প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩১

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩১
আদ্রিতা নিশি

এর মাঝেই পেরিয়ে গেছে দিন, সপ্তাহ, মাস। সময় যেনো দ্রুততার সহিত তার পথ নিয়ে চলেছে। চোখের পলকেই একমাস কেটে গেলো দেখতে দেখতে। অথচ মনে হচ্ছে এই তো সেদিনই তো সারহানের সকল বন্ধুমহলের সাথে দেখা হলো।অসুস্থ থাকলেও অনেকটা সময় কাটিয়েছে তারা।সময়টা যেনো ফুরিয়ে গেলো।
পড়ন্ত বিকেল। সারহান ক্লান্ত শরীরে বাসায় প্রবেশ করলো। বাহির থেকে আসায় অতিরিক্ত গরমে শার্ট ঘর্মাক্তক দেহে আটসাট হয়ে আঁটকে আছে। অতিরিক্ত গরমে অসহ্যকর লাগছে। আশপাশ চোখ বুলিয়ে নিলো। কে কোথায় আছে ঠাওর করতে পারলো না। পরিবারের কারো দেখা পেলো না। দিনদুপুরে যেনো শুনশান ভূতুড়ে পরিবেশ লাগছে। পা বাড়িয়ে ডাইনিং রুমে আসতে রান্নাঘর হতে ভেসে আসছে টুংটাং ধ্বনি। সারহানের মনে হলো হয়তো কেউ রান্নাঘরে আছে। সেদিকে আর মনোযোগ না দিয়ে সে সোফায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে বসে পরলো। সোফায় থাকা এসির রিমোট দ্বারা এসি অন করে দিলো। শীতল হাওয়ায় তার চোখে ঘুম চলে আসছে। সে চোখ বন্ধ করে রইল। দীর্ঘ সময়ের বিশ্রাম শেষে নিজ কাজে ফিরতে পেরেছে সে। ক্ষত শুকিয়ে গেলেও চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয় বুকের মাঝে।

~ সারহান ভাই আপনার শরবত।খেয়ে ঝটপট বলুন কেমন হয়েছে?
সুমিষ্ট রিনরিনে কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে পৌঁছাতে সারহান চক্ষুদ্বয় মেললো। ঘাড় বাঁকিয়ে অরিত্রিকার দিকে তাকালো। শরবতের গ্লাস হাতে অরিত্রিকা মিষ্টি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। মূলত সারহানকে শরবত দেওয়ার জন্য অপেক্ষারত সে। সারহান সোজা হয়ে বসলো। দুহাতে চুল পেছনের দিকে ঠেলে শুধালো~ আমি তো শরবত বানাতে বলিনি।
অরিত্রিকা হাসলো। সে বললো~ বলেননি তো কি হয়েছে। আপনি তো বাহির হতে এসেছেন নিশ্চয়ই টায়ার্ড অনেকটা। তাই আপনার জন্য বানিয়েছি।
অরিত্রিকা কথা শেষে করেই শরবতের গ্লাস সারহানের দিকে এগিয়ে দিলো। সারহান এক পলক তাকিয়ে অরিত্রিকার হাত হতে গ্লাস নিলো।
সারহান শরবতে চুমুক দিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো~ তুই হঠাৎ শরবত বানাতে গেলি কেনো? মা,চাচী কোথায়?
অরিত্রিকা সারহানের পাশে চটপটে ভাব নিয়ে বসলো। তবে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখেছে। সারহান আগ্রহী হয়ে বসে আছে উত্তরের আশায়।
অরিত্রিকা নিজ ওড়না দিয়ে ঘর্মাক্তক মুখশ্রী মুছে বললো~ মা আর বড় মা একটু বাজারে গিয়েছে। কিছু কেনাকাটা করতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

~ ওহহ।আমি এসেছি বুঝলি কি করে?
~গাড়ির শব্দ পেয়েছি তো।
সারহান আর কিছু না বলে শরবত খাওয়ায় মনোযোগী হলো। অরিত্রিকা নিরব দর্শকের ন্যায় বসে রইল। আজ অনেক খুশি সে। এই প্রথম নিজ হাতে সারহানকে শরবত বানিয়ে খাইয়েছে। উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে বসে আছে সারহান কি বলে শোনার জন্য।সারহান শরবত সম্পূর্ণ খেয়ে গ্লাসটা টেবিলে রাখলো। চোখ ঘুরিয়ে অরিত্রিকার দিকে তাকালো। অরিত্রিকা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সারহান চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তৃপ্ত স্বরে বললো~ শরবত ভালো হয়েছে।
অরিত্রিকা চোখ মুখ খুশিতে চকমক করতে লাগলো। আনন্দের সহিত গদগদ ভাব নিয়ে বললো~ সত্যি?
সারহান অরিত্রিকার আনন্দিত ভাব দেখে অরিত্রিকার মুখ পাণে তাকালো। সন্তর্পণে এক দৃষ্টিতে অনুধাবন করলো। মেয়েটা এতো অল্প কথায় খুশি হবে ভাবেনি সে। সে অতি স্বাভাবিক কন্ঠে বললো~ হুমম।

