প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২৭
আদ্রিতা নিশি
অরিত্রিকা অপলক চেয়ে রয়েছে সারহানের মুখপানে। কিঞ্চিৎ শীতল, তীক্ষ্ণ সেই দৃষ্টি যেন নির্বাক ও কণ্ঠহীন ভাষায় বহু প্রশ্ন উচ্চারিত হচ্ছে। তার দুই চোখের গভীরে জমে উঠেছে হাজারো প্রশ্নের মেঘ, দ্বিধা। যার ভারে ভারাক্রান্ত সে। মনটা কেন যেন চঞ্চল হয়ে উঠেছে অস্থিরতায় ছটফট করছে প্রতিটি অনুভূতি। বিচলিত হৃদয় হঠাৎ করেই বিদ্রোহ ঘোষণা করতে চাচ্ছে! বাধ্য মন যেন অবাধ্য হওয়ার প্রচণ্ড তাড়নায় কেঁপে উঠছে। এই পরিবর্তনের উৎস কোথায়?এটা কি ভালোবাসা? নাকি শুধুই এক মুহূর্তের মোহ?
কেন এমন অনুভূতি তার ভিতরে বাসা বাঁধছে? সারহান তো পূর্বে কখনো তাকে প্রশ্রয় দেয়নি, কখনো মধুর ভাষায় কথা বলেনি বরং প্রতিটি বাক্যে ছিল কঠোরতার ছাপ। তিক্ততা আর অবহেলার বিষ ছিটিয়ে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে তাকে বারবার। তবে সেই মানুষটির হৃদয়ের কঠোর প্রাচীর ভেদ করে ভালোবাসা নামক কোমল অনুভূতি কখন, কীভাবে প্রবেশ করল?এক পাষাণ হৃদয়ে কি সত্যিই ভালোবাসার স্থান হয়?কেন আজ সে সারহানের চোখে এমন কিছু দেখতে পাচ্ছে। যা এতদিন ছিল ধোঁয়াশার আড়ালে? এই অনুভূতির কোনো ব্যাখ্যা আছে কি? নাকি কিছু অনুভূতি ব্যাখ্যার সীমার বাইরে থেকেই যায়? কেন তার মতো এক সাধারণ মেয়ের জন্য এতটা বিচলিত হলো মানুষটা?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অরিত্রিকার নেত্রপল্লব কেঁপে উঠল সহসা। বুকের গভীরে যেন অজানা আশঙ্কার স্পন্দন বেজে উঠল। ওষ্ঠ ভিজিয়ে ঢোক গিলে ফেলল। অথচ সেই গলাটুকুও যেন শুকনো বালুর মতো শুষ্ক লাগছে।নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করল দণ্ডায়মান মানুষটিকে। চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকল সারহানের মুখাবয়বের দিকে। সেখানে ফুটে উঠেছে অদ্ভুত মোহজাল। মুগ্ধতার ছায়া লেগে আছে তার দৃষ্টিতে যেন সে এমন কিছু দেখছে যা এতদিন তার দৃষ্টির অন্তরালে ছিল।
বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে আছে সে।শ্যামমানবের এই তীব্র, তুখোড় চাহনি!দেখেঅরিত্রিকার বুকে একসঙ্গে অনেকগুলো ঢেউ আছড়ে পড়ল। কী এই অনুভূতি? কেন এই দৃষ্টি তাকে গিঁথে ফেলছে অজানা আকর্ষণের আবর্তে?মন ও মস্তিষ্কজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল অদৃশ্য দ্বন্দে। এমন অনুভূতি যার ব্যাখ্যা নেই অথচ যার গভীরতা অনুভব করা যায় প্রতিটি শিরায়, প্রতিটি ধমনীতে। সারহান গভীর শ্বাস টেনে নেয়। এক মুহূর্তের দ্বিধায় তার বাহুতে আবদ্ধ মেয়েলী শরীরের উষ্ণতা টের পায়। ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয় অরিত্রিকাকে। এলোমেলো দৃষ্টি চারপাশে ছড়িয়ে কিছুটা পিছিয়ে আসে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অন্যত্র।এই মুহূর্তে তার অরিত্রিকার পাশে থাকা উচিত নয়।কারণ তার বেপরোয়া প্রেমিক মন মরিয়া হয়ে উঠেছে! অভদ্র হওয়ার একরকম আকাঙ্ক্ষায় কাঁপছে তার অস্তিত্ব। চাইছে তাকে শক্ত করে আলিঙ্গন করতে, বুকের ভেতর জ্বলে ওঠা আগুন নেভাতে। যাকে বিরহের অনলে প্রতিনিয়ত পোড়াচ্ছে তাকে কি আর এত সহজে যেতে দেওয়া যায়?তার সমস্ত সত্তা আর্তনাদ করছে এই মেয়েটিকে সে সারাজীবন নিজের কাছে আটকে রাখবে। তার প্রতিটি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি দৃষ্টিতে, প্রতিটি স্পর্শে তাকে ভালোবাসার শীতল পরশে মুড়িয়ে রাখবে।
