
অরিত্রিকার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ইশরা আরও বেশী ভয় পেয়ে গেলো। অরিত্রিকা তো চোখ খুলছে না।নিশ্চয়ই চেতনা হারিয়েছে।এখন কি করবে সে? মাথা কাজ করছে না তার। ইশরা অরিত্রিকার হাত ধরতেই দেখলো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। ইশরা তড়িৎ বেগে অরিত্রিকার হাতের তালু ঘষতে লাগলো। কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলেও অরিত্রিকা প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে চোখ বন্ধ অবস্থায় পরে আছে। ইশারা উপায় না পেয়ে সাদাতকে ডাকলো বেশ কয়েকবার।পড়ার টেবিল হতে পানির বোতল খুলে অরিত্রিকার মুখে ছিটাতে লাগলো।
সাদাত ইশারার গলা পেয়ে অরিত্রিকার রুমে এসে দেখলো অরিত্রিকা অচেতন অবস্থায় পরে আছে।
সাদাত দৌড়ে এসে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো~ কি হয়েছে অরিত্রিকার? ওর এমন অবস্থা হলো কি করে?
~ আমিও জানিনা। এসেই দেখি এমন ভাবে মেঝেতে পরে আছে।
~ ডাক্তার ডাকবো?
~ দ্রুত কল কর ডাক্তার আংকেলকে।
সাদাত দ্রুততার সহিত পকেট হতে ফোন বের করে কল দিবে এমন সময় অরিত্রিকা নড়েচড়ে উঠলো। দুর্বল চোখে চারিপাশে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টেনে উঠে বসলো। দুহাতে চুল খামচে ধরে এক দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল সে।সাদাত ফোন পকেটে পুরে বললো~ অরিত্রিকা তুই ঠিক আছিস?
অরিত্রিকা তাকালো ব্যথাতুর দৃষ্টিতে।চক্ষুদ্বয় হতে পরছে অশ্রু।গাল বেয়ে অশ্রু মেঝেতে পরছে টপটপ করে। উগড়ে আসছে কান্নার দল।অতিরিক্ত কান্নার ফলে চোখ ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে।অরিত্রিকা এলোমেলো চুল গুলো পেছনে ঠেলে চুপ করে থ মেরে বসে রইল।কিছুই ভালো লাগছে না তার।
ইশরা পানির বোতল মেঝেতে রেখে অরিত্রিকাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো~ অরিত্রি কথা বল বনু। এমন চুপ করে আছিস কেনো? হঠাৎ কি হয়েছিলো তোর? জানিস কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। একদিকে তোর এই অবস্থা অপর দিকে সারহান ভাইয়ের ও এক্সিডেন্টের খবর কি,যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
অরিত্রিকা ইশরার দিকে তাকিয়ে ঝিমিয়ে যাওয়া কন্ঠে শুধালো~ সারহান ভাইয়ের কি অবস্থা? উনি ঠিক আছেন তো?
সাদাত অরিত্রিকার কথা শুনে হতাশামিশ্রিত কন্ঠে বললো~ ভাইয়ের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বাবা আর চাচা গিয়েছে খবর পেলে জানাবে।
অরিত্রিকা ডুকরে কেঁদে উঠলো হঠাৎই। কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো~ তোরা বল উনার কিছু হবে না? উনি সুস্থ অবস্থায় আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।উনি সুস্থ আছেন তাই না বল? এখনো কেনো আসছেন না উনি?