অরিত্রিকার ইচ্ছে করছে লাফাতে। কিন্তু এখন সে তেমন কিছুই করবে না। লক্ষী মেয়ের মতো বসে থাকবে।মনে যেনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটাচ্ছে। মানুষটার সাথে অল্প একটু কথা বললেই মনটা ভালো হয়ে যায়। সে তো তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় সারহানের সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। একপলক দেখার জন্য মরিয়া হয়ে থাকে। যেনো দেখলেই শান্তি। সবকিছুই সারহানের অগোচরে করে। ইদানিং খেয়াল করেছে সে সারহান তাকে আগের মতো বকা বা অপমান কোনোটাই করে না। এড়িয়েও যায় না। তার সাথে কথা বলে মাঝে মাঝে। একটা মানুষের হঠাৎ পরিবর্তন অরিত্রিকাকে খুব করে ভাবায়।
অরিত্রিকার ভাবনার মাঝেই সারহান বলে উঠলো~ ভার্সিটিতে ভর্তির কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। ভর্তিও হয়ে গেছে। আগামী মাসের শেষ হতে ক্লাস শুরু হবে।
অরিত্রিকার ভাবনার ছেদ ঘটলো। সে বললো~ ওহহহ। ইশরার ভর্তি হয়েছে?

~ হুমম হয়েছে। তবে ডিপার্টমেন্ট আলাদা।
~ একই ভার্সিটিতে দুজনে পড়তে পারবো এতেই আমি খুশি।
সারহান সাবধানী বাণীতে বললো~ পাবলিক ভার্সিটিতে রাজনীতি চলে। ছাত্র রাজনীতি অনেকেই করে তাদের থেকে দূরে থাকবি আর কোনো ছেলের সাথে মিশবি না।
অরিত্রিকা অবুঝের ন্যায় বললো~ তাহলে আপনার থেকেও কি দূরে থাকতে হবে।
সারহান ভ্রু কুঁচকে বললো~ কেনো?
~আপনিও তো আগে ভার্সিটিতে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
সারহান তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো~ তোকে বুঝিয়ে আমার কাজ নেই। কি বললাম আর কি বুঝছিস। “ক” বললে “ম” বোঝার অভ্যাস গেলো না তোর।
অরিত্রিকা অবাক হয়ে বললো~ আপনি তো “ক” বলেননি।

সারহান কিছু বললো না। চুপ রইল। এখন কিছু বললেই ভুলভাল বুঝবে। অরিত্রিকা কোনো উত্তর না পেয়ে হতাশ হলো। অরিত্রিকার হঠাৎই মনে হলো মুনের কথা। সে সকালে বড় মায়ের থেকে শুনেছে মুন আসবে আগামীকাল। সাথে রাই,পৃহাল আর ইফাতও আসবে। কেনো আসবে সঠিক জানায়নি অরিত্রিকাকে। শুধু বলেছে কোনো একটা কাজে আসবে। সকাল থেকে ভেবে চলেছে ওই মুন আপু কেনো আসবে? আসলেই সারহান ভাইয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে যা একদম অপছন্দ অরিত্রিকার।
অরিত্রিকা সারহানকে মুখ গোমড়া করে বললো~ মুন আপু আগামীকাল আসবে।
সারহান নির্বিকার চিত্তে বললো~ তো?
সারহানের কোনো আগ্রহ না দেখে অরিত্রিকা থতমত খেলো। ঠোঁট উল্টে বললো~ মুন আপু আসছে খুশি হননি?