কিন্তু সময় সময় তার অনুকূলে নেই।সারহান গাঢ় চাহনিতে তাকায় তার প্রণয়িনীর দিকে। অতঃপর শাণিত পায়ে ছাদের সিঁড়িতে পা রাখে। কয়েকটা সিঁড়ি পেরোতেই হাতে টান অনুভব করে। পেছনে তাকানোর পূর্বে মেয়েলী স্বরে ভড়কে যায়।
“ আমার শাড়ি। ”
অরিত্রিকার শঙ্কিত স্বর। একহাতে কাঁধের উপরিভাগে লাগানো সেপটিপিন ধরে রেখেছে। মুখাবয়বে আতংকের ছাপ স্পষ্ট। সংকোচ নিয়ে কিঞ্চিৎ ভয়াতুর দৃষ্টিতে তাকায় সারহানের দিকে। সারহান অরিত্রিকার আকস্মিক চিৎকারে থেমে যায়। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় পেছনে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অরিত্রিকার পানে। ভ্রুযুগল কুঁচকে পর্যবেক্ষণ করে চিৎকারের কারণ। কিয়ৎ সময় পর বুঝতে সক্ষম হয় অরিত্রিকার শাড়ির আঁচল তার ঘড়িতে আঁটকে গেছে। সারহানের মুখ কিছুটা গম্ভীর হয়ে উঠল। একরকম নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বেশ শব্দ করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে অরিত্রিকার সামনে এসে দাঁড়াল। অরিত্রিকা চকিত দৃষ্টিতে পুনরায় তাকায় দন্ডায়মান মানুষটির দিকে।
সারহান ধীর গতিতে হাত তোলে। তার চোখ নিবদ্ধ থাকে ঘড়িতে আটকে যাওয়া শাড়ির আঁচলের দিকে। একপ্রকার গূঢ় তৃপ্তি ছড়িয়ে পড়ে ওষ্ঠাধরে।মৃদু হাসির রেখায় প্রতিফলিত হয় অদ্ভুত অনুভূতি। ভ্রুযুগল কুঁচকে চক্ষুদ্বয় উঁচিয়ে গভীর দৃষ্টিতে অরিত্রিকার মুখাবয়ব পর্যবেক্ষণ করে। মেয়েটা যে স্পষ্টতই শঙ্কিত তা বুঝতে সারহানের মুহূর্তমাত্র দেরি হয় না। কন্ঠনালী হতে নিঃসৃত শব্দগুলো প্রায় ফিসফিসিয়ে ওঠে যেন সময়ের অতল থেকে উঠে আসা কোনো অলিখিত সত্য;
“এ বাঁধন যদি নিছক কাকতালীয়ও হয়, তবু মনে হচ্ছে সৃষ্টির আদি থেকে প্রকৃতি আমাদের জন্য এমনই বন্ধনের প্রতিচিত্র এঁকে রেখেছে। যেখানে তুই আর আমি সময়ের স্রোতের মতো পাশাপাশি বয়ে যাবো, অবিচ্ছেদ্যভাবে একসঙ্গে। ”
অরিত্রিকার সারা শরীর কেমন জানি শিরশির করে ওঠে। এক মুহূর্তের জন্যও কি সে ভেবেছিল সারহান এমন কোনো কথা বলবে? এই মানুষটার দুর্বোধ্য মনস্তত্ত্ব সে কখনোই ঠিক বুঝতে পারে না।
সারহান হালকা হাসে। রহস্যময়, দুর্ভেদ্য সেই হাসি। পরক্ষণেই অনায়াস ভঙ্গিতে ঘড়ি থেকে শাড়ির আঁচল ছাড়িয়ে দেয়। কোনো কিছু না বলেই দ্রুত পায়ে ছাঁদের দিকে চলে যায়।
অরিত্রিকা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখের সামনে যেন মুহূর্ত আগের দৃশ্যের রেশ রেখে যায়।সারহানের ব্যক্তিত্ব, অভিব্যক্তি, কণ্ঠস্বরের অনুরণন আর সেই বাঁধনের অস্ফুট প্রতিশ্রুতি। যা হয়তো সত্যি ছিল।
