প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২৯
আদ্রিতা নিশি
কেবিন জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। মানব মানবী নিশ্চুপ হয়ে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই।শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। অরিত্রিকা সারহানের কথা কর্ণগোচর হতেই মাসাজ করা বাদ দিয়ে হাত গুটিয়ে চুপচাপ বসে আছে। অন্তর কোণে বিরাজ করছে শীতল শিহরণ।কি উত্তর দিবে সে? এই ভেবে হাস ফাঁস করতে লাগলো অরিত্রিকা। নিজের দুহাত মুচড়াতে শুরু করলো। একটু আগে সাহস নিয়ে যে কথাগুলো বলেছে এখন আর সারহানের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাহস হচ্ছে না।গরম নেই তবুও কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম ছুটছে।
সারহান ফ্যান হতে নজর সরিয়ে অরিত্রিকার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।অরিত্রিকাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে মনে মনে হাসলো খানিকটা। এতোক্ষণ তার সামনে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলছিলো অথচ এখন জানতে চাইছে সে। কিন্তু কোনো কথা নেই।
~ এতো কি ভাবছিস?এই তোর সাহস?গোপনে কল্প পুরুষকে ভালোবেসে চিঠি লিখতে পারিস অথচ ভালোবাসার কথা স্বীকার করতে এতোটা অস্বস্তি কেনো?
সারহানের বলা কথা শুনে অরিত্রিকা বিচলিত হলো। চঞ্চল দৃষ্টিতে সারহানের দিকে তাকালো। কিছুটা সময় নিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ধীর কন্ঠে বললো~ ভয় হয় তাই তো চুপ করে আছি?
সারহান সরাসরি প্রশ্ন ছুড়লো~ কিসের ভয়?
অরিত্রিকা চমকিত হলো। সরাসরি প্রশ্ন করায় ঘাবড়ে গেছে সে।
অরিত্রিকা শ্বাস টেনে বললো~ আপনাকে হারানোর। আপনি যদি আমার ভালোবাসা গ্রহণ না করেন তখন কি হবে ভেবে আমি আতংকিত হয়ে থাকি। তাই নিজ মুখে স্বীকার করিনি।অপেক্ষার প্রহর গুনেছি কবে আপনি আমার মনের কথা বুঝবেন। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর এতোটা দীর্ঘ হবে ভাবি নি।
সারহান উত্তর পেয়ে কিছুটা অভিভূত হলো।এতোকক্ষণে তবে কথা ফুটেছে। সে তো চাইছিলো তার সামনে সংকোচহীন আলাপ করুক।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারহান সতৃষ্ণ কন্ঠে বললো~ এটাকে ভালোবাসা বলে? নাকি এটা শুধুই তোর আবেগ?
অরিত্রিকার দবগে যাওয়ার কথা থাকলেও সে সচল রইল।তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সে হাসি বজায় রেখে বললো~ আবেগ হলে অনেক আগেই কেটে যেতো সারহান ভাই। আমার ভালোবাসা কোনো আবেগ নয়। আপনার প্রতি আমার দৃঢ় অনুভূতি মিথ্যা নয়। ভালোবেসেছি বলেই তো আপনি হীনা বদ্ধ উন্মাদ হয়েছিলাম।
সারহান অরিত্রিকার কথাগুলো শুনলো গভীরভাবে। তবে তার প্রতিত্তোর করলো না।সে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো~ প্রথম প্রশ্নের উত্তর এখনো পেলাম না। কতোটা ভালোবাসিস আমায়?
অরিত্রিকা নড়ে চড়ে বসলো। কিছুটা অন্যমনষ্ক হলো সে।অন্যমনষ্ক হয়ে আনমনে আওড়ালো~ যতোটা ভালোবাসলে কল্প পুরুষের বক্ষে মাথা রেখে তাকে নিয়ে শত শত অভিযোগ করা যায় ততোটা।
সারহানের মন নরম হয়ে উঠলো।এতোটা গুছিয়ে মনের আবেগ, ভালোবাসা মিশানো কথাগুলো যে অরিত্রিকা বলছে তা অনেকটা অবাক করা বিষয়। কঠিন হৃদয়ে যেনো শীতল হাওয়ায় দোলা দিলো। এক মুহুর্তের জন্য অনুভূতির তীব্র শিহরণ বয়ে গেলো রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
সারহান দৃঢ় কন্ঠে শুধালো~ এটাকে ভালোবাসা বলে?