~ আমায় শুধু মুন আসবে এটা কেনো বললি? তার সাথে আরও তিনজন আসবে এদের কথা বলাও উচিত ছিলো।
~ আমি তো ভেবেছিলাম মুন আপুর কথা শুনে খুশি হবেন।
~ ওরা সকলে আসছে আমারও ভালো লাগছে। এখন এটা ভেবে বসে থাকিস না মুন আসছে বলে আমার ভালো লাগছে।
অরিত্রিকা মুখ ভার করে বললো~ হুমম। তো আপু কেনো আসছে হঠাৎ? আপনি তো এখন সুস্থ হয়ে গেছেন।
সারহানের বুঝলো অরিত্রিকার এতো আগ্রহের কারণ।সে জানে অরিত্রিকা মুনকে একদম পছন্দ করে না। কারণটা সারহানের সাথে কথা বলা।ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য মেয়ের কথা বলা দেখলে যে কেউ জেলাসহ ফিল করবে।

সারহান প্রতিত্তোর করলো~ মুন আর ইফাতের সামনে মাসে বিয়ে তাই আমাদের ইনভাইট করতে আসছে।
অরিত্রিকার ভার মুখে যেনো হাসি খেলে গেলে। সে উৎফুল্ল হয়ে বললো~ আগে বলবেন তো। শান্তি লাগছে শুনে। দেখেছেন আপনার ফ্রেন্ডদেরও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুধু আপনিই এখনো সিঙ্গেল রয়ে গেলেন।
সারহান ওষ্ঠযুগল এলিয়ে হেসে বললো~ তোর বিয়ে দিয়ে দিই তাহলে তো আমিও সিঙ্গেল থাকবো না আর। মিঙ্গেল হয়ে যাবো।
অরিত্রিকা কিছু না বুঝে তড়িঘড়ি করে বললো~ উহু আমি বিয়ে করতে রাজি নেই এখনো দেরী আছে।
সারহান হতাশার সুর টেনে বললো~ তাহলে আর কি ফ্রেন্ডরা সকলে বিয়ে করুক আর আমি তাদের বিয়ের দাওয়াত খাই।

~ মুন আপুর বিয়েতে যেতে হবে। আমার তো শপিং করা বাকি। কবে যাওয়া যায় বলুন তো?
অরিত্রিকা নিজ মনে অনবরত কথা বলেই চলেছে।সে যেনো আজ কথার পশরা সাজিয়ে বসেছে। আশে পাশে তার খেয়াল নেই। কেউ একজন তাকে গভীর দৃষ্টিতে দেখে চলেছে। সারহান পলকহীন দৃষ্টি অরিত্রিকার পাণে ফেলে তাকিয়ে আছে। মনে যা চলছে মুখ ফুটে সারহানকে কি নির্দ্বিধায় বলে চলেছে। সারহানও শুনে চলেছে। অরিত্রিকা যদি জানতো সারহান নামক পা*ষান পুরুষটির মনে তাকে ঘিরে যত জল্পনা কল্পনা আছে তাহলে হয়তো খুশিতে স্তব্ধ হয়ে যেতো। প্রণয় কি সময় বা বয়স দেখে আসে? উহু প্রণয়ের আগমন তো হঠাৎ দমকা হাওয়ার ন্যায় জীবনে আসে। যা সাদা কালো জীবনকে রাঙিয়ে দেয়।

আরশাদ সাহেব অফিস থেকে ফিরেছেন সন্ধ্যার পরে। ভীষণ ক্লান্ত থাকায় নিজ রুমে ঘন্টা দুয়েক বিশ্রাম করেছেন। তানিয়া বেগম স্বামীকে চা দিয়ে গিয়েছেন কিছুক্ষণ পূর্বে। আরশাদ সাহেব বিছানা ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে চা হাতে বিছানায় বসে পরলেন।সাদাতকে পাঠিয়েছেন সারহানকে ডাকার জন্য। আজ কিছু জরুরী কথা বলবেন তিনি। চা খেতে খেতে অপেক্ষা করছেন সারহানের জন্য।
সারহান দরজা খোলা থাকায় সরাসরি প্রবেশ করলো বাবার রুমে। আসতেই দেখলো আরশাদ সাহেব চা হাতে বসে আছেন বিছানায়। সারহান গিয়ে বাবার পাশে দুরত্ব বজায় রেখে বসলো। হঠাৎ কেনো ডেকেছে ঠাওর করতে পারলো না সারহান।
আরশাদ সাহেব সারহানকে দেখে বললেন~ শরীর কেমন আছে?
সারহান বাবার কথায় মৃদু হাসলো। হেসে বললো~ একদিন ফিট এন্ড ফাইন।

~ সামনে মাসেই তো দুই মাস পরেই তো নির্বাচন। শুনলাম তুমিই নাকি এমপি পদে দাড়াতে চাইছো?
~ হুমম। ঠিক শুনেছেন।
আরশাদ সাহেব চিন্তিত মুখে বললেন~ এমপি পদ টা কিন্তু উচ্চপদস্থ। তুমি কি পারবে দায়িত্ব পালন করতে?
সারহান অধিক মনোবলের সহিত বলে উঠলো ~ অব্যশই পারবো। পারবো বলেই এমপি পদে দাঁড়াতে চাইছি।
আরশাদ সাহেব কাপে থাকা অবশিষ্ট চা খেয়ে কাপটা বিছানার পাশে রাখলেন। কিছুটা মৌন থেকে বললেন~ নয়ন তালুকদারকে আজ পুলিশ এরেস্ট করেছেন। এই নিয়ে রাজশাহীসহ সারাদেশ তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগছে ক্ষমতার জন্য একজন এমপিকে মা*রলেন। শুনলাম ইন্ডিয়াতে পালিয়ে যাওয়ার সময় এয়ার পোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করেছেন তাকে।
~ খবর আগেই পেয়েছি। তবে চমকপ্রদ বিষয় হলো এখানে নিশাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।আমি ভেবেছিলাম নিশাদও জড়িত।

~ আমিও তাই ভাবছি। এখন তো শুনলাম নিশাদের এসবে যুক্ত নয়।
~ মিহিকে চিনেন?
~কোন মিহি? যার ছবি আমায় দেখিয়েছিলে কিছুদিন আগে? খবর নিতে বলে ছিনে নির্বাচন অফিসে কোন কর্মকর্তার মেয়ে?
সারহান গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো~ হুমম।
~ কি হয়েছে? কোনো খবর পেয়েছো?
~হ্যা পেয়েছি। মেয়েটি নিশাদের ফ্রেন্ড। মেয়েটি অন্য দেশে থাকে।
আরশাদ সাহেব অবাক হয়ে বললেন~ তাহলে তোমার সাথে দেখা করতে কেনো এসেছিলো? আর নিজের পরিচয় কেনো লুকালো?
~ নিশাদ হয়তো পাঠিয়েছিলো। এখনো পুরো তথ্য পাইনি মিহির সম্পর্কে তবে পেয়ে যাবো। আশা করছি এবার জানতে পারবো মেয়েটার উদ্দেশ্য।
~ সাবধানে থেকো। সময়টা খারাপ। একবার বেচে ফিরেছো। আমি চাই না আর এমন পরিস্থিতিতে তুমি পরো।
~ওকে।

সারহান দেয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে নজর দিলো। সময়টা আটটা বেজে ত্রিশ মিনিট। আবিরের কিছু ডকুমেন্টস পাঠানোর কথা ছিলো। এখনো পাঠায় নি।
সারহান আরশাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো~ বিজন্যাস কেমন চলছে? অনেকদিন খবর নেওয়া হয় না।
~ চলছে ভালো। তোমার তো সময় দেওয়ার কথা ছিলো অফিসে। এখন তো আমাদের থেকে বেশী ব্যস্ত তুমি।
~ দেখছেন তো কতোটা বিজি।
এর মাঝেই সারহানের ফোন বেজে উঠলো। সারহান টাউজারের পকেট হাতড়ে ফোন বের করলো। আবির কল করেছে। সে দেরী না করে কল ধরলো তটস্থ ভঙ্গিতে ।
সারহান বললো~ বল।

অপরপাশ হতে আবির কিছু কথা বললো। সারহান তা শুনলো শুধু। কয়েক মিনিট পরেই সারহান কল কেটে দিলো।লক্ষ ওপেন করে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো কিছু কাগজের ছবি দেখে নিলো। ছবিগুলো চেক করে দেখলো সব তথ্য ঠিক আছে। সে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে বের হয়ে ফোনটা বিছানার ওপর রাখলো।
আরশাদ সাহেব বললেন~ কে কল দিয়েছিলো?
~ আবির কল দিয়েছিলো।
সারহানের ফোনে মেসেজ আসলে তখনই। সারহান ফোন হাতে নেওয়ার আগেই আরশাদ সাহেবের চোখ অনিচ্ছা স্বত্বেও ফোন স্কিনে পরলো। তাকাতেই কপাল কুঁচকে গেলো উনার। পরিচিত কারো ছবি ছেলের ফোনের ওয়াল পেপারে দেখে আরশাদ সাহেবের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠলো।তিনি সন্দেহজনক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকালেন।সারহান আরশাদ সাহেবের নজর খেয়াল না করে ভ্রুযুগল ম্যাসেজ চেক করতে উদ্দ্যত হলো। কপালে গাঢ় ভাজ ফেলে চেক করে দেখলো তাদের দলের একজন কর্মী নয়ন তালুকদার এরেস্ট হয়েছেন তা জানিয়েছে। সারহান দেখে রেখে দিলো শুধু। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার দিকেই কেমন চোখ করে তাকিয়ে আছেন। সারহান বুঝলোনা হঠাৎ কি হলো আরশাদ সাহেবের।

