প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩৫
আদ্রিতা নিশি
রৌদ্রস্নাত প্রকৃতি। বাতাস না থাকলেও আবহাওয়ায় শীতল, উষ্ণ দুটোরই ছোয়া আছে। রাতে যে ঝড়,বৃষ্টি হয়েছে তা বোঝার উপায় নেই রোদ দেখে। আবহাওয়া মোটেও মন্দ লাগছে না। প্রকৃতিও যেনো সবুজ আর সতেজ হয়ে উঠেছে। রাস্তার পাশে সবুজের সমারোহে চোখ প্রাণ জুরিয়ে যাচ্ছে। এই সময়টা প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য এই সময়টা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য সুন্দর সময়।
রাজশাহীর উদ্দেশ্যে সারহানের গাড়ি ছুটে চলেছে। আবির নিজ মনে দক্ষ হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আসন্ন রাস্তার দিকে। সু নিপুণ চোখে রাস্তার দিকে মনোযোগী হয়ে গাড়ি নিয়ে ছুটছে গন্তব্যে।সারহান অরিত্রিকাকে নিয়ে পেছনের সিটে বসেছে। অরিত্রিকার মাথায় অসহ নীয় ব্য থা হওয়ার কারণে সারহানের কাধে মাথা রেখে বসে আছে। তার দু চোখ বন্ধ। সারহান চুপচাপ বসে থাকলেও বারবার বিচলিত নয়নে অরিত্রিকাকে দেখে চলেছে। সে অরিত্রিকার জন্য দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে আছে। নিজ চোখে অরিত্রিকার অসুস্থতা দেখে মোটেও ভালোলাগছে না তার। অরিত্রিকা কেমন নিশ্চিতে চোখ বন্ধ করে তার কাঁধে মাথা রেখে আছে। হোটেল থেকে বেরোনোর সময় অরিত্রিকা তখনও আতংকিত হয়ে ছিলো। সারহান অরিত্রিকাকে ভরসা দিয়ে খাবার খাইয়ে দেয়। অরিত্রিকা মুখ ফুটে বলেছিলো তার মাথা ব্য থা করছে। সারহান হোটেলের পাশে একটা ফার্মেসি হতে ঔষধ এনে অরিত্রিকাকে খেতে বলেছিলো। অরিত্রিকা ঔষধ খেলেও মাথা ব্যথা কমছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারহান ধীরে অরিত্রিকাকে ডেকে বললো~ এখনো মাথা ব্যথা করছে?
অরিত্রিকা নড়ে চড়ে উঠলো। কাঁধ হতে মাথা না তুলেই চোখ মেলে তাকালো সারহানের পাণে। সারহান অশান্ত দৃষ্টি ফেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে সে বুঝলো সারহান ভাই তার জন্য দুশ্চিন্তা করছে।
অরিত্রিকা ব্য’থাতুর স্বরে বললো~ হু। চিন্তা করবেন না। একটু পরেই ব্য’থা ভালো হয়ে যাবে।
সারহান অরিত্রিকার দিকে তাকিয়েই শান্ত কন্ঠে বললো~ কথা বলার দরকার নেই।চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা কর।
অরিত্রিকা মৃদু হাসলো শুধু। চোখ বন্ধ করলো আবারও। প্রিয় মানুষটির একটু কেয়ার মনকে প্রশান্তি দেয়। পুরো মানুষটি যখন বৈধ বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে কেয়ার করবে,ভালোবাসবে সেই সময়টার চেয়ে সুখকর আর কিছুই নেই।