~ মানুষ যখন কাউকে মন থেকে ভালোবাসে তখন ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে অভিযোগ করতে পারে। কল্প পুরুষকে ভালোবাসি বলেই তার নামে আমার অভিযোগ সীমাহীন।
~ কবে থেকে ভালোবাসিস আমায়?
অরিত্রিকার মাঝে বিচলিত ভাব দৃশ্যমাণ হলো। কিঞ্চিৎ আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বললো~ সঠিক জানা নেই।তবে নিশাদের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে থেকেই আপনাকে ভালো লাগতো। কিন্তু আমার গোপন ভালোবাসার প্রথম অনুভূতি আপনি।
প্রথমে কিছু মনে না হলেও নিশাদের কথা শোনা মাত্রই সারহানের চোয়াল শক্ত হলো।মুখে কাঠিন্যতা ভর করলো তার মাঝে। সে রুঢ় গলায় বললো ~ তোকে নিশাদের নাম নিতে নিষেধ করেছি। আর একবার তোর মুখে নিশাদের নাম শুনলে ওর কাছে রেখে আসবো?
সারহানের হঠাৎ কথা বলার ধরণ পাল্টানো দেখে অরিত্রিকা চমকে গেলো।বোকা বোকা চোখে সারহানের দিকে তাকালো। নিশাদের নাম নেওয়ায় সারহান ভাই রেগে গেলো কেনো? জেলাস ফিল করছে নাকি? সে হিসাব মিলাতে ব্যস্ত। সারহান ভাইয়ের মনে কখন কি চলে বোঝা দায়।
~ তোর ভালোবাসা যদি গ্রহণ না করি তখন তুই কি করবি?
অরিত্রিকার রাগ হলো। এই মানুষটা এতো ত্যাড়া কেনো? এতোক্ষণ সব কথা শুনে নিয়ে নাটক শুরু করেছে আবার?সে রাগে ফুঁসতে লাগলো। অসুস্থ না হলে জোরে জোরে চিল্লিয়ে কান ফাটিয়ে দিতো সে। অসহ্য মানুষ একটা।অরিত্রিকার রাগী রাগী মুখ দেখে সারহানের কেনো জানি ভীষণ ভালো লাগছে। রাগলে যে অরিত্রিকাকে এতোটা সুন্দর লাগে আজ খেয়াল করলো সে। কেমন রাগাশ্রিত চাহনিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
অরিত্রিকা ক্ষুব্ধ হয়ে বললো~ আপনাকে নিজের কাছে বেঁধে রাখবো বুঝেছেন?
সারহান ফিচেল হেসে অতি শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো~ বাহ। এতোটা সাহসী তুই।আমাকে বেঁধে রাখার ক্ষমতা আছে তোর?
অরিত্রিকার মুখ ভার হলো। সারহানকে দেখে এখন মনে হচ্ছে না মানুষটা আহ*ত। অথচ গতকাল সে মানুষটার জন্য কেঁদে কেটে একাকার করেছে। আবার কাঁদতে কাঁদতে সেন্স হারিয়ে বসে ছিলো। ভাবতেই কেমন লাগছে।
দরজায় খট করে আওয়াজ হতেই সারহান আর অরিত্রিকা কেবিনের দরজার দিকে তাকালো।দুজনেই নিজেদের স্বাভাবিক করলো। সাদাত দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। চোখে ঘুমের রেষ এখনো কাটেনি।সেই অবস্থায় এগিয়ে এলো সারহানের দিকে।
সারহান সাদাতকে আসতে দেখে বললো~ কেমন আছিস?
সাদাত ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বললো~ তোমাকে সুস্থ দেখে নিশ্চিত আমি।এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
সারহান জিজ্ঞেস করলো ~ মা,বাবা, চাচা,চাচী কোথায়?
সাদাত তানিয়া বেগমের অসুস্থতা আড়াল করে বললো~ মা বাড়িতে গিয়েছে একটু পরেই আসবে। চাচা আর বাবা মসজিদে গিয়েছে।চাচী আর ইশরা বাহিরে ঘুমিয়ে আছে।
~ওহহ।
সাদাত অরিত্রিকাকে কেবিনে দেখে চোখ ছোট ছোট করে বললো~ তুই এখানে কখন এসেছিস? ঘুম থেকে জেগে তোকে না দেখে কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানিস?