সাদাত অরিত্রিকার এমন কান্ডে বিস্মিত হলো। তার ভাইয়ের জন্য অরিত্রিকা কাঁদছে ভাবতেই অবাক লাগছে।দুজনে তো সব সময় সাপে নেউলে সম্পর্ক। এসব ভাবনা বাদ দিয়ে বিস্ময়সূচক চাহনিতে তাকিয়ে অরিত্রিকাকে শান্ত করতে বললো~ ভাইয়ের কিছু হবে না। দেখিস দ্রুত বাড়িতে চলে আসবে।
ইশরা কন্দনরত অরিত্রিকাকে দুহাতে আগলে নিলো। অরিত্রিকা ফুপিয়ে কেঁদে বললো~ আমাকে উনার কাছে নিয়ে চল। আমি উনাকে দেখবো।
ইশরা সাদাতের দিকে তাকালো করুন চোখে। সাদাত ইশরাকে ইশারা করলো কিছু বলার জন্য।ইশরা অরিত্রিকার মাথা নেড়ে দিয়ে বললো~ আচ্ছা যাবো এবার একটু চুপ কর বনু। এমন ভাবে কাঁদলে শরীর খারাপ করবে।
~ আমি আর পারছি না রে। উনি এমন কেনো বল তো? ঢাকায় গিয়েছেন আমায় জানানোর কোনো প্রয়োজনবোধ করেননি। গিয়ে পনেরোদিন ছিলো তবুও একবারও কল করেননি। কল করে বলেননি এডমিশন কেমন দিয়েছি। অথচ উনার জন্য আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছি তা কি জানেন?উনি আমার ফিলিংস কেনো বুঝেননা? ভালোবাসি বলেই কি অবহেলা করছেন?অবহেলা করছেন ঠিক আছে তাই বলে নিজের খেয়াল তো রাখতে পারতেন!আজ আমি খুশি ছিলাম। উনি এতোদিন পর আসছেন অথচ আমার খুশিই যেনো উনার জীবনে অভিশাপ হয়ে গেলো। এক নিমিষেই যেনো শেষ হয়ে গেলো সব। আমি উনাকে একপলক চোখের দেখা দেখতে চাই। আমায় নিয়ে চল।
সাদাত অরিত্রিকার মুখ হতে নির্গত উদভ্রান্তের ন্যায় কথাগুলো শুনে হা হয়ে গিয়েছে।এগুলো কি বললো অরিত্রিকা? তার ভাইকে ভালোবাসে? অসম্ভব! এটা কিভাবে হতে পারে। তার মাথায় কিছু আসছে না। চারিদিকে শকড করা খবর। সাদাতের মনে পরে গেলো চিঠির কথা।তাহলে কি তার ভাইকে নিয়েই অরিত্রিকা চিঠিটা লিখেছিলো?সাদাত মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল।নিজের কানে শুনেও তার বিশ্বাস হচ্ছে না।
সাদাত অবিশ্বাস্য চোখে অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে ইশরার দিকে তাকালো।ইশরা সাদাতের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।সে সাদাতের থমথমে মুখাবয়ব দেখে বুঝলো অনেকটা শক পেয়েছে।
ইশরা সাদাতকে বললো~ এখনই বাড়ির কাউকে কিছু বলিস না। বাড়ির কারোর মনের অবস্থা ভালো না। আবার যদি এই কথা জানতে পারে তবে পরিবেশ আরও বিগড়ে যেতে পারে।
সাদাত থমথমে মুখে বললো ~এসব কবে থেকে চলছে? বুঝলাম অরিত্রিকা ভাইকে পছন্দ করে ভাইও কি অরিত্রিকাকে পছন্দ করে?আমার তো ভাইয়ের কোনো আচরণে এমন কিছু মনে হয়নি।
~ আমারও মনে হয়নি। তবে অরিত্রিকা আর সারহান ভাইয়ের মাঝে তেমন কিছু নেই। অরিত্রিকা ভাইকে ভালোবাসে কিন্তু সারহান ভাইয়ের মনে কি আছে সঠিক জানিনা।
সাদাতের কল আসায় কথা বন্ধ করে পকেট হতে ফোন বের করে রিসিভ করলো।রিসিভ করার কিছুক্ষণ পরই কল কেটে দিলো অপর পাশে থাকা ব্যক্তিটি।
সাদাত ব্যস্তভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ইশরাকে বললো~ রাজশাহী মেডিকেলে যেতে হবে। ভাই ওখানেই এডমিট আছে। তুই আর অরিত্রিকা যদি যেতে চাস রেডি হয়ে নিচে চলে আয়।আমি মাকে খবর দিচ্ছি।
~ ঠিক আছে।
রাজশাহী মেডিকেলে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আরশাদ সাহেব আর আজমল সাহেব। তাদের চোখে মুখে চিন্তিত ভাব ফুটে উঠেছে। দুজনেই পায়চারী করছেন সমানতালে। আরশাদ সাহেব বার বার অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকাচ্ছেন। বক্ষে ছেলেকে হারানোর ভয় যেনো জেঁকে ধরেছে। বাবা হয়ে ছেলের এমন পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখা মৃত্যুসম। সারহানে অপারেশন চলছে। গুরুতর আ/ঘাত লেগেছে বুকে। কাঁচের টুকরো বুকের একপাশে গেঁথে গেছে। প্রচন্ড র/ক্ত ক্ষরণে সারহানের অবস্থা বেগতিক। কি হবে এখনো ডাক্তার বলতে পারেননি।আবিরের অবস্থাও আশংকাজনক। লাইফ রিস্ক এখনো আছে।আবিরকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে।
আরশাদ সাহেবকে চিন্তিত ভঙ্গিতে পায়চারি করতে দেখে আজমল সাহেব বললেন~ ভাইসাব টেনশন না করে বসুন। একটু শান্ত হোন। এমন করলে আপনি অসুস্থ হয়ে পরবেন।
আরশাদ সাহেব নিভু নিভু কন্ঠে বললেন~ আমার ছেলেটা মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে। কিভাবে বাবা হয়ে চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে থাকবো?