অরিন মুখশ্রী মলিন করে চুপচাপ বসে আছে। তার দৃষ্টি দূরে দৃশ্যমান অট্টালিকার দিকে নিবদ্ধ। তার চিন্তাগুলো সময়ের আবরণ ভেদ করে অতীতের গহ্বরে ডুব দিচ্ছে।আজ যদি তার ভালোবাসার মানুষটি সঠিক হতো, তাহলে কি এই মুহূর্তে সবকিছু ভিন্ন হতো? তাহলে কি সে আজ অন্য কারও জন্য নয় বরং তারই জন্য মেহেদী রাঙাত? এই একটিমাত্র ভাবনাই তাকে বিষণ্নতার গভীরে ডুবিয়ে দেয়। বুকের ভেতর চাপা দীর্ঘশ্বাস বয়ে যায় কিন্তু বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। পাশে বসে তমা অরিনের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে মেহেদী দেওয়া শুরু করেছে। অন্যপাশে বসে আছে অরিনের বান্ধবীরা। তারা দুজনে বান্ধবীর অন্য হাতে মেহেদী দেওয়ার জন্য ফোনে ডিজাইন খুঁজে চলেছে।
“ তমা অরিনের হাতের মাঝখানে রাহাত নাম লিখে দিও। ”
আবিরের আকস্মিক আগমনে অরিন চমকে ওঠে।তার চঞ্চল নেত্রপল্লব মুহূর্তে কেঁপে ওঠে। বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে থাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে। আবির!
সৌম্য চেহারায় প্রশান্তির ছাপ, ঠোঁটের কোণে সেই চিরচেনা হাস্যজ্জ্বল অভিব্যক্তি। পরনে সাদা রঙের পাঞ্জাবি, যার উপর সোনালি সুতোয় ফুটিয়ে তোলা কারুকাজ। দেখতে সুদর্শন লাগছে। তমা নিজের নাম কোনো ছেলের কণ্ঠে শুনে মেহেদী দেওয়া হাত থামিয়ে সামনে তাকায়। কিছুক্ষণ অবিশ্বাস ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর বিস্ময়ে ফেটে পড়ে,
“আবির ভাইয়া, তুমি এখানে কী করছো?”
তার কণ্ঠে স্পষ্ট অবাকত্ব!অরিন নির্বাক বসে থাকে।
লিনা ও প্রভা ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকায় আবিরের দিকে। অচেনা একটা ছেলেকে দেখে একটু সংকোচবোধ করে। অরিন হতবিহ্বল হয়ে একবার আবিরের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার তমার দিকে তাকাচ্ছে। দুজনের কথোপকথনে বুঝতে পারল তমা এবং আবির পূর্ব পরিচিত।
আবির চেয়ার টেনে বসল। স্বাভাবিক ভাবে বলল ;
“ সারহান আমার বন্ধু। সেইসুবাদে দাওয়াত কবুল করতে এসেছি। ”
তমা মৃদু হাসল। ওষ্ঠকোণে হাসি বজায় রেখে বলল ;
“ বুঝলাম। ”
“ তোমাকে কিন্তু হলুদ শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ”
“থ্যাংকস ভাইয়া। ”
তমা ভীষণ লজ্জা পেল। তার গালের দুইপাশ লালচে আভা ছড়িয়ে দিল, যদিও সে সেটা আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করল।অরিন বিরাগভরে তাকাল আবিরের দিকে। এই ছেলে আবার ফ্লার্টও করতে জানে? অতি আশ্চর্যের বিষয়!সে ভেবেছিল, আবির একদম নম্র-ভদ্র, সংযত স্বভাবের কেউ হবে। কিন্তু এখন যা দেখছে তা সম্পূর্ণ বিপরীত! এই আচরণ এই সপ্রতিভ হাসি, অনায়াস ভঙ্গি সব মিলিয়ে একটা ধোঁকাবাজির মতো লাগছে।অরিনের মুখের অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট বিরক্তি ফুটে উঠল।আবির তার দৃষ্টি ঠিকই ধরে ফেলল বরং এতে বেশ মজাই পেল। ঠোঁটের কোণে ক্রূর হাসি টেনে তমার দিকে তাকিয়ে বলল;
“তমা, রাহাতের নাম লিখে দিয়েছো?”
তমার চেহারা মুহূর্তে আরও লাল হয়ে গেল। সে বিব্রত হয়ে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বলল ;
“ এখুনি লিখিনি। ”
“ আরে দ্রুত লিখে দাও। ”
“ দিচ্ছি ভাইয়া। ”
“ কারো নাম লিখার দরকার নেই। ”
অরিন দাঁতে দাঁত চেপে ক্রোধ মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠল। তমা আশ্চর্যিত হলো বেশ। সে মেহেদী না দিয়ে আড় চোখে তাকাল। লিনা ও প্রভা চমকে গেল। বান্ধবীর কথার ধারা বুঝতে সময় লাগল না। লিনা অরিনের হাত ধরে ইশারা করল শান্ত হওয়ার জন্য।
আবির পায়ের ওপর পা তুলে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বলল ;
“ তাহলে কার নাম লেখার ইচ্ছে আছে? ফ্রডটার নাম লিখবে হাতে?”
অরিনের রাগে ক্ষোভে কান্না পেল। ছলছল করে উঠল চক্ষুদ্বয়। অশ্রু কণা গাল বেয়ে পড়তে লাগল। গমগমে কন্ঠে বলল ;
“ আপনি একটা বাজে লোক আবির। ”
“ আরে আরে কাঁদছো কেন? আমি তো এমনি বলেছি। বিয়ের কনে কাঁদতে নেই জানো না। ”
“ আপনি চুপ করুন খারাপ লোক। ”
“ ঠিক আছে চুপ করলাম। এই যে আঙুল রাখলাম ঠোঁটের ওপর আর উল্টাপাল্টা কোনো কথা বলবো না। দয়া করে কান্না করো না।”
আবির তার কথামতো আঙুল খানা চাপিয়ে দিল ওষ্ঠদ্বয়ের উপরিভাগে। নিষ্পাপ চাহনিতে তাকাল অরিনের দিকে। কেমন ছোট বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে আছে। অরিনের হঠাৎ হাসি পেল৷ তবুও মুখ ভার করে চুপ রইল। এই লোকের সামনে হাসা যাবে না। বেদ্দপ লোক। লিনা পুনরায় ফোনের দিকে নজর দিলো। কিন্তু প্রভা হা করে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। এতো হ্যান্ডসাম মানুষ কই থেকে টপকালো? নাম্বার যোগাড় করতে হবে। তারপর কথা বলে পটিয়ে বিয়ে করতে হবে।
আরশাদ সাহেব এবং আজমল সাহেব রান্নার দিকটা পর্যবেক্ষণ করে ছাঁদে এসেছেন। বাড়ির বড় মেয়ের বিয়েতে তারা দুজন কমতি রাখেননি। আরশাদ সাহেবের মেয়ে না হলেও অরিনকে তিনি খুব ভালোবাসেন। বাহিরের কেউ বুঝতেই পারবেনা মেয়েটা তার মেয়ে নয় বরং ভাইয়ের মেয়ে। তারা দুজন অরিনের দুইপাশে বসলেন।
অরিনের দুহাতে মেহেদী দেওয়ার কাজ সমাপ্ত হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। দুই হাত ভরে মেহেদী দিয়ে দিয়েছে তমা। দুই হাত সোজা করে বসে ছিল এতোক্ষণ। বাবা এবং চাচাকে আসতে দেখে মৃদু হাসল।
আজমল সাহেব নিঃশব্দে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। কোমল স্নেহে আঙুল বুলিয়ে দিতে লাগলেন চুলের মাঝে। যেন এই মৃদু স্পর্শে অগণিত না বলা অনুভূতি ফুটে উঠল ভালোবাসা, স্নেহ, এবং এক গভীর বেদনাবোধ।চোখ দুটো মমতা মিশ্রিত চাহনিতে আটকে গেল মেয়ের মুখের ওপর।বুকে কেমন চাপা পীড়া অনুভূত হলো। যেন হৃদয়ের গভীরে শূন্যতা এসে গেঁথে বসেছে।”কালকের পর মেয়েটা আর এই বাড়ির থাকবে না!”এই ভাবনাটাই যেন দম বন্ধ করে দিচ্ছে তাকে।মস্তিষ্কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটাই সত্য। মেয়েটা কাল থেকে অন্য কারও বাড়ির বউ হয়ে যাবে।আর কদিন পর চলে যাবে শ্বশুরবাড়ি, তখন আর চাইলেও তাকে এই বাড়িতে আগের মতো রাখা যাবে না।অফিস থেকে ফিরে ঘরে ঢুকলে তার চঞ্চল মুখখানা দেখতে পাবে না। আর কখনো কি সন্ধ্যার চায়ের কাপ হাতে মেয়েটা এসে পাশে বসবে? অফিসের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়ে বলবে, “বাবা, আজ অফিস কেমন ছিল?”
এতদিন যেমন ছিল, সেসব কি সবই শেষ?
ভিতরে কোথাও যেন শূন্যতা দপদপ করে উঠল। গলায় দলা পাকিয়ে এল অসহনীয় কষ্ট।চোখের কার্ণিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ধীরে ধীরে।
আজমল সাহেব বহুক্ষণ ধরে ধরে রাখা ধৈর্যের বাঁধ আর ধরে রাখতে পারলেন না। ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলেন ;
“দোয়া করি, আমার আদরের প্রিয় বড় কন্যার নতুন জীবন সুখ, শান্তি ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হোক। তার দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার বন্ধন দৃঢ় হোক।
দোয়া করি, সে যেন সব বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকো, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দ ও কল্যাণে ভরে ওঠে। ঘর যেন ভালোবাসা ও মমতায় পরিপূর্ণ হয় আর যেন সৎ নেককার ও স্নেহময় জীবনসঙ্গীর সাথে সুখী জীবন যাপন করতে পারো।”
অরিন বাবার আদুরে দোয়ায় কেঁদে উঠল। পিতার কাছে মেয়ের মূল্য, ভালোবাসা কতোখানি তা বুঝতে পারল। আজমল সাহেব তাকে ও অরিত্রিকাকে ভীষণ আদর করেন তা যেন আজ নতুন করে বুঝিয়ে দিল। বাবারা মেয়েদের এতো ভালোবাসে কেন? বড় হলে মেয়েরা অন্য বাড়িতে যায় তাই?
আজমল সাহেব আদুরে ভঙ্গিতে পুনরায় বললেন ;
“ অরিন আম্মু কাঁদে না। শান্ত হও। ”
অরিন আজমল সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো। হু হু করে কেঁদে উঠল। মনে হচ্ছে এই বাড়ি ছেড়ে সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছে। আজমল সাহেবের চোখ অশ্রুসিক্ত।
আরশাদ সাহেব শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন ;
“ অরিন আম্মা, শান্ত হও। যদি বিয়ে করতে না চাও এখনো বলতে পারো। বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো। ”
শেষোক্ত কথাটি কৌতুকপূর্ণ শোনাল। আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সকলে হেসে উঠল। সাদাত উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলল ;
“ অরিন আপু বিয়ে ক্যান্সেল করার অফার এসেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাও। ”
পাশেই তানিয়া বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন। এতোক্ষণ নিরবে কাঁদছিলেন। কিন্তু ছোট ছেলের এমন কথায় চটলেন। সাদাতের পিঠে ধম করে কিল বসিয়ে দিলেন। সাদাত মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠল। পিঠ ডলতে ডলতে বলল ;
“ আমায় মারলে কেন মা? ”
তানিয়া বেগম কটমট করে তাকিয়ে বলল ;
“ বদমাশ ছেলে বিয়ে নিয়েও ঠাট্টা করতে হয়?”
“ বাবা যে ঠাট্টা করল তখন কিছু বললেনা অথচ আমি ঠাট্টা করলেই দোষ। অতএব, তুমি বাবাকে বেশী ভালোবাসো আর আমাকে কম ভালোবাসো এটাই প্রমানিত। ”
সাদাত মুখ গোমড়া করে বলল। তানিয়া বেগম ছেলের মুখে লাগামছাড়া কথাবার্তা শুনে বিস্মিত হলেন। একটু লজ্জা পেলেন তবুও প্রকাশ করলেন না। পাশে সাথী বেগম এবং ইসমা বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাদাতের কথা শুনে হেসে ফেললেন।
অরিত্রিকা ও ইশরা চেয়ারে বসে ছিল। সাদাতের কথা শুনে হু হা করে হেসে ফেলল। অতঃপর দুজনে একসাথে বলে ফেলল ;
“ আমরা কিন্তু কিছু শুনিনি। ”
তানিয়া বেগম ছেলের তাকিয়ে রাগ দেখিয়ে বললেন ;
“ বাঁদর ছেলে। একদম বাপের মতো হয়েছে। ”
সাদাত দাঁত কেলিয়ে বলল ;
“ বাপের মতো হয়ে গর্ববোধ করছি।”
বাঙালীদের হলুদের অনুষ্ঠানে মেয়েকে ক্ষীর খাওয়ানো হয়। এটা বহু আগে থেকে প্রচলিত। এখনো সেই ধারা অতিবাহিত রয়েছে।
ক্ষীর খাওয়ানো পর্ব এবং মেহেদী দেওয়ার পর্ব আপাতত শেষ। ক্যামেরাম্যান সুন্দর মুহুর্তগুলো ভিডিও এবং ছবি তুলে রেখেছে। অরিন তার বান্ধবীদের সাথে ছবি তুলেছে। উপস্থিত সকলের সাথে ছবি তোলার পর্ব শেষ হয়েছে। শুধু এখন বাকী ফ্যামিলি ফটো তোলার। ক্যামেরাম্যান তাড়া দিচ্ছেন সকলকে স্টেজে গিয়ে অরিনের পেছনে দাঁড়ানো জন্য। আজমল সাহেব এবং সাথী বেগম মেয়ের দুইপাশে বসেছেন। আরশাদ সাহেব ও তানিয়া বেগম স্টেজে গিয়ে হাসিমুখে একপাশে দাঁড়ালেন। তার পাশে দাঁড়ালেন ইসমা বেগম ও ইশরা। অরিত্রিকার শাড়ি পড়ে বেহাল অবস্থা। মনে হচ্ছে কুঁচি খুলে যাবে। কোনো মতো সাবধানতা অবলম্বন করে স্টেজে গিয়ে ইশরার পাশে দাঁড়াল। তখনি সুযোগ বুঝে পাশে টপকে পড়ল ইরফান। এতে হচকচিয়ে গেল সে। পাশে তাকিয়ে ইরফানকে হাস্যরত অবস্থায় তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু বিরক্ত বোধ করল। আজ এই মানুষটা তার আশেপাশে এতো ঘুরঘুর করছে কেন? মানুষটা তাকে অস্বস্তিতে ফেলছে। কিছুটা চেপে এসে চোখ ফিরিয়ে তাকাল সামনে। এরমাঝে হুড়মুড়িয়ে স্টেজে উঠল সাদাত। সুযোগ বুঝে ঠুস করে ইশরা এবং অরিত্রিকার মাঝে ঢুকে পড়ল। ইশরা পড়ে যেতে গিয়ে কোনো রকম সামলে নিলো। রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকাল সাদাতের দিকে। কিন্তু সাদাত রাগান্বিত চাহনি দেখে ওষ্ঠ এলিয়ে হাসলো।
“ টমেটো এভাবে তাকাস না। তোকে দেখে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ”
সাদাতের নির্লজ্জ ধরনের কথায় ইশরার রাগ তরতর করে বাড়ল। এই ছেলে তার সাথেও ফ্লার্ট করছে। অসভ্য, তেঁদড় ছেলে কোথাকার। ক্রোধ মিশ্রিত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল ;
“ একদম উল্টাপাল্টা বলবি না সাদুর বাচ্চা। ”
সাদাত ভ্রুযুগল বাঁকিয়ে হাসি বজায় রেখে বলল ;
“ আমার কোনো বাচ্চাকাচ্চা নেই। তাই কল মি সাদাত। ”
“ ভাই আমি তোর বোন হই। এটা ভেবে ফ্লার্ট করা বন্ধ কর। ”
“ তুই আমার নিজের বোন নস। সম্পর্কে ফুপাতো বোন কিন্তু আমি তোকে ফ্রেন্ড ভাবি। তাই ফ্রেন্ড হিসেবে ফ্লার্ট করতেই করতেই পারি।”
সাদাত ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠে। ইশরা সাদাতের কথায় মুখ কুঁচকায়।
ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা হাতে নিয়ে ফটো তোলার জন্য প্রস্তুত কিন্তু একজন মিসিং। সারহান স্টেজে নেই। তিনি উচ্চস্বরে বললেন ;
“ এমপি সাহেব কোথায়। উনি না থাকলে ফ্যামিলি ফটো তোলা হবে না। দ্রুত উনাকে কেউ ডাকুন। ”
ক্যামেরাম্যানের কথা শুনে সকলে আশে পাশে তাকায়। অরিনের বান্ধবীরা, অরিত্রিকার বান্ধবীরা ও তমা দাঁড়িয়ে আছে একপাশে। সারহান এবং আবির কোথাও নেই। সাদাত পকেট হতে ফোন বের করে কল দিলো সারহানের ফোনে। অরিত্রিকার চক্ষুদ্বয় আশেপাশে তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করল সারহানকে। কিন্তু মানুষটি নেই। কোথায় গেল।
“ তোর ফুলের আশেপাশে ভ্রমর মধু খাওয়ার জন্য উড়াউড়ি করছে আর তুই সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস শা*লা? ”
সারহান বুকে দুহাত গুঁজে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে স্টেজের দিকে। মুখাবয়ব অতিশয় শক্ত। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ অরিত্রিকা ও ইরফানের দিকে। আবিরের কথা শুনে চিবুক আরও বেশী শক্ত হয়ে আসে। তারা দুজনে কিছুক্ষণের জন্য নিচে গিয়েছিল। সাদাতের কল পেয়ে উপরে এসেছে। এসেই মেজাজ বিগড়ে গেছে। চোখের সামনে ইরফানের আমোদিত ভাব সহ্য হচ্ছে না। অরিত্রিকার পাশে দাঁড়াতে পেরে মনে হচ্ছে উড়ছে।
আবির পুনরায় বলে উঠে ;
“ দেখ ইরফান কেমন কেঙ্গারুর মতো লাফাচ্ছে তোর ফাইরুজের পাশে দাঁড়িয়ে। আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে লুচির মতো ফুলছিস। ”
সারহান রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকাল আবিরের দিকে। অতঃপর গটগটিয়ে স্টেজের দিকে চলে গেল। আবির শব্দ করে হাসল। এই তো মেইন জায়গায় তীর লেগেছে।
অরিত্রিকা এতোক্ষণ সারহানের দিকে তাকিয়েছিল। তার মনে হচ্ছে মানুষটা কোনো কারণে রেগে আছে। হঠাৎ কি এমন হলো। সারহানকে দাম্ভিক ভঙ্গিতে স্টেজের দিকে আসতে দেখে ভয় পেল। নজর লুকিয়ে তটস্থ ভঙ্গিতে দাঁড়াল। সারহান শাণিত পায়ে এগিয়ে এসে সোজাসুজি অরিত্রিকা আর ইরফানে মাঝে এসে দাঁড়াল ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে। অরিত্রিকা হচকচিয়ে গেল। দ্বিধাগ্রস্থ চাহনিতে তাকাল সারহানের দিকে। সারহানও গম্ভীরমুখে তাকায় অরিত্রিকার দিকে। ইরফানের আমোদিত মুখখানা চুপসে গেল। ভেবেছিল অরিত্রিকার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবে কিন্তু তার আগেই সারহান এক বালতি পানি ঢেলে দিলো। ফাটা কপাল! মুখখানা গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইল।
সারহানের মুখপানে তাকিয়ে অরিত্রিকা লাজুক হাসে। এতোক্ষণের অস্বস্তি কর্পূরের ন্যায় উড়ে গিয়ে হানা দিল লাজুকতা। সারহানের জ্বলন্ত রাগ নিমেষেই নিভে গেল। একপশলা স্নিগ্ধ অনুভুতিতে সিক্ত হলো তার অন্তঃকোণ। প্রেয়সীর হৃদয়ে তার ভালোবাসা একটু হলেও কী স্থান পেল। এই লাজে রাঙা হাসি কী তার প্রমাণ নয়! গম্ভীর মুখশ্রী স্বাভাবিক হয়ে আসে। শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে ইশারা করল সামনে তাকাতে। অরিত্রিকার কপাল কুঁচকে গেল। অবুঝের ন্যায় নেত্রপল্লব ঝাপটে ইশারা করল কী বললেন? সারহান মৃদু হাসে। সকলের অগোচরে অরিত্রিকার আলতো ভাবে হাত ধরে। অরিত্রিকা কিছুটা কেঁপে উঠে।
সারহান শান্ত কন্ঠে ধীর কন্ঠে বলে ;
“ আমার দিকে হা করে না তাকিয়ে সামনে তাকা। ”
অরিত্রিকা অপ্রস্তুত হলো। মিনমিন করে বলল ;
“ কই আপনার দিকে তাকিয়ে আছি?”
“ তাহলে আমাদের চোখাচোখি হচ্ছে কীভাবে? ”
অরিত্রিকা থতমত খেয়ে গেল। সারহান ক্ষীণ হাসল। এরমাঝেই ক্যামেরাম্যান হাঁক ছাড়ল ;
“ আরে আপনারা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে না থেকে সামনে তাকান। ”
অরিত্রিকা চমকে গেল। দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে তড়িৎ বেগে তটস্থ ভঙ্গিতে সামনে তাকায়। সারহান ওষ্ঠ কামড়ে হেসে ক্যামেরার দিকে তাকায়। ক্যামেরাম্যান ফ্যামিলি ফটো তুলতে ব্যস্ত হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি ছবি তোলার পরে সবাই স্টেজ থেকে নেমে যায়। কিন্তু অরিত্রিকা এবং সারহান ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অরিত্রিকা কাচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। সারহানের মুঠোতে বন্দী তার হাত। মানুষটা কেন ছাড়ছে না! কেউ যদি দেখে ফেলে তুলকালাম বেঁধে যাবে। সারহান ক্যামেরাম্যানকে ইশারা করে কাপল ফটো তুলে দেওয়ার জন্য। ক্যামেরাম্যান হাসল। ক্যামেরা ফোকাস করল দুজনের দিকে। ফটাফট ফটো তুলতে লাগল।
“ মুখ গোমড়া করে আমাদের ফার্স্ট তোলা কাপল পিক খারাপ করতে চাইছিস? যদি একটা পিক ত্যাড়া বাঁকা হয় তোর গোমড়া মুখ থাপ্রে সোজা করে দিবো। ”
সারহানের গুরুগম্ভীর পুরুষালী চাপা স্বরে শিউরে উঠে। জোরপূর্বক হাসি টেনে তাকায় সামনে। সারহান শুভ্র পাঞ্জাবি টেনেটুনে স্বাভাবিক ভাবে তাকায় ক্যামেরার দিকে। আরশাদ সাহেব, আজমল সাহেব, সাথী বেগম, তানিয়া বেগম এবং ইসমা বেগম এরমাঝে নিচে চলে গেছেন। এখন নাচ, গান হবে তাই ছোটদের মাঝে না থাকা ভালো। ইরফান বিষন্ন মুখে তাকিয়ে আছে সারহান আর অরিত্রিকার দিকে। তবুও কিছু একটা ভেবে স্বাভাবিক ভাবে নেওয়ার চেষ্টা করল বিষয়টা।
“ এই ইশরা! ”
“ বল। ”
“ সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছিলো রে। না মানে যারা একে ওপরকে দুচক্ষে সহ্য করতে পারে না তারা একসাথে ছবি তুলছে। ”
সাদাতের সন্দেহবাতিল কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। ইশরা বিভ্রান্তিতে পড়ে গেল। আসলেই তো সাদাতের কথায় লজিক আছে। এদের ভেতর চলছে কী?
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২৬
“ ছোট্ট মস্তিষ্কে চাপ নিও না বাচ্চারা। তোমরা বোধ হয় ক্যামিস্ট্রিতে দুর্বল তাই ওদের কাহিনী বুঝতে পারবে না। ”
আবির হেঁয়ালি করে বলে উঠল। সাদাত কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করল ;
“ দুজনের মধ্যে কীসের কাহিনি? ”
“ সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যেমন লবণ তৈরী করা হয় ঠিক তেমন সম্পর্ক। তোমরা দুজন দাঁড়িয়ে আছো কেনো চলো সবাই একসাথে ছবি তুলি। ”
আবির সাদাতকে টেনে স্টেজে চলে গেল। ইশরা আবিরের কথার মানে বুঝল না। সেও ছুটল স্টেজের দিকে।