অরিত্রিকা সাদাতের দিকে অস্বস্তি নিয়ে তাকালো। অস্বস্তি হওয়ারই কথা। গতকাল তো ইশরা সাদাতকে তার আর সারহানের বিষয়টা বলে দিয়েছে। এখন কি বলবে সে ভেবে পেলো না।
অরিত্রিকা নিজেকে বাঁচানোর ভঙ্গিতে আমতা আমতা করে বললো~ সারহান ভাইকে কেবিনের বাহির হতে দেখছিলাম উনি জেগেছেন কি না! তখনি তিনি পানি চাচ্ছিলেন তাই পানি দিতে এসেছি।
সাদাতের সন্দেহ কাটেনি। আরও বেড়ে গেলো। সে সন্দিহান দৃষ্টিতে অরিত্রিকার দিকে তাকালো। অরিত্রিকা সাদাতের দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে নজর লুকালো। সারহান অরিত্রিকার উত্তর শুনে বিস্মিত হলো। সে কখন পানি খেতে চাইলো আর অরিত্রিকাকে কখন ডাকলো আজব!
সাদাত চোখ পাকিয়ে বললো~ ঠিকঠাক মিথ্যাও বলতে পারিস না গাঁধি।
অরিত্রিকা মুখ ভার করলো। সাদাতও তার মিথ্যা ধরে ফেললো।দুই ভাই একই ধাঁচের হুহ্। বড় হলে নিশ্চয়ই ভাইয়ের মতোই ধুরন্ধর হবে।
সারহান সাদাতকে জিজ্ঞেস করলো~ এবার বল এমপি মহোদয়ের কি খবর? উনি সুস্থ আছেন তো?আর আবিরের কি খবর?
~ আবির ভাই এখন কিছুটা সুস্থ আছে। তোমার মতোই আঘাত লেগেছে।
~ আর এমপি মহোদয়?
~ এক্সিডেন্টে অতিরিক্ত রক্তক্ষ/রণের কারণে উনার স্পট ডেথ হয়েছে।
সারহানের চক্ষু লাল হয়ে উঠলো এমপির মৃ*ত্যুর কথা শুনে । মুখায়বয়ব কঠিন হলো। খবরটা শোকের হলেও এই মুহুর্তে তার রাগ প্রকাশ পাচ্ছে।
সারহান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগী স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো~ নয়ন তালুকদার তোকে এর মাশুল গুনতে হবে। এবার আর বাচঁবিনা।তোর সাথে নিশাদেরও এমপি মহোদয়কে মা*রার ফল ভোগ করতে হবে।
নয়ন তালুকদার নিজ রুমে বসে আছেন। কপালে সুক্ষ্ম চিন্তার ভাজ। কিছু নিয়ে অনেকক্ষণ যাবৎ ভেবে চলেছেন।তবুও কোনো সুরাহা করতে পারেন নি। নিশাদ চোখ মুখ গম্ভীর করে মামার পাশেই বসে আছে। সেও অনেকটা চিন্তিত। বারবার নয়ন তালুকদারের জরুরী কথা শোনার জন্য বসে আছে সে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো কই? সেই যে মুখে কুলুপ এঁটে বসেছেন কোনো কথায় বলছেন না।নিশাদ চোখ ফিরিয়ে মিহির দিকে তাকালো। মিহি আপনমনে নিজের ফোন স্ক্রল করতে ব্যস্ত। সামনে দুজন মানুষ চিন্তিত হয়ে বসে আছে তবুও সে উদাসীন। নিশাদ বিরক্ত হলো মিহির কান্ডে।
নিশাদ বিরক্তি প্রকাশ করে বললো~ মিহি এইদিকে আমরা টেনশনে মর*ছি আর তুমি ফোন নিয়ে বিজি আছো?