~ কিছু হবে না সারহানের। দেখবেন সুস্থ হয়ে যাবে। এখানে চিকিৎসা ভালো না হলে প্রাইভেট হসপিটালে এডমিট করবো।
আরশাদ সাহেব ক্লান্তভঙ্গিতে বসে বললেন~ আমার ছেলের যেনো কিছু না হয় তুমি দেখো।বাড়িতে খবর জানিয়েছো?
~হুমম। সাদাতকে কল দিয়েছিলাম। হয়তো রাস্তায় আছে।
দীর্ঘ দুই ঘন্টার অপারেশন শেষ করে ডাক্তার ওটি থেকে বের হলেন। চিন্তিত মুখ তার। অতিশয় কিছু একটা নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন। আরশাদ সাহেব হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলেন ডাক্তারের কাছে।আজমল সাহেবও পিছু পিছু গেলেন।
আজমল সাহেব আর এক মুহুর্ত দেরী না করে ডাক্তারকে শুধালেন~ সারহান এখন কেমন আছে?
ডাক্তার মুখে থাকা মাস্ক খুলে বললেন~ আগের থেকে অনেকটা ভালো আছে। ব্লিডিং হয়েছে অনেক। দুই ব্যাগ ব্লাড দেওয়া হয়েছে আরও এক ব্যাগ লাগবে। দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করুন। কিছুক্ষণের মধ্যে বেডে দেওয়া হবে। তবে বাহিরের কেউ এলাউ না।
আরশাদ সাহেব ভেজা কন্ঠে বললেন ~ কখন দেখা করতে পারবো সারহানের সাথে।
~ সেন্স এখনো ফিরে নি। সেন্স ফিরলে তারপর আপনাদের জানানো হবে দেখা করতে পারবেন কি পারবেন না। এক্সকিউজ মি।
ডাক্তার আরশাদ সাহেবকে যাবতীয় তথ্য জানিয়ে নিজের চেম্বারে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পরেই সারহানকে ওটি থেকে বের করা হলো।আরশাদ সাহেব আর আজমল সাহেব তাকালেন তখনই।বেডে অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে সারহান। মস্তিষ্কের অর্ধেক অংশ জুড়ে সাদা ব্যান্ডেজে আবৃত। মুখের বিভিন্ন স্থানে কাটা ছেঁড়ার অগনিত দাগ। অক্সিজেন মাক্স থাকায় মুখ তেমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। সাদা কাপড়ের আস্তরণ দিয়ে বুকের উপরিভাগ পর্যন্ত ঢাকা। অপারেশন করার স্থান দৃশ্যমান নয়।কেমন নির্জীব হয়ে শুয়ে আছে সারহান। রক্ত ক্ষরণের ফলে মুখ ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে। আরশাদ সাহেব ছেলের এমন করুণ দশা দেখে ধপ করে বসে পরলেন মেঝেতে। আজমল সাহেব ভাইয়ের হঠাৎ বসে পরা দেখে ভয় পেয়ে গেলেন।তিনি মৃদুস্বরে চিৎকার করে বললেন ~ভাইসাব আপনি ঠিক আছেন তো?
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২৬
আরশাদ সাহেবের চোখ ভিজে এলো।কোনোদিন অসহায়, ভঙ্গুর লাগেনি নিজেকে অথচ ছেলের এই অবস্থা যেনো তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সুস্থ ছেলেটা ঢাকায় গেলো আর ফিরলো অর্ধমৃত হয়ে? কোনো বাবা-মার যেনো ছেলেকে আহত অবস্থায় দেখতে না হয়।
আজমল সাহেব গিয়ে আরশাদ সাহেবকে ধীরে সুস্থে দাঁড়া করালেন। পাশেই একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। সারহানকে শিফট করা হয়েছে কেবিনে। আজমল সাহেব সারহানকে কেবিনের বাহির হতে একপলক দেখে পানির ব্যবস্থা করতে গেলেন। আরশাদ সাহেবকে পানি খাওয়ানো প্রয়োজন। নতুবা শরীর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে আরও।