প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৩
আদ্রিতা নিশি
অরিত্রিকা মুখ গোমড়া করে বিছানার একপাশে বসে আছে। চোখে-মুখে স্পষ্ট অস্বস্তি আর শরীরী ভঙ্গিতে একরাশ ক্লান্তি। পাশে বসে থাকা বড় বোন অরিন চুপচাপ গালে হাত দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
কিছুক্ষণ আগেই অরিত্রিকা বাড়িতে প্রবেশ করেছে। তার আগমনে বাড়িতে ঝড় উঠেছে। সাথী বেগমের প্রশ্নের ঝাঁপি খুলেছিলেন “এত রাত হলো কেন? ফোন ধরিস না কেন?” তার রাগী কণ্ঠস্বর পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে দিয়েছে। অরিত্রিকা ব্যান্ডেজ করা হাত স্কার্ফ দিয়ে ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করছিল। কিন্তু মায়ের সূক্ষ্ম দৃষ্টি ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা যেন কারোর নেই। সাথী বেগমের চোখ ঠিক দেখে নিলো সেই আঘাত।এরপর কান্নাকাটি আর অভিযোগের মহড়া।
আজমল সাহেব এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও শেষে তিনিও রাগে ফেটে পড়লেন। “কীভাবে লাগল তোর হাত?” কঠোর স্বরে প্রশ্ন করেন। অরিত্রিকা কোনো রকমে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। “ছোটখাটো একটা এক্সিডেন্ট বলে নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে। ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।অরিত্রিকা নিজের রুমে এসে হাঁফ ছাড়লেও মনে হচ্ছিল, পুরো শরীরের রক্ত যেন উল্টোপথে বইছে। পেটে চাপা ব্যথা অনুভব হচ্ছিল সেটা হলো কথার বদহজম। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি কথার ভারে পেট ফেটে যাবে। আর কোনো উপায় না দেখে ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুরো কাহিনী অরিনের সামনে উগড়ে দিলো।অরিন পুরো কাহিনী শুনে থম মেরে বসে আছে। তার চোখের দৃষ্টি শূন্যে স্থির, মুখাবয়বে অদ্ভুত শূন্যতা। কোনো কথা বলার চেষ্টা করেও যেন পারছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অরিত্রিকা চুপচাপ বসে অরিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। বোনের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে সে অস্থির হয়ে ওঠে।অরিত্রিকার পেটের ভেতর ছোটখাটো একটা বাঘ গর্জন করতে শুরু করেছে ক্ষুধার তাড়নায়। তবে সে তো আর মুখ ফুটে খাবার চাইতে পারছে না! কারণ তার মাথার মধ্যে সাথী বেগমের চেনা ডায়লগগুলো বারবার বাজছে, “আমাকে এত জ্বালাচ্ছিস! আমি মা বলে তোর সব উল্টাপাল্টা কাজ মেনে নিচ্ছি। আগে শ্বশুরবাড়ি যা, দেখবি এই সব কাজের জন্য দুইদিনে ফিরিয়ে দিয়ে যাবে!”এই কথা ভেবেই তার মুখের রঙ হঠাৎ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ক্ষুধা তীব্র হলেও মা যদি হাইহিল নিয়ে পিঠে উত্তমমধ্যম দিতেই শুরু করেন তবে খাবারটা গলায় নামানোর আগেই কষ্টের রসনা তৃপ্তি হয়ে যাবে।অরিত্রিকার চোখ-মুখে স্পষ্ট বিরক্তি ভর করল। কপালের ভাঁজগুলো আরও গভীর হলো।
অরিন অনেকক্ষণ থম মেরে থেকে অবাক হয়ে বলল,
“এই অরিত্রিকা! সারহান ভাইকে ডাইরেক্ট বিয়ের প্রপোজাল দিলি! আমার তো ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছে। একবার যদি উনি বুঝতে পারে তুই এইসব উনাকে জ্বালাতন করার জন্য করছিস, তাহলে তো তোর বারোটা বাজিয়ে দিবে।”
অরিত্রিকার পেট তখনও ক্ষিধেতে চোঁ চোঁ করছে। তার ওপর এই ধরনের কথা শুনে তার মেজাজ পুরোপুরি বিগড়ে গেল। চোখ ছোট ছোট করে কটমট তাকিয়ে বলল,
“যা করেছি, বেশ করেছি। দরকার হলে আরও করব। এসব বলে ভয় দেখাবি না, আপু! উনাকে আমি মোটেও ভয় পাই না। এএএ আসছে কোন হিটলার যার নাম শুনেই থরথর করে কাঁপবো!”