মিহি ফোন স্কিনে চোখ রেখে দায়সারা ভাবে উত্তর দিলো ~ আমি কি করতে পারি? তোমাদের টেনশনে বিষয় তুমি দেখো। আমায় টেনো না।
নিশাদের রাগ আকাশচুম্বী ধারণ করলো। সে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো~ তোমায় গতকাল না নিয়ে আসলে ভালো হতো। কেনো যে দয়া দেখিয়ে বাসায় আনতে গেলাম। উফ।
~ তোমার দয়ার প্রয়োজন ছিলো না আমার। তবুও এলাম তুমি অনেকবার বললে তাই।
~ তুমি আমায় ইগনোর করছো?
~ হ্যা। ইগনোর করছি।
নিশাদ রাগে গজগজ করতে লাগলো। ইগনোর তার সহ্য হয় না। এই মেয়ের এতো সাহস বেড়েছে যে তাকে ইগনোর করছে! হাউ ডেয়ার সি?
নিশাদ রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো ~ মিহি আমায় ইগনোর করার চেষ্টা করো না। কেউ আমাকে ইগনোর করুক আমার তা একদম পছন্দ হয় না।
মিহি নিজের হাতে থাকা ফোনটি পাশে রেখে নিশাদের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো~ আমারও তোমার ইগনোর করা পছন্দ নয় নিশাদ। তুমিও তো আমায় ইগনোর করো।
নয়ন তালুকদার ধমকে উঠে বললো~ তোমরা নিজেদের মাঝে রেষারেষি বাদ দাও। এই দিকে চিন্তায় আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। ওই এমপিকে কেনো যে মার*তে গেলাম?
নিশাদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো ~মাথা গরম করে এই কাজটা করা উচিত হয়নি। পুলিশ সহজে খুঁজে নিবে আসল অপরাধীকে।যদিও এটা এক্সিডেন্ট কেস দেখানো হয়েছে। তবুও পুলিশ তো তদন্ত করবে।
~ প্রতীক ও পেলাম না আবার এই ঝামেলায় ফেঁসে গেলাম। এখন একটাই উপায় খোলা আছে। পুলিশকে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে হবে।
~সারহান মর*লে একবারে সব ঝামেলা শেষ হয়ে যেতো। এই সারহানের আসলেই কৈ মাছের জান। ম*রতে ম*রতে বেঁচে ফিরেছে।
মিহি নিশাদকে উদ্দেশ্য করে বললো~ আমি আজ সারহানকে হসপিটালে দেখতে যাবো।
নিশাদ অগ্নিশর্মা হয়ে মিহির দিকে তাকালো।ক্ষুব্ধ হয়ে বললো~ তুমি সারহানকে দেখতে যাবে না।
~কেনো?
~আমি বলেছি তাই।
মিহি মনে মনে হাসলো। কিছুটা শান্ত হলো তার অশান্ত মন। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো~ আমি কোথায় যাবো তা ঠিক করে দেওয়ার তুমি কে?
নিশাদ মিহির কথায় অনেকটা দমে গেলো। তবুও তেজ দেখিয়ে বললো~ আমি তোমার ফ্রেন্ড হই। আমার কথা শোনা উচিত তোমার।
~ আমার ডিসিশন আমি নেবো। আমাকে নিয়ে তোমার টেনশন করতে হবে না।
নয়ন তালুকদার এবার ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন~ মুখ বন্ধ করো দুজনে। আমার মাথা আর গরম করো না।
নিশাদ রেগে আরও কয়েক কথা মিহিকে বলবে আর বলতে পারলো। কথা গুলো নিজে গিলে নিলো। মিহি মামা ভাগ্নের কান্ড দেখতে ব্যস্ত।এদের গোমরা মুখ দেখতে ভালোই লাগছে তার কাছে।” এতোদিন ইগনোর করেছো আমায় এখন দেখো আমি কি করি। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ”। মিহি বিরবির করে বললো
আধশোয়া হয়ে বসে সারহান। তানিয়া বেগম নিজ হাতে সযত্নে ছেলেকে স্যুপ খাইয়ে দিতে ব্যস্ত। ছোট বাচ্চার ন্যায় স্যুপ ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছেন।হালকা গরম তবুও মনে হচ্ছে সারহানের যদি জিভ পুড়ে যায়।
সারহান বাটির অর্ধেক স্যুপ খেয়ে তানিয়া বেগমকে বললো~ মা আর খেতে ইচ্ছে করছে না।
তানিয়া বেগম আরশাদ ছেলেকে জোর করলেন না।সাথী বেগমের হাতে বাটিটা দিয়ে সারহানকে প্রেসক্রিপশন দেখে ঔষধ খাইয়ে দিলেন। সারহান ঔষধ খেয়ে হাঁপ ছেড়ে বাচলো।এভাবে হাসপাতালে চুপচাপ বসে থাকা যায়? সারহান অনেকটাই বিরক্ত। কেমন একঘেয়েমি লাগছে। হাসপাতালের পরিবেশ তার কাছে অসহ্যকর লাগছে।
সারহান বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো~ ডিসচার্জ কবে দিবে?