সারহান অরিত্রিকার দিক হতে চোখ সরিয়ে নিলো। জোরে জোরে লম্বা শ্বাস টেনে নিলো। অদ্ভুত ভাগ্য। সে তো অরিত্রিকাকে ভালোবাসতো না। অথচ কিছুদিনেই মেয়েটির প্রতি মায়া, ভালোলাগা, অনুভূতি জন্মেছে। ভালোলাগাকে পাত্তা না দিলেও মনের কোণে কোথাও অরিত্রিকার জন্য ভালোবাসার অনুভূতি জন্মেছিলো। এখন ধীরে ধীরে দৃঢ় হচ্ছে। অরিত্রিকা তার গোপন সুখ। যার কথা ভাবলেই হাজার খারাপ লাগার মাঝেও উৎফুল্লতা অনুভব করে সে। ভালো লাগায় ভরে যায় মনের গহীন। প্রশান্তি দেয় মনকে। এই যে এখন তার কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে এতেই মন আবেশীত হচ্ছে। চঞ্চল মেয়েটি যে কীভাবে তার কঠোর হৃদয়ে জায়গা করে নিলো সে এখনো বুঝে উঠতে পারে না।
সারহান বাড়িতে সকলকে কল করে জানিয়েছে দিয়েছে অরিত্রিকাকে পাওয়া গেছে। সকলেই এখন দুশ্চিন্তামুক্ত। নিশাদের ব্যাপারটা ফোনে বলা সম্ভব নয়।কারণ সামনাসামনি বললে সকল ঘটনা গুছিয়ে বলা যাবে। এখন বললে টেনশন করবে।
অরিত্রিকার ঘন ঘন শ্বাস সারহানের শার্ট ভেদ করে শরীর পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। সারহান খেয়াল করলো অরিত্রিকা ঘুমিয়ে গিয়েছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ায় কাঁধ হতে মাথা নেমে যাচ্ছে। সে হাত দিয়ে অরিত্রিকার মাথা তার কাঁধে ঠিক করে রেখে দিলো। তবুও নেমে যাচ্ছে। সে অরিত্রিকার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে চাইলো না। উপায়ন্তর না পেয়ে সারহান অরিত্রিকার পিঠের পেছন দিয়ে হাত দিয়ে অরিত্রিকাকে আগলে নিলো।অরিত্রিকা নড়ে উঠে সারহানের বক্ষে মাথা রাখলো।সে দুহাতে শার্ট আঁকড়ে বেঘোরে ঘুমাতে লাগলো।
সারহান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অরিত্রিকার ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে। চোখ পরলো কপালের দিকে। কপালে দৃশ্যমান হলো ক্ষ ত। সারহান তা দেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো। হাত বাড়িয়ে গাড়ির গ্লাস পুরোটা নামিয়ে দিল। হালকা হাওয়া আসছে। বাতাসের কারণে অরিত্রিকার চুলগুলো মুখের ওপর এসে পরেছে। সারহান দেখে নিজ হাতে মুখের ওপর হতে চুল সরিয়ে মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। অদ্ভুত অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরেছে। প্রেয়সীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে খারাপ লাগছে না তার ভালোই লাগছে। প্রেমিক পুরুষেরাও বুঝি ভালোবাসার মানুষকে এভাবেই আগলে রাখে?
আবির লুকিং গ্লাস দিয়ে পেছনের সারহানের কার্যকলাপ দেখছিলো। সে গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলে উঠলো~ এটা গাড়ি কোনো রোমান্স করার জায়গা না।
সারহান তির্যক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালো। লুকিং গ্লাসে দেখতে পেলো আবির মিটমিট করে হাসছে। এখানেই ফাজলামো শুরু করে দিয়েছে।
সারহান সরু নজরে তাকিয়ে বললো~ সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালা। আমি রোমান্স করি আর না করি সেটা তোর দেখার বিষয় না। আমার গাড়ি আমি যা ইচ্ছে করবো তাতে তোর কি?
আবির উচ্চস্বরে হেসে বললো~ ব্রো এখনো বিয়ে হয়নি তোদের। বিয়ে হোক তারপর না হয় রোমান্স করিস। গাড়ি তোর হলেও এখন তো আমি গাড়ি চালাচ্ছি। নজর কিন্তু তোর ওপর।
সারহান গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো~ তোর জ্ঞান তোর কাছেই রাখ। আর পিশাচের মতো হাসা বন্ধ কর অরিত্রিকার ঘুম ভেঙে যাবে।
আবির গাড়ি চালাতে চালাতেই বললো~ এখনোই এতো কেয়ার? শুধু শুধু অরিত্রিকাকে আগে পাত্তা দিসনি।
সারহান অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে অতি শান্ত স্বরে আওড়ালো~ কোনো কিছু সহজে পেলে তো মূল্য কমে যায়, অনীহা দেখা দেয়। আমি তো অপেক্ষা করে আমাকে নিয়ে অরিত্রিকার মনে কি আছে তা বোঝার চেষ্টা করেছি। আমার অনুভূতি তার কাছে ইচ্ছাকৃত অপ্রকাশিত রেখেছিলাম। অপেক্ষাই যে অনুভূতিকে দৃঢ় করে।
আবির শুনে হাসলো। অবশেষে রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়া কঠিন পুরুষের জীবনেও ভালোবাসার মানুষ এলো তবে? সারহান যে কাউকে ভালোবাসবে তা অবিশ্বাস্য। কঠিন মানবের মনে জায়গা করে নেয়া,অনুভূতি সৃষ্টি করা, ভালোবাসা আগমন এগুলো খুবই কঠিন কাজ।
চৌধুরী বাড়িতে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। সকলের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে স্বস্তির চিহ্ন। ডাইনিং রুম জুড়ে বাড়ির সকলে আর সারহানের বন্ধুমহল বসে আছে। অপেক্ষা করছে সারহান আর অরিত্রিকার জন্য। গতরাত সকলের খুবই ভয়াবহ কেটেছে। সাথী বেগম মেয়ের জন্য কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। তানিয়া বেগম সাথী বেগমকে সামলেছেন। আজমল সাহেব নিজের পরিচিত সকল সোর্স কাজে লাগিয়েছিলেন অরিত্রিকা কে খোঁজার জন্য। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তেমন একটা সুবিধা হয়নি। আরশাদ সাহেব ও ভীষণ দুশ্চিন্তা করছিলেন। ইশরার আঘাত লাগার কথা জানতেই বাড়িতে আরও পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে যায়। সব মিলিয়ে খুবই খারাপ সময়ে রাত কাটিয়েছে সকলে। কারো চোখে ঘুমের রেষ পর্যন্ত ছিলো না। সবার মনে একটাই চাওয়া ছিলো অরিত্রিকা আর ইশারার যেনো কিছু না হয়।
ইশরা সোফায় বসে আছে। কপালের অর্ধেক জুড়ে ব্যান্ডেজ করা। মুখশ্রী মলিন, ফ্যাকাসে। একটু আগেই তাকে হসপিটাল থেকে পৃহাল আর সাদাত মিলে নিয়ে এসেছে। এসে থেকেই চুপ করে আছে। কোনো কিছুতেই তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। ইশরা ছোট বাচ্চার ন্যায় মাকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে আছে। ইশরার মা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
আরশাদ সাহেব নিরবতা ভেঙ্গে বললেন~ তোমাদের বোঝা উচিত ছিলো সারহান রাজনীতি করে তার শ ত্রু বেশী। সারহান যথেষ্ট শক্ত। ওকে কাবু করার জন্য বাড়ির সদস্যকে টার্গেট করা হয়েছে।
পৃহাল,ইফাত,রাই, মুন অপরাধীর ন্যায় বসে আছে। তাদেরও রাত থেকে টেনশন হচ্ছে। গিল্টি ফিল হচ্ছে। কিন্তু তাদের হাতে কিছু নেই যা হওয়ার হয়ে গেছে। সময়, পরিস্থিতি কোনোটাই তাদের আমলে ছিলো না।
পৃহাল অপরাধীর ন্যায় বললো~ আংকেল আসলে আমরা বুঝতে পারিনি এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। যদি একটু আচ করতে পারতাম তাহলে ঘুরতে যেতাম না। আমাদের ভুল বুঝবেন না।
আরশাদ সাহেব বললেন~ তোমাদের কোনো দোষ নেই। তবুও বললাম। এরপর হতে পরিস্থিতি বুঝে কাজ করো। নাহলে বিপদে পরার সম্ভবনা রয়েছে।
পৃহাল বললো~ ঠিক আছে আংকেল।
আরশাদ সাহেব সারহানকে কল করলেন। ফোন বেজে যাচ্ছে অথচ তুলছে না। তিনি বেশ কয়েকবার কল করলেন কোনো রেসপন্স না পেয়ে হতাশ হলেন। বগুড়া থেকে আসতে এতোটা সময় তো লাগার কথা নয় এতো দেরী করছে কেনো?
পৃহাল কি মনে করে ইশরার দিকে তাকালো। কেমন নিশ্চুপ হয়ে আছে মেয়েটা। চোখ মুখ কিছুটা ফুলে গেছে। দেখে তার খারাপ লাগছে। হঠাৎ এতোটা খারাপ কেনো লাগছে তার?এটা ভেবে সে বিচলিত হলো।চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। কিছুটা সময় পর অস্থির হয়ে আবারও ইশরার দিকে তাকালো। ইশরা মাত্রই সোজা হয়ে বসলো। মাথায় হালকা হালকা ব্য থা অনুভূত হচ্ছে।সে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো। চোখ ঘুরিয়ে সকলের দিকে তাকালো। সবাই নিশ্চুপ। সামনের দিকে তাকাতেই পৃহালের দিকে সরাসরি চোখ পরলো। সে একটু চমকে গেলো।পৃহাল চোখ সরালো না অপলক তাকিয়ে রইল সেই ভাবেই।
রাই পৃহালকে ইশরার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে গুঁতো দিয়ে বললো~ ওমন ভাবে অসুস্থ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?
পৃহাল ইশরার দিকে দৃষ্টি বহাল রেখেই বললো~ জানি না।
রাই বিরক্ত হয়ে বললে~ এখানে সকলে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকিস না।
পৃহাল দৃষ্টি সরালো। আজ হয়েছে টা কি তার? এমন আজব ব্যবহার করছে কেনো সে? কোনো মেয়ের দিকে কখনো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকেনি। কিন্তু ইশরার পাণেই কেনো বারবার চোখ যাচ্ছে? নিজের এহেন কাজে বিরক্ত হলো পৃহাল। কারোর মনের অবস্থা ভালো নেই কিন্তু সেদিকে না খেয়াল করে মেয়ে দেখছে সে। অসহ্য।
রাই পৃহালকে ফিসফিস করে বললো~ ইশরার দিকে তাকাস না ভাই। সারহান জানলে তোর হাড় ভেঙ্গে দেবে। তখন তুই হাসপাতালের বেডে পরে থাকিস।
পৃহাল ক্ষুদ্ধ হয়ে তাকালো রাইয়ের দিকে। রাই ইনোসেন্ট ফেস করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে সবসময় একলাইন বেশী বুঝে। পৃহাল আর তাকালো না।সে নিজের ফোন বের করলো। ফোনে ব্যস্ত থাকলে ইশরার দিকে তার নজর যাবে না।
সারহানের গাড়ি চৌধুরী বাড়ির মেইন গেইটে এসে থামলো। একজন দারোয়ান গেইট খুলে দিতেই আবির গাড়ি চালিয়ে গ্যারেজের দিকে নিয়ে আসলো। আবির গাড়ি থামিয়ে নিচে নেমে দাঁড়ালো। অরিত্রিকা এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সারা রাস্তা বেঘোরে ঘুমিয়ে এসেছে। সারহান তার বক্ষ বরাবর তাকালো। অরিত্রিকা ঘুমে তার বক্ষে একদম লেপ্টে আছে। তার ইচ্ছে হচ্ছে না জাগাতে।কিন্তু কিছু করার নেই। জাগাতেই হবে এখন।
সারহান ধীরে ধীরে ডাকতে লাগলো~ ফাইরুজ, ফাইরুজ।
কয়েকবার ডাকতেই অরিত্রিকা তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ মেলে তাকালো। সারহানকে এতোটা কাছে দেখে সে ভড়কে গেলো। সে দূরে সরে যাবে এমন সে খেয়াল করলো সে নড়তে পারছে না। সারহান একহাতে অরিত্রিকা সযত্নে আবদ্ধ করে রেখেছে নিজ বক্ষে। তা বুঝতে পেরে অরিত্রিকা স্তব্ধ হয়ে গেলো।তার মনে হচ্ছে জমে গেছে সে।বুকের মাঝে হার্টবিট তীব্র গতিতে লাফাচ্ছে। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো। সারহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে গতিবিধি আমলে নিয়ে অরিত্রিকাকে ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বসলো। অরিত্রিকা ও দূরে সরে এলো। জোরে জোর শ্বাস নিচ্ছে।
সারহান স্বাভাবিক ভাবে বললো~ আমরা বাড়ি পৌঁছে গেছি।
অরিত্রিকা নিজেকে স্বাভাবিক করে সারহানের কথা শুনে বাহিরের দিকে তাকালো। দেখতে পেলো তারা বাড়ি পৌঁছে গেছে। সে আর দেরি না করে উত্তেজনায় গাড়ি থেকে নেমে পরলো।সারহানও গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।
সারহান আবিরের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো~ গাড়ি পার্ক করে ভেতরে আয়।আমি আর ফাইরুজ গেলাম।
আবির বললো~ ঠিক আছে।তোরা যা আমি আসছি।
অরিত্রিকার এখন মাথাব্য’থা নেই। কিছুটা সময় ঘুমিয়ে মাথাব্যথা গায়েব হয়ে গিয়েছে।বাড়িতে এসে মনে হচ্ছে মন ফুরফুরে হয়ে গেছে।
সারহান অরিত্রিকাকে বললো~ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি?
অরিত্রিকা বললো ~ উহু।
~ তাহলে চল।
সারহান হাঁটতে শুরু করলো।অরিত্রিকা ও পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো।মনে হচ্ছে কতোদিন পর বাড়িতে ফিরলো।আজ যদি ওই নিশা দের সাথে বিয়ে হতো তাহলে এই বাড়ি কখনো চোখে দেখতে পেতোনা। ভাবতেই অরিত্রিকার বক্ষ কেঁপে উঠলো। আজ সকালটা তার কাছে অন্ধকার স্মৃতি হয়ে থাকবে সারা জীবন। এমন পরিস্থিতিতে আর কখনো পরতে চায় না।
অরিত্রিকা আর সারহান বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেলো সকলের চিন্তিত মুখ।একযোগে সকলেই বসে আছে। অরিত্রিকা এক মুহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে সাথে বেগমের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।সারহান তা দেখে মৃদু হেসে এগিয়ে গেলো।
অরিত্রিকাকে নিজেদের মাঝে ফিরে পেয়ে সকলে আবেগী হয়ে উঠেছে। যে যার মতো নিজের অনুভূতি প্রকাশ করছে। অরিত্রিকার চোখ ছলছল করে উঠলো।সাথী বেগম তানিয়া বেগম অরিত্রিকাকে আদর করে দিচ্ছেন।আজমল সাহেব উঠে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে।বাড়ির সকলে আর সারহানের বন্ধু মহল সকলেই অরিত্রিকাকে সহি সালামতে ফিরে পেয়েছে এর জন্য শুকরিয়া জানাচ্ছে। অরিন ও বোনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ শুনে তড়িঘড়ি করে এসেছে। বোনকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ দুই বোন মিলে কাদলো। অরিত্রিকা কিছুটা সময় পর ইশরার কাছে গিয়ে বসলো।ইশরা মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে কেঁদে উঠলো সে। জড়িয়ে ধরলো সে।ইশরাও অরিত্রিকা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
সকলেই দুজনের বন্ডিং দেখে মুগ্ধ হলো।সারহান আর আবির চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দৃষ্টি সকলের দিকে। বাড়ির মেয়েকে ফিরে পেয়ে সকলেই খুশি।
ডাইনিং রুমে সকলেই উপস্থিত। অনেকক্ষণ ধরে সবাই চেয়ার সোফা জুড়ে বসে আছে। কারণ সারহান কোনো জরুরী কথা বলবে সকলের সামনে।
সারহান বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সবাইকে একপলক দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো~ আমি সকলের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলতে চাই।
আরশাদ সাহেব বললেন~ কি কথা?
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩৪
সকলেই সারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।সারহানের জরুরী তলব কারণ এখনো সকলের কাছে অস্পষ্ট। হঠাৎ কি নিয়ে কথা বলতে চাইছে?অধীর আগ্রহে সকলে অপেক্ষা করছে। অরিত্রিকাও ইশরার কাছে বসে অপেক্ষা করছে সারহান ভাই কি বলবে? নিশাদের কথা নয়তো।
সারহান অপেক্ষার প্রহর ভেঙ্গে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো~ আমি অরিত্রিকাকে বিয়ে করতে চাই। আর বিয়ে আজই হবে। আর সেটা একঘন্টার মধ্যে হবে।