অরিত্রিকার গলার আত্মবিশ্বাস আর কথার তীক্ষ্ণতা শুনে অরিনের মুখ ফসকে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইলো। কিন্তু নিজেকে সংযত করে বলল,
“তুই একদিন সত্যি সত্যি উনার থাপ্পড় খাবি, তখন বুঝবি কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছিস।”
অরিত্রিকা গোঁ গোঁ শব্দ করে আপুর কথায় কান না দিয়ে বিছানায় ঢলে পড়ে বলল,
“ ওই কাঠখোট্টা বদমেজাজি মানুষটার কথা বলিস না আপু এমনিও উনাকে ভয় টয় পাই না।”
অরিন নড়েচড়ে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অরিত্রিকার মুখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“সত্যি ভয় পাস না?”
অরিত্রিকার সোজা হয়ে বসল।উত্তর দিবে কিন্তু গলার শব্দ মুহূর্তেই গলদেশে আটকে গেল। তার মনে হঠাৎ করেই ভেসে উঠল সেই ভয়াবহ মুহূর্ত। সারহান কীভাবে তার হাত চেপে ধরেছিল। সেই তীক্ষ্ণ চাহনি, কঠোর ভঙ্গি। মুহূর্তটি ভাবতেই তার শরীর শিউরে উঠল। সারহান ভাইকে ভয় করে না বললে মিথ্যা হবে। মানুষটাকে সে আগে সত্যি যমের মতো ভয় পেত। তবে ভেবেছিল, এই দুই বছরে সেই ভয় হয়তো উবে গেছে।কিন্তু আজ সে ভুল প্রমাণিত হলো। সাহস দেখিয়ে তর্ক করলেও সারহানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানে যেন জ্বলন্ত আগুনের সামনে দাঁড়ানো। তার হৃদস্পন্দন তখনও দ্রুত ছিল। সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেন এখনও তাকে পোড়াচ্ছে।তবে এসব কাউকে জানানো যাবে না।
অরিত্রিকা দৃঢ় মনে নিজেকে সামলে নিল। মুখে একগাল ভান করে বলল,
“ভয়! কই, না তো। সত্যি বলতে একটুও ভয় পাই না।”
অরিত্রিকা এতোটুকু বলেই চুপ হয়ে গেল। তার মুখে গভীর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। দুই হাতের তালু ঘষতে ঘষতে সে যেন নিজের মধ্যেই কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে। এই মেয়ের এমন আচরণ দেখে অরিনের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর হয়ে উঠল। একদিকে এত বড় কাণ্ড ঘটিয়ে এসেছে, অথচ এখন একেবারে চুপচাপ!
অরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“তোর কপালে শনি নাচছে রে অরিত্রিকা। সাবধানে থাকিস।”
অরিত্রিকা কটমট করে অরিনের দিকে তাকাল। অরিন তা দেখেও যেন দেখল না। ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকল। এর মাঝেই দরজা শব্দ করে খুলে প্রবেশ করলেন সাথী বেগম। মুখ রাগে লাল হয়ে আছে। এক হাতে খাবারের প্লেট, অন্য হাতে পানির গ্লাস নিয়ে বিছানার এক পাশে রাখলেন।সাথী বেগমের হঠাৎ রুমে প্রবেশ করতে দেখে অরিত্রিকা অরিনের পেছনে কম্বল মুড়িয়ে ভয়ে নিজেকে আড়াল করে চলেছে। তা খুব ভালোভাবেই লক্ষ্য করলেন সাথী বেগম। অরিনকে উদ্দেশ্য করে থমথমে কন্ঠে বললেন;
“ তোমার গুনধর দুধে ধোঁয়া তুলসীপাতা বোনকে খাবার খাইয়ে উদ্ধার করো। ”
ব্যাস এতটুকু বলেই ধপাধপ পা ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। অরিন মায়ের কথা শুনে ফোন রেখে ওয়াশরুমে গেলো হাত ধুতে। অরিত্রিকা এলোমেলো চুলগুলো হেয়ার ব্যান্ট দিয়ে আঁটকে নিল। বিরবির করে বলল ;
“ আজ তোর কপাল ভালোরে অরিত্রিকা দুইবার সিংহ কবলে পড়লি, দুইবার বাঘিনীর কবলে পড়লি তাও সহিসালামতে বেঁচে আছিস। হে খোদা, আর কোনো দিন ওই আস্ত বদমানুষটার সামনে আমাকে ফেলো না। আই প্রমিজ আজ থেকে আমি ভালো হয়ে যাবো। ”
অরিন হাত ধুয়ে এসে বসে খাবারের প্লেট নিয়ে ভাত মাখাতে লাগল। অরিত্রিকা কম্বল একপাশে সরিয়ে দিয়ে লক্ষী মেয়ের মতো বসল। অরিত্রিকা হা করতেই অরিন ভাত খাইয়ে দিল। ভাতের পরিমান এতোটাই বেশী ছিল যে অরিত্রিকা ঠিকঠাক মতো চিবুতে পারছে না। বেজায় চটেছে সে। বিরক্তির সহিত বলল;
“ এখনো বিয়ে, সংসার, ল্যাদা বাচ্চা পালা, বরের সাথে রোমান্টিক টাইম স্পেন্ড করা কোনোটাই হয়নি আমার। আর তুই আমাকে এসবের আগেই আমাকে পটল তোলাতে চাইছিস? ”
অরিন কপাল কুঁচকে বলল,
“ মানে?”
“ এতো ভাত একবারে কোন ছাগলে দেয়? ভাত কমিয়ে দে। ”
“ এটা বললেই হতো। ”
“আমি তো আমার সংসার নিয়ে টেনশনে থাকি। এবার তোর সংসার নিয়েও টেনশন হচ্ছে। আদৌও তুই বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করতে পারবি? না মানে খাইয়ে দেওয়ার ছিঁড়ি টুকুও নেই তাই জন্য বললাম আরকি। ”
“অরিত্রিকা।”
অরিনের রাগান্বিত চিৎকার শুনে অরিত্রিকা ভাত খেয়ে হাহা করে হাসতে লাগল।অরিন রেগেমেগে অস্থির হয়ে মাখানো ভাতের দোলা মুখে পুরে দিল। অরিত্রিকার হাসি বন্ধ হয়ে গেল। কটমট করে অরিনের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে একহাতে ফোন টিপতে লাগল। গভীর মনোযোগে ফোন টিপতে ব্যস্ত অরিত্রিকা। এর মাঝেই আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে ফোনে। দুইবার কল ইগনোর করলেও এবার বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করল। ভাত চিবুতে চিবুতে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল;
“ হ্যালো কে?
ফোনের ওপর পাশ হতে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। অরিত্রিকা বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করল তবুও উত্তর নেই। অরিন অরিত্রিকা ভাত খাইয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল কে? অরিত্রিকা মাথা নাড়িয়ে ইশারা করল জানে না।
অরিত্রিকা মুখভর্তি খাবার নিয়ে ভুরু কুঁচকে ফোনে বলল,
“এই আপনি কে বলুন, নয়ত কল কাটলাম। অযথা বিরক্ত করার কোনো মানে হয়?”
ফোনের অপর পাশ থেকে এক গুরুগম্ভীর পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে এলো,
“আমার না হওয়া বিবিজান, আমি আপনার এমপি সাহেব বলছি।”
অরিত্রিকার মুখ থমকে গেল, চোখ বড় বড় করে তাকাল ফোনের দিকে। ভেতরে ভেতরে কেমন শিউরে উঠল। তবুও নিজেকে সামলে আবার গরম মেজাজে বলল,
“কোন দেশের এমপি বলছেন? আর আপনি আমাকে বিবিজান বলছেন কেন?”
অপর পাশ থেকে ঠাণ্ডা কণ্ঠে উত্তর এলো,
“ রাজশাহী ১ আসনের এমপি। আর আপনাকে কেন বিবিজান বলেছি সেটার উত্তর আপনার চেয়েও ভালো আর কেউ জানে না।”
অরিত্রিকার মুখের খাবার প্রায় গলায় আটকে গেল। ভাতের কণাটুকু গিলে নিতে গিয়ে কাশতে কাশতে বিরবির করে আওড়ালো ;
“সারহান ভাই।”
সারহান তাকে কল করেছে বুঝতে পেরে অরিত্রিকার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। গলায় কথা আটকে গেল।তড়িঘড়ি করে কান থেকে ফোন নামিয়ে নাম্বার দেখল। নাম্বারটা অপরিচিত হলেও কন্ঠস্বর পরিচিত। তার নাম্বার কিভাবে পেল সারহান ভাই! ভাবতেই পিলে চমকে উঠল। তটস্থ ভঙ্গিতে কল কাটতে গিয়ে তাড়াহুড়োতে একবারে ফোন বন্ধ করে দিল। ভয়ার্ত চেহারায় অরিনের দিকে তাকাল। অরিন অরিত্রিকার এমন আচরণ দেখে একটু ভয় পেল। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করল ;
“ কে কল দিয়েছে। ”
“সারহান ভাই। আপু আমি শেষ।”
অরিত্রিকা ভয়ের চোটে বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসল। তার চোখ বারবার ফোনের স্ক্রিনে চলে যাচ্ছে।মনে মনে অস্থির হয়ে ভাবে, “এই সিম তো একদম নতুন! কেউ জানে না এটা, শুধু বন্ধুমহল আর বাড়ির লোক। তাহলে উনি জানলেন কীভাবে?”হঠাৎ মাথায় ঝটকা লাগার মতো একটা কথা মনে পড়ে গেল। কয়েকদিন আগে ভার্সিটিতে চিরকুট লেখার সময় রুহান তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
“কোন নাম্বার দেব?”
অরিত্রিকা তখন ব্যস্ততার মধ্যে বলেছিল,
“তোর যেটা ইচ্ছে সেটা দে। আমার কি সময় আছে এসব দেখার?”
মনে হতেই অরিত্রিকা থ মেরে গেল। নিজেকে কষে একটা ধমক দিল মনে মনে। “শালা রুহানের বাচ্চা! তার মানে এই শয়তান আমার নাম্বারটাই দিয়েছিল?”এই ধারণা আসার সাথে সাথেই তার রাগে হাত-পা কাঁপতে শুরু করল তার। কিন্তু রাগের চেয়েও ভয়ের অনুভূতিটা বেশি প্রভাব ফেলেছে এখন।
“এইভাবে ফাঁসিয়ে দিল আমাকে!”
ভাবতেই অরিত্রিকার চোখে পানি চলে এলো।তার এই মুহূর্তে হাত-পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
রুমের নিস্তব্ধতা এতটাই গভীর যে শুধু জানালা দিয়ে আসা হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দটাই শোনা যাচ্ছে। মেরুন রঙের জানালার পর্দাগুলো থেমে থেমে দুলছে।দক্ষিণ দিকের ডিভানের ওপর আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে সারহান। তার শক্তপোক্ত সুঠাম দেহী প্রশস্ত নগ্ন শরীরে ছড়িয়ে থাকা পানির বিন্দুগুলো ল্যাম্পের হলদেটে আলোয় মুক্তোর দানার মতো ঝলমল করছে। কালো টাউজারের ভাঁজের ওপর রাখা লম্বা পা আর পেছনে হেলে বসার ভঙ্গি তার অভিজাত ব্যক্তিত্ব আর নির্লিপ্ততাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।ভেজা এলোমেলো চুল থেকে পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে শ্যামলাটে প্রশস্ত লোমশ বুকে মিশে যাচ্ছে। জানুয়ারির হাড়কাঁপানো শীতও তার কঠিন শরীরকে স্পর্শ করার সাহস পাচ্ছে না। তার বাদামি চোখের দৃষ্টি ভয়ঙ্কর রকমের তীক্ষ্ণ।
একহাতে ফোন ধরে রেখেছে তবে তার চোখ স্থির হয়ে আছে ফোন স্ক্রিনে ভেসে থাকা অপরিচিত নাম্বারের দিকে।তীক্ষ্ণ নজরে সেই নাম্বারকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে গাঢ় অভিব্যক্তি ফুটে উঠল মুখে। তার ঠোঁটের একপাশ দিয়ে ক্ষীণ বিদ্রূপাত্মক হাসি ছড়িয়ে পড়ল।পায়ের ওপর পা তুলে পিঠ ডিভানের গদিতে ঠেকিয়ে আরও আয়েশি ভঙ্গিতে হেলান দিল সারহান। ফোনের স্ক্রিনের আলো তার তীক্ষ্ণ মুখাবয়বকে আরও রহস্যময় করে তুলল।সারহান আঙুল দিয়ে ফোন ঘুরিয়ে নেয়। মনে মনে স্তম্ভিত সে। একটা অচেনা মেয়ে তার সাথে বাজে ব্যবহার করল। ভেবেই মাথা গরম হয়ে আসছে।সে চুপচাপ মেয়েটির কন্ঠ চেনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আওয়াজটা অদ্ভুত ঠেকলো। মনে হচ্ছিলো পাঁচ মেশালি কন্ঠ। যেহেতু অচেনা মেয়েটা তার সাথে হাইড এন্ড সিক গেম খেলছে খেলুক। সে শুধু গেমটা অপারেট করবে আর খুব শীঘ্রই খুজেও বের করবে। মেয়েটা যে তার কল পেয়ে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে তা স্পষ্ট বুঝেছে। আবারও কল দিল সেই নম্বরে কিন্তু ফোন বন্ধ আসছে। তারমানে আতংকিত হয়ে ফোন বন্ধ করেছে ভেবেই ওষ্ঠ কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল তার।
সারহানের ফোন বাজছে। আবির কল দিয়েছে। সে অন্যসব ভাবনা সাইডে রেখে কল রিসিভ করল। চোখ মুখ শক্ত করে দৃঢ় কন্ঠে বলল ;
“ ব্লাডি বাস্টার্ডকে পেয়েছিস?”
“পেয়েছি। চার নম্বর গোডাউনে উল্টো ঝুলিয়ে রেখেছি।অবস্থা খারাপ। ”
“এতো কষ্ট না দিয়ে মে*রে দে। ”
“আমার মনে হয় তোর একবার এই কুত্তার* বাচ্চার সাথে মুলাকাত করা উচিত।”
সারহান শরীর এলিয়ে দিল ডিভানে। সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল ;
“ তুই যেহেতু বলছিস তাহলে একবার মুখদর্শন করতে হয়।আগামীকাল সকাল দশটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত কয়টা মিটিং আছে?”
“তিনটা। ”
“সবগুলো ক্যান্সেল কর। মিটিং গুলো পরশু দিন ফিক্সড কর।”
“ওকে।”
“ পেট থেকে কিছু বের করতে পেরেছিস?”
“ জানো*য়ারটা শুধু বলেছে কেউ একজন দশ লাখ টাকার সুপারি দিয়েছে তোকে টপকে দেওয়ার জন্য।”
সারহান শব্দহীন হাসে। চোয়াল শক্ত করে বলে ;
“ নিজেকে আড়াল করে আমাকে আঘাত করছে নয়ন তালুকদার। কাপুরুষ একটা। ”
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২
সারহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। তার মন অস্থির, শরীর একেবারে অবসন্ন। এত কাজের চাপের মধ্যে নিজের জন্য একটুও সময় পায় না। শরীরের ক্লান্তি তাকে তীব্রভাবে আঘাত করছে কিন্তু মন শান্তির কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না।তাকে যখনই নিজের একান্ত সময়ে থাকা দরকার, তখনই নতুন দুশ্চিন্তা এসে ভিড় করে। আগামীকাল আবার নতুন মিটিং, সমাবেশ, আলোচনা—একটানা চলতে থাকা চলতে থাকে। এসব ভেবে তপ্ত শ্বাস ফেলে।