তানিয়া বেগম বললেন ~ তিন চার দিন পর।
~ হসপিটালে আরও চারদিন থাকতে হবে অসহ্যকর।
~ ধৈর্য ধর। এতোটা উত্তেজিত এখন না হওয়া ভালো।
সারহান চুপ হয়ে গেলো।শরীর মেজমেজ করছে। এখনো শরীরে ব্যথা কমেনি। মস্তিষ্ক জুড়ে এক্সিডেন্টের বিষয়টা ঘুরছে। মুঠো ফোনেরও কোনো হদিস নেই। ফোন থাকলে খবর পেয়ে যেতো। ফোনে অনেক ডিটেইলস ছিলো। নতুন ফোন কিনতে হবে আবার।
তানিয়া বেগম আর সাথী বেগম কেবিনের বাহিরে যেতেই প্রবেশ করলো ইশরা আর অরিত্রিকা। দুজনে এসে চেয়ার টেনে বসলো। সারহান দুজনকে লক্ষ্য করলো। অরিত্রিকার দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ। মুখও গোমড়া করে আছে। তারমানে এখনো তার উপর রেগে আছে। এতোটা অবুঝ কেনো? অন্য সময় বড়দের মতো কথা বলে।ইশরা ভেবে পাচ্ছেনা অরিত্রিকা মুখ ভার করে কেনো আছে! সারহান ভাই তো সুস্থ অনেকটা খুশি হওয়ার কথা। সে আর এখন এসব নিয়ে অরিত্রিকাকে ঘাটে নি।
কেবিনের বাহিরে কয়েকজনের কথার আওয়াজ ভেসে আসছে। বোঝা যাচ্ছে ছেলে মেয়ে উভয়ই বাহিরে উপস্থিত।সারহানের কন্ঠ গুলো পরিচিত মনে হলো। চেনা কেউ এসেছে কি? সারহান ভাবনায় বিভোর তখনি প্রবেশ করলো চারজনের একটা দল। তড়িঘড়ি করে চারজন ছুটে আসলো সারহানের দিকে। অরিত্রিকা আর ইশরা তা দেখে ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অচেনা মানুষগুলো কারা? একটা প্রশ্নই তাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সারহান পরিচিত বন্ধু মহলকে হঠাৎ সামনে দেখে বিস্ময় নিয়ে বললো ~ তোরা?
সকলে এক সাথে বলে উঠলো ~ হ্যা আমরা।
বন্ধু মহলের চারজনের মাঝে একজন অশ্রুসিক্ত চোখে সারহানের দিকে তাকিয়ে বললো~ জানিস! তোর এক্সিডেন্ট হয়েছে জেনে রাত দুইটার পরে রওনা দিয়েছি ঢাকা থেকে। জ্যাম থাকায় দেরী হয়ে গেছে। এখন কেমন আছিস তুই?
কান্নারত মেয়েটির নাম মুন।রাই,ইফাত আর পৃহাল ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ।
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২৮
সারহান মুনের দিকে তাকিয়ে বললো~ আরে এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো?আমি এখন ফিট আছি।
মুন অশ্রু মুছে বললো~ দেখছি তো কেমন ফিট আছিস। বেডে আধশোয়া অবস্থায় ব্যান্ডেজ মুরিয়ে বসে আছিস।
সারহান অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে বললো~ তোরা সকলে এসেছিস এবার দেখবি একদম সুস্থ হয়ে যাবো।
অরিত্রিকা রাগে কটমট করতে করতে ইশরার হাত খামচে ধরলো।এই মেয়ে আবার কই থেকে উদয় হলো? ইশরা খামচে ধরার কারণে মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলো।