প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩৩
আদ্রিতা নিশি
সময়টা বর্ষাকাল। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে যাচ্ছে ধরণী। পড়ন্ত বিকেল কিন্তু বোঝার উপায় নেই। সাদা,ধূসর মেঘে আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে আসছে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামার আগেই মানুষজন নিজেদের বাড়ির পথে পা বাড়াচ্ছে। বৃষ্টিস্নাত শহরের পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। শীতল আরামদায়ক আবহাওয়া। বৃষ্টি প্রেমীদের জন্য বৃষ্টি বিলাসের দারুণ সময়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্নে রেস্টুরেন্টে বসে আছে সারহান। তার সাথে সাদাত, অরিত্রিকা, ইশরা আর সারহানের বন্ধু মহল উপস্থিত। সকলেই মন খারাপ করে বসে আছে। কারণ বৃষ্টি। সকালে হালকা বৃষ্টি হলেও দুপুরে কাঠ ফাটা রোদের দেখা মিলেছিলো। বিকেলেও তাদের বেরোনোর সময় বৃষ্টি ছিলো না। আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিলো তাই সকলে মিলে ঘুরতে এসেছে। ভার্সিটিতে অল্প কিছু জায়গায় ঘোরা শেষ করতেই হঠাৎ বৃষ্টি পরতে শুরু করেছিলো। উপায়ন্তর না পেয়ে সকলে রেস্টুরেন্টে এসে বসেছে। রাতের ডিনার শেষ করে তারপর সকলে বাড়ি ফিরবে। আজ আর ভার্সিটিতের আঙিনায় বসে আড্ডা দেওয়া হলো না। স্মৃতিচারণ করা হয়ে উঠলো না তাদের।
অরিত্রিকা, ইশরা, মুন আর রাই রেস্টুরেন্টের পূর্ব দিকের একটা টেবিলে বসেছে। সেখান হতে থাই গ্লাস ভেদ করে স্পষ্ট ভার্সিটির মেইন গেট দেখা যাচ্ছে। তার পাশের টেবিলে বসেছে সারহান, সাদাত, পৃহাল আর ইফাত। এখনো খাবার কিছু অর্ডার করা হয়নি। সারহান ওয়েটারের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুটা সময় যেতেই ওয়েটার অরিত্রিকা টেবিলে কে কি খাবে তার অর্ডার নিতে শুরু করলো। অরিত্রিকা ইশরার সাথে কথা বলছে। অনেকদিন পর দুজন একসাথে হয়েছে পেটে অগণিত কথা জমা হয়েছে। তা দুজনে আদান প্রদানে ব্যস্ত।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মুন ওয়েটারকে বললো~ আমাদের চারজনের জন্য কোল্ড কফি আর চাউমিন।
ওয়েটার তা লিখে নিয়ে সারহানের টেবিলে গেলো অর্ডার নেওয়ার জন্য।
সারহান নিজেদের পছন্দসই খাবার অর্ডার করে ওয়েটারকে গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে বললো~ ওই টেবিলে তিনটা কোল্ড কফি আর একটা হট কফি দিবে।
ওয়েটার ভড়কে গিয়ে বললো~ কেনো স্যার? উনারা তো চারটা কোল্ড কফি অর্ডার করেছেন।
ওয়েটারের কথা শুনে অরিত্রিকা সহ সকলেই সারহানের দিকে তাকালো। উচ্চস্বরে কথা বলায় সকলেই কৌতুহলী হলো সারহানের এমন ব্যবহারে।
মুন কৌতুহল বশত প্রশ্ন করলো ~ কোনো সমস্যা? হট কফি অর্ডার কেনো করছিস? কে খাবে?
সারহান উত্তর দিলো ~ অরিত্রিকার জন্য অর্ডার দিয়েছি। ঠান্ডা জাতীয় কিছু খেলেই অসুস্থ হয়ে পরবে।
মুন বললো ~ অরিত্রিকা তো কিছু বলেনি তখন আমিও জানতাম না।
~ দেখছিলি না কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো।
~হুমম।
সারহান আর কিছু বললো না। মনোযোগী হলো পৃহাল আর ইফাতের সাথে কথা বলায়। সাদাতের তো পেটে গুড়গুড় করছে। রাতে যে কথাগুলো শুনেছে এখনো তার মাথায় সেগুলোই গোলগোল ঘুরছে। সারারাত এগুলোই ভেবেছে সে। কতোদিন কথা গুলো চেপে রাখবে সে? ভেবেই লম্বা শ্বাস নিলো সে।
অরিত্রিকা সারহানের দিকে অবাক পাণে তাকিয়ে আছে। তার ঠান্ডা জাতীয় কিছু খেলেই সমস্যা হয় আগে তো কখনো সে বলেনি তবে জানলো কি করে। জানলেও আগে তো অনেকবার সারহানের সামনে আইসক্রিম খেয়েছে তখন তো একবারও নিষেধ করে না খেতে তবে আজ হঠাৎ নিষেধ করছেন কেনো? অল্পতেই অরিত্রিকা চিন্তিত হলো। তবে এতোটুকু কেয়ার করেছে ভাবতেই মন ভালো লাগায় সিক্ত হয়ে উঠলো। ভালোবাসার মানুষটির অল্প খেয়াল রাখা তাকে আবেশীত করে তুলেছে তাকে।ইস কল্প পুরুষটি কবে যে তার হবে। অল্প অল্প যত্ন,ভালোবাসায় কবে যে সিক্ত হবে সে? সকাল হতেই নানা ভাবনায় বিভোর সে।
আজ ছাদে সারহানের হেঁয়ালি পূর্ণ কথায় অরিত্রিকা এতোটুকু বুঝেছে সে হয়তো জ্বরের ঘোরে সারহানকে কিছু একটা বলেছিলো। সে কি তার মনে জমে থাকা অনুভূতি সারহান ভাইয়ের কাছে নিজের অজান্তেই বলে দিয়েছিলো? সকাল থেকে মনে করে করার চেষ্টা করছে সেদিন রাতে কি হয়েছিলো। কিছুতেই মনে করতে পারছে না। সে তার অব্যক্ত ভালোবাসার কথা বলে দিলেও সারহান ভাই এতোটা স্বাভাবিক কেনো ছিলো? এই সম্পর্কে কিছুই বলে নি তাকে।
ইশরা অরিত্রিকা কে গভীর ভাবনায় মত্ত দেখে বললো~ এই অরিত্রিকা কি হয়েছে বলতো? সেই দুপুর থেকে দেখছি এমন চুপচাপ আছিস।
অরিত্রিকা ইশরার দিকে তাকালো। ভাবুক স্বরে বললো~ আমি একটা বিষয় নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।
ইশরা আগ্রহী হয়ে বললো~ কি?
~ আমার মনে হয় সারহান ভাই আগে থেকেই জানতো আমি তাকে ভালোবাসি।
ইশরা চমকে উঠে বললো ~ এসব কি বলছিস? কীভাবে জানলো?
অরিত্রিকা সেই সময়ে ডুবে গিয়ে আওড়ালো~ মনে আছে সারহান ভাই আর ইফা আপুর বিয়ের কথা শুনে মন খারাপ করছিলো তাই বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। এতেই কি ধুম জ্বর এসেছিলো। সেদিন নাকি সারহান ভাইকে জ্বরের ঘোরে কোনো কথা বলেছিলাম। হয়তো সারহান ভাইকে আমার গোপনে আগলে রাখা তাকে ঘিরে অনুভূতির কথা বলেছিলাম। তাই উনি জেনে গেছেন। অনেকবার জানতে চেয়েছি আমি সেদিন কি বলেছিলাম কিন্তু উনি তা খোলাসা করেননি। আজ উনার সকালে বলা কথায় মনে হলো হয়তো উনি বুঝেছিলেন আমার মনে উনার জন্য প্রণয়ানুভূতি আছে।
ইশরা কপাল চাপড়ে বললো~ আমি তো তোদের কাহিনী কিছুই বুঝি না। একজন ভালোবাসা প্রকাশ করে আর আরেকজন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। এসব কাহিনী আর কতোদিন চলবে তোদের? একটা কাজ করি মামুকে বলি তুই সারহান ভাইকে ভালোবাসিস। দুজনকে ধরে বেন্ধে বিয়ে দিয়ে দিক।
অরিত্রিকা চোখ রাঙিয়ে বললো ~ একদম এসব বলতে যাবি না। বাবা জানলেই নতুন করে ঝামেলা হবে বাড়িতে। আমি চাই না এমন কিছু হোক।
ইশরা বললো~ তাহলে আর কি সারহান ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাক। সারহান ভাই যে মানুষ আমার মনে হয় না তার মনে তোর জন্য ফিলিংস থাকলেও তা প্রকাশ করবে। অপেক্ষা করতে করতে না বুড়ি হয়ে যাস।
ইশরা সঠিক কথা বলেছে। অরিত্রিকা জানে সারহান কখনো নিজের মনের কথা কাউকে বলে না। সে সারহানের প্রতি বিরক্ত হলো। সেও আর ওই যন্ত্র মানব কে কিছু বলবে না। নিজের মুখে ভালোবাসার কথা স্বীকার করা একদম ভুল হয়েছে তার।
মুন অরিত্রিকা আর ইশরার দিকে খেয়াল করে দেখলো দুজনে ফিসফিসিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছে। রাই ও খেয়াল করেছে তবে কিছু বলে নি। হয়তো গোপন কোনো কথা বলছে । সে আর মুনও তো ভার্সিটি লাইফে ক্লাস রুমে স্যারকে লুকিয়ে কতো কথা বলেছে। ভাবতেই আবেগী হলো সে। সময় কেনো এতো দ্রুত চলে যায়? সুন্দর মুহুর্ত কি আঁটকে রাখার কোনো উপায় নেই? নেই। থাকলে হয়তো জীবনের সেরা মুহুর্তগুলো আঁটকে রাখা যেতো।
মুন চোখ ছোট ছোট করে বললো~ তোমরা দুজনে কি এমন গোপন কথা বলছো? যা আমাদের বললে প্রবলেম হবে?
অরিত্রিকা আর ইশরা কথা থামিয়ে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসলো।
অরিত্রিকা আমতা আমতা করে বললো~ আপু তেমন কিছু নয়।
মুন ভ্রু বাকিয়ে বললো~ সত্যি তো? কিছু লুকাচ্ছো না তো?
~ নাহ, নাহ কিছু লুকাই নি।
~ তাহলে বলো দুজনে কি বলছিলে আমরাও একটু শুনি।
অরিত্রিকার মুখখানা ছোট হয়ে গেলো। সে অস্বস্তি নিয়ে তাকালো মুন আর রাইয়ের দিকে। কি উত্তর দিবে সে। ইশরা অরিত্রিকার অস্বস্তি ভাব বুঝতে পারলো।
ইশরা হাসার ভান করে বললো~ আরে আপু অরিত্রিকা তো তার বয়ফ্রেন্ডের কথা বলছিলো আমায়। ওর বয়ফ্রেন্ড নাকি ওকে ইদানীং ইগনোর করছে। তাই না অরিত্রিকা?.
মুন আর রাই হতবাক হয়ে তাকালো অরিত্রিকার দিকে। তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না অরিত্রিকার বয়ফ্রেন্ড আছে।অরিত্রিকার বয়সে তারা বিএফ কি কিছুই বুঝতো না। অরিত্রিকা চোখ বড় বড় করে ফেললো। ইশরা সবার সামনে কি বললো? এভাবে ফাঁসিয়ে দিলো? এখন নিশ্চয়ই জানতে চাইবে তার বিএফ কে? উফ ঝামেলা তার পিছু ছাড়ে না কেনো?
রাই হতবাক হয়ে শুধালো ~ তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে অরিত্রিকা? আমার কেনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
মুনও তাল মিলিয়ে বলে উঠলো~ আমারও।
ইশরার এতোক্ষণ মনে ছিলো না এখানে সারহান ভাই ও উপস্থিত আছে। মনে পরতেই জিভে কামড় দিলো। কি বলে ফেললো সে। ইশরা সারহানের দিকে তাকালো। দেখলো সারহান কপাল কুঁচকে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। সে ভীত হয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। ভয়ে ঢোক গিলতে লাগলো।
অরিত্রিকা আজ সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগে সারহান ভাইকে একটু জ্বালাতে পারবে। তাকে পাত্তা দেয় না। এবার কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় সে দিবে।
অরিত্রিকা সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে বললো~ হুমম আপু আছে তো।
উপস্থিত সকলে বিস্মিত হলো। অরিত্রিকা চোরা চোখে পাশের টেবিলে তাকালো। সারহান জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে।চোয়াল শক্ত,মুখে গম্ভীর ভাব আরও ফুটে উঠেছে। মনে হচ্ছে চোখ দ্বারা ভস্ম করে দিবে তাকে। সে ওই দৃষ্টিতে পাত্তা দিলো না। সাদাত অরিত্রিকার কথা শুনে হা হয়ে গেছে। এই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড কোথায় থেকে টপকালো হঠাৎ। তার মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
মুন স্বাভাবিক ভাবে বললো~ এই বয়সে বয়ফ্রেন্ড থাকতেই পারে। তো তোমার বয়ফ্রেন্ড কি করে?
অরিত্রিকা মৃদু হেসে বললো~ আপাতত পড়াশোনা শেষ। এখন রাজনীতির সাথে যুক্ত।
মুন মজার ছলে বললো~ বাহহ রাজনীতিবিদ। এই শোনো রাজনীতি করা ছেলেকে সহজে বিশ্বাস করো না। একটু বাজিয়ে দেখো। ওদের আবার ক্যারেক্টারে প্রবলেম হয়।
অরিত্রিকা সারহানের দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে বললো~ উহু আপু। উনি অনেক ভালো।উনার ক্যারেক্টার একদম সোনার মতো ঝকঝকা। কোনো খুঁত নেই।
রাই অরিত্রিকাকে লাজুক হাসতে দেখে বললো~ উহুম উহুম ব্লাশ করছো?
অরিত্রিকা লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢাকলো।
সারহানের জ্বলন্ত চোখ নিভে এলো। শান্ত হলো সে। এক মুহুর্তের জন্য বক্ষে তান্ডব উঠেছিলো যেনো। অরিত্রিকার মুখে বিএফের কথা শুনে প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলো সে।মেয়েটা যে তাকে জ্বালিয়ে মারছে। ইনিয়ে বিনিয়ে সকলের সামনে তাকে বিএফ স্বীকার করলো।সে বুঝতে পেরেছে ইচ্ছে করে অরিত্রিকা কথাগুলো বলেছে। এই মেয়ে তার অতিবাহিত রাতের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে। আজও বোধ হয় দু চোখে ঘুৃম আসবে না।
ওয়েটার খাবার নিয়ে হাজির। দুই টেবিলে খাবার গুলো সার্ভ করে দিলো। পরিবেশ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে রাই আর মুন মিটিমিটি হাসছে। অরিত্রিকা এতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। কোনো রকম লজ্জা আড়াল করে খেতে লাগলো।
বাহিরের আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন বৃষ্টি নেই বললেই চলে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।হালকা অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাব। হীম শীতল বাতাস বইছে চারিদিকে। অদ্ভুত প্রশান্তিকর পরিবেশ।
আজ অনেকটাই নিরিবিলি ভার্সিটি এরিয়া। বৃষ্টি থাকায় তেমন মানুষ নেই। হালকা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ভিজে পানি পানি হয়ে আছে। রাস্তার দুপাশে পানি জমেছে। প্রায় একঘন্টা যাবত পুরো এরিয়া ঘুরেছে সারহানেরা। চায়ের দোকানে চা খেয়েছে। বর্ষার সময়ে চা খেতে ভালোই লাগে।
প্যারিস রোডে সারহানদের জন্য অপেক্ষা করছে অরিত্রিকা, ইশরা, মুন আর রাই। সারহান, পৃহাল আর ইফাত পরিচিত একজনের সাথে দেখা করতে গিয়েছে।সেখান হতে ফেরার সময় পার্কিং প্লেস থেকে গাড়ি গুলো নিয়ে অরিত্রিকাদের সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। সাদাত তার ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। সাদা তের কয়েকজন ফ্রেন্ড ভার্সিটির হলে থাকে। অরিত্রিকার পা ব্যথা করছে। আর কতোকক্ষণ এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে আসছে। আজ কেনো যে ঘুরতে এসেছিলো। বৃষ্টির কারণে তেমন একটা ঘুরতে পারলো না। ছবিও তোলা হলো না। ভেবেছিলো সবাই মিলে অনেক ছবি তুলবে। তাই সাদাতের ক্যামেরাও আনা হয়েছিলো। বৃষ্টি এসে প্ল্যানে পানি ঢেলে দিলো।
মুন আর রাই নিজেদের মাঝে কথা বলছে। অরিত্রিকা আর তাদের ডেকে বিরক্ত করলো না।
অরিত্রিকা বিরক্তি নিয়ে ইশরাকে বললো~ সারহান ভাই আসতে দেরি আছে চল সামনে থেকে একটু ঘুরে আসি।
ইশরা বললো ~ কোথায় যাবি?
অরিত্রিকা বললো~ চল। এমনই রাস্তায় হাঁটবো।
অরিত্রিকা হাত ধরে টেনে রাস্তা বরাবর হাঁটতে লাগলো। এদিকটায় অনেকটাই অন্ধকার। অরিত্রিকা নিজের হাতে থাকা ফোনে ফ্ল্যাশ অন করে নিলো। রাস্তামুখী আলো তাক করে হাঁটতে লাগলো দুজনে। দুজনে হাটতে মোটেও খারাপ লাগছে না। হিমেল হাওয়া, ভেজা গাছপালা,মাটির গন্ধ উপভোগ করতে করতে দুজনে হেঁটে চলেছে। প্রকৃতির মাঝে যেনো হারিয়ে যাচ্ছে অরিত্রিকা।
অরিত্রিকার হঠাৎ মনে হলো পেছনে কেউ একজন আসছে। অনেকটা সময় ধরে অরিত্রিকা খেয়াল করছে কারো অস্তিত্ব। কারো পদধ্বনি টের পাচ্ছে সে।এখন সে সিউর হলো কেউ তো একজন আছে যে তাদের দুজনকে ফলো করছে। সে বেশ অনেকা ভয় পেয়েছে তবুও প্রকাশ করলো না ইশরার হাত টেনে দ্রুত হাঁটতে লাগলো।
অরিত্রিকা হঠাৎ দ্রুত পায়ে যাচ্ছে দেখে ইশরা বলে উঠলো~ আরে আস্তে যা। এমন ভাবে টানলে তো রাস্তার মাঝখানে মুখ থুবড়ে পরবো।
অরিত্রিকা ধীরে বললো~ আমার মনে হচ্ছে পেছনে কেউ একজন ফলো করছে।
ইশরা ভয় পেয়ে গেলো। তাদের কে ফলো করবে? সে কি পেছনে তাকিয়ে দেখেন কেউ আছে নাকি? সে সাহস নিয়ে ঢোক গিলে পেছনে ভীতু চোখে তাকালো। তাকাতেই দেখলো কেউ নেই। হাঁপ ছেড়ে বাচলো।
ইশারা বললো~পেছনে তো কাউকে দেখলাম না। চল এই রাস্তা দিয়েই ফিরে যাই।
অরিত্রিকা চট জলদি বলে উঠলো ~ উহু এদিক দিয়ে যাবো না। যদি সত্যি ফলো করে তাহলে তো বিপদ আছে। আরেকটু গেলেই বাম দিকে রাস্তা আছে ওইদিক দিয়ে যাবো।
ইশরা কিছুটা চিন্তা করে বললো~ সারহান ভাইকে কল কর।
অরিত্রিকা যেনো আশার আলো দেখলো।সে বললো~ হুম ঠিক বলেছিস।
অরিত্রিকা দাঁড়ালো রাস্তার একপাশে মানুষের তেমন আনাগোনা নেই।স্থানটি নিরিবিলি বলা চলে। দুইপাশে আম বাগান থাকায় নির্জন লাগছে।কেমন ভুতুড়ে পরিবেশ। অন্য সময় মানুষে ভরপুর থাকে কিন্তু আজ বৃষ্টি হয়েছে তাই তেমন কেউ এদিকটায় নেই। অরিত্রিকা ফোনের লক খুলে কল লিষ্টটা ঘেটে সারহানের নাম্বারে কল করতে যাবে এমন সময় তার হাতে টান পরলো।তার ফোন ছিটকে পরলো রাস্তায়। অরিত্রিকা ভয়ে পিছনে তাকালো। দুজন দানবের মতো লোক বিশ্রি হাসি হাসছে। তাদের মধ্যে একজন অরিত্রিকার হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে।ইশরা ও ভয় পেয়ে দুজন বখাটের মতো মানুষকে দেখে কিছুটা পিছিয়ে গেলো। দুজনেই ভয়ে, আতংকে সিটিয়ে গেছে। অরিত্রিকার হাতে ব্যথা লাগছে। তার চোখ ছলছল করে উঠলো।সে হাত ছাড়ানোর প্রয়াস চালাচ্ছে কিন্তু দানবের ন্যায় মানুষটির থেকে ছুটতে পারছে না।ইশরার ভয় লাগলেও সে সাহস সঞ্চার করে দৌড়ে অরিত্রিকার হাত ছাড়াতে যাবে এমন সময় আরেকটি লোক ইশরার হাত ধরে শক্তি প্রয়োগ করে ছুড়ে ফেললো বাগানের দিকে। ইশারা এক আম গাছের কাছে ছিটকে পরলো।তার কপাল গিয়ে গাছের গোড়ায় থাকা ইটের টুকরোর সাথে সজোরে আঘাত লাগলো। মাথা ঘুরে উঠলো তার। চোখের পলকেই কপাল ফেটে র*ক্ত গড়িয়ে পরতে লাগলো মাটিতে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো সে। চোখ ঘোলা হয়ে আসছে তার।
অরিত্রিকা ইশরার ওমন অবস্থা দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।হালকা আলোয় দেখা যাচ্ছে কপালে র*ক্তের ধারা। কিভাবে বাঁচাবে সে? নিজেদের বাঁচাতে চিল্লাতে এমন সময় লোকটি অরিত্রিকার মুখে রুমাল চেপে ধরলো। অরিত্রিকা ছটফট করতে করতে একটু সময় পর ঢলে পরলো রাস্তায়। এর মাঝেই কালো মাইক্রোবাস এসে থেমেছে। দুজন লোক আর দেরি করলো না। অরিত্রিকা কে মাইক্রোবাসে তুলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩২
ইশরা মাটিতে পরে আছে। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়।চোখ দুটো অন্ধকার হয়ে আসছে। চিৎকার করার শক্তিটুকুও নেই তার মাঝে। ঘোলা চোখে অরিত্রিকাকে নিয়ে যাওয়া দেখলো। কিন্তু সে অসহায়, কিছু করতে পারলো না। ভাবতেই দু ফোঁটা অশ্রু চোখ বেয়ে পরলো।ছটফট করতে করতে ধীরে ধীরে চোখ বুজে এলো তার। আজই বোধ হয় সব শেষ। আর হয়তো কারো সাথে দেখা হবে না। সে মুহুর্তেই হারিয়ে গেলো অন্ধকারাচ্ছন্ন অতল গহীনে। অন্ধকারেই পরে রইল ইশরার র*ক্ত আর কাঁদায় মাখা দেহখানা।