আরশাদ সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে সারহানকে বললেন~ তুমি কি চাইছো আজমল আর আমার সম্পর্কে ফাটল ধরুক? দুজনের ভাইয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হোক?
সারহান বাবার এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাক হলো। সে বুঝতে পারছেনা কি নিয়ে কথা বলছে আর সেই বা কি করেছে।
~বাবা আপনি কি বলছেন?
আরশাদ সাহেব শক্ত গলায় বললেন~ তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি সারহান? এভাবে আমার বিশ্বাস না ভাঙলেও পারতে।
আরশাদ সাহেবের কথা শুনে সারহান ভাবলো সে কি করেছে। অনেকটা সময় ভেবেও সে বুঝতে পারলো না।
সারহানকে চুপ থাকতে দেখে আরশাদ ক্রোধ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন ~ তোমার ফোনের ওয়ালপেপারে অরিত্রিকার ছবি কি করছে সারহান?

সারহান আরশাদ সাহেবের কথা শুনে কোনো বিচলিত ভাব পরিলক্ষিত হলো না। আজ শান্ত লাগছে। আরশাদ সাহেব ক্রোধ সংবরণ করে ছেলের দিকে তাকালেন। সারহানকে তার অতি শান্ত মনে হচ্ছে। কোনো হেলদোল নেই। তার দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে। আরশাদ সাহেবের রাগ যেনো মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। এমন শান্ত স্বভাব তাকে বিস্মিত করলো। উনি ভেবে পাচ্ছেন না এসব সকলে জানলে পরিস্থিতি কি হবে? আজমল সাহেব কেমন প্রতিক্রিয়া করবেন।চিন্তায় মাথা কাজ করছে না। সারহানের মনে এমন কিছু ছিলো তিনি বুঝতে পারেননি। এমন সন্দেহজনক কিছু খেয়ালও করেননি। চোখের সামনে এমন একটা দৃশ্য দেখতে হবে ভাবতে পারেননি।
~ তুমি কি চাইছো?
আরশাদ সাহেবের কন্ঠস্বর গম্ভীর। আদেশার্থ মিশে আছে তাতে? সারহান কিছুকক্ষণ আরশাদ সাহেবের দিকে তাকালো। চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে মুখে।

সারহান শান্ত কন্ঠে জানতে চাইলো~ আপনি কোন উত্তর শুনতে চাইছেন? পজিটিভ অর নেগেটিভ?
~ তোমার এই কান্ডের জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনো অশান্তি হোক আমি চাই না। তোমার বাবা আমি তোমার মনে কি চলছে ছবিটা দেখেই বুঝেছি। যা ভাবছো তা কখনোই সম্ভব নয়। নিজেদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আমি চাই না। আজমলও মেনে নিবে না। তোমার থেকে নেগেটিভ মন্তব্যই আশা করছি।
~ আপনাকে হতাশ করার জন্য দুঃখিত বাবা। আমার উত্তর অবশ্যই হ্যা হবে।
আরশাদ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। ধমকে বললেন~ তুমি তোমার লিমিট ক্রস করছো সারহান।
সারহান হাসলো। বললো~ আমি তো এমন কোনো কিছু করিনি যার কারণে লিমিট ক্রস হয়েছে।
~ অরিত্রিকা তোমাকে কখনো অন্য নজরে দেখেনি। আর তুমি যে তাকে পছন্দ করো এটাও নিশ্চয়ই জানে না।
সারহান কৌতুক পূর্ণ কন্ঠে বললো~ অরিত্রিকার থেকে জানতে চাও আমায় কোন নজরে দেখে তারপর এই বিষয় নিয়ে কথা হবে।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩০

আরশাদ সাহেব দমে গেলেন। সারহান উঠে দাঁড়ালো। বাবার থমথমে মুখ দেখে কিছুটা মজা পেলো সে।
আরশাদ সাহেব হার মানা কন্ঠে বললেন~ তুমি কি অরিত্রিকাকে…..
সারহান আরশাদ সাহেবকে সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়ে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বললো~ আমি অরিত্রিকাকে বিয়ে করতে চাই।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩২